সানজিদা বিনতে সফি বিচ্ছেদের চার বছর পরে প্রিয় মানুষটির হলুদ সন্ধায় লাইভ পারফর্ম করছে নূর। পুরো নাম তেহজিব নূর। একজন প্রফেশনাল সিঙ্গার সে।মাস খানেক আগেই তাদের সাথে কনট্রাক করেছে মিনিস্টার আশমিন জায়িনের পি.এ সানভি।সব কিছু জেনে শুনেই কন্ট্রাক পেপার সাইন করেছে নূর। যে বর্তমানে স্টেজ কাপাচ্ছে নিজের সুরেলা গলার গান দিয়ে।
বারান্দার সোফায় আয়েসি ভঙ্গিতে বসে মাথা পিছনের দিকে হেলিয়ে রেখেছে আশমিন। নূরের কোন কথাই তার উপর প্রভাব ফেলতে পারে নি। সেসব নিয়ে মাথা ও ঘামাচ্ছে না সে।তার বর্তমান মাথা ব্যথার নাম লারা।এই মেয়েটার একটা ব্যবস্থা করতে হবে। কয়েক দিনেই মাথা খেয়ে দিল।
আমজাদ চৌধুরী কে যখন হসপিটালে নেয়ার তোড়জোড় চলছে ঠিক সেই মূহুর্তে তাদের সামনে হাজির হলো নূর। আশমিন চোয়াল শক্ত করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। সানভি আমতা আমতা করে বললো, — সরে দাড়ান ম্যাম।স্যার কে এখনি হসপিটালাইজ করতে হবে। নাহলে যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
বিশাল ড্রয়িং রুমে গম্ভীর হয়ে বসে আছে আশমিন।পরিবারের সবাই এখানে উপস্থিত। কামিনী চৌধুরী থমথমে মুখে আমজাদ চৌধুরীর পাশে বসে। চারিদিকে পিনপতন নীরবতা। সবার দিকে চোখ বুলিয়ে ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো নূর।আশমিন শান্ত চোখে তাকে পর্যবেক্ষণ করছে।
অন্ধকার ছাদের এক কোনে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে নূর। বিষন্নতার মরণবান বার বার আঘাত করছে তার বুকের ভিতর। মনে পরছে ছয় বছর আগের কথা। বাড়ির সবছেয়ে শান্তশিষ্ট মেয়ে নূর।রাফসান শিকদারের একমাত্র আদরের মেয়ে।নূরের পাচ বছর বয়সে তার মা মারা যায়।
আকাশে মেঘ জমেছে। যেকোনো সময় আকাশ ভেঙে বৃষ্টি হবে।দমকা বাতাসে চারিদিকের গাছপালা দুলে দুলে উঠছে। বারান্দায় বসে একমনে সামনের কৃষ্ণচুরা গাছের দিকে তাকিয়ে আছে নূর।কৃষ্ণচুরা ফুলে গাছটি নতুন সাজে সেজেছে। সেদিকেই মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে নূর।
বিয়ের ছয় মাসের মাথায় কামিনী চৌধুরী হঠাৎ করেই নিজের আগের রুপে ফেরা শুরু করে। কথায় কথায় নূর কে অলক্ষি অপয়া বলে অপমান অপদস্ত করতে থাকে।নূর তাতে খুব একটা পাত্তা দেয় নি।নিজের মতো করে জীবন কাটাতে থাকে সে।আশমিন কিংবা রাফসান শিকদার কাউকেই এ ব্যাপারে কিছু বলতো না নূর।
আব্বুর গাড়ির ড্রাইভারের খোঁজ পেয়েছো অমি? — পাইনি ম্যাম।লোকটা হয়তো দেশে নেই।তার গ্রামের বাড়িতে খোজ নিয়ে জানতে পারলাম তার পুরো পরিবার ওইদিনের পর থেকে নিখোঁজ। কোথাও তাদের পাওয়া যায় নি। — মন্ত্রী সাহেব এসেছেন? — না ম্যাম।তবে রাস্তায় আছে।কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবে। — ঠিক আছে।
সকাল সকাল ফর্মাল ড্রেসে অফিসের জন্য রেডি হয়ে নিচে এসেছে নূর।অফ হোয়াইট কালার লেডিস কোটের সাথে কালো প্যান্ট। চুল গুলো পোনিটেইল করে বাধা। আশমিন সেদিকে একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো। আমজাদ চৌধুরী নূরের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বললো, — গুড মর্নিং মা।
অফিসে নূরের ত্রিশ জনের টিম সহ নূর কে প্রবেশ করতে দেখে সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। বিশাল বিল্ডিংয়ের আট তলায় রাফসান শিকদারের অফিস। প্রতি তলায় তাদের ভিন্ন ভিন্ন কোম্পানির অফিস থাকলেও আট তলায় হেড অফিস। সব কোম্পানি এখান থেকেই পরিচালনা করা হয়।
