পদ্মজা তাৎক্ষণিক জবাব দিতে পারলো না। সময় নিয়ে ধীরেসুস্থে বলল,'মরেনি বোধহয়। তবে বেশিক্ষণ এভাবে থাকলে মরে যাবে।'
পদ্মজার তরঙ্গহীন গলার স্বর ফরিনার ভয়ের মাত্রা বাড়িয়ে দিল। তিনি পদ্মজাকে আচমকা বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলেন।
মৃদুল এদিকওদিক দেখে বলল,'লিখন ভাই, চলো চইলা যাই।'
অসহনীয় যন্ত্রনায় লিখনের কপালে বিন্দু,বিন্দু ঘাম জমেছে। সেসবকে তোয়াক্কা করে সে বলল,'পদ্মজার খোঁজ নিতে হবে আগে।'
বিছানার উপর কাঁথা মোড়ানো ফরিনার দূর্বল দেহটা শুয়ে আছে। বিদ্যুত নেই। ঘরের এক কোণে লণ্ঠন জ্বলছে। ফরিনার চোখ বোজা। লতিফা পায়ে পায়ে হেঁটে এসে নিঃশব্দে ফরিনার শিয়রে দাঁড়াল। ক্ষীণস্বরে ডাকলো,'খালাম্মা ঘুমাইছেন?'
পদ্মজা অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো,'মানে,অন্যদের খুন করেছেন?'
আমির জবাব দিল না। পদ্মজা উত্তেজিত হয়ে পড়লো,'কাকে করেছেন? কয়জনকে করেছেন? আবদুল ভাইকে কি আপনি মেরেছিলেন?'
কি জঘন্য আমিরের ভাষা,চোখের দৃষ্টি,হুংকার! পদ্মজার গা রি রি করে উঠে। সে আমিরের দিকে রাম দা উঁচু করে বললো,'যারা যারা আছে সবাইকে ছেড়ে দিন। নয়তো...নয়তো আমি...আমি আপনাকে মেরে ফেলবো।'
শেষ কথাটি শুনে রাগে পদ্মজার কপালের চামড়া কুঁচকে যায়। তবে টু শব্দ করলো না। রিদওয়ান বলছে,'আমার এই বাড়ির প্রতি,এই পাতালঘরের প্রতি লোভ অনেক আগে থেকে। তবুও আমি সেসবের কিছু না চেয়ে আমিরের কাছে তোমাকে চেয়েছি। কতোটা পছন্দ করেছি ভাবো একবার? ভাবো পদ্মজা। একটু ভাবো।'
আমির পদ্মজার স্বরেই বললো,'পারবে না। আমার সাথে তুমি পারবে না। বিশ্বাস করো,গায়ের জোরে,বুদ্ধির খেলায় আমার সাথে পারবে এমন মানুষ জন্মিয়েছে সেটা আমি বিশ্বাস করি না। তবে কোনো অনুভূতি জন্মালেও জন্মাতে পারে।'
'নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারার স্বভাব আমার নেই।'
'বসে থাকতে,থাকতে আমার কোমরের হাড় ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে।'
'দুই-তিনদিন বসে থাকলে হাড় ক্ষয় হয় না।'
পদ্মজা হতাশ হয়ে বললো,''আমার যন্ত্রণা হয়। ঝিমঝিম করে পা।'
আমিরের কণ্ঠস্বর শুনে রাফেদ,মন্তু পিছনে তাকায়। পূর্ণাও তাকালো। সে আমিরের কণ্ঠস্বর শুনে অবাক হয়েছে। মৃদুল মাত্র ঘাটে প্রবেশ করেছে। তার কানেও আমিরের গলা এসেছে। চারটি চোখ হা করে আমিরের দিকে তাকিয়ে থাকে। আমির দ্রুত ট্রলার থেকে নেমে আসে।
আমির দ্রুত চোখ খুলে ফেলে। তার শরীর বেয়ে ঘাম ছুটছে। অস্থির,অস্থির লাগছে। বোতল থেকে পানি বের করে খেল।
তারপর বড় করে নিঃশ্বাস ছাড়লো। এক কোণে পরে থাকা শাড়িটা হাতে নিয়ে আগুন ধরিয়ে দিল। যতক্ষণ না পুরো শাড়িটা ছাই হয়েছে এক দৃষ্টে তাকিয়ে ছিল। ঠোঁট অদ্ভুতভাবে কাঁপছে। সে কী কাঁদতে চাইছে?