তোমাকে | মুন্নি আক্তার প্রিয়া | পর্ব – ১৭

পরীর চোখে ঘুম নেই। বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ। ব্যালকোনির ফাঁকা দিয়ে চাঁদের আলো এসে মুখে পড়ছে। সেই আলোতে মুখের ভাব ও চোখের চাহনী একদম স্পষ্ট। কিছুটা দূরের রাস্তায় কুকুরের ঘেউঘেউ শব্দ শোনা যাচ্ছে। গাড়ির হর্নও শোনা যাচ্ছে। তবে সেটা দিনের তুলনায় কম। আশপাশ থেকে কানে আসছে ঝিঝি পোকার ডাক। ক্ষণে ক্ষণে কিছু শীতল হাওয়া এসে অবাধ্য চুলগুলোকে এলোমেলো করে দিয়ে যাচ্ছে। এসবের কিছুই পরীর মনকে আনন্দিত করতে পারছে না। মনে জেঁকে বসে আছে অদূর চিন্তা। যার উত্তরগুলো জানা কিন্তু চিন্তা দূর করা অসম্ভব প্রায়।

পরী চোখ বন্ধ করে লম্বা কয়েকটা শ্বাস নিয়ে ব্যালকোনিতে রাখা চেয়ারটায় বসে পড়ে। ব্যালকোনির সবার নিচের গ্রিলে হাত রেখে তাতে মাথা ভর দিয়ে তাকিয়ে থাকে দূরের অন্ধকারে। সময়টায় অন্তত এতটুকু বুঝতে পারছে হুটহাট নেওয়া সিদ্ধান্তটা কারো জন্যই ভালো হতো না। না প্রান্ত আর না পরী! তাছাড়া যাকে কখনো ভালোইবাসিনি তাকে নিয়ে কীভাবে সংসার করা যায়? ভালো না বাসলে যে বিয়ে করা যায় না, সংসার করা যায় না স্পষ্টত এটাও বুঝাইনি আমি। এরেঞ্জ ম্যারেজে তো দুটো মানুষ দুজনকে না চিনে, না জেনেই বিয়ে করছে। সংসার করছে। তারা কি একসাথে থাকছে না? থাকছে। তবে এখানেও রয়েছে একটা তফাৎ, একটা কিন্তু। আর সেটা হলো, এরেঞ্জ ম্যারেজে কেউ রাগের বসে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয় না। যেটা আমি নিয়েছিলাম। তাছাড়া তুর্য আর যাই করুক, ভালো তো আমি ওকেই বাসি। এ কথা তো আর অস্বীকার করার সাধ্যি আমার নেই।
মনে মনে এরকম হাজারটা হিসাব-নিকাশ কষছিল পরী। কিন্তু কোনোটারই দিগ-দিগান্ত খুঁজে পাচ্ছে না। কখনো কখনো তুর্যর কথা ভেবে বুকে অসহনীয় ব্যথা হচ্ছে। হারিয়ে ফেলার ভয়ে যেমন কষ্ট হয় ঠিক তেমন। আচ্ছা এক তরফায় ভালোবাসায়ও এত কষ্ট কেন? 
“পরী!”
ডাক শুনে পরী বারান্দার দরজার মুখে তাকায়। রেহেনা বেগম দাঁড়িয়ে আছেন। পরী সোজা হয়ে বসে বলে,
“কিছু বলবে?”
“তোর রুমের লাইট অন দেখে আসলাম। দরজাও খুলে রেখেছিস দেখি।”
“তাতে কী? চোর তো আর আসতে পারবে না।”
রেহেনা বেগম মৃদু হেসে পরীর দিকে এগিয়ে আসেন। বলেন,
“এত রাত হয়েছে ঘুমাসনি কেন?”
“ঘুম আসছে না মা।”
“কী নিয়ে এত ভাবছিস?”
“কী না বলো কাকে কাকে নিয়ে ভাবছি।”
এবারও রেহেনা বেগম হেসে বলেন,
“আচ্ছা কাকে কাকে নিয়ে ভাবছিস?”
পরী এবার বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। মায়ের হাত ধরে টেনে চেয়ারে বসিয়ে দেয়। তারপর নিজে ফ্লোরে বসে মায়ের কোলে মাথা রেখে। এখন শান্তি লাগছে। রেহেনা বেগমও পরম যত্নে পরীর মাথায় বিলি কেটে দেয়। শুনশান নিরবতা চলছে মা-মেয়ের মধ্যে। কথার প্রসঙ্গ পরীই তোলে। ওভাবেই মায়ের কোলে মাথা রেখে বলে,
“আচ্ছা মা এক তরফা ভালোবাসায় এত কষ্ট কেন? আমি তো শুনেছিলাম এক তরফা ভালোবাসাতেই আনন্দ বেশি। এখানে কোনো কষ্ট নেই। যেভাবে ইচ্ছে, যখন ইচ্ছে মানুষটাকে নিজের ভেবে কল্পনা করা যায়। তাহলে আমার বেলায় নিয়ম পাল্টে যাচ্ছে কেন?”
“নিয়ম পাল্টায়নি। নিয়ম একই আছে। এক তরফা ভালোবাসা ততদিনই সুন্দর ও আনন্দের যতদিন না অপর মানুষটা তোর ভালোবাসার কথা জানতে পারবে। হয়তো তোর আচার-আচরণে সে বুঝে যাবে তুই তাকে পছন্দ করিস বা ভালোবাসিস। কিন্তু যতক্ষণ না তুই সেটা নিজের মুখে স্বীকার করবি ততক্ষণ সে নিজেও সাহস করে বলতে পারবে না, ‘আমি জানি তুমি আমায় ভালোবাসো।’ কিন্তু তুই যখনই তাকে জানিয়ে দিবি তুই তাকে ভালোবাসিস ঠিক তখন থেকেই নিয়ম পাল্টাতে শুরু করবে। তোর মন ততক্ষণে বারবার ভালোবাসি বলার অনুমতি পেয়ে গেছে। তখন তোর মন আর চাইবে না আমি শুধু মানুষটাকে নিয়ে কল্পনাই করি। তখন মন চাইবে, এবার বরং তাকে গিয়েই বলি ভালোবাসি।
তুই তাকে ভালোবাসিস বলে সেও তোকে ভালোবাসবে বা তোর প্রতি তারও একই ফিলিংস থাকবে এটাও তো হয় না। যখন তুই জানতে পারবি সে তোকে ভালোবাসে না ঠিক তখন থেকেই এক তরফার ভালোবাসার অনুভূতি কষ্টে পরিণত হবে।”
পরী এবার মাথা তুলে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,
“তাহলে কি ভালোবাসার কথা স্বীকার করা অন্যায়? অপরাধ?”
“কাউকে ভালোবাসাও অন্যায় না আর তা স্বীকার করাও অন্যায় না। অন্যায় হচ্ছে জোর করে ভালোবাসা আদায় করতে চাওয়া। যেটা কখনোই হয় না। আল্লাহ্ যদি চেয়ে থাকেন, তাহলে তোর প্রতি তার ভালোবাসা এমনিতেই জন্ম নেবে। জোর করার প্রয়োজন পড়বে না।
আমার মতে, কাউকে ভালোবাসলে সেটা তাকে জানিয়ে দেওয়া উচিত। এতে মন হালকা হয়। শুধু তাকে পেলেই জানাতে পারব আর না পেলে মনেই পুষে রাখব এটা কেমন নিয়ম? পাই বা না পাই, ভালোবাসি বলতে তো আপত্তি নেই।”
পরী মুচকি হেসে বলে,
“তুমি কি প্রেম বিশেষজ্ঞ মা?”
রেহেনা বেগম পরীর দু গাল আলতো করে চেপে ধরে বলেন,
“না। শুধু আমার মেয়ের মনের ডাক্তার। আমার মেয়ে যেন কখনো কোনো অন্যায় না করে, ভুল না করে এজন্যই আমি মেয়ের মন বিশেষজ্ঞ হয়েছি। বুঝেছিস?”
“হুম। বুঝেছি।”
“দুনিয়ার নিয়ম খুব অদ্ভুত জানিস পরী?”
পরী জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
“কেন মা?”
“এইযে তুই তুর্যকে ভালোবাসিস। অথচ তুর্য ভালোবাসে অন্য কাউকে। আবার প্রান্ত তোকে ভালোবাসে। তুই বাসিস তুর্যকে। প্রান্তকে আবার তিথি ভালোবাসে। প্রান্ত বাসে তোকে।”
পরী ফিক করে হেসে দিয়ে বলে,
“কান্নাও পায়। হাসিও আসে। কেমন গোলমেলে হয়ে গেল সব।”
রেহেনা বেগম কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলেন,
“পরিস্থিতি হিসাব করতে গেলে সবাই সবার জায়গায় ঠিক।”
“কিন্তু তিথির ভালোবাসা নিয়ে আমি যথেষ্ট সন্দিহান মা। এটা কেমন ভালোবাসা তুমিই বলো?”
“হারিয়ে ফেলার ভয় রে পাগলী। তুই একবার ভেবে দেখ, তুর্যর ভুলে তুই কতটা ভেঙে পড়েছিলি। আর সেখানে তিথি ছোট থেকে প্রান্তকে দেখছে। ভালোবাসে। সেখানে যখন জানতে পারে প্রান্ত অন্য কাউকে ভালোবাসে তখন কতটা কষ্ট হতে পারে? সবার ভালোবাসা, রাগ প্রকাশের ধরণ এক রকম হয় না। তিথি একটু সাইকো টাইপ সেটা তো বুঝতেই পেরেছিস। আমি তিথির কার্যকলাপকে সাপোর্ট করছি না। তিথি চাইলে তোর সাথে আলাপ-আলাচোনার মাধ্যমে সব ক্লিয়ার করতে পারত। কিন্তু রাগের বশবর্তী হয়ে সেটা না করে ঝামেলা করেছে। হয়তো এসব এতদূরও এগোতা না যদি ওর মা ওকে সাপোর্ট না করতো। ওর মায়ের উচিত ছিল ওকে সবটা বোঝানো। কিন্তু উনি তা না করে মেয়ের চেয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করেছেন। একটা মেয়ের জীবনে মায়ের অবদান অনেক বেশি। আদর্শ মায়ের আদর্শ শিক্ষাতেই সন্তান আদর্শ হয়।”
“মা, তাহলে তুর্য আর তিথির শিক্ষা আলাদা বলতে চাইছ?”
“হতেই পারে। তুর্য ওর বাবার মতোই হয়েছে। বাবার শিক্ষায় শিক্ষিত। যেমনটা তোর ভাই।”
পরী লম্বা দম নিয়ে বলে,
“হুম। এসব বলে তো আর লাভ নেই এখন। তবে ফাইনাল ডিসিশন নিয়ে নিয়েছি।”
“কী?”
“কোনো বিয়ে-টিয়েতে এখনই জড়াব না। আমি আগে পড়াশোনা করব।আর আমি চাই প্রান্তর থেকে দূরে সরতে।”
“প্রান্তর থেকে কেন?”
“এতে ওর টান আমার প্রতি কমবে। আমাকে যতই দেখবে হয়তো মায়ায় পড়ে যাবে। আমি চাই ও আগের মতো তিথিকে সময় দিক। তিথিকে বুঝুক। ওর ভালোবাসা বুঝুক।”
রেহেনা বেগম সরু চোখে পরীর দিকে তাকিয়ে বলে,
“আর তুর্য?”
পরী মেকি হেসে বলে,
“তুর্যর ভূতও মাথা থেকে নামিয়ে ফেলব।”
“পারবি?”
“পারা না পারা তো ফ্যাক্ট নয় মা। চেষ্টা তো করতে হবে।”
“বেশি কিছু বলব না। শুধু আল্লাহ্’র কাছে চাইব, তোর মুখের হাসি যেন আল্লাহ্ কেড়ে না নেন।”
মায়ের কথার প্রতুত্তরে মিষ্টি হাসে পরী। রেহেনা বেগম নিজে ওঠার সাথে সাথে পরীকেও ধরে তোলেন,
“অনেক রাত হয়েছে। এখন চুপচাপ ঘুমাবি।”
————————
সকালে ঘুম থেকে ওঠে ফ্রেশ হয়ে মেহুর সাথে কলেজের জন্য বেরিয়ে পড়ে পরী। বাস স্টপেজে গিয়ে মেহুর বয়ফ্রেন্ড  সাগরের সাথে দেখা হয়ে যায়। এতক্ষণ হাঁটতে হাঁটতে মেহু দুজনের গল্পই করছিল। রাতে নাকি কী একটা কথা নিয়ে রাগারাগি হয়েছিল। তারপর মেহু রাগে ফোন অফ করে রেখেছিল। এজন্যই হয়তো এখন সময় ধরে এখানে এসে পড়েছে মেহুর রাগ ভাঙাতে। মেহু সাগরকে দেখেই অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে। রাগে ফেঁটে পড়ার মতো অবস্থা। সাগর বাইক থেকে নেমে ওদের কাছে গিয়ে বলে,
“ঐপাশে কোন ছেলেরে দেখো?”
মেহু চোখ গরম করে তাকিয়ে বলে,
“সবাইরে তোমার মতো ভাববা না একদম।”
“আচ্ছা ভাবব না। এখন চলো।”
“কোথায় যাব?”
“ঘুরতে।”
“কোত্থাও যাব না আমি তোমার সাথে।”
“আচ্ছা তাহলে চলো কলেজে পৌঁছে দেই।”
“না মানে না।”
দুজনের খুনসুটি, ঝগড়া দেখে পরী মিটিমিটি হাসছে। সম্পর্ক তো এমনই দুষ্টুমিষ্টি হওয়া চাই। যেখানে একজন রাগ করলে অপরজন ইগো নিয়ে বসে না থেকে ভালোবেসে রাগ ভাঙাবে। সাগর হতাশ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর করুণ চোখে তাকায় পরীর দিকে। পরীর সাগরের চোখের ভাষা বুঝতে পেরে মেহনুবাকে বলে,
“বেচারা এত কষ্ট করে আসলো এখানে। যা না ওর সাথে।”
“একদম ওর সাফাই গাইবি না তুই।”
“আচ্ছা ঠিকাছে। তবুও যা। কলেজ পর্যন্ত যা। প্লিজ লক্ষী সোনা, টিয়া জান!”
“হইছে থাম! কী ঘুষ দিছে তোরে?”
পরী হেসে বলে,
“তুই রাজি হলেই তো নিতে পারব। যা না প্লিজ।”
মেহু একটু ভাব নিয়ে বলে,
“ঠিকাছে। তুই বললি বলে রাজি হলাম।”
বাইক স্টার্ট দেওয়ার আগ মুহূর্তে সাগর পরীকে বলে,
“ওর প্রেজেন্ট’টা দিয়ে দিও পরী। আজকে আর ওকে কলেজে যেতে দেব না।”
মেহু কিছু বলার আগেই সাগর বাইক স্টার্ট দেয়। চোখের পলকেই বাইকটা দূরে চলে যায়। তবে চোখে পড়ে সাগরের পিঠে দেওয়া মেহনুবার কিল-ঘুষি। আর তা দেখেই পরী আপনমনে হেসে ওঠে। দুজনের ঝগড়া দেখতে গিয়ে অনেকগুলো বাস মিস করে ফেলেছে। আর দেরি করা চলবে না। তাহলে লেট হয়ে যাবে। পরী একবার হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ডানদিকের রাস্তায় উঁকি দিয়ে তাকায় বাস আসছে নাকি তা দেখার জন্য। তখনই পাশ থেকে কেউ একজন পরীর কাঁধে হাত রাখে। পরী চমকে তাকায় বাম দিকে। রিনিকে দেখে খুব বেশিই অবাক হয়। রিনির পাশেই দাঁড়ানো একজন সুদর্শন পুরুষ। রিনি হাসিহাসি মুখে বলে,
“আমায় চিনতে পেরেছ?”
পরীর ধারণা অনুযায়ী রিনির এত ভালো ব্যবহার করার কথা নয় পরীর সাথে। যেহেতু পরীকে নিয়েই তুর্যর সাথে ঝামেলা সেহেতু এত ভালো ব্যবহার দেখে বেশ ঘাবড়েই গেল পরী। শুধু চোখ দুটো ছোট ছোট করে রিনির দিকে তাকিয়ে থাকে। ছোট্ট উত্তরে বলে,
“হু।”
“কলেজে যাচ্ছো?”
“হ্যাঁ।”
রিনি ভ্যানিটিব্যাগ থেকে নীল রঙের একটি সুন্দর কার্ড বের করে পরীর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
“এই নাও আমার বিয়ের কার্ড। এইযে আমার পাশে দাঁড়ানো ওকে দেখছ। ওই আমার হাবি। সিয়াম। কয়েকজন বন্ধু বাদ পড়েছিল ওদেরই ইনভাইটেশন কার্ড দিতে যাচ্ছিলাম। পথে তোমায় দেখলাম ভাবলাম তোমায়ও দাওয়াত দিয়ে যাই। আজ সন্ধ্যায় গায়ে হলুদ। আসবে কিন্তু তুমি। পারলে সাথে করে তুর্যকেও নিয়ে এসো কেমন।”
পরী চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। কতটা নির্দ্বিধায় কথাগুলো বলল রিনি। সদ্য ব্রেকাপ হওয়া একটা মেয়ে নিজের বিয়ে নিয়ে এতবেশি সিরিয়াস ও আনন্দিত! পরী মলিনমুখে বলে,
“আপু আপনি তুর্যকে ভুল বুঝেছেন। ওর সাথে কিন্তু সত্যিই আমার কোনো সম্পর্ক নেই। সব আবার ঠিক করে নিন প্লিজ।”
রিনি পরীর কাঁধে হাত দিয়ে বলে,
“কিছুই ঠিক করার নেই। আসলে আমাদেরই বনিবনা হচ্ছিল না। বিশেষ করে আমার। ওর আর আমার চয়েস এক না। আমার যা পছন্দ তা ওর পছন্দ নয়। যেখানে বন্ডিংই স্ট্রং না সেখানে সম্পর্ক টেকানো কঠিন। তবে তুর্য খুব ভালো ছেলে এটা আমায় মানতেই হবে।”
কথাগুলো বলতে বলতে একই কার্ড আরেকটা বের করে পরীকে দিয়ে বলে,
“এটা তুর্যকে দিয়ে দিও। আসি।”
পরীকে আর কিছুই বলার সুযোগ দিল না রিনি। হবু বর সিয়ামের হাত ধরে তাদের গাড়ির কাছে এগিয়ে গেল। পরী কার্ডের ওপর লেখা তুর্যর নামটার ওপর একবার হাত বুলাল। কী জানি এক কষ্টে বুকটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।
“তোমার ক্লাস তো শুরু হয়ে গেছে। এখনো কলেজে যাওনি কেন?”
পরী ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকায়। তুর্য দাঁড়ানো। কী অদ্ভুত! একটার পর একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে নাকি আজ! তুর্যর মুখটা রূক্ষ, শুকনো ও মলিন লাগছে। চুলগুলো এলোমেলো। পরীর খুব ইচ্ছে করছে হাত দিয়ে চুলগুলো একবার ঠিক করে দিতে। কিন্তু এমন অধিকার পরীর নেই। পরী হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে আসলেই ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। আজকে প্রথম ক্লাসটা তাহলে মিস হয়েই গেল। পরী কোনো কথা না বলে কার্ডটা তুর্যর দিকে এগিয়ে দিল। তুর্য কার্ড না নিয়েই বলল,
“তাহলে প্রান্তকে বিয়ে করছো তুমি?”
এবার পরী তুর্যর মুখের দিকে তাকায়। রাগ নিয়ে বলে,
“আগে তো দেখেন কার বিয়ের কার্ড!”
তুর্য এবার কার্ডটা নেয়। আর ভালোমতো দেখে। বুকচিরে গোপনে একটা দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে। তুর্যকে চুপ থাকতে দেখে পরী নিজেই বলে,
“আপনি আসার একটু আগেই রিনি আপু এখানে এসেছিল। তখন আমাকে আর আপনাকে ইনভাইটেশন কার্ড দিয়ে গেছে। বলেছে আপনাকে যেন নিয়ে যাই।”
তুর্য ব্যাঙ্গ করে হাসতে হাসতে বলে,
“শেষ দেখার দিন আমায়ও বলেছিল, ‘পরীকে নিয়ে সুখে থেকো। আর আমার বিয়েতে এসো। পেটপুরে খাওয়াব।’ আমার কোনো কথাই শোনেনি। কত ইজিলি কথাগুলো বলেই চলে গেল।”
তুর্য উচ্চস্বরে হাসে। পরী বুঝতে পারে হাসির পেছনে থাকা কষ্টটাকে। তুর্য কার্ডটা ছিঁড়তে যাবে তখন পরী তুর্যর হাত ধরে ফেলে। তুর্য পরীর মুখের দিকে তাকায়। রাগে পরীর চোখমুখ শক্ত হয়ে আছে। কঠিন বর্ণ ধারণ করেছে মায়াবী চোখ দুটো। পরী বলে,
“ছিঁড়বেন না কার্ড। আমরা একসাথেই রিনি আপুর বিয়েতে যাব। শুধু বিয়েতেই নয়। আজ গায়ে হলুদেও যাব আর পেটপুরেই খাব।”

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।