হাসপাতালে গম্ভীর মুখে বসে আছে আশমিন। নূর কে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গেছে দুই ঘন্টা হতে চললো। আশমিন তখন থেকেই থম ধরে বসে আছে। আট মাসেই সিজার করে ফেলতে হচ্ছে। নূরের কন্ডিশন ভালো ছিল না। একজন হলে সমস্যা হতো না। টুইনস বেবি হওয়ায় সিজার করে ফেলতে হচ্ছে।
নূরের জ্ঞান ফিরেছে কিছুক্ষণ আগে। জ্ঞান ফেরার পর থেকেই নূর অস্থির হয়ে আছে বাচ্চাদের জন্য। আশমিন বুঝিয়ে ও রাখতে পারছে না। অপারেশনের পর নূরের বেশি নড়াচড়া করা নিষেধ। সে মেয়ে এখন চিংড়ি মাছের মতো তিরিং বিরিং করছে।প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হলো আশমিনের।জোড়ে ধমক দিতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলো।
কামিনী চৌধুরী আজ সবার চোখের আড়ালে হসপিটাল এসেছে। বাচ্চারা এতো দিন নিবিড় পর্যবেক্ষণে ছিল তাই সে আসে নি। কানাডার এক পরিবারের সাথে কথা হয়েছে তার।দুটো বাচ্চা ই তারা নিবে। সে তো মেরেই ফেলতে চেয়েছিলো। বাচিয়ে রেখে যদি কিছু টাকা ইনকাম হয় তাহলে ক্ষতি কি।
কামিনী চৌধুরী কে একটা চেয়ারের সাথে শক্ত করে বেধে রাখা হয়েছে। চারিদিকে গার্ড রা ঘিরে রেখেছে তাকে।বাচ্চাদের আলতো করে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বাহাদুর আর একজন মেয়ে গার্ড। অনেকক্ষন না খেয়ে থাকার দরুন তার একটু পর পর কেদে উঠছে।কামিনী চৌধুরীর গায়ে কেউ হাত তুলে নি।
আশমিন আমজাদ চৌধুরীর কাছ থেকে কামিনী চৌধুরী কে সরিয়ে নিজের দিকে টেনে নিলো।বাহাদুর কে ইশারায় কিছু বলে কামিনী চৌধুরী কে কোলে নিয়ে সাথে সাথেই বেরিয়ে গেল রুম থেকে। আমজাদ চৌধুরী আশিয়ান তার পিছু নিতে চাইলে তাদের আটকে দিলো বাহাদুর।
মামনী কোথায় ভাই? আশমিন বিরক্ত চোখে তাকালো আশিয়ানের দিকে। কপাল কুচকে গমগমে গলায় বলল, — তোমাকে আমার বিরক্তির লাগছে আশিয়ান। এখান থেকে যাও।ভাই হিসেবে একটা পরামর্শ দিচ্ছি,এখনো সময় আছে ভালো হয়ে যাও। আমি নিজের মা কেই ছাড় দেই নি।সেখানে তুমি তো সৎ শম্বোন্ধি।
সকাল সকাল রান্নাঘরে ব্যস্ত সময় পার করছে নূর।আজ নাফিসা শিকদার আসবে এই বাড়িতে। মায়ের জন্য নিজের হাতে রান্না করছে নূর।আশমিন শান্ত চোখে তাকিয়ে রইলো সেদিকে। মায়ের জন্য মনে এতো ভালবাসা থাকে বুঝি?তবে তার নেই কেন? মা নামক অনুভূতি গুলো তার কাছেই কেন ভোতা মনে হয়?
বলিষ্ঠ শরিরে শুভ্র পাঞ্জাবি জড়িয়ে নিজেকে পরিপাটি করছে আশমিন। পাঞ্জাবীর উপর কটি পরে শেষ বারের মতো নিজেকে দেখে নিলো সে। আজ নির্বাচন।সারাদিন ব্যস্ত থাকবে সে। ড্রেসিং টেবিলে থেকে চোখ সরিয়ে মেয়েদের দিকে তাকালো আশমিন। সুখ পাখি তার দিকে তাকিয়ে মুখ দিয়ে অদ্ভুত শব্দ করছে।
বিপুল ভোটে জয় লাভ করেছে আশমিন। সারাদিন অনেক ব্যস্ত ছিল সে। কয়েকটি কেন্দ্রে গন্ডগোল হয়েছে।দলের প্রায় বিশ জন মানুষ আহত হয়েছে।তার মধ্যে দুই জনের অবস্থা আশংকাজনক। আশমিন ঠিক করেছে কাজ শেষ করেই একবার হসপিটালে যাবে। নূরের সাথে কথা হয়েছে ঘন্টা দুয়েক আগে।
হাসপাতাল চত্তরে মানুষের ঢল নেমেছে। আশমিনের দলের কয়েকশ লোক এসে জমা হয়েছে সেখানে। সবার চেহারায় তীব্র ক্ষোভ বিদ্যমান। সাধারণ জনগণ ও এসেছে। অনেকে এসেছে তামাশা দেখতে।আবার অনেকেই প্রিয় নেতার খারাপ সময়ে ছুটে এসেছে তাকে একটু শান্তনার বানী শোনাতে। অমি, সানভি আশিয়ান, বাহাদুর সবার অবস্থা ভয়ংকর খারাপ।