ভোর রাতে খবর এলো জেবার বাবা আর নেই৷ এ যেন মরার ওপর খরার ঘা। খবর পাওয়ার পর দু'বার জ্ঞান হারিয়েছে জেবা৷ তাকে সামলাচ্ছে শবনম৷ পল্লব গেছে ড্রাইভার'কে ডেকে তুলতে।
পাঁচফোড়ন গৃহে কড়া ডোজের ঘুমের ওষুধ খাওয়ানোর ফলে দু'টো প্রাণ বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। ঘুম ভাঙলেই তারা যে নিজেদের এক নতুন পৃথিবীতে আবিষ্কার করবে, তা কী ঘুমানোর পূর্বে ঘুণাক্ষরেও টের পেয়েছিল?
ত্বরিতবেগে সাইকেলের পিছনে শাহিনুরকে বসিয়ে দিয়ে নিজেও ওঠে পড়ল। শ্বাসরুদ্ধকর কণ্ঠে বলল,
-' শক্ত করে ধরে থাকবে আমাকে। একদম চুপ করে বসে থাকবে।'
-' সুজন তুমি শায়লাকে নিয়ে এবার রুমে যাও। একটা বিছানা পাতাই আছে, তোমাদের আর বিছানার ব্যবস্থা করতে হবে না। বাকিসব ধীরে ধীরে করে নিও।'
-' শুধু বউ হলে হয়তো দিতো। '
-' শুধু বউ নয়? '
-' যে নারী কোন পুরুষের হৃদয়ের রানি হওয়ার ক্ষমতা নিয়ে জন্মায় সে নারী শুধু বউ হবে কেন? সে তো আমার হৃদয়ের রানি।'
সিগারেটে শেষ দু'টো টান দিতে দিতে সারিম পর্যবেক্ষণ করল সামনের সুশ্রী নারী মূর্তি'কে। কিঞ্চিৎ ত্বরান্বিত হয়ে সিগারেটের শেষ অংশটুকু মাটিতে ফেলে দিলো। ভাবুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে পা দিয়ে পিষেও ফেলল।
-' হাতের নাগাল থেকে যে অপরাধী পালিয়ে যায়, তাকে আর কোন উপায়ে ধরবে তোর সৈন্যদল?'
-' দাদা বড়ো বিপদে পড়ে গর্ভবতী বউ নিয়ে এই অচেনা জায়গায় এসে আশ্রয় নিয়েছি। সারাদিন অনাহারে বউয়ের প্রাণ যায় যায় অবস্থা। একমুঠো ভাতের ব্যবস্থা করতে পারবেন?'
যে নির্ভরতা বুড়ো,বুড়ি নিজের ছেলের কাছে চেয়েও পায়নি, সেটুকু প্রণয়, শাহিনুরের কাছে পেয়ে বড়োই শান্তি পেলেন। দু'হাত তুলে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রাণভরে দোয়াও করলেন ওদের জন্য।
আনমনেই হেসে ফেলল প্রণয়। কাঁধে চেপে রাখা গামছা দিয়ে ঘর্মাক্ত মুখমণ্ডল মুছলো। হাতে থাকা পলিথিনের ভেতরে গরু মাংসের তরকারির দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার হাঁটা ধরল।