বাবা ছেলের নীরব আলিঙ্গন শেষে বিদায় সমাপ্ত হলো।বাবার ফ্লাইটের এখনো ঘন্টাদেড়েক বাকি।যদিও উনি ভেতরে চলে গিয়েছেন।আর দেখা হবে না তবুও আরহাম এক কোণায় বসে রইলেন।রাত গভীর হচ্ছে।ভেতরের তীব্র যন্ত্রণার বাঁধে ঢেউ চলছে।এই মুহূর্ত আরহামকে পোড়াচ্ছ বাবার বিদায়ে!আরো বেশী একা লাগছে নিজেকে।দূ:খগুলো শোনানোর মতো আর কেউ থাকলো না।মাথায় হাত রেখে ভরসা যোগানোর মতো কেউ থাকলো না।এ মুহুর্ত আরহামের মনে হলো, তিনি যেনো এখনও বাবার হাত ধরে হাঁটা সেই ছোট্ট আরহাম।যেকোনো সমস্যায় ছুটে চলে আসতেন আব্বুর কাছে।আব্বু কি দারুণভাবে সব সমস্যা, চিন্তা গুলোর সমাধান করে দিতেন।বড় হয়ে গিয়েছেন বলে,আব্বু আর সমাধান দিবেন না!মাথায় হাত বুলিয়ে বলবেন না ‘চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে?’
সময় এগোচ্ছে।এয়ারপোর্ট টা আস্তে আাস্তে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।এক সময় ড্রাইভার আসলেন।বললেন, ‘স্যার রাত বাড়ছে।বড়স্যার তো ভেতরে চলে গিয়েছেন।আপনিও বাড়িতে চলুন।’
‘আপনি গাড়ি নিয়ে চলে যান।আমি আসতে পারবো।’
‘মানে বলছিলাম আ্ আপনাকে আজ ঠিক লাগছে না বাসায় গিয়ে…
‘আমি কিছুক্ষণ পর যাবো।আপনি চলে যান।’
****
এপাশে লাইটের আলো ধোঁয়াশা!জায়গাটাও ইতিমধ্যে বেশ ফাঁকা।আরহাম থুতনীতে হাত ঠেকিয়ে হেলান দিয়ে বসে আছেন।চোখের পানিতে ঘড়ির গ্লাস ছুঁইয়ে ছুঁইয়ে ভিজছে।ফোনটা একটু পরপর ভাইব্রেট হচ্ছে।গাল মুছে ফোনটা বের করলেন পকেট থেকে।দেড়টা বাজতে চললো।আদওয়া আর হাফসার কল টেক্সট জমা হয়ে আছে।সাইলেন্ট করে আবারোও পকেটে ঢুকিয়ে ফেললেন।একটু পর আচমকা আওয়াজ হলো পিছনে।জুতার সাথে মাটির খসখস আওয়াজ।
আরহাম দাঁড়িয়ে পড়লেন।আধো অন্ধকারে অবয়ব টা চিনতে ভুল হলো না আরহামের।দ্রুত ফোন বের করে সময় দেখে বললেন, ‘আব্বু!’
আব্বু আরো দূ কদম এগিয়ে আসলেন।আরহাম অবিশ্বাস্য স্বরে বললেন, ‘প্লেন তো অলরেডি ছেড়ে দিয়েছে।আপনি….
আব্বু হেসে ফেললেন।বললেন, ‘আমি যাই নি।কেনো জানি পারলাম না আরহাম।আমার মনে হয়েছে..
‘কি?’
‘মনে হয়েছে তুমি ভালো নেই।’
আরহামের চোখের অবাধ্য জলগুলো আর বাঁধা মানলো না।অশ্রুসিক্ত নয়নে বাবার দিকে তাকাতে তিনি বললেন, ‘আমার একটা অংশ ভালো নেই।এত অশান্তি নিয়ে কি করে যেতাম।’
আরহাম বাবাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন তৎক্ষনাৎ।নি:শব্দে আঁখিদ্বয় ভিজে উঠলো।বাবার ফিরে আসায়,একটুও আফসোস হলো না।বরং খুশি হলেন।
*****
আব্বু একজন সার্ভিস ম্যান দিয়ে দূই কাপ চা আনালেন।চা খাওয়া শেষ হলে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এবার নির্দ্বিধায় বলো কেন তুমি এত আপসেট?কি এমন যন্ত্রণায় একটা সপ্তাহ থেকে ছটফট করেছো।আই নোটিসড ইউ।’
আরহাম আদওয়ার পুরো ব্যপারটা ক্লিয়ার করতেই তিনি চমকালেন।বললেন, ‘এটা আগে কেনো শেয়ার করো নি?’
‘আমি বুঝতে পারি নি।আমি কি করবো কি করা উচিত আমি কিছুই চিন্তাও করতে পারছিলাম না।’
‘বেস্ট হবে তুমি এভরোড যাও সিঙ্গাপুর অর লন্ডন।এ্যাজ সুন এ্যাজ পসিবল।যত অপেক্ষা করছো,তত দেরি হচ্ছে।প্রাইভেট ফ্লাইটে যাও।’
‘এত তাড়াতাড়ি কীভাবে?’
‘আপাতত বাসায় আসো।ব্রেইনকে রেস্ট দাও।আমি ব্যবস্থা করছি।’
‘আপনি বাসায় যান আব্বু।আমি আদওয়ার বাসায় যাবো।’
‘আচ্ছা।বাট টেনশন করো না।এটা কোনো সল্যুশন না।’
‘থ্যাঙ্কস এ্যা লট আব্বু।এই সাধারণ পরামর্শ টা আমি বুঝছিলাম না।আপনি আমাকে ভরসা যোগালেন।’
*****
ঘড়িতে রাত দূইটা।আদওয়ার আম্মু জানেন, আরহাম ফিরতে লেট হবে তবুও কলিং বেল চাপতে মন সায় দিলো না।আদওয়ার ফোনে কল দিতেই একটু পর মিসেস সেমু দরজা খুলে দিলেন।
‘সরি আপনাকে জাগালাম।’
‘সমস্যা নেই।তুমি কলিং বেল দিতে পারতে।’
‘উনি জেগে এখনো?’
‘না,ওর ফোন আমার কাছে দিয়ে ঘুমিয়েছিলো।নিয়ে যাও তুমি।’
‘আচ্ছা।’
রুমে গিয়ে দেখলেন, বিছানার এক কোণায় গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে সে।আরহাম কাঁথাটা গায়ে জড়িয়ে কপালে হাত দিয়ে দেখলেন, শরীর হিম ঠান্ডা।লাইট অফ করে বিছানায় আসতেই আব্বুর ফোন আসে।
‘তুমি হাফসার ফোন ধরো নি?আমি আসলাম ও নিজে দরজা খুলে দিলো।এতরাত জেগে ছিলো মেয়েটা।’
‘সরি আমার খেয়াল ছিলো না।ঘুমিয়ে গিয়েছেন এখন?’
‘হ্যাঁ আমি বললাম।এখন ঘুমিয়েছে মনে হয়।’
‘আচ্ছা সকালে ফোন দিয়ে কথা বলে নিবো।’
*****
হাফসাকে বিছানা থেকে তুলে বারান্দায় নিয়ে আসলেন।কি একটা অবস্থা!সারাদিন শুয়ে বসে অলস সময় কাটাচ্ছে!আর গুলুমুলু হচ্ছে!
সকালেই আদওয়াকে নিয়ে বাসায় ফিরেছেন।এতক্ষণ বাইরে ছিলেন।ফিরেছেন কিছুমুহুর্ত আগে।
আরহাম তাকে টুলে বসিয়ে চিরুনি নিয়ে আসলেন।মাথা আঁচড়ে দিতে চাইলে বুঝলেন, হিজাবের নিচে ছোটখাটো একটা জঙ্গল হয়ে উঠেছে।
আরহাম আশ্চর্য্য হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘সুন্দর সিল্কি চুলের এ কি অবস্থা?’
‘আমার ভালো লাগে না।’
‘এত অলস?আমাকে বলতেন।’
‘আপনি তো ব্যস্ত থাকেন।পাবো কই আপনাকে?’
‘আফওয়ান।আমি একটুও কেয়ার করি নি আপনার লাস্ট কয়েকদিন।’
‘অপারগতার জন্য একটা সুযোগ দেয়া যায়।’
‘ওকে।বলুন কি করতে হবে?’
‘রাতে ঘুরতে নিয়ে যেতে হবে।’
‘আম্মু আপনাকে রেখে আমাকে বাসা থেকে বের করে দিবেন।’
‘ডক্টরে গিয়েছি বলবেন।’
‘মিথ্যে বলতে পারবো না।’
‘এক্সেটলি মিথ্যে হবে না।দিনের এপোয়েনমেন্ট রাতে চেন্জ করবেন।আমরা বলবো ডক্টরে যাচ্ছি।তারপর ফিরার পথে একটু সময় ঘুরবো।ঠিক আছে?’
‘না।আপনার এসব দুষ্টু বুদ্ধি আম্মুকে বলবো আজ।’
‘আমিও বলবো আপনি আমার কেয়ার করেন না।’
‘লায়ার।’
‘আমার আবদার পূরণ করা কি কেয়ারের মধ্যে পড়ে না?’
‘তাই বলে এমন কিছু?’
‘আমি বলবো তো আম্মুকে।আম্মু আমার কথা বেশী গুরুত্ব দিবেন।’
‘হুম তারপর আপনার দূুষ্টুবুদ্ধির অভিযোগ চাপা পড়ে গিয়ে জমা সব রাগটুকু আমার ওপর আসবে।’
‘একদম তাই।এখন আপনার ওপর ছেড়ে দিলাম।’
*****
আদওয়া দাঁত দিয়ে নখ খুঁটতে খুঁটতে ঘড়িতে চেয়ে আছে একদৃষ্টিতে।আরহাম বেলকনিতে উল্টোপিঠ হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ঠুং ঠাং শব্দ তুলে কাটা পড়লেই তড়িৎ বেগে বেলকনিতে গিয়ে উচ্চস্বরে বলে, ‘হ্যাপি বার্থ ডে।হ্যাপি বার্থ ডে মাই ম্যান।লুক,ঠিক কাটায় কাটায় ১২ টাস উইস করেছি।’
আরহাম এদিকে ফিরে ওর দিকে নির্বিকার চেয়ে রইলেন।ওর আরো একবস্তা শুভেচ্ছা স্বাগতম জানানো শেষ হলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, ‘তো?কি হলো?’
আদওয়া সন্দেহী কন্টে জিজ্ঞেস করলো, ‘আজকে আপনার জন্মদিন না?’
‘বার্থ সার্টিফিকেটে আজকের তারিখ টাই লিখা।’
‘হ্যাঁ।আমি তো সেটাই বলছি।আজকে আপনার জন্মদিন।উইস করায় খুশি হোন নি?’
আরহাম স্মিত হেসে বললেন, ‘জন্মদিন প্রথা শুরু হওয়া সম্পর্কে বলি।তাহলে বুঝবেন।’
‘হুউ বলুন।’
(জন্মদিন পালন এই প্রথাটা শুধুমাত্র এক জাতির মাধ্যমে আসে নি!
সর্বপ্রথম উৎপত্তি হয়!ফেরাউনদের মাধ্যমে, তারপর গ্রীক দেবী,শ্রীকৃষ্ণ,রোম,প্যাগান,শয়তান ধর্ম, যাদুবিদ্যার সাথে সংমিশ্রণ কিংবা বিকৃত হয়ে এতো জায়গায় ঘুরে ঘুরে এসেছে এই প্রথা।
জন্মদিন (Birthday) পালন করা এবং এ উপলক্ষে উইশ (wish) করা বা গিফট লেনদেন করা শরিয়ত সম্মত নয়। কারণ তা অমুসলিমদের সংস্কৃতি। আর ইসলামে অমুসলিমদের অনুসরণ-অনুকরণ করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ-চাই তা ইবাদতের ক্ষেত্রে হোক অথবা আচার-আচরণ, পোশাক-পরিচ্ছদ, রীতি-নীতি বা কৃষ্টি-কালচারের ক্ষেত্রে হোক। কেননা হাদিসে এসেছে:
❖ আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
“যে ব্যক্তি বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত হিসেবে গণ্য হবে।” [সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়: পোশাক-পরিচ্ছেদ হা/৪০৩১-হাসান সহিহ]
এছাড়াও হাদিসে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিয়ামতের পূর্বে অনেক মুসলিম ইহুদি-খৃষ্টানদের রীতি-নীতি অনুসরণ করবে বলে ভবিষ্যতবাণী করেছেন-বর্তমানে যার বাস্তব প্রতিফলন আমরা স্বচক্ষে দেখতে পাচ্ছি।
যা হোক, ইসলামে যেহেতু জন্ম-মৃত্যু দিবস পালন করার অস্তিত্ব নেই সেহেতু অমুসলিমদের সাদৃশ্য অবলম্বনে জন্মদিবস (Birth Day) পালন করার সুযোগ নাই।সুতরাং এ উপলক্ষে কাউকে উইশ (wish) করা, শুভেচ্ছা বার্তা পাঠানো, গিফট দেয়া, কেক কাটা, মোমবাতি জ্বালানো বা ফুঁ দিয়ে নিভানো, বিশেষ খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করা, জন্ম দিনের পার্টি করা সবই হারাম।
আল্লাহ তাওফিক দান করুন।আমিন।
এইগুলা জানার পরে কোনো মুসলিম কি এই জন্মদিন পালন করতে পারে?আবারোও বলচ্ছি ‘জানার পরে’!
বর্তমানে যেভাবে আমাদের সমাজে আমাদের চারপাশে এই নিকৃষ্ট প্রথা টা মিশে আছে সবার কাছে এটা আজ স্বাভাবিক।আমি যতোটুকু জানি আল্লাহ তা’আলা না জেনে গুনাহ করলে মাফ করে দিতে পারেন! তবে জেনে শুনে অবাধ্যতায় ইচ্ছা করে লিপ্ত হলে সেই মাফ আমরা নাও পেতে পারি।আমাদের উচিৎ যথাসম্ভব এর থেকে নিজেকে হিফাজত রাখা।
নিজের জন্মদিন পালন করা যেমন নিকৃষ্টতম কাজ।তেমনই এই জন্মদিন সম্পর্কিত সকল কাজে লিপ্ত হওয়া ও একই রকম গুনাহ। কাউকে উইশ করা,কেক না কাটুক!অন্যের টায় লিপ্ত হওয়া মানে তাকে সমর্থন করা।এর থেকেও বের হতে হবে আমাদের।
জন্মদিন আসা মানে আমাদের জীবন থেকে একটি বছর চলে যাওয়া।মৃত্যুর আরেকটু কাছাকাছি চলে যাওয়া। কিন্তু আমাদের আশেপাশে অনেকেই জন্মদিনের উইশ এমন ভাবে করা হয়, আল্লাহ যেনো দীর্ঘজীবি করে!হায়াৎ আরোও বাড়িয়ে দেওয়া হয়, পরবর্তী বছর গুলো যেনো সুখে শান্তিতে কাটানো যায়। নিকৃষ্টতম প্রথাটির সাহায্যে কিভাবে আল্লাহর অবাধ্য হয়ে কিভাবে মানুষ পরবর্তী জীবনগুলো সুখে শান্তিতে কাটাতে পারে! আজ না হোক কাল না হোক এর জবাবদিহি রবের কাছে করতেই হবে! যেই মুসলিমের ভিতরে আল্লাহর ভয় আছে তাকওয়া আছে সে নিসন্দেহে এটা ত্যাগ করতে একটুও ভাববে না!
তবে আজ থেকেই আমাদের প্রতিজ্ঞা করতে হবে,আর যাই হোক আমরা নিজেদের বার্থডে যেনো না পালন করি। অনেক সময় বার্থডে পার্টির দাওয়াত আসে সেদিন আমরা ঘুরতে চলে যাবো অন্য জায়গায়।আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সবচেয়ে কাছের মানুষটার বার্থ ডে ও হয়তো চলে আসতে পারে। কিন্তু আমাদের শক্ত থাকতে হবে।কোনো ভাবেই উইশ করা যাবে না। তার সন্তুষ্টির জন্য আল্লাহর অসন্তুষ্টি অর্জন করা থেকে পানাহ চাই আমরা।
অনেকেই এই পরিস্থিতিতে হেরে যায়। ভেবে দেখুন একবার আপনি যে আপনার কাছের মানুষ টাকে উইশ করলেন না? এটা কার জন্য? আপনার সৃষ্টিকর্তার জন্য। আজ আপনি করলেন না মানে পরবর্তী সময় গুলো তেও আপনাকে আর করতেও হলো না।আপনার আজকের এই কঠিন পদক্ষেপ ইন শা আল্লাহ বাচিয়ে দিবে সারাজীবন দুইজনকেই এই গুনাহ থেকে।সে উত্তর জানতে আসলে,তার কাছেও একটা ইসলামের দাওয়াত পৌছালো!
আমাদের দাওয়াত তো পৌছাতে হবে? এবার মানা না মানা তার ব্যাপার।কিন্তু উলটো আপনি যদি মন রক্ষা করতে যেয়ে উইশ করেন!মানে আপনি এই নিকৃষ্ট কাজ কেও সাপোর্ট করলেন!সমর্থন না করে দাওয়াহ দিন!
আজ থেকেই মুছে ফেলতে থাকুন আপনার রবের জন্য আপনার জীবন থেকে এই জন্মদিন নামক শব্দটি!এবং আজ থেকেই ওয়াদা করুন এর থেকে নিজেকে সবসময় হিফাজত রাখার চেষ্টা করবেন।হিদায়েতের পর অনিচ্ছায় স্বত্তেও জানি এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় অনেক সময়! তখন কিছু না পারলে অন্তত পরিপূর্ণ চেষ্টা তো করতে হবে? কিছু না পারলে অন্তত ঘৃণা তো করতে পারি।একজন মুসলিম হিসেবে।)
আদওয়া উৎসুকচিত্তে বলল, ‘ও মাই গড!এত কিছু তো জানতাম না।’
‘ও মাই ‘গড’ বলবেন না।’গড’ মানে ঈশ্বর।’
‘আমি তো এটাই বলতাম।আমি সত্যি জানতাম না।’
‘এখন তো জেনেছেন।এখন থেকে বলবেন না,ক্ষমা চেয়ে নিবেন।’
‘আচ্ছা।কিন্তু আপনার দিনটাকে এত অশুভ করে দিলাম উইস করে তাই না?’
‘তেমন কিছু না।’
আরহাম চুপ হয়ে গেলেন।বেশ কিছুক্ষণ নীরবতায় কাটলো।আদওয়া অনুমতি চাইলো, একটা প্রশ্ন করি?’
‘করুন।’
‘আপনি কি কোনো কারণে আপসেট?কদিন থেকে শুধু একা থাকেন, চুপচাপ থাকেন।কেন?’
‘একটা ভ্যাকেশন নেওয়া দরকার তাই না?’
‘হুমম।’
‘চলুন সিঙ্গাপুর যাই?’
82★
(১২২)
চলুন সিঙ্গাপুর যাই?’
‘সত্যি?’
‘হুমম।’
‘আমার খুব ড্রীম ছিলো।’
‘আচ্ছা আপনি আমার কাছে কি কি চান বলুন তো।’
‘এ জীবনে আপনি আমার শ্রেষ্ঠ উপহার।আর তেমন কোনো চাওয়া নেই?’
‘তাই?আমি এতো স্পেশাল?’
‘হুমম।আমি আপনার কাছে স্পেশাল না তাই না?খুব সাধারণ?’
‘উহু।আপনি অবশ্যই আমার কাছে স্পেশাল।’
‘সবসময় স্পেশাল থাকবো তো?’
‘ইউ আর অলওয়েজ স্পেশাল ফর মি শ্যামাপাখি!’
আদওয়া হালকা করে জড়িয়ে ধরলো আরহামকে।আরহামও দূহাতে আগলে নিলে বলল, ‘হাইটে আরেকটু লম্বা হলে ভালো হতো না?আপনার বুকে পড়ে থাকি!’
‘বুকসম হওয়ায়ই তো ভালো মতো জড়িয়ে ধরতে পারি।পারফেক্ট হাইট।’
‘আপনি না আফগানিস্তানি পুরুষদের মতো।এতো লম্বা।’
আরহাম হেসে ফেললেন।ঘুমাতে গেলে সে বায়না ধরলো নবী(সা.) এর জীবন থেকে কোনো সুন্দর ঘটনা বলতে।
আরহাম বলতে শুরু করলেন।তাদের পরিবারের পরিচয় দিতে দিতে একসময় আলি (রা.) আর ফাতিমার ঘটনাও চলে আসলো।অর্ধরাত চললো তাদের তাওয়াক্কুল এর ঘটনা শুনতে শুনতে।ওফাত ও বাকি রইলো না।ফাতিমা (রা.) এর রাতে জানাজা হওয়ার কারন জানলে আদওয়া প্রচন্ড অবাক হয়।এই ঘটনা প্রথম শোনা ওর।আশ্চর্য্য হয়ে বলে, ‘উনি এমন কঠোর পর্দানশীল ছিলেন?’
‘হুমম।’
‘আমি যদি আপনার আগে মারা যাই আমারও এভাবে রাতে জানাজা করবেন যাতে আমাকে কোনো পরপুরুষ না দেখে।’
‘এতটুকু থাক।আর বলা লাগবে না।’
‘আপনার মন খারাপ হয়ে গেলো?’
‘ঘুম আসছে।’
‘অযু আছে?’
‘না একটু পরে তো তাহাজ্জুদের জন্য উঠছি ইন শা আল্লাহ।’
‘উহু,পড়ে আসুন।’
আরহাম অলসভঙ্গিতে বললেন, ‘ইচ্ছে করছে না উঠতে।’
‘বিছানা থেকে ঠেলে ফেলে দিবো।’
অগত্যা উষ্ণতা ছেড়ে অযু পড়েই আসতে হলো আরহামের।আদওয়ার জিদে না হেসে পারলেন না।ভাবলেও অবাক হোন,কতটুকু বদলে গিয়েছে সে।তাঁর পুরো দিনটুকুই ছোট ছোট ইবাদতে সাজানো।আর চাঞ্চল্যতায় ঘেরা!
******
পরদিন সকাল সকাল আরহামের একটা চিঠি আসলো।কে দিতে পারে চিঠি!সন্দেহী মনে সেটা খুলতেই দেখলেন মাইমুনার পক্ষ থেকে খাম।
অলিখিত সাক্ষরে ইনভিজিবল কোর্টে আমার বিরুদ্ধে বিচ্ছেদের মামলা।এত নিষ্ঠুরতা হানি?
খামটা পড়ে তাচ্ছিল্য হাসলেন আরহাম।তড়িৎ ভেতরে বিস্ফোরনের মতো ভারী এক যন্ত্রণাদায়ক অনুভূতি খেলে গেলো।মাইমুনার সাথে আর দেখা হবে কোর্টে।বিচ্ছেদের আলাপ নিয়ে।নিজের অর্ধাঙ্গিনী যেখানে বুঝলেন না,সেখানে জোর করে ঠিক কতটুকু পাওয়া যায়, জানা নেই আরহামের।
*****
সকালে আম্মু ফুপির বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলেন,বিকেলেই ফিরবেন বলে।কিন্তু আবহাওয়া চমকালো!বিকেলে খুব জোর বৃষ্টি এলো!একেবারে আকাশে ঘনঘটা অন্ধকার তুলে!আসরের নামাজ ঘরেই আদায় করে জায়নামাজ তুলে আদওয়ার রুমে আসলেন আরহাম।রুমে না পেয়ে বেলকনিতে যেতে দেখলেন, হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি ছঁইছে।পানি ছিটাতে ছিটাতে বেলকনির টাইলস ভিজে জবজবে।নিজেও আধভেজা,ঠান্ডায় কাঁপছেও, তবুও থামার নাম নেই।আরহাম দেয়ালে হেলান দিয়ে কিছুক্ষণ ওর কান্ড দেখতে থাকলেন।
একসময় তীর্যক বেগের বৃষ্টি তীব্র বেগে ধরনী ছুঁতেই কেঁপে উঠলো আদওয়া।দ্রুত পেছনে সরে আসতে নিলে,ধপাস করে ফ্লোরে স্লিপ খেয়ে পড়ার আগেই চিৎকার দিলো।
কিছুক্ষণ পর চোখ মেলে বুঝলো, ও তো পড়ে যায়নি।পেছন থেকে একজোড়া পুরুষালি হাত আগলে নিয়েছে এবারের মতো।ঘুরে চোখ ফিরতে দেখলো, আরহাম চোখমুখ কুঁচকে তাকিয়ে আছেন।সতর্ক হয়ে ম্যাটের ওপর এসে দাঁড়ালেই তিনি বাঁধন ছাড়লেন।
‘সময়মতো আপনি না আসলে এতক্ষণে কুঁজো হয়ে যেতাম।কার জানি অভিশাপ লেগেই যাচ্ছিলো একটুর জন্য।’
‘ভ্ ভেজা কাপর চেন্জ করে আসুন।’
সম্মতি দিয়ে বড় বড় পায়ের ধাপ ফেলে রুমে ফিরতে চাইলে প্রশ্ন জাগলো, উনি আসার আওয়াজ পায়নি কেন!পায়ের শব্দ তো শোনা যেতো!জিজ্ঞেস করার উদ্দেশ্যেই আবারো ফিরে আসতে দেখলো, আরহামের নখ ফেটে রক্ত বেরোচ্ছে।খানিকটা চিৎকার দিয়েই জিজ্ঞেস করলো, ‘নখ ফাটলো কীভাবে আপনার?কখন এমন হলো?’
‘ গ্ল্ গ্লাসে চিপা খেয়ে।’
‘কীভাবে হাত লাগলো?এত অসতর্ক কেন?বসুন তো।আমি মেডিসিন লাগিয়ে দিচ্ছি।’
‘আপনি আগে চেইন্জ করে আসুন।আমি অপেক্ষা করি।’
‘ওকে টু মিনিটস।’
মিনিট দূয়েক পরেই তাড়াহুড়ো করেই সে আসলো।বক্স এনে হাতে ব্যান্ডেড লাগিয়ে দিতে দিতে বলল, ‘খুব জ্বলছে মে বি?’
‘সেরে যাবে।’
ব্যান্ডেজ দিয়ে আদওয়া আরহামের হাত মুখের সামনে নিয়ে ঠোঁট নাড়িয়ে কিছু বিড়বিড় করে ফুঁ দিয়ে বলে, ‘কমে যাবে।’
‘কি পড়লেন?’
‘দোয়াহ।’
আরহাম মুচকি হেসে আদওয়ার হাতের পিঠে চুমু খেয়ে বললেন, ‘আজকে যদি কফ উঠে, ঘরের বাইরে রেখে দরজা বন্ধ করে দিবো।’
‘আমি জানি তো,আপনি এমন পারবেন না।’
‘পারবো।দেখতে চান?
‘খিচুড়ি খেতে ইচ্ছে করছে।’
‘বৃষ্টির মধ্যে বাইরে যাওয়া যাবে না।’
‘পার্সেল না।আমি বানাবো।’
‘রান্না পারেন আপনি?’
‘ইউটিউব দেখে।’
‘আচ্ছা চলুন, আমি আর আপনি রান্না করবো আজ।’
*****
খিচুড়ি হাতে দূই শেফ হাজির দেখে হাফসা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো, ‘কুকার কে?’