১৬ বছর বয়স | পর্ব – ১৩

আমি ওনার দিকে তাকিয়ে রেগে জোরেই বলে উঠলাম,”কাল রাতে আপনি আমার সাথে কি করেছেন?”
উনি থমকে দাঁড়িয়ে ঘুরে আমার দিকে তাকালেন।
আমি আরো বললাম, “আপনি সত্যিই অনেক খারাপ৷ আপনি অসভ্য আর অমানুষ।”
একটু থেমে বললাম,”কি হলো এখন চুপ করে আছেন কেন?”
ওনার কানের কাছে ফোনে কেউ হ্যালো হ্যালো করছে।
আমি চোখেমুখে রাগ নিয়ে ওনার দিকেই তাকিয়ে আছি। সামনেই লিফট। আর একটু দূরে যে কয়েকজন লোক ছিল যারা চমকে এদিকে তাকালো। তবে আমার জোরে কথা বলার কারনে অনেকে অফিসের ভিতর থেকে এদিকে উঁকিঝুঁকি মারতে লাগল। শাওনের চোখেমুখ রাগে ভরে গেছে। শাওন ফোনটা কান থেকে নামিয়ে আমার দিকে কটমট চোখে তাকিয়ে আছে।
দূরে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েক জন ফিসফিসিয়ে কথা বলা শুরু করেছে। শাওন আশেপাশে সবার দিকে রেগে তাকাতেই সবাই যে যার জায়গায় কেটে পরল।
শাওন আমার কাছে এসে আমার বাম হাত শক্ত করে চেপে ধরল।
“আহ কি করছেন আপনি! লাগছে আমার।”
শাওন আমাকে টানতে টানতে লিফটের মধ্যে নিয়ে দাড় করালো। আমি লিফটে বসেও হাত ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। কিন্তু শাওন আমার হাত শক্ত করে ধরে রাগী চোখে সামনের দিকে তাকিয়ে রইল।
“আমি কিন্তু আবার কামড়ে দিব।” আমি রেগে কাদতে কাদতে বলে উঠলাম।
একটু পরেই লিফট গ্রাউন্ড ফ্লোরে এসে থামলো। সাথে সাথে শাওন আমাকে হেচকা টান দিয়ে গাড়ির কাছে নিয়ে গেল।
“কি করছেন আপনি! লাগছে আমার। ছাড়ুন আমার হাত।”
শাওন গাড়ির দরজা খুলে জোর করে আমাকে ঢুকিয়ে দিয়ে দরজা আটকে দিলো। আমি গাড়ি দরজা খুলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলাম।
শাওন গাড়িতে উঠে আমার কাছে এসে সীট বেল্ট জোর করে বেধে দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো।
আমি সাথে সাথে সীটবেল্ট খুলে ফেললাম। শাওন রেগে গাড়ি থামিয়ে আমার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালো। তারপর আবার সীটবেল্ট জোর করে বেধে দিয়ে আমার ডান হাতের কব্জি চেপে ধরল।
আমি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললাম,”ছাড়ুন আমাকে।”
শাওন আমার হাত ছিটকে ছেড়ে দিয়ে অনেক জোরে গাড়ি চালাতে লাগল। রীতিমতো মাথা ঘুরছে। এদিকে হাতগুলোও ব্যথা করছে। অনেকটা পথ এসে শাওন কষে গাড়ি থামিয়ে দিল। আমি অনেকটা সামনে ঝুকে পরলাম। এই জায়গায় আশেপাশে কোনো মানুষ জন নেই। শাওন নেমে আমার হাত ধরে টেনে গাড়ি থেকে নামালো। তারপর গাছগাছালির মধ্যে দিয়ে টেনে টেনে নিয়ে যেতে লাগল।
“কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে! ছাড়ুন আমাকে।”
শাওন ফট করে আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল।আমি তাল সামলাতে না পেরে পিছন দিকে একটা কাটাওয়ালা গাছে দিয়ে পরলাম। পিঠে সাথে সাথে কাটা বিধে গেল। পিঠে বলতে ঘাড় সোজা একটু নিচের দিকে। আশে পাশে আবছা চাঁদের আলো। আমি শাওনের দিকে তাকালাম। চোখ দিয়ে পানি পরতে লাগল।
শাওন আমার কাছে এগিয়ে আসতেই আমি ওনাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে চলে যেতে চাইলাম। কিন্তু উনি আমার বাম হাতের বাহু ধরে টেনে আমাকে ওনার সামনে নিয়ে এলেন। ওনার কাজের দ্বারাই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন উনি।
আমি কাদতে কাদতে বললাম,”আমাকে এখানে কেন এনেছেন?”
শাওন আমার আমার কাছে কয়েক পা এগিয়ে আসতেই আমি ভয়ে পিছাতে গিয়ে পরে গেলাম। উনি এক হাটু ভাজ করে আমার দিকে ঝুকলেন।
“তোমার অনেক বেশিই সাহস, তাইনা! You even dared to insulte me. কে অমানুষ?”
বুঝাই যাচ্ছে যে উনি প্রচন্ড রেগে গেছেন। আমি অনেক ভয়ে ভয়ে বললাম,”কি ক..করতে চান আ… আপনি?”
“সেটাই করতে চাই যেটা কেউ অমানুষ হলে করে।”
মানে! উনি কি করবেন আমার সাথে!
শাওন আমার আরো কাছে আসতেই আমি পিছনে পিছিয়ে যেতে লাগলাম। শাওন ওর হাত দিয়ে একটানে আমার ব্লাউজের পিছনের ফিতাটা ছিড়ে দিল। সাথে কয়েকটা চুলেও টান লাগল। আমি সাথে সাথে কেপে উঠলাম আর ছলছল করা চোখে তাকিয়ে রইলাম।
“আরো নমুনা দেখতে চাচ্ছ?” শাওন দাতে দাত চেপে বলে উঠল।
আমার চোখ থেকে অঝোরে পানি পরছে। শাওন উঠে দাড়াল। আর হাতে থাকা ফিতাটা আমার পাশে ফেলে দিল। তারপর হেটে চলে গেল। আমি ওনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম। তারপর চোখ মুছলাম। কিন্তু চোখ মুছেও বা কি হবে চোখ দিয়ে পানি পরছে ত পরছেই।
শাওন গাড়িতে বসে সীটে মাথা হেলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে রইল। বিগড়ে যাওয়া মেজাজ টা ঠান্ডা করার চেষ্টা করতে লাগল। কতসময় ওভাবে বসে থাকার পর মাথা তুলল। তখন নিজের ডান হাতে কিছু লেগে আছে মনে হতেই নিজের হাতের দিকে তাকলো।
হাতে রক্ত লেগে। কিন্তু ওর নিজের না। শাওন বিরক্তির সাথে গাড়ি থেকে নামল। তারপর জলদি করে সেখানে এলো যেখানে আমাকে ফেলে গেছিল। কিন্তু সেখানে আমি নেই।
“Shit” বলে শাওন আশেপাশে খুঁজতে লাগল। কিন্তু আমি আশেপাশে কোথাও নেই। চারিপাশের আবছা অন্ধকারটা আরো বেড়েছে। হঠাৎ শাওনের মনে হলো গাড়ির মধ্যে থেকে ফোন টা আনলে টর্চ জ্বালানো যেত। শাওন তাড়াতাড়ি গাড়ির কাছে এসে দরজা খুলতে যাবে এমন সময় থমকে দাড়ালো। তারপর গাড়ির পিছনের দিকে আসলো। আমি গাড়ির পিছনে পিঠ ঠেকিয়ে দিয়ে দুই পায়ের মধ্যে মাথা গুজে মাটিতে বসে ছিলাম।
শাওন এসে আমার সামনে দাড়িয়ে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল,”ওঠো।”
আমি ওভাবেই বসে রইলাম। তাই শাওন আমার এক হাতের বাহু ধরে টেনে তুলল।
আমি ব্যথায় বলে উঠলাম,”লাগছে আমার।”
এতক্ষনে চোখের জল সব শুকিয়ে গেছে আমার। কিন্তু চোখেমুখে কান্নার আভাস রয়েই গেছে।অন্ধকারের মধ্যে এই চাঁদের আলোতে কিছুই এখন আর আবছা লাগছে না। শাওন গম্ভীর চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তাই আমি মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকালাম। শাওন গাড়ির কাছে এগিয়ে গিয়ে গাড়ির ভেতর থেকে নিজের ফোন নিয়ে আসল। তারপর বলল,”পিছনে ঘুরো।”
আমি মুখ ঘুরিয়ে তাকিয়েই রইলাম। তাই শাওন আমার এক হাত ধরে আমাকে পিছনে ঘুরালো। ফোনের লাইটটা জ্বালিয়ে বাম হাতে ফোনটা ধরল। তারপর এগিয়ে এসে আমার ঘাড়ের কাছ থেকে চুল গুলো সরাতে লাগল। আমি চমকে উঠে ওনার দিকে ঘুরলাম আর বললাম,”কি করছেন আপনি!”
“চুপচাপ দাড়াও।” চোখ গরম দিয়ে শাওন বলল।
তারপর এক টানে আবার আমাকে উল্টো ঘুরিয়ে দিল আর আমার ঘাড় থেকে চুলগুলো সরিয়ে দিল। আমি শিউরে উঠলাম। শাওন আমার দিকে ওর ফোনটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল, এটা ধরো।
আমার রাগ মোটেও কমেনি তাই ওনার কথা শুনেও না শুনার ভান করলাম।
শাওন বুঝতে পেরে বলল,”সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে ঘি এর ডিব্বাই উল্টা করতে জানি আমি। সো ভালয় ভালয় আমার কথা শোনো।”
বলেই আমার হাতে ফোনটা ধরিয়ে দিয়ে আমার শাড়ির আঁচল ধরলেন। আমি সাথে সাথে হালকা ঘাড় ঘুরিয়ে বলে উঠলাম,”কি করছেন আপনি!” কথা শেষ হবার আগেই এক টানে আমার শাড়ির আঁচলের প্রান্ত থেকে খানিকটা ছিড়ে নিয়ে পরিষ্কার অংশটুকু বেছে নিয়ে, সেটা থেকে কিছু অংশ ছিড়ে বাকিটা ফেলে দিল।
“চুপচাপ সামনে ঘুরে থাকো” বলেই শাওন সেটা গোল করে আমার পিঠে চেপে ধরলেন। আমি ব্যথা পেলেও কিছু বলতে পারলাম না। চোখ বন্ধ করে সহ্য করতে লাগলাম।
শাওন মুখে বিরক্তির শব্দ করে বলল, ফোন হাতে নিয়ে দাড়িয়ে থাকতে বলেছি? এদিকে মারো।
যেহেতু আমি থমকে দাঁড়িয়ে আছি তাই শাওন আমার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নিজেই ধরল। কিছুসময় কাপড়টা চেপে ধরার পর কাপড়টা ফেলে দিল। তারপর গাড়ি থেকে একটা এন্টিসেপটিক ক্রিম নিয়ে আসলেন। সেটা শাওন নিজের আঙুলে লাগিয়ে নিয়ে আমার পিঠে ছোঁয়াতেই আমি আবার শিউরে উঠলাম। শাওন নিজেও বুঝতে পেরে জলদি লাগিয়ে হাত সরিয়ে নিলো।
তারপর গাড়ির ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল,”যদি আজ রাতে এখানে থাকতে ইচ্ছে না হয় তাহলে চল।” আমি ঘুড়ে তাকালাম। ততসময়ে উনি গাড়ির ভিতরে ঢুকে গেছেন। আবার ঠান্ডা লাগছে। জ্বর কি আবার আসবে নাকি।
শাওন দুইবার হর্ন বাজালো। আমি এগিয়ে গিয়ে গাড়িতে ঢুকলাম। ব্যথার জন্য হেলান দিয়ে বসা যাচ্ছে না তাই পাশের জালানার দিকে একটু কাত হয়ে রইলাম। আমি ওনাকে একদমই বুঝতে পারিনা। প্রথমে আমাকে ব্যথা দেন তারপর আবার নিজেই এসে ঠিক করে দেন।
গা ত আবার কাপছে। গাড়ির এসির জন্য আরোই শীত করছে। আমি এক হাত দিয়ে অন্য হাতের বাহু ধরলাম। শাওন আমাকে এভাবে কাচুমাচু হয়ে বসে থাকতে দেখে এসি অফ করে দিল আর নিজের কোটটা পিছনের সীট থেকে নিয়ে আমার কোলে ফেলল। আমি একবার শাওনের দিকে তাকিয়ে তারপর আবার জালানা দিয়ে বাহিরে তাকালাম। লাগবে না আমার ওনার কোট। গাড়ি পার্ক করার পর আমরা নেমে পরলাম। শাওন আমার আগে আগেই চলে যেতে লাগল। আমি ওনার পিছনে পিছনে যেতে লাগলাম। রিসিপশনের কাছে আসতেই একটা মেয়ে শাওনকে গুড ইভিনিং বলল। তারপর আমার দিকে তাকাতেই মেয়েটা বলে উঠল, “ম্যাম এখন কেমন আছেন!”
আমি প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে মেয়েটার দিকে তাকালাম।
“কাল ত অনেক অসুস্থ ছিলেন।”
শাওন গিয়ে লিফটে উঠে পরল। আমি মেয়েটার কাছে গিয়ে ভ্রুকুচকে বললাম,”আপনি কিভাবে জানেন?”
“আপনার ড্রেস চেঞ্জের জন্য গিয়েছিলাম তখন আপনার অনেক জ্বর ছিল। কিন্তু তাও আপনি আমাকে বললেন একাই পারব। আপনার মনে নেই?”
আমি হা হয়ে না সূচক মাথা নাড়লাম।
“অনেক জ্বর ছিল তাই হয়তো” মেয়েটা হাসিমুখে বলল।
আমি কপাল কুচকে চিন্তা করতে লাগলাম, “আমি তাহলে ভুল জানি? কিন্তু আমার যে অংশটুকু মনে পরছে তাতে ত উনি… নাকি ভুল!
আকাশ পাতাল চিন্তা করতে করতে লিফটে উঠলাম।
বাসার দরজা খোলা পেয়ে আমি ঢুকলাম। এখন একটু গোসল দিতে পারলে সবথেকে ভাল হত। শাওনের রুমে এসে ঢুকে পরলাম। শাওন নেই। বাথরুমে? হতে পারে। আমি ছাদে গিয়ে শাড়িসহ সব কিছু ল্যাগেজে ভরে নিয়ে আসলাম। একটা শাড়ি বের করে রাখলাম। তারপর সোফার কোনায় মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে কাত হয়ে রইলাম। চোখে ঘুম চলে আসল। কিছুক্ষন পরেই শাওন আমাকে বাম হাত ধরে টেনে উঠিয়ে বসিয়ে দিতে দিতে বলল,”ফ্রেস হয়ে খাবার খাও। ঔষধ আছে।” তারপর শাওন কিচেনে চলে গেল। আমি ঘুম ঘুম ঘোরে শাড়ি ব্লাউজ আর তোয়ালে নিয়ে রুমে ঢুকলাম। শাওন ফট করে রুমে এসে আমার হাত থেকে তোয়ালেটা নিয়ে নিল।
আমি কপাল কুচকে বললাম,”কি করছেন।”
শাওন বলল,”গোসল না। শুধু ফ্রেস হতে বলেছি।”
আমি বললাম,”সেটা আমার ইচ্ছা।”
শাওন রেগে এক পা এগিয়ে আসতেই আমি পিছিয়ে গেলাম।
“Shut up. আমি যা বলেছি তুমি সেটাই করবে ।” বলেই শাওন বাথরুমে ঢুকতে ইশারা করল।
আমি রাগে কটমট করতে করতে ফ্রেস হয়ে হতে গেলাম। বের হয়ে বিছানার উপরে তোয়ালে টা পেলাম।
হাতমুখ মুছে ডাইনিং এ এসে বসলাম। দুইটা প্লেটে খাবার রেডি করা। শাওন বসে পরল। আমিও ধীরে ধীরে গিয়ে শাওনের সোজা অপর পাশে বসলাম। এই দ্বিতীয় বার আমরা একসাথে খেতে বসেছি। পুরো রুম জুড়ে নিস্তব্ধতা। কেমন কেমন যেন লাগছে।
এভাবেই খাওয়া শুরু করলাম। পুরো সময়টায় উনি আমার দিকে একবারো তাকালেন না। উনি ওনার ফোন নিয়ে ব্যস্ত। যদিও আমি কয়েকবার তাকিয়ে সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নিয়েছিলাম।
উনি খেয়ে আমার আগে আগেই উঠে গেলেন। আমি খানিক পরেই খাওয়া শেষ করে সোফাতে এসে বসলাম। শাওন এসে এক গ্লাস পানি আর ওষুধ এগিয়ে দিল। আমি ওনার মুখের দিকে তাকালাম। শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে ওগুলো নেওয়ার জন্য ইশারা করল। আমি ওনার হাত থেকে নিয়ে ঔষধ টা পানি দিয়ে গিলে ফেললাম। শাওন তখন রুমে গিয়ে একটা সেভলন ক্রিম সহ কিছু তুলা ও একটা মাঝারি সাইজের ব্যান্ডেজ এনে আমার পাশে ফেলল আর গ্লাসটা আমার হাত থেকে নিয়ে কিচেনে চলে গেল।
আমি পিঠ থেকে চুলগুলো সরিয়ে নিয়ে বোঝার চেষ্টা করতে লাগলাম যে কোথায় কেটেছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিলে হয়তো ভাল হত। শাওন কিচেনে ছিল। তাই আমি সব নিয়ে শাওনের রুমে চলে এলাম। ব্লাউজের ফিতা খুলে আয়নায় দেখে নিয়ে সেভলন ক্রিম ত লাগালাম। কিন্তু ব্যান্ডেজ লাগাবো কিভাবে!
শাওন রুমে এসে ঢুকলো। আমি ব্যান্ডেজ এর উপরের স্টিকার টা সরাতে সরাতে শাওনের দিকে তাকালাম। তারপর আবার সামনের দিকে তাকিয়ে থমকে দাড়িয়ে মনে মনে বললাম, উনি এখনি চলে এসেছেন কেনো!
উনি আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন। আমি টের পেয়ে চোখ মুখ বন্ধ করে মাথা নিচু করে রইলাম। শাওন এসে পিছনে দাড়িয়ে আমার হাত থেকে ব্যান্ডেজ টা নিল। আমি মাথা তুলে আয়নার দিকে তাকালাম। শাওন আমার পিঠে ব্যান্ডেজ টা লাগিয়ে দিল। তারপর সরে নিজের ফোন নিয়ে বেলকনিতে চলে গেল।
আমি জলদি করে ব্লাউজের ফিতা বেধে নিয়ে নিজের সোফায় চলে গেলাম। আর চিন্তা করতে লাগলাম তাহলে গতরাতে আসলে হয়েছিল টা কি! ওনাকে জিজ্ঞেস করব? কিন্তু প্রশ্ন করলেই ত মানে মানে করে! তখনি ত যায় মেজাজ বিগড়ে। থাক আর কিছু জানার দরকার নেই। ওই রিসিপশনের মেয়ে মনে হয় সত্যিই বলেছে। কিন্তু সেদিন রাতে উনি আমাকে সরি কেন বলেছিলেন! নাকি এটাও আমার মনের ভুল! সোফার কুশনে মাথা দিয়ে শুয়ে পরলাম।
ঘুম আসছে না। রাত ত অনেক হলো। টিভি দেখতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু এই এত বড় টিভিটা চালায় কি করে! আশেপাশে রিমোট ও ত নেই। টিভির কাছে গিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম। পিছনে কয়েকটা বাটন আছে। সবচেয়ে নিচের টা চাপ দিতেই টিভি অন হয়ে গেল। যাক এত দিন পর আজ টিভি দেখতে বসলাম। খবরের চ্যানেল দেওয়া। এখন রিমোট কই পাব। আবার টিভির পিছনের বাটন গুলো চেপে চ্যানেল বদলাতে লাগলাম। খুজে খুজে কার্টুন চ্যানেল বের করলাম। অনেক দিন পর ওগি আর ককরোচদের দেখা মিলল। অনেক মজা লাগছে। আমি দুই পায়ের হাটু দুই হাত দিয়ে ধরে তার উপর থুতনি রেখে হাসিমুখে দেখতে লাগলাম। মাত্র ১০ মিনিটও হতে না হতেই শাওন আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলল,”বন্ধ করো”
আমি ভ্রুকুচকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে বললাম, “আপনার কি সমস্যা! আপনাকে দেখতে বলেছি?”
শাওন রেগে আমার দিকে তাকিয়ে টিভির কাছে গিয়ে টিভি অফ করে দিল।
আমি হা করে তাকিয়ে রইলাম।
“তোমার জন্য কাল থেকে আমার মাথা হ্যাং হয়ে আছে। তাই আমাকে ইরিটেড করো না।” আমার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল শাওন।
আমি মুখ ভেংচি দিয়ে বললাম,”আমার এখন ঘুম আসছে না। আপনি প্লিজ যান না।”
শাওন রেগে দুইপা এগুতেই আমি ভয়ে বলে উঠলাম,”না না, ঘুম এসে গেছে। কাছে আসবেন না। এমনিই একটা ব্লাউজ ছিড়ে দিয়েছেন। এবার না জানি আবার কি করে দিবেন।” বলেই আমি কাচুমাচু হয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলাম।
শাওন আমার দিকে গম্ভীর মুখে তাকিয়ে চলে যেতে লাগল। তখনি আমি বলে উঠলাম,”আপনি কাল রাতে….”
শাওন থেমে দাঁড়ালো।
“কাল রাতে আমাকে সরি বলেছিলেন?”
শাওন ঘুরে আমার দিকে তাকালো। আমি ওনার চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
উনি চুপচাপ আছে দেখে বিরক্ত লাগছে। বুঝিনা কি সমস্যা!
আমি চোখ নামিয়ে বললাম,”এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন!”
শাওন এবার আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল।আমি চোখ বড়সড় করে বললাম,”এ..এগুচ্ছেন কেন?”
শাওন আমার কাছে আসতে আসতে বলল,”মনে করানোর জন্য।”
আমি সোফার পিছন দিকে হালকা সরে যেতে যেতে বললাম,”মা.. মানে? আ..আমার সব মনে পরে গেছে। আপনি এখন যেতে পারেন।”
কিন্তু শাওন এক পায়ের হাটু ভাজ করে আমার ডান পাশে রাখল আর ঝুকে আমার কাছে এসে আমার বাম দিকে ওর ডান হাত রাখল।
আমার ত ভয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। আমি নিচু হয়ে প্রায় আধশোয়া অবস্থায় আছি এখন। শাওন অন্য হাত আমার চুলের মধ্যে দিয়ে প্রবেশ করিয়ে আমার ঘাড় স্পর্শ করতেই আমি এক হাত দিয়ে ওনার বাহুর কাছের শার্ট চেপে ধরে ঠেলে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে বললাম,”কি করছেন আপনি!”
“সব মনে থেকে থাকলে অফিসে সিন ক্রিয়েট করলা কেন?!” শাওন বলল।
আমি ওনার চোখের দিকে তাকালাম। ভয়ে ভয়ে বললাম,”আ…আমি ত…।”
“তুমি ত?” শাওন আমার চোখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করল।
আমি চোখ সরিয়ে নিয়ে বললাম,”আ…মি মনে করেছিলাম…”
শাওন আরো কাছে আসতেই আমি চোখ বন্ধ করে শাওনের বাহু খামছে ধরে এক শ্বাসে বলে ফেললাম,”কারন আমি মনে করেছিলাম আপনি আমার শাড়ি খুলেছেন।”

চলবে…

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।