তোমাকে | মুন্নি আক্তার প্রিয়া | পর্ব – ৪০

রাতঃ১১টা
বিয়ের এলবাম নিয়ে বসে আছে পরী। প্রতিটা এলবামের পাতা উল্টেপাল্টে দেখছে। সবার হাসিমাখা মুখটা দেখছে। এলবামের অধিকাংশ ছবিই তুর্য আর পরীর। বুক ফেঁটে কান্না আসছে পরীর।
শ্বশুরবাড়ি থেকে এসেছে ঘণ্টাখানেক হবে। পরীকে বাসায় রেখে তুর্য যেন কোথায় গেছে। তুর্যর প্রতিটা কাজে পরীর মনে এখন সংশয়ের সৃষ্টি করে।
তুর্য আসে আরো ঘণ্টাখানেক পরে। চোখমুখের বিধ্বস্ত অবস্থা। ঘেমে শার্ট ভিজে আছে। শার্ট খুলে তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। পরী তখনো এলবাম হাতে বিছানার এক কোণায় বসে আছে। তুর্য গোসল করে ফিরে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে চুল ঝাড়ছে। পরী নির্লিপ্তি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তুর্যর দিকে। তুর্য আয়নার মধ্যেই পরীর দিকে তাকিয়ে বলে,
“এখনো ঘুমাওনি কেন?”
পরী নিশ্চুপ। তুর্য বলে,
“চলো ঘুমাব।”
পরী তবুও চুপ। তুর্য এবার পরীর হাত ধরে বলে,
“চলো ঘুমাব।”
পরী হাত ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে দেয়। টেবিলের ওপর এলবাম রেখে রক্তাক্ত চোখে তাকায়। চোখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে কিছুক্ষণ আগ পর্যন্তও কেঁদেছে। 
“কোথায় ছিলে তুমি?” জিজ্ঞেস করে পরী।
“একটু দরকার ছিল।”
পরী এবার চেঁচিয়ে বলে,
“কী দরকার? আমি জানতে চাই কী দরকার?”
“তুমি এমন ব্যবহার করছ কেন?”
“কেমন ব্যবহার আশা করিস তুই? আম্মু যখন তোকে বিয়ে করার কথা বলল তখন তুই কিছু বললি না কেন? কেন চুপ করে ছিলি তুই? তুইও চাস বিয়ে করতে তাই না? নিজের বাচ্চা চাই তোর!”
“শান্ত হও।”
“কী? শান্ত হব? কোন মুখে বলিস তুই এসব? আমার মনের অবস্থা বুঝতে পারছিস তুই? আমি পারছি না শান্ত হতে। পারছি না আমি।” বলে কেঁদে ফেলে পরী। পিছিয়ে যেতে যেতে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ায়। কাঁদতে কাঁদতে বলে,
“আমি তোমায় ছাড়া বাঁচব না তুর্য। তোমায় আমি অন্য কারো সাথে সহ্য করতে পারব না। অন্য কাউকে বিয়ে করার আগে তুমি আমায় মেরে ফেলো প্লিজ! নয়তো আমি নিজেই মরে যাব। তবুও আমি তোমায় অন্য কারো সাথে সহ্য করতে পারব না।”
একসময় ফ্লোরে বসে পরে পরী। এত সুখের সংসার নিমিষেই ঝড়ে ভেঙেচুড়ে যাচ্ছে। পরী তো কান্না করে নিজের কষ্টগুলো বলতে পারছে। কিন্তু তুর্য তো তাও পারছে না। বুকের দহন বুকেই জ্বলছে। তুর্য নিজেও যে খুব অসহায়। কাঁদছে কাঁদুক পরী! কিছু কষ্ট কমিয়ে নিক কান্নার মাধ্যমেই। তুর্য লাইট নিভিয়ে পরীর হাত ধরে উঠায়। কোলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়। পরী তখনো কাঁদতে কাঁদতে বলছে,
“আমায় ছেড়ে যেও না প্লিজ। আমি বাঁচব না তোমাকে ছাড়া।”
তুর্য কিছু বলে না। শুধু শক্ত করে পরীকে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে। অন্ধকারে খুব সহজেই তুর্যর পানিগুলো লুকিয়ে শুষে নেয় বালিশ।
.
.
সকালে ঘুম ভেঙে শুনে ড্রয়িংরুম হৈ চৈ করার শব্দ। তুর্য আর তাহমিনা বেগমের চিৎকার চেঁচামেচি শোনা যাচ্ছে। দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সকাল ১১টা বাজে। এতটা বেলা পর্যন্ত পরী ঘুমায় না কখনো। মাঝরাতে একবার তুর্য পরীকে ঘুম থেকে তুলেছিল। জোর করে ভাত খাইয়ে একটা ওষুধ খাইয়ে দিয়েছিল। সম্ভবত সেটা ঘুমেরই ওষুধ ছিল। তাই বোধ হয় এত বেলা পর্যন্ত ঘুমিয়েছে। কিন্তু বাহির থেকে চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ কেন আসছে? পরী বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। গুটি গুটি পায়ে দরজার কাছে গিয়ে পর্দার আড়ালে দাঁড়ায়। শুধু তুর্যর বাবা-মা-ই নয় এখানে পরীর বাবা-মা, ভাই-ভাবি, তিথি, প্রান্তও আছে। বাচ্চারা এক সাইডে খেলছে। দিশান সামলাচ্ছে ওদের। শ্বশুরের ভাবমূর্তি ভালো নয়। প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত তিনি তুর্যর ওপর। পরীকে দেখে থমথমে হয়ে যায় পুরো ড্রয়িংরুম। তাহমিনা বেগম পরীর সামনে এসে বলেন,
“দয়া করে বলবে কী যাদু করেছ আমার ছেলেকে তুমি?”
“একটু ভদ্রভাবে কথা বলেন আন্টি।” পরীর কাছে এগিয়ে এসে বলে প্রিয়ম। উত্তরে পরী বলে,
“ভাইয়া চুপ করো। আমিই শুনি তাদের সমস্যাটা কী! উত্তরও না হয় আমিই দেবো।”
এরপর শ্বাশুরীর দিকে তাকিয়ে বলে,
“কী চাচ্ছেন আপনি?”
“তুমি জানো না আমি কী চাই?”
“তুর্য আরেকটা বিয়ে করুক এটাই তো?”
“হ্যাঁ, এটাই চাই।”
“তুর্য কী চায়?”
“কী চাইবে? ওর মাথায় তো তোমার ভূত। নিশ্চয়ই কোনো জাদু করেছ।”
তুর্য এবার রেগে বলে,
“এনাফ মা! তোমার যা বলার তুমি আমায় বলো।”
“আর কত বলব? আর কত বোঝাব?”
“আমি তোমাদের সবাইকে ডেকেছি কিছু কথা বলার জন্য। আমি বিয়ে করব না এই সিদ্ধান্ত ফাইনাল।”
“পাগল হয়ে গেছিস তুই। সত্যিই পাগল হয়ে গেছিস।”
“পাগল তো আমি আরো আগেই হয়েছি।  যেদিন থেকে পরীর ভালোবাসা পেয়েছি। একটা কথা বলো তো মা, আজকে পরীর এই সমস্যাটা না হয়ে যদি আমার হতো? যদি আমি অক্ষম হতাম তাহলে তুমি কি পরীকে বলতে আরেকটা বিয়ে করতে? বা যদি পরী আমার জীবন থেকে চলে যেতে চাইত তাহলে তুমি কি যেতে দিতে? দিতে না তখন। তখন ওর হাতে-পায়ে ধরে হলেও ও’কে তুমি আটকাতে। সবচেয়ে বড় কথাটা কি জানো? পরী কখনো এমনটা করতোই না। আমি পরীকে খুব কাছ থেকে দেখেছি মা। আমি ওর ভালোবাসা খুব কাছ থেকে উপলব্ধি করেছি। যেটা তোমরা কখনো পারোনি আর পারবেও না। একবার ভালোবাসা দিয়ে ওর ভাসা ভাসা চোখগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখো। তাহলেই দেখতে পাবে আমার জন্য ওর মনে ভালোবাসার গভীরতা।”
একটু থেমে আবার বলে,
“আমি বাবা ডাক শুনতে না পেরে যতটা কষ্ট পাই পরীও ঠিক ততটাই পায়। আমার যেমন বাবা ডাক শুনতে ইচ্ছে করে পরীরও তেমন মা ডাক শুনতে ইচ্ছে হয়। বাচ্চা জন্মদান চাইলেই হয় না। আমাদের হাতেও নেই এটা। আল্লাহ্ আমাদের এত সুখ দিয়েছেন আমরা তাতেই খুশি। একটা বাচ্চার ওপর নির্ভর করে না আমার ভালোবাসা। আমার জীবনে পরীর গুরুত্ব আগে! বাচ্চার গুরুত্ব নয়।”
সবাই চুপ। রেহেনা বেগম আর পরী কাঁদছে। এবার প্রান্ত বলে,
“মা অপরাধ নেবেন না। একটা কথা বলি। পরীর জায়গায় কখনো কি আপনি একবারও তিথিকে দাঁড় করিয়েছেন? আমার মনে হয় না। তাই প্লিজ একবার, শুধু একবার আপনি পরীর জায়গায় তিথিকে দাঁড় করান। আপনি তুর্যকে এখন যেমন ফোর্স করছেন আরেকটা বিয়ে করার জন্য তখন আমার মা-ও এইভাবে যদি আমায় বিয়ের জন্য ফোর্স করত তখন আপনার মেয়ের কেমন লাগত? মেয়ের কষ্ট সহ্য করতে পারতেন আপনারা? এর উত্তর খুবই সহজ। আমরা নিজেদের আপনজনের এক তিল পরিমাণ কষ্ট, ক্ষতি সহ্য করতে নারাজ। তাহলে অন্যের মেয়ের বেলায় এই নিয়ম কেন নয়? পরীরও পরিবার আছে। যেই পরিবারে সকলের চোখের মণি পরী। আর সেই মধ্যমণিই যখন প্রতিটা মুহূর্ত কেঁদে বুক ভাসায় তখন তাদের মনে কী চলে আপনি বোঝেন? তুর্য এবং পরী ওদের দুজনের ভালোবাসার প্রতি আপনার বিন্দুমাত্র ধারণা নেই। আমি নিজেও পরীকে পছন্দ করতাম। আর এটা নিয়েই মূলত পরীর ওপর আপনার এত রাগ। আমি কিন্তু পরীর জীবন থেকে সরে গিয়েছিলাম। এমনি এমনি যাইনি। পরীর চোখে আমি তুর্যর জন্য এক সমুদ্র ভালোবাসা দেখেই সরে গেছিলাম। আপনি হীরে কে অবজ্ঞা করছেন। তুর্য ভুল মানুষকে জীবনসঙ্গী করেনি।”
পরীর শ্বশুর নড়েচড়ে দাঁড়ান। হয়তো সত্যিই তিনি পরীর জায়গায় তিথিকে কল্পনা করেছেন। তাহমিনা বেগমের ভাবমূর্তি বোঝা যাচ্ছে না। তুর্য বলে,
“আমার ফাইনাল ডিসিশন আমি আজ জানিয়ে দেবো। আমার জীবনে পরীই দ্বিতীয় এবং শেষ। আমার শেষ ভালোবাসা, আমার স্ত্রী পরী। আমার একমাত্র স্ত্রী পরী-ই থাকবে। আমি দ্বিতীয় আর কোনো বিয়ে করব না। আজকের পর থেকে এই টপিকে আমি আর কোনো কথা বলব না। তুমি যে বলো, আমি বিয়ে না করলে তুমি নিজেকে শেষ করে দেবে? আজ উত্তরটা দিচ্ছি। আমি পরীকে ছাড়তে পারব না। তোমার শেষও সহ্য করতে পারব না। আমি নিজেই নিজেকে শেষ করে দেবো। তুমি মা হয়ে সেটা সহ্য করতে পারবে?”
তাহমিনা বেগম তৎক্ষণাৎ বলেন,
“এটাই তাহলে তোর সিদ্ধান্ত?”
“হ্যাঁ।”
“তোর যা ইচ্ছে হয় কর।”
তুর্য এবার কাকে যেন ফোন করে। মিনিট দুয়েকের মধ্যেই দুজন মহিলা দুটো বাচ্চা কোলে করে নিয়ে আসে। সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। মহিলা দুজন দুটো বাচ্চাকেই তুর্যর কোলে দেয়। খুব সাবধানী হয়ে কোলে নেয় বাচ্চা দুটোকে। মুখে আঙুল পুরে চুষছে। একটু পরপর হাসছে। বয়স বড়জোর এক মাস হবে। আল্লাহ্ যেন সব সৌন্দর্য দিয়ে সৃষ্টি করেছে। তুর্য বাচ্চা দুটোকে নিয়ে পরীর পাশে দাঁড়ায়। সবার উদ্দেশ্যে বলে,
“আজ থেকে আমরা নিঃসন্তান নই। আমার আর পরীর দুটো বাচ্চা আজ।”
পরী অবাকের শেষ সীমানায় পৌঁছে গেছে। অপলক চোখে তাকিয়ে আছে তুর্যর দিকে। উপস্থিত সকলেই হতবিহ্বহল হয়ে একে অপরের দিকে তাকাচ্ছে। তুর্য ভাসা ভাসা চোখে পরীর দিকে তাকিয়ে বলে,
“এতদিন সবাই বলতো আমরা নিঃসন্তান। আজ থেকে আমরা যমজ দুই সন্তানের বাবা-মা। ওদের মেনে নিতে তোমার কোনো সমস্যা নেই তো?”
“এই বাচ্চা দুটো কোথায় পেয়েছিস?” জিজ্ঞেস করেন তুর্যর বাবা। তুর্য বলে,
“দত্তক নিয়েছি।”
“কীহ্?”
“ঠিকই শুনেছ। দত্তক নিয়েছি। ওদের বাবা-মা ছিল না এতদিন। আর আমাদের সন্তান ছিল না। আজ থেকে আমরা ওদের বাবা-মা আর ওরা আমাদের সন্তান। হয়ে গেলাম না একে অপরের পরিপূরক?”
“তোর যা ইচ্ছে তুই তাই করে ফেলছিস?”
“হ্যাঁ, করছি। দু’দিনের এই দুনিয়ায় আজ আছি তো কাল নেই। যেটাতে খুশি থাকব সেটাই তো করা উচিত। শুধু পাপ কোনো কাজ না করলেই হলো।”
তুর্যর বাবা-মা রাগ দেখিয়ে বাড়ি থেকে চলে যায়। তুর্য সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ করে না। সবার চোখেই পানি এখন। এত ভালোও কেউ কাউকে বাসতে পারে? তুর্য পরীকে বলে,
“তোমার বাচ্চাদের কোলে নেবে না?”
পরী শব্দ করে কেঁদে ফেলে। বাচ্চাদের জন্য তুর্যকে জড়িয়ে ধরতে পারেনি। কেঁদেছে ইচ্ছেমতো। তুর্য বলে,
“আর কোনো কান্না নয়। কোনোদিন নয়। আমাদের জীবন এখন থেকে সুখের হবে। জন্ম দিয়েও সবাই বাবা-মা হতে পারে না। আবার অনেকেই জন্ম না দিয়েও বাবা-মা হতে পারে। তোমার সমস্যা নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। আমার কাছে তুমিই গুরুত্বপূর্ণ। আমার শুধু ‘তোমাকে’ই চাই।”
পরী বাচ্চা দুটোকে কোলে নেয়। গালে, মুখে অজস্র চুমু এঁকে দেয়। পরীর পাশ থেকে বাচ্চাদের ধরে আছে রেহেনা বেগম। পরী সামলাতে পারবে না একসাথে সেটা তিনি বুঝেছেন। দিশান দৌঁড়ে এসেছে,
“দেখি, দেখি আমার ভাতিজা আর ভাতিজিকে। আমি তো চাচা হয়ে গেছি গো ভাবি।”
প্রিয়ম আর পরীর বাবা তুর্যকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে। তাদের বোন, মেয়ে একদম সঠিক মানুষটিকেই বেছে নিয়েছিল।
তিথি, প্রান্ত, প্রিয়ম, রোজ, পরীর বাবা-মা চারদিক থেকে, পরী না! পরী নয়। বাচ্চার মা আর বাচ্চাদের ঘিরে ধরেছে। সকলেই খুশি। বাচ্চাদের সাথে কথা বলছে। পরীর চোখে পানি আর ঠোঁটে হাসি। সত্যিকারের হাসিটা এতদিন লুকিয়ে ছিল সবার আড়ালে। তুর্য দূর থেকে দাঁড়িয়ে পরীর হাসিমাখা মুখটা দেখছে। বুকের ভেতর জমে থাকা সব কষ্ট দূর হয়ে গেছে তুর্যর পরীর মুখে হাসি দেখে।
প্রান্ত আর প্রিয়ম, পরীর বাবা বাচ্চাদের জন্য শপিং করতে গেছে। বাকি সবাই কাড়াকাড়ি করছে কোলে নেওয়ার জন্য। ছোটদের আনন্দ আরো বেশি। পরীর চোখ খোঁজে তুর্যকে। তুর্য কোথায় গেল? মা, তিথি আর ভাবির কাছে বাবুদের দিয়ে পরী তুর্যকে খোঁজে। তুর্য বারান্দায়। পরীর আসার শব্দ পেয়ে চোখ মুছে। সবার সামনে থেকে লুকিয়ে কাঁদার জন্যই একা এখানে দাঁড়িয়ে। কষ্টের নয়, আফসোস নয়। আজ ভালোবাসা সম্পূর্ণ পরিপূর্ণ হওয়ার আনন্দের কান্না।
পরী গিয়ে তুর্যর পা পেঁচিয়ে ধরে বলে,
“আমায় ক্ষমা করে দিও। আমি তোমার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি। সন্দেহ করেছি। কী করতাম বলো? তোমাকে হারানোর ভয়ে যে আমি কুড়ে কুড়ে মরতাম।”
পরীকে উঠিয়ে দাঁড় করায় তুর্য। পরীর দু’গালে হাত রেখে গালে স্লাইড করতে করতে বলে,
“তোমার কোনো দোষ নেই জান। এই পরিস্থিতিতে তোমার এমন ব্যবহার করাটাই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু সব সমস্যা আজ শেষ। আর কোনো ভয় নেই।”
“তুমি খুশি তো?”
“আমি ভীষণ খুশি। দুনিয়ার বুকে আমি সবচেয়ে খুশি একজন স্বামী। খুশি একজন বাবা।”
“আর আমি ভাগ্যবতী নারী যে তোমায় স্বামী হিসেবে পেয়েছি।”
“তুমি যখন রাতে আমার বুকে মাথা রেখে কাঁদছিলে তখন আমি মনে মনে বলছিলাম, ‘আজই শেষ কান্না করে নাও। এই কষ্ট তোমায় আর কখনো পেতে হবে না। আমরা সুখি হব। বাচ্চা নিয়েই সুখি হব। পুরো দুনিয়াকে দেখিয়ে দেব সব ভালোবাসা মিথ্যে নয়’। আমার ভালোবাসা ঠুনকো নয় পরী। আমি ভালোবাসি তোমাকে।”
“এত কেন ভালোবাসো আমার সমস্যা জানা সত্ত্বেও? পরিবারকে কষ্ট দিতে ভাবোনি!”
তুর্য শক্ত করে পরীকে জড়িয়ে ধরে।
“আমার অন্য কাউকে চাই না। বাচ্চার জন্যও নয়। ভালোবাসার জন্যও নয়। তুমি আমার জীবনের দীপ্ত শিখা। তোমার জন্য আমি সব সম্পর্ক ছেড়ে আসতে পারি। কিন্তু তবুও আমি তোমায় ছাড়তে পারব না। আমার শুধু তোমাকেই চাই ‘তোমাকে‘।
“ভালোবাসি নিজের থেকেও বেশি। অনন্তকালেও আমার শুধু চাই ‘তোমাকে’ই।”
ভালো থাকার জন্য অনেক টাকা, সম্পত্তি, বাচ্চার প্রয়োজন নেই। দরকার দুজন দুজনার প্রতি বিশ্বাস আর সীমাহীন ভালোবাসা। দুজন থেকে হওয়া আজ চারজনের জন্য দোয়া করবেন। পৃথিবীতে এমন তুর্য-পরী জুটি যত আছে সবাই সুখে থাকুক, ভালো থাকুক।
(সমাপ্ত)

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।