আকাশে শুভ্র মেঘের ছড়াছড়ি প্রকৃতির উত্তাল হাওয়া বইছে।ছাদে দাঁড়িয়ে আছি বিষন্ন মন নিয়ে।বিহান ভাই ঢাকা যাওয়ার আগে আমার রুমে এসছিলেন আর উনার হোয়াটস এপ এ একটা মেসেজ এসছিলো।মেসেজ টা সাটার টেনেই দেখছিলাম।প্রেয়সী নামে সেভ করা কারো নাম্বার।একটা লাল লাভ স্টিকার পাঠিয়েছিলো সে।বিহান ভাই হয়তো খেয়াল করেন নি কিন্তু আমি খেয়াল করেছিলাম ওই মেসেজ টা।সেদিন থেকেই মন টা ভীষণ খারাপ।নিশ্চয় ই স্পেশাল কেউ হবে নইলে প্রেয়সী নামে সেভ রাখবে কেনো?।আজ কতদিন হয়ে গিয়েছে বিহান ভাই কে দেখি না।ভীষন মন খারাপ হচ্ছে আজ।প্রায় দু’মাস হয়ে গিয়েছে উনি ফেসবুকে এক্টিভ না হোয়াটস এপ এ আসে না।শুনেছি তার নাকি এক্সাম চলছে।এক্সাম এর সময়ে কারো সাথে কোনো রকম কন্ট্রাক্ট রাখেন না উনি।উনার পারসোনাল একটা সিম আছে তার নাম্বার কেউ জানে না।এক্সাম এর সময় কোনো প্রয়োজন হলে উনার টিচার দের সাথে কথা বলেন।আর নিয়ম করে দিনে দুবার মামির কাছে ফোন দেন।এক্সাম এর সময়ে একবার ফোন দেন।আমাকে হয়তো ভুলেই গিয়েছেন উনি।যতই ব্যাস্ততা থাকুক চাইলে কি এক মিনিট ফোন দেওয়া যায় না।আমাকে ইমপরটেন্ট মনে করলে অবশ্যই এক মিনিটের জন্য হলেও ফোন দিতো সে।হয়তো তার প্রেয়সী কে নিয়ে ভালোই আছে সে।তার প্রেয়সী কে নিয়ে সময় কাটাচ্ছে তাই এদিকের কথা খেয়াল ই নয়।আচ্ছা আমি বা উনাকে নিয়ে এত কিছু ভাবছি কেনো?কখনো তো আমায় ক্লিয়ার করে বলেন নি যে,দিয়া আমি তোকে ভালবাসি।আমার তোকে চাই।তুই ছাড়া আমি অসহায়।উনি আমার সাথে যেটা করেন এমন ও হতে পারে সেটা শুধুই মজা।মনের মাঝে ভীষণ জ্বলছে পুড়ছে উনার দেখার তীব্র আকাঙ্ক্ষা নিয়ে হয়তো মরে যেতে হবে।ফেসবুকে একটা স্টাটাস দিলাম,কতদিন দেখি না তোমায়।তোমাকে দেখার তীব্র আকাঙ্ক্ষা নিয়ে হয়তো মরে যাবো।
হঠাত কুরিয়ার অফিস থেকে একটা ফোন এসছে আমার জন্য একটা পার্সেল এসছে।আমার জন্য কুরিয়ার এসছে কই এমন কেউ তো নেই যে আমাকে কুরিয়ার পাঠাবে।কে বা হতে পারে এমন।রেডি হয়ে কুরিয়ার অফিসের দিকে রওনা হলাম। ভাবতে ভাবতে যাচ্ছি কে হতে পারে আর কে দিবে আমাকে কুরিয়ারে গিফট।
সুন্দরবন কুরিয়ার অফিসের সামনে অটো থেকে নামলাম।অফিসের ভিতরে গিয়ে দেখি একটা হলুদ পলিব্যাগ এসছে।পলিব্যাগ টা হাতে পেয়েই বুকের মাঝে ধুকপুকনি বেড়ে গিয়েছে হাজার গুন। বুক ধুকপুক সেকেন্ডে কয়েক বার করে হচ্ছে।পলি ব্যাগে বিহান ভাই এর নাম লেখা।মানে বিহান ভাই পাঠিয়েছেন এই গিফট।কিন্তু ক্যানো?এতদিনে মনে পড়েছে তার আমার কথা।এই দুই’মাসে একটা দিন আমার খোজ নেওয়ার প্রয়োজন হয় নি তার।এখন আবার গিফট পাঠানো হয়েছে।পলিব্যাগ টা খুলে দেখি ব্লু সিল্কের একটা শাড়ি আমার যে ব্লু ফেভারিট কালার উনি সেটা জানেন।সাথে ব্লু কাঁচের চুড়ির বক্স। শাড়ি টা দেখেই নিমিষেই মন টা ভরে গেলো আমার।প্রিয় জনের দেওয়া গিফট পৃথিবীর সব দামি জিনিসের থেকেও দামী।সাথে একটা নীল খামে নীল কাগযে চিঠি,,
স্রোতোশিনী,,
কি ভাবছো আমি তোমায় এতদিন ভুলে গিয়েছিলাম।তুমি আমাকে কোনভাবেই তোমাকে ভুলতে দাও নি।এই দুই মাস তুমি আমায় ঠিক ভাবে ঘুমোতে দাও নি।পড়ার ভীষণ চাপ ছিলো।এক টানা লং টাইম বই পড়ে যখন মাথা ধরেছে এক কাপ ব্লাক কফি হাতে নিয়ে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়িয়েছি।ঠিক তখন ই আমার মস্তিষ্কে নাড়া দিয়েছে তোমার নাম।তোমার কথা ভাবতেই আমার মুখে ফুটেছে প্রশান্তির এক হাসি।সব ক্লান্তি দূর হয়ে গিয়েছে।এই দু’মাসে প্রতিটি সন্ধা তোমার নামে নেমছে।আম্মুর এই পড়াকু ছেলেটাকে কতটা দূর্বল করে দিয়েছো দেখলে।কখনো চিঠি লিখিনি তাই তোমার মন মতো লেখা হয়ে উঠবে না।তোমার নীল কালার খুব পছন্দ তাইনা।তোমার কথা ভেবে আমি নীল রঙের প্রেমে পড়েছি।যেখানে নীল রঙ দেখি হিংসে হয় আমার।আমার মনে হয় ওই নীল রঙে মিশে আছো তুমি।মনে হয় পৃথিবীর সব নীল একত্রিত করে আমার কাছে রেখে দেই।অভিমান হয়েছে তোমার আমি সেটা জানি আবার মুখে একটু প্রশান্তির হাসি ও ফুটেছে তাইনা।আবার কি একটু লজ্জা ও পাচ্ছো।এত লজ্জা পেও না তাহলে আমি সামনে এলে লজ্জায় আমার সামনেই আসতে পারবে না।খুব অবাক হচ্ছো তাইনা হঠাত চিরকুট কেনো?এর কারণ আমিও জানিনা।দিয়া নামক পোকা তার মুখের হাসি সারাক্ষণ ঝংকার এর মতো বাজে আমার মাথায়।সারাদিন সারাক্ষণ ভেবে চলেছি তোমায়।কখনো কল্পনায়,কখনো স্বপ্নে আমার শরীরে উষ্ণতা দিয়েছো আমায় আলতো স্পর্শ করে।তোমার স্পর্শ আমার শরীরে কখনো তোলপাড় করা সমুদ্রের জোয়ারের মতো ঢেউ উঠেছে সেই মুহুর্তে তোমায় নিয়ে অনেক কিছু ভেবে ফেলেছি।কি ভেবেছি সেটা বলতে পারবো না।বললেও তুমি বুঝবে না।কারণ তুমি যে একটা পুচকি। অনেক কিছু লেখার ইচ্ছা ছিলো কিন্তু সব বলে দিলে তুমি কিছুই বুঝবে না।
ইতি তোমার সারাক্ষণ বিরক্তময় প্রিয় মানুষ।
চিঠিটা সহস্র বার পড়েছি তবুও মন ভরে নি।পড়ার নেশায় ধরেছে আমায়।যতবার পড়েছি উনার মুখে ভেষে উঠেছে আমার চোখের সামনে।উনি এলে কিভাবে মুখ দেখাবো উনার সামনে।ফোনটা হাতে নিলাম উনার পিকচার বের করে কয়েকশত বার দেখলাম।
“এমন সময় তোহা আপু, মেহু আপু আমার রুমে প্রবেশ করলো।ওদের দেখে চিঠিটা বই এর ভাজে লুকিয়ে রাখলাম।তোহা আপু আমাকে বললো দিয়া আমার একটা উপকার করতে পারবি।”
“ভ্রু উচু করে বললাম কি উপকার।”
“বিহান ভাই কে আমার ভীষণ ভাল লাগে দিয়া।প্লিজ একটু সেটিং করায় দে না।তোর না মামাতো ভাই। তুই বললে ঠিক ই রাজি হবে।”
“মেহু আপু তোহা তোর মনে মনে তাইলে এই ছিলো।আমি বলে দিচ্ছি বিহান ভাই জীবনেও প্রেম করবে না।বিহান ভাই যদি কারো সাথে প্রেম করে আমি বস্ত্রহীন থাকবো।”
“সিওর মেহু আপু।আর শুভ ভাই কারো সাথে প্রেম করলে কি করবা।”
“শুভ কে চুম্মা দিবো পাক্কা দেখে নিস।”
“রিয়া বললো বিহান ভাই কে দিয়া তোহা আপুর হয়ে প্রপোজ দিলে দিয়ার লাশ চিত্রা নদীতে পাওয়া যাবে এতে কোনো ভুল নেই।”
“তোহা আপু আবার বললো,দিয়া তোর মামিকে তুই কিন্তু রাজি বানিয়ে ফেল। দেখ দিয়া আমার অন্য কোথাও বিয়ে হলে কত দিন পর পর দেখা হবে। তোর মামাতো ভাই এর সাথে বিয়ে হলে মাঝে মাঝেই দেখা হবে। লাভ কিন্তু তোর ই দিয়া।”
“আমার দুই মামাতো ভাই আর আমার ভাই কে তোমরা তিন ভন্ড মহিলা ভাগ করে নাও।আমি এসব ঘটকালি করতে পারবো না তোহা আপু।বিহান ভাই আমার হাতে একটা ছাটা ধরিয়ে দিবে।আজন্ম কাল আমাকে ঘটকালি করেই বেড়াতে হবে।আমি কিছুতেই এই ঘটকালি ফটকালি করতে পারবো না।তাও আবার বিহান ভাই এর ঘটকালি।”
ওদের সাথে বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম।
————————————————–
পরের দিন সকাল দশ টায় তবুও বর্ষনের অপেক্ষা উপন্যাস পড়ছি।খুব মন দিয়েই পড়ছি।এটা পড়ার কারন এই উপন্যাসে আমাদের দুজনের নাম ই আছে।মানে আমি আর বিহান ভাই এর নাম ই আছে।যে কারনে খুব মনোযোগ দিলাম উপন্যাস।
এমন সময়ে কেউ এক ঝঁটকায় হাত থেকে উপন্যাস টা কেড়ে নিয়ে গেলো।
পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখি কপালের চামড়া কয়েক টা ভাজ ফেলে উপন্যাস টা হাতে নিয়ে গায়ে বাঙি কালারের গেঞ্জি আর পরনে কালো থ্রি কোয়ার্টার পরে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করছেন বিহান ভাই।দেখেই আতকে উঠলাম আমি।উনি এখন এই মুহুর্তে কোথা থেকে এলো।কই একবার ও তো জানালো না আমাকে।আমি জিভ দিয়ে নিজের ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে বললাম এ কি আপনি কখন এলেন।
“বিহান ভাই আমার হাত ধরে এক ঝটকায় টান দিয়ে চেয়ার থেকে উঠিয়ে দিলেন আর নিজে বসে পড়লেন।
কিরে দিয়া মুরব্বিরা আসলে আসন ছেড়ে দিতে হয় এটা জানিস না।দিন দিন সব আদব কায়দা ভুলে যাচ্ছিস।”
“আপনি জানেন না ছোট দের আদর করে বসতে দিতে হয়।ছোট রা আদরের জিনিস। ”
“বিহান ভাই ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে আবার হাত ধরে টান দিয়ে উনার কোলের উপর বসিয়ে দিলেন।হুম জানি ছোট দের আদর করে কোলে বসাতে হয়,হাগ দিতে হয়,কিস দিতে হয় এসব পাওয়ার যোগ্য ছোটরা।”
“এক লাফে উনার কোল থেকে উঠে বললাম আপনি কিস করতে চাইছেন?..”
“আমি তোকে কিস করলে সেটা নতুন কিছু না।ছোট বেলা অসংখ্য কিস করেছি।কিন্তু বড় হয়ে কিস করতে কেমন একটা লাগে।আমার ইচ্ছা ছিলো না বাট তুই যখন চাইছিস দিতেই পারি।”
“দেখুন ছোট বেলার কথা কি মন এ আছে আমার।”
“জানতাম ভুলে যাবি তাই সব ভিডিও করে রেখেছি।”
“শুনলাম আরো এক মাস পরে আসবেন হঠাত এখন।”
“এখন না আসলে তার অভিমানের পাহাড় আরো গভীর হয়ে যেতো।আমাকে যে আসতেই হতো।অনেক দিন তাকে বিরক্ত করি না।তার রাগি রাগি চোখ মুখ দেখি না।এ শহর আমার প্রেয়সীর। তার টানে আমাকে ছুটে ছুটে আসতেই হতো।তার পর আবার শুনছি শ্বশুরের মেয়ে নাকি প্রেম করছে।প্রেম করে দেবদাসি অবস্থা তার।শ্বশুরের মেয়ে তার জামাই কে স্যাকা দিয়ে অন্যর হয়ে যাবে এটা তো হতে পারে না।
এনি ওয়ে দিয়া তোর প্রেম কেমন চলছে সাংঘাতিক স্টাটাস দেখে আমি ছুটে চলে এসছি।”
“আমি তো আর আপনার মতো না আবেগ প্রকাশ না করে থাকতে পারি না।
আপনার প্রেয়সী কেমন আছে?”
“কাল জানাবো কেমন আছে।এখন মনে হচ্ছে রেগে আছে বেশী প্রশ্ন করা যাবে না।”
“আপনি আমার ফেসবুক থেকে স্টাটাস ডিলিট করেছেন কেনো?”
“তাহলে কি করবো এমন স্টাটাস দিয়েছিস আমার প্রেজটিজ এ লাগছিলো।মানুষ যদি জানে আমার কাজিন এ ধরনের স্টাটাস দিয়েছে আমার মান সম্মান কিছুই থাকবে না।এগুলা স্টাটাস দেই এঞ্জেল এলিনা রা। আমি নেই এ দু’মাসে নাকি প্রেম ট্রেম করেছিস।রিয়া,তোহা,মেহু আমাকে এই নিউজ দেওয়ার জন্য ডেকে এনেছে।তুই নাকি রাত জেগে চিঠি লিখিস সেই ছেলে নাকি বাসার সামনে থেকে এসে নিয়েও যায়।আবার উপন্যাস দিয়ে যাচ্ছে তার ভিতরে চিরকুট দিয়ে যাচ্ছে।দিয়া এই ঘটনা সত্য হলে কি যে হবে তার ঠিক ও নেই।”
“কে বলেছে আপনাকে আমাকে উপন্যাস দিয়েছে কেউ”
“কাল বিকালে পাশের পাড়ার আহিন তোকে উপন্যাস দিয়ে গিয়েছে আর তুই লালা কালারের গাউন পরে সেটা আনতে গেছিলি।এই নড়াইল শহরের সব ইয়াং ছেলে আমাকে চিনে বুঝলি।তুই এক পা বাড়ালে তার নিউজ সাথে সাথে চলে যায় আমার কাছে বুঝলি।”
মানুষ এতটা বিদঘুটে কিভাবে হতে পারে।কোথায় ভেবেছিলাম উনি চিঠি পাঠিয়েছেন এবার এসে হয়তো খুব ই রোমান্টিক কথা শোনাবেন।নাহ এর দেখছি কোনো চেঞ্জ নেই।কোথায় ভেবেছিলাম এবার এসে বলবে মিস ইউ জান।তা না জঘন্য ব্যবহার শুরু করেছেন।আমায় যে একটা চিঠি দিয়েছেন উনি সেটা কি ভুলে গিয়েছেন অদ্ভুত মানুষ তো।আমার পেছনে এত গুলো গোয়েন্দা রেখেছেন উনি।না জানি আহিন বেচারা কে কি করবেন উনি?