অপেক্ষা – মাহা আরাত | পর্ব – ১৭

আরহাম কিছু বুঝলেন না।
‘মানে?’

বিনু আর কাজল সব ঘটনা একে একে খুলে বলতে লাগলো।

‘হেইদিনে আমনে যে কাপড় ধুইয়া দিছিলেন ওগুলা আফামণি না আমিই মেইলা দিছিলাম।আমি আসলে খেয়াল করি নাই রশ্মিতে তে দাগ লাগানো আছিলো আমার লাইগাই বড় আফার কাপর নষ্ঠ হইছে।’

আরহাম অবাক হয়ে জানতে চাইলেন, ‘তাহলে উমায়ের এটা বলেননি কেন মাইমুনাকে?’

‘হো কন নাই।এই কাজ আমি করছি জানলে বড় আফায় আমারে চাকরি তনেই বাইর কইরা দিতো হের লাইগা ছোডু আফায় চুপ কইরা সহ্য কইরা নিছেন।’

‘তারপর?’

‘পরে আমার খুব খারাপ লাগতাছিলো।আমার লাইগা ছোডু আফায় বড় আফার কাছেও গাইল খাইলো আর আমনেও অনেক কঠিন কথা কইলেন।ভাবছিলাম আমি হাছা কথাটা বড় আফারে কইয়া দিমু কিন্তু ছোট আফায় কইতে দেয় নাই।এরপরে হেইদিন খালাম্মা যে কার বাড়ি গেলো ওয়দিন বড় আফায় ছোট আফারে দিয়া রান্নাঘরের সমস্ত কাজ-কাম করাইছেন।এক্কেবারে বাসন ধুয়া থাইক্কা নিচ মুছা পর্যন্ত।একঝালি পেঁয়াজ খুচরাইছে হাত দিয়া।ছোট আফার হাত কাটছে পেঁয়াজ খুঁচরাইতে গিয়া।বড় আফায় তাও ছাড় দেন নাই।কিন্তু আমনে বাসায় আওনের পর উনি মিছা কথা কইলেন যে সব কাজ ছোট আফায় নাকি হেরে দিয়া করাইছে।শুধু এহনেই শেষ না আমরা তো রান্নাঘরের কাজ করি কিন্তু বড় আফায় আমরারে কইছেন আমরা যেনো ভুল কইরাও রান্নাঘরে না যাই সবগুলান কাজ ছোডু আফারে দি করাইবার লাইগা।এইদিন আফারে দিয়া অনেকক্ষণ একগাঁদা কাপড় ইসতিরি(ইস্ত্রী) করাইছেন।ছোডু আফার হাতও পুড়ছে।হাত পুড়লো ছোডুআফার, কাটলোও ছোডুআফার,আর মিছা কান্না কানলেন বড়আফায় আমনের সামনে।আগেরদিনের সামাইন্য কাটা দেহাইয়া ছোট আফার হাত থাইকা পড়া রক্ত নিজের হাতে লাগাইয়া কইলেন পেঁয়াজ খুঁচরাইতে বুলে কাটছে।’

আরহাম জোরে কয়েকটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলালেন। মাথায় রক্ত চড়ে উঠেছে।মাইমুনা যে এত নীচ এটা জানা ছিলো না উনার।নিজেকে সামলে প্রশ্ন করলেন,

‘আপনারা বলছেন উমায়েরের কোনো দোষ নেই।মাইমুনা যে উনার সাথে এমন করেছেন উনি কি জানতেন? তাহলে আমাকে বলেননি কেন?’

(৪৮)
‘হো জানতেন। আমনেরে কন নাই এইটাই তো সবতনে বড় সমস্যা।ছোডু আফায় সবকিছু বুঝেও সহ্য করে নেয় কাউরে কিছু কয় না।’

‘আর কী কী হয়েছে আমার অজান্তে?’

‘এরপর হেইদিন সকালে ছোট আফার উঠতে লেট হইয়া গেছিলো।নাস্তা কম বানানোয় বড় আফায় যা নয় তা কইছেন ছোট আফারে।খুবই উঁচু গলায় কথা কইছেন।আর বড় আফায় ছোডু আফারে উনার মা বাবা তুইলা খুবই কঠু কথা কইছেন।হের লাইগা আফা কান্দিছলো।কিন্তু পরে যখন আমনে আইলেন তখন বড় আফায় মিছা কথা কইলেন আমনারে যে জোরে জোরে কথা ছোডু আফায় কইছে আর ছোডু আফায় বুলে উনারে মা বাফ তুইলা গালি দিছে।আর আমনে যে….

বলে কাজল উসখুস করতে লাগলো।আরহাম জানতে চাইলেন,

‘আমি কি?’

‘আমনে যে ছোডু আফারে চড় টা মারলেন।বিনা দোষে মারছেন।সব দোষ নিজে কইরা ছোডু আফার ঘাড়ে দিছেন বড় আফায়।আমরা দেখছি সব।ছোডু আফায় কিচ্ছুটি করেন নাই।কিন্তু আমনে উনারেই।’

‘তাহলে আমি দোষ ছাড়াই উমায়েরকে মেরেছিলাম?’

‘হো।’

আরহাম দূহাতে নিজের মাথা চেপে ধরলেন।নিজের প্রতিই নিজেরই ঘৃণা হচ্ছে।এত এত অন্যায় কি করে করতে পারলাম উমায়ের এর সাথে।

‘আরেকটা কথা কইবার আছিলাম।’

‘আর কী’ই শুনবো।বলুন।’

‘ওইদিন তো আফার উঠতে লেট হইছিলো।তার কারণ আছে।আমি যহন সকালে আফারে ডাকতে গেছিলাম তখন উনারে স্বাভাবিক মনে অয় নাই আমার।খুব কইরা কাঁপতেছিলেন খুব ঘামছেন।মানে ভয় পাইলে মানুষ একখানা গুটিসুটি মাইরা থাহে না ওলান আরকি।আমার কোনো কথাই বুঝতেছিলেন না।আবার খুব বেশী জ্বরও আছিলো।আমার মনে অয় আফা রাইতে ভয় পাইছিলেন, ওই যে আছে না অনেকে মেঘের ডাক ভয় পায়।আফারে দেইখা ওরকম মনে অইলো আমার।গিরাম অঞ্চলে এইটারে কি জানি কয় মনে পরতাছে না।’

আরহাম ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘প্যানিক এ্যাটাক?’

‘আই তো জানি না ভাইজান। তবে উনার কিছু একটা হইছিলো রাইতে।’

আরহাম বুঝতে পারলেন যে হাফসার মেঘের গর্জনে প্যানিক এ্যাটাক হয়েছে।বাবার থেকে শুনেছিলেন হাফসা মেঘের গর্জন খুব ভয় পায়।

‘আর ওইদিন সকালে ওই ঘটনা..

‘হো ওইদিনই তো আমনে মারলেন।’

‘আর আমনে তো বাড়িত্তে থাহেন না খালাম্মা যতদিন বাড়িত্তে আছিলো না বড় আফায় সব কাম করাইছে ছোট আফারে দিয়া।’

আরহাম নির্বাক হয়ে গেলেন।এইমুহুর্তে সব রাগ লাগছে নিজের ওপর।প্রতিবার না বুঝে উমায়েরকে কত কষ্ট দিয়েছেন উনি।একটাবার সত্যি টা জিজ্ঞেস পর্যন্ত করলাম না।

‘আরেকটা কথা কমু যদি আমনে আপত্তি না করেন।’

‘বলুন।’

‘বাসায় যে কেডা আইছিলো না বড় আফার কি যেনো হো মামা।হেতেরে আমার সুবিধার মনে অয় নাই।ছোট আফার দিকে কেমন করে তাকাইতেন।নজর ভালা না।আর সুযোগ পাইলেই বড় আফা আর ওই বেটা লুকাইয়া কি জানি গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর করতো।’

আরহাম আর শুনতে পারলেন না।মাইমুনাকে আর সহ্য হচ্ছে না।

‘বুঝে গেছি সব।আপনারা চলে যান।আর শুনতে চাই না।’

বিনু কাজল দূজনে ভয় পেয়ে গেলো।আমতা আমতা করে বলল, ‘ভাইজান আমগো চাকরি থাকবো তো?’

‘না থাকার তো কারণ নেই।ভয় পাবেন না।যান।’

______
ছাদে এসেছেন আরহাম।ডিভানে বসে ভাবছেন ম্যাড দের বলা কথাগুলো।সত্যি তো।আমি তো বাড়িতে থাকি না।উনারাই তো মাইমুনা আর উমায়েরের পাশাপাশি থাকেন।উনাদেরই বা কি স্বার্থ আমাকে মিথ্যে বলার।ইসসসস সত্যিটা জানতে অনেক দেরি করে ফেললাম।আপনার সাথে অনেক অন্যায় করে ফেললাম উমায়ের।আমায় ক্ষমা করবেন তো!

হুট করে কিছু একটা মনে পড়তেই দ্রুতপায়ে নিচে নামলেন।সিসিটিভি কন্ট্রোল রুমে গিয়ে প্রথম দিনের বিকেলের ফুটেজ দেখলেন যেদিন মা’ইমুনা হুইল চেয়ার থেকে পড়েছিলেন।তিন বার করে দেখলেন ফুটেজ টা।ফুটেজে স্পষ্ট হাফসা হুইল চেয়ারে ধরেননি।মাইমুনা একটু জোরে টার্ন করতে গিয়ে চাকা বেঁকে পড়েছে।তবে ফুটেজের শেষে হাফসার একা দাঁড়িয়ে চোখের পানি মুছার দৃশ্য টা সবচেয়ে বেশী হার্ট করেছে আরহামকে।

তারপর মাইমুনার রুমের ফুটেজ দেখলেন।পুরো বাড়িতে সিসিটিভি ক্যামেরা আছে।আর মাইমুনার রুমেও যেটা লাগানো ওটা মাইমুনার পারমিশন নিয়েই লাগানো।পুরো আধঘন্টায় ফুটেজ টা দূইবার দেখলেন।হাফসাকে দিয়ে ডলার গুণিয়েছেন।হাফসা বারবার মানা করছিলো।এখানেই ডলার গুণে মাইমুনার সামনে জায়গামতো রেখে গেছেন।এরপর আসেনই নি এইরুমে।তাহলে মাইমুনা মিথ্যে কথা বলেছেন?

________
অস্থিরভাবে সারা ঘর পায়চারি করতে করতে অশাম্তি আরো বেড়ে গেলো আরহামের।সার্ভেটদের বলা কথাগুলো আর ফুটেজ চোখের সামনে চাকতির মতো ঘুরছে।উমায়েরের সাথে করা অন্যায়গুলো বারবার মনে পড়ছে।
রুমে এসে বেডশীটে মাথা এলিয়ে চুপচাপ বসে আছেন।তখনই দরজায় করাঘাত হলো।

‘আসব?’

‘আম্মু আমার রুমে আসতে পারমিশন কেন লাগে?’

(৪৯)

আম্মু বিছানায় বসতে বসতে বললেন, ‘অবেলা শুয়ে আছো কেনো?’

‘এমনিই।’

আম্মু কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, ‘হাফসাকে তোমার আরো আগে উচিত ছিলো নিয়ে যাওয়া।’

‘কেনো?’

‘বিয়ে পরে তো যায় নি।’

‘আমি তো নিয়ে যেতাম সময় করে।’

‘আজ কান্না করেছে ভীষণ।’

আরহাম তৎক্ষনাৎ আধশোয়া থেকে সোজা হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কেন কেন?’

‘জানিনা বাড়ির কথা হয়তো মনে পড়ছিলো।আমি তো রুমে এসে দেখি চোখমুখ লাল করে ফেলেছে কাঁদতে কাঁদতে।’

আরহাম ব্যস্ত হয়ে বললেন, ‘এটা আমাকে আগে কেন বললেন না?’

‘বললে কি হতো?’

আরহাম মায়ের প্রশ্নের উত্তর দিলেন না।

‘আমাকে জড়িয়ে ও অনেকক্ষণ কাঁদলো।এত কেনো কাঁদলো বুঝলাম না।’

আরহাম আবার বেডে মাথা লাগিয়ে চোখ বুজে নিলেন।আর কেউ জানুক আর না জানুক উনি জানেন উমায়ের কেন কেঁদেছেন।

‘আচ্ছা রেস্ট নাও।’বলে আম্মু বেরিয়ে গেলেন।

আরহামের অস্থিরতা টা আরো বেড়ে গেলো আম্মুর কথায়।কিভাবে এত বড় একটা ভুল করে ফেললাম আমি।আপনাকে এত কষ্ট দিয়ে ফেললাম উমায়ের!এজন্য বুঝি আমার চোখের সামনে থেকে চলে গেলেন।এসব ভাবতে ভাবতে হাফসার দেওয়া মেসেজ গুলো আবার দেখতে লাগলেন।

❝আসসালামু আলাইকুম।কাকামণি আসছেন।বাড়ি যাচ্ছি আমি।কল দিয়েছিলাম আপনি মনে হয় বিজি ছিলেন।মাইমুনা আপুর মেডিসিন গতকাল চেন্জ করে দিয়ে গেছেন।কেয়ারফুলি খাওয়াবেন।আমাকে আনতে যাবেন না।মাসনার যোগ্য কাউকে খুঁজে নিয়েন।আল্লাহ হাফিজ।❞

26★

আরহাম ফোন রেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাথা চেপে ধরে রইলেন।হঠাৎ কি মনে করে তাড়াতাড়ি ফোন হাতে নিলেন।উমায়ের তো ফোন নিবেন।কথা বলতে পারব।
হাফসার ফোনে রিং হতেই ফোনটা বাজলো ড্রেসিংটেবিলে।রাগে চোখমুখ লাল হয়ে এলো আরহামের।মাইমুনা এসব না করলেও পারতেন।আরহাম খুবই হার্ট হয়েছেন মাইমুনার এসব নিচু মন-মানসিকতায়।কোথায় চোখ বুজে বিশ্বাস করতাম আপনাকে!আর আপনি এত খারাপ কাজ করতে পারলেন!আপনাকে তো সবচেয়ে বড় শাস্তি দেব আমি!

একা একাই টেবিলে জোরে থাবা দিয়ে বললেন, ‘হুয়াট এ্যা কুয়েনসিকুয়েন্স!বাড়িটা এত দূর কেন?কাছে থাকলে তো আপনাকে নিয়ে আসতে পারতাম।’

প্রায় দশটার গন্ডি পেরিয়ে গেছে।এখন যাওয়া সম্ভব না।এশার নামাজের জামাআত মিস হয়েছে।আরহাম নিজেকে ঠান্ডা করতে অযু পড়তে চলে গেলেন।

________
রাতের খাবার খেতে চাইলেন না।আম্মু এসে নিজ হাতে খাইয়ে দিয়ে গেলেন।অন্যদিন মাইমুনার রুমে যেতেন,গল্প করতেন, ডিনারে খাইয়ে দিতেন।আজ একবারও মাইমুনার মুখোমুখিও হলেন না।হাফসার কথা ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে গেলেন।

_______
সকালে ফযরের আযানের সময় মনের বিরুদ্ধে মাইমুনার ঘরে গেলেন।কেন জানি উনার চেহারা পর্যন্তও দেখতে ইচ্ছে করছে না।উনি আমার ছোট্ট ফুল কে কষ্ট দিয়েছেন উনার ব্যবহারে।বাইরে থেকে দরজায় আঘাত করলেন,

‘মাইমুনা!

মাইমুনা জেগেই ছিলেন।আরহামের গলা শুনে চমকে গেলেন।কারণ প্রতিবার আরহাম উনাকে “মাই হানি” বলে সম্বোধন করেন।এখন কি হলো?

‘ভিতরে আসুন।’

‘উঠে নামাজ পড়ুন।’

পায়ের ধুপধাপ শব্দ মিলিয়ে গেলো মুহুর্তেই।তার মানে আরহাম চলে গেছেন।

মাইমুনা চিন্তায় পড়ে গেলো।শাহ এভাবে চলে গেলেন কেন?তাহলে কি শাহ কিছু টের পেয়ে গেলেন আমার প্ল্যানিং?

*******
সকালে নাস্তা করে নিচে নামতে দেখলো কাকামণি সোফায় বসে নিউজপেপার পড়ছেন।হাফসা সালাম দিতে দিতে এগিয়ে গেলো।আহমাদ মিষ্টি হেসে সালামের রিপ্লাই দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,

‘কেমন আছো মামণি?’

‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো।আপনি কেমন আছেন?’

‘আজকে আমার মামণি বাড়িতে সো আমি ভালো।আচ্ছা দুপুরে কি খেতে চাও বলো।পুকুরে জাল ফেলবো আজ লোক দিয়ে।তোমার জন্য তাজা মাছ থাকবে।’

‘আচ্ছা।’

আরো কিছু কথাবার্তা চলছিলো।এমন সময় কাকামণির ফোনে কল আসলো।উনি কল দেখে বললেন, ‘তোমাকে তো আসল কথাই বলতে ভুলে গেছি।গতকাল আরহাম রাত প্রায় ১ টার দিকে দিয়েছিলেন।আমি ঘুমে ছিলাম তাই ধরতে পারি নি।ফযরের পর কথা হয়েছে।আরহাম বললেন, তুমি নাকি ফোন আনো নি।তোমার সাথে কথা বলতেই রাতে কল দিয়েছিলেন আমি তো বলেছি তুমি তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গেছো।সকালেও খোঁজ করেছে।এখন আবার ফোন দিয়েছেন।নাও কথা বলো।’

কাকামণি ফোন রিসিভ করে বাড়িয়ে দিতেই হাফসা কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, ‘ আ্ আপনি কথা বলুন।’

কাকামণি নাকোচ করে বললেন ‘ উহু আমাদের কথা হয়েছে।তুমি কথা বলো।’

হাফসা কাকামণিকে কে কিছু বলতে গিয়েও পারলো না।উনার সাথে কথা বলার অদম্য ইচ্ছে থাকলে ও হাফসা চায় না কথা বলতে।দূরত্ব বেড়েছে অনেক৷অভিমান হয়েছে গাঢ়।এ কয়দিন তো খুব ইগনোর করেছেন ইচ্ছে করে আমাকে এড়িয়ে চলেছেন তাহলে এখন কেন কথা বলতে হবে!

কাঁপা হাতে ফোনটা নিয়ে কানে ধরলো।ওপাশের পরিবেশ চুপচাপ। উনি হয়তো হাফসার কন্ঠ শোনার অপেক্ষায়!

‘আ আসসালামু আলাইকুম।'(হাফসা)

(৫০)

‘ওয়ালাইকুমুসসালাম।আপনি চলে গেলেন কেন?’

হাফসা ভয় পেয়ে গেলো উনার প্রশ্নে।মানুষ প্রথমে ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করে ফোন ধরলে।আর উনি জেরা শুরু করে দিয়েছেন।

‘কি হলো?চুপ কেনো উমায়ের?আমার ফোন ইগনোর করছিলেন কেন?কথা বলতে চাইছিলেন না কেন?’

হাফসা প্রসঙ্গ এড়াতে জিজ্ঞেস করলো, ‘কেমন আছেন?’

‘ভালো নেই।’

‘আম্মু কেমন আছেন?’

‘সবাই ভালো।’

‘আপু?’

‘খুব ভালো করে প্রশ্ন ইগনোর করতে পারেন আপনি।’

হাফসা নখ চিবোচ্ছে আর চুপচাপ কানে ফোন ধরে বসে আছে।

‘এটেনশন মি।আমার কথার এ্যানসার দিন।’

‘ব্ বাড়ির কথা মনে পড়েছে তাই চলে আসছি।’

‘শুধু কি এটাই কারণ?’

‘এসব জটিল প্রশ্ন আমি বুঝি না।মামণি ওয়েট করছেন আমার জন্য যেতে হবে।ভালো থাকেন।আল্লাহ হাফিজ। আসস…

‘উমায়েরর!!!!!!’

ফোনের ওপাশ থেকে জোর গলায় উনার ধমক শুনে হাফসার শরীরের লোমপর্যন্ত কেঁপে উঠলো।বললেন,

‘ফোন কাটবে না।আমার কথা শেষ হয়নি।’

হাফসা ভয়ে ভয়ে বলল, ‘ব্ ব্ ব বলুন।’

আরহাম ওর ভয় পাওয়া অবস্থা বুঝে নরম গলায় বললেন, ‘সরি সাউট করার জন্য।আমার সাথে কথা বলুন।কেমন আছেন?’

‘আ্ আলহামদুলিল্লাহ।’

‘আমাকে না বলে চলে গেলেন?ফোনে বললেই কি হলো।যাওয়ার পর আমার কথা মনে পড়েনি একবারও?’

‘পড়েছে।’

‘আ’ম সরী উমায়ের।আমি ভুল ভেবেছি আপনাকে।প্লিজ ফরগিভ মি।’

………..

‘আপনাকে না দেখে শান্তি পাচ্ছি না।অস্থির লাগছে।’

হাফসা নিরুত্তর।

‘আজ আসতে….

কুট কুট করে কল কেটে গেলো।আরহাম তৎক্ষনাৎ কল ব্যাক করলেন।বাট ফোন সুইচড অফ।বিরক্তিতে বলে উঠলেন ‘উফফফ চার্জ শেষ হওয়ার আর সময় পেলো না।’

________
রাতের বেলা আরহাম সাহরি করেছেন একা একা।আযান হলে গতদিনের মতো মাইমুনা কে ডেকে উপরে চলে গেলেন।নামাজ পড়ে তিলাওয়াত যখন শেষ হলো তখন মাএ ভোরের আলো ফুটেছে।আরহামের হঠাৎ কেন জানি খুব খুশি খুশি লাগলো।সুমধূর কন্ঠে মাইমুনার তিলাওয়াত শোনা যাচ্ছে।আম্মুও এ টাইমে তিলাওয়াত করেন তবে নীরবে।

নামাজ শেষে হেঁটে হেঁটে গেলেন ছাদে।উমায়ের এর কথা বেশী মনে পড়ছে।গতদিন দিনে রাতে চারবার বাবার সাথে কথা হয়েছে।বাবার ফোনে বারবার ফোন দিতে কেমনজানি দ্বিধা লাগে। উমায়ের কথা বলেননি।আরহাম বুঝতে পেরেছেন উমায়ের কথা বলতে আগ্রহী নই মোটেও।জরুরী কারণে গতদিন হাফসার বাড়িতে যেতে পারেননি।তবে উচিত ছিলো যাওয়া।উনাকে দেখার জন্য যে আখিদ্বয় ছটফট করছে প্রতিনিয়ত।

স্বচ্ছ আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলেন আরহাম।এত সুন্দর ওয়েদার!উমায়ের যদি বাসায় থাকতেন তাহলে একেবারে ধরে বেঁধে হলেও নিয়ে আসতাম।আপনার সাথে ছাদে এমন একটা সুন্দর সকাল উপভোগ করার ইচ্ছে রইলো।চারিদিকে এক আলাদা আমেজ।রমযানের আর মাএ তিন দিন বাকি।

আগের রোযায় উমায়ের আরহামের কাছে শুধু কল্পনায় ছিলেন আর এবার আল্লাহ চাইলে একসাথে ইফতার করা হবে ইনশাআল্লাহ।তবে আশ্চর্যজনক জিনিস হচ্ছে মন খারাপের হাজারটা কারণ থাকলেও কেন যেনো খুশি লাগছে বেশ!

ভাবনার মধ্যেই পকেটে হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠে।

আননোউন নাম্বার?আরহাম ভ্রু কুঁচকালেন।তারপর কি ভেবে ফোন ধরে নম্রভাবে সালাম দিলেন।

‘কেমন আছো?’পরিচিত কন্ঠে আরহাম ফোনটা আবার কান থেকে নামিয়ে নাম্বার দেখলেন।অতপর বললেন, ‘
‘আব্বু!আপনি নাম্বার চেইন্জ করেছেন?’

‘আপাতত।ডিস্টার্ব করলাম এত সকাল ফোন দিয়ে?’

‘মোটেও না।আমি ছাদে আসছিলাম হাঁটতে।’

‘একটু নিচে যাও।’

‘কেনো?’

‘গেলে বুঝতে পারবে।’

‘এখন যাব?’

‘এখুনি।’

__________
আরহাম নিচে নামতে নামতে কলিং বেল বাজলো।এত সকালে কে হতে পারে?নিউজপেপারের লোক হয়তো!সন্দেহ বশে দরজা খুলতেই আরহাম চমকে গেলেন।অল্পক্ষণের জন্য নিজের চোখ আর মস্তিষ্ক কে যেনো বিশ্বাস করতে পারলেন না।

(📌গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক।এটাকে বাস্তবের সাথে মিলাবেন না কেউ)

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।