অপেক্ষা – মাহা আরাত | পর্ব – ১৮

27★

আরহাম নিচে নামতে নামতে কলিং বেল বাজলো।এত সকালে কে হতে পারে?নিউজপেপারের লোক হয়তো!সন্দেহ বশে দরজা খুলতেই আরহাম চমকে গেলেন।অল্পক্ষণের জন্য নিজের চোখ আর মস্তিষ্ক কে যেনো বিশ্বাস করতে পারলেন না।তড়িৎ গতিতে হাতে থাকা ফোনে যখন আব্বুর আননোউন নাম্বারটা দেশি নাম্বার দেখলেন তখনই গিয়ে ঝাপটে ধরলেন আব্বুকে।আহনাফ তাজওয়ার ও ছেলেকে দূহাতে আগলে নিলেন।বাবা ছেলের প্রায় তিনবছরের মাথায় দেখা।খুশির আনন্দে দূজনেরই চোখ ভিজে গিয়েছে।এদিকে বাইরের দিকে আরহামের চিৎকারের শব্দে রুম ছেড়ে বেরোলেন আম্মু। একেবারে দরজার কাছে এসে বাইরে থাকা মানুষটাকে দেখতেই অধরে প্রশান্তির হাসি ফুটলো।সালাম বিনিময় হলো দূজনের।

‘আব্বু না জানিয়ে আসলেন? ইট ওয়াজ এ্যা এমেজিং সারপ্রাইজ!’

‘বলছিলাম না সারপ্রাইজ আছে।বাই দ্যা ওয়ে আমার বউমা দূজন কোথায়?’

সাথে সাথে আরহামের মুখ মলিন হয়ে এলো।কেন জানি হুট করেই চোখ ঝাপসা লাগছে।উমায়ের থাকলে বোধহয় এমন অনুভূতি হতো না।উনার শূন্যতায় হয়তো এমন হচ্ছে।নিজেকে ধাতস্থ করে বললেন, ‘উমায়ের বাড়ি চলে গেছেন।’

‘কবে?’

‘গত পরশু।’

‘ভালো কথা।গিয়েছে থেকে আসুক কয়দিন।তুমি কোনো তাড়া দিবে না আসার।’

‘আপনি আসছেন আমি…..

‘উহু তাড়া দেওয়ার দরকার নেই।সে সানন্দে থেকে আসুক।আমি তো চলে যাচ্ছি না।’

‘জ্বী।বুঝতে পেরেছি।’

মাইমুনাকে রুম থেকে বেরিয়ে আসতে দেখে আরহামের হাস্যোজ্বল মুখটা নিভে গেলো।সেটা আর কেউ লক্ষ্য না করলেও করলেন আহনাফ তাজওয়ার।তততক্ষণে মাইমুনা আব্বুকে দেখে অবাক হওয়ার পাট চুকিয়ে সালাম দিয়ে কুশলাদি বিনিময় করছে।আরহাম চুপচাপ বাইরে চলে গেলেন।

________
পশ্চিম আকাশে সূর্য ঢলে পড়ছে আস্তে আস্তে।খই ছিটানো শেষ হলে হাত ঝেড়ে ছাদের ডিভানে পা তুলে বসলো হাফসা।জীবনের ছক মিলাতে মিলাতে অবাক না হয়ে পারলো না।গত একটা সপ্তাহে কতকিছু পাল্টে গিয়েছে। ইসসসস! বিয়ে না হলে থাক না একটা আফসোস উনাকে না পাওয়ার!তবুও এতো যন্ত্রণা তো সহ্য করতে হতো না।

আজকে তাসফি এসেছে।রাদ’এর বোন।হাফসার ছোট।তাসফি’র সাথে সখ্যতা সেই ছোটবেলা থেকেই।আজকে সকালেই এসেছে সে।দিনটা ওর সাথেই কেটেছে।তাসফি’র কাছ থেকে শুনেছে রাদ ভাই নাকি একদম পাল্টে গেছেন।সবসময় চুপচাপ থাকেন।আগের চাঞ্চল্যতা নেই।তাসফি বলল, ‘জানো আপুনি,আমার খুব খারাপ লাগে ভাইয়াকে এমন মনমরা দেখতে।আগের মতো আমার সাথে কথা বলে না,ঝগড়া করে না।একদম হাসে না।’
তাসফির কথাগুলো শুনতে হাফসার খারাপ লেগেছে।গোপনে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে ভাবে,

আমার জন্যই তো।কিন্তু আমি কি করব।আমার কিছুই করার ছিল না।অস্বীকার তো করতে পারিনা না যে জীবনে একজন কে ভালোবেসেছি।উনি হচ্ছেন আরহাম।আর কারোর জন্য কোনো রকম অনুভূতি আমার মনে নেই।

হাফসা উদাস হয়ে আকাশপানে চেয়ে আছে।এসবই ভাবছিলো।হঠাৎ কারো পায়ের আওয়াজে চমকে পেছনে তাকালো।রাদকে একপলক দেখা মাএই হৃৎপিণ্ড তড়িৎ গতিতে লাফাতে লাগলো।নিকাবে ডেকে নিলো মুখ।পা অসার হয়ে যাচ্ছে, দম বন্ধ লাগছে।কিন্তু কেনো এমন হচ্ছে?গায়রে মাহরামের উপস্তিতি বলে?হাফসা এলোমেলো পায়ের ধাপ ফেলে চলে যেতে চাইলে রাদ বলে উঠলো, ‘যেয়ো না প্লিজ।আমি কিছু করব না।কাছে আসছি না।’

রাদ’এর অনুরোধিত কন্ঠে হাফসা দাঁড়িয়ে পড়লো।

‘কেমন আছো?’

হাফসা চেয়েও মুখ থেকে একটা শব্দ ও উচ্চারণ করতে পারলো না।রাদ আবার জিজ্ঞেস করলে মাথা এপাশ ওপাশ নাড়িয়ে বুঝায় ভালো আছে।

‘আরহাম ইজ সো লাকি হাফসা।এমন পবিএ ফুল ক’জনেই বা পায়!’

মনে একটু সাহস উঁকি দিলো।উনি যদি সত্যি ভালোবাসেন তাহলে একটা অনুরোধ রাখবেন নিশ্চয়ই।কথাগুলো সাজিয়ে বলেই ফেলল, ‘আ্ আ্ আমার একটা কথা রাখবেন রাদ ভাই?’

রাদ চমকিত হলো।মৃদু হেসে উচ্ছাসিত কন্ঠে বলল, ‘তুমি আমার সাথে কথা বললে?তুমি হাফসা?ইউ নো হুয়াট এই প্রথম তুমার কন্ঠটা কাছ থেকে শুনতে পেয়েছি।’

বলো কি বলবে?তুমি যা বলবে তাই হবে।কথা রাখবো আমি।’

‘আপনি আমাকে ভুলে যান।’

হাফসার এমন অবাধ্য আর্জি শুনে রাদ নীরব হয়ে গেলো।বেশ সময় নিয়ে নিজেকে সামলে বলল, ‘এটা কেমন আবদার?তুমি আমার হওনি।এখন তুমার স্মৃতি নিয়েও কি বাঁচতে দেবে না?আমি তো তুমাকে বিরক্ত করছি না হাফসা।’

‘আমাকে মনে রেখে কি হবে?আপনি তো কষ্ট পাবেন।’

‘হুমম অভ্যেস আছে।’

‘পাগলামি করবেন না।ভুলে যান না প্লিজ।আপনার তো একটা ফ্যামিলি আছে,তারা আপনাকে খুশি দেখতে চায়।’

‘আমার খুশির জিনিসটা এনে দিতে পেরেছে?’

আরো কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, ‘আমি তোমাকে ভুলতে পারব না।’

(৫২)
মাগরিবের নামাজ পড়ে তিলাওয়াত করে রুমের বেলকনিতে আসলো হাফসা।বারান্দাটা খোলামেলা নয়।চারিদিকে সাদা পাতলা পর্দা।বাইর থেকে ভেতর দেখা যায় না।ফুলের টবের মধ্যে সাদা ঝালরবাতি ।বিভিন্ন কালার লাইট জ্বলছে উপরে।আর সোফার পাশে কর্ণারে ছোট্ট একটা সেলফ আছে।যেখানে কুরআন, কুরআনুল কারীম(অনুবাদ),আরও কিছু ইসলামিক বই।

হাফসার মনটা ভার হয়ে আছে বিকেলে রাদ’ ভাইয়ের সাথে কথা বলার পর থেকে।আরহাম বিকেলেও ফোন করে কথা বলতে চেয়েছিলেন।হাফসা অজুহাত দিয়ে চলে আসে।কথা বলে নি।কেন জানি অসহ্য লাগছে সবকিছু। একটা বিয়ে কিছু মানুষের জীবন কত অদ্ভুত ভাবে পাল্টে দিলো।যেমন আমি নিজে।তেমনি রাদ ভাই!

ফ্ল্যাশব্যাক____

‘আমার খুশির জিনিসটা এনে দিতে পেরেছে?আমি তোমাকে ভুলতে পারব না।’

‘এই যে দেখো’ রাদ’য়ের কন্ঠে হাফসার দৃষ্টি যায় বুকপকেট থেকে বের করা উনার হাতের ছবিটায়।দূর থেকে অস্পষ্ট লাগছে।হাফসা একটু ভালো করে তাকাতেই দেখলো ওটা কোনো বাচ্চার ছবি।

রাদ জিজ্ঞেস করলেন, ‘জানো কে এটা?’

হাফসার না বোধক অভিব্যক্তিতে তিনি বললেন,

‘ওটা হাফসা।তুমি নিজে।’

হাফসা অবাক হয়ে বলল, ‘এ্ এটা আমি হতে যাবো কেন?’

‘তুমার ছোটবেলায় তোলা।আমি নিজে তুলেছিলাম।এটা আমার কাছে যত্নে আছে ১৩ টা বছর ধরে।’

হাফসা বোধ হয় অবাক হলো ভীষণ।

‘বিশ্বাস হচ্ছে না জানি তবে এটাই সত্য।বাদ দাও।তোমার সংসার কেমন চলে বলো।’

হাফসা আগের ভাবনা’ই মত্ত।ছবিটা কীভাবে তাঁর হতে পারে?আর রাদ ভাইয়া ও এত বছর ধরে ওটা সযত্নে রেখেছেন কেন?

‘বললে না যে?’

হাফসা চমকে তাকায়।

‘সংসার কেমন চলছে?’

ইচ্ছে হলো বলতে ‘ভালো না’।মন ওকে ভাসিয়ে নিয়ে চলল আরেক ভাবনায়।’আমি তো ডির্ভোস দিব উনাকে।আমি আর চাই না উনাকে।এনাফ হয়েছে এতোদিনে।মূলত উনি আর আপুর এ দূজনের মাঝে আমি কাঁটা।’

‘কি হলো তোমার?’ রাদ চুটকি বাজিয়ে বলল।

হাফসা অন্য চিন্তার ভীড়ে অকপটে বলে দেয়, ‘ডির্ভোস…

‘হুয়াট?ডির্ভোস?কি ডির্ভোস?’

হাফসা জিভ কাটে।তৎক্ষনাৎ মাথা নাড়িয়ে বলে, ‘কিছু না।’

রাদ আচমকা প্রশ্ন করে বসে, ‘হাফসা তুমি সত্যি ভালো আছো তো?কেউ কি তোমাকে কষ্ট দেয়?’

হাফসা আশপাশে তাকালো।নিচ থেকে তাসফির গলায় ওর ডাক এসছে।এখানেই কথা শেষ করে বলে, ‘আমি আসি।আমার জন্য কষ্ট পাবেন না প্লিজ।আপনার ফিউচার নিয়ে ভাবুন।’

রাদ অস্থির হয়ে বলে, ‘আমার কথার উত্তর দিলে না তো?বলো তুমি সত্যি ভালো আছো তো?’

‘আলহামদুলিল্লাহ।’

তাসফি আবারো ডাকছে।হাফসা চলে যাচ্ছে।চাইলেও অনেক কিছু বলা যায় না।হাফসা যখন সিঁড়ি নামতে শুরু করলো, তখনই রাদকে ভেজাকন্ঠে বলতে শুনে, ‘আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি হাফসা।তুমাকে হারিয়ে ফেলেছি ভাবলেই আমার দূনিয়াটা এলোমেলো হয়ে যায়।’

হাফসার বুকটা ধক করে উঠে।পা জোড়া থেমে যায়। রাদ মনে করলো হাফসা চলে যাচ্ছে।তাই দৌড়ে এসে ওপরের রেলিং ধরে কাতর কন্ঠে বলল, ‘কখনো যদি মনে হয় তুমি ভালো নেই,তাহলে সবকিছু ছেঁড়েছুড়ে আমার কাছে আসবে হাফসা?আমি তোমার অপেক্ষায় থাকবো।তুমাকেই ভালোবাসবো শুধু।আমার জীবনে আর কাউকে জড়াবো না।আসবে তুমি?’

হাফসা উত্তর দেয় না। দ্রুতপায়ে অন্দরমহলে চলে যায়।

_________
মাগরিবের নামাজ পড়ে আরহাম আর বাবা বাসায় আসলেন একসাথে। সন্ধ্যায় নাস্তা করতে বসেছে সবাই। মাইমুনা এককোণে মন খারাপ করে বসে আছেন।ঘনঘন তাকাচ্ছেন আরহামের দিকে।আরহাম বিন্দুমাএ পাত্তা দিচ্ছেন না।মাইমুনার চোখ বেয়ে পানি পড়ে।শাহ হঠাৎ এমন করছেন কেন?উনি কখনো আমাকে ইগনোর করতেন না।এমনকি দিনে কমপক্ষে তিনবার আমার সাথে দেখা করতে আসতেন,গল্প করতেন। কিন্তু এখন আমার দিকে ফিরেও তাকান না।শাহ কি সব বুঝতে পেরে গেলেন?

টিভিতে ইসলামিক একটা চ্যানেল চলছে।ওইদিকেই মনোযোগ সবার।হঠাৎ আরহাম বলে উঠলেন, ‘উমায়ের কে খুব মিস করছি আমি।’

তিনজনে চমকে আরহামের দিকে তাকালো যেনো আরহাম অবিশ্বাস্য কিছু বলে ফেলেছেন।আরহাম আগের মতোই বলে উঠলেন, ‘আজকে রাজধানীর বাইরে যাওয়ার জন্য উনার বাড়িতে যেতে পারিনি।আমি এখন যাব।নিয়ে আসব উনাকে।’

‘এখন যাবে?এখন তো রাত।রাতে কেন নিয়ে আসবে বউমাকে।কাল সকালে যাও।’

আব্বুর কথায় নাকোচ করে বললেন,

‘হোক রাত।আমি এখনি যাব।’

আরহাম আম্মু আব্বু দূজনেরই নিষেধাজ্ঞা না শুনে উপরে চলে গেলেন।মাইমুনা আর তীব্র কান্নার বাঁধ আটকাতে পারলেন না।চেয়ার টেনে রুমে চলে গেলেন।

মাইমুনা যেতেই আহনাফ তাজওয়ার বললেন, ‘আরহাম আর মাইমুনার কি হয়েছে?আরহাম মাইমুনাকে ইগনোর করে কেন?’

_________
ঘড়িতে তখন নয়টা বেজে একুশ মিনিট।হাফসা নামাজ পড়ে তিলাওয়াত শেষ করেই উঠেছে কিছুক্ষণ আগে। একুরিয়ামে খাবার দিচ্ছিলো।গলডেন ফিসের দিকে একনজরে তাকিয়ে সেটার সৌন্দর্য অবলোকন করছিলো।এত সুন্দর কেন আল্লাহর প্রতিটি সৃষ্টি!

তখনই বাইরে পুরুষ মানুষের আওয়াজ শুনে।তৎক্ষনাৎ মুখ ঢেকে নেয়।দরজায় নক হলো।কাকামণি ডাকছেন।
হাফসা ডোর খুলতে তিনি বললেন,

‘আরহাম এসেছে।’

28★

কাকামণি বললেন ‘আরহাম এসেছে।’

হাফসা ভীষণ চমকালো।জিজ্ঞেস করলো, ‘কখন?’

‘হয়েছে কিছুক্ষণ। নিচে ছিলাম আমরা।’

‘ওহ।’

‘সে আসছে।যাই আমি।’
হাফসা কিছুক্ষণ ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে।কি থেকে কি হলো বুঝতে একটু বেগ পেতে হচ্ছে।মন টা চূড়ান্ত খারাপ এখনো।আনমনে দরজা টা চাপিয়ে দিতে চাইলে কেউ একজন বাঁধা দিলো।

হাফসা চট করে খুলে দেখলো আরহাম।উনি তাকিয়েই আছেন।হাফসা দৃষ্টি নামিয়ে নিলো।সালাম দিয়ে ভেতরে আসতে বললো।

উনি রুমের ভেতর এসেই দরজা লক করে দিলেন।এরপর অপলক কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন ওর দিকে।যেনো কত দিনের তৃষ্ণার্ত চোখজোড়া শান্ত করছেন।

হাফসা একটু ইতস্তত বোধ করলো।উনার সাথে চোখ মেলানোর সাহস হয়ে উঠে নি।

আরহাম ওর দিকে এগিয়ে যেতে ও পিছিয়ে যায়।আরহাম আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন, ‘আই মিসড ইউ উমায়ের।’

মলিন মুখে বলল, ‘বসুন আমি নিচ থেকে আসছি।’

আরহাম তৎক্ষনাৎ ওর হাত ধরে বললেন, ‘উহু যাবেন না।আমার চোখের সামনে থাকেন।শান্তি পাচ্ছি।’

হাফসা কোনো উত্তর দিলো না।হাত ছাড়িয়ে নিয়ে একটু দূরত্ব রেখেই বসলো।

উনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘কেমন আছেন?’

‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো।’

‘আপনার শাস্তি আছে।’

‘ক্ কেন?’

‘পারমিশন না নিয়ে আসছেন।’

হাফসা মলিন মুখে জবাব দেয়, ‘বলেছিলেন তো আমি আসলে আসতে পারবো।আপনার কোনো সমস্যা নেই।’

‘সেটা বলেছিলাম।কিন্তু একা আসতে বলিনি তো।’

‘কাকামণি ছিলেন তো।’

উনি ঠোঁট চেপে মাথা নাড়ালেন।এই মেয়েটা আমার ভেতরের অনুভূতি গুলো বুঝে না।
কিছুক্ষণ ওর দিকে পলকহীন তাকিয়ে অসহায় কন্ঠে বললেন, ‘মুখটা টা কি এমন মলিক করে রাখবেন?আপনার এই বিষাদ চেহারা আমার বুকে চিনচিনে ব্যাথা ধরায়।’

………

‘আমি আসায় একটুও খুশি হন নি ?তাই না?’

………

‘কি হলো বলুন?’

হাফসাকে চুপ থাকতে দেখে আরহাম বললেন, ‘সত্যি করে বলুন খুশি হয়েছেন কী না?মিথ্যা আমি পছন্দ করি না।’

‘বু্ বুঝতে পারছি না।’

‘বুঝেছি।আমি চলে যাচ্ছি।’

বলে আরহাম সত্যি সত্যিই উঠে দাঁড়ালে হাফসা গিয়ে উনাকে থামিয়ে বসায়।

‘না না যাবেন না আপনি।’

‘কেনো?’

‘কাকামণি আমাকে কথা শুনাবে।’

‘এজন্য যাবো না??’

‘হুমমম।’

পরিবেশ আরও কিছুক্ষণ চুপচাপ।হাফসার দৃষ্টি ফ্লোরে।যেনো খুব মনোযোগ সহকারে কিছু দেখছে।আর আরহাম দেখছেন ওকে।এতক্ষণ কথা বলার পরও উনি সহজ হতে পারলেন না।

আরহাম জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস নিলেন।হাফসা উনার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘পানি দেব?’

উনি মাথা নাড়িয়ে না করলেন।ওর দিকে ঘুরে ওর হাত ধরে কিছুক্ষণ হাসফাঁস করতে করতে বললেন, ‘আইএম সরি ফর এভরিথিং।আমি কীভাবে ক্ষমা চাইবো?আপনার সাথে যা করেছি ক্ষমার যোগ্য না আমি।তবুও বলবো প্লিজ৷ ক্ষমা করে দিন।আর এমন ভুল কখনো হবে না।’

হাফসা চুপচাপ তাকিয়ে রয়।উনি খুব অনুতপ্ত সুরে ক্ষমা চাচ্ছেন।

‘আমি জানি আপনি নেগেটিভ কিছু করেননি মাইমুনার সাথে।বাট উনার এমন জেলাসির কারণ বুঝতে পারছি না আমি।আমি যথেষ্ট সময় দেই উনাকে।তবুও হয়তো…বাট আপনার সাথে উনি এমন করবেন আমি আশা করিনি।’

হাফসা ভাবলো উনি কি সব জেনে গেলেন।জানতে চাইলো, ‘আমার সাথে মানে?’

(৫৪)

‘উনি আপনাকে আমার কাছে খারাপ বানানোর জন্য এসব করেছেন।আপনার কোনো দোষ ছিলোনা।আমিও তো ভুল ভেবেছিলাম।আপনি আমাকে বলতে পারতেন।’

‘কি বলতাম?’

‘উনার এগুলো সাজানো, মিথ্যে।’

হাফসা মাথা নিচু করে নিলো।ওর মনটা ক্রমশ খারাপ হয়েই যাচ্ছে।

উনি কথা বলতে বলতে হঠাৎ হাফসার হাতের দিকে তাকাতে দেখলেন হাতের পিঠে কালসে দাগ।

আরহাম ব্যস্ত হয়ে হাতের পিঠে হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হাতে কী হয়েছে?পুড়লো কীভাবে?’

‘তেমন কিছু না।’

‘উহু আমার প্রশ্ন ইগনোর করবেন না বলুন কীভাবে পুড়লো?’

‘ও্ ও্ ওই কফির কাপ লেগে।’

‘কীভাবে লাগলো?’

‘এমনিই এক্সিডেন্ট।’

‘হুয়াটএভার আমি জানতে চেয়েছি কীভাবে লেগেছে?’

হাফসা উত্তর দিলো না।উনার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকাতেই উনি বললেন, ‘এটাও কি মাইমুনা…..?
হাফসা মাথা নাড়ায়।

উনি হাফসার কোমল হাতটা নিজের হাতে নিয়ে বললেন, ‘সরি ফর এভরিথিং।আই এম অলসো সরি ফর ওল হার মিসটেকস।আই কোড নট কিপ ইউ উয়েল।সরি মাই হার্ট।ভেরী ভেরী সরি।’

উনি হাফসার উত্তরের অপেক্ষায়।উমায়ের হয়তো ক্ষমা করে দিবেন।হাফসা তবুও নিজের সিদ্ধান্ত বদলালো না।কিছুটা সময় নিয়ে মনের ভেতরে কথাগুলো গুছিয়ে বলতে লাগলো,

‘আপনি…..’

‘আমি?’

‘আপনি আমাকে ডির্ভোস দিয়ে দিন।’

আরহাম তৎক্ষনাৎ রেগে ওকে আঘাত করতে হাত উপরে তুলতে হাফসা চোখ খিঁচে নেয়।

(📌গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক।এটাকে বাস্তবের সাথে মিলাবেন না কেউ)

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।