ত্রিধারে তরঙ্গলীলা | পর্ব – ১৪

নিজের প্রতি খুবই অবাক হলো সুহাস৷ সে তো এটা বলতে চায়নি। খেলার শর্ত মেনে নামীকে আই লাভ ইউ’ই বলতে চাচ্ছিল৷ তাহলে কী করে আই হেইট ইউ বলে ফেলল! ভালোবাসি বলতে গিয়ে ঘৃণা করি বলে ফেলল কেন? এসব ভাবনার ভীড়ে নামীর ঝাপসা চোখ, গাল বেয়ে পড়া অশ্রু নজর এড়াল না। কেন জানি খুব খারাপ লাগল সুহাসের৷ দৃষ্টি নত করে নিঃশব্দে ওঠে দাঁড়াল সে৷ নামীও নিজেকে চটজলদি স্বাভাবিক করে নিল। বাঁকা হেসে নিচু কণ্ঠে বলল,
‘ এটা খুব ভালো গুণ সুহাস। আপনি মিথ্যেমিথ্যি কিছু বলতে পারেন না৷ ‘
কথাটা বলেই তাকাল সকলের দিকে। মিষ্টি হেসে গিয়ে বসল ফারাহর পাশে। বলল,
‘ সবাই এমন চুপ কেন খেলা কি শেষ? ‘
সুহাসের কাণ্ড দেখে সকলে স্তব্ধ হয়ে গেছিল। নামীর কথায় হুঁশ ফিরল। ফারাহ নামীর দিকে মায়াভরা চাউনিতে তাকিয়ে। আইয়াজ নির্বিকার। সৌধ, নিধি সুহাসের দিকে ছুঁড়েছে অগ্নি দৃষ্টি। আইয়াজ তখন ওদের শান্ত করতে নিচু গলায় বলল,
‘ কিপ কুল ফ্রেন্ড’স। হাঁদারামটাকে ধরে বসা৷ এখনো সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়নি৷ প্রয়োজনে সারারাত আজ খেলাধুলা করব আমরা। ‘
নিজেদের মধ্যে চোখাচোখি করে নিল তিন বন্ধু। দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিধি বলল,
‘ না না খেলা তো সবে শুরু। ‘
সুহাসের কানে তখন নামীর কথাটা বারেবারে বাজছিল,
‘ এটা খুব ভালো গুণ সুহাস। আপনি মিথ্যেমিথ্যি কিছু বলতে পারেন না। ‘
নামীর ও কথার প্রতিত্তোরে সে ভাবল, সত্যি কি তাই? সত্যিই কি সে মিথ্যা কিছু বলতে পারে না? নাকি তার সর্বস্ব জুড়েই মিথ্যার খোলসে আবৃত?
সৌধর শক্ত হাতের হেঁচকা টানে মেঝেতে বসে পড়ল সুহাস। চমকে ওঠে নিঃশ্বাস ছাড়ল শব্দ করে। বলল,
‘ তোরা খেল, আমার এসব বিরক্ত লাগছে। ‘
নিধি দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
‘ কেন সমস্যা কী তোর এত ভাব মারিস কেন সবসময়? ‘
আড়চোখে নামীর সরল চোখ দু’টোয় তাকাল সুহাস। এরপর আচমকাই বলে ফেলল,
‘ দেখছিস না এই মেয়েটা আমাকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে। ‘
সকলেই বিস্মিত হয়ে নামীর দিকে তাকাল। সে সুহাসকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে? এমন সিরিয়াস মুহুর্তে সুহাসের বলা এই কথাটি পরিস্থিতিই বদলে ফেলল। সুহাস এতেই ক্ষ্যান্ত রইল না। নামীর দিকে বক্র চাউনি নিক্ষেপ করে ধমকের সুরে বলল,
‘ আই নো আই এম হ্যান্ডসাম নামীদামি। তাই বলে সর্বক্ষণ এভাবে তাকিয়ে থাকার প্রয়োজন নেই। এভাবে তাকিয়ে থাকলে আমার নজর লাগে। আর নজর লাগলে খুব গার্লফ্রেন্ডের ঘাটতি পড়ে আমার। শোনো মেয়ে, এই সুহাস সব লোকসান মেনে নিতে পারে, কিন্তু গার্লফ্রেন্ড লোকসান মানতে পারে না। ‘
আজগুবি কথা শুনে মুখ বিকৃত করে ফেলল নামী। বাকি সবাই হো হো হেসে ফেলল। ফারাহ হাসল ঠোঁট টিপে। সুহাস ভাই নামীকে কষ্ট দেয় এদিকে খারাপ হলেও অন্যদিকে মানুষটা বেশ মজার। মানুষের মাঝে ভালো গুণ, খারাপ গুণ উভয়ই বিদ্যমান থাকে৷ সুহাস যেমন তার খারাপ আচরণ দিয়ে পরিস্থিতি বিগড়ে দিতে পারে৷ তেমনি ভালো গুণ দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেও তুলতে পারে৷ সুহাসের কথার প্রেক্ষিতে নিধি বলল,
‘ ভাই তুই থাম। আর কিছু বলিস না৷ হাসির চোটে পেট ফেটে যাচ্ছে আমার। ‘
সৌধ বিরক্ত সূচক শব্দ করে বলল,
‘ হাসির চোটে মানুষের পেট ফাটে কীভাবে? সুহাসের মতো তোরও মাথা খারাপ হলো নাকি? ‘
‘ আরেহ ভাই… ‘
নিধি এ পর্যন্ত বলতেই সৌধ ধমকে ওঠল,
‘ চুপপ! ‘
আঁতকে ওঠে বড়ো বড়ো চোখে তাকাল নিধি। ডানহাতটা বুকে চেপে ঢোক গিলে বলল,
‘ কীরে ভাইই এভাবে ধমকাস ক্যান। ‘
অসহ্য হয়ে নিধির থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল সৌধ। নিচু কণ্ঠে দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
‘ কীরে বাল এই মেয়ের সমস্যা কী! ‘
সুহাস শুনতে পেয়ে মিটিমিটি হাসল। খেয়াল করে সৌধ চোখ রাঙাল। বলল,
‘ সুহাস, অহেতুক নামীর সাথে ঝগড়া করবি না। এমনিতেই খেলার নিয়ম ভেঙে মেজাজ গরম করে দিছিস। ‘
সুহাস ফিসফিস করে বলল,
‘ আমার জন্য মেজাজ বেশি বিগড়েছে নাকি ভবিষ্যত বউয়ের মুখে ভাই শুনে বেশি বিগড়েছে? ‘
ওদের ফিসফাসের মাঝে হঠাৎ নামী বলে ওঠল,
‘ ওয়েট ভাইয়া, আপনার বন্ধুকে জবাবটা দিয়ে দিই। কিছু সময় যোগ্য জবাব দিতে হয়। ‘
সৌধ চুপ মেরে তাকাল নামীর দিকে। নিধি, আইয়াজ, ফারাহ উৎসুক চাউনি নিক্ষেপ করল নামীর দিকে। সুহাস ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। নামী সেই কুঁচকানো মুখে তাকিয়ে বিদ্রুপের হাসি ঠোঁটে লেপ্টে বলল,
‘ তো মিস্টার সুহাস, কী বলছিলেন? ‘
একটু ভাবার ভাণ করে পুনরায় বলল,
‘ আপনি হ্যান্ডসাম? ওহ রেইলি তাই মনে হয় আপনার? নিজেকে কখনো আয়নায় দেখেছেন? আমার মনে হচ্ছে দেখেননি। যদি দেখতেন আপনার এই পাটকাঠির মতো ফকফকা দেহটি আর যাইহোক সুদর্শন মনে হতো না। ‘
কথাগুলো বলতে বলতে একবার তাকাল সৌধর দিকে। আরেকবার তাকাল আইয়াজের দিকে। এরপর শক্ত মুখে বলল,
‘ শুনুন মিস্টার ফকফকা চেঙ্গিস খান, হ্যান্ডসাম শব্দটির ডেফিনেশন আপনার এই দুই বন্ধুকে দেখে যখন বুঝেননি। তাহলে তাদের থেকে ভালো করে জেনে নেবেন৷ ডেফিনেশন না জানা অবধি আর মেডিকেল কলেজে পা রাখবেন না৷ তাহলে ঐ কলেজের আঙিনাও লজ্জা পেয়ে যাবে আপনাকে দেখে। ‘
উপস্থিত সকলে বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। সুহাস যেন একেবারে ভেঙে গুড়িয়ে গেল অকস্মাৎ আক্রমণে। পুরুষ মানুষ আর যাইহোক নিজের সঙ্গে অন্য পুরুষের তুলনা সহ্য করতে পারে না। তুলনা দেয়া মানুষটা যদি হয় নিজের বিয়ে করা বউ তাহলে তো কথাই নেই। সবচেয়ে বেশি আহত হলো নামী তার বন্ধুদের সুদর্শনতার তুলনা দিচ্ছে বলে। স্তম্ভিত দৃষ্টিতে সৌধ আর আইয়াজের দিকে তাকাল সুহাস। বয়স হিসেবে শুধু উচ্চতাই বেড়েছে তার। স্বাস্থ্যের কোনো উন্নতি নেই। তার গায়ের রঙ ফরসা, উচ্চতা ছ’ফুট এক। তবুও সে সুদর্শন নয়৷ এদিকে সৌধ উচ্চতায় তার চেয়ে এক ইঞ্চি কম আইয়াজ কম তিন ইঞ্চি। গায়ের রঙে সৌধ তার থেকে পিছিয়ে না থাকলেও শ্যামবর্ণের আইয়াজ পিছিয়ে৷ তবু নামীর চোখে তারা সুদর্শন। কারণ তাদের নজরকাড়া শরীর আছে। পুরুষের ব্যায়ামপুষ্ট দেহ নারীর দুর্বলতা। সে জানত তবু কখনো এসবে আগ্রহ পায়নি। তবে আজ পেল। মনে তীব্র জেদ চাপল নামীদামিকে সে দেখিয়ে দেবে। এই পাতলা শরীরের জন্য সকলের সামনে এভাবে অপমান করল নামীদামি? এর জবাব সে একদিন দেবেই দেবে। রুদ্ধশ্বাস ছাড়ল সুহাস। নামীর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,
‘ এর জবাব তুমি একদিন পাবে। ‘
নামী গা ঝাড়ার মতো করে কথাটা ঝেড়ে ফেলল। ঠোঁট টিপে হেসে বলল,
‘ ওহ হ্যাঁ আরো একটা কথা। আপনার মুখের এই চাকমা গড়ন আর যাইহোক কোনো বাঙালি মেয়ের কাছে সুদর্শন মনে হবে না। ‘
প্রলম্বিত নিঃশ্বাস ছাড়ল নামী। এবার শান্তি লাগছে খুব৷ বুকের ভেতর আনন্দেরা লুটোপুটি খাচ্ছে শান্তিতে। স্মৃতির পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিখে দিতে মন চাচ্ছে, আজকের এই মুহুর্তটুকু। দ্য গ্রেট সুহাস ওরফে মিস্টার ফকফকা চেঙ্গিস খানের অহংকার চূর্ণবিচূর্ণ করে দিয়ে হারিয়ে যাওয়া মানসিক শান্তি ফিরে পাচ্ছে সে।
তীব্র ক্রোধে দপদপ করতে করতে সুহাস কিছু বলতে যাবে, তৎক্ষনাৎ থামিয়ে দিল নিধি। কড়াভাবে সকলকে ধমক দিয়ে বলল, খেলা শুরু করতে। এদিকে আইয়াজও তাদের আসল পরিকল্পনার কথা স্মরণ করিয়ে দিল৷ একবার নামীর পালা আসুক। খেলা শুরু হলো যথারীতি। ঘুরতে ঘুরতে বোতল থামল ফারাহর মুখ করে। সবাই হইহই করে ওঠল। নামী বলল,
‘ ফারাহ ঝটপট বলে ফেল তো এ যাবৎ কয়টা প্রেম করেছিস? ‘
নাকের ডগায় আসা চশমা ঠেলতে ঠেলতে আইয়াজের দিকে এক পলক তাকাল ফারাহ। লাজুক ভঙ্গিতে বলল,
‘ একটাও না। ‘
সুহাস বিশ্বাস করল না। তাই বলল,
‘ পুরাই ঢপ। ‘
নিধি ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
‘ চুপ কর তুই। সবাই কি তোর মতো রোমিও হবে নাকি? ‘
আইয়াজের চোখেমুখে তৃপ্তির হাসি৷ সৌধ বুড়ো আঙুল উঁচিয়ে নিচুস্বরে তাকে বলল,
‘ বেস্ট অফ লাক দোস্ত একদম খাপে খাপ। ‘
ফারাহর পর আবার নিধির দিকে বোতল থামল। সুহাস হইহই করে বলল,
‘ দোস্ত তুই জানি কয়টা ছ্যাঁকা খাইছিস? ‘
নিধি খোশমেজাজে জবাব দিল,
‘ একটাই তো,ঐ যে ক্লাস সেভেনে। রোল এক হওয়ার অপরাধে ফেল্টুস বয়ফ্রেন্ড ব্রেকআপ করে দিল। শালা নিশ্চিত এখন ভ্যান চালিয়ে খায়। ‘
সৌধ ছোটো-ছোটো চোখে তাকিয়ে আছে৷ নিধির চোখে চোখ পড়তেই ফোঁস করে বলল,
‘ তোর কি সেই ভ্যানে চড়ে আমার সাথে প্রেম করার স্বাদ জাগছে? ‘
‘ মোটেই না আমি বরং চিন্তিত এই ভেবে যে, অর্পণ স্যার না পটলে সেকেণ্ড ছ্যাঁকা আসন্ন। ‘
চোখ কটমট করে তাকাল সৌধ। সবাই মিটিমিটি হাসতে হাসতে আবার খেলা শুরু করল। এবারে বোতল ঘুরতে ঘুরতে মুখটা গিয়ে থামল সৌধের দিকে। সুহাস কাউকেই কিছু বলতে দিল না। সে যেন প্রতিশোধ নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। বলল,
‘ সৌধ, আংকেলকে ফোন দে। দিয়ে বল, তুই একটা মেয়েকে ভালোবাসিস। ‘
সৌধ প্রচণ্ড সাহসী ছেলে হলেও বাবাকে খুব মান্য করে। তাই সুহাসের ধারণা ছিল সৌধ এ যাত্রায় হার মেনে নিবে। সামান্য গেমকে এতটা প্রাধান্য দেবে না।
কিন্তু সৌধ তো হার মানার পাত্র না৷ জীবনের ছোটোখাটো বিষয় থেকে বড়ো বড়ো বিষয়াদি। কোনোটাতেই এই ছেলে হারতে রাজি হয়নি। তার জীবনের প্রধান লক্ষ্য জীবনের সব লড়াইয়ে জিততে হবে। জীবনের সব পরিস্থিতিতে মাথা উঁচু করে বাঁচতে হবে৷ এখনো হলো তাই। সে মুহুর্তেই বাবাকে ফোন করল। সালাম দিল লম্বা করে,
‘ আসসালামু আলাইকুম বাবা। ‘
‘ ওয়ালাইকুমুস সালাম আব্বাজান। ঘুমাওনি এখনো? ‘
‘ না বাবা, জরুরি কথা বলতে ফোন করেছি। ‘
‘ জি? ‘
‘ আমি একটা মেয়েকে ভালোবাসি। ‘
সকলে বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে। নিধির চোখে একই সাথে বিস্ময় আর অবিশ্বাস। কারণ সৌধ ফোনে বাবাকে এ কথা বলার সময় তার দিকেই দৃঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে। ঢোক গিলল সে৷ অনুভব করল বুক কাঁপছে তার। ফোনের ওপাশে ছেলের কথা শুনে এমপি সুজা চৌধুরী হো হো করে হাসলেন। বললেন,
‘ ডাক্তারি পাশ দিয়ে বিয়ে করবা নাকি পড়ার ফাঁকেই? যা বলবা তাই করব। শর্ত একটাই আমাকে ডাক্তারি লাইসেন্স এনে দিতে হবো। সবাই যেন এক ডাকে বলতে পারে এমপি সুজা চৌধুরীর তিন সন্তানই মানুষের মতো মানুষ হইছে। ‘
ছেলের থেকে বাবা কত ধাপ এগিয়ে টের পেল সুহাস৷ কারণ সে সৌধর খুব কাছাকাছি বসাতে সুজা আংকেলের কথা শুনতে পেল সব। সৌধ সুহাস সহ সকলের দিকে নজর বুলাল। এরপর দৃষ্টি গিয়ে স্থির করল নিধির ভীত মুখটায়। বলল,
‘ এ ব্যাপারে পরে কথা বলব বাবা। রাখছি। ‘
ফোন কেটে দিল সে। সকলের দেহে যেন প্রাণ ফিরে এলো। নামী শুধু অবাক হয়ে দেখতে লাগল সৌধ ভাইকে। এখানে থাকা সবচেয়ে শক্ত ব্যক্তিত্বের পুরুষ সৌধ। যেমন সাহস তেমনি ঠোঁটকাটা। মানুষের প্রতি তীব্র সম্মান বোধ যেমন আছে। তেমনি মানুষকে নিয়ে ভয়ডরের লেশমাত্র নেই। যে ছেলে বাবাকে অকপটে ভালোবাসার কথা জানাতে পারে সে ছেলের পক্ষে সব সম্ভব সব৷ নিধির দিকে তাকাল সে। তার কেমন যেন সন্দেহ হচ্ছে, সৌধ ভাই নিধি আপুকে ভালোবাসে। নিধি আপুর প্রতি সৌধর চোখে ভালোবাসার চিহ্ন দেখেছে সে৷ কিন্তু নিধি আপু? নিশ্চয়ই সেও বাসে। এমন শক্ত মেরুদণ্ডের পুরুষকে ভালো না বাসাটা মারাত্মক অন্যায়।
সকলের স্বাভাবিক হতে বেশ সময় লাগল। আইয়াজ সৌধর বুকে চাপড় দিয়ে বাহবা দিল। সুহাসও বুঝে গেল এখানে সবচেয়ে অকর্মণ্য সে। কারণ এরপর আওয়াজের পালা এলে আইয়াজকে প্রিয় মানুষের উদ্দেশ্যে দু লাইন গান করতে বলা হলো। সে গান পারে না। বন্ধুদের মধ্যে সুহাস খুব ভালো গান পারে। সৌধও গানের পাশাপাশি খুব ভালো গিটারিস্টও। গান, বাজনা আইয়াজ অপটু। তবু প্রিয় মানুষের সামনে বলতে পারল না সে গান পারে না৷ চেষ্টা করল
ফারাহকে উদ্দেশ্য করে দু’লাইন গাওয়ার,
‘ তোমায় দেখলে মনে হয়
হাজার বছর তোমার সাথে
ছিল পরিচয় বুঝি
ছিল পরিচয়…’
আইয়াজের কণ্ঠে গান শুনে ফারাহ লজ্জা পেল। মোটা সুর তবু কাঁপা কাঁপা। বাকিরা হাততালি দিল। এরপর বোতল ঘুরতে ঘুরতে গিয়ে থামল নামীর দিকে। ঠিক এই সুযোগটারই অপেক্ষায় ছিল সকলে। সুহাস নামীকে জব্দ করে নিজের মতো কিছু করতে বলতে উদ্যত হচ্ছিল। কিন্তু তাকে সবাই থামিয়ে দিয়ে নিধি বলল,
‘ খেলার সমাপ্তি তাহলে নামীকে দিয়েই হোক। ‘
এ কথা বলেই এক পলক সুহাসের দিকে তাকিয়ে নামীর দিকে তাকাল। বলল,
‘ নামী আজ সারারাত তুমি আর সুহাস এক ঘরে, এক বিছানায় কাটাবে। ‘
নিধি থামল। এবার আইয়াজ বলল,
‘ শুধু তাই নয়। সুহাসকে মাথা টিপে ঘুম পারাতে হবে। ‘
চমকে ওঠল নামী সুহাস দু’জনই। সুহাস খেয়াল করল চোখ, মুখ শক্ত করে নামী এই ডেয়ার নাকচ করতে উদ্যত হয়েছে। সুহাসও প্রথমে নাকচ করতে চেয়েছিল। কিন্তু যখন বুঝল নামীদামিকে জব্দ করার সুবর্ণ সুযোগ এটাই তখন আর না করল না। বরং চোখ মুখে দ্যুতি ফুটিয়ে দুরন্ত হাসি হাসতে লাগল। নামী না করবে করবে ভাব এমন সময় সে গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,
‘ জানিস আজ দুপুরে ছাদে গিয়েছিলাম। তারপর একজনের ইজ্জত হরণ করে নিয়ে এসেছি। ‘
কপাল কুঁচকে ফেলল নামী। সুহাস তার দিকে তাকিয়ে এসব কী বলছে? নামীকে বুঝিয়ে দিতে সুহাস পুনরায় বলল,
‘ কারো বোধহয় কোনো মূল্যবান জামাকাপড় হারানো গিয়াছে। ‘
মুহূর্তেই শক্ত হয়ে গেল নামী। বুকের ভেতর দপদপানি
শুরু হলো। অগ্নি দৃষ্টিতে তাকাল সুহাসের দিকে। সুহাস বলল,
‘ ডেয়ার পূরণ না করলে এদের সবাইকে স্বাক্ষী রেখে মালিকের কাছে তার মূল্যবান সম্পদ ফেরত দিব। ‘
একদিকে ডেয়ার অপরদিকে সুহাসের হুমকি। সবদিক দিয়েই লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পড়তে হবে। সবদিক বিবেচনায় বাধ্য হয়ে ডেয়ার পূরণ করতে রাজি হলো। সুহাস যদি পরপুরুষ হতো তাহলে হয়তো হার মেনে নিত৷ যেহেতু সে পরপুরুষ নয় সেহেতু হার মানার প্রশ্নই ওঠে না। সুহাস যখন বুঝল নামী ডেয়ার পূরণ করবে তখন মনে মনে তীব্র জিদ্দি হয়ে বলল,
‘ আজকের রাতটা তুমি কখনো ভুলতে পারবে না নামীদামি।‘

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।