নামাজ শেষে ইশতিয়াক, সাফওয়ান আর শাফিন বাড়ি ফরে এলো। সৌভাগ্যের বিষয় এটাই যে কোনো অসুবিধা হয়নি। শাফিন আর সাফওয়ান দুজনেই শেষের কাতারে দাড়িয়েছিলো। নামাজ শেষ হওয়ার পর দুজনেই আগে আগে বেরিয়ে গেছে, যার জন্য সাফওয়ান কে আর কারো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়নি৷ যদিও ইশতিয়াককে অনেকে প্রশ্ন করেছে যে সাফএয়ান কেন এইভাবে মাস্ক পরে, চশমা পরে, চোখ মুখ ঢেকে এসেছে? ইশতিয়াক বলে দিয়েছেন যে সাফওয়ান এর ডাস্ট এলার্জি আছে প্রচুর, তাই বাইরে বেরোলে সবসময় এসব পরেই বের হয়।
ইশতিয়াকের কথা সবাই মেনেও নিয়েছেন৷ কেউ আর কোনাও প্রশ্ন করেন নি৷
দুপুরের খাওয়া শেষে উঠে খাবার টেবিল থেকে উঠে যাবার সময় রুমাইশা শাফিন কে বলে গেলো যেন খাওয়া শেষ করেই ওর সাথে ওর রুমে দেখা করে৷ শাফিন ও মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।
রুমাইশা রুমে গিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। ভাত ঘুম দিতে ইচ্ছে করছে খুব, কিন্তু এখন ভাত ঘুম দিলে হবে না৷ জঙ্গলে তার যেতেই হবে। ওর মনে যে সন্দেহ দানা বেধেছে সেটা পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত ওর শান্তি লাগবে না।
শাফিন এলো কিছুক্ষন পর। এসে রুমাইশার পড়ার টেবিলের চেয়ার টা টেনে বসে পড়লো৷
— হ্যা আপু বল,
রুমাইশা দুই পা ভাজ করে হাটু বুকের কাছে নিয়ে, দুই হাত দিয়ে হাটু জড়িয়ে ধরে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছে৷ শাফিন যে রুমে এসে চেয়ার টেনে বসেছে সেদিকে ওর কোনো খেয়ালই নেই৷
রুমাইশাকে এক ধ্যানে মেঝের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে শাফিন উঠে এসে রুমাইশার চোখের সামনে আঙুল নিয়ে তুড়ি বাজালো।
হতচকিত হয়ে ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে এলো রুমাইশা।
বিছানায় ভালো ভাবে বসতে বসতে বলল,
— তুই কখন এলি?
শাফিন আবার চেয়ারে বসতে বসতে বলল, ‘এত ভাবনা চিন্তায় মশগুল থাকলে দেখবা কিভাবে? কি এত ভাবছিলে, বলো তো শুনি! আমার ভাইকে নাকি?”
দুষ্ট হেসে বলল শাফিন।
শাফিনের দিকে চোখ চোখা করে করে তাকালো রুমাইশা। পরক্ষনেই মুখে হাসি এনে ভ্রু নাচিয়ে বলল, ‘যাই বলিস৷ তোর ভাইকে কিন্তু আজকে হেব্বি লাগছিলো!”
রুমাইশার বলার ধরন দেখে হাসলো শাফিন।
তারপর ভাব নিয়ে বলল, ‘ভাইটা তো আমার, বুঝতে হবে!”
রুমাইশা মুখ ভেংচিয়ে বলল, ‘হয়েছে, থাম।”
তারপর বিরতি নিয়ে বলল, ‘তোকে যে কারণে ডেকেছি, বাইরে থেকে ঘুরে আসি চল।”
ঘুরতে যাওয়ার কথা শুনে শাফিন খুশি হলো খুব। উৎফুল্ল হয়ে বলল, ‘সত্যি যাবা? কোথায় যাবা বল! গদখালি যাবা?
নাকি সাগরদাড়ি, নাকি ঝাপা ব্রিজে? বোট ক্লাবে যাবা?”
রুমাইশা চোখ পাকিয়ে বলল, ‘অতো নাচিস না! আমি আশে পাশে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলছি।”
তারপর কিছুক্ষন থেমে আবার বলল, ‘চল জঙ্গল থেকে ঘুরে আসি।”
জঙ্গলের কথা শুনেই শাফিন চুপসে গেলো! বলল, ‘কোনো দরকার নেই! সাফওয়ান ভাইয়া আগের দিন বলেই দিয়েছে আমরা কেউ যেন জঙ্গলে না যাই। আর খুব প্রয়োজনে গেলেও যেন ডোবার ওপাশে না যাই।”
— সেই ডোবা পর্যন্তই চল, তার ওইপাশে তোর আর যাওয়া লাগবে না৷”
শাফিন বিরক্ত, একই সাথে অসহায় হয়ে বলল, ‘তোমার কেন জঙ্গলেই যাওয়া লাগবে? অন্য ক্যথাও চলো! সাফওয়ান ভাইয়া দেখতে পেলে আমাদের দুটোকেই মাথায় তুলে আছাড় দিবে৷”
এত বোঝানোর পর ও রুমাইশা বুঝলো না, জঙ্গলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলো। অগত্যা শাফিনকেও বাধ্য হয়ে রুমাইশার পেছন পেছন যেতে হলো।
দুজন মিলে জঙ্গলের ভেতর হাটতে শুরু করলো, হাটতে হাটতে একসময় সেই ডোবার ধারে চলে এলো রুমাইশা আর শাফিন। ডোবার চার পাশের জংলী ফুল গুলো এখনো আছে। পানিটা এত স্বচ্ছ যে ডোবার তলা পর্যন্ত স্পষ্ট দেখা যায়।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে ডোবার পাড়ের কিছু কিছু অংশের মাটি ভেজা। দেখে মনে হচ্ছে কেউ এখানে এসেছিলো আর পানিতেও নেমেছিলো। কিন্তু কোনো পায়ের ছাপ দেখা যাচ্ছে না, তাই ঠিক কি হয়েছে বুঝলো না রুমাইশা। এই ডোবায় নামার মতো তো আশে পাশে কেউ নেই।
সাফওয়ানদের বাড়ি টা তুলনামূলক একটু ভেতরেই। আশে পাশে তিনটা কি চারটা বাড়ি আছে, কিন্তু সেগুলো সাফওয়ান দের বাড়ির থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত। আর ওসব বাড়ির কেউ জঙ্গলে আসবে বলে মনে হয় না।
শাফিন যদিও এসব খেয়াল করেনি। হাটতে হাটতে ও ক্লান্ত। কিছুক্ষিন সেখানে দাড়ানোর পর শাফিন বলল, চলো আপু ফিরে যাই। আর সামনে যেতে হবে না। জানোই তাও আগের বার কি দেখেছিলাম আমরা!
কিন্তু রুমাইশা শাফিনের কোনো কথা পাত্তা না দিয়ে সামনে হেটে চলল।
শাফিন পেছন থেকে জোরে বলে উঠলো, কোথায় যাচ্ছো আপু? সামনে যেও না আর৷ বাড়ি ফিরে চলো, সাফওয়ান ভাইয়া শুনলে খুব রাগ করবে।
রুমাইশা হাটা না থামিয়ে বলল, তোর ভাই কে তুই না বললে জানতে পারবে না৷ তুই গেলে আয়, নইলে আমি চলে গেলাম, তুই এখানেই থাক।
অগত্যা রুমাইশার জেদের কাছে হার মেনে শাফিন ও সামনের দিকে এগোলো।
কিছুক্ষন হাটার পর ওরা আগের দিনের সেই খোলা মেলা জায়গায় এসে পৌছালো।
শাফিন আর একটুও এগোতে চাইলো না। রুমাইশা আর ও একটু সামনে গেলো।
এখানে এসেই চারিদিকে সতর্কতার সঙ্গে চোখ বুলালো রুমাইশা। সেদিনের সেই খোলোশ টা এখানে আর নেই। কেমন যেন গা ছম ছম করে এখানে আসলেই৷ বুকের ভেতর হাতুড়ি পেটা হচ্ছে। একদিকে ভয়, অন্যদিকে কৌতুহল।
হটাৎ ই উপরের দিক থেকে অনেক গুলো হিস হিস শব্দ শুনতে পেলো রুমাইশা। শরীর জমে গেলো ওর। ভয়ে ভয়ে ধীর গতিতে উপরের দিকে তাকালো রুমাইশা। তাকিয়ে হতবিহ্বল হয়ে গেলো ও।
আগের দিনের সেই বিশাল খোলশটিকে পেচিয়ে পনেরো থেকে বিশ টির মতো বিভিন্ন ধরনের বিষধর সাপ বিশাল রেডউড গাছের একটা ডালে ঝুলে আছে।
শাফিন দূরে দাঁড়িয়ে থাকায় এখানের কিছুই দেখেনি।
রুমাইশা কে উপরের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে শাফিন পেছন থেকে ডাকলো ওকে, ‘আপু ফিরে এসো, এখানে থাকা আমাদের জন্য নিরাপদ না, সাফওয়ান ভাইয়া সাফ সাফ মানা করে দিয়েছে।”
রুমাইশা শাফিনকে কিছু বুঝতে দিলো না। উপরের দিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে ভয়ংকর দৃশ্য টা ঢোক গিলে হজম করে নিলো
শাফিনের কথা শুনে রুমাইশা ফেরার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো।
তখনই ওর থেকে পাঁচ সাত হাত দূরে কিছু একটা পড়ে থাকতে দেখলো ও। শাফিনের চোখের আড়ালে সাথে সাথে সেটা তুলে বুকের মধ্যে লুকিয়ে রাখলো রুমাইশা। তারপর দ্রুততার সাথে সেখান থেকে প্রস্থান নিলো।
১৯. সেদিন রাতের খাবারের পর আবার ও ডাক পড়লো শাফিনের৷ রুনিয়া সাফওয়ান কে খাবার দিয়ে এসে খাবার টেবিলে বসা শাফিনের উদ্দেশ্যে বললেন, ‘সাফওয়ান তোকে ডেকেছে, কি বলে শুনে আয়৷”
শাফিনের পাশেই বসে খাচ্ছিলো রুমাইশা। রুনিয়ার কথাতে খাওয়া থেমে গেলো ওর৷ আড় চোখে একবার শাফিনের দিকে তাকালো, শাফিন ঢোক গিলে রুমাইশার দিকে তাকালো। শাফিন তাকানো মাত্রই রুমাইশা চোখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকালো।
শাফিন পড়লো বিপদে, মনে মনে ভাবলো, ‘যাই সবসময় দুজনে, কিন্তু দোষ হয় শুধু আমার!”
রুনিয়া এদের দুজনের এমন চোরা ইশারা করতে দেখে ফেললেন। ওদের দুজনের বিপরীতের চেয়ার টেনে নিয়ে বসে বললেন, ‘তোদের দুজনের হাব ভাব এমন চোরা চোরা লাগছে কেন? কি করেছিস তোরা?”
শাফিন অতি উউত্তেজনায় বলে ফেললো, ‘দেখো মা, আমার কোনো দোষ নেই, সব দোষ রুমি আপুর।”
রুমাইশা কেবল পানি মুখে নিচ্ছিলো, নিজের নাম শুনে বিষম খেলো ও। পানি খাওয়া থামিয়ে শাফিনের দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে বোঝালো, ভুলেও আমার নাম নিবি না৷
রুনিয়া এদের দুজনকে পরখ করছেন। বুকে দুই হাত গুজে বললেন, ‘এই জন্য সাফওয়ান এত রেগে রেগে আছে! তোরা নিশ্চই কোনো অপকর্ম করেছিস! এখন দ্রুত খাওয়া শেষ করে যা, গিয়ে দ্যাখ সাফওয়ান কি বলে৷”
শাফিনের খাওয়া আর এগোলো না৷ পাঁচ মিনিটের খাওয়া পনেরো মিনিটে শেষ করলো শাফিন৷ খাওয়া শেষ করে উঠে সিড়ির দিকে এগোতে এগোতে রুমাইশার উদ্দেশ্যে বলল, আমাকে বকা দিলে আমি সোজা তোমার নাম বলে দেবো যে তুমি ফুসলিয়ে আমাকে নিয়ে গেছো।”
রুমাইশা পেছন থেকে বলল, ‘আমরা যে ডোবার ওইপাশে গেছি সেটা যেন ভুলেও বলিস না ভাইয়াকে।”
শাফিন পেছন ফিরে রুমাইশার দিকে চোখা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, ‘হ্যা মিথ্যা বলি, আর ভাইয়া তার জন্য আমার শাস্তি ডাবল করে দিক!”
তারপর আগের মতো করে আবার ঘুরে সিড়িতে উঠলো।
রুমাইশা দ্রুত খাওয়া শেষ করে শাফিনের রুমে গিয়ে বসে রইলো শাফিনের আসার অপেক্ষায়৷
ধীর গতিতে ছাদের দিকে এগোলো শাফিন। ‘ভাইয়ার বারন করা সত্ত্বেও জঙ্গলে গিয়েছে ওরা৷ আজ ভাইয়া আর ওকে আস্ত রাখবে না৷” ভাবলো শাফিন।
সাফওয়ান বসে আছে টি টেবিলের পাশে রাখা চেয়ার টিতে। চোখে গগলস, কিন্তু মুখে মাস্ক নেই৷ হয়তো রাত বলে আর মাস্ক পরার প্রয়োজন মনে করেনি সাফওয়ান। কিন্তু গগলস ছাড়া ওর চলার উপায় নেই৷ কারণ চোখ দুইটা সর্বক্ষণ জ্বলজ্বল করে, বিশেষ করে রাতের বেলা।
শাফিন এসে সাফওয়ান এর থেকে কিছুটা দুরত্ব বজায় রেখে দাড়ালো। শাফিনের উপস্থিতি টের পেতেই সাফওয়ান বজ্রকঠিন কণ্ঠে বলে উঠলো, ‘আমি বারন করা সত্বেও জঙ্গলে কেন গিয়েছিলি? কি এমন প্রয়োজন পড়েছিলো?”
শাফিন মাথা নিচু করে রইলো। ভাইয়ের ধমকে চোখের কোণে পানি জমলো ওর৷ ছোট থেকে আজ পর্যন্ত বড়ো ভাইকে বড়ো ভাইয়ের মতো করে পায়নি শাফিন। যে টুকু পেয়েছে সেটুকু হয়তো ফর্মালিটি নয়তো ধমকাধমকি। একমুহূর্তেই ভাইয়ের দেওয়া সকল ধমক চোখের সামনে ফুটে উঠলো ওর৷ অভিমানে কান্না দলা পাকিয়ে ঠেলে উঠতে চাইলো।
অনেক চেষ্টা করে চোখের পানি আটকে রইলো শাফিন।
শাফিন কে চুপ থাকতে দেখে আবার ও কঠিন স্বরে বলে উঠলো সাফওয়ান, ‘কিসের জন্য জঙ্গলে গিয়েছিলি, আর গিয়ে কতখানি উপকার হয়েছে তার উত্তর দিয়ে এখান থেকে যাবি, তার আগে একপাও এখান থেকে নড়বি না।”
শাফিন নিজেকে সংযত করে কিছুটা সময় নিয়ে বলল, ‘রুমি আপু বলেছিলো যেতে, আমি না গেলেও রুমি আপু একাই চলে যেত, তাই বাধ্য হয়ে আমিও গিয়েছি আপুর সাথে।”
সাফওয়ান প্রচুর রেগে গেলো, চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,’ রিমুর কি কাজ ছিলো ওখানে যে ওর যেতেই হলো, আর কতদুর পর্যন্ত গিয়েছিলি?”
শাফিন আমতা আমতা করে বলল, ডো-ডোবা পর্যন্তই ভাইয়া।
— সত্যি করে বল কোন পর্যন্ত গিয়েছিলি?
আবার ও বজ্রকণ্ঠে বলল সাফওয়ান৷
এমন সময় রুমাইশা হঠাৎ করেই ছাদে চলে এলো ওদের কাছে৷ শাফিনের ঘরে বসে ওর মন টেকেনি, তাই নিজেও ছাদের দিকে এসে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলো।
শাফিনের ঠিক পাশে এসে দাড়ালো রুমাইশা । তারপর চোখ নামিয়ে নরম গলায় বলল,’ শাফিন কে বকবেন না ভাইয়া। ওকে আমিই নিয়ে গিয়েছিলাম জোর করে, ও যেতে চাইছিলোনা তবুও৷ দোষ টা আমারই, আমাকে বকা দিন। ওর কোনো দোষ নেই৷”
সাফওয়ান রক্তচক্ষু নিয়ে তাকালো রুমাইশার দিকে, কিন্তু চোখ ঢাকা থাকায় রুমাইশা বা শাফিন কেউই বুঝলো না যে সাফওয়ান চোখ দিয়েই তাদের গিলে খাচ্ছে।
চেয়ার ছেড়ে বসা থেকে উঠে দাড়ালো সাফওয়ান, তারপর হেটে একেবারে রুমাইশার সামনে এসে দাড়ালো। সাফওয়ানের সামনে রুমাইশা আর ও নুইয়ে পড়লো। কোনোরকম একটু উপরের দিকে তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করলো সাফওয়ানকে কিন্তু সাফওয়ানের বুক ছাড়া অন্য কিছু চোখে বাধলো না৷
সাফওয়ান নিজের ডান হাত দিয়ে রুমাইশার চিবুক ধরে উচু করে উপরের দিকে নিল,
সাফওয়ানের খসখচে হাতের স্পর্শ রুমাইশের নরম চিবুকে লাগতেই কেপে উঠলো রুমাইশা। নিঃশ্বাস যেন আটকে গেলো ওর, চোখ দুইটা বন্ধ করে ফেললো, ভুলেও চোখ খুললোনা ৷
রুমাইশার মুখ টা উচু করে খুব মনোযোগ দিয়ে দেখতে থাকলো সাফওয়ান৷
পাশেই শাফিনমাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। মাঝে মাঝে আড় চোখে দেখছে সামনে কি হচ্ছে, তারপর আবার চোখ নামিয়ে নিচ্ছে৷
সাফওয়ান রুমাইশার মুখে চোখ বুলাতে বুলাতেই শান্ত কিন্তু গম্ভীর কণ্ঠে বলল, ‘এটাই তোমার লাস্ট ওয়ার্নিং৷ এরপর যদি আমি তোমাকে জঙ্গলের আশে পাশে ও দেখি সেটা তোমার জন্য মোট্টেও ভালো হবে না মিস রুমাইশা কাদের।”
সাফওয়ানের মুখে তুমি সম্বোধন আর নিজের পুরো নাম শুনে রুমাইশা বেশ ভালো ভাবেই টের পেলো সাফওয়ানের রাগের বহর৷
কথা টা বলে আর ও কিছুক্ষন রুমাইশার মুখখানা ভালো ভাবে দেখে ওকে এক প্রকার ধাক্কা দিয়ে ছেড়ে দিলো সাফওয়ান৷
সাফওয়ানের থেকে ছাড়া পেতেই জোরে মুখ দিয়ে দম ছাড়লো রুমাইশা। এতক্ষন ও একটিবারের জন্যও চোখ খুলেনি।
সাফওয়ান নিজের রুমের ভেতর যেতে যেতে বলল, ‘আমি যা বলেছি সেটা মাথায় রাখবি দুজনেই। এখন যার যার রুমে যা।”
তারপর ঘরে ঢুকে ধাম করে দরজা লাগিয়ে দিলো।
শাফিন আর রুমাইশা এক সাথে নিচে নেমে এলো। এই নিয়ে দুজনে আর কোনো কথা বলল না। যদিও রুমাইশা বুঝলো যে শাফিন তার ওপর খুব অভিমান করে আছে, কিন্তু ওর অভিমান কাল ভাঙানো যাবে। আজ ও একটু ব্যাপার টা হজম করে নিক।
রুমে গিয়ে সাফওয়ানের বলা প্রত্যেকটা কথা নিজের মস্তিষ্কের ভেতর বার বার পুনরাবৃত্তি করতে থাকলো রুমাইশা। নিজেকে একটু ধাতস্থ করে নিয়ে তারপর পড়তে বসলো।
২ টার দিকে পড়া শেষ করে বিছানায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিলো রুমাইশা। বুকের ভেতর থেকে জঙ্গলে পাওয়া বস্তুটি বের করে টেবিলের ড্রয়ার ওপেন করে সেখানে রাখলো৷
তারপর বিছানা ঠিক করে বৈদ্যুতিক আলোর সুইচ অফ করে দিয়ে শুয়ে পড়লো।
রাতের চতুর্থ প্রহরের শুরুতে আকস্মিক ভারী শব্দে সদ্য নিদ্রা যাওয়া রুমাইশার তন্দ্রা ছুটে গেলো। বুঝলো আজ আবার ও কেউ উচু থেকে লাফ দিয়ে মাটিতে পড়েছে৷ সাথে সাথে বিছানা ছেড়ে উঠে জঙ্গলের দিকের জানালার কাছে গিয়ে দাড়ালো রুমাইশা।
কিন্তু পর্দা সরানোর পর বুঝলো দুর্ভাগ্যবসত আজ জানালার গ্লাস লাগানো হয়নি……..
(আজ অনেক বড় পর্ব দিয়েছি। কেউ অভিযোগ করবানা 🥹)