সময়টা দুপুরের মাঝামাঝি হবে হয়তো , রাস্তায় তেমন একটা ভিড় নেই বললেই চলে। নিস্তব্ধ রাস্তা,,,, সুদেষ্ণার কানে কোনো আওয়াজ যাচ্ছে না , ও মনে হচ্ছে কোনো ঘোরের মধ্যে আছে । সুদেষ্ণা নিষ্পলক চেয়ে আছে সুদর্শন পুরুষটির দিকে,,,,,, অষ্টাদশীর নেই কোনো তাড়া নেই কোনো ব্যস্ততা শুধুমাত্র তাকিয়ে থাকাই হচ্ছে তার মুখ্য কাজ। হিমাদ্র মুখটা গম্ভীর করে তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।
তোমার অয়নের সঙ্গে এত কীসের কথা?,,,,,,, তোমাকে যেনো আর অয়নের সঙ্গে না দেখি।
কর্কশ শব্দে সুদেষ্ণার ধ্যান ভাঙ্গে ,,,,,, চোখ পিটপিট করে তাকালো পাষান পুরুষটির দিকে। যখন হিমাদ্রর কথার মানে বুঝতে সক্ষম হলো তখন সুদেষ্ণার ভ্রু কুঁচকে গেলো আপনা আপনি । বুকের ভেতর হঠাৎ ধ্রিম’ ধ্রিম’ শব্দ হচ্ছে। হিমাদ্রর কন্ঠে অধিকারবোধ স্পষ্ট , কিন্তু কীসের অধিকার দেখাচ্ছে হিমাদ্র??সুদেষ্ণা নিজেকে সংযত করে বললো,,,,,,
আবার দেখলে কী করবেন ?? আমি কার সাথে কথা বলবো আর না বলবো এটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার,,,,,, আপনি বলার কে ??
হিমাদ্র একবার সুদেষ্ণার মুখে চোখ বুলিয়ে বললো,,,,, আবার অয়নের সঙ্গে দেখলে তোমাকে কিছু বলবো না সোজা করে দেখাবো। হিমাদ্র রায় চৌধুরী মুখে বলার থেকে কাজে করতে বেশি পছন্দ করে। যা করবে ভেবে চিন্তে,,,,,,, এই বলে হিমাদ্র সুদেষ্ণার পাশ কাটিয়ে চলে গেলো।
সুদেষ্ণা হ্যাবলার মতো তাকিয়ে রইলো হিমাদ্রর যাওয়ার দিকে। মানুষটার হঠাৎ করে হলো কী ? ,,,,,,,, চিন্তার বিষয়। যে হিমাদ্র কী না কখনো সুদেষ্ণার সঙ্গে কথা বলেনি এমনকি তার প্রেম নিবেদন নিয়ে অপমান করেছে সে হঠাৎ তাকে কোনো কাজ করতে নিষেধ করছে। আচ্ছা হিমাদ্র কী তাহলে জেলাস ,,,,,,, হতেও পারে। আজকেই তো সুদেষ্ণা ভেবে ছিলো হিমাদ্রর থেকে দূরে থাকবে , আর আজকেই এরকম হলো । এখন খুশি হওয়া উচিৎ না রাগ করা উচিৎ সুদেষ্ণা বুঝতে পারছে না। তার বন্ধুদেরকে জানাতে হবে, দেখা যাক তারা কী বলে। সব চিন্তা ভাবনা ছেড়ে সুদেষ্ণা বাড়ির দিকে হাঁটা দিলো।
রাতে আর সুদেষ্ণার ঠিক মতো ঘুম হলো না । সারাক্ষণ হিমাদ্রর কথা ভেবে অস্থির । হিমাদ্রর সঙ্গে যখন দেখা হবে তখন সুদেষ্ণা কি করবে??হাঁসবে, নাকি পাশ কাটিয়ে চলে যাবে,,,,,,,। মানুষটার চোখে চোখ রাখতে পারবে তো সুদেষ্ণা । এই সব চিন্তা ভাবনায় ঘুমের বারোটা বেজে গেলো। বিকেলে সুদেষ্ণা জানিয়েছিলো নিজের বন্ধুদের। অনেকে অনেক ধরনের কথা বললো । কারোর মতে হিমাদ্র সত্যি সুদেষ্ণাকে পছন্দ করে , আবার কারো মতে সুদেষ্ণার হিমাদ্রকে ছেড়ে অন্য ছেলের সাথে মেশা হিমাদ্রর পছন্দ হয়নি। অনু সুদেষ্ণাকে পরে বুঝিয়ে বললো অতো এক্সপেক্টেশন না রাখতে, যা হবে সময়ের ওপর ছেড়ে দিতে।
________________________________________________
ইতি মধ্যে কেটে গেছে বেশ কয়েক দিন। সেই দিনের পর সুদেষ্ণার সঙ্গে হিমাদ্রর আর দেখা হয়নি। সুদেষ্ণা হিমাদ্রর সামনে পরেনি এমন নয় বরং হিমাদ্রকে সেইদিনের পর আর কলেজে দেখা যাইনি। এই নিয়ে সুদেষ্ণা বেশ চিন্তায় আছে, হঠাৎ করে মানুষটা কোথায় উধাও হয়ে গেলো । সুদেষ্ণা তো ভেবেই নিয়েছিলো পাষান পুরুষ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবে কিন্তু হঠাৎ করে মানুষটা এলো অষ্টাদশীর ওপর অধিকার দেখিয়ে তার মনে নতুন করে অনুভূতি জাগিয়ে কোথায় চলে গেলো। তার কী মন নেই?? তার কী কষ্ট হয় না ? হিমাদ্র তাকে কী মনে করে কে জানে,,,,,,, সুদেষ্ণা ভেবেই নিয়েছে হিমাদ্রকে হাড়ে হাড়ে বোঝাবে সুদেষ্ণা কী জিনিস।
হঠাৎ সুদেষ্ণার নজর গেলো সামনে থেকে আসা অয়নের ওপর ওমনি উল্টো দিকে হাঁটা দিলো। আজকেও সুদেষ্ণা হিমাদ্রর জন্য কলেজ এসেছিলো , শুধুমাত্র মানুষটার দেখা পাওয়ার জন্য। কত দিন দেখা হয়নি মানুষটাকে , সুদেষ্ণার বুক খাঁ’ খাঁ’ করে শূন্যতায় মানুষটাকে একটু দেখার তৃষ্ণায়। দুই দিন পর থেকে পরীক্ষা ফার্স্ট সেমের স্টুডেন্টদের , সুদেষ্ণার বন্ধুরা কেউ কলেজ আসে না এখন । সুদেষ্ণার ডিপার্টমেন্টেও তেমন কেউ আসে না , দুই দিন পর পরীক্ষা থাকলে কেই বা আসবে। সুদেষ্ণার আজকে তেমন একটা ক্লাস হয়নি তাই বাড়ি যাচ্ছিলো কিন্তু পথের মধ্যেই অয়নদার সঙ্গে দেখা,,,,,, হিমাদ্রর বারন করার পর থেকে সুদেষ্ণা অয়নের থেকে দূরেই থাকে , তেমন একটা কথা বলে না । সুদেষ্ণা চাইলে হিমাদ্রর কথা নাও শুনতে পারতো কিন্তু তার শখের পুরুষ তাকছ প্রথম কোনো আদেশ দিয়েছে তার অমান্য করার সাধ্য অত্যন্ত সুদেষ্ণার নেই।
সুদেষ্ণা এখন পড়তে বসেছে, হাতে তার পেন্সিল তা দিয়ে বইয়ে আঁকিবুঁকি করছে । সুদেষ্ণার পরীক্ষার চিন্তা একটুও নেই সে চিন্তায় আছে হিমাদ্রর দেখা কীভাবে পাবে । সুদেষ্ণা ভেবে নিয়েছে পরীক্ষা দিয়ে হিমাদ্রর বাড়ি যাবে হিমাদ্রকে দেখতে। শুধুমাত্র পরীক্ষার দিনের অপেক্ষা,,,,,,,,,
চলবে,,,,,,,