অপেক্ষা – মাহা আরাত | পর্ব – ৩২

বাচ্চাটা উল্টো তাকেই প্রশ্ন করে বসলো, ‘আপনি কে?’

হাফসা মুচকি হেসে চুপচাপ মায়ের রুমে গিয়ে দেখলো,আরহাম মায়ের কোল জড়িয়ে ধরে বেঘোর ঘুমে।

মাকেও ঘুমে ঢুলতে দেখে বললো, ‘আপনি ঘুমান।উনাকে সরিয়ে।’

আম্মু হাসতে হাসতে বললেন, ‘ঘুমের আগে বলেছে, আমি যেনো তাকে না সরাই।ছোটবেলাও এমন জিদ ধরতো।’

‘ওহ।ড্রয়িং রুমে বাচ্চা টা কে?’

‘আরহামের ভাগনে।সাফার ছেলে।’

‘উনি কে?’

‘আরহামের বড়আব্বুর মেয়ে।পাশের ফ্ল্যাটটা যে তালা দেওয়া দেখলে,ওটা তাদেরই বাসা।আজকে আসছেন।’

‘ওহ।’

‘কিছু খাবেন আম্মু?চা দিব?’

‘উহু,খাবো না কিছু।’

আম্মুর রুম থেকে বের হয়ে ছাদ থেকে কাপর আনার উদ্দেশ্যে বাইরে বেরোতেই ড্রয়িংরুমে পুরুষ দেখে তড়িৎ গতিতে আবার রুমে ডুকলো হাফসা।

পুরুষ অবয়বটি দরজার ওপ্রান্তে ভ্র কুঁচকে তাকিয়ে রইলো!হুট করেই কোনো হুরপরি এসেই উদাও হয়ে গেলো আবার!

সন্ধ্যের পর মেহমান আসলেন।একজন আপুসহ ওই বাচ্চা ও আসলো হাফসার রুমে।ফাইয়াজ(বাচ্চার) এর মা হোন তিনি।হাফসাকে আরেক মামণি হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিলে,ফাইয়াজ এসে কথা বললো,মিশতে লাগলো।

মায়ের সাথে যেতে নারাজ সে।ডিনারের দাওয়াত দিয়ে সবাই চলে গেলেও সে থেকে গেলো।আরহাম রুমে আসলে বলল, ‘এই মামণিকে আমার বাসায় নিয়ে যাব?’

‘নাহ।’

‘কেনো?’

‘উনি আমাকে ছাড়া কোথাও যান না।’

ফাইয়াজ হাফসাকে দিকে ঘুরে প্রশ্ন করলো, ‘মিষ্টিমণি তুমি যাবে না আমার সাথে? বলো যাবে না?একটু আগে তো বললে যাবে।’

‘হুম যাবো তো।’

হাফসার সম্মতিতে ফাইয়াজ উনার দিকে তাকিয়ে ভেংচি কেটে বুড়ো আঙ্গুল উল্টো করে দেখিয়ে বলল, ‘ইউ আর লুজার মামা।’

আরহাম বোধহয় কিছুটা রাগ করলেন।হাফসার দিকে তাকালেন না আর।পিচ্চিটাও বেশ চালাক।উনাকে জেলাস করতে সে হাফসার গালে অনবরত চুমু দিচ্ছে, আর আরহামের রাগে গুলুমুলু হয়ে যাওয়া চেহারা দেখে খিলখিল করে হাসছে।

হাফসা বুঝে উঠতে পারে না, বাচ্চাদের সাথে উনার এতো জেলাসি কেন।ফাইয়াজ তো ছোট,ইনোসেন্ট।তাহলে ওর ওপর রাগছেন কেন?’

একপর্যায়ে উঠে এসে ওকে শূন্যে তুলে নিচে নামতে থাকলেন।খানিক পর রুম থেকে ফাইয়াজের কান্নার আওয়াজ শুনে হাফসা মনে মনে ভাবলো, উনি কি নিজের বাচ্চাদের সাথেও এমন করবেন ভবিষ্যতে!

ডিনারের ইনভাইটেশনেও বোরকা পড়ে যেতে হলো।পর্দার আড়াল থেকে বড়আব্বুকে সালাম করে, বড়আম্মুর সাথে বেশ কিছুক্ষণ গল্প হলো।

সাফা,সুরাইম উনার দূই মেয়ে। আর এক ছেলে আলফাজ।

খাওয়ার সময় হাফসার মনে হলো,কেউ পর্দার আড়াল থেকে ওকে দেখছে।

যাওয়ার আগে,ফাইয়াজ হাফসাকে টেনে একটা রুমে নিয়ে বলে, ‘এই দেখো আমার মামার গিটার,ড্রয়িং দেখিয়ে বলল এগুলো মামা আর্ট করেছেন।’আরও কত কি!

হাফসার অস্বস্তি হচ্ছিলো,কিন্তু বাচ্চা ছেলেটাকে কিছু বলাও তো যায় না।খানিক পর আরহাম নিজেই এসে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এখানে কেন আসছেন?’

হাফসা অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো।আরহাম ওকে নিয়ে যাওয়ার সময় হাফসার আবারও মনে হলো,বেলকনিতে পর্দার আড়ালে কেউ ছিলো।

*****
রুমে এসে অন্যমনষ্ক হয়ে কিছু ভাবছিলো হাফসা।মনটা খচখচ করছে,সত্যি-ই যদি কেউ ওকে দেখে ফেলে।পরপুরুষ এখন ভয়ানক রকম ভয় লাগে হাফসার।ঠিক করলো,আর ওই বাসায় যাবে না।

আধঘন্টা পর আসলেন আরহাম।হাফসা তখন লাইট অফ করে শুয়ে পড়েছে।

আরহামও চুপচাপ এসে পাশেই শুয়ে পড়লেন।হাফসা তখনও জেগে আছে।

পনেরো বিশ মিনিটে পেরিয়েছে প্রায়।এতক্ষণে আরহাম নিশ্চয়ই ঘুমে।

শুয়ে শুয়ে উনার দেওয়া কন্ডিশনের কথাই ভাবছিলো।চাবি না পাক,মুখ ফুটে কিছু চেয়েছেন।কন্ডিশন না মানলেও কিছু বলবেন না, তবুও কিছুটা অপরাধবোধ লাগছে।

ভাবলো,উনার ঘুমের মধ্যে দূটো কন্ডিশন পূরন করলে উনিও বুঝবেন না, আর কাল বলতেও পারবে,ও ওর শর্ত রেখেছে।

যেই ভাবা সেই কাজ।এগিয়ে এসে উঁকি মেরে দেখলো,আরহাম একপাশ হয়ে ঘুমিয়ে আছেন।জোরে কয়েকটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করে আলতো করে আরহামের গালে একটা চুমু দিয়েই দিলো।হৃদপিণ্ড তড়িৎ গতিতে লাফাচ্ছে।আবারও কিছুসময় নিয়ে আরহামের কানে ফিসফিস করে বলল,’আমি আল্লাহর জন্য আপনাকে ভালোবাসি।’

বলেই দম ফেলে সরে আসে।যাই হোক,অনেক অসম্ভব কাজ করে ফেলেছে।বুক থেকে যেনো ভারি পাথর সরে গেছে।একেবারে নিশ্চিন্ত হয়ে ওপাশ ফিরে ঘুমাতে গেলে কানে শ্রবনীয় হয়, ‘আমিও আল্লাহর জন্য আপনাকে ভালোবাসি।’

কথাটা শুনে তড়িৎ বেগে উঠে বসলো হাফসা।

বলল, ‘আ আপনি জেগে ছিলেন?’

আরহাম হাসতে হাসতে বললেন, ‘হুমম।’

হাফসা লজ্জ্বায় লাল নীল হতে হতে মৌণভাবে বলল, ‘চিট করেছেন।’

আরহাম জোরে হাসতে হাসতে বললেন, ‘আমি কোথায় চিট করলাম।আমি কি বলেছি,’আমি ঘুমিয়ে গেছি,এখন আর কিছু শুনতে অথবা কোনো স্পর্শ ফিল করতে পারবো না।’

লজ্জায় মরি মরি অবস্থা হাফসার।তবুও রাগ নিয়ে বলল, ‘হ্যাঁ চিট ই তো।জেগেই যখন ছিলেন, ঘুমানোর ভান ধরছিলেন কেন?’

আরহাম ওকে টেনে কাছে নিয়ে বললেন, ‘নাহলে শুনতে পারতাম এই ম্যাজিক ওয়ার্ড!আ’ম স্যাটিসফাইড।’

হাফসা গাল ফুলিয়ে শুয়ে রইলো একপাশ হয়ে।আরহাম ওকে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু দিয়ে বললেন,’এত সাইনেস আপনার?বি রেডি,এখন সাইনেস ভাঙ্গাবো আপনার।’

‘ম মানে?’

‘ইটস টাইম টু ডু সামথিং স্পেশাল হোমাপাখি।’

হাফসা চোখ বন্ধ করে জড়োসড়ো হয়ে ঘুমানোর ভান ধরে রইলো,অথচ আরহাম থেমে নেই।হাফসার গালে,কপালে উষ্ণ স্পর্শে দিয়েই চলেছেন…..

*****
সময়টা বিকেলের।ঈদের পরের দিন।হাফসা রুমে বসে লাভ বক্সটা দেখছিলো,চাবি দিয়ে খোলার পর অনেকগুলো পাঁচশো,এক হাজার নতুন নোট ছিলো।আবার ভাঁজ করা কয়েকটা টুকরোতে একেকটা চিরকুটে শব্দগুলো আলাদা করা ছিলো।যেগুলো একসাথে যোগ করলে দাঁড়ায়,”আমি আপনাকে ভীষণ রকম ভালোবাসি হোমাপাখি।’

এটাই মিলিয়ে একা একা হাসছিলো।
আরহাম কোনো প্রয়োজনে রুমে আসতে হাফসা বক্সগুলো গুছিয়ে রেখে বলল, ‘বাড়ি যাব।কাকামণি অসুস্থ।’

আরহাম কিছুসময় চুপ থেকে বললেন, ‘ভয় লাগে এখন সত্যি।’

‘আপনিই তো বলেছেন এসব ভুলে যেতে।আর লোকটা এখন পুলিশের কাছেই।তাহলে তো সমস্যা নেই।’

‘আচ্ছা।’

‘শুনুন না!’

‘হু?’

‘আমাকে খুঁজে পেলেন কীভাবে?’

আরহাম খানিক চুপ থাকলেন।এই একটা জিনিস উনাকে ভাবায়,জীবনে এই প্রথমবার কোনোকিছু হারানোর তীব্র ভয়ে কেঁদেছিলেন আরহাম।তাহাজ্জুদের প্রতি নি:শ্বাসে নি:শ্বাসে একটাই চাওয়া ছিলো।উনার শত ফোঁটা অশ্রু বৃথা যায়নি,হৃদয়ের অব্যক্ত অনুভূতি প্রকাশ করা লাগে নি।শুধু শেষ রজনী,আর নি:স্তব্ধতা উনার শক্তি ছিলো।সত্যি!দোয়াহর শক্তি দারুণ!

*****
দুলনায় পা ঝুলিয়ে গুনগুন করছে আদওয়া।মাঝে মাঝে আনমনে হেসে উঠছে।টেকনিক টা এভাবে কাজে দিবে,কল্পনাই করেনিও।মা-বাবা রাজি হয়েছেন,এখন বাকি নেকামো দিয়ে বাকিদেরও রাজি করানো কোনো ব্যাপার নাহ।কালকে সরাসরি লোকটাকে দেখবে,ভেবেই খুশিতে গান গাইতে মন চায় তাঁর।পরক্ষণেই নিজের মনকে একদফা শাসিয়ে ভাবলো,গান টান এখন সব ছেড়ে দিতে হবে।ধার্মিক হওয়া লাগবে।তাতে যদি লোকটার মন একটু গলে!

53★

৮৮
বাইরে থেকে আসছেন আরহাম।হাফসার রুমের সামনে দিয়ে যেতে যেতে বললেন, ‘উমায়ের এক গ্লাস অরেন্জ দিয়ে যেয়েন।’

কিছুক্ষণ পর হাফসা অরেন্জ এর গ্লাস হাতে গিয়ে দরজার বাইরে থেকে বলল, ‘আসবো?’

আরহাম সামনে ঘুরে বললেন, ‘আর কখনো যদি পারমিশন নেন,তাহলে আর আসা লাগবে না।’

হাফসা তো হতবাক!হালকা পিংক কালার শার্ট পড়েছেন আরহাম।পশমালা সাদা হাতে শার্ট গুটানো।সেভ করে আসছেন,আরো মোহময়ী লাগছে। মুখের আদলে মায়া মায়া ভাব প্রচুর বেড়েছে!

ফোনটা চার্জে লাগিয়ে হাফসার কাছে আসতেই হাফসা এলোমেলো দৃষ্টি সরিয়ে স্বাভাবিক হয়।

উনি ওর হাত থেকে গ্লাস নিয়ে বসিয়ে ওকেই নিজ হাতে একটু খাইয়ে দিলেন। তারপর ওর ঠোঁট ছোঁয়ানো জায়গায় নিজে চুমুক বসিয়ে পুরো গ্লাস শেষ করলেন।

হাফসা বোকার ন্যায় চেয়ে আছে।আরহাম মুচকি হেসে বললেন, ”আপনার মেইক করা অরেন্জ খেলেই আমার ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।কেনো বলুন তো!’

হাফসাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আরহাম আচমকাই ঠোঁট এগিয়ে হাফসার গালে চুমু দিয়ে বসলেন।কানে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললেন, ‘আপনার পারিশ্রমিক।’

বিস্ময়ে হতবাক হাফসার মুখ অটোমেটিক হা হয়ে গেল।এদিকে উনি তো মুচকি হেসে হেসে হাফসার দিকে তাকিয়ে আছেন।এই লোকটার সামনে থাকলে লোকটা ইচ্ছে করেই শুধু লজ্জা দিবেন।দ্রুত গ্লাসটা নিয়ে দরজার কাছে চলে যেতেই আরহাম বেশ শব্দ করেই হেসে দিলেন। শোনা গেলো উনার কন্ঠ, ‘একজন পুরুষকে সবচেয়ে বেশি এ্যাট্রাক্ট করে প্রিয়তমার সাইনেস।’

******
মাইমুনার জন্য একজন গাইনী স্পেশালিষ্ট নিযুক্ত আছেন।মাস কয়েক পরে পরে এসে চেকআপ করে যান।আজকেও এসেছেন।হাফসা সারাক্ষণ পাশেই ছিলো।থেরাপি দেওয়া হয় মাইমুনাকে।নতুন মেডিসিন হাফসাকে বুঝিয়ে দেওয়ার একপর্যায়ে প্রশ্ন করলেন, ‘তুমি কে?’

হাফসা না বুঝে বলল,’জ্বী?’

‘এ বাসায় বেশ কয়েকবার এসেছি।তুমাকে দেখিনি।কি হও মাইমুনার? ‘

হাফসা থতমত খেয়ে গেলো।কি উত্তর দিবে এখন।মাইমুনাকে দেখিয়ে বলল,’ আ আমার আপু তিনি।’

মাইমুনা মুচকি হাসছে।এ মেয়েটা এত বোকা।নিজেই বললেন, ‘আমার হাজবেন্ডের ওয়াইফ।’

ডাক্তার একটু অবাক হয়ে বললেন, ‘মানে আপনারা দূজন স্ত্রী?মিস্টারের?’

‘হুমম।’

মহিলা ডাক্তারটি অমায়িক হেসে বললেন, ‘বিলিভ মি!আর কোনো জায়গায় দূই স্ত্রীর মধ্যে এমন ফ্রেন্ডলি বন্ডিং দেখিনি।হ্যাপি উইস ফর বথ ওফ ইউ।’

****
সময়টা মাগরিবের পর।আইরা ইংল্যান্ড থেকে সবার জন্য গিফট পাটিয়েছেন ড্রয়িং রুমে সবাই বসে ওগুলোই দেখছিলাম।হঠাৎ কলিংবেল বাজলে আরহাম এগিয়ে দরজা খুলতেই উপস্থিত সবাইকে দেখে ভ্রু যুগল কুঁচকে গেল উনার।

পেছনে তাকিয়ে হাফসা আর মাইমুনাকে ইশারা করলেন মায়ের ঘরে যেতে।সালাম দিয়ে ভেতরে আসার অনুরোধ জানালেন।

আহনাফ তাজওয়ার আয়বীর খানকে দেখেই গিয়ে জড়িয়ে ধরলেন।

দূ বন্ধুর কুশলাদির আড়ালে মিস সেমু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছেন পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আরহামকে।মেয়ের এতো পছন্দ বলে কথা!পুরোপুরিই তো ঠিকঠাক ছেলেটা,কিন্তু বিবাহিত না হলেই হতো।এমন পরিবারে মেয়ে মানিয়ে নেওয়ার নয়!

আরহাম পুনরায় তাদের বসার অনুরোধ করে ভেতরে চলে গেলেন।

চোখ মুখ ফুলিয়ে সোফার এককোণে বসে আছে আদওয়া।আজ ও শাড়ি পড়ে আসলো,কিন্তু লোকটা ভুল করেও তাকালেন না একবার।

বিগত দিনগুলো নিজেকে শত চেষ্টা করেও মনের সিদ্ধান্ত বদলে পারে নি।তাই একেবারে চরম পর্যায়ের বোকামো করে মা-বাবাকে কোনোমতে রাজি করালো।এ কয়দিন গভীর ভাবে আল্লাহ কে স্মরণে রেখেছে সে।প্রতিটা মোনাজাতে আরহামকে রেখেছে।লোকটা সুলাসা হিসেবেও তো আমাকে বিয়ে করতে পারেন!

খানিক পর,আম্মুর রুমে গিয়েই জড়িয়ে আম্মুকে ধরলো সে।আন্টিকে কে ওর বিশেষ কোনো কারণ ছাড়াই ভালো লাগে।মানুষটা খুব কোমলমতি।আদওয়ার চোখে মুখে কয়েকটা চুমু দিয়ে বললেন, ‘সেই যে গিয়েছিলে এই আসার সময় হয়েছে?ওইদিন কথাও ঠিক করে বললে না।তাড়াহুড়ো করে চলে গেলে!’

আদওয়া দৃষ্টি নামিয়ে ফেলে।একটু পর উনি যখন অবাধ্য প্রস্তাবটা শুনবেন তখন কি আমাকে এভাবে ভালোবাসবেন?’

‘কি হলো!চুপ হলে কেন?’

আন্টির প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগেই মিসেস সেমুও রুমে ডুকলেন।সালাম কুশলাদি বিনিময় করে পরিচিত হওয়ার পর আম্মু আদওয়াকে বললেন, ‘তুমি হাফসা আর মাইমুনার কাছে যেয়ে গল্প করো।পাশের রুমটাই ওদের।’

‘জ্বি আচ্ছা।’

মাইমুনার ঘরে যাওয়ার সময় দরজায় অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে আরহামের সাথে ধাক্কা খেতে গিয়েও বেঁচে গেলো সে।আরহাম তৎক্ষনাৎ পিছু সরে ওকে ঢু্কার জায়গা দিয়ে বেরিয়ে গেলেন।উনার হাতে টি-পট।একটা সুন্দর সুবাস নাকে ভেসে গেলো।

হাফসা এগিয়ে এসে ওকে সালাম দিয়ে পরিচিত হলো তিনজন।কিছুক্ষের মধ্যে আসর জমেছে যেনো।
হঠাৎ আদওয়ার মনে হলো,ওর মন খারাপ সত্যিই উবে গেছে।হাফসা মাইমুনা তখনও খিলখিল করে হেসে চলেছে।
আনমনেই হেসে উঠলো সে।বলা বাহুল্য দূই আপু গুলো ভীষণ মিশুক,ভালো।

একপর্যায়ে আরহামের কথা উঠতে মাইমুনা হাসতে হাসতে বললেন, ‘উনি চা বানাতে কিচেনে গিয়েছিলেন। চা-পাতি কতটুক দিবেন জানতে আস্ত টি পট নিয়ে এসছেন।’

আদওয়া কিছুটা ইতস্তত হয়ে বলল,’ম্ ম্ মানে?উনি চা কেন করছেন?’

‘আপনার বাবা তো ড্রয়িং রুমে।তিনি আমাদের জন্য নন-মাহরাম।তাই শাহ কিচেনে যেতে দিবেন না।’

‘ওহ।আপনারা পুরোপুরি পর্দা করেন তাই না?’

‘আলহামদুলিল্লাহ।করতে বাধ্য।একটু কম বেশ হলেই উনি শাসন করেন।’

‘শাসনও করেন?একদম স্বল্পভাষী লাগে।’

‘হুম শাসন করেন,ভালোওবাসেন।’

আদওয়ার মনে অজান্তেই একটা ভালোলাগা যোগ হয়!

*****
গেস্টদের ডিনারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।মানা করা সত্ত্বেও আম্মুর সাথে একাজ-ওকাজে সাহায্য করছেন আরহাম।মিসেস সেমু,তীক্ষ্ণ নজরে আরহামের কার্যকলাপ লক্ষ্য করছেন।মা ভক্ত ছেলে।এপর্যন্ত এখনো ভালো লেগেছে তাকে।একপর্যায়ে মনে মনে আফসোস করতে লাগলেন, ছেলেটা যদি অবিবাহিত হতো, তাহলে কোনো অবজেকশনই থাকতো না।

আয়বীর সাহেব আরহামকে ডেকে পাশে বসালেন।
বেশ কিছুক্ষণ ধরে, উনার মেয়ের গুনগান আরহামের মধ্যে অস্বস্তি সৃষ্টি করছে।সৌজন্যমুলক হেসে মাথা দূলিয়ে শুনে যাচ্ছেন সব।

একপর্যায়ে কোনো ভণিতা ছাড়াই সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিতেই আহনাফ তাজওয়ার চমকে যান।নিজেকে স্বাভাবিক করে বললেন, ‘তুই মনে হয় খোঁজ নিয়ে আসিসনি।আমার ছেলে বিবাহিত।’

আরহামও নীরবে সম্মতি দিলেন।বাবা কথাটা না বললে নিজেই বলতেন।দূজনকে পুনরায় চমকে দিয়ে ভদ্রলোক বলেই বসলেন, ‘আমি জানি।আর খোঁজ নিয়েই এসেছি।’

উনাদের দূজনের তর্ক-বিতর্কে মাঝ থেকে আরহাম নিজেই বলে উঠলেন, ‘ক্ষমা করবেন।আমি আমার দূই আহলিয়া নিয়ে সন্তুষ্ট।নতুন কাউকে প্রয়োজন নেই,ইন শা আল্লাহ পড়বেও না।আই থিংক,উনার স্ট্যাটাস অনুযায়ী যোগ্য পাএের অভাব হবে না।’

ভদ্রলোক আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলেন কিন্তু আরহাম অযুহাত দেখিয়ে উপরে চলে আসলেন।

আড়াল থেকে আম্মুর সাথে ড্রয়িংরুমে উনাদের কথাগুলো শুনছিলো আদওয়া।
আরহামের সরাসরি প্রত্যাখানে একপ্রকার কেঁদে দিয়ে বলে,’তুমি কথা দিয়েছিলে মা,আমার কথা রাখবে।উনি রাজি না হলে,আমি কি করবো আমি জানিনা।রাজি করানোর দায়িত্ব তোমাদের।’

*****
আরহামের আম্মু উক্ত প্রস্তাব শুনে একটু অবাক হলেও,তিনি মনমালিন্যতার পরিবর্তে আদওয়াকে বুঝিয়ে বললেন, ‘আবেগের বয়স।ক্ষনিকের মোহ কেটে যাবে।আর আরহাম স্ট্রিক্ট।তুমি এমন কারোর সাথে মানিয়ে নিতে পারবে না,কারন তুমার বেড়ে উঠার পরিবেশ ভিন্ন।’

আপাতত ওর কোনো কথা কানে যাচ্ছে না।পাশে বসা মায়ের দিকে তাকিয়ে ঘনঘন চোখ দিয়ে শাসাচ্ছে।বাসায় গিয়ে আবারও যে নিজের পাগলামো শুরু তা ভেবে মিসেস সেমু চিন্তিত হচ্ছেন বারবার।

ডিনারে লেট হয়ে গেলো।ঘড়িতে তখন এগারোটা।আদওয়ার ফ্যামিলি সহ আহনাফ তাজওয়ারকেও খেতে বসতে হলো।এরই মধ্যে অনেকক্ষণ পর আরহাম নিচে নামলেন।কোনোদিকে না তাকিয়ে চুপচাপ কিচেন থেকে প্লেটে খাবার নিয়ে মাইমুনার রুমের দিকে এগোলেন।

আরহামকে একেবারে চুপচাপ দেখে বাধ্য মেয়ের মতো খাচ্ছিলেন দূজনে।উল্লেখ্য ঘটনা তাদের অজ্ঞাত।খানিক পর বাবা হাতে ভাতসহ তরকারি নিয়ে আসলেন।পাশে বসে বললেন, ‘কি বলবো তাদের?’

‘না করে দিন।’

‘হ্যাঁ।এটা তো মানার নয়।তবুও আয়বীর বুঝতেই চাচ্ছে না।’

‘এরা জানে?’বাবা হাফসা মাইমুনার দিকে ইশারা করে প্রশ্ন করতে আরহাম মাথা নাড়ালেন।

আব্বু এ বিষয়ে বললে,দূজনের মুখেই আধার নেমে আসে।মাইমুনা তো পারলে কেঁদে দিবে।হাফসা ছলছল চোখে চুপচাপ শুনছে,ওর ধৈর্য ধরার ক্ষমতা অসীম।

আরহাম দূজনের থেকে চোখ সরিয়ে আব্বুকে বললেন, ‘কখনো কোনোদিনও সম্ভব নয় আব্বু।আমার কিছুই করার নেই।’

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।