চোখমুখের রঙ বিকৃত হয়ে গেল প্রেরণার। ভয়ে থরথর করে কাঁপতে শুরু করল মানুষ'টা। অঙ্গন অসহনীয় কণ্ঠে চিৎকার করে ওঠল। প্রেরণার ভয়ের মাত্রা দ্বিগুণ হয়ে ওঠল।
অন্যদিনের তুলনায় আজ দ্বারে করাঘাতের শব্দটি বেশিই কড়া ছিল। শাহিনুর ত্বরান্বিত হয়ে বদ্ধ দ্বার উন্মুক্ত করল। প্রিয়তম অর্ধাঙ্গের ক্লান্ত মুখমণ্ডল, চিন্তান্বিত দৃষ্টিজোড়া নজরে পড়তেই মিষ্টি করে হাসলো। তার সে মিষ্টি হাসি দেখে প্রণয়ের দেহ, মনে চলা দাবদাহের অনুভূতি'তে ভাটা পড়ল।
সেদিন রাতে নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি নিয়ে ভীষণ চিন্তিত ছিল প্রণয়। কয়েক রাত ঠিকভাবে ঘুমাতেও পারেনি৷ কিন্তু গত ক'দিন ধরে শাহিনুরের শরীর ভীষণ খারাপ।
-' আপনি কোথায় যাচ্ছেন? আমাকে রেখে যাবেন না। আমার খুব ভয় হচ্ছে।'
বুকচিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করল,
-'তোমরা কারা? আমাকে ছেড়ে দাও। আমার নুর অপেক্ষা করছে, আমাকে ফিরতে দাও।
-'যার হাত ধরে পালিয়েছিলে আজ তাকে ছাড়াই এ গৃহে প্রবেশ করছো? আমার ছেলেটা তোমার কাছ থেকেও নিখোঁজ হয়ে গেল!'
নড়ে ওঠল শাহিনুর। বুকের ভিতর তীব্র কষ্টটা গাঢ় হয়ে ওঠল। অঙ্গন বলল,
-'আম্মা এসব কথা থাক।
নাতি স্বপ্ন'কে কোলে নিয়ে বসে ছিল প্রেরণা। দ্বারের বাইরে শাহিনুরের কণ্ঠ পেতেই চমকে ওঠল ,
-'আম্মা ভেতরে আসব?'
স্বপ্ন'কে সখিনার কোলে দিয়ে নড়েচড়ে বসল প্রেরণা।বলল,
-'আসো আসো দাও দেখি আমার বুবু'কে আমার কোলে দাও।'
-'আমি মরে যাইনি ভাই। সৃষ্টিকর্তা আমাকে যে হালে রেখেছেন এতেই আমি সন্তুষ্ট। আমি কোন কৃত্রিমতা নিয়ে ওর কাছে ফিরতে চাই না। বরং সৃষ্টিকর্তা আমায় যেটুকু দান করেছেন সেটুকু নিয়েই বীরের মতো মাথা উঁচু করে যেতে চাই।
খু'নের মাঝেও পার্থক্য রয়েছে।সকল খু'নই অপরাধমূলক নরহত্যা। কিন্তু সব অপরাধমূলক নরহত্যা খু'ন বলে বিবেচিত হয় না। দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ৩০০ ধারা বিশ্লেষণ করলে খু'নের ক্ষেত্রেও কয়েকটি উপাদান পাওয়া যায়।
-'এই আপনার এই যাব এই আসব ডাক্তারসাহেব?'
প্রণয়ের চোয়ালজোড়া তীব্র কষ্টে ভারী হয়ে ওঠল। ছোট্ট করে নিশ্বাস ফেলে প্রণয়কে আপাদমস্তক দেখে পুনরায় শাহিনুর প্রশ্ন করল,
-'ওরা আমার এতবড়ো সর্বনাশ কেন করল ডাক্তারসাহেব?'
সকল ষড়যন্ত্রের কথা জানতে পেরে মাজহারুল, মুনতাহাকে কঠিন শাস্তি দেওয়ার জন্য উন্মাদের মতো হয়ে গেল প্রেরণা। তাকে শান্ত করতে সকলেই ব্যর্থ হলো। সক্ষম হলো শুধু প্রণয়। বরাবরই জন্মদাত্রী'কে মানাতে বেশ পটু সে।