১৬ বছর বয়স | পর্ব – ৪১ (অভিমান)

“আপনার আমাকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।আপনি যান আপনার গুরুত্বপূর্ণ কাজে। এক মাস কেনো এক বছর কাটিয়ে আসুন।” রেগে বললাম আমি।
“ওকে। যাব আমি।” শক্ত মুখ করে বলল শাওন।
আমি থমকে গেলাম।
শাওন বের হয়ে চলে গেল।
উনি কি সত্যিই যাবেন নাকি? এখন কি করব আমি?
উনি আগের চেয়েও বেশি খারাপ হয়ে গেছেন এখন। আমাকে কষ্ট দিয়ে কি পান উনি?
এখন ত আমারই রাগ লাগছে।
যাওয়ার খুব শখ ওনার, তাই না? উনি যাওয়ার আগে আমিই চলে যাব।
আমি এক বছর আগে আর ফিরবই না এবার। অসভ্য গরিলা।
আমি নিজের ল্যাগেজ গুছিয়ে নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। কারণ শাশুড়ীর কাছে গেলে হাজারটা প্রশ্ন করবে, পরে কিনা বকবেও। তার চেয়ে আমি নিজের বাড়িই যাই, এটাই ভাল হবে।
আমি সত্যি সত্যিই চলে এলাম। বাড়ি আসতে আসতে বিকাল হয়ে গেল।
আর বাড়ি ফিরতেই কাকা কাকির হাজার প্রশ্ন। তাও আবার সব শাওনকে নিয়ে।
সে আসেনি কেন, সে কই, কেমন আছে, কখন আসবে, নিয়ে আসলি না কেন? হেন তেন অনেক প্রশ্ন।
বুঝিনা এদের উপর গরিলাটা কি কালাজাদু করে বসেছে!
আমি বলে দিলাম যে আমি এখানে অনেক দিন থাকবো, উনি বিদেশ যাচ্ছেন।
এটুকু বলেই আমি নিজের রুমে ঢুকে এলাম।
আমি ত একটা দিনও থাকতে পারিনা এক মাস কিভাবে থাকব?
এখনি ত চলে যেতে ইচ্ছে করছে।
উনি কি আমাকে নিতে আসবেন? আসলেও আমি যাব না।
আমাকে রেখে যাওয়ার কথা চিন্তা করল কিভাবে উনি?
ফ্রেস হয়ে কিছু খাওয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু খেতেও ভালো লাগছে না। যদিও আমি সকাল থেকে না খাওয়া, তাও।
সময় ত কাটছেই না! তাই বকুলের কাছে চলে গেলাম।
বকুল আমাকে দেখেই খুশিতে লাফিয়ে উঠল।
“কিরে, ফুলসজ্জা কেমন করলি?” বকুল প্রথমেই এই প্রশ্ন করল।
বকুলটা দিন দিন লুচ্চা হয়ে যাচ্ছে।
“কি ভাবছিস? আর তোর বর কই?” বকুল বলল।
আমি উওর দিলাম না। আর বকুলও উত্তরের অপেক্ষা না করে বলে উঠল, “এবার ত কাহিনী শুনাতেই হবে তোকে। বল কি হয়েছিল?” বকুল হালকা হেসে ভ্রু উঁচু করে বলল।
“এগুলো ছাড়া আর কোনো কথা নেই?” চোখ পাকিয়ে বললাম আমি।
বকুল সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বলল, “বলিস না যে এবারো কিছু হয়নি!”
আমি কিছু না বলে চুপ করে রইলাম।
“হায়রে কপাল! আমি মা হতে চলেছি আর তুই এখনো বরকেই হাত করতে পারলি না?” হেসে বলে উঠল বকুল।
আমি চোখ বড়সড় করে বললাম, সত্যি?
“হ্যা, দুই মাস হয়েছে।” বকুল নিজের পেটের উপর হাত রেখে বলল।
আমি খুশি হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম।
“তোদের কি ঝামেলা চলছে? না হলে এমন অবস্থা কেন? শাওন কি তোকে এখনো মেনে নিতে পারছে না?”
আমি সাথে সাথে বলে উঠলাম, “আমাদের মধ্যে সব স্বাভাবিক আছে আর উনি আমাকে…” এটুকু বলেই আমি থেমে গেলাম।
আমি ওনার শেখানো কথাগুলোই বলে ফেলছিলাম প্রায়। ভাগ্যিস পুরোটা বলিনি।
“উনি তোকে কি?” বকুল প্রশ্ন সূচক চোখে তাকিয়ে বলল।
আমি অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম আর বললাম, “কি…কিছুনা, আমি যাব এখন কাজ আছে।” বলেই আমি উঠে দাড়ালাম। কিন্তু বকুল আমাকে হাত ধরে টেনে বসিয়ে দিয়ে বলল,”আমার ত মনে হয় তুই কিছু পাকিয়ে বসে আছিস। তোর দ্বারা কিছুই হবেনা।”
বলেই বকুল আমার মাথায় টোকা দিলো।
“সত্যিই কি সব স্বাভাবিক আছে? নাকি তুই স্বাভাবিক হতে দিচ্ছিস না?” ভ্রু উঁচু করে বলল বকুল।
আমি ওর প্রশ্ন শুনে নিজেই নিজেকে জিজ্ঞেস করলাম সত্যিই কি আমি স্বাভাবিক হতে দিচ্ছি না?
রাতে তাড়াতাড়ি শুয়ে পরলাম। স্নোবেলও আমার পাশে এসে শুয়ে পরল। আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম আর চিন্তা করতে লাগলাম যে, উনি অফিস থেকে এসে ত আমাকে অবশ্যই খুজবেন আর না পেলে ত অবশ্যই এখানে চলে আসবেন! তাই না?
এক মিনিট! এগুলো ত আমার ভাবার বিষয় না। সব চিন্তা ঝেড়ে ফেলে আমি জোর করে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।
কিন্তু চোখে ঘুম আসতে আসতে রাত দশটা বেজে গেল।
কিন্তু ঘুম আসতে না আসতেই কেউ আমার এক হাত ধরে টেনে উঠিয়ে বসিয়ে দিল।
আমি ঘুম ঘুম চোখ ডলতে ডলতে বললাম,”কে? উফ অসহ্য!”
ভালো মত তাকাতেই বুঝলাম যে এটা শাওন।
আমার মুখ হা হয়ে গেল। উনি এত জলদি কিভাবে এলেন।
ঘরের আবছা আলোতে ঘড়িটা ভালো ভাবেই দেখা যাচ্ছে। দশটা তেরো বাজে।
উনি এত জলদি কিভাবে আসতে পারেন? ওনার অফিস থেকে ফিরতেই ত সাড়ে আটটা বাজে। নাকি এটা স্বপ্ন।
“না বলে এসেছ কেন?” শাওন রেগে দাতেদাত চিপে বলল।
উনি যে অনেক রেগে গেছেন সেটা কথা বলার ধরনেই বুঝতেই পারছি।
আমি বিছানা থেকে নেমে দাড়ালাম আর ওনার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম, “এটা কি সত্যিই আপনি?”
উনি রেগে আমার দুই বাহু ধরে ওনার কাছে নিয়ে এসে বললেন, “তোমাকে মানা করেছিলাম না? কেন বের হয়েছো? আর তোমার সাহস কি করে হয় এভাবে চলে আসার?”
আমি নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে শক্ত চোখে তাকিয়ে বললাম, “আমার ইচ্ছা হয়েছে আমি এসেছি।”
শাওন রেগে আমার দিকে এক পা এগিয়ে আসতেই আমি ঘাবড়ে গেলাম।
“তোমাকে একটা শিক্ষা না দিলে হবেই না।” রেগে বলল শাওন।
“মা…মানে?” আমি চমকে গেলাম।
উনি হুট আমাকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলেন। আর আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই উনি আমার ঘাড়ে আলতো করে কামড় বসিয়ে দিলেন।
আমি ঠোঁট কামড়ে ধরে চোখ বন্ধ করে নিলাম আর এক হাত দিয়ে ওনার কাধের কাছের শার্ট খামচে ধরে নিলাম।
উনি আমার কানে কানে বললেন, না বলে আর আসবা?
আমি আস্তে আস্তে চোখ খুললাম।
শাওন আমার চোখের দিকে তাকিয়ে রইল।
আমি এবার শব্দ করে কেদে দিলাম।
শাওন বেশিই চমকে গেল আর আমার কাছ থেকে সরে আমাকে হাত ধরে টেনে উঠিয়ে বসিয়ে দিল।
“তোমার বেশি লেগেছে?” শাওন অস্থির হয়ে গেল।
আমি কাদতে কাদতে হ্যা সূচক মাথা নাড়লাম।
শাওন বলল “ওকে রিল্যাক্স আমি…”
ওনার কথা শেষ হবার আগেই আমি ওনাকে জড়িয়ে ধরে কাদো কাদো গলায় বললাম, “যাবেন না কোথাও। আর গেলেও আমাকে রেখে যাবেন না। আপনি কথা দিয়েছিলেন আমাকে ছেড়ে যাবেন না। তাও আপনি যেতে চাচ্ছেন। খারাপ আপনি।”
“তুমিই ত যাওয়ার পারমিশন দিয়েছ।” শান্ত গলায় বলল শাওন।
আমি রেগে গেলাম। আর ওনাকে ছেড়ে ওনার বুকের উপর দুই হাত দিয়ে ধাক্কা মেরে বললাম, দিইনি আমি। কতবার বলবো?
“কিন্তু আমাকে ত যাওয়াই লাগবে।” শাওন সরু চোখে তাকিয়ে বলল।
আমি চোখ পাকিয়ে বললাম, কি বললেন?
“শোনো নি?” শাওন বলল।
আমি ওনাকে ঠেলে বিছানায় শুইয়ে দিলাম আর ওনার কাছে এসে ঘাড়ে জোরে কামড় বসিয়ে দিলাম।
উনি প্রকাশ না করলেও বেশ ভালই ব্যথা পেলেন। পাওয়া উচিত। অসভ্য গরিলা।
আমি সরে আসার আগেই উনি আমাকে টেনে শুইয়ে দিয়ে আমার কাছে চলে আসলেন। আমি চোখ বড়সড় করে তাকিয়ে রইলাম।
“অনেক বেশিই সাহস হয়ে গেছে তোমার।” শাওন ভ্রুকুচকে বলল।
আমি ক্ষোভের সাথে বলতে লাগলাম “হ্যা হয়েছে। তো? আমি এবার সত্যিই আপনার সাথে যাব না। আপনার এতই যখন যাওয়ার শখ…”
“Shut up.” জোরেই বলে উঠল শাওন।
আমি ভয়ে চুপ হয়ে গেলাম।
“গাধা। আমি একবারো বলেছি যে আমি যাচ্ছি? সব সময় দশ লাইন বেশি বোঝো কিসের জন্য?” শাওন রাগমিশ্রিত কন্ঠে বলল।
“মা…মানে?” আমি বললাম।
“তোমার মত গাধা হয়তো পুরো World এ পাওয়া যাবে না। কাদতে এতই ভালো লাগে তোমার যে তুমি রিজন খুজে পেলেই শুরু করে দেও। আগে পরে না শুনেই! I’m speechless. তোমার মাথায় বুদ্ধি নেই? বাসা থেকে এক পা বের হলেই ত মিনিটের মধ্যে অঘটন ঘটিয়ে বসে থাকো। আর তোমাকে রেখে এক মাসের জন্য যাব আমি?” শাওন রেগে আমার দিকে তাকিয়ে বলল।
আমি হা হয়ে গেলাম। আমি কি তাহলে আবার ভুল বুঝলাম!
আমি চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে বললাম, আমি ত…।
“তুমি ত গাধা।” শাওন ভ্রুকুচকে বলল।
আমি চোখ পাকিয়ে তাকালাম আর বললাম, আর আপনি ত বনমানুষ।
বলেই আমি হেসে দিলাম।
শাওন কিছু না বলে আমার দিকে তাকিয়ে রইল।
“আপনিই ত বলেছিলেন কামড়ে দেওয়া বনমানুষের কাজ। মনে নেই?” আমি মৃদু হেসে বললাম।
উনি কিছু না বলে ওভাবেই তাকিয়ে রইলেন।
আমি চোখ নামিয়ে নিলাম আর একটা ঢোক গিললাম। এখন আবার কি!
সাথে সাথে আমার পেটের মধ্যে শব্দ হলো।
আমি ঠোঁটে ঠোঁট চিপে সরু চোখে ওনার দিকে তাকালাম। সকাল থেকে না খাওয়ার কারনেই হয়ত। এখন খিদেও পেয়েছে।
উনি আমার দিকে কড়া চোখে তাকালেন। অর্থাৎ এখন আমি আবার বকা খাব।
আমি কি বলব বুঝতে না পেরে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম।
“পিরিয়ড না তোমার? এই সময় না খেয়ে থাকো কেনো? এগুলো করো বলেই ত দুই দিন পর পর অসুস্থ হয়ে যাও।” কড়া চোখে তাকিয়ে বলল শাওন।
আমি কিছু না বলে তাকিয়ে রইলাম।
উনি আমার কাছ থেকে সরে বিছানা থেকে নামলেন। তারপর রুম থেকে বের হয়ে গেলেন।
এখন আবার কি করতে চলেছেন উনি?
আমি বিছানা থেকে নেমে বাহিরে বের হয়ে এলাম।
কাকি আর প্রভাতী ত আজ বিকেলেই বেড়াতে গেছে। এদিকে কাকাও এখনো ফেরে নি।
“এখন এত রাতে কি করবেন আপনি?” আমি শাওনকে প্রশ্ন করলাম।
উনি রান্নাঘরে খাবার খুজতে ব্যস্ত কিন্তু কিছুই নেই। আসলে আমি কিছুই রান্না করিনি রাতের জন্য। ভাত ছাড়া কিছুই নেই এখন।
“পাবেন না আপনি এখনে কিছু।” আমি বললাম।
শাওন রেগে বলে উঠল, ওরা না খাইয়ে রেখেছে তোমাকে?
ওনার প্রশ্ন শুনে আমি হা হয়ে গেলাম।
“আমিই খাই নি। ওদের কোনো দোষ নেই।” বললাম আমি।
এটা শুনে আরোই রেগে গেল শাওন।
নেও ঠেলা। কিছু বলেই শান্তি নেই।
আমি একটু কিউট হাসি দেওয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু সেটাতে কোনো লাভ হলো না।
উনি রান্নাঘরের তাকের উপর থেকে ডিম নিলেন।
“এখানে গ্যাসের চুলা নেই। মাটির চুলা। আমাকে দিন আপনি পারবেন না।” আমি বললাম।
শাওন নিজের শার্টের হাতা গুটিয়ে নিতে নিতে বলল, “তোমাকে কে বলল আমি পারবো না?”
ওনার ভাব নেওয়া দেখে আমি আর কিছু বললাম না। বুকের কাছে দুই হাত গুজে ওনার কাজ দেখতে লাগলাম।
উনি ছোটো টুল নিয়ে চুলো ধরানোর জন্য বসলেন।
কিন্তু এখন সমস্যার বিষয় হলো উনি চুলো ধরাতেই পারছেন না। একবার পাতা দিয়ে চেষ্টা করছেন, আরেকবার ছোটো গাছের ডাল দিয়ে চেষ্টা করছেন। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। ওনার কাজ দেখেই আমার হাসি চলে আসছে। কিন্তু অনেক কষ্টে হাসি আটকে আছি। উনি মাঝে মাঝে আমার দিকে কড়া চোখে তাকাচ্ছেন। তখনি আমি এমন ভান করছি যেন কিছুই জানিনা।
প্রায় বিশ মিনিট ত হয়েই এলো। কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। এদিকে উনি অনেক ঘেমেও গেছেন।
যাবারই কথা, এসি নেই আমাদের বাড়িতে।
“আমাকে দিন, কেনো জেদ করছেন?” বললাম আমি।
“তুমি চুপ থাকো। আমি পারব।” উনি চেষ্টা করতে করতে বললেন।
যত যাই হোক উনি হার মানতে রাজি না। এত জেদ। অসভ্য গরিলা একটা।
উনি শেষমেশ চুলো ধরিয়েই ছাড়লেন কিছু কাগজের সাহায্যে।
উনি একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, “See?”
এই চুলো ধরাতে আমার পাঁচ মিনিটও লাগে না কিন্তু সেটা উনি হয়ত তিরিশ মিনিটের বেশি সময় নিয়ে ধরালেন। আর তাতেই উনি এত খুশি।
তবে এই হাসিটা দেখেই আমার মন ভরে গেলো।
উনি ডিম দিয়ে ভাত ভেজে নিলেন।
কিন্তু উনি কি খাবেন? কুমড়ো ত নেই।
উনি প্লেটটা আমার দিকে ধরে বললেন, নেও। কি চিন্তা করছ এত?
“আর আপনি?” আমি জিজ্ঞেস করলাম।
“আমার চিন্তা তোমার করতে হবে না।” বলেই উনি আমার হাতে প্লেটটা ধরিয়ে দিয়ে রুমে চলে গেলেন।
আমি না করলে কে করবে! গরিলা একটা।
আমি একা খাব না। তাই প্লেট টেবিলে রেখে রুমে এসে ঢুকলাম। আর ঢুকেই হকচকিয়ে গেলাম।
উনি নিজের শার্ট খুলতে খুলতে আমার দিকে তাকালেন।
“কি?” প্রশ্ন সূচক চোখে তাকিয়ে বলল শাওন।
“এ…এটা খুলছেন কেন?” আমি অন্যদিকে তাকিয়ে বললাম।
“তোমার ল্যাগেজে আমার একটা শার্ট রেখে দিয়েছ না? ওটা দেও, I need to take shower.” শাওন বলল।
“মা..মানে?” আমি অবাক হয়ে গেলাম।
“মানে আমার যে শার্টটা নিয়ে নিয়ে ঘুরে বেড়াও। সেটা। কুইক।” বলল শাওন।
উনি জেনে গেছেন!
আমি এগিয়ে গিয়ে ল্যাগেজ খুললাম। তারপর ওনার শার্টটা বের করে ওনার দিকে ধরলাম।
উনি আমার হাত ধরে টান দিয়ে ওনার কাছে নিয়ে এলেন।
আমি চমকে গেলাম।
“ক…কি করছেন আপনি?” আমি বললাম।
“এটা কেন রেখে দিয়েছ?” শাওন ঠোঁটের কোনে একটা হাসি টেনে বলল।
“এ…এটা.. আমি…” আমি একটা ঢোক গিললাম।
উনি আমার কাছে ওনার মুখটা এগিয়ে আনতেই আমি এক হাত দিয়ে ওনার ঠোঁটটা ঢেকে দিলাম।
“আ…আপনিও আমার সাথে খাবেন। তাই তাড়াতাড়ি আসুন।” দ্রুত কথাগুলো বলেই আমি নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে এলাম।
আমি টেবিলে বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম। উনি কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে এলেন।
আমি ওনাকে আমার পাশে বসার জন্য চেয়ারে হাত রেখে দেখিয়ে দিলাম।
উনি শার্টের হাতা গুটিয়ে নিতে নিতে আমার পাশে এসে বসলেন।
উনি ঠিক ভাবে মাথাও মুছেন নি। গাল বেয়ে পানি গড়িয়ে পরছে। আমার জন্য হয়ত তাড়াহুড়ো করে চলে এসেছেন।
“কি?” শাওন আমার দিকে প্রশ্ন সূচক চোখে তাকিয়ে বলল।
“থামেন আমি আসছি।” বলেই আমি রুমে চলে এলাম।
তারপর তোয়ালে নিয়ে এসে ওনার মাথার উপর দিয়ে মাথা মুছে দিতে লাগলাম।
উনি চুপচাপ বসে রইলেন।
ভাল মত মুছে দিয়ে আমি তোয়ালে সরিয়ে বললাম, এখন ঠিক আছে।
কিন্তু ওনার চুলগুলো এলোমেলো হয়ে গেছে। তাই আমি হাত দিয়ে সেগুলো ঠিক করে দিতে লাগলাম।
উনি আমার দিকে গম্ভীর চোখে তাকিয়ে রইলেন।
ওনাকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আমি অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম আর হাত সরিয়ে নিলাম।
তোয়ালেটা চেয়ারের ব্যাক সাইডে রেখে চেয়ারে বসে পরলাম।
“শুরু করো।” শাওন আমাকে বলল।
“প্লেট ত আরেকটা লাগবে।” বলেই আমি উঠতে লাগলাম। কিন্তু উনি আমার হাত ধরে আমাকে বসিয়ে দিলেন।
“তোমার হাতে খাব আমি।” শাওন বলল।
আমি তাকিয়ে রইলাম।
“কি হলো?” শাওন বলল।
আমি মৃদু হেসে না সূচক মাথা নাড়লাম তারপর শাওনের মুখে খাবার তুলে দিলাম।

চলবে…

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।