লাভার নাকি ভিলেন | সিজন – ২ | পর্ব – ১২

আকাশ কিছুতেই হিসেব মিলাতে পারছে না। আকাশ নাবিল কে ভাল করেই চিনে কোনো কারন ছাড়া এমন করবে না সে।

আকাশ চিন্তা করতে শুরু করল ফোনে কি এমন ছিল…??যার জন্য মেঘলা ফোনটা ভাংগল আর আমি একটা থাপ্পড় দিয়েছি বলে সোসাইড করার সিধান্ত নেওয়ার মত মাথা খারাপ তো মেঘলা নয়।

কিছুক্ষন চিন্তা করার পর আকাশের নিজের উপড়েই নিজের রাগ হল।সে উঠে গিয়ে নিজের হাতে দেয়ালে ততক্ষন আঘাত করল যতক্ষন না ব্যথা সহ্যের সীমা অতিক্রম করে। হাত থেকে অনবরত রক্ত পড়ছে কিন্তু আকাশের রাগ এখুনো কমে নি।

আকাশের মা এসে আকাশের হাতে বেন্ডেজ করে দিল।

আকাশের মাঃ কি হয়েছে এমন কেন করছিস? মেঘলা তোকে ছাড়া থাকতে পারবে নাকি বোকা দেখবি কালকেই ফিরে আসবে।

আকাশঃ আসবেনা মা আর ও আসতে চাইলেও নাবিল ওকে আসতে দিবে না।নাবিলের প্রচন্ড জেদ মা আমি হয়ত ভুল করেছি খুব বড় ভুল করেছি তা নাহলে নাবিল এত ক্ষেপতো না। বলে আকাশ উঠে বাইরে চলে গেল।

রাত ২ টার উপড়ে বাজে আকাশের গন্তব্যস্থল নাবিলের বাসা।
আকাশ সেখানে পৌছে গেলেও আজকে সাধারন দেয়ালকেও আকাশের কাছে পাহাড় সমান মনে হচ্ছে কারন আকাশের হাতে আঘাত লেগেছে।

অনেক কষ্টে গেইট পার হলেও মেঘলার রুম ২ তলায় তাই নিচে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আকাশ চোখের জল ফেলছে কিছুক্ষন পর সে রিস্ক নিয়ে এই হাত নিয়েই ধরে ধরে উঠার চেস্টা করতে লাগল। হাতে অসহ্য যন্ত্রনা হচ্ছে আবার রক্ত পড়তে শুরু করেছে বেন্ডেজ রক্তে ভিজে গিয়েছে,

তবে সব কিছু উপেক্ষা করে আকাশ প্রায় উঠে পড়েছে কিন্তু হটাৎ আকাশ বুঝতে পাড়ল সে পড়ে যাচ্ছে কারন হাত স্লিপ করেছে।আকাশ পড়ে যাচ্ছে ঠিক তখনি ২ টি হাত এগিয়ে এসে আকাশকে ধরল।
হাত ২ টি আকাশের খুব পরিচিত এর আগেও বহুবার,বিপদে এই ২ টি হাত তাকে রক্ষা করেছে তবে আজও সাহার্য্য করবে এটা আশা করে নি আকাশ।

নাবিল আকাশকে টানতে টানতে বলল তোকে দেখছি পাবনা পাঠানোর ব্যবস্থা আমাকেই করতে হবে।

আকাশ অবাক হল।কারন সে নাবিলকে এখানে আশা করেনি।

আকাশঃ নাবিল কি করে বুঝল আমি আসব আর এমন মুহুর্তে যখন পড়ে যাচ্ছি ঠিক তখনি বা কি করে এখানে আসল?

নাবিল আকাশকে টেনে তুলে নিজের ঘরে নিয়ে গেল।

নাবিলঃ ইস কি অবস্থা করেছিস হাতের তুই ও কি মেঘলার মত মাথামোটা হয়ে গেলি নাকি আকাশ?

আকাশ কিছু বলছে না।

নাবিল ফাস্ট বক্স এনে আকাশের হাতে বেন্ডেজ করতে লাগল।

বেশ কিছুক্ষন পর আকাশের মুখ কথা ফুটল।

আকাশঃ মেঘলা….

নাবিলঃ নিজের ঘরে শুয়ে শুয়ে কাঁদছে।

আকাশঃ বিশ্বাস কর আমি এমন কিছু করি নি যাতে ওর খারাল লাগবে… ও এত বাজে কথা বলল যে রাগে একটা থাপ্পড় মেরেছি আমি বুঝতে পাড়িনি এত জোরে লেগে যাবে।

নাবিলঃ যানি ইচ্ছা করে মারিস নি আর মেরেছিস বলে আমার কোন আপত্তিও নেই।

আকাশঃ তাহলে যে তুই ওকে নিয়ে আসলি।

নাবিলঃ ২ টা কারন ছিল তাই নিয়ে এসেছি।
প্রথম কারন আমি চাই তোরা ভাল থাক তাই নিয়ে আসলাম। দেখ আকাশ তুই কাজের জন্য মেঘলাকে সময় দিতে পারছিস না তাতে মেঘলা কষ্ট পাচ্ছে। আর পাওয়াটাই স্বাভাবিক ওর দিক থেকে ভেবে দেখ ও তো ছোট মানুষ।ওর ফ্রেন্ডরা ক্লাসমিট দের সাথে প্রেম করে ওরা রোমান্টিক সিন ক্রিয়েট করে মেঘলার সেসব দেখে মন খারাপ হয়।
মেঘলা তোকে এসমেস করে তুই রিপ্লে দিতে পারিস না এটা ওর জন্য কষ্টকর কারন ও তো জানে না তুই কি চাপে থাকিস ও কখনো এমন পরিবেশে যায় নি তাই বুঝে না।
মেঘলা সারাদিন তোর আশায় পথ চেয়ে বসে থাকে কিন্তু তুই আসিস না। সে তুই যত ব্যস্তই থাকিস ওর মন সেটা বুঝবে না। কারন ও মেয়ে। ছেলেদের দায়িত্ব,সমস্যা বুঝার ক্ষমতা ওর হয়নি।
তাই বাধ্য হয়েই আমি ভিলেন হয়ে গেলাম এখন থেকে তোরা আর অবাদে প্রেম করতে পারবি না। মেঘলা জানবে আমি চাই না তোরা প্রেম কর তাই তুই চাইলেও ওর সাথে বেশি মিশতে পারবি না।
মেঘলা মনে করবে তুই ঠিকি মিশতে চাইছিস কিন্তু আমার জন্য মিশতে পারছিস না।তাহলে,
তুই ও কাজ করতে পারবে মেঘলা ভাববে আমার ভয়ে তুই ওর সাথে কথা বলতে পারিস না তাই মন খারাপ করবে না সুযোগ খুজবে প্রেম করার
তুই যখন ফ্রি হবি ফোন দিবি,লুকিয়ে এসে একটু দেখা করবি দেখবি মেঘলা তাতেই খুশি হবে
সত্যি বলতে প্রেম লুকিয়ে করাই ভাল।যত কম মিশবি গন্ডগোল ততই কম হবে।

আকাশ নাবিলের কথা শুনে কেঁদেই ফেলেছে।

নাবিলঃ আরে তোর আবার কি হল থাম মেয়েদের মত কাঁদছিস কেন?

আকাশ কিছু বলছে না নাবিলকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই চলেছে।

নাবিলঃআরে বোকা যাই হয়ে যাক নাবিল আকাশের পাশে ছিল,আছে,আর ভবিষ্যতেও থাকবে।
আমি সেই কখন থেকে বারান্দায় তোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম যানিস? আমি জানতাম তুই আসবি।

আকাশঃ নাবিল….

নাবিল আকাশের চোখ মুছে বলল তবে ওকে নিয়ে আসার আরো একটা কারন ছিল আমার মনে হয় তুই কোন বড় ভুল করেছিস তা না হলে মেঘলা আত্মহত্যা করার চেস্টা কেন করবে?তাই নিয়ে এসেছি রাগের মাথায় যদি কোন ভুল করে ফেলে…

আকাশঃ কিন্তু কি করেছি আমি?

নাবিলঃ মেঘলা বলতে চেয়েছিল আমি শুনি নি এটা একান্তই তোদের ব্যক্তিগত ব্যাপার তোরা ২ জন বুঝে নিস।কারোর ব্যাক্তিগত ব্যাপারে আমি নাক গলাতে চাই না।
তুই দাঁড়া আমি ওর কান্না থামিয়ে আসি পড়ে ওর কাছে যাস।বলে নাবিলের মেঘলার ঘরে গেল আকাশ দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।

মেঘলা কাঁদতে কাঁদতে অবস্থা খারাপ করে ফেলেছে।

নাবিলঃ এত মরা কান্না কিসের..???

মেঘলা অবাক হল

নাবিলঃ শোনো তুমাকে ভালভাবে বলছি এই আকাশ বাতাস কে সারাজীবন এর জন্য ভুলে যাও আজ বলছো ও খারাপ কাল বলবা ও ভাল এসব আমি মানব না।আজ থেকে ওর সাথে তোমার সমস্থ যোগাযোগ বন্ধ এমনকি ওর জন্য চোখের জল ফেলাও নিষেধ। কান্না থামা না হলে মেরে পিঠের ছাল তুলে নিব আমার মার কোনদিন খাস নি তাই সেই দুঃসাহস দেখাস না।

মেঘলাঃ আমি ওর জন্য কাঁদছি না।
তুই বল ওর জন্য আমি কি করি নি তবুও আমায় ঠকালো কেন আমি কত বোকা সেটা ভেবেই কাঁদছি।

নাবিলঃ ইমোশনাল ডায়ালগ বন্ধ কর। আর একটু কাঁদলে খবর আছে তোর বলে নাবিল চলে গেল।

নাবিল বাইরে এসে বলল আকাশ যা…

আকাশঃ আমি কি আজ তোর বাসায় থাকতে পারি?

নাবিলঃ হুম পারিস তবে মেঘলা যেন কিছুতেই না বুঝে যে আমি জানি তুই এসেছিস।

আকাশ মাথা নেড়ে চলে গেল।

মেঘলা এখনো কাঁদছে।আকাশ মেঘলার ঘাড়ে হাত রাখল।

মেঘলাঃ আমি কাঁদছি না তুই যা ভাইয়া ঘুমা গিয়ে আমি ওর সাথে যোগাযোগ করব না চিন্তা করিস না।

আকাশঃ সত্যিই পারবি আমায় ছাড়া থাকতে?

মেঘলা চমকে উঠে বলল ওমা আপনি এখানে…
এখনি বাইরে যান।ভাইয়া জানতে পারলে আমাকে মেরে ফেলবে।

আকাশঃ ও জানবে কি করে তুই না বললে?

মেঘলা গিয়ে দৌড়ে দরজা লাগিয়ে দিল।

মেঘলাঃ আপনি এখানে কেন?আর কি চান আমার কাছে?

আকাশঃ আমাকে আপনি করে বলছিস?

মেঘলাঃ তো কি করে বলব?পর মানুষকে তুমি করে বলা যায় না বেইমান কে তো আরও না।

আকাশঃ তাই…???আমি বেইমান?

মেঘলাঃ হুম।

আকাশঃওহ আচ্ছা মেঘলা আমি যাই তাহলে… বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত

মেঘলাঃ এত তাড়া কেন? ও দুর্গাপুর যেতে হবে তাই না?

আকাশ অবাক হল।
আকাশঃ তুই এই অবস্থায়ও সেই এক কাহিনী নিয়ে পড়ে আছিস? আচ্ছা বল তো দুর্গাপুর নিয়ে তোর সমস্যা টা কি শুনি…

মেঘলাঃ আগে আমার মাথায় হাত রেখে বলুন আপনি যাবে না তাহলে বলব।

আকাশঃ আচ্ছা কথা দিলাম যাব না এবার বল।

মেঘলা নিজের ফোন বের করে ভয়েজ রেকর্ডার অন করে বলল এবার বলুন আপনি যাবেন না।আপনি আমার কথার বাইরে কিছু করবেন না।

আকাশ আপত্তি না করে বলল যাব না।আমি আমার বউ এর কথার বাইরে কিছুই করব না।

মেঘলা কাকে যেন ভয়েজ টা পাটাল।

আকাশ এবার বুঝল কেউ মেঘলাকে উস্কে দিয়েছে।

আকাশঃ কাকে ভয়েজ পাঠালি মেঘলা? কেউ কি তোকে কিছু বলেছে?আগেই বুঝেছিলাম এসব তোর কাজ হতে পারে না। কে কি বলেছে বল আমাকে।

মেঘলা করুন সুরে বলল আমাকে এভাবে ঠকালে কেন আকাশ?

আকাশঃ আমি তোকে ঠকিয়েছি?

মেঘলাঃ অস্বীকার করতে পারবে ইরা আপুর সাথে তোমার কোন রিলেশান নেই? অস্বীকার করতে পারো তুমি নিজে জামিনদার হয়ে আপুকে জেল থেকে ছাড়িয়ে আনো নি?

আকাশঃ মেঘলা এটা আমার দায়িত্ব ছিল।

মেঘলাঃ সত্যিই তাই? তাহলে আমাকে কেন বললে না সেটা…??

আকাশঃ এটা বলার মত কি আছে মেঘলা?ভাবি কে তো ছাড়াতে হতই হাজার হোক ও আমাদের বাড়ির বউ সাথে ইরাকেও ছাড়িয়ে এনেছি।

মেঘলাঃ আচ্ছা মেনে নিলাম এটা না হয় বলার মত কিছু না।কিন্তু ফেসবুক…??? তুমি কেন ইরা আপুর নামে ফেসবুক একাউন্ট চালাও ওর একাউন্ট কেন তোমার ফোনে লগ ইন করা থাকবে…??

আমি তো পাগল নই যে ফোনটা এমনি এমনি ভেংগে ফেলব। নিশ্চুই কারন ছিল তাই ভেংগেছিলাম।
কথা দিয়েছিলাম ভুল বোঝব না তাই এতদিন কিছুই বলি নি দিনের পর দিন মানুষিক চাপ সহ্য করেছি তাও মুখ ফোটে কিছু বলি নি।

কিন্তু আজ ইরা আপু যখন আমাকে চ্যালেঞ্জ করল তখন আর সহ্য করতে পারিনি।
আচ্ছা আজ যদি কোন ছেলে তোমাকে বলত মেঘলা অন্যছেলের সাথে সারাদিন ঘুরে বেড়ায় সেই ছেলের নামে ফেসবুক চালায় তার সাথে হাজারটা ছবি তুলে আপলোড দেয় আবার ছেলেটা যদি এসে তোমাকে চ্যালেঞ্জ করে বলত মেঘলার কাছে আকাশের নয় তার গুরত্ব বেশি।
যদি বাজি ধরে বলত তুমি মানা করলেও মেঘলা তার সাথে ঘুরতে যাবে তাহলে তুমি মেঘলার সাথে কি করতে আকাশ…???

আমি বাজিতে হেরে গিয়েছিলাম আর এমন একটা বাজি ছিল যাতে আমার জীবনটাই হেরে গিয়েছিল তুমার কাছে আমার নয় ইরা আপুর কথার গুরুত্ব বেশি তুমি আমার চেয়েও তাকে বেশি ভালবাসো আমি এটা কিভাবে মানব বলতে পারো? এমন কেন করলে আমার সাথে? কেন ঠকালে আকাশ আজ আমি সিনক্রিয়েট না করলে তো তুমি আপুর সাথে ঘুরতে যেতে তাই না?

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।