আকাশঃ মেঘলা আমার সাথে এত জেদ দেখাস? পরিবার পেয়ে সাপের পিছ পা দেখেছিস তাই না।এতবার ধরে কল করছি তবুও ফোন টা তুলছিস না?দাঁড়া আমি আসছি এবার দেখি তোকে কে বাঁচায়।তোর কপালে তো আজ শনি আছে।
আকাশ আবারও মেঘলাকে ফোন দিল। অনেকবার ফোন বাজার পর মেঘলার চেতন হল অনেক্ষন আগে ড্রাগস নেওয়ার নেশা অনেকটাই কেটে গেছে।ফোনের আওয়াজে এবার মেঘলা উঠে বসল। কিন্তু ফোনটা হাতে নিতে নিতে কলটা কেটে গেল।
ফোনটা হাতে নিয়ে মেঘলার নিজের মাথার চুল নিজে ছিড়তে ইচ্ছা করছে …ভাইয়া আমাকে এতগুলো কল দিয়েছে আর আমি ধরিনি?আজ আমাকে কবর দেওয়া হবে নিশ্চিত।
আকাশের এতগুলি কল দেখে মেঘলার সম্পুর্ন নেশা কেটে গেছে…!!
মেঘলা কল বেক করতে যাবে তখনি ফোনটা আবার বেজে উঠল।
ভয়ে মেঘলার গলা শুকিয়ে গেছে।মনে মনে দোয়া পড়তে পড়তে ফোনটা ধরে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়াল।
মেঘলা আমতা আমতা করে বলল ভাইয়া…???
অপর পাশ থেকেঃ আমি কে এখন কি সেটারও পরিচয় দিতে হবে?
মেঘলাঃ আরে না না সেটা নয় আসলে….
আকাশঃ তোর আসল নকল তোর কাছেই রাখ এখন কথা না বলে বেলকনি দিয়ে নিচে নাম…
মেঘলাঃ ম মমম মানে…??
আকাশঃ মানে দেখা করব…
মেঘলাঃ এখন কিভাবে…
আকাশ আমি যেভাবে এসেছি সেভাবে বলতে বলতে আকাশ মেঘলার ঘরে ঢুকল।
আকাশের গলা শুনে মেঘলা চমকে উঠে পিছনে তাকাল।
নিজের সামনে আকাশকে দেখতে পেয়ে ভয়ে চুপসে গেল মেঘলা ফোনটা হাত থেকে পড়ে গেল…
মেঘলা মনে মনে ভাবছে আজ তোকে বাঁচাবে মেঘলা… তুই তো আজ শেষ আকাশ ভাই যে পরিমান অধর্য্য আর বদরাগী সে আজ আমাকে এতবার কল দিয়েছে তারপরে এই রাতের বেলা বাসায় এসেছে তারমানে কতটা ক্ষেপে আছে সেটা অনুমান করতে চাওয়াটাও বোকামি।
কিভাবে সামলাব?কেন ফোন ধরি নি প্রশ্নের কি উত্তর দিব?
যদি বলি ইচ্ছা করে ধরি নি এখনি গলা টিপে মেরে ফেলবে আর যদি বলি ওষধ খেয়েছিলাম তাও আবার ওই ওষধটা তাহলে তো আমাকে মেরে লাশটাকে এত ছোট ছোট করে টুকরা করবে যে মা বাবাও চিনবে না।
আজ আর বাঁচার কোন উপায় নেই।
আকাশ ফোনটা কান থেকে নামিয়ে পকেটে রাখতে রাখতে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল।
আকাশঃ কি রে স্ট্যাচু হয়ে গেলি কেন…
আকাশের কথায় মেঘলা ভাবনার জগত থেকে ফিরে আসল।
মেঘলাঃ কোনভাবে ব্যাপারটা ধামাচাপা দিতে হবে…মেঘলা আকাশের কাছে এসে নিজের ৩০ দাঁত বের করে জোর করে হাসির ভান করে বলল
ভাইয়া তুমি এখন এখানে কি করে আসলে?
আকাশ মেঘলার কথায় অবাক হল তারপর বলল এই বাসাটা আমার অনেক আগে থেকে চেনা রাতের বেলা মারপিট করে বাসায় যাওয়ার সাহস না পেয়ে বহুবার এ বাড়ির দেয়াল টপকে এসে এই ঘরে ঘুমিয়েছি।তাই এই বাড়িতে ঢুকতে আমার দরজার প্রয়োজন হয় না।
মেঘলাঃ ও আচ্ছা… ভাল হয়েছে এসেছো
তা কি খাবে বলো ক কক কফি ..করে নিয়ে আসি…??
আকাশঃ হ্যা ঠিকি ধরেছিস আমার বাসায় তো কফির খুব অভাব তাই মাঝরাতে দেয়াল টপকে তোর বাসায় আমি কফি খেতে এসেছি।
মেঘলাঃ আমি তা বলি নি… আচ্ছা তুমি বসো আমি নাবিল ভাইকে ডেকে আনি।
আকাশঃ মেঘলা তুই কি জানিস তুই আবল তাবল কথা বলতেছিস?
মেঘলাঃ ভয়ে জীবন যায় যায় অবস্থা মুখ দিয়ে যা আসছে তাই তো বলছি( মনে মনে)
কেন ভাইয়া কি বল্লাম?
আকাশঃ আমাকে তুই তুমি করে বলা শুরু করলি কবে? আসার পর থেকে দেখছি আমাকে তুমি করে বলছিস।
মেঘলাঃ আরে তাই তো ….?? কি করছি এসব?টেনশনে সব গুলিয়ে গেছে। ভুলের উপর আবার ভুল আজ আর রক্ষা নেই …(মনে মনে)
আকাশঃ বিড়বিড় করা বন্ধ করে ড্রেস চেঞ্জ কর বাইরে যাব।
মেঘলাঃ এখন বাইরে যাব…??
আকাশঃ ১ কথা ২ বার বলি না।
মেঘলাঃ ওহ এখানে মারলে নাবিল ভাই বাবা মা এসে বাঁধা দিবে তাই বাইরে নিয়ে যাচ্ছে তাই না?আচ্ছা আমাকে কি খুব মারবে???? (মনে মনে)
আকাশঃ ঘুম পাচ্ছে আমার…!!!
মেঘলা দৌড়ে এসে আকাশের পাশে বসল খুব ভাল কথা তো আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দেই…??
আকাশঃ অনেক দরদ দেখিয়েছিস আর না যেটা বলেছি সেটা কর আমি ঘুমিয়ে যাওয়ার আগে ড্রেস চেঞ্জ করে আয়।
মেঘলা জামা বদলাতে বদলাতে দোয়া করছে যেন আকাশ ঘুমিয়ে যায়।
কিন্তু ফিরে এসে দেখল আকাশ গেম খেলছে।
মেঘলাঃ গেম খেললে কি আর কারো ঘুম পায়…?? আজ আমাকে শাস্তি পেতেই হবে আর কোন বুদ্ধি নেই।
আকাশঃ এসেছিস…?? চল যাই।
মেঘলাঃ এদিক দিয়ে কোথায় যাচ্ছেন?চলুন সিঁড়ি দিয়ে যাই।
আকাশঃ বেশি কথা ভাল লাগে না আমি যেভাবে যাচ্ছি তুই ঠিক সেভাবেই আয়।
আকাশ তো বেলকনির কার্নিশ ধরে তারপর একটা পাইপে হাত রেখেই নেমে গেল। কিন্তু মেঘলা বারবার নিচের দিকে দেখছে…
মেঘলাঃ এভাবে মারার প্লেন ছিল…???? মেরে ফেলতো সেটা কথা ছিল না কিন্তু এখন কোমড়টা যে ভাংবে তার কি হবে?
আকাশ নিচ থেকে ইশারা করছে।
মেঘলাঃ ধুর বাবা কি সব দেখাচ্ছে কিছুই তো বুঝতে পাড়ছি না…
সবাই জেগে যাবে তাই আকাশ কথা বলছে না শুধু হাত দিয়ে দেখাচ্ছে।
মেঘলাঃ কি বলছেন বুঝতে পাড়ছি না তো… কি করব? লাফ দিব?
আকাশ হাত নাড়ছে…!!
মেঘলা আর কিছু না বলে চোখ বন্ধ করে দিল এক ঝাঁপ……
।
।
।
।
।
।
।
।
মেঘলার কান্ড দেখে আকাশ আকাশ থেকে পড়ল…
আকাশঃ কি বল্লাম আর এটা করল কি?
মেঘলাঃ মরব না তো জানি কিন্তু আমার এত স্বাদের কোমড় যাবে নিশ্চিত।
আকাশ মেঘলার ঠিক নিচে থাকায় দৌড়ে এসে মেঘলাকে ধরতে পারল।তবে এর জন্য আকাশ প্রস্তুত ছিল না তাই তাড়াহুড়ো করে ধরতে গিয়ে হাতে ব্যাথা পেল কিন্তু মেঘলাকে বোঝতে দিল না।
আকাশঃ কি করলি এটা…??
মেঘলাঃ আপনি তো বল্লেন লাফ দিতে।
আকাশঃ আমি ঝাঁপ দিতে বলি নি ঠিকঠাক ভাবে নামতে বলেছিলাম।
মেঘলাঃ মুখে না বললে বুঝব কি করে যা বুঝেছি তাই করেছি।
আকাশ মেঘলাকে কোল থেকে নামাতে নামাতে বলল,আচ্ছা ধরে নিলাম আমি তোকে লাফ দিতে বলেছি তাই বলে এত উপড় থাকে তুই লাফ দিবি?তোর কি নিজের মাথায় কোন বুদ্ধি নেই? সবসময় অন্যজনের কথায় চলিস কেন?মেঘলা তুই কবে বড় হবি আমায় একটু বলবি প্লিজ?
মেঘলাঃ আমি জানি তো আকাশ থাকতে মেঘলার কখনো কোন ক্ষতি হবে না।আকাশ নিজের ক্ষতি করতে পারে কিন্তু মেঘলার এতটুকু ক্ষতি হতে দিবে না কখনো… পৃথিবীতে চোখ বন্ধ করে যদি কাউকে বিশ্বাস করা যায় সেটা আকাশ।
আকাশঃ থাক চাপা মারতে হবে না।
মেঘলাঃ চাপা কোথায় মারলাম এই যে আমার জন্য হাতে ব্যাথা পেলেন তবুও কি একবারো বল্লেন? এটা বুঝি নিজের ক্ষতি না?
আকাশ অবাক হয়ে বলল হাতে ব্যাথা পেয়েছি কে বলল? এই দেখ কিছুই তো হয় নি।
মেঘলাঃ হা হা হা… মার কাছে মাসির গল্প করতে এসেছেন? আপনি ব্যাথা পাবেন আর সেটা আমাকে বলবেন তারপর আমি বোঝব?
আকাশঃ আচ্ছা বোঝলাম তুই খুব পেঁকে গেছিস নিজে নিজেই অনেক কিছু বুঝে যাস। কিন্তু এটা শোন আমার হাতে কিন্তু কিছুই হয় নি আমি ঠিক আছি এই নিয়ে কান্না জুড়ে দিস না প্লিজ।
মেঘলা প্রায় কেঁদে দিয়েছে…
আকাশঃ জানতাম এমনটাই হবে সেই ছোটবেলা থেকে এটা তোর বাজে অভ্যাস আমি ব্যাথা পাই আর নাই পাই তুই কেঁদে কেঁদে এমন অবস্থা করিস যেন মনে হয় আমি মরে গেছি।অসহ্যকর লাগছে কিন্তু মেঘলা…চোখ মুছ।
মেঘলাঃ আমার জন্যই এমন হল….
আকাশঃ হাতজোড় করছি কাঁদিস না দেখ কিচ্ছু হয় নি…এবার চল প্লিজ
মেঘলা চোখ মুছতে মুছতে কোথায় যাব…???
আকাশঃ গেলেই দেখতে পাবি…!!