গোয়াইনঘাটে নৌকার ঘাট থেকে কিছুটা আগে গাড়ি রেখেছিল মুগ্ধ। সাঁতরে সাঁতরে শরীর ক্লান্ত দুজনেরই। যা খেয়েছিল তা সব শেষ। এটুকু হেটে গাড়ির কাছে আসতেও খুব কষ্ট হলো। এসে মুগ্ধ বলল, -“তুমি গাড়িতে ঢুকে চেঞ্জ করে নাও। তোমার হয়ে গেলে আমি ঢুকবো।” -“এখানে আমি চেঞ্জ করবো?” -“হ্যা কে আছে দেখবার জন্য?
তিতির কখন যেন কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে। মুগ্ধ ওকে বুকের উপর থেকে নামিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিল। তারপর উঠে দাঁড়াতেই বুঝতে পারলো শরীরটা ভার হয়ে আছে। বুকের ভেতর ব্যাথা করে উঠলো। বুকে হাত দিতেই দেখতে পেল বুকের লোমগুলো ভিজে গেছে তিতিরের চোখের জলে। বুকের ভেতরটায় হাহাকার করে উঠলো।
মা কয়েক সেকেন্ড চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে শীতল গলায় বলল, -“কি করে হলো এসব?” তিতির তো আকাশ থেকে পড়লো। নিজের মেয়েকে কেউ এসব জিজ্ঞেস করে? এমনি লজ্জা লাগছে আবার ডিটেইল জানতে চাচ্ছে। এমন তো না যে মা জানেনা কি করে মানুষ প্রেগন্যান্ট হয়। ওকে চুপ থাকতে দেখে মা আবার জিজ্ঞেস করলো
সবাই একে একে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল। শুধু চম্পা ঘরের এক কোনায় বসে কাঁদতে লাগলো। তিতির উপুর হয়ে শুলো। পিঠটা বিছানায় রাখতে পারছে না। পিঠের এমন কোন যায়গা নেই যে স্কেল পড়েনি। কোথাও কোথাও একই যায়গায় বারবার পড়েছে। উপুর হয়েও ব্যাথা অনুভব করলো। বুকে, পেটেও বোধহয় দুএকটা লেগেছে।
মুগ্ধ আটকালো না তিতিরকে। ওর মা এসে আচমকাই ওর গালে একটা চড় মারলো। মুগ্ধ আকাশ থেকে পড়লো! মা শেষ কবে ওকে মেরেছিল মনে করতে পারছে না। পিউ অবাক হয়ে চেয়ে রইলো। মুগ্ধ বলল, -“এটা কি হলো?” মা বলল, -“তুই মেয়েটাকে এভাবে কাঁদালি কেন?” -“মা মাঝেমধ্যে না আমি তোমাকে বুঝেও বুঝিনা।
তিতিরের শরীর প্রচন্ড গরম। চোখগুলো লাল হয়ে আছে, অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছে। ও বোধহয় জ্বরের ঘোরে নিজেকে কন্ট্রোলে রাখতে পারেনি তাই চলে এসেছে। জ্বর কমলে, ঘোর কাটলে তো চলেই যাবে। শুধু শুধু মায়া বাড়াতে এল মেয়েটা! -“এই দাওনা। খাবোতো!” মুগ্ধর ঘোর কাটলো। বলল, -“কি দেব?” -“তোমার ঘুমু ঘুমু ভয়েসটা।”
পুরোটা বিকেল ওরা বারান্দায় কফির মগ হাতে গল্প করে কাটিয়ে দিল। বারান্দার দেয়ালে হেলান দিয়ে ফ্লোরে বসে গল্প। খুব সিরিয়াস টাইপের গল্প। প্রায় এক বছর কে কিভাবে কাটিয়েছে, কার জীবনে কি হয়েছে সেসব গল্প। তিতির মুগ্ধকে সুহাসের কথাটা সব খুলে বলততেই মুগ্ধ খানিকটা চিন্তায় পড়ে গেল। বলল
সন্ধ্যা হতে না হতেই তিতিরের জ্বর মারাত্মক পর্যায়ে চলে গেল। ওকে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে। কিন্তু ও কিছুতেই যেতে চাচ্ছে না। উল্টোপাল্টা কথাবার্তা বলছে। অবশেষে মুগ্ধ ওকে জোর করে তুলে নিয়ে গেল। ডাক্তার দেখে বলল, ‘ভাইরাস জ্বর। এন্টিবায়োটিকস দিচ্ছি। চিন্তা করবেন না ঠিক হয়ে যাবে।’
মা আর স্নিগ্ধ ফেরার পর ওরা সবাই মিলে মিটিং এ বসলো। তিতির বসলো একদম মুগ্ধর মার গা ঘেঁষে। মা ওকে জড়িয়ে ধরে বসেছিল। প্রথম কথা উঠলো কাকে কাকে দাওয়াত করা হবে। মুগ্ধ বলল, -“এত দাওয়াত ফাওয়াতের কি দরকার মা? আপাতত নিজেরা নিজেরাই করি।
তিতির বরাবরই এভাবে মুগ্ধর বুকে মাথা রেখে গান শুনতে পছন্দ করে। মুগ্ধর বুকের পাঁজর যেন প্রতিটা ধুকধুক এর মধ্য দিয়ে চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দেয় তিতিরের গাল। আর গানের প্রতিটা কথা, সুর সাথে প্রিয় মানুষটার কণ্ঠস্বর কানের এত কাছে! গান শেষ করে তিতিরের কানে কানে মুগ্ধ বলল...