অপেক্ষা – মাহা আরাত | পর্ব – ৪২

67★

হেঁচকি তুলতে তুলতে বলল,’আমার খারাপ লাগেনি সবার সামনে?’

আরহাম হাতজোড় করে ক্ষমা চাইলেন।কান ধরেও দাঁড়িয়ে রইলেন অনেকক্ষণ।সরিও বললেন।হাফসা মুখ ফিরিয়ে নিলো।প্রিয়তমার রাগ ভাঙ্গাতে ভাঙ্গাতে হাঁপিয়ে উঠলেন ঠিকই তবু রাগ ভাঙ্গানো গেল না।ছোট্ট প্রাণের আবরণে স্পর্শ করে বললেন, ‘তার জন্য হলেও শেষবারের মতো ক্ষমা করে দিন।আই প্রমিস,সবার সামনে আর কখনো আঘাত দিয়ে কথা বলব না।’

‘আলাদা বলবেন?’

‘জ্বী না,আলাদাও না।’

‘উছিলা দেখিয়ে এবারের মতো মাফ পেয়ে গেলেন।আর এমন করলে আমি আমার বাড়ি চলে যাবো।’

আরহাম জ্বিভে কামড় দিয়ে বললেন, ‘আর?আর আমি থাকবো কী করে?’

‘আমি কি জানি!’

‘রাতে কীডন্যাপ করে নিয়ে আসব আপনাকে।’

হাফসা হেসে ফেললো।লোকটার সাথে ঠিকমতো রাগ করেও থাকা যায় না!হাসাতেই হবে…..!

*******
আরহাম নতুন ফোন কিনে দিয়েছেন প্যাকেটটাতে।সাথে সিমও।
ফোন আর ওপেন করলো না সে।টেবিলের একপাশে রেখে এসে শুয়ে পড়লো।

ঘড়ির কাটা ছুটছে তো ছুটছে।কিন্তু ঘুম আসছে না।উনার প্রতি চাপা একটা অভিমান রয়ে গেলো।প্রকাশ করবে না,অভিমান গলে,ক্ষয়ে মিশে যাবে,তাও বুঝতে দিবে না।সবাইকেই খুব সুন্দরমতো আদর-শাসন করা হয়,কিন্তু ওর সাথে কথাও বলা হয় না সারাদিনে।বাবা একটা গিফট পাঠানোয় সামান্যতেই কতটুকু রাগ করলেন,অসন্তুষ্ট হলেন।প্রকাশ না করলেও বুঝা যায়,উনি মোটেই খুশি নন।নিজের প্রতিটি পাগলামির ফোঁটায় ফোঁটায় বিনিময়ে অবহেলা পাচ্ছে।আগে না মানলেও এখন মানে সে,জোর করে কিছু আদায় করা যায় না,যদি যায় সেটাতে খাদ আছে,নয়তো অভিনয়!

এপাশ ওপাশ করতে করতে চোখ প্রায় লেগে আসছিলো।তখন কে যেনো হুড়মুড়িয়ে ডুকলো।আরহাম আসলেন।আদওয়াকে চোখ বুজা দেখে কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আদওয়া!ঘুমিয়ে গেছেন?’

আরহাম হাতজোড় করে ক্ষমা চাইলেন।কান ধরে উঠবস করতে করতে সরি বললেন।হাফসা মুখ ফিরিয়ে নিলো।প্রিয়তমার রাগ ভাঙ্গাতে ভাঙ্গাতে হাঁপিয়ে উঠলেন ঠিকই তবু রাগ ভাঙ্গানো গেল না।ছোট্ট প্রাণের আবরণে স্পর্শ করে বললেন,’তার জন্য হলেও শেষবারের মতো ক্ষমা করে দিন।আই প্রমিস,সবার সামনে আর কখনো আঘাত দিয়ে কথা বলব না’

‘আলাদা বলবেন?’

‘জ্বী না,আলাদাও না’

‘উছিলা দেখিয়ে এবারের মতো মাফ পেয়ে গেলেন।আর এমন করলে আমি আমার বাড়ি চলে যাবো’

আরহাম জ্বিভে কামড় দিয়ে বললেন, ‘আর?আর আমি থাকবো কী করে?’

‘আমি কি জানি!’

‘রাতে পালিয়ে নিয়ে আসব আপনাকে’

হাফসা হেসে ফেললো।লোকটার সাথে ঠিকমতো রাগ করেও থাকা যায় না!হাসাতেই হবে…..!

*******
আরহাম নতুন ফোন কিনে দিয়েছেন প্যাকেটটাতে।সাথে সিমও।
ফোন আর ওপেন করলো না সে।টেবিলের একপাশে রেখে এসে শুয়ে পড়লো।

ঘড়ির কাটা ছুটছে তো ছুটছে।কিন্তু ঘুম আসছে না।উনার প্রতি চাপা একটা অভিমান রয়ে গেলো।প্রকাশ করবে না,অভিমান গলে,ক্ষয়ে মিশে যাবে,তাও বুঝতে দিবে না।সবাইকেই খুব সুন্দরমতো আদর-শাসন করা হয়,কিন্তু ওর সাথে কথাও বলা হয় না সারাদিনে।বাবা একটা গিফট পাঠানোয় সামান্যতেই কতটুকু রাগ করলেন,অসন্তুষ্ট হলেন।প্রকাশ না করলেও বুঝা যায়,উনি মোটেই খুশি নন।নিজের প্রতিটি পাগলামির ফোঁটায় ফোঁটায় বিনিময়ে অবহেলা পাচ্ছে।আগে না মানলেও এখন মানে সে,জোর করে কিছু আদায় করা যায় না,যদি যায় সেটাতে খাদ আছে,নয়তো অভিনয়!

এপাশ ওপাশ করতে করতে চোখ প্রায় লেগে আসছিলো।তখন কে যেনো হুড়মুড়িয়ে ডুকলো।আরহাম আসলেন।আদওয়াকে চোখ বুজা দেখে কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আদওয়া!ঘুমিয়ে গেছেন?’

১০৬
ইচ্ছে করেই প্রথমে জবাব দিলো না।আরহাম হাত ধরে হালকা টান মেরে বললেন, ‘ঘুমিয়ে গেলেন কেন?উঠুন প্লিজ।’

আদওয়া তাও উত্তর দিলো না।আরহাম হাত ছেড়ে দিলেন।মুড অফ করে পাশে বসে রইলেন।আদওয়া বুঝলো না উনার এমন বিহ্যাভের কারন।খারাপ কিছু হয়নি তো!

একটু পর আবার কাছে এসে বললেন, ‘ঘুমালেন কেন?একটু অপেক্ষা করলেন না?’

আদওয়া পিটপিট করে চোখ খুলে নড়েচড়ে উঠলো।তিনি দ্রুত লাইট জ্বালিয়ে বললেন, ‘প্লিজ ঘুমাবেন না আবার।’

আদওয়া উঠে বলল, ‘কেন?’

‘দরকার আছে।আস্তে আস্তে হাঁটবেন।আব্বু যেনো টের না পায়।ছাদে যাবো।’

আদওয়া কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ পেলো না।লাইট অফ করে চুপিচুপি ছাদে উঠলো দূজন।

শেষ সিঁড়িতে পা রেখে আদওয়া জিজ্ঞেস করলো, ‘এত রাতে ছাদে কেন?’

‘এমনিই।’

‘ঘুম পেয়েছে আমার।’

‘আপনি রেগে আছেন আমার ওপর?’

‘না তো।’

‘আমি অবশ্যই স্যুট পড়বো।আপনি…..’

‘লাগবে না পড়া।সকাল সকাল বাসায় রিটার্ন করে দিব।’

‘আফওয়ান।প্লিজ ফরগিভ মি।আপনার বাবার কাছে আমি ক্ষমা চাইবো।’

‘কেন?’

‘গিয়ে বলব, ‘আপনি গিফট পাঠানোয় প্রথমে আমি রাগ করেছিলাম না বুঝে।এজন্য আমি দু:খিত।ক্ষমা করে দিন।’

‘দরকার নেই।’

‘আছে।কালকে ক্ষমা চাইবো।’

‘না, বলবেন না।’

‘কেন?’

আদওয়া মিনমিনে স্বরে বলল, ‘আমি কি চাইব আপনি বাবার সামনে ছোট হোন?’

‘আচ্ছা?যাই হোক এখন রাগ করে থাকবেন না।’

‘আমার রাগ কন্ট্রোলে আছে।কিন্তু আপনার যখন রাগ উঠবে,আমাকে আগে আগে সিগন্যাল দিবেন।নাহলে ভয়ে মারা পড়বো।’

আরহাম হেসে ফেললেন।হাত ধরে ছাদের দিকে এগিয়ে নিলেন।

ছাদে গিয়ে চোখমুখে বিস্ময় দেখা দিলো আদওয়ার।ছাদের একপাশ সুন্দর করে কালারফুল লাইট,ফিচার,বেলুন,রিবন, নেট দিয়ে ডেকোরেট করা।মাঝে লাভ শেইপের বাতি জ্বলছে।

আদওয়া অবাক হয়ে চারপাশে তাকিয়ে আরহামের দিকে ফিরে উচ্ছাসিত হয়ে বলে,’এত সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা কেন?’

‘আসুন বসি।’

আরহাম গিয়ে দোলনায় হেলান দিয়ে দাঁড়ালেন।আদওয়া হেঁটে হেঁটে চারিপাশ মুগ্ধ হয়ে দেখলো।বলল,’এত সুন্দর করে কেন সাজানো বলুন না?’

আরহাম মুচকি হেসে সিঁড়ির ভিতরে গিয়ে একটা সুইচ বাটনে ক্লিক করেন।মুহুর্তেই পুরো তাজওয়ার ভিলা বিজলির মতো জ্বলে উঠলো।আদওয়া অবাক হয়ে রেলিং থেকে মুখ বাড়িয়ে দেখলো,লাইটিং একেবারে নিচের বারান্দা ছুঁয়েছে।এতক্ষণ তো বাতিগুলো চোখে পড়ছিলো না।

‘আপনার ইচ্ছা ছিলো পুরো মহলে লাইটিং থাকুক তাই!আর ছাদের এই অল্প একটু অংশ এমনিই করিয়েছিলাম।’

আদওয়া উৎফুল্লিত হয়ে চারিপাশ দেখলো।ফিরে এসে ফুলে সাজানো দুল খাওয়া দোলনায় বসে পড়লো।আড়চোখে আরহামের দিকে কয়েকবার তাকালো,তিনি আকাশ দেখায় ব্যস্ত।হঠাৎ ওর দিকে চোখ ফিরিয়ে বলতে লাগলেন, ‘অদ্ভুত ভাবে আপনার আরেকটা ইচ্ছা পূরণ হয়ে গেছে।আজকে পূর্ণিমার চাঁদ।’

‘আংশিক পূরণ হয়েছে!’

আরহাম ওর পাশে গিয়ে বসলেন।দোলনা দূলে উঠলো।জিজ্ঞেস করলেন, ‘এখন?’

‘পুরোপুরি।’

‘আতশ বাজি ফোটানো যাবে না।আশেপাশে ফ্ল্যাটে বাচ্চা আছে।শব্দতে ভয় পাবে,আর পরিবেশের জন্যও ক্ষতিকর।’

আদওয়া মুচকি হেসে বলল,’যতটুকু হয়েছে ততটুকুই যথেষ্ট।আমি ভাবিনি আপনি গুণে গুণে আমার প্রতিটা ইচ্ছা পূরন করার চেষ্টা করবেন।’

‘খুশি?’

‘খুউউউউব।’

‘এখন চলুন নিচে যাই।’

রুমে এসে পাশাপাশি শুয়ে পড়লেন দূজনে।আদওয়ার বুকের ভেতরটা কেমন ঢিপঢিপ করছে।কখনো কি ভেবেছিল, কল্পনাগুলো সত্যি হবে।সত্যিই এই মানুষের অর্ধাঙ্গিনী হওয়ার সৌভাগ্য হবে!

*******
শেষরাতে আরহামের লাগাতার ডাকে চোখ খিঁচে তাকালো আদওয়া।আরহাম বললেন, ‘উঠুন।নামাজ পড়বো।’

আদওয়া ঘুমু ঘুমু কন্ঠে বললো,’এত তাড়াতাড়ি আযান দিয়ে দিল?একটু আগেই না ঘুমালাম।’

‘আযান হয়নি।তাহাজ্জুদ পড়বো।দেরি হয়ে যাচ্ছে উঠুন।’

‘আমার মাথা ভার ভার লাগছে।আপনি পড়ে নিন।আযানের কিছুসময় পর ঢেকে দিবেন।উঠে ফজর পড়বো নে।’বলে আবার ঘুমাতে চাইলে তিনি বললেন,

‘না,আপনাকে নিয়েই নামাজ পড়বো।উঠুন সময় চলে যাচ্ছে।’

আরহামের এমন একরোখা জোড়াজুড়িতে উঠতে বাধ্য হলো আদওয়া।ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে ওয়াশরুম যেতে যেতে আচানক দরজার সাথে বাড়ি খেতে নিলেই আরহামের হাত লাগে কপালে।

‘সরি’ বলে ওয়াশরুমে ডুকলে আরহাম বেলকনিতে এসে অপেক্ষা করতে লাগলেন।

মিনিট দশেক পেরোলো।আদওয়ার বের হওয়ার নাম নেই,ওয়াশরুমে পানির শব্দ ও নেই।আরহাম ডাকতে গিয়েও ফিরে গেলেন।আরও মিনিট পাঁচেক অপেক্ষা করে দরজায় ঠোকা দিয়ে বললেন, ‘এতক্ষণ লাগে?তাড়াতাড়ি আসুন।’

ওপাশ থেকে তাও আওয়াজ নেই।আরও কয়েকবার ডেকেও কোনো রেসপন্স না পেয়ে দরজায় বাড়ি দিয়ে বললেন,’ওয়াশরুমে ঘুমিয়ে গিয়েছেন নাকি আপনি?’

‘ওয়াশরুমে ঘুমিয়ে গিয়েছেন নাকি আপনি?’

এবারও কোনো উত্তর না পেয়ে নিজের প্রতিই নিজের রাগ উঠলো আরহামের।ডাকা বন্ধ করে বসে রইলেন চুপচাপ।মিনিট পাঁচেক পর আচানক দরজা খুললো আদওয়া।ব্রাশ মুখে অস্পষ্ট সুরে বলল,’ডেকেছিলেন?’

‘ফ্রেশ হয়ে আসুন।’

একটু পর অযু পড়ে বের হলো আদওয়া।দেয়ালে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ছিলো সে।চেতন ফিরলো আরহামের ডাকে।

আরহামকে বসে থাকতে বলল,’আসুন নামাজ পড়ে নিই।সময় চলে যাচ্ছে তো।’

‘চলে গিয়েছে।ফযরের ওয়াক্ত ডুকে গেছে।আযান পড়ে যাবে।’

আদওয়া লজ্জিত হলো নিজের অপকর্মে।

তিনি দরজা খুলতে খুলতে বললেন, ‘আপনি এখন নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে যান।’

‘আ আ আপনি কোথায়….

‘মসজিদে।’

******
পরের দিন সকালবেলা ঘটলো এক অপ্রত্যাশিত দূর্ঘটনা।মাইমুনার আম্মু এসে অভিযোগ করে বসলেন আরহামের ওপর।

সোফায় বসা আব্বুকে চেঁচিয়ে বলতে লাগলেন, ‘আমার মেয়ে কি জ্বলে ভেসে আসছে?ও না হয় অসুস্থ বলে জামাই দ্বিতীয় বিয়ে করেছে।এখন আবার বিয়ে কেন করলো?কয়টা বউ লাগে?দূইটায় হচ্ছিলো না?’

68★

সোফায় বসা আব্বুকে চেঁচিয়ে বলতে লাগলেন, ‘আমার মেয়ে কি জ্বলে ভেসে আসছে?ও না হয় অসুস্থ বলে জামাই দ্বিতীয় বিয়ে করেছে।এখন আবার বিয়ে কেন করলো?কয়টা বউ লাগে?দূইটায় হচ্ছিলো না?’

চেঁচামেচি শুনে ততক্ষণে সবাই বেরিয়ে পড়েছে।আরহামও।মাইমুনা উনাকে আটকানোর চেষ্টা করছেই।কিন্তু মায়ের শেষবাক্যে শুনে নির্বাক হয়ে পড়লো সে।ঠিক এই কথাটা যে আরহামকে অসহ্য রকমের কষ্ট দিতে পারে,সেটা মায়ের চিন্তাধারার ছিটেফোঁটায় ও নেই।’

বাধ্য হয়ে মাকেই ধমকে উঠে বলল,’কোন মুখে এই কথাগুলো বললে।আরহাম আমার পারমিশন নিয়েই বিয়ে করেছেন।আমার তো কোনো আপত্তি নেই,আমি তো সুখে আছি।তুমি কেন আমাদের পার্সোনাল ম্যাটারে ইন্টারফেয়ার করছো?’

মেয়ের দিকে চোখ বড়বড় তাকালেন উনি।বললেন, ‘স্ট্রেইন্জ মাইমুনা!তুমি আমার সাথে উঁচুগলায় কথা বলছো?এখানে এসব শিখেছো তুমি?’

মাইমুনা আরও রেগে গেলেন।কন্ঠস্বর কঠিন করে বলল,’আমাকে বাধ্য করছো তুমি এভাবে কথা বলতে।তুমি কেন উনাকে এসব কথা বলছো?’

মাইমুনার মা বিদ্রুপসুরে বললেন, ‘এত আহ্লাদ তার জন্য।এত যখন ভালোবাসো তখন তো পারমিশন দেওয়া উচিত ছিলো না….’

মাইমুনা রাগ কন্ট্রোলহীন হয়ে পড়লো।উচুস্বরে বলল,’ইনাফ বলেছো আম্মু।আর..

আর কিছু বলার আগেই আরহাম এসে সামনে দাঁড়ালেন।চোখের ইশারায় বুঝালেন চুপ থাকতে।আর একটা কথায়ও তর্কে না যেতে।’

আরহামকে সামনে দেখে যেনো আরও চটে গেলেন মাইমুনার মা।কিছুটা ঘৃণা নিয়ে বললেন, ‘আমি যদি কোনোদিন জানতাম তুমি এরকম কাহিনী করবে,তাহলে কোনোদিনও আমার মেয়ে তুমার হাতে দিতাম না।’

অথচ মাইমুনাকে নিয়ে তারা যেনো সমুদ্রে পড়েছিলেন এক্সিডেন্টের পর।হাতজোড় করে অনুরোধ করছিলেন,মাইমুনাকে বিয়ে করে নিতে।সে সুস্থ হয়ে যাবে।

হৃদয়ে আঘাত লাগা অপ্রতিরোধ্য প্রতিটা কথা আরহাম নীরবে মাথা নিচু করে হজম করলেন।কিন্তু এ পর্যায়ে আব্বু বসে থাকলেন না।এতক্ষণ ধরে অনেক সহ্য করেছেন।এবার বলে উঠলেন, ‘আপনি আমার ছেলের চরিএে আঙ্গুল তুলে কথা বলছেন।যথেষ্ট বলেছেন।আর একটা কথাও যেনো মুখ থেকে বের না হয়।’

ভদ্রমহিলা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বাসা থেকে বের হয়ে গেলেন।বাবাকে থামাতে চেয়েছিলেন আরহাম।বাবা আরহামের অনুরোধ না শুনেই কথাগুলো বলেছেন।

পরিবেশ থমথমে হয়ে গেলো।আব্বু মাইমুনার কাছে এগিয়ে এসে বললেন,’ক্ষমা করে দিয়ো।তুমার মায়ের সাথে এভাবে কথা বলায়।এগুলো হজম করার মতো কথা না মাইমুনা।তুমি তো বুঝবে আরহামের স্ত্রী হিসেবে।’

বলে আব্বু নিজের রুমে চলে গেলেন।

ড্রয়িংরুমের পরিবেশ আরও নীরব হয়ে গেলো।হাফসা দেখছে আরহামের মুখাবয়ব।একেবারেই চুপচাপ।কিন্তু ভেতরে যে তোলপাড় হয়ে কষ্টের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে সেটা কে বুঝবে!হাফসার মন চাইলো,ওর যদি কোনো অলৌকিক ক্ষমতা থাকতো,তবে জাদূবলে আরহামের সব যন্ত্রণা,কষ্টগুলো নিজের করে নিতো।’

সবাইকে রুমে যাওয়ার কথা বললেন আরহাম।হাফসা কাছ থেকে দেখলো উনার চোখজোড়া ছলছল।ঘনঘন পলক ফেলে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলেন তিনি।আদওয়া ভীষণ অপরাধবোধে ভুগলো।আজকের এই পরিবেশ,এরকম কটুক্তি আর অপমানের জন্য সে নিজেই দায়ী।রুমে গিয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসে রইলো চুপচাপ।মন চাইলো পাশে রাখা গ্লাস ফাটিয়ে শিরা কেটে মরে যেতে।আরহামকে বলা কথাগুলোর প্রত্যক্ষ দর্শক হয়েও কষ্টে ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে।আর সেখানে উনি নিজে কীভাবে সহ্য করছেন!

রাগে দূ:খে নিজের চুলগুলো অস্বাভাবিকের মতো চেপে ধরলো সে।মাথায় তীব্র যন্ত্রণা হচ্ছে।তখুনি দরজার কটমট আওয়াজ শুনলো।হাফসা এসে পাশে বসতেই আদওয়া কেঁদে ফেললো।

বলল,’আজকের এসব আমার জন্য হয়েছে তাই না আপু?’

১০৭
হাফসা ওর চোখ মুছে দিয়ে শান্তসুরে বলল, ‘মন খারাপ করো না।সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।তুমি ভুলেও উল্টোপাল্টা কিছু চিন্তা করো না।নিজের ক্ষতি করতে চেয়ো না।’

‘এমন পরিবার আমি ডিজার্ভ করি না।আমার জন্য এতকিছু হলো,কেউ আমাকে টু শব্দ পর্যন্ত করলো না,একটু অভিযোগ করলো না?’

‘করবেও না কেউ।শান্ত হও।সবকিছুর সমাধান হয়ে যাবে ইন শা আল্লাহ।’

******
ঘড়িতে সাড়ে ন’টার কাটা পেরিয়েছে।আরহাম বের হলেন বেশ কিছুক্ষণ পর।এতটুক সময়ে উনার শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে ছিল হাফসা।গুড়িয়ে যাওয়া মনটাকে আবার সতেজ করে দিয়েছে তাঁর কথার তীর দিয়ে।ওর সুন্দর কথাগুলো ধনুকের মতো আরহামের হৃদয়ের সব ব্যথাকে দূর করতে না পারলেও শান্ত করেছে।ভরসা আর ধৈর্যের পরামর্শ দিয়ে সে যখন বেরিয়ে গেলো আরহাম নিজের মনকে বুঝালেন।কানে বাজতে থাকা মাইমুনার মা’য়ের তাকে উদ্দেশ্য করে বলা কথাগুলো মস্তিষ্ক থেকে ঝেড়ে ফেললেন।হাফসার কথামতো,আসলেই আলাদা একটু ভালোলাগা অনুভব করলেন।

মাইমুনা তখন বেলকনির সোফায় হেলান দিয়ে ঘন্টাদেড়েক আগের নোংরা ঘটনাগুলো ভাবছিলো।মা এমন করতে পারেন,ওর চিন্তাতেই ছিলো না।

আরহামকে আসতে দেখে তড়িৎ সোজা হয়ে বসলো।আরহাম ওর পাশে বসে হাতটা নিজের হাতে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘মন খারাপ, হানি?’

‘আপনি কষ্ট পেয়েছেন তাই না?’

আরহাম খানিক চুপ থেকে বললেন, ‘মা যা করেছেন এটা হওয়ারই ছিলো।স্বাভাবিক।’

‘এমন ঘটনাকে আপনি স্বাভাবিক বলছেন?কি যা নয় তা বলে গেছেন?’

‘আমার ভুল ছিলো।আপনার ফ্যামিলিকে জানিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিলো।’

‘মানে?’

‘জানানো উচিত ছিল বিয়েটা হওয়ার আগে।যে কেউ এমন অভিযোগ তুলবেই,সেখানে আপনার মা আপনার কথা ভেবে কথাগুলো বলেছেন।’

‘দোষটা নিজের ঘাড়ে নিচ্ছেন কেন?’

‘দোষ করেছি তাই।যাই হোক,পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমি ক্ষমা চাইবো উনার কাছে।এই বিষয় নিয়ে মন খারাপ করে থাকবেন না।’

‘কীভাবে হজম করলেন নোংরা কথাগুলো?’

আরহাম অন্যপাশ ফিরলেন।উঠে যেতে যেতে বললেন, ‘ইটস নাথিং।’

*******
রুমে ডুকে দেখলেন হাটুতে মুখ গুজে চুপচাপ হয়ে আছে আদওয়া।আরহাম গিয়ে পাশে বসলেও ওর কোনো হেলদোল দেখা গেলো না।

আরহাম পাশে বসে শান্তসুরে বললেন, ‘আমি দূ:খিত।আমার পরিবারে এসেই আপনাকে বাজে একটা মুহুর্তের সম্মুখীন হতে হয়েছে।’

আদওয়া মুখ তুলে এ প্রসঙ্গ এড়িয়ে বলল,’আজকে রিসিপশন ক্যানসেল করে দিন।ফোন হাতে তুলে বলল,’বাবাকে না করি আসতে।’

আরহাম ফোনটা কেড়ে নিয়ে বললেন, ‘কেন কেনসেল করবেন?সবকিছু হবে ঠিকঠাক।’

‘এ পরিস্থিতিতে?’

‘ফরগেট দিস ইন্সিডেট।প্লিজ’

পরের দিন~
রিসিপশন সুন্দর মতোই সম্পন্ন হলো।আদওয়ার বাড়ির মেহমানদের সসম্মানে আপ্যায়ন করা হলো।কোনোকিছুরই কমতি হলো না।বরের আচার-ব্যবহারে সন্তুষ্ট হলেন কনেপক্ষের সবাই।প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেও বাকি দূই স্ত্রীকে নিয়ে কানাঘুষা থামলো না।

অ্যাশ কালার স্যুট-টাইয়ের সাথে আরহামকে মারাত্নক সুদর্শন লাগছিলো।কারো কারো চোখ গেঁথে গেছে তাঁর সুঠামদেহী শরীরের ভাঁজে ভাঁজে।আদওয়ার জন্য কড়া হুকুম ছিলো,কোনো পুরুষের সামনে বের না হতে।মহিলাদের ঘরে পর্দার ব্যবস্থায় ও পুরুষদের জন্য বাইরে খাবারের আয়োজন করা হয়েছিলো।

একান্ত কারনে মন খারাপ থাকলেও আদওয়ার আবায়া পরিহিত লুকের প্রশংসা করতে ভুললেন না তিনি।কিন্তু অন্যসময়ের মতো খুশি হলো না সে।সারাটা সময় আদওয়ার মন খারাপ কারো চোখে ধরা না পড়লেও একজনের চোখে ঠিকই পড়লো।অন্যসময়ের মতো চঞ্চল মেয়েটার একেবারে নীরব হয়ে যাওয়া আরহামের একটুও ভালো লাগলো না।

*******
রাতের বেলা-
সবসময়ের মতো হাফসার ম্যাজিশিয়ান একগ্লাস অরেন্জ খেয়ে যেনো সারাদিনের ক্লান্তি দূর হয়ে গেলো।কাঙ্খিত পারিশ্রমিক প্রদান করে রুমে এসে দেখলেন আদওয়া কোথাও নেই।বাহানা করে আম্মু আব্বুর রুমে গিয়েও পেলেন না তাকে।উপরের-নিচের প্রতিটা রুমসহ কিচেনেও যখন তাকে পেলেন না তখন তড়িৎ গতিতে ছাদের দিকে ছুটলেন।

দূর হতে তাকে দেখতেই বুকে হাত দিয়ে প্রাণভরে শ্বাস নিয়ে এগিয়ে গেলেন।

‘আপনি একা একা ছাদে কেন?ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম খুঁজে না পেয়ে।’

আদওয়া ঘুরে দাঁড়ালে দেখলেন ও কাঁদছে।আরহাম কাছে এসে ব্যস্তকন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কাঁদছেন কেন?কিছু হয়েছে?কেউ কিছু বলেছে আপনাকে?’

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।