নিজেকে ভাবে টা কি হ্যা শুনি? সবসময় ত্যাড়ামি করে অপমান করে মারে এমন বয়ফ্রেন্ড থাকার চেয়ে না থাকাই ভাল। এবার আসুক না জীবনে কথা বলব না যদি সোহাগ দেখাতে আসে একটা লাত্তি মারব আমাকে পেয়েছে টা কি? ফাউল বয়ফ্রেন্ড, এটার নাম ভালবাসা?
চোখের জল নাকের জল মুছতে মুছতে মেঘলা কলেজ যাচ্ছে সাথে বিড়বিড় করে আকাশ কে গালি দিচ্ছে রাস্তায় সবাই মেঘলার দিকে তাকিয়ে আছে কয়েকজন জিজ্ঞাসাও করেছে কি হয়েছে।
মেঘলা উত্তরে তাদের বকা দিয়েছে। আকাশ সেগুলি দেখছে আর হাসছে কিন্তু মেঘলা আকাশকে দেখে নি।
মেঘলা হাঁটছে তখনি নাক বরাবর রাখা একটা আইস্ক্রিমের সাথে ধাক্কা খেল মেঘলা অন্যমনস্ক ছিল তাই দেখতে পায় নি কেউ ইচ্ছা করে ওর সামনে আইস্ক্রিম ধরে রেখেছে।
আকাশঃ নে আইস্ক্রিম খা… নাহলে শরীরে পানিশুন্যতা দেখা দিতে পারে চোখের জলে তো বন্যার উপক্রম হয়েছে।
মেঘলা অবাক হয়ে বলল আপনি এখানে..??? দুর্গাপুরে যান নি?
আকাশঃ না যাইনি তবে ভাবিস না তোর কথায় যাইনি দরকার হয় নি তাই যাইনি।
মেঘলাঃ ভাল তো এখানে কি করছেন?
আকাশঃ ওই যে বল্লাম পানিশুন্যতা দেখা দিবে তাই আইস্ক্রিম দিতে এসেছিলাম।
মেঘলাঃ যার তার হাতে আমি খাই না কথায় আছে অপরিচিত কারোর হাত থেকে কিছু খেতে নেই আমি খাব না…
আকাশঃ অপরিচিত হলাম কবে…??
মেঘলাঃ যখন থেকে ব্রেকাপ করলাম
আকাশঃ ব্রেকাপ কখন হল
মেঘলাঃ ন্যাকা কিছুই জানে না সকালে হয়েছে সকালে আকাশের সামনে হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে জবাব দিল মেঘলা।
আকাশঃ বাপরে ম্যাডামের পাওয়ার বেড়ে গিয়েছে দেখছি।আচ্ছা মেঘলা তুই এত পানি রাখিস কোথায়? দুনিয়ার কাজ শেষ করে ফিরে আসলাম তাও তোর চোখের পানি শেষ হল না পড়ছে তো পড়ছেই…থামার নাম নেই।এর রহস্য কি।
মেঘলাঃ বাজে কথা রেখে সরুন কলেজ যাব।
আকাশঃ থাক আজ আর যেতে হবে না
মেঘলাঃ আমি আপনার কথা শুনতে বাধ্য নই।সরুন।
আকাশ তাই নাকি বলে আকাশ মেঘলার হাতে আইস্ক্রিম টা দিয়ে সবার সামনেই মেঘলাকে কোলে তুলে নিল।
আকাশঃ এত জেদ কেনরে তোর দেখি এবার জেদ দেখাস কি করে?
মেঘলাঃ ছাড়ুন বলছি নামান আমাকে… আমি চেঁচাব।
আকাশঃ এতক্ষন যা যা করলি তাতে অলরেডি পাগল প্রমাণিত হয়ে গেছিস চেঁচালে বলব পাগলকে জোর করে বাসায় নিয়ে যাচ্ছি।
মেঘলাঃ যানি যানি আপনাকে কেউ কিছু বলবে না কারন আপনি একটা ভিলেন।
আকাশঃ উম এমন করলে লোকে খারাপ বলবে।ভ
মেঘলাঃ পারেন তো শুধু এটাই,জোর করতে ভিলেন কোথাকার।
আকাশঃ কি বললি আমি ভিলেন?
মেঘলাঃতো কি?
আকাশঃ কোল থেকে ফেলে দিলেই বুঝতে পারবি ভিলেন কি জিনিস…
ও মা গো বলে মেঘলা আকাশে গলা জড়িয়ে ধরল।
আকাশঃ পাগলি একটা, আইস্ক্রিমটা গলে যাচ্ছে খা…
মেঘলাঃ বলেছি না খাব না।
আকাশঃ কি আর করার তাহলে তো কোল থেকে ফেলে দিতেই হবে বলে আকাশ ফেলে দেওয়ার অভিনয় করল
মেঘলাঃ আ আ আ খাচ্ছি খাচ্ছি…
আকাশঃ গুড গার্ল।
মেঘলাঃ এটা কোন ধরনের ভালবাসা কে জানে বাবা… মনে মনে
তারপর আকাশ মেঘলাকে নিয়ে পার্কে ঘুরতে গেল মেঘলার সব রাগ ভুলিয়ে দিল।
আকাশঃ তুই এবার বাসায় যা আমি পরে আসব।
মেঘলাঃ আমি তো এই বাসায় চলে এসেছি।এখন আবার ওখানে গেলে আংকেল আন্টি কি ভাববে?
আকাশঃ আচ্ছা তাহলে তুই এখন এই বাসাতেই থাক পরিক্ষার তো আর মাত্র কিছুদিন বাকি তারপরেই বিয়ে এই কদিন তুই এখানেই থাক তবে ভালভাবে পড়াশুনা করিস।
মেঘলাঃ আচ্ছা করব শোনো রাতে ফোন দিও।
আকাশঃ হুম দিব এখন গিয়ে ফোন কিনব।তোর কিছু লাগবে?
মেঘলাঃ হুম।
আকাশঃ কি কি লাগবে বল আমি কিনে পাঠিয়ে দিব।
মেঘলাঃ এসব তো কিনতে পাওয়া যায় না।
আকাশঃ এসব মানে?
মেঘলা আকাশের একদম কাছে গিয়ে আকাশের ২ হাত নিজের কোমড়ে রেখে ২ হাতে আকাশের মুখে ধরে বলল এসব মানে বলা যায় না করতে হয় বলেই আকাশের ঠোঁটে ঠোঁট মিলাল।
আকাশঃ মাথা গেছে তোর পাবলিক প্লেসে এটা কি করলি?
মেঘলাঃ বরকে আদর করতে স্থান কাল পাত্র বিবেচনা করতে হয় না।
আকাশঃ তা হটাৎ আদরের কারন।
মেঘলাঃ আপনি আমার জন্যই যান নি সেটা বুঝেছি তাই।
আকাশঃ এত বুদ্ধি হল কবে?
মেঘলাঃ বুদ্ধি সবসময় আছে শুধু দেখাই না আর কি…
আকাশঃ পাগলি আমার…
।
।
।
।
।
।
।
ভালবাসার মধ্যে দিয়ে কেটে গেল আরও কিছুদিন।
নাবিল যে সমস্যার জন্য দুর্গাপুরে গিয়েছিল সে সমস্যার সমাধান করে,সব দিক সামলে নিয়ে ফিরে এসেছে। সে তার দায়িত্ব খুব ভালভাবে পালন করেছে।পার্টির সবাই নাবিলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
।
।
।
পার্টি অফিসে সবার সাথে দেখা হলেও আকাশের সাথে নাবিলের দেখা হয়নি। নাবিল ক্লান্ত ছিল তাই তাড়াতাড়িই বাসায় চলে গেল। রাতে হটাৎ করেই নাবিলের ফোনে একটা ফোন আসল আননোন নাম্বার থেকে।
নাবিলঃ জ্বি কে বলছেন..??
ওপর পাশ থেকে নাবিল দোস্ত আমি খুব বিপদে পড়েছি তারাতাড়ি ২ নাম্বার টানেলের কাছে চলে আয়।
কথাগুলি শুনামাত্র নাবিল অস্থির হয়ে উঠল,
নাবিলঃ কি হয়েছে তোর এভাবে হাঁপাচ্ছিস কেন?
আকাশঃ দোস্ত তুই তারাতাড়ি আয়।
নাবিলঃ একদম ভয় পাস না আকাশ আমি জাস্ট ২ মিনিটে আসছি। আমি থাকতে তোর কিছু হবেনা।তুই ভয় পাস না।নাবিল তাড়াতাড়ি করে বেরিয়ে যেতে চাইল।
মেঘলা নাবিলের অস্থিরতা দেখে জিজ্ঞাস করল কোথায় যাচ্ছে কিন্তু নাবিল উত্তর দিল না কারন ফোনটা আকাশ করেছে আর আকাশ বিপদে পড়েছে শুনলে মেঘলা অস্থির হয়ে যাবে তাই নাবিল কিছু না বলে বেরিয়ে আসল
কিছুক্ষনের মধ্যেই নাবিল টানেল এর কাছে গেল চারদিকে কোন মানুষজন নেই টানেলের ভিতর এমনেতেই অন্ধকার থাকে আর রাত হওয়ায় কিছু দেখার উপায় নেই।
নাবিল পাগলের মত এদিক ওদিক আকাশ কে খুঁজছে।কিন্তু কোথাও কোন মানুষের চিহ্ন নেই।
নাবিল চিৎকার করে আকাশকে ডাকতে লাগল।
নাবিলঃ আকাশ কোথায় তুই… সাড়া দে কারও ক্ষমতা নেই আমার সামনে তোর গায়ে হাত দেওয়ার একবার সাড়া দে।
কিন্তু নিস্তব্ধতায় নাবিলের কথাগুলিই বারবার প্রতিধ্বনিত হতে লাগল।আকাশ বা অন্য কারো কথা শুনা যাচ্ছে না।
নাবিল ফোনের ফ্লেশ অন করে টানেলের ভিতরে ঢুকল কিছুদূর যাওয়ার পর নাবিল যা দেখল তাতে তার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেল। নাবিল কখনো কেঁদেছে এমন কোন রেকর্ড নেই।কিন্তু এখন
চোখ ২ টি নিজের অজান্তেই ভিজিয়ে ফেলেছে।
নাবিল ফোনের অস্পষ্ট আলোতে দেখতে পেল তার চেয়ে কয়েক হাত দূরে একটা ছেলে উপোড় হয়ে পরে আছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে মারা গেছে।
নাবিল জীবনে এত লাশ দেখেছে যে চেক না করেই বুঝতে পারে কোনটা লাশ।
নাবিল চিৎকার করে উঠল
না এটা হতে পারে না কিছুতেই হতে পারে না আমি মানি না আকাশের কিছু হতে পারে না। আকাশ উঠ আকাশ…. তোর কিছু হতে পারে না।