হাফসা গাল ফুলিয়ে বসে রইলো।বক্সটা হাতে নিয়ে চাবি ছাড়া অনেক রকম চেষ্টা করলো,বৃথা হয়ে মনে মনে আরহামের প্রতি রাগ নিয়ে বললো, 'খুব চালাক লোক।এত কঠিন শর্ত না দিলেও পারতেন!আমারও লাগবে না চাবি,আপুর টা নিয়ে আসবো।'
ডিনারে লেট হয়ে গেলো।ঘড়িতে তখন এগারোটা।আদওয়ার ফ্যামিলি সহ আহনাফ তাজওয়ারকেও খেতে বসতে হলো।এরই মধ্যে অনেকক্ষণ পর আরহাম নিচে নামলেন।কোনোদিকে না তাকিয়ে চুপচাপ কিচেন থেকে প্লেটে খাবার নিয়ে মাইমুনার রুমের দিকে এগোলেন।
রাতে আলফাজের সাথে সুরাইম আসলো।এ বাসায় আসার পর ফাইয়াজ সবসময় এখানেই লেগে থাকে।বিকেল থেকে এখানেই তার থাকা,খাওয়া দাওয়া হচ্ছে। যাওয়ার কোনো টান নেই।বাসায় ফিরার কথা বললে সে বললো,'দূই আন্টিমণিকে বলো আমার সাথে আসতে।তাহলে আসবো আমি।'
ওর চোখ ছলছল হয়ে উঠলো।আরহাম চেয়ে রইলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে নিজেকে সামলে বলে উঠলো, 'আচ্ছা ব্যাপার না।মানুষ মাএই ভুল।আপু তো অনুতপ্ত।'
আরহাম তৎক্ষনাৎ হাফসাকে বুকের সাথে চেপে ধরে বললেন, 'আমার জীবনে এমন কোন ভালো কাজের পুরষ্কার আপনি!জানি না!এত বেটার গিফট আমি ডিজার্ভ করতাম!আল্লাহর জন্য আপনাকে ভালোবাসি উমায়ের।'
আরহামের আক্ষেপের সুরে কথাটা বলার সাথে সাথেই মাইমুনার চোখের বাঁধ ভাঙ্গলো।অনুতপ্ত সুরে বললেন, 'আমাকে ক্ষমা করে দিন।প্লিজ শাহ।আর কখনো এমন ভুল হবে না।আই প্রমিস!
আপনি অসন্তুষ্ট থাকলে মরে গেলেও শান্তি পাবো না।'
হাফসা তাও নিজেকে কন্ট্রোলে রাখতে পারছে না।সময়ের সাথে ওর ভয় পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।আরহাম ওর হেঁচকির মাএা সামলাতে বললেন, 'কান্না বন্ধ করুন।প্লিজ।'
হাফসা কান্না থামালোই না।একেবারে না পারতেই আরহাম হাফসার ঠোঁট স্পর্শ করলেন।মুহুর্তেই হাফসার কান্না বন্ধ হয়ে অবাক বনে গেলো সে।
তারপর হাফসাকে বসিয়ে ওর পেটের মাঝে আলতো করে স্পর্শ করলেন আরহাম।উনার চোখেমুখে খুশি চকচক করছে।ফ্লোরে হাটু গেড়ে বসেছেন আরহাম। হাফসার পেটে আস্তে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন করলেন, 'একটু কি অনুভব করা যায় তাকে?'
ঘটনার পেরিয়ে গেছে গোটা দূইদিন।আজ আইরার সাথে কথা বলতে গিয়েও আরহাম যারপরনায়ই আহত হলেন।অসন্তোষ প্রকাশ করে বললেন, 'আইরা তুমি আমার বোন হও।তুমি বুঝবে,একটা মেয়ের সংসার ভাগ করতে কতটুক কষ্ট হয়।মনে আছে তোমার? মাহদিন ভাই শুধু ফান করে বলেছিল,সে মাসনা নিতে চায়।তুমি কি করেছিলে মনে আছে?আমাকে এসব বুঝাতে আসবে না।'
আরহাম কাঠখোট্টা স্বরে প্রশ্নটি করে উত্তরের আশা করলেন না।চুপচাপ বসে রইলেন অন্যদিকে তাকিয়ে।হাফসা কিছু বলতে যাচ্ছিলো আব্বু ফোন এগিয়ে দিলেন।আরহাম আব্বুর দিকে জিগ্গাসাদৃষ্টিতে তাকিয়ে ফোন তুলে রুক্ষস্বরে সালাম দিতেই ওপাশ থেকে উৎকন্ঠিত কন্ঠে ভেসে আসে, 'আপনি সত্যি আমায় মেনে নিয়েছেন?নিজের মুখে বলুন।বাবার কথায় বিশ্বাস হচ্ছে না।'
উপরে উঠার সময় উমায়েরের রুম পেরিয়ে যেতে তাকে উনার রুমে যেতে বললেন।হাফসা কিছুসময় পর গেলো।উনি তখন টাওয়াল হাতে শাওয়ারে ডুকবেন।হাফসাকে আসতে দেখে টাওয়াল রেখে এগিয়ে এলেন।গালে হাত রেখে বললেন, 'আমি যখন সামনে থাকি না তখন কাঁদেন না?'
'আপনার লেট হয়ে যাচ্ছে।'