অন্ধকার আছে বলেই আলোর মর্ম বোঝা যায়৷ প্রকৃতির নিয়মেই রাত্রির আগমন ঘটে। তাই বলে কি মানবকূল বিচলিত হয়? নাহ, তারা অপেক্ষা করে প্রভাতের। তারা জানে সন্ধ্যায় যে সূর্য অস্ত যায়। সময়ের চাকা ঘুরে সে সূর্য উদিতও হবে। মানুষের জীবনে সুসময়, দুঃসময়, প্রাপ্তি, অপ্রাপ্তি ঠিক সূর্যাস্ত আর সর্যদয়ের মতোন। আজ দুঃখ পেয়েছ? অপেক্ষা করো কাল সুখী হবে। প্রাপ্তির খাতা আজ শূন্যতায় ভুগছে? সবুর করো কাল পরিপূর্ণতায় রূপ নেবে। মানুষের জীবনের এই ধারাবাহিকতা চলছে, চলবে৷
কেটে গেছে কয়েকটি সপ্তাহ। এরই মধ্যে বেশকিছু হসপিটালে এপ্লাই করে রেখেছে কার্ডিওলজিস্ট সৌধ চৌধুরী। পরিবার, বন্ধু কাউকে না জানিয়েই। নিজের হার্টের অবস্থা যখন বিধ্বস্ত তখন সে কী করে অন্যের হার্টের চিকিৎসা দেবে? এমন প্রশ্নবাক্যকে পুঁজি করেই সবকিছু ছেড়ে ছুঁড়ে কাটিয়েছে এতদিন। এবার কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে। হৃদয় থেকে অনুভব করছে তার ভালো থাকা উচিত। ক্যারিয়ারে ফোকাস করা উচিত। সর্বোপরি তাকে যারা ভালোবাসে তাদের কষ্ট দেয়া অনুচিত। যে ভালো থাকতে ছেড়ে গেছে সে ভালো থাকুক। সে ক্ষত টুকু নিয়েই না হয় ঘুরে দাঁড়াক।
তানজিম চৌধুরী খবর পেয়েছে ছোটো পুত্রধন আর নেশা করছে না। দিনে একটা, দু’টো সিগারেটেই সীমাবদ্ধ থাকছে। মাতৃহৃদয় এখন অনেকটাই শান্ত। কিন্তু সৌধ আচমকা কিছুটা স্বাভাবিক হওয়াতে চিন্তায় পড়েছিল। সে চিন্তা দূর হলো শাশুড়ির কথায়। সৌধর দাদুনি আশায়রা বলেছেন,
‘ বড়ো বউ তুমি খেয়াল করছ কিনা জানি না।সুহাসের বোন বিয়েতে না করার পর থিকাই দাদু ভাই স্বাভাবিক হইতেছে। তোমরা তো জোর কইরা চাপাই দিতে চাইছিলা৷ এখন বুঝলা তো তোমার ছেলের আসল ভালো কোথায় ছিল? ‘
শাশুড়ির কথা শুনে আশ্বস্ত হয় তানজিম। যদি এটাই সত্যি হয় বেশ তো। ছেলেটা ভালো থাকুক এটাই মূখ্য বিষয়। একজন মায়ের এর বেশি কিছু চাওয়ার থাকে না। সিমরান বিয়েতে না করেছিল বলে অভিমান হয়েছিল তার৷ কিন্তু ছেলেকে ভালো থাকতে দেখে সব অভিমান কেটে গেল। মনে মনে ভাবল, যা হয় ভালোর জন্যই হয়। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল সিমরানকে।
নতুন একটি সূর্যের আবির্ভাব। ভোরের স্নিগ্ধ আলোকরশ্মি গায়ে মাখিয়ে শরীরচর্চা করল সৌধ। এরপর ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে নিচে এলো। রুমে গিয়ে গোসলের প্রস্তুতি নিতেই সেলফোন বেজে ওঠল৷ আইয়াজের ম্যাসেজ করেছে,
” ওয়েল ডান দোস্ত। আমরা খুব খুশি। পুরোনো সৌধকে খুব মিস করছিলাম। ”
ম্যাসেজটা দেখে বাঁকা হাসে সৌধ। শরীরচর্চা করার সময় ছোট্ট একটি ভিডিও করে পোস্ট করেছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেটা দেখেই আইয়াজ ম্যাসেজটি করেছে। সে পাল্টা ম্যাসেজ করল,
‘ ভাবছি বিগ বস ক্লাব থেকে ট্যুর দিব একটা। তুই আর সুহাস তো ব্যস্ত। বাকি সদস্যদের নিয়ে যাই কী বলিস? ‘
‘ সিয়র, নো প্রবলেম। আমাদের ঝিমিয়ে পড়া গ্যাংটাকে তুইই পারবি সচল করতে। ‘
সৌধ আর কোনো রিপ্লাই দিল না। লম্বা শাওয়ার নেবে এবার। পরের সিদ্ধান্ত অনেকদিন পর পরিবারের সঙ্গে বসে সকালের নাস্তা করবে। কয়েকদিন পরিবারের সঙ্গে কাটিয়ে ক্লাব থেকে দীর্ঘ ট্যুরে যাবে। দৃঢ় বিশ্বাস এরই মধ্যে পছন্দ সই কোনো না কোনো হসপিটালে জয়েন করতে পারবে। পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনের সিদ্ধান্তও নিল। নিজের পরিকল্পনার কথা কাউকেই জানালো না। যারা একবার ব্যর্থ হয় তারা কখনো জীবনের আর কোনো সু পরিকল্পনা কাউকে জানাতে পারে না। আসলে পূর্বের জোশটা আর থাকে না। সবকিছু ম্রিয়মাণ হয়ে যায়। আর অপেক্ষা করে সময়ের। নিজের ওঠে দাঁড়ানো, সফলতা মাথা উঁচু করে, বুক ফুলিয়ে দেখিয়ে দেয়ার।
.
.
ভোরবেলা। কাজের মেয়েটার সঙ্গে মিলে নাস্তা বানাচ্ছে উদয়িনী। শরীরটা ভালো নেই। মেয়েকে নিজ হাতে কিছু বানিয়ে খাওয়াতে ইচ্ছে করছে বলেই রান্না ঘরে আসা৷ বয়সের সাথে সাথে মানুষের মানসিক অনেক পরিবর্তন ঘটে। উদয়িনীর মাঝে যেন সেই পরিবর্তন লক্ষনীয়। কিছুদিন আগেই
রিটায়ার করেছে সে কিন্তু অফিশিয়ালি বিদায় হয়নি। সামনে মাসে বিদায় পর্ব। এরই মাঝে চলে এসেছে বাড়িতে। বাড়ি ফেরার পর যখন প্রথম সিমরানকে দর্শন করল। আত্মা কেঁপে ওঠেছে তার। অজান্তেই চোখ দিয়ে পানি পড়েছে টপ টপ৷ কী অবস্থা তার মেয়েটার? সিমরান নিঃসন্দেহে একজন সুন্দরী তরুণী। কিন্তু উদয়িনী তার মাঝে কোনো সৌন্দর্য্য খুঁজে পায়নি। যে বয়সে মেয়েদের লাবণ্য বৃদ্ধি পায়। সে বয়সে সিমরানের লাবণ্য ম্রিয়মাণ। চৈত্রের খরা মানুষের দেহে, মুখশ্রীতে এভাবে দৃশ্যমান হয়? উদয়িনী মেয়ের মাঝে ঠিক যেন চৈত্র মাসের খরা দেখতে পেল। স্বাস্থ্যের অবনতি যে মেয়ের ওজন দুমাস আগে ছিল পঞ্চাশ কেজি। বর্তমানে তার ওজন কিনা ঊনচল্লিশ! রূপ লাবণ্যের অবনতি এতটাই যে এই মেয়েটার গায়ের বর্ণ দুধে আলতা ছিল এখন দেখে কেউ বিশ্বাসই করবে না৷ পড়াশোনার অবস্থাও করুণ৷ সেকেন্ড ইয়ারের রেজাল্ট খারাপ এসেছে৷ সবমিলিয়ে মেয়ের শোক
জেঁকে ধরল উদয়িনীকে। ছেলেকে ফোন করে কান্নাকাটি করল। সুহাস মাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে সিমরানের খেয়াল রাখতে বলে ফোন রেখে দিল৷ সে এখন ভীষণ ব্যস্ত৷ উদয়িনী মেয়েকে নিয়ে তীব্র দুঃশ্চিন্তায় ভুগতে শুরু করে। জোর করে ভালোবাসা পাওয়ার লড়াইয়ে যদি সে হেরে না যেত। সংসার জীবনে যদি অসুখী না হতো। স্বামীর চোখে যদি এতটা নীচ না হতো তবে মেয়ের জন্য সৌধকে যেভাবেই হোক নিয়ে আসত৷ নিজের জীবনকে বাজি রাখা যায় কিন্তু সন্তানের জীবন বাজি রাখা অসম্ভব। আজকাল সুনিশ্চিত ভবিষ্যতও দূর্ভাগ্য বয়ে আনে। সেখানে অনিশ্চিত ভবিষ্যতে দূর্ভাগ্য তো নিশ্চিত হবেই।
সিমরান গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। এদিকে ফোন রিংটোন বাজতে বাজতে থেমে গেল। একবার, দু’বার এমন করে চারবার ফোন এলো আর থামল। পাঁচবারে আচমকা ঘুম ভেঙে গেল তার। ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে অচেনা নাম্বার দেখে রিসিভ করে কানে ধরল। চোখ দু’টো বন্ধ, ভারী নিঃশ্বাস ফেলছে৷ ঘুম কাতুরে কণ্ঠস্বরে বলল,
‘ কে বলছেন? ‘
ওপাশটা নীরব রইল কিয়ৎক্ষণ। এরপর সহসা ভেসে এলো একটি আদুরে, মিষ্টি কণ্ঠ,
‘ সিনুপি হাউ আর ইউ? ‘
ঝড়ের গতিতে ঘুম ছুটে গেল সিমরানের। ত্বরিত ওঠে বসল সে। বাম কান থেকে ডান কানে ধরল ফোনটা। হকচকানো কণ্ঠে বলল,
‘ তাহানী! আই এম ফাইন বনু। তুমি কেমন আছো? হাউ আর ইউ কিউটি? ‘
আদুরে স্বরে তাহানী উত্তর দিল,
‘ আই এম ভেরী ওয়েল সিনুপু। ‘
সহসা খিলখিল করে হেসে ওঠল সিমরান৷ নিজের এলোমেলো চুলগুলো এক হাতে গুছিয়ে নিয়ে বলল,
‘ তাহানী বুড়িটা আমাকে মিস করছে বুঝি? ‘
ওপাশ নীরব। একটুক্ষণ পর মিষ্টি সুরটা ভেসে এলো আবার,
‘ ইয়েস, আই ডু। ‘
হাসির মাঝেও কান্না এসে গেল সিমরানের। ঐ বাড়ির প্রতিটা মানুষের প্রতি যে অগাধ মায়া জন্মেছে বুকে। তা কাটাবে কীভাবে? এতগুলো দিনে বুক যে তার শুকিয়ে ওঠেছে। কী নির্মম নিষ্ঠুরতার শিকার সে। গলায় আঁটকে থাকা কান্নাগুলো সযত্নে গিলে ফেলল সিমরান। এরপর জিজ্ঞেস করল,
‘ চলে এসো বেবি। আমরা একসঙ্গে খেলব, খাব, ঘুমুবো। আসবে? ‘
ওপাশে উৎসাহিত স্বর,
‘ ইয়েস, ইয়েস। ‘
‘ তবে দেরি কেন? পাপার অনুমতি নিয়ে চলে এসো।’
সৌধর ছোটো চাচার মেয়ে তাহানীর সঙ্গে কথা শেষ হলো। ফোন কাটতেই সিমরানের মনে পড়ল, নাম্বারটা কার জিজ্ঞেস করা হয়নি৷ তাহানী একা একা তার নাম্বার খুঁজে ফোন দিতে পারবে না৷ কেউ তাকে সাহায্য করেছে। কিন্তু কে? তানজিম আন্টি? নাহ সে তো রেগে আছে তবে ছোটো আংকেল? নাম্বারটা কী নামে সেভ করবে বুঝতে পারছিল না সে। অনেক ভেবেচিন্তে তাহানী নামেই সেভ করল। এরপর সারাদিন অপেক্ষা করল। তাহানীর জন্য। তাহানী এলো না। আর না এলো সেই নাম্বার থেকে ফোন। ভাবল, তাহানী বাচ্চা মানুষ। হয়তো তার বায়নায় কেউ বাধ্য হয়ে ফোন করেছিল৷ শিশু মস্তিষ্ক তারপরই ভুলে গেছে তাকে। সে আর বায়না করেনি। আর না কেউ মিটিয়েছে তার বায়না৷ এ পর্যায়ে তাহানীকে হিংসে হলো খুব। ভাবল, ছোটোরা কত সহজেই সব ভুলে যায়। তবে বড়োরা কেন ভুলতে পারে না? তবে কি বড়ো হওয়া অভিশাপ! বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো সিমরানের৷ নিজের দুঃখ গুলো শেয়ার করার মতো একটা মানুষও নেই তার। নামী ইন্টার্ন ডক্টর হিসেবে জয়েন করেছে। থাকে গাজীপুর। এখন আর তাকে সময়ে, অসময়ে কাছে পাওয়া যায় না। আপন মনেই হাসল সিমরান। ফোন করল বান্ধবী লুনাকে। বলল,
‘ ন’টায় বেরুতে পারবি? শহর ঘুরব। ‘
লুনা বলল,
‘ সাতসকালে কে শহর ঘুরে? শহর ঘুরতে হয় রাতের বেলা। ‘
‘ আমার কাছে সাতসকাল বলে কিছু নেই৷ প্রতিটা সময়ই রাত। ‘
‘ দোস্ত সিগারেট খাবি? ‘
‘ কতবার না করেছি? ‘
‘ আরে ইয়ার ছ্যাঁকা খেলে সিগারেট খাওয়া বৈধ হয়ে যায়। ‘
‘ বাজে বকিস না তো। ফুল ফ্যামিলি ডাক্তার আমার। আমি সিগারেট খেলে মানাবে না৷ একদিন খেলে কিচ্ছু হবে না জান। প্লিজ, প্লিজ। ‘
ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল সিমরান। ধমকে বলল,
‘ ফ্রেশ হবো। সময় মতো কলাবাগান দাঁড়াবি। ‘
.
.
বহুদিন পর গিটারিস্ট সৌধর আগমন ঘটেছে। ছাদে একাকী বসে গিটারে টুংটাং ধ্বনি তুলছে সে৷ রাতের সময় তখন কত জানা নেই। চারপাশে নীরবতায় আচ্ছন্ন। নিস্তব্ধ রজনী। আকাশে তাঁরার মেলা। মধ্যিখানে হাস্যজ্জ্বল চাঁদের বুড়ি। ছাদের একপাশে বসে সৌধ। আকাশে চাঁদের বুড়ির পানে তাকিয়ে বাঁকা হাসল। তার শান্ত হৃদয় আর শীতল দৃষ্টিতে হাতছানি দিল বিস্ময়কর কেউ। দু-চোখের তারায় ভেসে ওঠল কৃষ্ণবর্ণীয় একজোড়া ঝাপসা দৃষ্টি। নিমেষে দু’হাতের আঙুল গুলোয় চঞ্চলতা বৃদ্ধি পেল। ছাদ থেকে নিচ পর্যন্ত শুনতে পাওয়া গেল গিটারের সুর। মনে হলো এই সুরকে আজ থামানো সম্ভব না। তবু থেমে গেল৷ সৌধ চৌধুরীকে থামিয়ে দেয়ার অসাধারণ ক্ষমতা যার সেই থামালো। ফোনের শব্দ পেয়ে বা’হাতে পকেট থেকে ফোন বের করে অচেনা নাম্বার দেখল সৌধ। ত্বরিত রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ভেসে এলো পরিচিত কণ্ঠস্বর। যা তার মস্তিষ্ক বিগড়ে দিতে কৃপণতা করল না। ওপাশের মানবী বলল,
‘ কেমন আছিস সৌধ? ‘
আচমকা বিদ্যুৎ চলে গেলে যেমন ঘর অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে যায়। সৌধ আপাদমস্তক তেমনি নিভে গেল৷ ক্রমশ চোয়াল দ্বয় কঠিন হয়ে এলো তার। এক পর্যায়ে তীব্র ক্রোধে হাত, পা থরথর করে কাঁপতে শুরু করল। ওপাশের মানবী সৌধর থেকে উত্তর না পেয়ে পুনরায় বলল,
‘ জানি ভালো নেই। বিশ্বাস কর তোকে কষ্ট দিয়ে আমি নিজেও ভালো নেই। সৌধ, ইদানীং আমার শরীরটা ভালো যায় না রে। ডেলিভারির টাইম যত ঘনিয়ে আসছে ততই ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছি আমি। আমি জানি একজন ডক্টর হিসেবে এমন কথা অতি লজ্জার। তবু কেন এত ভয় পাচ্ছি নিজেও জানি না। আমি একটা আবদার করব সৌধ রাখবি? প্লিজ, একটা দিন জাস্ট একটা দিন সময় দে আমাকে। দেখা কর। আমি সুহাস, আইয়াজ, প্রাচী সবাইকে কল করেছিলাম রে। কেউ রাজি হয়নি। সবাই ভীষণ ব্যস্ত। সবার এই ব্যস্ততা থেকে আমার জন্য একটা দিনও সময় নেই। ‘
তীব্র আফসোস ঝড়ে পড়ল নিধির কণ্ঠে। সৌধ এবার অত্যন্ত শান্ত কণ্ঠে প্রশ্ন করল,
‘ তোর স্বামী কোথায়? ‘
‘ জানি না। তার সাথে আমার জোনো যোগাযোগ নেই। ‘
‘ থাপড়িয়ে দাঁত ফেলে দিব। ফাইজলামি করিস? সময় চাস আমার কাছে সময়? এই সময়টা তোর বরের কাছে চা ইডিয়ট! ‘
‘ সৌধ…’
‘ শাট আপ! কী করে ভাবলি তোকে আমি সময় দিব? সিরিয়াসলি! তোর মনে হয় পরের বউয়ের জন্য আমার সময় আছে? ডক্টর অর্পণ শিকদারের প্রক্সি হিসেবে ব্যবহার করতে চাস আমাকে? শ্যাম অন ইউ নিধি, জাস্ট শ্যাম অন ইউ। ‘
আর এক মুহুর্তও নিধির কথা তো দূরে থাক। শ্বাস-প্রশ্বাসের আওয়াজও সহ্য করতে পারল না সৌধ। ক্রোধে জর্জরিত হয়ে গিটার রেখে ওঠে দাঁড়াল সে৷ বড়ো বড়ো করে নিঃশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে বিরবির করে বলল,
‘ ওই অর্পণকে বিয়ে করার সাথে সাথে তোর বোধবুদ্ধি সব গিলে খেয়েছিস নিধি। বড্ড সাহস বেড়েছে এখন তাই নারে? এই সাহসটা অন্য একজন পুরুষকে জীবনে জড়িয়ে তার সন্তান গর্ভে ধারণ করার আগে দেখানো উচিত ছিল৷ শোন নিধি সম্পূর্ণ হুঁশে থেকে আজ তোকে বলছি, সৌধ চৌধুরী তোর জন্য উন্মাদ ছিল সত্যি, কিন্তু ভুলবশতও চরিত্রহীন হতে পারবে না। আমি তোকে ভুলতে চাই না এটা যেমন সত্য তেমনি সত্য আমি তোকে ছাড়া ভালো থাকতে চাই। ইয়েস, আই ওয়ান্ট টু বি ব্যাটার উইথআউট ইউ! ‘
শেষ বাক্যটি প্রচণ্ড চিৎকার করে বলল সৌধ। যা বার বার বাতাসের বেগে প্রতিধ্বনিত হয়ে তার কাছেই ফিরে এলো।
প্রকৃতির নিয়ম এটাই। সময় বহমান। আর মানুষ পরিবর্তনশীল। দুঃখকে আলিঙ্গন করে সুখের পথে পা বাড়ানোই মানুষের ধর্ম। আমি, আপনি বা সৌধ কেউই এই ধর্মের ঊর্ধ্বে নয়।