সতর্কতা: এই গল্পটির মধ্যে কিছুটা প্রাপ্তবয়স্ক কন্টেন্ট এর দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে, যদিও সরাসরি কোনো অশ্লীলতা নেই তবুও নিজ দায়িত্বে গল্পটি পড়ার অনুরোধ রইলো।
কেমন দেখতে হবে সেই শুচিস্মিতা যে ওকে কোলে নিয়ে ছোটো বেলায় অনেক খেলা করেছে, শীতের রাতে ওকে জড়িয়ে ধরে ঠাণ্ডা থেকে বাঁচিয়েছে। এই সব ভাবতে ভাবতে অভি একসময়ে ঘুমিয়ে পড়ল।
অভি বাস থেকে নামতেই ওর মা ওকে এককোনে ডেকে নিয়ে যায়। মায়ের ডাক শুনে অভির ত আত্মারাম খাঁচা ছাড়া হয়ে যাবার যোগাড়। বুকের মাঝে এক ঝড় ওঠে, মা কি বুঝতে পেরে গেল নাকি ওর আর পরীর হৃদ্যতা?
....
এই ভাবে এই দুই প্রেমিক যুগল বিয়ের বন্ধনে বেঁধে যায়।
অভি মনে মনে ভাবে, “আমি খালি হাতে এসেছিলাম কিন্তু অনেক কিছু নিয়ে যাচ্ছি। আমার ভালবাসা, আমার পরী।”
মা মেয়ের অতিরিক্ত প্রেম আর সহ্য হল না অভির। জামা কাপড় বদলানর জন্য বাথরুমে ঢুকে গেল। বেশ খানিকক্ষণ পরে বাথরুম থেকে বেড়িয়ে দেখে, পরী মায়ের কোলে মাথা গুঁজে কাঁদছে আর মায়ের চোখেও জল। অভি মাকে জিজ্ঞেস করল যে কি হয়েছে। মা কিছু উত্তর দিলেন না, শুধু বললেন চলে যেতে।
দু’জনে কতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিল তাঁর ঠিকানা নেই। অভির চোখ খলে যখন কেউ ওর মাথার পেছনে সজোরে এক চাটি মারে। ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে যে ইন্দ্রানি মাসি ওর দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছে। পায়ের দিকে কিছু দুরেই মাটিতে পরে আছে সুব্রত।
দিন চলে যায়, সবাই নিজের নিজের কাজে ব্যাস্ত হয়ে পরে। অভির মন থেকে পরীর কথা মুছে যায় না, কলেজে, বাড়িতে সবসময়ে ওর শুধু পরীর কথা মনে পরে। মা জানালেন যে পরী বাসন্তি পুজোর পরে, মানে এপ্রিল মাসের শেষের দিকে বাড়ি আসবে।
...
অনেক দিন দেখা হয়নি পরীর সাথে, গ্রামের বাড়িতে কোন টেলিফোন নেই যে পরীর সাথে কথা বলবে। মাঝে মাঝে অন্ধকার রাতে যখন পরীর কথা মনে পড়ত তখন ও পরীর দেওয়া সিল্কের রুমাল টা বের করে নাকের সামনে ধরত, চেষ্টা করত পরীর গায়ের গন্ধ শোঁকার।
অনেক কিছু পরিকল্পনা করতে হবে। বাবা মাকে কি বলে বের হবে তাঁর চিন্তা, কোথায় যাবে, কি করে যাবে তাঁর চিন্তা, পরীকে কি করে ওর বান্ধবীদের কবল থেকে বার করবে তাঁর চিন্তা। ওর এক সিনিয়ার বন্ধু, সুপ্রতিমদা দিল্লীতে থাকে।
...
সুপ্রতিমদা, “ধুর বাবা বিয়ে করে কি হবে, টাইম পাসের জন্য ত পাওয়া যায় রে।” দুজিনেই হেসে ফেলল।
সুপ্রতিমদা, “তাহলে চিতকুল যাচ্ছিস? কোথায় সেটা?”
অভি, “হিমাচলের এক কোনায়, সাঙলা ভ্যালি নামে এক ভ্যালিতে।”
সুপ্রতিমদা, “মানালি বা ডালহউসি যেতে পারতিস।”
অভি, “না পরীর বান্ধবীরা মানালি যাচ্ছে, পরীর ইচ্ছে আমরা এমন এক জায়গায় যাই যেখানে কেউ থাকবে না। অনেক ভেবে চিন্তে এই জায়গাটা বেছেছি।”
এলোমেলো রুক্ষ চুলের মধ্যে নরম আঙ্গুলের স্পর্শে অভির ঘুম ভেঙ্গে গেল। চোখ মেলে চেয়ে দেখল সামনে পরীর হাসি মাখা মিষ্টি চেহারা। বিছানার ওপরে ওর পাশে বসে পরী ওর দিকে মিষ্টি হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছে। অদ্ভুত এক মধুর আলোর ছটা যেন ওর সারা মুখে মাখা। বেশ খানিকটা ঝুঁকে পড়ার জন্য অভির বুকের ওপরে ওর ঘন কালো চুল খেলা করছে। পরীর মিষ্টি হাসি দেখে অভির বুকের ভেতরে গত কাল রাতের পাথরটা যেন সরে গেল। চেয়ে দেখল ঘরের মধ্যে সকালের মিষ্টি রোদের খেলা।
দুপুরের খাওয়ার সময়ে পরী নিরামিষ খেল। অভি ভাবল যে হয়ত জার্নির জন্য পরী নিরামিষ খেয়েছে, খাওয়ার ব্যাপারে বিশেষ কিছু জিজ্ঞেস করল না অভি। গল্প করতে করতে ওরা একে ওপরের ব্যাপারে অনেক কিছু জেনে নিল। পরীর প্রিয় রঙ তুঁতে। রবীন্দ্রনাথের কবিতা পড়তে আর শরৎচন্দ্রের ছোটো গল্প পড়তে খুব ভালবাসে। অভির প্রিয় লেখক শরৎচন্দ্রে। পরীর প্রিয় উপন্যাস শরৎচন্দ্রের “শ্রীকান্ত”, গান ভালবাসে পরী, সেটা অভি বিয়ের দিনে দেখেছে যে পরী বেশ ভাল গান গায়। অভি ওর মুখের দিকে একমনে তাকিয়ে থাকে আর পরী ওর গল্প বলতে থাকে।
রাত অনেক হয়ে গেছে, সুব্রত মৈথিলীকে সঙ্গে করে বেড়িয়ে যায় অভির ঘর থেকে। পরী ওদের পেছন পেছন বেড়িয়ে যেতে থাকে। অভি দেখল পরী যে ওর কথা রাখছে না তাই পেছন থেকে পরীর কাঁধে হাত রাখে, ইশারায় বলতে চায় যে তুমি তোমার কথা রাখছ না। পরী কাঁধের ওপর থেকে ওর দিকে মিষ্টি করে তাকায়। সুব্রত আর মৈথিলী কিছুটা এগিয়ে গেল। পরী একটু দাঁড়িয়ে রইল তারপরে ওর দিকে তাকিয়ে ডান হাতের তর্জনী ঠোঁটের সামনে এনে ডগায় আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে ওর দিকে নাড়ে, অভি সেই ছুঁড়ে দেওয়া চুম্বন টাকে বুকের ওপরে মেখে নেয়।
ভগ্ন হৃদয়ে পরীর দিকে তাকিয়ে ম্লান হেসে চোখের ইশারায় বলে, “তুমি কথা দিয়েছিলে পরী।”
পরী মাথা নেড়ে চোখের ইশারায় জানায়, “এটা নিয়ে সন্তুষ্ট থাক সোনা।”
পরী হাঁটু গেড়ে বিছানার ওপরে বসে পরে, অভি ওর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরে। পরী খুব আদরে অভির চুলে বিলি কেটে দেয়। অভি ওর কোমর জড়িয়ে ধরে থাকে। দু’জনের বুকের ভেতর এক অনাবিল প্রেমের আলো বিছুরিত হয়, সেই প্রেমে কোন কামনার লেশ নেই, বাসনার লেশ নেই, এ যেন এক সুন্দর ধবধবে সাদা প্রেমের বন্ধন।
অভি, “পরী…”
পরী, “হুম বল।”
অভি, “সুব্রত আর মৈথিলী আমার সাথে অরুনিমার সম্পর্ক তৈরি করার জন্য উঠে পরে লেগেছে।”
পরী, “আমি জানি অভি, আর এও জানি সেই জন্য তুমি আজ ওদের বাড়ি যাচ্ছ না। তোমার ওপরে যে আমার অগাধ বিশ্বাস আছে অভি।”