অফিডিয়ান | পর্ব – ৫৩

৫৭. উত্তরের জঙ্গলের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া যশোর টু সাতক্ষীরা রোডের ওপর দিয়ে দ্রুত গতিতে চলছে তিন খানা গাড়ি। মাগরীবের আযান পড়লো কিছুক্ষণ আগে। আবছা অন্ধকারে গাড়ি গুলো ছুটে চলেছে তাদের উদ্দ্যেশ্য হাসিল করতে।

গাড়ি গুলো এসে থামলো একটা নির্দিষ্ট জায়গায়। তিনটা গাড়ির মাঝের সাদা গাড়িটার, মাঝখানের সিটে সাদা রঙা কোট প্যান্ট পরে বসে আছে লুকাস। তার সামনে ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে বসে আছে দিয়েগো। লুকাস গোফে তা দিচ্ছে। কিছুক্ষণ পর সে দিয়েগোর উদ্দ্যেশ্যে ইংরেজিতে বলে উঠলো,
— দিয়েগো, তুমি কি নিশ্চিত এই জঙ্গলের ভেতর সত্যিই কিছু একটা চলছে।

দিয়েগো লোকটা দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে বলল,
— হ্যা বস, আপনার কথা মতো কাল রাতে আমাদের কয়েক টা ছেলে সাফওয়ানের বাড়ির ওপর নজর রাখছিলো। আর তখনি ওরা দেখতে পায় এই বাড়ির দুইটা ছেলে মাঝরাতের পর বের হয়ে জঙ্গলের দিকে যাচ্ছে। আমাদের ছেলেরা চুপিসারে ওদের পিছু নেয়৷ কিন্তু ওই জঙ্গলে কিছু একটা ছিলো ওরা দুজন বাদেও৷ ওই ছেলে দুইটা কিছুদুর যাওয়ার পর হঠাৎ করেই থেমে যায়৷ সেই অন্য কোনো কিছু টা ওদের সামনেই ছিলো।
কিন্তু যখন সেই অদ্ভুত জিনিস টা পালিয়ে যেতে নেয় তখন ওই দুইটা ছেলেও ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। দুজন দুদিকে দৌড় দেয়, একজন ওই নাম না জানা প্রাণী টার পেছনে দৌড়ায়, আর অন্য জন অন্য আর এক দিকে দৌড়ায়, যার কারণে আমাদের ছেলে রা আর ওদের পিছু নিতে পারেনি৷ তাই আমার ধারণা এইখানে কিছু একটা তো হচ্ছেই৷ আর ওই পালিয়ে যাওয়া জিনিস টাই বা কি সেটাও ভাবনার বিষয়। আমাদের ছেলেরা বলছিলো ওইখানে নাকি দুইটা চোখের মতো কিছু জ্বলজ্বল করছিলো। আর সেটা দেখেই মুলত ওই ছেলে দুটো থেমে গেছিলো।

জ্বলজ্বলে চোখের কথা শুনেই লুকাস উত্তেজিত হয়ে গেলো। নিজের সিটে নড়েচড়ে বসে সাবধানী গলায় বলল,
— তাহলে ওটা সাফওয়ানই। কারণ হারবার্ট আমাকে বলে দিয়েছিলো, সাফওয়ানের চোখ নাকি অন্ধকারে উজ্জ্বল হয়ে থাকে। ওর চোখ দুইটা এতটাই উজ্জ্বল যে দিনের বেলাতেও নাকি সেটা বোঝা যায়, যদি খেয়াল করে দেখা হয়। ওয়েল ডান দিয়েগো। তুমি এতদিনে একটা কাজের কাজ করেছো। আমার মিলিয়ন ডলার থেকে দশ হাজার ডলার আমি তোমাকে দেবো, যদি সাফওয়ান কে তুমি আমার হাতে জীবিত তুলে দিতে পারো৷

দিয়েগো নিজের প্রশংসা শুনে খুব খুশি হলো। আর লুকাসের মিলিয়ন ডলার থেকে কিছু ভাগ পাওয়ার আশায় ওর চোখ দুইটা চকচক করে উঠলো। লুকাসের দিকে কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকিয়ে ও লুকাসের অনুমতি নিয়ে দলবল সহ নেমে পড়লো গাড়ি থেকে। আর তারপর ভারী অস্ত্রসজ্জিত লোক গুলোকে নিয়ে ঢুকে গেলো জঙ্গলের ভেতর।

৫৮. ল্যাবের রুমে বিছনায় উপুড় হয়ে শুয়ে আছে সাফওয়ান। ওর পাশে বিছনায়ার ওপরেই বসে আছে শাফিন। আর ওদের পাশে চেয়ার টেনে নিয়ে থমথমে মুখে বসে আছে রাফসান।
শাফিনের হাতে একটা স্যুপের বাটি। তা থেকে চামচে করে সাফওয়ান কে খাওয়ানোর চেষ্টায় আছে ও। কিন্তু সাফওয়ান খাচ্ছে না৷ ওইভাবেই পড়ে আছে বিছানার ওপর৷

কাল রাতে সাফওয়ান কে নিয়ে ওরা বাড়িতে ফিরে যেতে চেয়েছিলো। কিন্তু সাফওয়ান যেতে রাজি হয়নি। অগত্যা ওরা দুজন ও সাফওয়ানের সাথে ল্যাবেই চলে এসেছে। সাফওয়ানের খুব গোছালো রুম টা অগোছালো হয়ে পড়ে ছিলো, সেটা অতি যত্নের সাথে গুছিয়ে দিয়েছে ওরা দুজন মিলে।পচা গরুর মাংসের প্যাকেট টা নাক মুখ চেপে বাইরে ফেলে এসেছে শাফিন৷ এরপর এয়ার ফ্রেশনার দিয়ে রুম টাকে মোটামুটি থাকার মতো করে ফেলেছে ওরা।

সাফওয়ানের শরীরের অবস্থা খুবই খারাপ। কাল রাতের ওই উর্ধশ্বাসে ছোটার পর শরীর টা আর ও খারাপের দিকে গেছে। শরীর টা যেন কঙ্কালসার হয়ে গেছে৷ রুমাইশার সেই নীলের ওপর সাদা ফুলের কামিজ টা এখনো বুকে জড়িয়ে আছে ও৷ শাফিন চেষ্টা করছে সাফওয়ান কে একটু কিছু হলেও খাওয়ানোর৷ কিন্তু সাফওয়ান নিজের সিদ্ধান্তে অটল। রিমু কে না পাওয়া পর্যন্ত কিছুই মুখে নিবে না ও৷ ওর শরীরের দিকে তাকানো যাচ্ছে না৷ খোলশ গুলো শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে উঠে উঠে আসছে৷ কঙ্কাল সার দেহের ওপর সেগুলে অদ্ভুত আর ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছে।

রাফসান কয়েক বার অনুরোধ করলো সাফওয়ান কে খেয়ে নিতে। কিন্তু কারো অনুরোধেই কোনো কাজ হলো না। শাফিন একবার ভাবলো মাকে ডেকে নিয়ে আসবে এইখানে৷ কিন্তু মা যদি সাফওয়ান ভাইয়া কে এই অ অবস্থায় দেখে তাহলে মা কে সামলাতেই আর দুইজন লাগবে৷
কিন্তু সাফওয়ান কে খাওয়াতে তো হবে! এইভাবে না খেয়ে থাকলে তো ওকে বাচানো যাবে না৷ সাফওয়ানের শরীরে বিন্দুমাত্র শক্তি ও হয়তো এখন আর অবশিষ্ট নেই৷

কাল রুমাইশা ছুটে যে কোনোদিকে গেলো তা বুঝতে পারলো না ওরা কেউই। রাফসান শাফিন কে সাফওয়ানের ল্যাবের দিকে পাঠিয়ে দিয়ে নিজে ছুটেছিলো রুমাইশার পেছনে। কিন্তু কিছুদুর যাওয়ার পর রুমাইশা কে ও আর পেলোই না। যেন রুমি হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো একেবারে৷ এদিক ওদিক, কতদিকে ছুটলো রাফসান, কিন্তু অন্ধকারে ভেতর কিছুই পেলো না ও৷ ওর মনে হাজার খানেক প্রশ্ন উকি দিয়ে আছে। কিন্তু একটার ও উত্তর নেই৷ সাফওয়ান কে যে জিজ্ঞেস করবে তার ও উপায় নেই। কারণ সে নিজেই মরতে বসেছে৷ অগত্যা মাথার ভেতর কিলবিল করা অজস্র প্রশ্ন গুলোকে মাথাতেই চেপে রাখলো রাফসান৷

.

জঙ্গলের ভেতর দিয়ে সন্তর্পণে এগিয়ে যাচ্ছে দিয়েগো আর ওর সাথের ছেলেরা৷ দিয়েগো চলেছে সবার আগে, পেছনে ওর দলের অন্যান্য সদস্যরা৷ চারদিকে সতর্কতার সাথে দৃষ্টি দিচ্ছে ওরা। চোখে ওদের অত্যাধুনিক নাইট ভিশন স্পেকট্যাকলস, কারণ যে কোনো আলোর উপস্থিতিই প্রতিপক্ষ কে সজাগ করে তুলবে৷ জঙ্গলের প্রতিটা আনাচ কানাচে নিঃশব্দে সার্চ করছে ওরা।

কিছুদুর যাওয়ার পর ই ওরা একটা পায়ে হাটা রাস্তা দেখলো। রাস্তা টা চোখে মেলানোর মতো নয়। কিন্তু তীক্ষ্ণ চোখে খেয়াল করলেই বোঝা যাচ্ছে এই পথ দিয়ে কারো নিয়মিত বা অনিয়মিত যাতায়াত হয়৷

দিয়েগো আঙুল দিয়ে ইশারা করে পেছনের ছেলে গুলোকে দুই দলে ভাগ হয়ে যেতে বলল, এক দল কে ও ইশারাতে যেতে বলল জঙ্গলের পূর্ব দিকে, অন্য দল টাকে নিজের সাথে নিয়ে ও হাটা ধরলো সদ্য পাওয়া, কিঞ্চিৎ মাটি বের হয়ে যাওয়া সরু রাস্তাতে।

.

সাফওয়ান ঘুমিয়ে গেছে। ক্লান্ত শরীর টা আর জেগে থাকতে পারছে না। শাফিনের হাতের স্যুপের বাটিটা সেভাবেই ধরা আছে৷ এক ফোটাও সাফওয়ানের পেটে যেতে পারেনি৷ শাফিন ও আগের মতো করেই বসে আছে।

কিছুক্ষণ পর নিরবতা ভেঙে রাফসান নিচু স্বরে বলে উঠলো,
— এইভাবে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে কিছুই হবে না। আমার বোন টা হারিয়ে যেতে চাইছে, ও যতক্ষণ না চাইবে ততক্ষণ আমরা ওকে খুজে পাবো না৷ কিন্তু সাফওয়ান কেও তো আমরা হারাতে পারবো না। আমার মনে হয়, তোর মা কে বিষয় টা জানানো উচিত। তিনি এলে হয়তো সাফওয়ান কে একটু বুঝিয়ে সুঝিয়ে কিছু খাওয়াতে পারবে। আমি যদি সেদিন রুমি কে একটিবারের জন্য ও জানাতে পারতাম সাফওয়ানের এই অবস্থা সম্পর্কে, তাহলেও হয়তো ও ফিরে আসতো। এইভাবে পালিয়ে বেড়াতো না আমাদের থেকে।

শাফিন ভাবুক ভঙ্গিতে বলল,
— আমার মনে হয় রুমি আপু এইখানে আগে থেকেই ছিলো না৷ কারণ আমরা এতদিন ধরে খুজেছি আপু কে, এই জঙ্গলের প্রতি টা কোণা আমরা খুজেছি, কিন্তু আপুকে পাইনি। আপু যদি এখানেই থাকতো, তাহলে একটা বারের জন্যও কারো না কারো চোখে আপুর কোনো চিহ্ন পড়তো। হয়তো আপু অন্য কোথাও ছিলো, আর কাল রাতেই হয়তো এসেছে কোনো কারণে। আর হয়তো আমাদের সামনে বেধে গেছে। নইলে যে পালিয়ে বেড়াচ্ছে সে তো ইচ্ছা করে কারো সামনে চলে আসবে না, বলো!

রাফসান চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে রুমের ভেতর পায়চারি করতে করতে বলল,
— হ্যা, তোর কথায় যুক্তি আছে৷ ব্যাপার টা আমিও ভেবেছি। কিন্তু ও আবার ফিরে এসেছিলো কেন! আমাদের কাছে ফিরে আসার জন্য যে ফিরে আসেনি সেটা তো ক্লিয়ার। অন্য কোনো কারণ আছে এর পেছনে।

রাফসান আবার চেয়ারের দিকে এগিয়ে এসে শাফিনের উদ্দেশ্যে বলল,
— আচ্ছা, এসব নিয়ে ভাবনা চিন্তা করার সময় এখন নয়। সাফওয়ান কে এইভাবে ওর মন মর্জির ওপর ছেড়ে দেওয়া যাবে না৷ আমাদের কিছু একটা করতে হবে৷ ওর যা অবস্থা দেখছি তাতে ও এমন করলে বেশিদিন বাচবে না৷ ওর শরীরে আর কিছুই বাকি নেই৷ ওর পিঠের কাছ টাতে দেখ, ঘা হওয়ার রাস্তায় আছে। আর কয়েকদিন গেলেই ওর শরীরের ইমিউন সিস্টেম পুরো ডাউন হয়ে যাবে৷ তখন ওই কালো কালো দাগ গুলো সব দগদগে ঘায়ে পরিণত হবে৷ তুই এখনি গিয়ে রুনিয়া ফুপ্পি কে নিয়ে আসবি। সাথে আর ও কিছু খাবার দাবার আনবি৷ রুনিয়া ফুপ্পিকে ওর এই অবস্থা দেখানো আমাদের উচিত না, কিন্তু আমাদের আর কিছুই করার নেই। আমি এখানেই থাকছি, তুই এক্ষুনি যাবি, গিয়ে আবার ফিরে আসবি।

শাফিন আচ্ছা বলে স্যুপের বাটিটা বিছানার সাইড টেবিলের ওপর রেখে দিলো৷ রাফসান কিছু একটা মনে করে বলল,
— স্বাভাবিক ভাবে হেটে বাড়িতে গেলে পনেরো মিনিট মতো সময় লাগে৷ পনেরো মিনিট পর তুই আমাকে ফোন দিবি৷ এক মিনিট সময় ও যদি বেশি লাগে তবে আমি তোকে ফোন দেব। তবে তুই ফোন রিসিভ করবি না৷ কল কেটে দিয়ে আমাকে মেসেজ করবি, যে তুই কোথায় আছিস, আর তোর পৌছাতে আর কতক্ষণ লাগবে৷ মনে থাকবে?

রাফসানের এমন হঠাৎ সাবধানতার কারণ বোধগম্য হলো না শাফিনের, তবুও মাথা নেড়ে রাফসানের আদেশ মেনে নিয়ে ও গোছগাছ করে বের হলো ল্যাব থেকে। আজ ও টর্চ নেই ওর কাছে। কারণ পুলিশেরা ওদের বাড়ির আশপাশ টা শকুনের দৃষ্টিতে নজর রাখছে। যদিও তাতে কোনো লাভ হচ্ছে বলে শাফিনের মনে হচ্ছে না, শুধু শুধু ওদের কে ভোগান্তি দেওয়া ছাড়া পুলিশ গুলো আর কিছুই করছে না৷ ল্যাব থেকে বের হয়ে শাফিন পা বাড়ালো বাড়ির দিকে।

.

দিয়েগো ওর দলদল নিয়ে সরু রাস্তা টা ধরে এগোতে এগোতে এসে থামলো একটা ভাঙা চোরা ভুতুড়ে কুড়ে ঘরের সামনে৷ কিন্তু সেটা এতটাই জরাজীর্ণ যে এর ভেতরে কেউ থাকবে বলে মনে হয় না। আর এত ছোট জায়গার ভেতরে এক জন স্বাভাবিক মানুষ কোনোভাবেই থাকতে পারবে না। তবুও, সাবধানের মার নেই৷

দিয়েগো ওর সাথের একটা ছেলে কে বলল কুড়ে ঘরটার ভেতর টা একবার দেখে আসতে৷ ছেলেটা কুড়ে ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে ভেতর টা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে এলো। নাহ, তেমন সন্দেহজনক কিছুই নেই। কুড়ে ঘরের হাড় পাজরা সব বেরিয়ে গেছে। ঘরের চালা নেই এক পাশ থেকে। সে পাশে বৃষ্টির পানি পড়ে পড়ে শ্যাওলা ধরে গেছে৷ সমস্ত মেঝে পাতা দয়ে পরিপুর্ণ৷ এইখানে আর কিই বা থাকবে, কয়েক রকমের পোকা মাকড় ছাড়া এখানে আর কিছুই নেই।
রাতের আধারে পোকা মাকড়ের কামড়ের ভয়ে ছেলেটা আর আগালো না৷ আর ও একবার ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে বেরিয়ে এলো।

সেই মুহুর্তে দিয়েগোর কানের ব্লুটুথ ডিভাইস টা শব্দ করে উঠলো। পূর্ব দিকে যাওয়া দল টা কিছুই পায়নি ওদিকে। জঙ্গলের ধারে একটা খাল জাতীয় কিছু আছে, ওর ওপাশে আর জঙ্গল নেই। জঙ্গলের ডেডলাইন এখানেই৷
দিয়েগো ওদের কে ডিভাইসের মাধ্যমেই বলল ফিরে এসে দিয়েগোর সাথে যোগ দিতে। তারপর কুড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে ওরা অন্য দিকে গেলো৷

শাফিন সাবধানে রাস্তা দেখে পার হচ্ছে। চাঁদের স্বল্প আলো ছাড়া আর এক টুকরো আলো ও নেই৷ তার ভেতরেই যতদুর সম্ভব দেখার চেষ্টা করছে ও। মাটিতে থাকা সাপ বিচ্চু কে যথাসম্ভব এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে ও। ধীরে চলার কারণে একটু সময় লেগে যাবে বাড়িতে যেতে। রাফসান হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যেই কল দিবে ওর কাছে৷

শাফিন একা হওয়ায় একটু ভয় ভয় লাগছে ওর৷ এই জঙ্গলের ভেতর এখনো পর্যন্ত একা একবার ও আসেনি ও৷ একবার শুধু সাফওয়ানের পিছু নিয়েছিলো একা, কিন্তু তখন তো সাফওয়ান ছিলো! এখন তো তাও নেই৷ পুরোপুরি একা ও।
মাথার ভেতরে আজ পর্যন্ত দেখা সব হরর মুভির সিন গুলো একটার পর একটা রিপ্লে হতে লাগলো ওর৷ আফসোস হলো ওর, কেন ও একা একা আসতে গেলো। ও নিজে ল্যাবে থেকে গিয়ে রাফসান ভাইয়া কে পাঠাতে পারতো৷ কিন্তু তাতে অন্য সমস্যা হতো। রাফসান ভাইয়া তো ওর মতো এত ভালো করে রাস্তা চিনে না৷ ভাইয়া কোন দিক যেতে গিয়ে কোথায় চলে যেতো তার ঠিক নেই৷

আনমনে হাটতে হাটতে জঙ্গলের সেই খোলা জায়গাটায় চলে এলো ও৷ এইখানে আসার পর একটু সাহস হলো ওর৷ হঠাৎ করেই ফোন বেজে উঠলো শাফিনের। বাড়ি যেতে আর বেশি পথ নেই৷ দু মিনিট ও লাগবে না। ফোন টা প্যান্টের পকেট থেকে বের করে স্ক্রিনে রাফসানের নাম দেখলো। বারণ সত্বেও হাটতেই হাটতেই কল টা রিসিভ করে কানে ধরে বলল,
— হ্যা ভাইয়া, আমি প্রায় পৌছে গেছি, আর দু মিনিট মতো লাগবে৷

রাফসান ওপাশ থেকে কি বলল শোনা গেলো না। তার উত্তরে শাফিন বলল,
— ঠিক আছে, আমি গিয়েই….

কিন্তু পুরো কথা টা শেষ করতে পারলো না শাফিন, তার আগেই পেছন থেকে কেউ একজন এসে শাফিনের মুখ চেপে ধরলো, আর অন্য একজন এসে শাফিনের হাত দুইটা পিছমোড়া করে ধরে ফেললো৷ ফোন টা পড়ে গেলো মাটিতে। রাফসান ফোনের ও পাশ থেকে হ্যালো হ্যালো করতে থাকলো, কিন্তু শাফিনের আর কোনো সাড়া শব্দ পাওয়া গেলো না।

ল্যাবের ভেতরে থাকা রাফসানের ঘাম ছুটে গেলো। শাফিনের কোনো বিপদ হয়েছে, শাফিন বিপদে পড়েছে, শুধু এই কথা গুলোই মাথায় ঘুরতে লাগলো ওর৷ কিন্তু ও বেরোবে কিভাবে? ল্যাবের পাসওয়ার্ড তো ওর জানা নেই। শাফিন কে বলেছিলো সাফওয়ান, ওকেও বলেছিলো কিন্তু ও তো ভুলে গেছে। ভাবনা চিন্তা না করে ও সাফওয়ান কে ডেকে তুলল রাফসান।

দুর্বল শরীরের ঘুমন্ত সাফওয়ান রাফসানের ডাকে পিট পিট করে চোখ মেলে তাকালো। আর ও তাকাতেই রাফসয়ান উত্তেজিত গলায় বলল,
— ভাইয়া, শাফিন হয়তো কোনো বিপদে পড়েছে ভাইয়া। ও বাড়িতে যাচ্ছিলো, আমি ওর কাছে কল দিয়েছিলাম, কথা হতে হতে হঠাৎ করে একটা শব্দ হলো আর তারপর থেকে ওর কোনো সাড়াশব্দ নেই। ফোনের ওপাশ থেকে কেউ উত্তর দিচ্ছে না। আমি তো ল্যাবের পাসওয়ার্ড জানিনা, তুমি দ্রুত কিছু করো।

শাফিন আর বিপদ কথা টা শুনেই সাফওয়ান হুড়মুড়িয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। কিন্তু দাড়াতেই দুর্বলতার কারণে মাথা টা ঘুরে উঠলো ওর। পড়ে যেতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলো ও। তারপর দ্রুত পায়ে উঠে পড়লো ল্যাবের সিড়ি বেয়ে। ওর পিছু পিছু গেলো রাফসান৷

ল্যাব থেকে বেরিয়ে বাড়ির রাস্তা ধরে ছুটলো সাফওয়ান। ওর পেছনে উর্ধশ্বাসে ছুটছে রাফসান। কিন্তু সাফওয়ানের অত বড় বড় কদমের সাথে ও পেরে উঠছে না। তারপরও প্রাণপণে ছুটছে ও। আর সেই সাথে শাফিনের ফোনে কল দিচ্ছে বার বার।

ছুটতে ছুটতে এক সময় ওরা সেই খোলা জায়গা পেরিয়ে সামনে আসলো একটু। আর সেই মুহুর্তেই শাফিনের ফোনের রিংটোন কানে এলো ওদের। সাফওয়ান আর রাফসান দুজনেই চমকে উঠে সেদিকে গেলো।

শাফিনের ফোন টা পড়ে আছে মাটিতে। সাফওয়ান এগিয়ে গেলো সেখানে। গিয়ে মাটিতে বসে পড়ে ফোন টা হাতে নিলো। হাপাচ্ছে ও, দুর্বল শরীরে এতখানি ছুটে প্রাণ টা ওর যেন যায় যায় অবস্থা। রাফসান ও ওর পেছনে এসে দাড়ালো।
তারপর হাপাতে হাপাতে বলল,
— ভাই, আমার মনে হচ্ছে শাফিন কে কেউ কিডন্যাপ করেছে, বা করতে চাইছে৷ আর এটা খুব সম্ভবত লুকাসের কাজ। ওরা আজকয়দিন আশেপাশেই ঘুর ঘুর করছিলো! ওরা হয়তো বেশিদূর নিয়ে যেতে পারেনি ওকে, আশে পাশেই হয়তো আছে ওরা। আমাদের কে আলাদ হয়ে ওকে খোজা উচিত৷

রাফসানের কথার মাঝেই কান খাড়া হয়ে গেলো সাফওয়ানের। সচকিত হয়ে ও আশ পাশ টাতে নজর বুলাতে লাগলো। আর তারপরেই রাফসানের দিকে হাত ইশারা করে থামিয়ে দিলো ও৷ সাফওয়ানের ইশারা পেয়ে রাফসান চুপ হয়ে গেলো৷

শাফিনের ফোন টা হাতে নিয়ে সাফওয়ান বসা থেকে উঠে দাড়ালো। সাবধানী চোখে এদিক ওদিক তাকালো ও। তারপর ধীর পায়ে সন্তর্পণে জঙ্গলের দক্ষিণের দিকে এগোলো ও। রাফসান কে ইশারায় ওখানেই দাড়াতে বলল।

রাফসানের গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো যেন, আসন্ন বিপদ অনুমান করে ওর শরীরে কম্পনের সৃষ্টি হলো। কিছুদুর এগোনোর পরই অন্ধকারে সাফওয়ান মিলিয়ে গেলো। রাফসান ওখানেই দাঁড়িয়ে রইলো।

৫৯. সাবধানে পা ফেলে নিঃশব্দে এগোচ্ছে সাফওয়ান। সচকিত দৃষ্টিতে আশপাশ টা নজর বুলাচ্ছে ও। ওর চোখের প্রাকৃতিক নাইট ভিশনে সব কিছু পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছে ও। মাটিতে কিছু কিছু জায়গায় বুট জুতার ছাপ। সেই ছাপ ধরেই ও এগোচ্ছে।
শাফিন কে যারা ধরেছে তারা যে লুকাসের লোক ছাড়া আর কেউ না, তা বেশ ভালোভাবেই বুঝেছে সাফওয়ান। কারণ কোনো পুলিশ, বা সাধারণ কারো সাহস নেই এই জঙ্গলে আসার, আর সেটাও রাতের বেলা।
জঙ্গল টা নিজেই ভৌতিক প্রতিচ্ছবি নিয়ে প্রায় দুশো বছরের ও বেশি সময় ধরে দাঁড়িয়ে আছে শহরের এই উত্তর দিকে।

আর ও কিছুদুর এগোতেই শুকনো ডালের মট করে একটা শব্দ শুনলো ও। কেউ হয়তো ভুল বসত পা দিয়েছে কোনো শুকনো ডালের ওপর। কান খাড়া হয়ে গেলো সাফওয়ান এর। তড়িৎ গতিতে ও চোখ বুলিয়ে নিলো ওর আশপাশ টাতে। মাথার ভেতর টা ঘুরছে ওর৷ দুর্বলতা টা জেকে বসেছে শরীরে৷ চোখ দুইটা বন্ধ হয়ে আসতে চাইছে। তারপর ও জোর করে চোখ দুইটা খুলে রেখেছে ও। নিজের আদরের ভাইয়ের কোনো ক্ষতি ও হতে দেবে না৷

সাফওয়ান বুঝলো লুকাসের লোক গুলো আশেপাশেই আছে। প্যান্টের পকেট টা হাতড়ে দেখলো ওর টু সাইডেড সৌর্ড টা আছে কিনা৷
হ্যা আছে। পকেট থেকে বের করে হাতে নিলো ও সেটা। তারপর সেই শুকনা ডালের মট শব্দের উৎসের দিকে এগোলো ও ধীর পায়ে৷

খুব সাবধানে নিজের শরীর টাকে কেমোফ্লাজ করে প্রকৃতির সাথে মিশিয়ে নিলো ও, যেন প্রতিপক্ষ সহজে বুঝতে না পারে ওর উপস্থিতি। তারপর ধীর গতিতে এগোতে এগোতে এক সময় পেয়ে গেলো সেই কাঙ্খিত লোক গুলোর সন্ধান৷

চার পাশে প্রায় জনা বিশেক লোক জন সেট করে রেখে দিয়েগো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছে৷ ওর পাশেই একটা গাছের সাথে পিছ মোড়া করে হাত বেধে শাফিন কে দাড় করিয়ে রেখেছে ও। শাফিনের মুখ টাও বেধে রেখেছে যেন ও শব্দ না করতে পারে।

দিয়েগোর সাথের ছেলেগুলোর কয়েক টা শাফিনের ধার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে, আর অন্য রা নির্দিষ্ট দুরত্বে দাঁড়িয়ে নিজেদের আশেপাশে চোখ বুলিয়ে যাচ্ছে৷
দিয়েগো ওর পাশে থাকা হেনরি নামক ছেলেটাকে শাফিন কে ইশারা করে দেখিয়ে বলল,
— হেনরি, এর দিকে ভালো ভাবে নজর রাখবি। এ যদি পালায় তো আমাদের শিকার ও পালাবে। এই ছেলেটা সাফওয়ান আহমেদের খুব কাছের কেউ। ওদের বাড়িতেই থাকে যেহেতু, সেহেতু সাফওয়ানের ক্লোজই হবে৷ তাই একে হাতছাড়া করা মানে শিকার কে হাত ছাড়া করা, বিষয় টা মাথায় রাখবি।

এরপর দিয়েগো শাফিনের গলায় একটা ধারালো ছুরি ধরে ওর মুখ থেকে কাপড় টা সরিয়ে দিলো। তারপর শাফিন কে উদ্দেশ্য করে ইংরেজিতেই বলল,
— আমরা জানি তুমি খুব ভালো করেই সাফওয়ান কে চেনো। তোমার ফোন টা তো জঙ্গলেই ফেলে এসেছো। আমি আমার ফোন দিচ্ছি, সাফওয়ান কে তুমি এখনি কল করবে, আর আমরা এখন যেখানে আছি, তার লোকেশন বলে ওকে এখানেই আসতে বলেবে, ওকে পেলে আমরা তোমাকে ছেড়ে দেবো। ডিল?

কিন্তু শাফিন দাঁতে দাঁত চেপে মুখ ফিরিয়ে নিলো ওদের থেকে। সেই সাথে নিজেকে বন্দি অবস্থা থেকে মুক্ত করতে আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকলো।
দিয়েগো হাসলো শাফিনের এমন অ্যাটিচিউড দেখে। তারপর হাতের ছুরি টা আর একটু জোরে শাফিনের গলায় চেপে ধরে ওর হাতের বাধন খুলে দিয়ে বলল,
— কল দিয়ে ওকে আসতে বল, নইলে ওর জীবন তো নেবোই, সাথে তোর টাও নেবো। এখনি আসতে বল ওকে।

বলে নিজের ফোন টা শাফিনের দিকে বাড়িয়ে দিলো দিয়েগো। শাফিন হাতে ফোন নিচ্ছে না দেখে দিয়েগো আর ও জোরে চেপে ধরলো ছুরিটা।
শাফিনের গলায় ছুরির তীক্ষ্ণতায় সামান্য কেটে গেলো, কিঞ্চিৎ রক্তের আভাস দেখা গেলো সেখানে৷ কিন্তু ভয় পেলো না শাফিন। দিয়েগোর চোখে চোখ রেখে ওর হাত থেকে ফোন টা নিলো শাফিন৷ তারপর সাফওয়ানের ফোন নম্বর টা ডায়েল করে কল দিলো।
মুহুর্তেই সেটা বেজে উঠলো ওদের থেকে কিছুটা দূরে থাকা মেহগনি গাছ টার নিচে৷

হতচকিত হয়ে উঠলো দিয়েগো আর ওর সাথে থাকা ছেলে গুলো৷ দিয়েগো আশেপাশে নজর বুলিয়ে চিৎকার দিয়ে বলল,
— সবাই সাবধান হও, শিকার আমাদের খুব কাছেই আছে৷

বাকিরা নিজেদের অস্ত্র গুলো সেট করে আশপাশ থেকে ছুটে এলো দিয়েগো কে প্রোটেকশন দেওয়ার জন্য। কিন্তু জনা বিশেক লোকজন আশ্চর্যজনক ভাবে এখন দশ জনে পরিণত হয়েছে। দিয়েগো উত্তেজিত হয়ে চোখ বুলাতে লাগলো চারদিকে, তারপর চিল্লিয়ে বলে উঠলো,
— তোমরা এই কয়জন কেন? বাকিরা কই?

ঠিক সেই মুহুর্তেই হেনরি নামক ছেলেটা দিয়েগোর বেশ খানিক পেছন থেকে উচ্চস্বরে বলে উঠলো,
— বস, এইখানে অ্যালফ্রেডের লাশ পড়ে আছে। কেউ ওকে দুই খন্ড করে দিয়েছে!

দিয়েগো চমকে উঠলো, অ্যালফ্রেড তার দক্ষ ছেলেদের ভেতর একজন, তাকে এইভাবে নিঃশব্দে ধরাশায়ী করা কোনো অতি দক্ষ প্রফেশনাল ছাড়া যে সম্ভব নয়, তা সে বেশ ভালো ভাবেই জানে। দিয়েগো সবার উদ্দ্যেশ্যে উচ্চস্বরে বলে উঠলো,
— তোমরা সতর্ক থাকো, নিজেদের গান গুলো লোড করে রাখ, শিকার যেন পালাতে না পারে৷

এত কিছুর ভেতরে দিয়েগোর মাথা থেকে শাফিনের কথা পুরাই আউট হয়ে গেলো। ঠিক সেই মুহুর্তেই ওদের ডান পাশের ঘুটঘুটে অন্ধকারের ভেতর থেকে একটা বজ্র কণ্ঠ ভেসে এলো,
— শাফিন, পালা!

আর সেই কণ্ঠ শোনার সাথে সাথেই উর্ধশ্বাসে সেখান থেকে ছুটে বেরিয়ে গেলো শাফিন৷ অন্ধকারের ভেতর গাছ পালার আড়ালে চলে গেলো ও মুহুর্তেই। আর তখনি তড়িৎ গতিতে অন্ধকারের ভেতর থেকে নিজের টু সাইডেড সৌর্ড টা নিয়ে হামলে পড়লো সাফওয়ান৷ ওর নিকটে থাকা দুইজন ছেলে কে মুহুর্তেই দুই টুকরো করে দিলো ও।

কিন্তু অন্যরা সতর্ক হয়ে গেলো সাথে সাথেই। দু-তিন জন ছেলে দিয়েগো কে ঘিরে অস্ত্র গুলো শক্ত হাতে ধরে দাঁড়িয়ে রইলো সাফওয়ানের দিকে ফিরে।
ওদের হাতে ভারী অস্ত্রসস্ত্র ঠিকই, কিন্তু সেগুলো সাফওয়ানের ওপর ব্যাবহার করার অনুমতি নেই, কারণ সাফওয়ান কে জীবিত চায় লুকাস। সাফওয়ানের কিছু হয়ে গেলে আর কোনো কিছুই কোনো কাজে আসবে না।

দিয়েগো খুব দ্রুত নিজের হাতে ওর স্টেন গান টা ধরে সাফওয়ানের দিকে তাক করলো। আপাতত ইলেকট্রিক শক দিয়ে সাফওয়ান কে ধরাশায়ী করতে হবে। নইলে ওর সাথে পেরে ওঠা যাবে না। লুকাস আগেই সাবধান করে দিয়েছিলো ওকে সাফওয়ানের ব্যাপারে, যেন সাফওয়ান কে ওরা হালকা ভাবে না নেয়, কিন্তু সেই হালকা ভাবে নিয়েই ও ভুল করেছে৷

কিন্তু দিয়েগো শ্যুট করার আগেই সাফওয়ান আর ও দুজন কে কতল করে দিলো নিজের ধারালো সৌর্ড টা দিয়ে৷ সাফওয়ান এত দ্রুত নড়াচড়া করায় দিয়েগো ফোকাস করতে পারছে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চোখ কান বুজে ও শ্যুট করে দিলো সাফওয়ানের দিকে পর পর কয়েক বার। প্রথম কয়েকটা মিস হলেও শেষের দুইটা শট গিয়ে লাগলো সাফওয়ানের শরীরে৷

আর দুর্বল শরীরে এমন ভারী ইলেকট্রিক শক পড়ায় সাফওয়ান ধাম করে মাটিয়ে পড়ে গেলো, তারপর কিছুক্ষন ছটফট করে সেখানেই জ্ঞান হারালো ও।

(খুব দ্রুত লিখেছি, বানান ভুল থাকতে পারে অনেক,ডোন্ট মাইন্ড গার্লস 😐)

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।