সকালে যখন ঘুম ভাঙলো তখন বুঝলাম যে আমি শাওনের সাথে একই বালিশে শুয়ে শাওনকে জড়িয়ে ধরে আছি। সাথে সাথে চোখ বড়সড় করে মুখ তুলে শাওনের দিকে তাকালাম। উনিও আমার চোখের দিকে তাকালেন। আমি ফট করে ছেড়ে দিয়ে উঠে বসলাম আর অন্যদিকে তাকিয়ে চিন্তা করতে লাগলাম, আমি কি কাল রাত থেকেই ওনাকে এভাবে ধরে ঘুমিয়ে ছিলাম! আর উনি কতক্ষণ ধরে জেগে আছেন? আমাকে ডাকেন নি কেন!
চিন্তা করেই আমি চোখ বন্ধ করে ঠোঁট কামড়ে ধরলাম।
শাওন উঠে বসল আর আমার হাত টেনে নিজের দিকে আমাকে ঘুরিয়ে নিল। আমি হকচকিয়ে গেলাম। শাওন রাগ মিশ্রিত চোখে তাকিয়ে বলল, তুমি বুঝতে পারো না যে harassment তোমার সহ্য হয়না? এর আগেও এমন হয়েছে তাহলে তোমার কি নিজের খেয়াল রাখা উচিত ছিল না? Yeah i know যে তোমার কোনো দোষ নেই। কিন্তু এখন রাতে ঘুমাতে সমস্যা হচ্ছে কার?
আমি ওনার চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
শাওন আমার হাত ছেড়ে দিয়ে বিছানা থেকে উঠে দাড়ালো। আমি আড়চোখে ওনার দিকে তাকালাম।
উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ব্রাশ লাগবে আমার একটা।
নেও ঠেলা! কই পাব এখন আমি? মনে মনে বললাম।
শাওন উওরের অপেক্ষা করছে। এদিকে আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে। মনে মনে একটু হেসে বললাম, থামেন।
বলেই আমি উঠে রুম থেকে বের হয়ে গেলাম। আর কয়েক মিনিটের মধ্যেই আবার ফিরে এলাম। সাথে একটা নিমপাতার কচি ডাল নিয়ে এলাম।
তারপর ওনার সামনে ধরে বললাম, নিন পরিবেশ বান্ধব ব্রাশ।
উনি আকাশ থেকে পরলেন আর আমার দিকে তাকালেন।
আমি ডালটা আর একটু এগিয়ে দিয়ে বললাম, নিন, নিন।
“Are you kidding me?” শাওন রেগে বলল।
“এর চেয়ে ভাল ব্রাশ নেই আপাতত। কাকা বাজারে গেছে। দেরি হবে আসতে। দেখেন কি করবেন আপনি!” বলেই আমি ডালটা বিছানায় ফেলে বেরিয়ে এলাম। আর বাহিরে এসে নিঃশব্দে হাসলাম।
আমাকে কম জ্বালান নি এই কয়দিন এবার দেখেন আপনার সাথে আমি কি কি করি।
কাকি নাস্তা বানিয়ে ফেলেছে। ডিম আর রুটি। যাক আমার পছন্দের। কিন্তু গরিলাটার কি হবে? ভাবতে লাগলাম।
কাকি বলল, কি রে, এত কি ভাবছিস?
আমি বললাম, “কিছুনা। আমি একটু আসছি।” বলেই আমি বাসা থেকে বের হলাম।
আর শিলাদের বাসার সামনের কুমড়ো গাছ থেকে একটা কুমড়ো নিয়ে এলাম। যদিও ছোট তাও চলবে।
আমি ওটা নিয়ে বাসাতে ঢুকতে না ঢুকতেই শাওন রেগে বলল, তোমাকে লাফালাফি করতে মানা করেছিলাম না? আবার ঘুরে বেড়াচ্ছ কেন? কোথায় গেছিলে?
আমি মুখ ভেংচি দিয়ে কুমড়ো টা সামনে ধরে বললাম, কুমড়োপটাশের খাবার আনতে।
বলেই আমি হেসে দিলাম।
শাওন কুমড়োটার দিকে তাকিয়ে তারপর আমার দিকে তাকালো। মুখে রাগের চিহ্নটা সরিয়ে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে রইল। আমি চোখ সরিয়ে নিয়ে অন্যদিকে তাকালাম।
শাওন আর কিছু না বলে রুমে চলে গেল। আমি আড়চোখে তাকিয়ে তারপর রান্নাঘরে গেলাম। কাকি বলল, কি হয়েছে, কিছু লাগবে?
আমি কুমড়ো দেখিয়ে বললাম, এটা ভাজতে হবে।
কিছুক্ষণ পরেই কাকা বাজার নিয়ে চলে এলো। জামাই আদর দেখে ত আমার মাথা ঘুরছে! এত কিছু কিনে এনেছে। যদিও শুধু কুমড়ো বস্তা বস্তা নিয়ে এলে ভাল হত।
সবাই একসাথে নাস্তা করতে বসলাম। প্রভাতীও বসল। প্রভাতীর নাম প্রভাতী হলেও সে উঠে অনেক দেরি করে। আজ যে সে জলদি উঠেছে সেটা অনেক আশ্চর্যের। যাক ভাল।
আমি শাওনের সামনে কুমড়ো ভাজি রাখলাম। উনি আমার দিকে তাকালেন। আমি সরে এসে ওনার সোজা অপর পাশের চেয়ারে বসলাম।
কাকি আমাকে বলল, কুমড়ো পছন্দ জানলে ত আনতে বলতাম। কাল জিজ্ঞেস করেছিলাম তখন তুই বললি না যে ছেলেটার এটা পছন্দ!
আমি কাকির দিকে তাকিয়ে অপ্রস্তুত হাসি দিয়ে খেতে শুরু করলাম।
খেতে খেতে শাওনের দিকে তাকালাম। উনি ওই কুমড়ো দিয়েই শুধু খাচ্ছেন। আমি ওনার দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে হাসলাম। তখনি উনি আমার দিকে তাকালেন। আমি অনেক হকচকিয়ে গেলাম। আর চোখ সরিয়ে নিলাম।
খাওয়া শেষে শাওন নিজের ফোন নিয়ে বাসার বাহিরে চলে গেল। হয়ত নেটওয়ার্ক এর জন্য। কারন এখানে নেটওয়ার্ক পাওয়া মুশকিল।
আমি এসে রুমে ঢুকলাম। স্নোবেলের গলায় নেমপ্লেট টা কাল সেভাবে খেয়াল করিনি। তবে অনেক সুন্দর হয়েছে।
আমি স্নোবেলের দিকেই তাকিয়ে ছিলাম হঠাৎ বকুল এসে ‘হাও’ বলে উঠল। আমি লাফিয়ে উঠলাম।
একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললাম, ভয় পেয়েছি না!
বকুল হেসে দিল। তারপর আমার পাশে এসে বসলো। আর বলল, “চলে এসেছি তোর গল্প শুনতে।”
বকুলের কথা শোনার সাথে সাথে আমার চোখ গোলগোল হয়ে গেল।
বকুল বলল, নে শুরু কর।
আমি চমকে উঠে বললাম, ওইরকম কোনো কাহিনী নেই।
বকুল চোখ পাকিয়ে বলল, ইস, বললেই হলো! মিথ্যা বলিস না।
আমি ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বললাম, বিশ্বাস না করলে না কর।
বকুল চোখ ছোট ছোট করে বলল, ভালই ভালই বলবি নাকি কিছু করব!
আমি না বুঝে বললাম, কি করবি?
বকুল শয়তানি হাসি দিয়ে হুট করে আমার পেটে হাত দিল। আমি অনেক চমকে ওর হাত সরিয়ে দিয়ে বললাম, কি করছিস তুই এগুলো।
বকুল মুখ ভেংচি দিয়ে বলল, বাবা! আমি হাত দিলে অসভ্যতা, আর বর হাত দিলে কিছুনা তাইনা!
আমি ফট করে বললাম, উনি কখনো এগুলা করেন না।
বকুল ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল, “কেনো? তোরটাও কি আমারটার মত লাজুক টাইপ? এসেই বলে, তুমিও ঘুমাও আমিও ঘুমাই?”
বলেই বকুল হেসে দিল। আমি সরু চোখে তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে।
“এখন বলবি নাকি আরো কোথাও হাত দিব!” চোখ ছোট ছোট করে বলল বকুল।
“What the hell!” শাওন বলে উঠল।
আমরা দুইজনই চমকে দরজার দিকে তাকালাম।
বকুল শাওনকে দেখে বড়সড় চোখ করে ফেলল। আর বলল, এই মাল টা কে রে? আগে ত দেখিনি এ গ্রামে!
শাওন বকুলের কথা শুনে হা হয়ে গেল আর বলল, ”মাল?!”
বকুল আমার দিকে ঘুরে বলল, কে এটা! চিনিস?
আমি শাওনের দিকে তাকালাম তারপর চোখ নামিয়ে নিলাম। কতক্ষন ধরে উনি দরজার কাছে ছিলেন! না জানি কি কি শুনেছেন! বকুলের মুখটাও না!
বকুল সন্দেহের চোখে ঘুরে শাওনের দিকে তাকিয়ে তারপর আমার দিকে ফিরে বলল, তোর বর?
আমি কিছু না বলে শাওনের দিকে তাকালাম। শাওন আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। আমি চোখ নামিয়ে নিলাম। বকুল বুঝতে পেরে গেল আর আমাকে বলল,”কিন্তু তুই যে বললি গরিলাটা আসবে না?”
“কি!কে গরিলা?” শাওন ভ্রুকুচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলল।
আমি মনে মনে বললাম, উফ এই গাধা বকুলটার জন্য এখন বাশ খাব আমি।
বকুল উঠে দাড়িয়ে শাওনের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল, মিলা বর বদলাবি আমার সাথে?
আমি চোখ বড়সড় করে বকুলের দিকে তাকালাম।
শাওন বকুলের কথা শুনে বিব্রতকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।
আমি শাওনের দিকে তাকালাম। যাক কেউ ত ওনাকে বিব্রতবোধ করাতে পারল!
বকুল শাওনের দিকে তাকিয়ে হেসে দিয়ে বলল, ভয় নেই। মজা করলাম।
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, বর ত ঝাক্কাস পেয়েছিস! তবে লাজুক ত মনে হয় না।
আমি ভয় পেয়ে গেলাম আর মনে মনে বলতে লাগলাম, ওহো, এখন বকুল কি না কি বলে দেয় কে জানে!
কিন্তু ভাগ্যিস কিছু বলল না। বকুল আমাকে বলল, যাই তাহলে এখন আমি। কাজ আছে।
বকুল এটুকু বলে শাওনের দিকে একটু তাকিয়ে তারপর আমার কাছে এসে কানে কানে বলল,”তোর বর আর তোর একটা ব্যবস্থা আমি করে দিবই।”
আমি বুঝতে না পেরে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম। শাওন ভ্রুকুচকে আমাদের দিকে তাকিয়ে রইল।
যাওয়ার সময় শাওনের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বকুল বেরিয়ে গেল।
বকুল চলে যাওয়ার পর আমি শাওনের দিকে তাকালাম। উনি স্বাভাবিক ভাবেই আমার দিকে তাকিয়ে তারপর রুম থেকে বের হয়ে গেলেন। আমি যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।
যে থ্রি-পিসটা বাসা থেকে পরে এসেছিলাম সেটা পরে আজ পুকুরে গোসল করার জন্য চলে এলাম।অনেক দিন পর পুকুরে নামবো, কি যে খুশি লাগছে! আমি ওড়নাটা সিড়ির কাছে রেখে পুকুরে নেমে গেলাম। আজ অনেক সময় গোসল করব। ভেবেই শান্তি লাগছে।
কিন্তু সেটা আর হলোনা। কারন ৫ মিনিট যেতে না যেতেই শাওন কোথা থেকে হাজির হয়ে বলল, ওঠো। অনেক হয়েছে।
আমি অবাক হয়ে ঘুরে তাকালাম। উনি সিড়িতে বসে আছেন। কখন এলেন উনি? ইদানিং হুটহাট কোথা থেকে চলে আসেন বুঝতেও পারি না।
আমি ওনার দিকে তাকাতেই উনি হাত দিয়ে ইশারা করে আমাকে উঠতে বললেন।
আমি মনে মনে বললাম, হুহ, বললেন হলো? আমি অনেক দিন পর নেমেছি। সহজে উঠব না।
“কি হলো? উঠতে বললাম না?!” শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল।
আমি ওনাকে পাত্তা না দেওয়ার মত করে বললাম, না উঠলে কি করবেন?
শাওন কড়া চোখে তাকিয়ে বলল, ভালয় ভালয় ওঠো।
‘উফ আবার হুকুম চালাচ্ছে। বাড়িতে এসেও শান্তি নেই।’ মনে মনে বললাম আমি।
শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল, ওঠো!
আমিও ভ্রুকুচকে বলে উঠলাম, এসে নিয়ে যান।
শাওন বলল, shut up and get here.
“হুহ। জীবনেও না। আপনার গোসল করতে ইচ্ছে হলে আসুন।” বললাম আমি।
শাওন রেগে আমার দিকে তাকালো আর বলল, আমার কোনো ফালতু ইচ্ছে নেই। আর তুমি এখনি উঠবা। ওঠো।
“ফালতু ইচ্ছা!” আমি চোখ পাকিয়ে বললাম।
শাওন বলল, হ্যা। ফালতুই ত।
ওনার এই কথা শুনে আমার মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি এসে গেল। তাই আমি ওনার দিকে তাকিয়ে ঠোঁটের কোনে এক বাকা হাসি দিলাম। তারপর ওনার দিকে তাকিয়ে আরো গভীর পানিতে পিছিয়ে যেতে লাগলাম।
শাওন বিরক্তির সাথে বলল, কি করছ তুমি?
আমি পিছাতে পিছাতে গভীর পানির মধ্যে তলিয়ে গেলাম। শাওন ভ্রুকুচকে বলল, এসব ফালতু ট্রিকস আমার উপর কাজ করবে না। সো বাহিরে আস।
কিন্তু আমি এলাম না। উনি ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বললেন, যথেষ্ট হয়েছে।
আমি তাও উঠলাম না। শাওন একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, আমি ত বললামই এসবে কাজ হবে না।
আমি হঠাৎ পানির উপরে উঠে এসে নিজের এক হাত চেপে ধরে বললাম, সাপ, সাপ। উফ, কামড় দিয়ে দিয়েছে!
তারপর নিজের হাত চেপে ধরে হাপাতে লাগলাম। শাওন অনেক চমকে গেল আর সাথে সাথে পানিতে ঝাপ দিল। অর্থাৎ শাওন এই ট্রিকসে ফেসে গেল। আমার কাছে এসে আমার হাত ধরে ব্যস্ত হয়ে বলল, কোথায় কামড় দিয়েছে?
আমি হাতের একটা আঙুল দেখিয়ে বললাম, এইযে এখানে।
শাওন দেখে বলল, এটা ত ঠিকই আছে!
আমি সাথে সাথে ফিক করে হেসে দিলাম। শাওন আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকালো।
আমি হাসতে হাসতে বললাম, ট্রিকসে নাকি কাজ হবে না?
আমি আবার হেসে দিলাম। ওনার মুখটা এখন দেখার মত হয়ে গেছে। যদিও রেগে গেছে তাও ধরা ত খেয়েই গেছে। আমি ত হাসতে হাসতেই শেষ।
হঠাৎ উনি আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে ওনার কাছে টান দিলেন। আমি অনেক চমকে গেলাম।
উনি ভ্রুকুচকে আমার দিকে তাকালেন। আমি একটা ঢোক গিলে ওনাকে সরনোর চেষ্টা করে বললাম, ক…কি করছেন আপনি! ছাড়ুন…
আমি কথা শেষ করার আগেই উনি আমাকে আরো কাছে টেনে নিলেন। আমি এবার অনেক ঘাবড়ে গিয়ে ওনার দিকে তাকালাম। এদিকে হার্টও অনেক জোরে জোরে বিট করছে।
শাওন গম্ভীর গলায় বলল, পানিতে যখন আমাকে নামিয়েছোই তখন তোমাকে এর ফলও ত ভুগতে হবে।
আমি চমকে উঠে ওনার থেকে চোখ সরিয়ে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম। কি করবেন উনি! শাওন ওর বাম হাত দিয়ে আমার ঘাড় থেকে চুল গুলো সরিয়ে দিতেই আমি শিউরে উঠলাম আর ওনার দিকে তাকালাম। শাওন আমার মুখের কাছে ওর মুখটা আনতেই আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম।
তখন শাওন আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বলল, এখনো কি গোসল করার শখ আরো আছে?
আমি চোখ খুলে ওনার দিকে তাকালাম। উনিও আমার চোখের দিকে তাকালেন। আমি একটা ঢোক গিলে বললাম, ন…না.. প্লিজ ছাড়ুন।
শাওন আমাকে ছেড়ে দিল। কিন্তু এখনো আমার হার্ট অনেক জোরেই বিট করছে। আমি মাথা নিচু করে রইলাম।
ভিজে গায়ে বাড়ি ফিরে এখন আর এক সমস্যায় পরে গেলাম। সেটা হলো শাওনের জামা কাপড় আমার জন্য ভিজে গেছে। উনি আর কোনো জামা কাপড় আনেন নি। তাই এখন কাকাকে আবার জামাকাপড় কেনার জন্য দৌড়াতে হচ্ছে। শাওনের কারনে কাকা এই বছর দৌড় প্রতিযোগিতায় হয়ত প্রথম স্থান পেয়ে যাবে।
আমি ঘর থেকে একটা তোয়ালে এনে শাওনের কাছে এগিয়ে দিলাম। শাওন তোয়ালে টা নিয়ে মাথা মুছতে লাগল। আমি ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম। দেখতে অন্যরকম ভালো লাগছে। ওর কালো শার্টটা ভিজে গায়ে লেপ্টে আছে। গলার কাছে ফোটা ফোটা পানি গুলো রোদে চিকচিক করছে। আর উনি গম্ভীর মুখে নিজের চুলগুলো মুছছেন। মুছতে মুছতে হঠাৎ উনি আমার দিকে তাকালেন। আমি সাথে সাথে অন্যদিকে তাকালাম। শাওন ভ্রুকুচকে বলল, এখনো দাড়িয়ে আছ কেন? ড্রেস চেঞ্জ করো যাও।
আমি বিরক্তির সাথে বললাম, হ্যা হ্যা যাচ্ছি। সারাদিন খ্যাটখ্যাট করেন কেন! ভাল ভাবে কথা বলতে পারেন না?
বলেই আমি মুখ ঘুরিয়ে চলে এলাম।
চেঞ্জ করে কিছুক্ষণের মধ্যে লাল ব্লাউজের সাথে একটা অফ-হোয়াইট শাড়ি পরে বেরিয়ে এলাম। তারপর আয়নার সামনে এসে ভিজে চুলগুলো মুছতে লাগলাম। তখনি শাওন এসে রুমে ঢুকলো। আমি ওর দিকে তাকালাম।
আর তাকিয়েই চোখ বড়সড় করে ফেললাম। কারন উনি কোনো শার্ট পরে নেই। এক হাতে একটা সাদা শার্ট আর কালো ট্রাউজার যেটা হয়তো কিনে আনা হয়েছে আর অন্য হাতে ভিজে শার্টটা খুলে ধরে রেখেছেন।
শাওন আমাকে ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করে ভ্রুকুচকে বলল, Where are you going?
আমি চোখ নামিয়ে মেঝের দিকে তাকিয়ে দুই হাত একসাথে ধরে বললাম, বিয়েতে। হাসির বিয়ে।
শাওন রাগী চোখে তাকিয়ে বলল, আমি তোমাকে আগেই বলেছি যে….।
“হ্যা হ্যা, বলেছেন যে যেতে দেবেন না” আমি শাওনকে থামিয়ে দিয়ে বললাম।
শাওন বলল, তাহলে রেডি হয়েছো কেন?
আমি ওনার প্রশ্ন এড়িয়ে বললাম, আপনি নাকি আজ চলে যাবেন! এখনো আছেন কেন?
আমি মেঝের দিকেই রইলাম। ওনার চোখের দিকে তাকাতে যেন কেমন কেমন লাগছে।
শাওন কোনো উওর দিল না। তাই আমি একটু চোখ উঠিয়ে ওনার দিকে তাকালাম। উনি স্বাভাবিক ভাবেই তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। আমি আবার চোখ নামিয়ে নিলাম। উনি আমার দিকে এগুতে লাগলেন। আমি বুঝতে পেরেও তাকালাম না। মেঝের দিকেই তাকিয়ে রইলাম কিন্তু অনেক ভয় করতে লাগল।
শাওন আমার সামনে এসে থামলো। আমি ভয়ে একটা ঢোক গিললাম। শাওন স্বাভাবিক গলায় আমাকে বলল, আমি থাকলে তোমার কি সমস্যা?
আমি চোখ পিটপিট করে ওনার দিকে তাকালাম। উনি আমার দিকে আর এক পা এগুতেই আমি পিছাতে গিয়ে ড্রেসিং টেবিলে বাধা পেয়ে গেলাম। আর ওনার দিকে ভয়ে ভয়ে তাকালাম। শাওন সিরিয়াস চোখে তাকিয়ে বলল, আমি যাব না। আর তুমিও কোনো বিয়েতে যেতে পারবে না।
ওনার মুখের উপর কিছু বলতে চেয়েও পারলাম না। উনি বললেন, বুঝেছো?
আমি চোখ নামিয়ে হ্যাসূচক মাথা নাড়লাম। তারপর শাওন আমার কাছ থেকে সরে বাথরুমে চলে গেল।
উনি যাওয়ার সাথে সাথে আমি বুকের উপর হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলাম।
উনি সত্যি সত্যিই আমাকে যেতে দিলেন না। দুপুরের পরেই আমার যাওয়ার কথা ছিল। তাই আমি মুখ গোমড়া করে বিছানায় বসে রইলাম। তাতে ওনার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। উনি ওনার ওনার ফোন নিয়ে বাহিরে চলে গেছেন।
কিছু সময় বসে থেকে আমি মনে মনে ঠিক করলাম চুপিচুপি চলে যাব।
কিন্তু আমার কপালই খারাপ। ঘরের বাহিরে পা দেওয়ার সাথে সাথে ওনার সামনে পরে গেলাম। ইস একটু আগে বের হলে এমন হত না!
শাওন রাগী চোখে তাকিয়ে বলল, কোথায় যাচ্ছিলে?
আমি ওনার দিকে তাকিয়ে রেগে বলে উঠলাম, যেখানেই যাই আপনার কি?
শাওন রেগে আমার এক হাত ধরল। আমি বললাম,কি করছেন আপনি?
শাওন আমাকে ধরে টানতে রুমে নিয়ে এসে দাড় করালো আর বলল, আর এক পা বের হলে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবেনা।
বলেই উনি রুমের জালানার কাছে চলে গেলেন। যদিও অনেক রাগ লাগছে তাও কিছু করার নেই।তাই সারাদিন বিছানার এক কোনে চুপচাপ মুখ কালো করে বসে রইলাম। আর বসে থাকতে থাকতে কখন যে বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে গেলাম টের পেলাম না।
সন্ধ্যার দিকে ঘুম ভাঙলো। চোখ ডলে উঠে বসলাম। গায়ে একটা চাদর দেওয়া। আশেপাশে তাকালাম৷ শাওন নেই রুমে। গেল কই আবার? আমি উঠে বাহিরে এলাম। তখনি বকুল এসে বাড়িতে ঢুকলো।
“কি করছিস?” বকুল বলল।
আমি বকুলকে দেখে হাসিমুখে বললাম, কিছুনা, আয়।
বকুল না সূচক মাথা নেড়ে বলল, উহু আমি বসব না। তোকে নিয়ে যেতে এসেছি।
আমি প্রশ্নসূচক চোখে তাকিয়ে বললাম, কোথায়?
বকুল বলল, গেলেই দেখতে পাবি চল।
আমি বিড়বিড় করে বললাম, গরিলাটা ত যেতে দিবেনা!
“কি হলো, চল।” বকুল সরু চোখে তাকিয়ে বলল।
আমি বললাম, কিন্তু….
বকুল আমার হাত ধরে টান দিয়ে আমাকে নিয়ে যেতে যেতে বলল, কোনো কিন্তু না এখন চল ত!
“কিন্তু যাচ্ছি কোথায় এত অন্ধকারে আমরা?” আমি প্রশ্ন করলাম।
বকুল বলল গেলেই বুঝবি।
বকুল আমাকে টানতে টানতে সেই আম বাগানের বাড়িটার সামনে নিয়ে এলো। আমি বকুলকে বললাম, এখানে কেন এনেছিস?
বকুল বলল, এক মিনিট ওদিকে ফিরে দাড়া।
আমি ভ্রুকুচকে বললাম, কেন?
“আরে দাড়া না।” বলেই আমাকে বকুল উল্টোদিকে ঘুরিয়ে দাড় করিয়ে দিল।
আমি কিছুই বুঝতে পারছি না কি হচ্ছে! ওভাবেই দাঁড়িয়ে রইলাম। কিন্তু কয়েক সেকেন্ড পরেই বকুল পিছন থেকে আমাকে গায়ে এক বালতি জল ঢেলে দিল। আমি চমকে বকুলের দিকে তাকালাম।
”কি করছিস তুই?” আমি হা হয়ে বললাম।
বকুল কোনো উওর না দিয়ে শুধু মুচকি হেসে আমাকে টেনে নিয়ে সেই বাড়িটার দরজার হুক খুলে তার মধ্যে ঠেলে ঢুকিয়ে দিল। তারপর সজোরে দরজা বন্ধ করে দিলো। আমি জলদি দরজার কাছে এসে ধাক্কাতে ধাক্কাতে বললাম, বকুল কি করছিস তুই? দরজা খোল প্লিজ। এটা কেমন মজা!
বকুলের কোনো সারা শব্দ নেই! ভিজে গায়ে আমাকে এই ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে কেন চলে গেল ও? এই অন্ধকারে কিভাবে থাকব!
আমি দরজা আরো জোরে ধাক্কাতে ধাক্কাতে কাদো কাদো গলায় বললাম, বকুল!
“কাদছো কেনো?”
আমি অনেক চমকে গেলাম শাওনের গলা শুনে। উনি কিভাবে এই ঘরে এলেন? আমি আস্তে আস্তে মুখ ঘুরিয়ে পিছনের দিকে তাকালাম। শাওন ঘরের কোনার জালানার কাছে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। জালানা দিয়ে আসা চাঁদের আলোয় ওনার মুখটা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে।
উনি ফোনের লাইটটা জ্বালিয়ে হাতে ধরলেন। তারপর আমার দিকে তাকিয়েই স্তম্ভিত হয়ে গেলেন।
ওনার চাহনি দেখে আমিও নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলাম। বকুল আমাকে পুরো ভিজিয়ে দিয়েছে। গায়ের সাথে শাড়ি পুরো লেপ্টে আছে।
আমি একটা ঢোক গিলে শাওনের দিকে তাকালাম। উনি আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে আছেন। আমি চোখ সরিয়ে নিলাম। আমার আর বুঝতে বাকি রইল না যে বকুল কেন এটা করেছে। অসভ্য বকুল।
এখন যদি উনি সত্যিই আমার সাথে ওরকম কিছু করেন! ভেবেই আমি কেপে উঠলাম আর শাওনের দিকে তাকালাম। উনি অন্যরকম ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। ওনার এই চাহিনিতেই আমি ভয়ে চুপসে গেলাম। এটা কত নম্বর বিপদ সংকেত ধরব আমি?
উনি ফোনের লাইটটা নামিয়ে নিলেন আর আস্তে আস্তে আমার কাছে এগিয়ে আসতে লাগলেন। ওনাকে আমার কাছে আসতে দেখে আমার গা হাত পা ভয়ে ঠান্ডা হয়ে যেতে লাগল। অন্যদিকে হার্টও এত জোরে বিট করতে লাগল যেন এখনি ফেটে যাবে। উনি আমার একদম কাছে আসতেই আমি দরজার সাথে লেপ্টে দাঁড়িয়ে গেলাম। শাওন ওর দুই হাত আমার দুইপাশে রাখল।
আমি রীতিমতো কাপতে শুরু করলাম। কিছু বলতে চেয়েও পারলাম না কারন আমার ঠোঁটও কাপছে। উনি দেয়ালের উপর থেকে এক হাত সরিয়ে আমার গালের মধ্যে দিয়ে ডুবিয়ে গলায় রাখলেন। এতে আমি অনেক বেশিই চমকে উঠলাম।
– কি বলেছ তুমি বকুলকে? আমি তোমাকে আদর করিনা কেনো?
আমি চোখ বড়সড় করে শাওনের দিকে তাকালাম। কি বলছেন এসব উনি? আমি কখন এগুলো বললাম।
– আরো যেনো কি বলেছ? আমি কি?
আমি ভয়ে কাচুমাচু হয়ে গেলাম। বকুল কি কি বানিয়ে বলেছে ওনাকে!
শাওন আমার কাছে আরো এগিয়ে এসে বলল, “ওকে, আসো দেখাচ্ছি আমি কি?”
চলবে…