১৬ বছর বয়স | পর্ব – ২৬ (হাত ধরা)

শাওন আমার কাছে আরো এগিয়ে এসে বলল,”ওকে, আসো দেখাচ্ছি আমি কি?”
আমি এবার ভয়ে অনেক কাপতে লাগলাম। শাওন আমাকে এভাবে কাপতে দেখে আমার দুই বাহু ধরে বলল, Are you ok?
আমি ভয়ে কাপছি ত কাপছিই। ওনার দিকে ভয়ে তাকাতেও পারছি না। শাওন অনেক অস্থির হয়ে বলল, It’s ok. আমি কিছু করব না।
আমি এবার ওনার চোখের দিকে তাকালাম যদিও ভয় এখনো কাটে নি। উনি নিজেও অনেক চিন্তায় পরে গেছেন আমার জন্য। আমি রীতিমতো জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলাম।
শাওন আমার বাহু ধরে টেনে ওর কাছে নিয়ে সিরিয়াস চোখে তাকিয়ে বলল, Relax, Did I ever force you? জোর করেছি আমি কখনো তোমাকে?
আমি এবার আস্তে আস্তে শান্ত হতে লাগলাম। শাওন আমার থেকে সরে গিয়ে নিজের শার্ট খুলতে লাগল। আমি হকচকিয়ে গেলাম।
“এটা পরো। আর এগুলো খুলে ফেলো।” শাওন আমাকে বলল।
আমি চোখ বড়সড় করে বললাম, কি… কি উল্টো পাল্টা বলছেন এসব?
শাওন রেগে তাকিয়ে বলল, ত কি আবার জ্বর বাধাতে চাও? সিরিয়াসলি যদি রাতে কাপাকাপি করো তাহলে আমিই নিজের হাতে সব চেঞ্জ করবো এবার।
আমি অনেক চমকে গেলাম। কি বললেন উনি এটা?
শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল, কি হলো ধরো!
শার্টটা এগিয়ে দিল শাওন।
আমি আস্তে হাত বাড়িয়ে শার্টটা নিলাম। শাওন জালানার কাছে গিয়ে দুইহাত বুকের কাছে গুজে দাড়ালো। আমি ওনার সোজা পিছনে এক কোনায় গেলাম। কিন্তু কেমন কেমন যেন লাগছে। যদিও উনি ওদিকে ঘুরে আছেন তাও আমার লজ্জা করছে।
আমি ভীত গলায় বললাম,”আ… আপনি ভু… ভু…ভুলেও…”
“তাকাবো না।” শাওন শান্ত গলায় বলল।
“বি…বিশ্বাস ক.. করতে পারছি না।” আমি বললাম।
শাওন রেগে বলল, আমাকে রাগিও না।
আমি একটা ঢোক গিলে বললাম, ঠিক আছে, ঠিক আছে, ক… করছি। তাকাবেন না।
শাওন একটা বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলল।
১৫ মিনিট পর….
”কত সময় আর?” শাওন বিরক্তির সাথে বলল।
আমি ফট করে বলে উঠলাম,”তাকাবেন না একদম। আর একটু সময় লাগবে।”
শাওন রেগে বলল, আমি এক থেকে দশ গুনবো। এতটুকু সময়ই পাবা আর। বি রেডি।
“না থামেন।” আমি চমকে উঠে বললাম।
“এক…” শাওন আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে গুনতে লাগলো।
“বললাম না থামেন!”
“দুই…।”
উফ উনি ত শুনছেন ই না।
“তিন….চার।”
”তিন চার এত জলদি কেন?” আমি বলে উঠলাম।
“পাচ…” “ছয়….” “সাত….” “আট….” “নয়…..” “দশ।”
“একমিনিট” আমি বললাম। কিন্তু শাওন ঘুরে তাকালো।
আমি ওনার সাদা শার্টটা নিজের পেটিকোটের উপর পরে এক কোনায় কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।ভাগ্যভালো যে পেটিকোটটা অতোটা ভেজে নি। নাহলে উনি কিনা বলতেন নেও এটাও খোলো!
শাওন আমাকে দেখে থমকে গেল। আমি ওনার দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলাম। আর দুইহাত দিয়ে বুকের কাছের শার্টের অংশটুকু ধরে রাখলাম। অনেক ঢিলা হচ্ছে এই শার্টটা আমার গায়ে।
সব ওই বকুলের জন্য। এখান থেকে একবার বের হই শুধু, ওর চুল ছিড়ব আমি।
শাওন আমার দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিল। আমি কি করব বুঝতে পারছি না তাই এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম।
শাওন জালানার পাশের দেয়াল ঘেঁষে বসল আর অন্যমনস্ক হয়ে মেঝের দিকে তাকিয়ে রইল। আমি ওনার দিকে আড়চোখে তাকালাম। তারপর নিজের শাড়ি আর ব্লাউজ আমার এপাশের একটা বন্ধ জানালার রেলিং এ ঝুলিয়ে দিলাম।
“এ… এভাবে কতসময় থাকতে হবে এখানে!” আমি শাওনকে বললাম।
শাওন আমার দিকে তাকালো তারপর শান্ত গলায় বলল, সকাল অব্দি।
“সকাল?!!” আমার চোখ গোল গোল হয়ে গেল। আমি আরো বললাম, আপনি কিভাবে জানেন যে সকাল অব্দি? আপনি ইচ্ছে করে…
“আমার ইচ্ছে হলে এখানে না তোমার বাড়িতেই আমি তোমার সাথে সবকিছু করতে পারতাম।” শাওন সিরিয়াস চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল। আমি একটা ঢোক গিললাম। গা হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। উনি কত সহজেই সরাসরি এসব কথা বলে দিচ্ছেন।
শাওন হাত দিয়ে ইশারা করে বলল, এখানে আসো।
আমি চোখ বড়সড় করে ফেললাম।
“কি হলো?” শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল।
“আ… আ… আমি এখানেই ঠিক আছি।” আমি দ্বিধায় পরে গেলাম।
“ওখানে সাপ আছে।” শাওন সিরিয়াসভাবে তাকিয়ে বলল।
আমি চোখ বড়সড় করে ফেললাম।
“স…সত্যি?”
শাওন হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল। সাথে সাথে আমি ভয়ে উঠে জলদি শাওনের কাছে চলে গেলাম। তারপর ওনার পাশেই একটু দূরে সরে দুই হাটু জড়িয়ে ধরে বসলাম। শাওন দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে রইল।
রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে। এই বকুলের জন্য এখন রাতে না খেয়ে থাকা লাগবে। আমি সত্যি ওর চুল ছিড়ব।
এখন এভাবে চুপচাপ বসে থাকতে পারছিনা। তাই বলে উঠলাম, আপনি দরজাটা ভাঙতে পারবেন না?
শাওন দেয়ালে মাথা ঠেকানো অবস্থাতেই আমার দিকে ঘুরল। আর প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, মানে?
“মানে আবার কি। ওটা ভেঙে ফেললেই ত হয়।” তারপর একটু করুন স্বরে বললাম, “আমার খিদে পেয়েছে।”
“এত খিদে পায় কিভাবে! দুপুরেই ত এক হাড়ি গিলেছ আর আমার মাথাটা ত সবসময় চিবিয়েই খাচ্ছ!” শাওন অবাক হয়ে বলল।
আমি হা হয়ে বললাম, এক হাড়ি মানে? মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছেন আমার নামে!
“Now shut up. কোনো খাবার নেই এখানে, So starve untill morning.” শাওন কথাটা বলে আবার সামনে মুখ ফিরালো।
আমি চোখ পাকিয়ে বললাম, এতই যখন জানতেন রাতে এখানেই থাকতে হবে, তাহলে বকুলকে বলতেন খাবারের ব্যবস্থাটাও করে দিয়ে যেতে!
শাওন এবার রেগে গেল। আর আমার এক হাত ধরে টান দিয়ে ওর কাছে নিয়ে আসলো। আমি ওর বুকের উপর এসে পরলাম। চোখ বড়সড় করে মুখ তুলে ওনার দিকে তাকালাম। উনি অনেক গাম্ভীর্যের সঙ্গে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে বললাম, কি?
শাওন ভ্রুকুচকে বলল, কিছুনা। গাধা।
বলেই শাওন আমার হাত ছেড়ে দিল। আমি সাথে সাথে ওনার বুকের উপর থেকে সরে এলাম আর আড়চোখে ওনার দিকে তাকালাম। উনি আবার নিজের মত মাথা পিছনে হেলিয়ে সামনে তাকিয়ে রইলেন।
‘এখন আর কি! এভাবেই বসে থাকো আর সকালের জন্য অপেক্ষা করো।’ একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে মনে মনে বললাম আমি।
খুব ভোরের দিকে আমি চোখ খুললাম। আর চোখ খুলেই অবাক হয়ে গেলাম। আমি ওনার খুব কাছে এসে কাধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছি। আর উনি আমার মাথার উপর মাথা হেলিয়ে দিয়ে ঘুমাচ্ছেন। আমি “থ” মেরে রইলাম। আমি ত আমার জায়গাতেই বসে আছি! উনিই ত আরো ওদিকে ছিলেন! তারমানে রাতে উনি আমার কাছে চলে এসেছিলেন! আমি চোখ বড়সড় করে ফেললাম। এদিকে হার্টও জোরে জোরে ড্রাম বাজাচ্ছে! সাথে কেমন কেমন যেন লাগছে। ওনার এত কাছে তার উপর ওনার গায়ে শার্টও নেই।
কিন্তু এখন উনি ঘুম থেকে না উঠলে ত আমিও মাথা তুলতেও পারব না আর সরতেও পারব না। তাই কিছু করার নেই৷ এভাবেই অপেক্ষা করতে লাগলাম।
প্রায় এক ঘন্টা হতে চলল। ওনার উঠার নাম নেই। কখন উঠবেন উনি? কয়টা বাজে জানতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু ঘড়ি কই পাব! কাকা কাকি ওদিকে আমাদের খুজছে কিনা কে জানে!
হঠাৎ মনে পরলো শাওনের ফোনেই ত সময় দেখা যাবে। সাথে প্রভাতীকে ফোন করে দরজা খুলে দিতে বলা যাবে। ইস রাতে এই কথাটা মাথাতেই ছিল না! যাইহোক। কিন্তু ফোন কোথায় ওনার? পকেটে?
…হতে পারে!
আমি কিছু চিন্তা না করেই ওনার পকেটে হাত দিলাম। এপাশের পকেটে ত নেই। ওপাশে?
আমি ওপাশের পকেটে হাত দিতে যাওয়ার আগেই শাওন মাথা তুলল আর আমার হাত ধরে নিয়ে বলল বলল, কি করছ তুমি?
আমি মাথা তুলে ওনার দিকে তাকালাম। উনি ভ্রুকুচকে আমার দিকে তাকিয়ে সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নিলেন। আমি ভ্রুকুচকে নিজের দিকে তাকিয়ে ফট করে ওনার থেকে সরে গেলাম। আর বুকের কাছের শার্ট এক হাত দিয়ে চেপে ধরলাম। ছি! সারারাত এভাবে ছিলাম!
লজ্জায় আর আমি ওনার দিকে তাকাতে পারলাম না। আমি অন্যদিকে ঘুরে রইলাম।
হঠাৎ দরজার লক খোলার আওয়াজ পেলাম। বকুলের বাচ্চার এতক্ষণে আসার সময় হলো!
আমি রেগে উঠে দাড়িয়ে দরজার কাছে যেতে না যেতেই শাওন আমার হাত ধরে টান দিয়ে ওর কাছে নিয়ে এলো। আমি চমকে গেলাম।
শাওন রাগমিশ্রিত চোখে তাকিয়ে বলল, ষ্টুপিড।এভাবে বের হচ্ছো কেন?
সাথে সাথে আমার খেয়াল হলো আর আমি ওনার থেকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে উলটো দিকে ঘুরলাম।
“চেঞ্জ করে বাহিরে আসো।” বলে শাওন ঘরের বাহিরে চলে গেল।
আমি পাঁচ মিনিটের মধ্যে বের হয়ে এলাম। উনি আমার দিকে তাকালেন। আমি আড় চোখে ওনার দিকে তাকিয়ে শার্টটা ওনার দিকে এগিয়ে দিলাম। উনি নিয়ে পরতে লাগলেন।
আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে বকুলকে খুজতে লাগলাম। কিন্তু শয়তানটা ইতিমধ্যে পালিয়েছে। তবে আসবে ত অবশ্যই একসময় আমার সামনে। তখন ওর একদিন কি আমার এক দিন।
“কি ভাবছ?” শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল।
আমি ওনার কথায় চিন্তা থেকে বের হলাম। আর বললাম, কিছু না।
“তাহলে চল।” গম্ভীর মুখে বলল শাওন।
উনি সামনে সামনে ফোনে কাজ করতে করতে হাটছেন। আর আমি পিছনে পিছনে হাটছি। পিছন থেকেও ওনাকে দেখতে অনেক সুন্দর লাগে। আমি হাসিমুখে একটা নিঃশ্বাস ফেলে আশেপাশে তাকালাম। ঝলমলে রোদ উঠেছে। আর এই মুহুর্তে এই বাগানের মধ্যে দিয়ে হাটতে অনেক ভালই লাগছে।
হঠাৎ শাওনের ফোন বেজে উঠল। শাওন ফোন তুলে কানে দিলো। কিন্তু হ্যালো হ্যালো করতে লাগল। হয়তো নেটওয়ার্ক সমস্যা। আমি ফিক করে হেসে দিলাম। উনি আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে তারপর এক পাশে চলে গিয়ে নেটওয়ার্ক পাওয়ার চেষ্টা করতে লাগলেন। আমি হালকা হেসে সামনে এগিয়ে যেতে লাগলাম। কিছুদূর যেতে না যেতেই কেউ শক্ত করে আমার এক হাত ধরে টান দিলো। আমি প্রচন্ড ব্যথায় উফ বলে চোখ তুলে তাকাতেই চমকে গেলাম।
আমার মুখ থেকে আর কথাই বের হলোনা। গা হাত পা অবশ হয়ে গেল।
“কি ভেবেছো! আমি তোমাকে সহজে ছেড়ে দিব?” বলেই মিশু তেলেবেগুনে ক্ষেপে আমার দিকে তাকালো। ওর কপালের পাশে ব্যান্ডেজ করা। হয়ত আমি মেরেছিলাম যেখানে, সেখানেই। এজন্য অবশ্যই উনি আমাকে সহজে ছেড়ে দেবেন না।
আমি একটু সরে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললাম, ছা…ছাড়ুন আমাকে।
মিশু হেচকা টান দিয়ে আবার আমাকে কাছে নিয়ে এসে বলল, খুব অহংকার না তোর! এখনি সব অহংকার শেষ করে দেব।
আমি অনেক ঘাবড়ে গেলাম আর কাপা গলায় বললাম, ন…না।
“এই ভয়টাই ত আমি দেখতে চাই” জানোয়ারের মত হাসলো মিশু। তারপর আমার শাড়ির আঁচলের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো, আমি সাথে সাথে এক হাত দিয়ে আঁচল চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে, শাওন বলে ডেকে উঠলাম।
তখনি মিশু ব্যাথায় চিৎকার করে উঠল। আমি অবাক হয়ে চোখ খুললাম।
শাওন ওর হাতটা মুচরে বাকা করে দিয়েছে।
মিশু অন্য হাত দিয়ে নিজের হাত চেপে ধরে শাওনের দিকে তাকিয়ে ক্ষোভের সাথে বলল, কে বে?
শাওন প্রচুর রেগে গেছে। ওনাকে এত রাগতে আমি কোনোদিনো দেখিনি।
শাওন ওর প্রশ্নের উওর না দিয়ে ওর গলার কলার ধরে সামনের গাছের সাথে ওর মাথায় জোরে বারি মারল।
মিশু ব্যথায় মাথা ধরে বসে পরল। কিন্তু শাওন আবার মিশুর কলার ধরে টেনে তুলে দাড় করিয়ে ওর গলা চেপে ধরল।
মিশু ছটফট করতে লাগল। শাওন তীব্র রাগের সাথে বলল, “ওকে টাচ করার অধিকার আমি কাউকে দিই নি। কাউকে না।”
আমি এখনো ভয়ে একপাশে দাঁড়িয়ে কাপছি। শাওন মিশুকে ধাক্কা দিয়ে গলা ছেড়ে দিল। মিশু মাটিতে পরে কাশতে লাগল আর ভয়ে একটু পিছিয়ে গেল।
শাওন ওর দিকে দুই পা এগিয়ে গিয়ে ঠোঁটের কোনে একটা হাসি নিয়ে বলল, তোকে প্রানে মারব না। ভয় নেই, I am a businessman man so i have my own way of dealing with every single thing. এমন অবস্থা করব যে তুই নিজেই প্রতিদিন মরতে চাইবি।
তারপর শাওন এক হাটু ভাজ করে বসে ওর দিকে ধ্বংসাত্মক চোখে তাকিয়ে বলল, ও ত শুধু তোর মাথা ফাটিয়েছে। কিন্তু আমি তোকে বলছি, আজ দিন শেষ হবার আগে তোর আরো অনেক কিছুই ফাটবে। I promise.
বলেই শাওন ওকে যাওয়ার জন্য কড়া চোখে তাকিয়ে ইশারা করল।
মিশু ভয়ে পিছিয়ে যেতে যেতে দৌড়ে পালালো।
আমি এখনো কাপছি আর হাপাচ্ছি। শাওন উঠে দাড়িয়ে স্বাভাবিক চোখে আমার দিকে তাকালো। তারপর আমাকে এভাবে কাপতে দেখে এগিয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে শান্ত গলায় বলল, I am sorry, I was late. আমি আগে আসলে তোমার সাথে এগুলো কিছুই হত না।
আমিও শাওনকে জড়িয়ে ধরলাম আর কেদে দিলাম।
কিছুক্ষণ পরে স্বাভাবিক হয়ে গেলাম কিন্তু তাও ওনাকে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রেখে দাঁড়িয়ে রইলাম। কারন আমার ভালো লাগছে এভাবে থাকতে।
আমি নিঃশব্দে হাসলাম আর একটা সস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম।
“Are you smiling?!” শাওন সরু গলায় বলে উঠল।
আমি চোখ বড়সড় করে ফেললাম, উনি কিভাবে বুঝলো!
“এখন কি সারাদিন এভাবেই থাকার প্লানিং?”
আমি সাথে সাথে ওনাকে ছেড়ে ওনার সামনে মাথা নিচু করে দাড়ালাম। শাওন বলল, চলো এখন।
বলেই আমাকে হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগল। আমি অনেক বেশিই অবাক হয়ে গেলাম। কারন এই প্রথম উনি আমার হাত ধরলেন। কারন এর আগে হাতের কব্জিই ধরে ধরে ব্যথা বানিয়েছেন।
আমি একটু পিছনে পিছনে যাচ্ছি আর আমাদের ধরে থাকা হাতের দিকে তাকিয়ে আছি। অন্যরকম ভালো লাগছে। যদি সারাজীবন এভাবে ধরে থাকা যেত!
ঘরের মধ্যে নিয়ে এসে উনি আমার হাত ছেড়ে দিলেন। তারপর ফ্রেস হতে ঢুকে গেলেন। আমি মনমরা হয়ে আমার হাতের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
কিছু পরেই প্রভাতী এসে রুমে ঢুকল আর উৎকন্ঠিত হয়ে বলল, কি রে কই ছিলি তোরা সারারাত?
আমি প্রভাতীর দিকে তাকালাম আর বললাম, কেনো?
প্রভাতী বলল, না মানে এমনি ই…
শাওন বাথরুম থেকে বের হতে হতে বলল, “যেখানেই থাকি!”
আমি বড়সড় চোখ করে তাকিয়ে রইলাম শাওনের দিকে। শাওন ভ্রুকুচকে প্রভাতীর দিকে তাকিয়ে বলল, আমার বিষয় নিয়ে কারো বেশি মাথা ব্যথা আমার পছন্দ না।
প্রভাতী হকচকিয়ে গেল।
শাওন বিরক্তির সাথে বলল, Can you leave now? আমি ঘুমাবো এখন, সারারাত ঘুমাতে পারিনি।
আমি ভ্রুকুচকে শাওনের দিকে তাকালাম। ঘুমাতে পারেনি মানে? দিব্যি ঘুমাচ্ছিলো সকাল অব্দি। মিথ্যুক।
প্রভাতী বেচারী বাংলার পাঁচের মত মুখ করে বেরিয়ে গেল।
“মিথ্যা বললেন কেন?” আমি ভ্রুকুচকে শাওনকে বলল।
“মিথ্যা কখন বললাম?” বলল শাওন।
“আপনি ঘুমাতে পারেন নি?!”
শাওন আমার কথার উওর না দিয়ে এসে অপর পাশে শুয়ে উলটো দিকে মুখ ঘুরিয়ে রইল।
আমি মনে মনে বললাম, গরিলা একটা!
দুপুরের পরেই বকুল রুমে এসে ঢুকলো আর হাসিমুখে বলল, কি রে!
আমি বকুলকে দেখেই রেগে ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে চুল টেনে ধরলাম।
বকুল বলল, আহ আহ কি করছিস, লাগছে ত!
“তুই কোন সাহসে আমাকে আটকে রাখলি? আর ওনাকে কি বলেছিস আমার নামে বানিয়ে বানিয়ে?
বকুল এক হাত দিয়ে আমার
হাতটা ধরে বলল, আরে চুল ত ছাড়।
“না।” বলেই আমি আরো জোড়ে টেনে ধরলাম।
“আহ, ছাড়বি নাকি আমিও তোরটা ধরব?” রেগে বলল বকুল।
আমি তাও ছাড়লাম না। তাই বকুল আমার চুলের দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। কিন্তু আমার চুল ধরার আগেই শাওন কোথা থেকে এসে ওর হাত ধরে নিলো। আমি অবাক হয়ে ঘাড় ঘুরালাম। শাওন ভ্রুকুচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, কি করছ এসব তুমি? বাচ্চা তুমি?
আমি রেগে বকুলের চুল আরো জোরে টেনে ধরে বললাম, হ্যা বাচ্চা আমি। জানেন না?
বকুল শাওনের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলল, এ কেমন বিচার? নিজের বউ এর চুলে হাত লাগতে দিলেন না আমার টা যে এদিকে সে ছিড়েই দিচ্ছে?
শাওন কিছু বলার আগেই আমি ওর চুল আরো জোরে টেনে ধরে বললাম, তোর দোষেই তোর চুল টানছি আমি। ওনাকে বলে লাভ নেই।
শাওন বকুলের হাত ধরে রেখেই আমার দিকে রেগে তাকিয়ে বলল, ছাড়ো ওর চুল।
“কেন? আপনার এত লাগছে কেন? আপনার চুল ধরেছি?” আমিও রেগে বললাম।
শাওন রেগে কিছু বলার আগেই বকুল কাদো কাদো গলায় বলল, ওরে রে, আমার চুল ছেড়ে ঝগড়া কর তোরা রে!
শাওন কড়া চোখে তাকিয়ে বলল, ছাড়তে বলেছি তোমাকে।
আমি বললাম, ছাড়ব না।
বকুল আমাদের দিকে হা করে তাকিয়ে দেখছে।
শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল, বাচ্চামি করোনা। চুল ছাড়ো ওর।
বলেই শাওন আমার হাত ধরে বকুলের চুল থেকে নামিয়ে নিল।
বকুল দুই হাত দিয়ে মাথা ডলতে লাগল। আর চোখ মুখ কুচকে আমার দিকে তাকালো। আমিও রেগে তাকিয়ে আছি ওর দিকে।
বকুল রেগে বলল, এবার আমার পালা।
বলেই আমার দিকে হাত বাড়াতেই শাওন আমাকে হাত ধরে টেনে সরিয়ে নিয়ে এসে বকুলের দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল, Enough হয়েছে। এখন থামো তোমরা।
বকুল হা হয়ে শাওনের দিকে তাকালো আর বলল, এক রাতেই ওকে এত ভালোবেসে ফেলেছেন?
শাওন বকুলের কথা শুনে থমকে গেল। আর আমি ভ্রুকুচকে বকুলের দিকে তাকালাম।
বকুল মুচকি হেসে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, তোকে ছেড়ে তোর বর একদমই থাকতে পারবে না, বলে দিলাম।
শাওন আবার বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরে গেল। আর সাথে সাথে আমার হাত ছেড়ে দিল।
বকুল আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল, এখন শোন কি হয়েছিল!
আমি প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে বকুলের দিকে তাকালাম।
তোর বর যেদিন এখানে তোকে খুজতে আসে বুঝলি তখন নিজের গাড়ি নিয়ে এসেছিল। কিন্তু গ্রামের ছোটো রাস্তাতে গাড়ি ত ঢুকবে না। তারপর ওই গাড়ি ওখানে রেখে সবাইকে পথ জিজ্ঞেস করতে করতে এখান অব্দি এসেছে।
শাওন অসস্তির একটা নিঃশ্বাস ফেলে আমার দিকে তাকালো। আমি আশ্চর্য হয়ে শাওনের দিকে তাকালাম।
বকুল আরো বলল, আমি জানলাম কিভাবে তাই ত?
আজ সকালে তোর সাথে তোর বরকে, আমার বর দেখে নিয়েছিল হাত ধরে হাটতে৷ আমাকে এসে বলল, মিলার সাথে আজ এক সুন্দর ছেলেকে দেখলাম সে কে! আমি বললাম ওর বর ই হবে। তখন আমাকে এসব বলল আমার বর। কারন সেদিন ও সব দেখেছিল।
শাওন আমার দিক থেকে চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকালো। কিন্তু আমি শাওনের দিকেই তাকিয়ে রইলাম।
বকুল এবার আমাকে হালকা একটা ধাক্কা দিয়ে বলল, থাক, আমি গেলাম।
বলেই বকুল মুচকি হেসে বের হয়ে গেল।
বকুল বের হবার পরেই শাওন ঘুরে চলে যেতে লাগল কিন্তু আমি সাথে সাথে ওনার পিঠের কাছের শার্টটা হাতের মুঠোয় ধরে নিলাম।
শাওন দাঁড়িয়ে পরল। আমি ওনার পিছনে দাড়িয়ে থেকেই একটা হাসি দিয়ে মাথা নিচু করে থেমে থেমে বললাম, সব কিছুর জন্য…. আপনাকে… অনেক ধন্যবাদ।
শাওন হালকা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। আমি আরো বললাম, আপনি একটুও দেরি করে আসেন নি, আপনি…. একদম ঠিক সময়ে আমার কাছে এসেছেন।
এটুকু বলেই আমি শাওনের পাশ কাটিয়ে চলে যেতে লাগলাম।আর সাথে সাথে শাওন আমার এক হাত ধরে টেনে ওর কাছে নিয়ে আসলো।

চলবে…

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।