উত্তরের ঘন জঙ্গল এর পাশের আলিশান বাড়িটার লিভিং রুমে সোফায় বসে আছেন শামসুল কাদের, পাশেই বসে আছে, তার ছোট মেয়ে রুমাইশা কাদের।
লিভিং রুমে ঢোকার আগ মুহুর্তে বাবা আর ফুপ্পার কিছু কথা কানে এলো রুমাইশার৷
ফুপ্পা থেমে থেমে বলছেন,
—দেখ শামসুল, ছেলে আমার আজ ও অপরাধ বোধে ভোগে৷ ওই ঘটনার পর থেকে ও নিজেকে সবার থেকে গুটিয়ে নিয়েছে৷
রুমের ভেতর ঘুটঘুটে অন্ধকার। রুমাইশা উঠে ঘড়ি দেখলো, তিন টা বাজে। এই সময়ে কিসের শব্দ হলো, আর রুমের ভেতর এত অন্ধকার কেন? ঘুমানোর সময়ে তো রুমে আবছা আলো ছিল।
বিকেলের দিকে রুমাইশা আর শাফিন বেরোলো জঙ্গলের ভেতর ঘুরতে। দুপুরের একটু আগে এসে শামসুল কাদের রুমাইশার বই খাতা, কিছু জামা কাপড়, আর প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস এনে দিয়ে গেছে৷ সেগুলো গোছ গাছ করে গোসল সেরে খেয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে ওরা ভাবলো জঙ্গল টা একটু ঘুরে আসা যাক৷
আজ ও রুমের ভেতর ঘুটঘুটে অন্ধকার। বাইরের আলোটা কেউ অফ করে দিয়েছে, শাফিন বলেছিল সাফওয়ান ভাইয়া বন্ধ করতে পারে। কিন্তু ও তো থাকে চিলেকোঠায়৷ ও কেন এত রাতে এসে লাইট বন্ধ করবে?
—সা—সাফওয়ান ভাইয়া! তুমি!
রুমাইশা অবাক হলো। সাফওয়ান যে এত্ত লম্বা হবে ও ভাবতেই পারেনি! সাফওয়ান এর দিকে কিছুটা এগিয়ে এসে রুমাইশা বলল,
—ক্ষিদে পেয়েছে তোমার? কিছু করে দেবো?
এক্সাম শুরু হতে আর ১ দিন আছে, ধুমছে পড়াশোনা করছে রুমাইশা। সাথে শাফিন ও। সেই দিনের পর থেকে সাফওয়ান এর সাথে রুমির আর দেখা হয়নি। শেষ রাতের সেই অদ্ভুত শব্দটাও আর হয়নি। সেটাকে নিছকই মনের ভুল ভেবে নিয়েছে রুমাইশা, হয়তো মস্তিষ্কের ওপর চাপ পড়ছিলো অনেক তাই ভুলভাল দেখেছে৷ ওসব নিয়ে আর মাথা ঘামায়নি ও৷
সিড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে স্পুনে লেগে থাকা আইসক্রিম চেটে খাওয়ার জন্য মুখটা খুললো সাফওয়ান। আর এরপর মুখ হা করতেই সাফওয়ানের কুচকুচে কালো মুখগহ্বরের ভেতর ক্যানাইন দাঁতের জায়গায় রুমাইশা দেখতে পেলো দুইটা ঝকঝকে সাদা, তীক্ষ্ণ, ধারালো, লম্বা আর সরু দাঁত।
রুমাইশা শোয়া থেকে উঠে বসল। চোখ দুটো মুছে নিলো ভালোভাবে৷ এই অসময়ে কে আসবে? ফুপ্পি? না শাফিন! ভাবতে ভাবতে উঠে দরজা খুলে দিলো রুমাইশা। কিন্তু কাউকেই সামনে পেলো না৷ মনে মনে শাফিনের ওপর খুব বিরক্ত হলো।
সাদা ওড়নাটা বিছিয়ে আছে বিছানার ওপর, নিতম্ব ছাড়ানো চুল গুলো ডানপেশে হয়ে ছড়িয়ে আছে। নরম হাত দুইটা দিয়ে মোবাইল ফোন টা ধরে উপরের দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ভাবছে রুমাইশা বাক্যটা কিভাবে সাজালে সাফওয়ান ভাইয়ের মনপুত হবে।