পিউ ছুটে এসে লুটিয়ে পরল বিছানায়৷ চিরাচরিত সেই সিনেমায় হিরোয়িনদের মত ঝাঁপ দিলো এক প্রকার। বালিশটা বুকে চেপে হাঁস-ফাঁস করে উঠল। ধূসর ভাই ওর ঠোঁটে চুমু খেয়েছেন? এখনও স্তম্ভিত ফিরছেনা ওর। একটু আগের সবকিছু সত্যিই ঘটেছে? উনি নিজে থেকে কাছে এসেছিলেন? পিউয়ের মাথা চক্কর কাটছে বিশ্বাস- অবিশ্বাসের মাঝখানে ঝুলে।
আফতাব অস্থির,অধীর। গলবিলটা কেমন ফ্যাসফ্যাস করছে দুশ্চিন্তায়। মস্তকের সমগ্র কোষ যেন স্বীয় জায়গায় থমকেছে। ঘামছে বয়ষ্ক গতর।
বাড়ি ফেরা থেকে এক দন্ড শান্তিতে বসতে পারছেন না। ভেতরটায় কেমন করছে! ক্ষণ বাদে বাদে মুচ*ড়ে উঠছে বা-পাশ।
পিউ মাত্রাতিরিক্ত হো*চট খেয়েছে। যাকে বলে অদৃশ্য ভাবে মুখ থুবড়ে পরেছে ধা*ক্কায়। কাশি সামলে বাবার দিক প্রকট আঁখিতে চাইল সে।
রুদ্ধশ্বাসে বলল,
'' আব্বু, আব্বু আমি এখন বিয়ে করব না।''
বুকের ভেতর উত্তেজনায় কেমন করছে ওর। ওষ্ঠপুটের চতুর্দিকে ঝলকে উঠছে প্রোজ্জ্বল হাসি। খবরটা শুনলে মারিয়া খুশি হবে! কিন্তু কতটা হবে সেটুকু জানেনা। হয়ত বসা থেকে লাফিয়ে উঠবে আনন্দে!
সাদিফ একা একা হাসল। ওই মুহুর্তে মারিয়ার উচ্ছ্বল, দীপ্ত মুখখানি ভেবে সেই হাসি দ্বিগুন হলো।
তারা ব্যস্ত,ভীষণ ব্যস্ত বিয়ের তালিকা করতে।
কথা ছিল আজকেই শপিং করতে যাবেন। কিন্তু পরবর্তীতে পিছিয়ে আনলেন সিদ্ধান্ত। বাড়ির কর্তারা একটা দিন বিশ্রাম নিচ্ছেন,এই দিন ঘর খালি করে কীভাবে যাবেন তারা?
এমনিতে বিয়ে হলে, মেয়ে বাড়ি গুটিয়ে থাকে বিষন্নতায়। কন্যা বিদায়ের, আজীবনের জন্যে তাকে শ্বশুরবাড়ি পাঠানোর হাহাকারে বাবা মায়ের বক্ষ ছি*ড়েখুঁড়ে আসে। যেমনটা সেবার পুষ্পর বিয়েতে হয়েছিল।
পাঁচিল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে সাদিফ। বক্ষপটে মাংসল হাত গুঁজে রাখা। গায়ের কালো পাঞ্জাবি মিশে গেছে তিঁমিরে। ক্ষীণ রশ্মিতে, চশমার গ্লাস চিকচিক করছে।
অমানিশার এই সুবিধে টুকু, মারিয়া হামলে নিয়েছে প্রযত্নে। তৃষিত নয়নে,চেয়ে আছে ওর দিক। সে মানুষটার নজর সম্মুখে,একটু উঁচুতে,ঐ আকাশের রাস্তায়।
পিউ লজ্জা পেলো। সবার দৃষ্টি ওর দিক পড়তেই মাথার ঘোমটা টেনে নিলো আরেকটু। মুচকি হেসে কাছে এলে আফতাব চেয়ার টেনে বললেন,
' আজ আমার বউমা আমার পাশে বসবে। '
বসল পিউ। চাচার মুখে বউমা শব্দটায় ওর খুশিতে হুশ হারানোর জোগাড়। এত কিউট লাগছে কেন শুনতে?
ইকবাল ঘাম মুছতে মুছতে রুমে ঢুকল। বিছানায় বসা পুষ্পকে দেখে বলল,
' এ কী মাই লাভ! এখনও তৈরী হওনি কেন? একটু পরেই তো অনুষ্ঠান শুরু হবে।'
এত আনন্দের মাঝেও পুষ্পর মলিন আনন তার নজর কাড়ল। নিরুত্তর স্ত্রীর পাশে বসল এসে।