মজিদ হাওলাদার দুই হাত তুলে সবাইকে শান্ত হতে বললেন। তাৎক্ষণিক কোলাহল কমে আসে। তিনি সবার উদ্দেশ্যে বললেন,’আমার ঘরের বিচার আমার ঘরে হবে। আমি আর এ বিষয়ে কথা বাড়াতে চাই না। রিদওয়ান, পদ্মজাকে বাড়ি নিয়ে যাও।’
রিদওয়ান পদ্মজাকে ছুঁতে উদ্যত হতেই লিখন চেঁচিয়ে বললো,’পদ্মজা যাবে না।’
লিখন পদ্মজার জন্য ভয় পাচ্ছে। হাওলাদার বাড়ির মানুষগুলো কত বড় মিথ্যাবাদী সে আজ টের পেয়েছে। এতো বড় মিথ্যে চাপিয়ে দিলো, নিজেদের কুকর্ম লুকোতে! মজিদ হাওলাদারের মিথ্যা অভিনয় তাকে অবাক করেছে খুব। এরা পদ্মজাকে বাড়ি নিয়ে কী করে কে জানে! রিদওয়ান লিখনের কথা শুনলো না। সে পদ্মজাকে ধমকের স্বরে বললো,’বাড়ি চলো।’
তারপর হাত ধরলো। সঙ্গে সঙ্গে পদ্মজাও রিদওয়ানের হাত চেপে ধরলো। চাপাস্বরে বললো,’ছয় বছর আগের অপবাদ আবার আমার জীবনে নিয়ে আসার জন্য আপনার মতো নরপশুদের অভিশাপ! কিন্তু এবার না আমাকে না আমার বোনদের, কাউকে ছোঁয়ার সাহস কেউ দেখাতে পারবে না।’
পদ্মজা রিদওয়ানের মুখের উপর থুথু ছুঁড়ে মারে। উপস্থিত মানুষজন চমকে যায়। কোলাহল দ্বিগুণ হয়। রিদওয়ান পদ্মজার দিকে আগুন চোখে তাকায়। তার উপর হাত তোলার জন্য প্রস্তুত হয়। পদ্মজার পিছনে দাঁড়িয়ে ছিল পূর্ণা। সে আর রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না। রিদওয়ানের পূর্বে রিদওয়ানের গালে শরীরের সব শক্তি দিয়ে থাপ্পড় বসিয়ে দিল। পূর্ণার আকস্মিক ব্যবহারে সবাই চমকে যায়। চারিদিকে চেঁচামিচি শুরু হয়ে যায়। বিশৃঙ্খলা বেড়ে যায়। রিদওয়ান রাগে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে। সে পূর্ণার গলা চেপে ধরে। শিরিন ভয়ে চিৎকার করে উঠে,’ও আল্লাহ! আল্লাহর গযব পড়ছে এইহানে! গযব পড়ছে!’
তারপর দ্রুত সরে যায়। শাহানা,খলিল রিদওয়ানকে আটকানোর চেষ্টা করে। রিদওয়ান রাগে কিড়মিড় করছে। খলিল চাপাস্বরে রিদওয়ানের কানে কানে বললেন,’রিদু পূর্ণারে ছাড়,মানুষ দেখতাছে।’
রিদওয়ান ছাড়লো না। পদ্মজা জানে,এই মুহূর্তে সে হাওলাদার বাড়ির মানুষদের আঘাত করলে গ্রামবাসী ভালো চোখে দেখবে না। তবুও রিদওয়ানকে আঘাত করার জন্য বাধ্য হতে হয়। পদ্মজা রিদওয়ানের পেট বরাবর জোরে লাথি বসায়। রিদওয়ান ছিটকে সরে যায়। দুই হাতে পেট চেপে ধরে। শাহানা ‘ও মাগো’ বলে চেঁচিয়ে উঠলো। পূর্ণা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
মৃদুল গফুর মিয়াকে নিয়ে স্কুলের দিকে আসছিল। দূর থেকে দেখতে পেল মাঠের মানুষজন অস্থির হয়ে আছে। সে গফুর মিয়াকে বললো,’
আব্বা, আপনি আসেন। আমি আগে যাইতাছি।’
তারপর দৌড়াতে থাকে। স্কুলমাঠে পৌঁছাতেই উঁচু টিলায় রিদওয়ানকে পূর্ণার গলা চেপে ধরতে দেখলো। তার রক্ত মাথায় উঠে যায়। শরীরে যেন কেউ আগুন ধরিয়ে দেয়। এদিকওদিক খুঁজে একটা মাঝারি আকারের বাঁশ পেল। সে দ্রুত বাঁশ নিয়ে দৌড়াতে থাকে। এক হাতে লুঙ্গি ধরে, যা হাঁটু অবধি উঠে আসে। মৃদুলের দৌড়ের গতিতে অনেক মানুষ ধাক্কা খেয়ে উল্টে পড়ে। মৃদুলের চোখের দৃষ্টি রিদওয়ানের দিকে। তার মস্তিষ্ক এলোমেলো। মজিদ দ্রুত পদ্মজা-রিদওয়ানের মাঝখানে গিয়ে দাঁড়ালেন। চিৎকার করে বললেন,’কী হচ্ছে? কী হচ্ছে? থামো সবাই।’
কিন্তু কোনোকিছুই থামলো না। মৃদুলের উপস্থিতি সব লণ্ডভণ্ড করে দিল। সে বাঘের মতো লাফিয়ে উঠে টিলার উপর। বাঁশ দিয়ে রিদওয়ানকে আঘাত করতে গিয়ে শাহানা,খলিলসহ আরো দুজন লোককে আঘাত করে বসে। মজিদ দ্রুত টিলা ছেড়ে সরে যান। মৃদুল খুব রাগী! মৃদুলের এলাকার অনেকে মৃদুলকে মাথা খারাপ বলে। সে কখনো বুদ্ধি দিয়ে কিছু করে না। সবসময় ক্রোধকে মূল্য দেয়। রাগের বশে কখন কী করে নিজেও জানে না। মানুষজন ছোটাছুটি করে পালাতে থাকে। শুধু মৃদুলের হুংকার শোনা যায়। ক্রোধ থাকে উন্মাদ করে দিয়েছে। সে রিদওয়ানকে বলছে,’জার*** বাচ্চা,তুই কার গায়ে হাত দিছস! তোরে আজ আমি মাটির ভিত্রে গাঁইথা ফেলমু।’
আশেপাশে ছড়িয়ে থাকা মজিদ হাওলাদারের লোকেরা মৃদুলকে ধরতে দৌড়ে আসে। তৃধা ভয়ে দূর থেকে দুই হাতে মুখ ঢেকে ফোঁপাচ্ছে। আনোয়ার হোসেন তৃধার পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন। তৃধার মাথায় হাত রাখলেন। আনোয়ার হোসেনের দিকে তাকিয়ে তৃধা হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। বললো,’লিখনকে কেন ছাড়ছে না ওরা?’
আনোয়ার হোসেন টিলার উপর চোখ রেখে বললেন,’জানি না মা। কী হচ্ছে বুঝতে পারছি না। কেউ খুন হয়ে যাবে এখানে। লিখন যে কেন এসবে জড়িয়ে পড়লো!’
আনোয়ার হোসেনের কণ্ঠে আফসোস। তৃধা মাটিতে বসে। তার কলিজা ছিঁড়ে যাচ্ছে। চার-পাঁচজন লোক লিখনকে জাপটে ধরে রেখেছে। লিখন ছটফট করছে ছোটার জন্য। এই দৃশ্য সে সহ্য করতে পারছে না।
পদ্মজা পূর্ণাকে বুকের সাথে চেপে ধরলো। পূর্ণা ভালো করে নিঃশ্বাস নিতে পারছে না। পদ্মজার বুক জ্বলছে। পূর্ণার কষ্ট তাকে পুড়িয়ে দিচ্ছে। মৃদুল রাগে আকাশ কাঁপিয়ে চিৎকার করছে। রিদওয়ানকে ধরতে পারলে,সে চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে। কিন্তু পারছে না। টিলার উপর পনেরো-বিশ জনের একটা জটলা লেগে যায়। হাতাহাতি,ধ্বস্তাধস্তি চলে বিরতিহীনভাবে। মজিদ চোখের চশমাটা ঠিক করে ঠান্ডা মাথায় ভাবলেন। এই মুহূর্তে পরিস্থিতি হাতে আনা ভীষণ জরুরি! নয়তো অনেক বিপদ ঘটে যেতে পারে। তিনি তার ডান হাত রমজানকে ডেকে ফিসফিসিয়ে কিছু বললেন। মিনিট দুয়েকের মধ্যে জটলার মাঝখান থেকে একটা আর্তচিৎকার ভেসে আসে। শব্দ তুলে লিখন শাহর দেহ লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। তার পিঠ থেকে রক্তের ধারা নামছে। মৃদুল আকস্মিক লিখনকে এভাবে পড়তে দেখে চমকে যায়। রিদওয়ান লিখনকে আহত হতে দেখে মজিদের দিকে তাকালো। তার মুখ রক্তাক্ত। মৃদুল এতজনকে উপেক্ষা করেও তাকে আঘাত করতে সক্ষম হয়েছে! মজিদ ইশারায় রিদওয়ানকে কিছু একটা বুঝালেন। রিদওয়ান তাৎক্ষণিক পদ্মজাকে খুঁজলো। দেখলো,পদ্মজা মাটিতে পড়ে আছে। তার চোখ দুটি বোজা। মজিদের একটা পদক্ষেপ পুরো পরিস্থিতি পাল্টে দিল! লিখন হয় মারা যাবে,নয়তো অনেকদিন হাসপাতালে পড়ে থাকবে। আর পদ্মজাকে একবার বাড়ি নিয়ে যেতে পারলেই হলো। আর মুক্তি পাবে না! রমজান সবার আড়ালে দ্রুত ঘাটে গেল। রক্তমাখা ছুরি আর হাতের রুমাল নদীতে ছুঁড়ে ফেললো।
________
এশারের আযান পড়ছে। পদ্মজা ধীরে ধীরে চোখ খুললো। নিজেকে নিজের ঘরে আবিষ্কার করলো। মাথা ব্যথা করছে খুব। সে এক হাতে কপাল চেপে ধরে। তখনই দুপুরের সব ঘটনা মনে পড়ে যায়। পূর্ণার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল সে, তখন কে যেন পিছন থেকে মুখে কিছু একটা চেপে ধরে। তারপর আর কিছু মনে নেই! পদ্মজা দ্রুত উঠে বসে। জুতা না পরেই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসে। সিঁড়ি বেয়ে নামার সময় লতিফার দেখা পেল। লতিফা পদ্মজাকে দেখে বললো,’কই যাইতাছো?’
‘পূর্ণা কোথায়? পূর্ণার কাছে যাব।’
‘পূর্ণা তো উপরে।’
পদ্মজা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে,’উপরে মানে? তিন তলায়?’
‘হ।’
‘এখানে কে নিয়ে আসলো?’
পদ্মজা প্রশ্ন করলো ঠিকই,উত্তরের আশায় থাকলো না। দৌড়ে তিন তলায় চলে গেল। তিন তলার একটা ঘরেই পালঙ্ক আছে। রুম্পা যে ঘরে ছিল! পদ্মজা সেই ঘরে এসে মৃদুলকে দেখতে পেল। মৃদুল চেয়ারে বসে আছে। বিছানায় শুয়ে আছে পূর্ণা। পদ্মজা উল্কার গতিতে পূর্ণার মাথার কাছে গিয়ে বসলো। মৃদুল পদ্মজাকে দেখে সংকুচিত হয়। বললো,’ পূর্ণা ভালা আছে ভাবি।’
‘ও কি অজ্ঞান?’
‘না,ঘুমাইতাছে। কিছুক্ষণ আগে সজাগ ছিল।’
‘খেয়েছে? ‘
‘হুম। আপনার ধারে অনেক্ষন বইসা ছিল।’
পদ্মজা পূর্ণার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। তারপর পূর্ণার গালে,কপালে চুমু দিল। মৃদুলকে প্রশ্ন করলো,’প্রেমা,প্রান্ত কোথায়?’
‘বাড়িত গেছে।’
‘ঠিক আছে ওরা?’
‘জি ভাবি।’
‘আর লিখন শাহ?’
লিখন শাহর কথা শুনে মৃদুল চুপ হয়ে যায়। পদ্মজা উৎকণ্ঠিত হয়ে প্রশ্ন করলো,’ উনি কোথায়? কেমন আছেন?’
মৃদুল মাথা নত করে বললো,”ভাবি,ভীড়ের মাঝে কেউ একজন ভাইরে ছুরি মারছে!’
পদ্মজা এক হাতে নিজের মুখ চেপে ধরে। তারপর কাঁপা স্বরে বললো,’বেঁচে আছে?’
‘জানি না ভাবি। হাসপাতালে নিয়া গেছে সবাই। পুলিশ আইছিল বিকালে।’
পদ্মজার চোখে জল টলমল করে উঠে। মানুষটা এতদিন তাকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবেসে গেছে। ধৈর্য্য ধরে থেকেছে। কঠিন ব্যক্তিত্বের আড়ালে তার জন্য ভালোবাসা যত্ন করে রেখেছে। পদ্মজা সবকিছু জানে। সব জেনেও সে কিছু করতে পারেনি। ভালো তো করতে পারলো না উল্টে তার জন্য ক্ষতি হয়ে গেল! পদ্মজার চোখ থেকে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে। দ্রুত সে জল মুছে ফেললো। আফসোস হচ্ছে! ঘাটে কথা বলা একদম ঠিক হয়নি! মেয়েগুলো হাতছাড়া হয়ে গেছে ভেবে,সে চঞ্চল হয়ে উঠেছিল। আর লিখনও আজ এতো উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল!
সব ভাগ্যে লেখা ছিল। তাই হয়তো হয়েছে। কখনো হায়-হুতাশ করতে নেই। তাই পদ্মজা সিদ্ধান্ত নিল,সে লিখনের জন্য দুই রাকাত নফল নামায আদায় করবে। যেন সে সুস্থ হয়ে উঠে। লিখনের জন্য পদ্মজার প্রার্থনা করা দায়িত্ব! পদ্মজার কাছে এইটুকু অধিকার লিখনের আছে! পদ্মজা মৃদুলকে বললো,’পূর্ণা ঘুমাক তাহলে। দেখে রাখবেন। আমি আসছি।’
‘আচ্ছা ভাবি।’
পদ্মজা ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল। মৃদুল দরজার বাইরে তাকিয়ে রইলো। পদ্মজাকে তার অনেক প্রশ্ন করার আছে। লিখন-পদ্মজার নামে যে অপবাদ দেয়া হয়েছে সেটা যে মিথ্যা মৃদুলের চেয়ে ভালো কে জানে! সে নিজের চোখে দেখেছে লিখন শাহর কষ্ট,পদ্মজার সম্মান রক্ষার্থে নিজের অনুভূতি লুকিয়ে রাখার প্রচেষ্টা,একটু কথা বলার আশায় ছটফট করা! এতো বড় মিথ্যা অপবাদ হাওলাদার বাড়ির মানুষেরা কেন দিল? আর পদ্মজার গায়ের দাগগুলো সেগুলোই কীসের? আমির হাওলাদার কোথায়? মৃদুলের ভাবনার সুতো ছিঁড়ে যায় লতিফার আগমনে। লতিফা খাবারের প্লেট টেবিলের উপর রাখলো। তারপর বললো,’পূর্ণার খাওন দিয়া গেছি। আর আপনের আম্মা কইছে নিচে যাইতে।’
মৃদুল বললো,’একটু পরে যামু। আম্মা-আব্বায় খাইছে?’
‘হ,খাইছে।’
‘অন্যরা খায় নাই?’
‘সবাই খাইছে। রিদু ভাইজানে বাড়িত নাই।’
‘কু** বাচ্চা লুকাইছে।’
লতিফা আড়চোখে মৃদুলকে দেখলো। মৃদুল রাগে ছটফট করছে। এক হাত দিয়ে আরেক হাত খামচে ধরে রেখেছে। লতিফা বললো,’আপনের আম্মার মেজাজ ভালা না।’
‘কেন? কী অইছে?’
‘কইতে পারি না। আপনের আব্বার লগে চিল্লাইতে হুনছি।’
মৃদুলকে চিন্তিত হতে দেখা গেল না। তার আম্মা একটু বদরাগী। সব সময় চেঁচামেচি করে। এতে সে অভ্যস্ত। মৃদুল লতিফাকে বললো,’ আমির ভাই কই আছে?’
‘ঢাকাত গেছে। কুনদিন আইবো জানি না।’
‘আচ্ছা,যাও এহন।’
লতিফা জায়গা ত্যাগ করলো। মৃদুল ধীরে ধীরে হেঁটে জানালার কাছে গেল। জানালার কপাট খুলে দিল। আজ চাঁদ উঠেছে। জ্যোৎস্না রাত। সে পূর্ণাকে ভালোবাসার কথা বলার জন্য এমন একটা রাতের অপেক্ষা করেছিল। জানালা খুলে দেয়াতে চাঁদের আলো পূর্ণাকে ছুঁয়ে দেয়ার সুযোগ পায়। চাঁদ তার নিজস্ব মায়াবী আলো নিয়ে ছড়িয়ে পড়ে পূর্ণার সারামুখে। পূর্ণার চোখমুখ সেই আলোয় চিকচিক করে উঠে। অন্যরকম সুন্দর দেখায়। মৃদুল পূর্ণার পাশে এসে বসলো। পূর্ণার মুখের দিকে তাকাতেই, মৃদুলের চোখে ভেসে উঠে,রিদওয়ান কীভাবে পূর্ণার গলা চেপে ধরেছিল! মৃদুলের মেজাজ চড়ে যায়। রিদওয়ানকে সে যতক্ষণ ইচ্ছামত পেটাতে না পারবে শান্তি মিলবে না! মৃদুল অনেকক্ষণ রিদওয়ানকে খুঁজেছে। পেল না। মৃদুল ছটফট করতে করতে বিড়বিড় করলো,’হারামির বাচ্চা!’
পূর্ণা ঘুমের মধ্যে নড়েচড়ে উঠে। একপাশ হয়। পূর্ণার দেহ নিস্তেজ হয়ে পড়েছিল। প্রান্ত পূর্ণাকে বাড়ি নিয়ে যেতে বলে। বাসন্তী বাড়িতে একা। তিনি কিছুই জানেন না। তখন মজিদ বললেন,পূর্ণাকে তাদের বাড়িতে নিয়ে গেলে বেশি ভালো হবে। পদ্মজা সেখানে আছে। মৃদুলও রাজি হয়ে যায়। তার কাছাকাছি থাকবে পূর্ণা এর চেয়ে আনন্দের কী হতে পারে! প্রান্ত মেনে নিল। এই মুহূর্তে মৃদুলই পূর্ণার অভিভাবক। মৃদুল বুঝতে পারেনি ,মজিদ হাওলাদার ভালো মানুষি দেখাতে এই প্রস্তাব দিয়েছেন। যাতে গফুর মিয়া বা মৃদুল অথবা গ্রামবাসী কেউই মজিদকে দোষী না ভাবে। মজিদ সবাইকে নিজের উদারতা দেখিয়েছেন। গ্রামবাসীর উদ্দেশ্যে বলেছেন,পদ্মজা দোষী হলেও তার বোন দোষী নয়। রিদওয়ান পূর্ণার সাথে অন্যায় করেছে। এজন্য রিদওয়ানের শাস্তি হবে। তিনি রিদওয়ানকে সবার সামনে থাপ্পড় দিয়েছেন। আর বলেছেন,পূর্ণা সুস্থ হলে পূর্ণার কাছে ক্ষমা চাইবে রিদওয়ান।
মৃদুল কল্পনা থেকে বেরিয়ে পূর্ণার এক হাত মুঠোয় নিয়ে হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে উচ্চারণ করলো,’তাড়াতাড়ি সুস্থ হইয়া যাও। আমি তোমারে নিয়া যাইতে আইছি।’
মৃদুল পূর্ণার হাতে আলতো করে স্পর্শ করতে করতে তার মায়াবী মুখখানা মুখস্থ করে নিল। মৃদুলের ইচ্ছে হচ্ছে,পদ্মজার মতো পূর্ণার কপালে চুমু এঁকে দিতে। কিন্তু সেই বৈধতা বা সাহস তার নেই। সে পূর্ণার এক হাত শক্ত করে ধরে রাখলো।
পদ্মজা ঘরে প্রবেশ করতেই মৃদুল বিজলির গতিতে পূর্ণার হাত ছুঁড়ে ফেলে। তারপর নিঃশ্বাসের গতিতে দূরে গিয়ে দাঁড়ালো। সঙ্গে সঙ্গে পূর্ণার ঘুম ভেঙে যায়। মৃদুল এতো জোরে হাত ছুঁড়েছে, ঘুম তো পালানোরই কথা! পদ্মজা অবাক হয়ে মৃদুলকে দেখলো। এতো ভয় পাওয়ার কী হলো! পূর্ণা চোখ খুলে পদ্মজাকে দেখে খুব খুশি হয়। সে দ্রুত উঠে বসলো। পদ্মজা পূর্ণার পাশে গিয়ে বসে। পূর্ণা শক্ত করে পদ্মজাকে জড়িয়ে ধরে বললো,’আপা।’
পদ্মজা মৃদু হেসে বললো,’বোন আমার!’
তারপর পূর্ণার দুই গালে হাত রেখে বললো,’কষ্ট হচ্ছে?’
পূর্ণা মৃদুলকে দেখলো তারপর পদ্মজাকে বললো,’ না আপা।’
মৃদুল উসখুস করতে করতে বললো,’আমি তাইলে যাই ভাবি। ওইখানে পূর্ণার খাবার আছে।’
পদ্মজা মাথা নেড়ে সম্মতি দিল। মৃদুল দরজার বাইরে গিয়ে পূর্ণার দিকে তাকালো একবার। পূর্ণার বদলে সে পদ্মজাকে তাকিয়ে থাকতে দেখলো। মৃদুল জোরপূর্বক হেসে জায়গা ছাড়লো।