‘কিচেনের কাজ কি আপনি করেছেন?’
হাফসা মাথা নেড়ে হ্যাঁ বোধক সম্মতি জানিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠে গেলো।আরহাম ব্যথিত হলেন।হাফসার এরকম ইগনোরেন্সে কি পরিমাণ কষ্ট যে হচ্ছে বুকটায় সেটা প্রকাশ করার মতো নয়।এই ছোট্ট মেয়েটা আরহামের হৃদয়ে এমনভাবে জায়গা করে নিয়েছে যেমনটা মাইমুনার ক্ষেএে তিনটা বছর লেগে গেছে।
হাফসা রুমে এসে অযু করে লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়লো।ঘুম লাগছে না।ভেতরটা পুড়ছে।আড়ালে-আবডালে কত ফোঁটা চোখের পানি যে পরেছে সেটা শুধু সেই’ই জানে।আরহাম নির্ধারিত কিছু তিলাওয়াত শেষে হাফসার রুমে আসলেন।ড্রিম লাইট জ্বলছে।আরহাম একটা টুল নিয়ে ওর মাথার পাশে বসলেন।ঘুমের মাঝেও মুখটা মলিন।বাচ্চাদের মতো গালে হাত দিয়ে ঘুমিয়েছে মেয়েটা।অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে রইলেন।তারপর ওর পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লেন।একই বেডে,দূজন এত কাছাকাছি। কিন্তু মনের দূরত্ব পাহাড়সম।
(৩৭)
_________
সকালে ঘুম ভাঙ্গতেই হাফসা পাশে থাকা আরহামকে দেখে চমকে গেলো।মানুষটা একদম জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে আছেন।তখনই খেয়াল করলো ব্ল্যাঙ্কেট টা তো ওর গায়ে।কিন্ত রাতে তো ছিলো না।উনার কি ঠান্ডা লেগেছিল?উনি তো শেয়ার করতে পারতেন?করলেন না কেন?’
এসব ভাবতে ভাবতে উঠে ওয়াশরুম যায়।অযু করে আসে।পানি পড়ার শব্দে ঘুমটা হালকা হয়ে আসে আরহামের।অন্যদিন যদিও ফযরের টাইমে ঘুম ভেঙে যায় কিন্তু কাল রাত লেইটে ঘুমিয়েছিলেন।শোয়ার পর ঘন্টা দেড়েক এর চেয়েও বেশী সময় ঘুমন্ত হাফসার মুখপানে একধ্যানে চেয়েছিলেন।কিছু অশ্রুফোঁটা অন্ধকারে বিসর্জন হয়েছে।সেটার সাক্ষী শুধু একজন!
নামাজ শেষে তিলাওয়াতে বসলো হাফসা।আরহাম নামাজ পড়ে নিজের রুমে চলে গেছেন।কথা হয়নি।তিলাওয়াত শেষে নাস্তা বানানোর আগে গরম দূই কাপ কফি বানালো।আরহামের রুমে গিয়ে নক করলে তিনি হাফসাকে দেখে অবাক হলেন বটে।পারমিশন দিতেই সে জিজ্ঞেস করলো,
‘খাবেন?’
আরহাম চমকিত হলেন।মুহুর্তেই মুখে হাসি ফুটে ওঠলো।উমায়ের কথা বলেছেন।দ্রুত মাথা দিয়ে সম্মতি জানাতেই হাফসা চুপচাপ কাপ টেবিলে রেখে চলে গেল।
*******
বৈশাখ মাস চলছে।কখন যে মেঘ উড়ে আকাশে,আর কখন যে ঢেউ আসে বাতাসের বোঝা দায়।এখন পরিষ্কার মেঘমুক্ত আকাশ।হাফসা ছাদের ডিভানে বসলো।গরম কাপে চুমুক দিলো।ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়ার মাঝে ধোঁয়া ওঠা গরম চা।আহ!কি অমায়িক অনুভূতি।হাফসা আনমনে হেসে উঠলো।তবে পরক্ষণেই চোখেমুখে আধার নেমে এলো।গোমড়া মুখে চেয়ে রইলো আকাশের দিকে।একটা কথা খুব মনে পড়ছে।
‘তোমার বারবার আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা আমি নিশ্চয়ই লক্ষ্য করি।’
হাফসা আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখের আকুতিতে হৃদয় দিয়ে কথোপকথন করছে আল্লাহর সাথে।কোনো দোষ না করে, কোনো ভুল না করে, সব সহ্য করেও কেন এত অবহেলা?আমি না হয় নতুন আপনার জীবনে।কিন্তু এতই অবিশ্বাস করেন আমাকে?মাইমুনা আপু কিছু বললেই বিশ্বাস করে নেন।আমার চোখের ভাষা বুঝেন না আপনি?
‘আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে কষ্ট হবে আরহাম বাট আমি আপনাকে ত্যাগ করব।জানেন?খুব কষ্ট হবে আমার?কিন্তু পারব নিজেকে সামলে নিতে।যে কয়দিন আপনার সাথে থেকেছি,আপনার সাথে সময় কাটিয়েছি, নিঃসন্দেহে সেটা আমার জীবনের সুন্দর কিছু অধ্যায়।’
‘আমি আপনার মাসনা হওয়ার যোগ্য না।আসলেই তো।আমি যোগ্য না।আপনার থেকে সবদিকে আমি নিচ।ইউ ডিজার্ভ মোউর বেটার দেন মি।’
এসব ভাবতে ভাবতে কফি টা ঠান্ডা হয়ে গেলো।আর খেতে ইচ্ছেও করছে না।ভেতরটা বিষন্নতায় ছেঁয়ে গেছে।চোখমুখ মুছে তাড়াতাড়ি নিচে নামলো।নাস্তা তৈরী করতে হবে।
__________
আরহাম নিচে নামলেন নাস্তা করার জন্য। মাইমুনাও এসেছেন। হাফসা নাস্তা এনে সার্ভ করছে।তা দেখে আরহামের মাথা গরম হয়ে গেলো।কড়াসুরে বললেন, ‘কিচেনের কাজে কয়জন ম্যাড আছে?’
হাফসা নিচুসরে বলল, ‘৪ জন।’
‘কোথায় উনারা?ডাকেন তো?’
‘নেই।’
‘মানে?’
‘তিনজন ছুটিতে।একজন বাইরে।’
‘তিনজনেরই একসাথে ছুটি?’
হাফসা কিছু বলল না।মাইমুনার দিকে তাকালো।মাইমুনার চোখেমুখে ভয়।কারন মাইমুনা ইচ্ছে করেই তিনজনকেই ছুটি দিয়ে দিয়েছেন।
‘উনাদের জানিয়ে দিন কমপক্ষে ২ জন হলেও আসতে।আর আজ থেকে আপনি কিচেনে কোনো কাজ করবেন না।আপনাকে দিয়ে কাজ করানোর জন্য আমি বিয়ে করিনি।’
আরহামের হাফসার প্রতি এত কেয়ারিং দেখে মাইমুনার মাথা গরম হয়ে গেলো।বুঝতে পারলেন আরহাম এত সহজে হাফসাকে ছাড়বেন না।আর হাফসাও কি যেতে চাইছে না নাকি?এত অপমানের পর কীভাবে টিকে থাকলো?নতুন কোনো উপায় বের করতে।এবারের গেমটা হবে ভিন্ন।
সামনে থাকা দূজনের আড়ালে মাইমুনা ফিচেল হাসলো।আরহাম হাফসাকে খাবার খাইয়ে দিলেন।মাইমুনা রীতিমতো রেগে গেলো। হাফসাকে আগে কেন দিলেন?তাই ওকে দিতেই নাকোচ করে দাঁতে দাঁত চেপে বলল, ‘এটাতে স্পাইসি বেশী।আমার ক্ষতি করে।’
টেবিলে থাকতে থাকতেই আরহাম দ্রুত উপরে উঠে রেডি হয়ে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন।ঘড়িতে তখন ৮ টা বেজে পঁচিশ মিনিট।এত সকাল কি কাজ উনার?
_________
মাইমুনা বসে বসে ভাবছে এবার কি করা যায়।মিথ্যে অভিযোগ গুলো দিয়েও আরহামকে হাফসা থেকে সরানো যায় নি।এবার একটু কান্নাকাটির অভিনয় করতে হবে। নাহ তার আগে একটা গেম খেলা যাক।
কিছুক্ষণ পর….
হাফসাকে ডাকতেই সে এসে হাজির।মাইমুনা জিজ্ঞেস করলেন,
‘কোনো কাজ আছে তুমার?’
‘কিছু করতে হবে?’
‘হুমম একটা কাজ ছিলো।’
‘বলুন।’
‘ওই যে কাবার্ড দেখছো এর ভিতরের ড্রয়ারে কিছু ডলার আছে।ওগুলো একটু গুণে দাও না প্লিজ।’
21★
(৩৮)
‘ওই যে কাবার্ড দেখছো এর ভিতরের ড্রয়ারে কিছু ডলার আছে।ওগুলো একটু গুণে দাও না প্লিজ।’
‘সরী আপু পারব না আমি।আপনি উনাকে দিয়ে গুনিয়ে নিয়েন।’
‘উঁহু তোমাকে তো আমি বিশ্বাস করি হাফসা।’
‘প্লিজ মাইন্ড করবেন না।আমি পারব না।’
মাইমুনা ভেতরে ভেতরে রাগলেও বাইরে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে বললেন, ‘আচ্ছাহ।বড় বোনের কথা রাখবে না তুমি?’
‘আপু এমনভাবে বলবেন না আমার ভয় করে যদি…’
‘উহু উহু কোনো ভয়ের কারণ নেই।বললাম তো আমি তোমাকে বিশ্বাস করি।’
হাফসা আবারও মানা করলো কিন্তু মাইমুনার একপ্রকার জোর-জবরদস্তি তে উনার সামনে একটা একটা করে গুণে উনার সামনেই আবার ড্রয়ারে রাখলো।
ও যেতেই মাইমুনা সয়তানি হাসলো।এবার দেখি তোমার উনি তোমাকে কীভাবে বিশ্বাস করে?’
*******
বিকেলে আম্মু আসলেন।সন্ধ্যার পর চা খাওয়াসহ গল্প হলো বেশ কিছুক্ষণ।এর মধ্যে আরহাম আসলেন।সারাদিন বাইরে ছিলেন।আগে আগে হাফসা লাঞ্চ টাইমে ফোন দিতো।টেক্সট দিতো।তবে এখন আর জিজ্ঞেস করে না।’আমি নামক দূর্অভ্যাস উনার কাটুক।’
ঘুম ভাঙ্গলো প্রায় ১০টায়।ঘড়িতে চোখ যেতেই ধড়ফড়িয়ে উঠলো হাফসা।ইশার নামাজ পড়ে জায়নামাজেই ঘুমিয়ে পড়ছিলো সে।তাহলে বিছানায় এলো কি করে।আর লাইট’ই বা কেন অফ?কিছু ভাবার আগেই কেউ লাইট অন করলে হাফসা ভয় পেয়ে যায়।সামনে তাকিয়ে মানুষটাকে দেখতেই ভয় কমে।একসাথে কয়েকটা শ্বাস নিয়ে বুকে ফুঁক দেয়।হাফসা নেমে ওয়াশরুম থেকে চোখেমুখে পানির ছিটা দিয়ে বেরিয়ে আসে।আরহাম মুগ্ধ চোখে তাকান।ছোট্ট বার্বিডলের মতো মুখে পানির ফোঁটায় খুব স্নিগ্ধ লাগছে দেখতে।হিজাব পড়ে নিচে যেতে চাইলে আরহাম পথ আটকান।প্রশ্ন ছুঁড়েন, ‘কোথায় যাচ্ছেন?’
‘কিচেনে।’
আরহাম চোখ গরম করে তাকিয়ে বলেন, ‘কেন?কিচেনে যেতে না নিষেধ করলাম আপনাকে।’
‘আ্ আ আম্মুকে এ একটু হেল্প…
ওর তোঁতলানো দেখে আরহাম মনে মনে হাসলেন।বুঝতে পারলেন ভয় পেয়েছে উনাকে।বুঝতেই এক অপরাধবোধ ছেঁয়ে গেলো উনার মধ্যে।
‘আম্মু ডিনার রেডি করে ফেলেছেন।আপনাকে নিতে এসছিলাম।’
‘কখন আসছিলেন?’
‘উমমমম…আধঘন্টা হবে।’
‘ডাকলেন না?’
‘আপনার ঘুম ভাঙ্গার অপেক্ষায় ছিলাম।’
‘চলুন।’
******
খেতে খেতে আম্মু হেসে বললেন, ‘হাফসা একদিন খাইয়ে দাও আরহামকে।’
হাফসার মুখ নড়া বন্ধ হয়ে গেলো।ওকে চুপ থাকতে দেখে আরহাম এ প্রসঙ্গ এড়াতে বললেন, ‘আম্মু ফুপিকে কেমন দেখলেন?সুস্থ হয়েছেন?’
‘হুমম মোটামুটি আলহামদুলিল্লাহ।সবাইকে নিয়ে যেতে বলেছেন হাফসাকে দেখতে চাইছেন খুব।’
‘আপনি নিয়ে যেয়েন সময় করে।’
‘তুমি যাবে না?’
‘সময় নেই।’
_________
আজকে মাইমুনার সাথে থাকছেন আরহাম।আম্মুর রুমে হাফসা থাকবে।আম্মুকে রুমে দেখে চেয়েও একটু কথা বলতে পারলেন না।মনে মনে আহত হলেন।
রুমে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই মাইমুনাকে দেখলেন চিন্তিত হয়ে চেয়ারে বসে আছে।
পাশে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন ‘কি হয়েছে?মন খারাপ?’
মাইমুনা নির্বিকারচিত্তে মাথা নাড়ান।
উনি মাইমুনাকে একদম কোলে নিয়ে বিছানায় বসান।টুলটা এনে বিছানার পাশে বসে মাইমুনার হাতটা নিজের হাতে নিয়ে কোমল কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমাকে বলবেন না?আপনার মন খারাপ।কিন্তু কেন?’
‘এমনিই।’
‘এমনি তো মন খারাপ হয় না।বলুন কি কারণ?’
মাইমুনা এমন ভাব করলেন যেনো উনি কারণ বলতে নারাজ।অবশেষে আরহামের জোরাজোরি তে বললেন,
‘বিশ্বাস করবেন তো আমার কথা?’
‘কেন করব না?’
‘আপনার খারাপ লাগবে না তো শাহ?’
‘সেটা তো এখুনি বলতে পারব না।আগে বলুন কী কারন।’
‘আজ্ আজকে..
‘কি আজকে?’
‘আজকে হাফসাকে বলছিলাম কাবার্ডে রাখা ডলারগুলো একটু গুণে দিতে।আমার আগের গুণা ছিলো।এরপর থেকে ২০০ ডলার মিসিং।’
আরহাম কিছুসময় চুপ থাকলেন।অতপর জোরালো কন্ঠে জিনিস করলেন, ‘আপনি কি উনাকে সন্দেহ করছেন?’
‘প্রথমে করি নি।’
‘হুয়াই?কিসের ভিত্তিতে সন্দেহ করছেন?অনুমান খুব খারাপ একটা গুনাহ।’
‘ম্যাড বলছিলো হাফসাকে কিছু ডলার কাবার্ডে রাখতে দেখেছে।আমি তো বিশ্বাস করতাম না।বাট ম্যাড যে বর্ণনা দিলো তাতে মনে হলো ডলারগুলো….
‘সাট আপ।হাউ ডেয়ার ইউ টু ডাউট হার?’
মাইমুনা ব্যস্ত হয়ে বললেন, ‘শাহ আপনি কি রাগ করলেন?এজন্য আমি বলতে চ্ চাইনি।’
আরহামে রাগে চুপ হয়ে আছেন।
‘আপনি এ বিষয়ে হাফসাকে কিছু বলবেন না প্লিজ।’
‘ঘুমান।আই নীড রেস্ট।’
‘শরীর খারাপ লাগছে?’
‘না।’
আরহাম বিছানায় শু’তেই মাইমুনা পাশে গিয়ে মাথা ম্যাসাজ করে দিতে লাগলে তিনি নাকোচ করে বললেন,
‘লাগবে না।’
‘ঘুমান তো।’
চোখ বুজতেই অনেক ভাবনা এসে ভীড় করে মাথায়।কিছু প্রশ্ন যাচ্ছেই না।হাফসার প্রতি যত ভুল ধারণা ভাঙ্গতে চাইছেন নতুন করে ঠিক ওতটাই যুক্ত হচ্ছে বারবার।
(৩৯)
________
শেষরাতে পায়ের ব্যাথায় হাফসার সহ্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে।মেডিসিন,বিকস্ দিয়েও একটুও কমলোই না বরং উটকো মাথাব্যাথাও এসে হাজির হলো।সারাঘরময় পায়চারি করছে।ঠান্ডা আবহাওয়াতেও গরম লাগছে প্রচুর।ওরনা ছেড়ে একটা বই হাতে বাতাস করছে মাথায়।হঠাৎ কিছু একটা মনে পড়তেই ক্যালেন্ডার খুঁজে।তারিখ দেখতেই চোখ বুজে নেয়।প্রথমদিনের পেইনটা খুব বেশীই।যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে অবশেষে কেঁদে ফেললো।প্রতিবারই ফার্স্টডে তে তাকে অসহ্যকর এই যন্ত্রণার সম্মুখীন হতে হয়।
______
সকালবেলা নাস্তার জন্য ডাক আসতেই অসুস্থ শরীর নিয়ে উঠলো।ফযরের পরে ঘুৃম লেগেছিলো সবে।ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলো।আরহাম অন্যদিনের মতো আজ কোনো কথা বললেন না।হাফসা শুধু অরেন্জ খেয়ে একটা ব্রেড হাতে নিয়ে উঠে আসতে নিলেই আম্মু জিজ্ঞেস করলেন, ‘কি হয়েছে?নাস্তা করলে না কেন?’
‘মাথাব্যাথা করছে।’
তার একটু পরই আরহাম রুমে এসে দেখলেন হাফসা আধশোয়া হয়ে চোখমুখ কুঁচকে মাথা চেপে আছে।
‘বেশী পেইন করছে মাথায়?মাসাজ করে দিব?’
হাফসা মাথা নাড়িয়ে না বললে তিনি জিজ্ঞেস করলেন,
‘মাথাব্যাথার কোনো মেডিসিন নিবেন?’
তখুনি আম্মুকে হটওয়াটার ব্যাগ নিয়ে আসতে দেখে আরহাম চলে গেলেন।খানিক পর আম্মু যখন বেরিয়ে গেলেন তখন আবার রুমে আসতে সে জিজ্ঞেস করলো,
‘অনলাইনে কিছু অর্ডার দিলে বাসায় আসতে কতক্ষণ লাগে?’
আরহাম “আসছি” বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।কিছুক্ষণ পর হাতে করে দূটো ব্যাগ নিয়ে আসলেন।
বললেন, ‘আই থিংক হুয়াট ইউ ওয়ান্ট ইজ ইন দ্যা ব্যাগ।ইট ইজ নট গুড টু টেইক মেডিসিন।হাওএভার,ইফ ইট হার্টস টু মাচ,আই লেফট্ দ্যা মেডিসিন নেক্সট টু ইট।’
হাফসা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিতেই তিনি বললেন,
‘খাবার পাঠাচ্ছি নিচে গিয়ে।খেয়ে নিয়েন কষ্ট করে।একটু তাড়া ছিলো।যেতে….
‘যান।’
‘টেক কেয়ার।আল্লাহ হাফিজ।’
সালাম বিনিময় শেষে চলে গেলেন।
******
হাফসা ওয়াশরুম থেকে এসে দেখলো,আম্মু হাতে খাবার নিয়ে বসে আছেন।অজান্তেই ঠোঁটের কোণে মলিন হাসি ফুটে ওঠে।
আম্মু তাকে কাছে এনে বিছানায় আধশোয়া করে শোয়ালেন। হাফসা আবেগাপ্লুত হয়ে জড়িয়ে ধরলো কিছুক্ষণ।আম্মু ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে মুখের সামনে ফ্রুটস সুপ তুলে ধরলেন।
‘হা করো।’
‘খাবো না আম্মু।’
‘ওয়েট এই কাজল।’
‘জ্বী খালাম্মা।’
‘তাড়াতাড়ি এই ওয়াটার ব্যাগ নিয়ে ওয়াটার গরম করে আনো।ঠান্ডা হয়ে গেছে।’
কাজল যেতেই মুখের সামনে আবার খাবার তুলে ধরলেন।
‘হা করো হাফসা।’
‘রুচি নেই আম্মু।’
‘থাকার কথাও না।খাওয়ার মতোই জিনিস এনেছি।একটু খেয়ে নাও।তারপর মেডিসিন নিবে।’
হাফসা অল্প খেয়ে মেডিসিন খেয়ে নিলো।মা অনেকক্ষণ ওর সাথে গল্প করলেন।বেশ ভালোই সময় কাটছিলো।ব্যাথা কিছুটা কমেছে।আস্তে আস্তে চোখে ঘুম আসতেই আম্মু ওকে ঘুমাতে দিয়ে রুমের লাইট অফ করে দরজা আটকিয়ে চলে গেলেন।হাফসা আল্লাহর কাছে লাখ-কোটি শুকরিয়া আদায় করলো এমন একটা মা পাওয়ার জন্য।
_______
লান্চটাইমে আরহাম কল দিয়ে কথা বললেন বেশ কিছুক্ষণ।উনার প্রতি রাগটা কমে আসছে হাফসার।তাছাড়া উনি ক্ষমাও চেয়েছেন।সব ভুলে আবার নতুন করে শুরু করা যায় না নাকি।
_______
মাইমুনা ঘরে রাগে ফুঁসছে।এত কিছু করেও হাফসাকে শাহ থেকে আলাদা করা যাচ্ছে না।এবার একটা আলাদা প্ল্যানিং আছে।এবার সিউর কাজ হবে।ফোনটা হাতে নিয়ে রুদ্র’র নাম্বার খুঁজতে থাকলেন।হাফসার ছবি আছে মাইমুনার ফোনে।ফোনে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলে ছবি পাঠিয়ে দিলেন ইনবক্সে।
_______
কলিং বেল বাজতেই মাইমুনা হাফসাকে ডেকে বললেন, ‘হাফসা দরজা খুলো তো।শাহ আসছেন।’
হাফসা ভ্রু কুঁচকালো এখন তো আরহাম আসার সময় না।আরহাম আসেন সাড়ে ছ’য়টা পর।এখনও ছয়টা বাজে নি।আসতেই পারেন হয়তো।
দরজা খুলতেই দৃশ্যমান হলো একজন পুরুষ।মুহুর্তেই নুখ ডেকে নিলো হাফসা।হার্টবিট কাঁপতে শুরু করলো এই অপরিচিত আগন্তুক কে দেখে।লোকটা কেমন জানি ওকে খুঁটিয়ে দেখছে।হাফসা মুহুর্তেই সরে আসলো।চলে যেতে চাইলে লোকটা বলে উঠলো, ‘যাবেন না প্লিজ শুনুন।’
হাফসা পিছন না ঘুরেই দাঁড়ালো।
‘শুনছেন?’
হাফসার উত্তর না পেয়ে পুনরায় প্রশ্ন করে বসলেন,
‘আপনার নাম কি?’
‘হ্ হা হাফসা।
‘কাঁপছেন কেন আপনি?’
হাফসা আর দাঁড়ালো না।দ্রুত পায়ে উপরে চলে গেলো হাফসা।লোকটা পিছন থেকে ডাকলো কয়েকবার।হাফসা কোনোভাবে রুমে এসে দরজা লক করে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো।
মাইমুনা দূর থেকে দেখছিলেন সব।ফিচেল হেসে এগিয়ে গেলেন।রুদ্র কে সোফায় বসতে দিয়ে ম্যাড কে দিয়ে নাস্তার অর্ডার দিলেন।
রুদ্র সম্পর্কে মাইমুনার মামা লাগেন।মাইমুনার থেকে তিন বছরের বড়।মাহরাম বলে মাইমুনা উনার সামনে আর মুখ ডাকলেন না।আরহামের বলা একটা কথা মনে পড়ছে, ‘একান্ত মাহরাম ছাড়া কারো সামনে চেহারাও উন্মুক্ত রাখবেন না।’
‘কেমন আছিস?’
‘ভালো আলহামদুলিল্লাহ, তুমি কেমন আছো?’
রুদ্র সোফায় পায়ের ওপর পা তুলে হাফসার ঢুকা রুমের দিকে তাকিয়ে বেশ শ্লেষাত্মক সুরে বললেন, ‘ভালো।এই সুন্দরী’ই কি হাফসা।তোর বর্ণনার চাইতেও বেশী সুন্দর।’
‘হুমম এটাই তো ওর দেমাগ।’
‘আচ্ছা আমি ভাবছি আরহাম কি আমাকে থাকতে দেবে?বাসায় তো কুমারী বউ।’
নোট📌
(কোনো মাহরামের সম্পর্কে যদি ফিতনার সম্ভাবনা থাকে,তবে তাঁর থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়।কারো অনুমতি ছাড়া তাঁর কোনো বিষয় অন্য কারো কাছে প্রকাশ করাও যেমন গুনাহ।তেমনি আপনার শুভাকাঙ্ক্ষীর কোনো ছবি তাঁর অজান্তে কোনো নন-মাহরামকে দেখানোর গুনাহ’র দায়ভারও আপনার।ছবি বা অন্য কোনো ব্যাক্তিগত যেকোনো কিছুই।এটা গায়রতহীনতার পরিচয়।)
(📌গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক।এটাকে বাস্তবের সাথে মিলাবেন না কেউ)