১৬ পৃষ্ঠায় | পর্ব – ১৮

সোনালী রৌদ্দুর ছড়িয়ে আছে বিস্তৃত আকাশে। দূরন্ত গতিতে ছুটে চলছে পাল্লা মেঘের মেলা। আকাশ আজ স্বচ্ছ পরিস্কার। বাহির থেকে ভেসে আসা মিষ্টি ফুলের মিষ্টি সুবাসে মেতে উঠেছে পরিবেশ।
নিনি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চিরুনি করছিল ঠিক সেই মুহূর্তে কলিং বেলের আওয়াজ শ্রবণ করলো সে। চিরুনি ড্রেসিং টেবিলে রেখে ধীরে ধীরে নিচে নামলো। মেইন দরজা খুলতেই দেখে এক যুবক এক যুবতীর সাথে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটির কোলে এক ফুটফুটে কন্যা শিশু। কপাল কুঁচকালো নিনি। যুবকটি তড়িগড়ি করে বলল,,
“আপনার বাসায় কয়েক ঘন্টার জন্য থাকতি পারি?”
পিলক চমকালো নিনি। না জেনে হুট করে থাকার জন্য বলছে এই অদ্ভুত ছেলেটি। নিনি প্রশ্ন করল,,
“আপনারা কে? আর কোথার থেকে আসছেন?”
“আমাদের ঘর থেকে বের করে দিয়েছে, আশ্রয়স্থল খুজছি আপনি যদি একটু আশ্রয় দিতেন।”
থতমত খেয়ে গেল নিনি। কিছু বুঝতে পারছে না কি করবে। তাদের একটু অপেক্ষা করতে বলে দরজা লাগিয়ে কল করলো এনোন কে। সেকেন্ডের মধ্যে কল রিসিভ করলো এনোন। পুরো ঘটনা খুলে বললো নিনি। সব শুনে এনোন বলল,,
“আমি কিছুক্ষণের মধ্যে আসছি, আসার অব্দি দরজা খুলবে না।”
বলে কল কেটে অফিস হতে বেরিয়ে গেল সে। হাঁটাহাঁটি করতে লাগল নিনি লুকিং গ্লাস হতে বারবার চেক করছে তারা আছে কিনা। তারা ঘোর অপেক্ষা করছে নিনির, হয়ত অধৈর্য হয়ে পড়ছে তাও দাঁড়িয়ে আছে। এনোন গাড়ি ব্রেক ধরতেই দেখল তার ঘরের সামনে দুজন দাঁড়িয়ে আছে। এনোন নেমে তাদের কাছে গেল মেয়েটির কোলের দিকে তাকালো ফুটফুটে ফর্সা বাচ্চা মেয়ে। এনোন প্রশ্ন করল,,
“আপনারা কোথার থেকে আসছেন?”
“অনেক দূর থেকে আশ্রয়স্থানের তালাশে, আমাদের ঘর থেকে বের করে দিয়েছে, আপনি একটু ঘরে জায়গা দিবেন আমার বউ ও বাচ্চা কে রাখব।”
এনোন এবার মেয়েটির দিকে তাকালো। বয়স বেশি মনে হচ্ছে না সতেরো আঠেরো হবে। হঠাৎ ই নিনির কথা মনে পড়লো তার, তারও মেয়েটির সমান বয়সী বউ আছে ইতিমধ্যে দরজা খুলল নিনি। সবার দৃষ্টি তার দিকে গেল মেয়েটি নিনির দিকে সম্পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো আর নিঃশব্দে মুচকি হেসে দিল। এনোন তাদের কাছ থেকে ভালোভাবে সব জেনে ঘরে ঢুকালো। ছেলেটি ও মেয়েটি তাকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো। মেয়েটি নিনি কে দেখে বলল,,
“আপনি গর্ভবতী?”
নিনি একপলক তাকালো এনোনের দিকে তারপর বলল,,
“হ্যা।”
মেয়েটি মুচকি হাসি দিলো। কিছুক্ষণ সময় গড়িয়ে যেতেই এদের কথাপকথন ও বেড়ে গেল। এ যেন অনেক বছর পর পরিচিত কোন মানবের সাথে মিলন। সন্ধ্যা হতে না হতেই জোড়তোড় বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। সকালে মিষ্টি রোদ ছিল আর এখন বৃষ্টি। রাত এগারোটা বেজে উঠতেই ছেলেটি বাহির থেকে ভিজে এসে জবতব হয়ে হাঁপিয়ে গিয়ে বলল,,
“সামিরা আসো আমাদের থাকার ব্যবস্থা হয়ে গেছে।” মেয়েটি হাসলো ওদের কাছ থেকে বিদায় নিতেই নিনি বলল,,
“তোমরা চাইলে আজকের রাতের জন্য থাকতে পারো।”
ছেলেটি ও মেয়েটি প্রচন্ড খুশি হয়ে গেল। শুধু বিরক্ত হলো এনোন। এভাবে বাহিরের কাউকে রাতের জন্য আশ্রয় দেওয়া ঠিক মনে হচ্ছে না তার। তার উপর নিনিও গর্ভবতী যদি কোন কিছু হয়ে যায়। ছেলেটির চোখ গেল এনোনের দিকে বুঝতে পারলো এনোন তাদের থাকতে দিতে চাইছে না তাই সে বলল,,
“না আমাদের থাকার ব্যবস্থা হয়ে গেছে, আর আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ কিছু সময় আমার বউ বাচ্চাকে থাকতে দেওয়ার জন্য, আমরা যাচ্ছি, সামিরা!।”
বলে ডাক দিলো সে মেয়েটিও মাথা নেড়ে রাজি হয়ে গেল। সামিরা চলে যেতে নিলে নিনি বলে উঠলো,,
“এক মিনিট।”
বলে সে রান্নাঘরের দিকে ছুটে গেল। মিনিট খানেক পর এসে সামিরার হাতে একটা বড় বক্স দিয়ে বলল,,
“এখানে খাবার রাখা আছে।”
এ যেন প্রচন্ড খুশি হয়ে গেল সামিরা। বক্স হাতে নিয়ে অনেক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো। তারপর বাচ্চা মেয়েটিকে কোলে নিয়ে ছেলেটির সাথে বেরিয়ে গেল। এনোন দরজা লাগিয়ে নিনির সামনে দাঁড়িয়ে বলল,,
“কি দরকার ছিল ওদের একরাত থাকার জন্য বলতে? বাহিরের কাউকে এভাবে ঘরে আশ্রয় দেওয়া উচিত না।”
“তো কি হয়েছে দেখেননি ওরা কত সুন্দর করে ব্যবহার করছে।”
“তুমি এখনো দুনিয়া দেখোনি, ভালো মুখোশ পড়ে অনেক খারাপ মানুষ ঘুরে বেড়ায় সো এতো তাড়াতাড়ি কাউকে বিশ্বাস করা ঠিক না।”
“এমন করছেন কেন আপনি?”
“ওরা যদি এতোই ভালো মানুষ হয় তাহলে ওদেরকে ঘর থেকে বের করে দিল কেন? মিষ্টি মধু মুখ সবারই থাকে তাই বলে এ না যে ঘরে থাকতে দিব, ঘন্টাখানেক এর জন্য থাকতে দিয়েছি আমি পুরো রাতের জন্য নয়।”
“সবকিছু তে এতো কঠোরতা রাখেন কেন, বাচ্চা মেয়ে টিকে দেখেননি?”
“তুমি আমাকে রুড বলতে পারো কিন্তু আমি রুড না প্রেকটিক্যাল, সবকিছু প্রেকটিক্যাল হিসেবে নি,‌ ইমোশনাল হয়ে থাকলে যে কেউ এসে ভেঙে চলে যাবে, বুঝছো!”
কথাগুলো বলেই সে নিজের রুমে হুড়মুড় করে চলে গেল।

[ রেসপন্স করবেন, কেমন হয়েছে জানাবেন। ]

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।