লাভার নাকি ভিলেন | সিজন – ২ | পর্ব – ৩২

মেঘলা আকাশের প্রতি অনেক রেগে গেছে তাই সেও মানা করল না।
নাবিল মেঘলার রুম দেখিয়ে দিল। মেঘলা নিজের ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামতে যাচ্ছিল খাবার খাওয়ার জন্য তখনি দেখল আকাশ নাবিল আবির সামিরা সবাই দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।

মেঘলাঃ কি হচ্ছে এখানে দেখি তো…মনে মনে বলে উঁকি দিল।আর দেখলো বাইরে গাড়ি থেকে একটা মেয়ে নামছে…
মেঘলাঃ ওমা এই ললনা আবার কে…??কিছুক্ষন নখ কামড়ে আবিষ্কার করলো ও আচ্ছা আকাশের হবু শাকচুন্নি আসছে তাহলে…কথাটা ভাবেই মেঘলা দৌড়ে গিয়ে আকাশ আর নাবিলকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে ২ জনের মাঝখানে ঢুকে গেল।

আকাশঃ সমস্যা কি? আর একটু হলেই তো পড়ে যেতাম..

মেঘলাঃ মানা করেছে গে৷ গড়াগড়ি খেলেও আমার কোন অসুবিধা নেই।

আকাশঃ তুই এখানে কেন?

মেঘলাঃ বাচদরের গলায় কেমন মুক্তার মালা উঠল তাই দেখতে এসেছি।

আকাশঃ কি আমি বাদর?

মেঘলাঃ নয়তো কি? যাইহোক ঝগড়া করতে চাচ্ছি না চুপ থাকো নাহলে বউ তোমার আসল রুপ দেখে এখুনি পালিয়ে যাবে…

আকাশঃ বাই এনি চান্স তোর কি হিংসা হচ্ছে?

মেঘলাঃ ষ্টুপিড আমার হাজবেন্ড কে দেখেছো? যেমন দেখতে তেমন তার আচারন ওকে ফেলে তোমার মত বান্দরের জন্য আফসোস করার মত বোকা আমি নই।

আকাশঃ তাই নাকি একটু আগেই না আমার জন্য পাগল ছিলি মরে যাচ্ছিলি এখন আবিরকে ভাল লেগে গেল?

মেঘলাঃ ভাল লাগার মত হলে তো ভাল লাগবেই আকাশ আর মেঘলার কথার মাঝখানেই মেয়েটা এসে দাঁড়াল।

নাবিল আকাশকে ধাক্কা দিয়ে ইশারা করল থামার জন্য কিন্তু কে শুনে কার কথা ২ জন মিলে ঝগড়া করেই যাচ্ছে।

নাবিল আর আবির ২ জন বোকার মত একে অন্যের মুখ দেখছে।
নাবিল ব্যাপরটা সামলানোর জন্য কাশির আওয়াজ করে জোরে বলে উঠল
hi ovoni welcome…

অবনীঃ কোন সমস্যা…??

এবার আকাশ অবনীকে লক্ষ্য করল আর তাড়াতাড়ি মেঘলার মুখ চেপে ধরে বলল না কোন সমস্যা না আসলে ওর মাথায় একটু সমস্যা আছে তো তাই একটু বেশি কথা বলে।

মেঘলাকে আকাশ মোটামুটি জড়িয়ে ধরে আছে মেঘলা রাগে ফুসফুস করছে।

সামিরা বিষয়টা দেখে মুচকি মুচকি হাসছে।

নাবিলঃ কি হয়েছে হাসছো কেন?

সামিরাঃ তোমার কি মনে হয় এরা ২ জন ২ জনকে ছেড়ে থাকতে পারবে? আমার ত মনে হয় না।

নাবিলঃ থাকতে তো হবেই

সামিরাঃ পারবে না দেখে নিও আকাশ যদি কোন কারনে বিয়ে করেও ফেলে ফেলবে কিন্তু মেঘলার বিয়েটা মেনে নিতে পারবে না দেখবা হয়ত ফুলসজ্জা থেকে মেঘলাকে তুলে নিয়ে আসবে।

নাবিলঃ আমি তো আর আকাশ কে মেঘলার কাছেও যেতে দিব না।

সামিরাঃ তাই নাকি? তো মেঘলা এখন কোথায় দেখেছো?

নাবিলঃ কোথায়?

সামিরাঃ আকাশের বুকে…

নাবিলঃ ওই কি করছিস আকাশ ছাড় ওকে…

আকাশঃ ওকে ছাড়লে ও আমার সাথে ঝগড়া করবে…

আকাশ নাবিলের সাথে কথা বলছে সেই সুযোগে মেঘলা আকাশের হাতে কামড় বসিয়ে দিল…

আকাশঃআ আ….মেঘলার বাচ্চা…

মেঘলাঃ মা গো মা আর একটু হলেই মরে যেতাম কত খারাপ ছেলে ভাবা যায়?

অবনী অবাক হয়ে এদের কান্ড দেখছিল।

নাবিল বুঝলো অবনী অবাক হচ্ছে…
এই অবনীকে নাবিলেই পছন্দ করেছে আকাশের সাথে অবনীর ২ বার দেখা হয়েছিল নাবিল অবনীকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল তখন আবিরের সাথেও পরিচয় হয়েছে।
নাবিল আকাশ আর মেঘলার কার্যকলাপ ধামাচাপা দেয়ার জন্য বলল এসো অবনী ভিতরে এসো..

অবনী যখন ভিতরে যেতে চাইল মেঘলা এগিয়ে অবনীর রাস্তা আটকে বলল আরে থামো কোথায় যাচ্ছো আগে ত দেখে নিই বলে…মেঘলা গিয়ে অবনীর গাল টানলো তারপর চুল টানল…

আবিরঃ আরে আরে কি করছো মেঘলা..???

মেঘলাঃ কই কি করছি? দেখছি আটা মেখে সাদা হয়েছে নাকি আর চুল কি নিজের নাকি? বউ দেখলে এভাবেই দেখতে হয় বুঝেছো?

আকাশঃ দেখা হয়েছে?

মেঘলাঃ হুম দেখেছি তবে পছন্দ হয় নি..

আকাশঃ কেন চুল আর গাল সবি তো ঠিক আছে।কিছুই নকল না

মেঘলাঃ তা ঠিক কিন্তু চেহারাটা দেখতে শাকচুন্নির মত যাক গে দর্শনদারী গেল এবার গুনের বিচার হবে…

আকাশঃ বেশি বেশি করছিস তুই… চুপচাপ এখান থেকে যা তোর কিছু বিচার করতে হবে না…

মেঘলাঃ ছেলেরা বেশি প্যান প্যান করে তাই ২ চোখে সহ্য করতে পারি না এগুলাকে এই তুমি কি চুপ থাকতে পারো না?

আকাশঃ মেঘলা….

মেঘলাঃ চুপ একটাও কথা না….
আচ্ছা অবনী না ধরনী যেই হও তুমি বলো তো ৭/৫ সমান ১৩ হলে ১৩ থেকে ১২ বাদ দিলে কত থাকে? সময় ১০ সেকেন্ড..
মেঘলার প্রশ্ন শুনে সবাই অবাক হল…
অবনী কিছু বলছে না জন্যে মেঘলা কি হল তাড়াতাড়ি বলো।

অবনীঃ ০১…

মেঘলাঃ হে হে হে….. এই নাকি বুদ্ধিমতি দেখছো আকাশ তোমার বউ একটা মাথামোটা।আমার চেয়েও মাথামোটা

অবনীঃ মানে কি…??

মেঘলাঃ মানে তো সহজ ৭/৫ সমান ১৩ হয় কিভাবে? ১২ হয় আর থেকে ১২ গেলে ০ হয়।

আকাশঃ হ্যা… আমরা সবাই বুঝেছি কার কত বুদ্ধি এবার সর।

মেঘলাঃ হুম যাও যাও মুর্খ বউ নিয়ে চোখের সামনে থেকে বিদায় হও।যেমন বর তার তেমন বউ????????

নাবিলঃ অবনী কিছু মনে করো না, ও একটু এমনেই চলো ভিতরে চলো…
নাবিল অবনীকে নিয়ে ভিতরে গেল…
আকাশো গেল।

মেঘলা দাঁড়িয়ে আছে দেখে,
আবিরঃ ম্যাডাম আসুন…

মেঘলাঃ হুম চলো…

আবিরঃ মন ভালো আছে..??

মেঘলাঃ হুম এখন কেন যানি আর খারাপ লাগছে না।

আবিরঃ তাই ভাল থাকাই তো ভাল তো এবার বলো বউ কি সত্যি পছন্দ হয় নি?

মেঘলাঃ সত্যি বলব?

আবিরঃ হুম.

মেঘলা গিয়ে আবিরের কানে কানে বলতে লাগল পছন্দ হয়েছে মেয়েটা খুবি সুন্দরী কিন্তু আকাশ বজ্জাতের বউ যে তাই সুন্দর বলি নি।

আবির মেঘলার কথা শুনে হেসে দিল মেঘলাও হেসে উঠল।

মেঘলা আর আবির আসছে না দেখে আকাশ পিছনে থাকল আর দেখল ২ জনে হাসাহাসি করছে… দেখেই আকাশের মেজাজ খারাপ হয়ে গেল।

আকাশ রাগে ফুসতে ফুসতে বলল একটু আগেই কত কাহিনী করল আমাকে ছাড়া নাকি বাঁচবে না আর এখনী রং বদলে ফেলল… এ তো গিরগিটির চেয়েও ড্যাঞ্জেরাস।

নাবিল আর সামিরা মিলে অবনীকে নিয়ে ঘরে দিয়ে আসল।

মেঘলাও নিজের ঘরে যাচ্ছিল নাবিলকে দেখে দাঁড়িয়ে গেল।

মেঘলাঃ ওই

নাবিলঃ বল…

মেঘলাঃ তুই এই মেয়েটাকে এত মাথায় তুলছিস কেন?

নাবিলঃ দেখ মেঘলা আকাশ এখন যাই করুক না কেন ও আমার ভাল বন্ধু ওর বিয়েতে আমি হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারব না।আকাশ আমাকে ভরসা করে ওর ভরসার অমর্যাদা আমি করতে পারব না। আর মেয়েটাকে আমিই পছন্দ করেছি তাই দায়িত্ব টা আমারেই।আমি চাইব তুই ও সব মেনে স্বাভাবিক ভাবে থাকবি।

মেঘলাঃ ঠিক আছে ঠিক আছে যা এখন। বলে মেঘলা নিজের ঘরে গেল।

কিছুক্ষন পর সবার ডাক পরল খাবারের জন্য আকাশ,নাবিল সামিরা,আবির মেঘলা পাশাপাশি বসেছে…
অবনী জার্নি করে এসেছে তাই খেতে আসেনি।

সবাই মিলে খাচ্ছে তখনি মেঘলা বিষম খেল সাথে সাথেই আকাশ পানি নিয়ে এগিয়ে দিয়ে রাগি লুক নিয়ে বলল যা খেতে পারিস না নিস কেন তোর খাবার কি কেউ নিয়ে যাচ্ছে নাকি আস্তে আস্তে খা..

নাবিলঃ ও মাছ খেতে পারে না জানিস তো শুধু শুধু বকছিস কেন? দেখি এদিকে আয় মেঘলা আমি খায়িয়ে দিচ্ছি…

আবির আকাশের হাত থেকে পানিটা নিয়ে টেবিলে রেখে দিয়ে বলল ভাই তোমাদের আর চিন্তা করতে হবে না আমার বউ এর খেয়াল আমি নিজেই রাখব বলে নিজের প্লেটে পানি ঢেলে এক হাতে মেঘলার প্লেট নিয়ে আর এক হাতে মেঘলার হাত ধরে বলল তোমার এখানে খেতে অসুবিধা হচ্ছে তাই না? চলো সোফার টেবিলে চলো বলে আবির মেঘলাকে নিয়ে চলে গেল।

আকাশঃ নাবিল কি হল এটা?

নাবিলঃ কই কি হল..??

আকাশঃ আবির মেঘলার হাত ধরল কেন?

নাবিলঃ আজব কথা বলছিস ১ দিন পর বিয়ে হাত ধরতে পারেনা?

আকাশঃ বিয়েটা তো এখনো হয়নি তাই না?

সামিরা মুচকি মুচকি হাসতে হাসতে বললো বাহ মেঘলা কত লাকি দেখো নাবিল আবির ওকে খায়িয়ে দিচ্ছে।

কথাটা শুনে আকাশ তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল আর সেদিকে তাকাল আর আবির খাওয়াচ্ছে দেখে আকাশ নিজের খাবার ছেড়ে উঠে পড়ল।

নাবিলঃ আরে কোথায় যাচ্ছিস আকাশ থাম…
সামিরা কি করলে এটা আকাশ এখন কি করবে কে জানে…

সামিরাঃ দেখো না ভাল ঠিকি বাসে কিন্তু বলবে না তাই জ্বালাচ্ছি।

নাবিলঃ তুমিও একটা বদের হাড্ডি..

আকাশ রাগে গিয়ে আবিরের হাতে মেঘলার খাবারের প্লেট টা ফেলে দিয়ে ভেংগে ফেলল।

নাবিল তাড়াতাড়ি সেখানে যেতে চাইল কিন্তু সামিরা আটকে দিল…

নাবিলঃ আরে সামিরা ছাড়ো আকাশের অনেক রাগ মারামারি শুরু করে দিবে…

সামিরাঃ কিছুই হবে না চুপচাপ থাকো…

আবিরঃ কি করলে ভাই ও তো একটুও খায় নি..

আকাশঃ তুই ওকে খাওয়াচ্ছিস কেন? ওর হাত নেই আর মেঘলা তুই বা একটা ছেলের হাতে খাচ্ছিস কেন?

আবিরঃ আজব কথা বলছো আজ বাদে কাল আমাদের বিয়ে আমি ওকে খাওয়াতে পারি না?

আকাশঃ বিয়ে কি শুধু তোদেরই হবে?আমার আর নাবিলের হবে না? কই আমরা তো বউকে খায়িয়ে দিচ্ছিনা, এত আদিখ্যেতা করছি না। তোরা দেখি চিপায় দাঁড়িয়ে হাসাহাসি করিস কারন ছাড়াই হাত ধরে টানাটানি করছিস খায়িয়ে দিচ্ছিস কেন রে লাজ লজ্জা বলতে কিছু নেই?

নাবিল এসে বলল ছাড় আকাশ এর রাগ করার মত কিছু ত হয় নি।ধরে নে এটা বিয়ের আগে প্রেম।

আকাশঃ হয়েছে অনেক হয়েছে আর না আবিরের সাথে মানে আমি মেঘলার বিয়ে দিব না।

আবিরঃ মানে কি..??

আকাশঃ মানে টা খুবি সহজ ছোট থেকে মেঘলাকে আমি বড় করেছি ওর উপড় আমার ১০০% অধিকার আছে। তাই ওকে কার কাছে বিয়ে দিব কার কাছে দিব না সেটা ঠিক করার রাইট আমার আছে তোর সাথে আমি মেঘলার বিয়ে দিব না।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।