অপেক্ষা – মাহা আরাত | পর্ব – ১৬

ঘন্টাখানিক হলো ঘটনার পর থেকে।একজোড়া লালবর্ণের ভয়ংকর চক্ষুদ্বয় নিয়ে আরহাম রুম থেকে বেরোলেন।সবার নীরবতায় আম্মু কিছুই বুঝতে পারছেন না।আরহামকে এরকম বিধ্বস্ত অবস্থায় নিচে নামতে দেখে আম্মু ব্যস্ত হয়ে প্রশ্ন ছুঁড়লেন, ‘আরহাম তুমি ঠিক আছো?তুমি কি কান্না করেছো?চোখ লাল কেন কি হয়েছে?’

‘কিছু না।মাথাব্যথা করছিলো।’

‘চোখ লাল কেন তাহলে?’

‘জানিনা।’

‘হাফসা রুমের লক খুলছে না কেন?কতবার ডাকলাম শুনছেই না।কি হয়েছে ওর?’

‘জানিনা।’

বলে আরহাম পাশ কাটিয়ে রুদ্রের রুমে ডুকে দরজা লক করে দিলেন।আম্মু কিছুক্ষণ ভাবুক হয়ে তাকিয়ে রইলেন, উনার থেকে কিছু তো একটা লুকাচ্ছে সবাই।

__________
‘আই এম সরি।আমি না বুঝে আপনার সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করেছি।ভুল হয়েছে আমার।ক্ষমা করে দিন।’

‘উহু ইটস ওকে মিস্টার আরহাম।বাট আফসোস। আপনার প্রিয়তমা স্ত্রী আপনার সাথে এমন করলো।আমি মানতেই পারছি না আপনার স্ত্রী এমন….

রুদ্রকে মাঝপথে থামিয়ে আরহাম বেশ তিক্ততা নিয়ে বললেন, ‘প্লিজ স্টপ এবাউট দিস টপিক।’

‘সরি বাট একটা কথা জানার ছিলো।যদি আপত্তি না থাকে তাহলে জিজ্ঞেস করতাম।’

‘বলুন।’

(৪৪)

‘এমন ঘটনার পর তো হাফসাকে ছেড়ে দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নাই।বলছিলাম ওকে ডির্ভোস দিতে চাইলে…

আরহামের ভেতর যেনো ভূকম্পন বেয়ে গেলো।বললেন, ‘আমার ব্যাক্তিগত বিষয় আমাকে বুঝতে দিন।’

‘ওকে ওকে।’

‘কিছু মনে করবেন না।আ’ম সরী টু সে,আপনি চলে যান এখান থেকে।’

‘কিন্ত…

‘নো মোউর বাট প্লিজ।আপনি আমার অন্য একটা ফ্ল্যাটে থাকেন।আমি এড্রেস দিচ্ছি আশা করি কোনো অসুবিধা হবে না।’

রুদ্রকে কিছুক্ষণ চুপ থাকতে দেখে আরহাম আবারো বললেন, ‘কাইন্ডলি কিছু মনে করবেন না।আমি…

‘ওকে নো প্রবলেম।আমি যাব।’

_______
আরহাম বাসা থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন বেশ কিছুক্ষণ হলো।বাসায় ফিরতেই উনার অপেক্ষায় অপেক্ষারত আম্মু তাকে নিয়ে পাশে বসান।আরহাম মায়ের দিকে ছলছল দৃষ্টিতে তাকান।কান্না আটকানো যাচ্ছে না।নিজের সাথে যুদ্ধ করে পারলেন না আর চোখের অবাধ্য জলগুলো আটকাতে।মায়ের কোলেই মুখ বুঝে ছোট বাচ্চাদের মতো কেঁদে দিলেন।

‘কি হয়েছে আরহাম?তুমি এর আগেও কেঁদেছো।হাফসাও কেঁদেছে দেখলাম।মেয়েটা কিছু বলে না।সবকিছু নিজের ভেতর চেপে রাখে।কি হয়েছে দূজনের?কোনো কিছু নিয়ে কথা-কাটাকাটি হয়েছে?বলার মতো হলে বলো আমাকে।’

আরহাম কাঁদোকাঁদো হয়ে মায়ের গলা জড়িয়ে বললেন, ‘সি হার্টস মি আম্মু।’

24★

‘সি হার্টস মি আম্মু।’

‘কি করেছে হাফসা?’

আরহাম আর উত্তর দিলেন না।
রুদ্র নিজের জিনিসপত্র নিয়ে বেরিয়ে গেছে কিছুক্ষণ হলো।আরহামও ঠাঁয় মায়ের কোলে চুপ হয়ে পড়ে রইলেন।

_________
রুদ্র মাইমুনার ফোনে কথোপকথন~

‘আমার মনে হয় কাজ হয়ে যাবে।শাহ হাফসাকে ডির্ভোস দিয়ে দিবেন।’

রুদ্র’ একটা দীর্ঘশ্বাস উগড়ে বললেন, ‘ভালো হবে।’

‘এতো হতাশ কেন মামা?’

‘তর হাজবেন্ড আমাকে বের করে দিলো।কেন জানি হাফসাকে না দেখতে পেরে দম বন্ধ হয়ে আসছে।আরহাম ওকে অনেক কঠিন কথা বলেছে।ড্রয়িং এ অনেকক্ষণ বসে কাঁদছিলো।আমি সহ্য করতে পারছিলাম না ওর কান্না।তাড়াতাড়ি কিছু একটা কর।ওকে আমার কাছে আনতে চাই।’

‘টেনশন নট।সব হবে বাই দা ওয়ে তুমি কি হাফসাকে ভালো-টালো বেসে ফেলেছো না কি?’

‘জানিনা তবে থাকতে পারছি না না দেখে।ওর সাথে অন্যায়টা করতে খারাপ লেগেছে আমার
তবে জানিস,মেয়েটা অনেক ভালো।সত্যি।’

‘হুম জানি।’

‘আচ্ছা থাকলে ওর কয়েকটা ছবি দে না?’

‘একটাই ছিলো।আগেই দিলাম তো।ও ছবি উঠে না।’

‘লুকিয়ে তুলে দিস।রাখলাম।’

মাইমুনা ফোন রেখে পৈশাচিক আনন্দে হেসে উঠলো।কেমন যেনো শান্তি শান্তি ফিল হচ্ছে অনেকদিনে।

_______
কেটে গেলো দূদিন।বাসাটা কেমন নির্জীব হয়ে গেছে। এখন আর খাবার টেবিলে উনার পাশে বসে খাওয়া হয় না ।হাফসা বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া নিচেও যায় না।আম্মু উপরে আসেন।আগের মতো গল্প হয় না,আড্ডা দিয়ে চা-খাওয়া হয় না।আম্মু এখনো জিজ্ঞেস করেন কি কারণে দূজনের এত দূরত্ব।কেউ কিছু বলে না।হাফসা ঠিকমতো খাবার খায় না।সারাদিন ঘরবন্দী হয়ে থাকে।গত দূদিনে আরহাম কে একনজরও দেখেনি।দেখবে কি করে সে তো রুম থেকে’ই বেরোয় না।আরহাম ক্লান্ত শরীরে বাড়ি ফিরেই দরজার সামনে পরিচিত সেই মুখটা আর দেখেন না।বাসায় আসতেই কেউ আর অরেন্জ নিয়ে হাজির হয় না।তবে আরহাম মাইমুনাকে উনার প্রাপ্যসময়টুকু দেন।বাইরে হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করলেও মাইমুনা বুঝে,আরহাম ভালো নয়।হুটহাট চুপ হয়ে যাওয়া, কথার উত্তর না দেওয়া, একা থাকা, ঘন ঘন অন্যমনষ্ক হওয়া, আর উনার হাসিখুশি চেহারার পেছনে মলিন হাসিটুকুই বুঝিয়ে দেয় উনার ভেতরে কষ্টরা পাহাড় বেঁধেছে।সেই কষ্টের মাএা বোধ হয় বেড়েই চলেছে দিন-দিন।

_________
কাকামণি বেশ কয়েকদিন থেকে চরম ব্যস্ত।হাফসার কল ধরতেও পারেননি।রুমের মধ্যে অন্যমনষ্ক হয়ে শুয়ে ছিলো,এমন সময় কাকামণি ফোন দেন।ভালোমন্দ কুশলাদি বিনিময় শেষে হাফসা কাকামণি আসতে বলল।এসে তাকে নিয়ে যেতে বলল।

ফোন রেখে শোয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো এমন সময় কাজল এসে বলে, ‘আপা আইজকাও না খাইয়া ঘুমাই যাইবেন? অল্প একটু খাইয়া লন।’

‘ইচ্ছে করছে না।আপনি খেয়ে নিন।’

আরহাম নিজের রুমেই যাচ্ছিলেন ডিনার সেরে।কাজলকে হাফসার রুম থেকে খাবার ফেরত আনতে দেখে জিনিস করলেন, ‘ফেরত নিয়ে আসলেন কেন?’

‘আপা খান নাই।কইছেন ইচ্ছা করতাছে না খাইতে। ‘

(৪৫)

আরহাম খানিক জোরে বললেন, ‘খাবার অপচয় করা পছন্দ করি না আমি।আর খাবারের সাথে রাগের কি।নিজের ক্ষতি নিজে কেন করতে চাচ্ছেন উনি?খাবারগুলো নিয়ে আবার রুমে রেখে যান আপনি।ভোরবেলা যেনো ক্লিয়ার প্লেট ফেরত নেন।’

বলে নিজের রুমে চলে গেলেন।হাফসা নীরবে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললো।

______
দরকার বলতে মাইমুনার মেডিসিন চেন্জ হয়েছে।হাফসা সময়মতো এসে মেডিসিন খাইয়ে দেয়।মাইমুনা হাফসাকে লক্ষ্য করেন,দু-একদিনে মেয়েটা কেমন শুকিয়ে গেছে।যে চোখমুখ সবসময় উজ্জ্বলতা আর হাসিতে সিক্ত থাকতো,তা এখন মলিনতায় ঢেকে নিয়েছে।

মাইমুনা গরম কফি খাচ্ছিলেন।হাফসা পাশে দাঁড়িয়ে মেডিসিন দেখছিল।মাইমুনা ইচ্ছে করেই ওর হাতে কফির কাপ আলতো বাঁকিয়ে ফেলে দেন।নরম হাতে গরম কফি পড়তেই হাফসা যন্ত্রণায় মৃদু চিৎকার দিয়ে দূরে সরে যায়।বেশ কিছু অংশ ঝলসে যায় মুহুর্তেই।

মাইমুনা কন্ঠে নাটকীয় ব্যাকুলতা এনে বললেন, ‘সরি সরি আমি দেখিনি গো।মিসটেক হয়ে গেছে।’

হাফসা চুপচাপ সয়ে নেয়।ওর নীরবতা ওর দূর্বলতা নয়,হাফসা কিছু বলে না বলে যে কিছু বুঝে না এমন নয়।হাফসা সব বুঝে।তবে সবর করে চুপ হয়ে যায়।

_____
কাকামণি আসছেন।বাড়িতে যাওয়ার কথা বললে কাকামণি বারবার আরহামের কথা তুলেছেন।হাফসা স্বাভাবিক ভাবভঙ্গি তে বুঝিয়েছে,উনি কবে নিয়ে যাবেন সিউর না।সে বাড়ির সবাইকে মিস করছে।মনটা ছটফট করছে যাওয়ার জন্য।

বারান্দার সোফায় বেশ কিছুক্ষণ অঝর নয়নে কান্না করলো হাফসা।কাকামণির সামনে থাকতে পারছিলো না,বারবার গলায় কথা আটকে যাচ্ছিলো।দলা পেঁকে কান্না চলো আসছিলো।তাই রুমে এসে অশ্রুর মাধ্যমে ভেতরের গ্লানিটুকু মুছে নেয়।

একটা নতুন জীবন শুরুর আগেই প্রস্থান নিতে হচ্ছে।হাফসা ভেবেছিলো এটাই ওর সুখের জায়গা, কিন্তু রবের পরিকল্পনা হয়তো ভিন্ন।

চোখ মুছতে মুছতে ঝাপসা নয়নে বারান্দার ওয়াচে দেখলো মিনিট বিশেক হয়ে গেছে এখানে আসার।মনে মনে প্রার্থনা করলো, ‘আল্লাহ যে যাইহোক, একটু ধৈর্য ধরার তৌফিক দিন। আল্লাহ আপনি তো সব দেখেন জানেন বাহিরের ভেতরের। আমি কোনো কিছু নিয়ে অভিযোগ করবো না,শুধু এটাই চাওয়া উনি যে আমাকে ভুল না বুঝেন।সবকিছু সহ্য করছি।আমার প্রতি উনার নেগেটিভ থিংকিং টা সহ্য করতে পারবো না।আমি প্রস্থান চাই এটা ঠিক,তবে এটাও চাই আমাকে নিয়ে উনার মনের মিথ্যে ভাবনাগুলো যেনো ঝড়ে পড়ুক।সত্যি টা যেনো উন্মুক্ত হয়।তবে আমি আর উনাকে চাই না।উনি বলছিলেন আর কখনো উনার সামনে না যেতে।আমি আর কখনো আপনার মুখোমুখি হতে চাই না ।

এটাও বললেন যে,আপনি আমাকে হেইট করেন।আচ্ছা মেনে নিলাম সব।কারো প্রতি কোনো রাগ-অভিযোগ নেই আমার।তবে সবসময় দোয়াহ থাকবে যেনো আপনি ভালো থাকেন।সবকিছুর পর,আপনার কোনো দোষ নেই।দোষ আমার।আমি মানিয়ে নিতে পারিনি।’

*****
হাফসা চোখেমুখে পানি দিয়ে স্বাভাবিক হয়ে মাইমুনার রুমে ডুকলো।উনি বোধ হয় বিরক্ত হলে হাফসা আসায়।

‘আপু।’

‘যা বলার তাড়াতাড়ি বলে বের হও প্লিজ।’

‘কাকামণির সাথে চলে যাচ্ছি।আপ্ আপনি ঠিকঠাক নিজের খেয়াল রাখবেন।নতুন মেডিসিন কাজল কে বুঝিয়ে দিবেন।উনি তো পড়তে পারেন না।’

‘হুমম।ওয়েট তুমি যাচ্ছো শাহ জানেন?’

‘কল করেছি ধরেননি।টেক্সট করে বলেছি।’

‘আর কল দিও না।উনি এ টাইমে খুব বিজি থাকেন।’

‘আল্লাহ হাফিজ।আসসালামু আলাইকুম।’

মাইমুনা শুধু বিড়বিড় করে সালামের রিপ্লাই টা দিলেন।
হাফসা আম্মুর রুমে গিয়েছিলো, তবে উনি ওয়াশরুমে।

রুমে এসে লাগেজ গোছাতে পুনরায় কান্না চলে আসলো ওর।হঠাৎ দরজায় কারো কড়াঘাতে হকচকিয়ে যায় গেলো।দরজা খুলতেই আম্মু আসেন।
ওকে লাগেজ রেডি করতে দেখে আম্মু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,

‘কোথায় যাচ্ছো হাফসা?’

‘বাড়িতে আম্মু।’

‘হুট করে?কেনো?’

‘ইচ্ছে করছে। আমি তো যাইনি একবারও।মামুণীকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।কাকামণির সাথে যাবো।’

‘কিন্তু আরহাম জানে?’

‘বলেছিলেন আমি যেতে পারি উনার আপত্তি নেই।তবে আজকে যাওয়া নিয়ে কথা হয়নি।আমি মেসেজ দিয়ে রেখেছি।উনি হয়তো ফ্রী হয়ে দেখবেন।’

‘তবুও ও বাসায় নেই,তুমি যেতে পারো না।ও যদি এসে রাগারাগি করে তোমায় না দেখে।’

হাফসা চোখের পলক ফেলে কান্না গিলে বলে, ‘করবেন না।আপনি একটু বুঝিয়ে বলবেন প্লিজ।’

‘উহু এভাবে যেও না।আরহাম আসুক।ও নাহয় নিয়ে যাবে তোমাকে।’

‘সময় তো নেই উনার।কাকামণির সাথে….

আম্মু তবুও বাঁধা দিয়ে বললেন, ‘আরহাম সময় করে নিয়ে যাবে।তুমি যেও না।’

হাফসা চুপ হয়ে গেলো আর কোনো উত্তর দিলো না।আম্মু কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন হাফসার দিকে। অতপর এগিয়ে এসে ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললেন, ‘কি হয়েছে হাফসা?কোনো প্রবলেম?’

হাফসা ভারি গলায় উত্তর দিলো, ‘জ্বি না।’

‘কাঁদছো কেন?কি হয়েছে তুমার?’

হাফসার এবার দ্রুতবেগে কান্না চলে আসলো।গলায় আটকে থাকা ভারী শব্দগুলো টেনে টেনে বলল, ‘কা্ কা্ কা্ঁ দছি না তো।’

আম্মু ওর দূগাল নিজের হাতের আজলায় নিয়ে বললেন, ‘মিথ্যে তো বলো না তুমি।আমি জানি তুমি কেঁদেছো।’

(৪৬)

হাফসা এবার নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না।আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে শুরু করে দিলো।ওর এমন অঝোরে কান্নায় আম্মু হকচকিয়ে গেলেন।
ব্যস্ত হয়ে একনাগাড়ে জিজ্ঞেস করলেন,

‘হাফসা প্লিজ বলো কি হয়েছে তুমার?কেন কাঁদছো?আরহাম কিছু বলেছে তুমাকে?তুমাকে কষ্ট দিয়েছে?’

বেশ কিছুক্ষণ নিজের আটকে থাকা কান্না বের করে হাফসা চোখ তুলল।

‘তোমাদের হয়েছে টা কি?কেউ কারো সাথে কথা বলো না,একসাথে থাকো না।আরহাম তো এমন করার কথা না।ও তোমাকে খুব ভালোবাসে।কি এমন হয়েছে তোমাদের যে এত দূরত্ব তৈরি হলো?আমাকে তো কেউ কিছু বলো না।’

আম্মু ওর দিকে জিজ্ঞাসাদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।

‘আম্মু আপনার ওরনাটা ভিজে গেলো।’

আম্মু ওকে ধরে বিছানায় বসালেন।চোখ মুছে দিতে দিতে বললেন, ‘কাঁদলে কেন বললে না তো।’

হাফসা আম্মুর সব প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে বলল, ‘বাড়ি যাবো।’

আম্মু ওর গালে হাত রেখে নম্র কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন, ‘বাড়ির সবাইকে মিস করছো?’

হাফসা মাথা নাড়ায়।

আম্মু হেসে দিয়ে বললেন, ‘আচ্ছা।এর জন্য এতো কাঁদতে হবে?যাও তোমার কাকামণির সাথে।’

হাফসা উৎফুল্ল হয়ে বলে, ‘সত্যি আম্মু?’

‘হুমম।কিন্তু তোমার বর বাড়িতে এসে তোমাকে না পেলে রাগারাগি করলে তুমি সামলিও তাকে।’

হাফসা মায়ের এ কথার উত্তর দিলো না।ভেবে পেলো না আরহাম কেন রাগারাগি করবেন।উনার তো মাইমুনা আছেন।

_________
আরহাম মাগরিবের নামাজ পড়ে বেরোলেন মসজিদ থেকে।মনটা কেনজানি খচখচ করছে বারবার।গাড়িতে উঠে সিটে মাথা এলিয়ে দিলেন।উনার আর হাফসার কাটানো কিছু সুন্দর মুহুর্তের স্মৃতি ভেসে ওঠছে চোখের সামনে।একটানা দূটো দিন দেখা হয় নি।কথা হয় নি।বুকচাপা কষ্টটা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। কই!মাইমুনার কাছে না গেলে তো এমন কষ্ট হয় না!

মেইন রোডে গাড়ি জ্যামে আটকেছে।বোরিং সময় কাটাতে পকেট থেকে ফোনটা বের করলেন।হোমপেইজে উমায়ের এর নাম্বার থেকে কল আসছে। সাথে টেক্সট ও।আরহাম কিছুক্ষণ থ হয়ে রইলেন।যেখানে দূইদিনে কথাই বলেননি একবার, সেখানে টেক্সট কল?

উমায়ের এর মেসেজ ওপেন করতেই মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো।উনাকে হারানোর অজানা এক ভয় আঁকড়ে ধরলো।পাগলপ্রায় হয়ে উমায়ের এর নাম্বারে কল দিলেন।কিন্তু কেউ ফোন তুলছে না।লাগাতার অনেকগুলো কল দিলেন ফোন তুলা হয় নি।মাইমুনা কে কল দিয়েও লাভ নেই।উনি ঘুমে থাকেন এ টাইমে।আর আম্মু নামাজের রুমে তিলাওয়াতে।তবুও কল দিলেন কিন্তু কেউ ফোন তুললো না।

প্রায় আধঘন্টা পর গাড়ি গেটের সামনে থামলো।
হন্তদন্ত হয়ে বাসায় ডুকেই আম্মুকে ডাকতে শুরু করলেন।

আম্মু দ্রুত এগিয়ে এসে বললেন, ‘কি হয়েছে?সাউট করছো কেন?’

‘আম্মু উমায়ের কোথায়?’

‘চলে গেছে?’

‘কোথায় চলে গেছেন?কেন গেলেন?’

‘বাবার বাড়ি গিয়েছে।’

‘সত্যি চলে গিয়েছেন?’

‘হ্যাঁ তকে বলে যায় নি?’

আরহাম ধপ করে সোফায় বসে পড়লেন।

আম্মু পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, ‘বলে যায় নি?’

‘বলেছেন আম্মু।আমি ফোন চেক করি নি।কবে আসবেন বলেছেন?’

‘এসব কিছু বলে যায় নি।’

‘তাহলে একেবারে চলে গিয়েছেন?আর আসবেন না?’

25★

‘তাহলে একেবারে চলে গিয়েছেন?আর আসবে না?’

‘আশ্চর্য!একেবারে যাবে কেন?বেড়াতে গিয়েছে।’

আরহাম চুপচাপ ওপরে চলে গেলেন।আম্মু উনার অস্থিরতার কারণ বুঝতে পারলেন না।বউ বাপের বাড়ি চলে গেলে এমন পেরেশান হতে হবে!বোকা ছেলে।

_______
মাইমুনা খুশিতে টগবগ হয়ে মামাকে কল দিলো।যেমনটা চেয়েছিলো ঠিক ঠিক তেমনটিই হয়েছে।এখন আরহাম শুধু আমার।

‘কেমন আছো মামা?’

‘মোটামুটি।তুই কেমন আছিস।’

‘ভালোই।’

‘এত খুশি লাগছে যে।কেন?’

‘হাফসা বাবার বাড়ি চলে গিয়েছে।’

‘তাই নাকি?কখন কবে?’

‘হলো অনেকক্ষণ।’

‘আমি একটা জিনিস ভেবে নিয়েছি।’

‘কি?’

‘আমি হাফসাকে বিয়ে করবো।’

৪৭

‘ওহহ মামা!তুমি ওকে আমার মামি বানাতে চাইছো?’

‘হুমমম।’

‘কিন্তু আরহাম তো এখনো ডির্ভোসই দেননি।’

‘দেওয়ানের ব্যাবস্থা কর।’

‘দেখি।’

‘হাফসার বাড়ির এড্রেস দে না প্লিজ?’

‘কেন কেন?কি করবে তুমি?’

‘ওকে দেখব।’

‘লাভ নেই।ও সবসময় আবায়ায় ঢাকা থাকে বাড়িতেও।আরহাম বলেছেন।’

‘যেকোনো ভাবে হলেও দেখবো।এড্রেস দে।’

‘আমি তো জানি না।আরহাম জানেন শুধু।’

রুদ্র বিরক্তিসুরে উচ্চারন করলো, ‘শীইইইইটটটট।’

_______
ছাদের ডিভানে পা লাগিয়ে চুপচাপ বসে আছেন আরহাম।অমাবস্যা রাত।চারিদিকে অন্ধকার ঢাকা।কোনোকিছুতে মন বসাতে পারছেন না।বারবার একটা প্রশ্ন মাথায় আসছে,উমায়ের কি আমায় সত্যি ছেড়ে চলে গেলেন?আর কি আসবেন না?খুব দেখতে ইচ্ছে করছে আপনাকে।আপনার সাথে অনেক রুড ব্যবহার করেছি আমি।কিন্তু কি করবো।সত্য মিথ্যের আড়ালে আমি বাঁধা পড়ে আছি।ইসসসস যদি সব মিথ্যে হয়ে যেত।আপনাকে নিয়ে তোলা সব অভিযোগ যদি মিথ্যে হয়ে যেত তাহলে আমার থেকে বেশী খুশি কেউ হত না!

_______
আসার পর থেকে হাফসা রুমবন্দি হয়ে আছে।মামুণী বারবার জিজ্ঞেস করেও মন খারাপের কারন জানতে পারেননি।

হাফসার মনটা খুব বেশিই খারাপ।বাড়িতে এসে একটাবার কল দিতে পারতেন কাকামণির ফোনে।আমি নাহয় ফোন ভুল করে রেখে আসলাম।
বারান্দায় বসে তাসবিহ পড়লো কিছুক্ষণ।অতপর ডিনার করে শুয়ে পড়লো।একটু মানসিক শান্তি দরকার।যেই শান্তি হয়তো উনাকে একপলক দেখলেই পাওয়া যেতো কিন্তু উনি তো দূরে।আর এমন শান্তির দরকার না হোক।

________
ঘন্টা দেড়েক পর নিচে নামলেন আরহাম।আম্মু ডিনারের জন্য ডাকছেন।আরহাম বলে দিলেন উনার ইচ্ছে নেই।আম্মু অনেক জোর করেও খাওয়াতে পারলেন না।

হাফসার রুমে এসে বসে আছেন।এখানেই তো থাকতেন।উমায়েরের শরীরে একটা মিষ্টি সুঘ্রাণ করতো।যেটা খুব কাছে গেলেই পাওয়া যেতো।আরহাম ওই সুঘ্রাণটাই অনুভব করতে চাইছিলেন।হুট করে দরজা খোলার শব্দে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালেন।

বিনু আসছে।পিছে কাজল।

দূজনে সামনে এসে হাত মোচড়ামুচড়ি করছে।আরহাম কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর জিজ্ঞেস করলেন, ‘কোনো দরকার এখানে?উমায়ের তো নেই।’

‘ভাইজান আন্নে অনুমতি দিলে কিছু কথা কওনের আছিলো।’

‘বলুন।’

‘ভাইজান একটু পারসনেল কথাবার্তা আছিলো দরজা টা লাগাইয়া দিমু?’

‘প্রয়োজন নেই,বলুন।’

‘ভাইজান,আমার মনে হয় কওয়া দরকার হের লাইগা কইতাছি, আমনে রাগ কইরা আমার চাকরি টা কাটায়েন না।’

‘ভয় পাবেন না বলুন।সত্যি হলে তো বিশ্বাস করব।’

‘বড় আফায়(মাইমুনা) ছোডু আফার(হাফসার) লগে ইচ্ছা কইরা দূষমণি করছে।’

আরহাম কিছু বুঝলেন না।’মানে?’

(📌গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক।এটাকে বাস্তবের সাথে মিলাবেন না কেউ)

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।