লাভার নাকি ভিলেন | সিজন – ২ | পর্ব – ১১

সেদিনি নাবিল আকাশ আর মেঘলার মিল করিয়ে দিলেও মেঘলার মন থেকে এই সন্দেহ দূর করা সম্ভব হয় নি।
মেঘলা আকাশ কে প্রায়েই এটা ওটা বলতেই থাকে। আকাশ মেঘলাকে সামলিয়ে নেওয়ার চেস্টা করে।আকাশ যতটা সম্ভব মেয়েদের থেকে দুরে থাকার চেস্টা করে।

হটাৎ করে আকাশের একটা কাজের জন্য শহরের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হল কিন্তু আকাশ মেঘলাকে সেটা বলার সাহস পাচ্ছে না কারন মেঘলা হয়ত সহজে এটা মানবে না।
মেঘলাকে কিভাবে বলবে এটা ভাবতে ভাবতে আকাশ বাসায় ফিরল।
আকাশ বাসায় এসে অবাক হল কারন প্রায় ১ টা বাজে কিন্তু মেঘলা এখুনো ঘুমায় নি।

আকাশ নিজের ঘরে না গিয়ে সোজা মেঘলার রুমে গেল।

আকাশঃ কিরে মেঘলা এত রাত হয়েছে ঘুমাস নি কেন…

মেঘলাঃ ইচ্ছা হয় নি তাই ঘুমাইনি কইফত দিতে হবে নাকি। উল্টো দিকে ঘুরেই মেঘলা উত্তর দিল।

আকাশঃ এভাবে কথা বলছিস কেন? কিছু হয়েছে?

মেঘলাঃ না তো কি হবে?

আকাশঃ কেউ কিছু বলেছে?

মেঘলাঃ না…ফোনটা দিবে একটু…??

আকাশঃ তোর ফোন কোথায়?আমারটা দিয়ে কি করবি?

মেঘলাঃ দিবেন না বল্লেই হয় পেঁচানোর দরকার কি?

আকাশঃ আমি পেঁচাচ্ছি নাকি তুই পেঁচাচ্ছিস? নে ফোন।

মেঘলা ফোন টা হাতে নিয়ে কি যেন দেখল তারপর নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে ফোনটাকে ছুড়ে ফেলে দিল।

আকাশ অবাক হয়ে গেল।
আকাশ ধমক দিয়ে বলল কি করলি এটা মেঘলা? সকালেই আমি দুর্গাপুরে যাব আর তুই এখন ফোন টা ভেংগে দিলি সকালে আমি ফোন কোথায় পাব?
কি হয়েছে সেটা তো বল…মা কিছু বলেছে?

মেঘলাঃ না কেউ কিছু বলে নি।

আকাশঃ তাহলে বাড়াবাড়ি কেন করছিস?

মেঘলাঃ আপনি কাল কোথাও যাচ্ছেন না।

আকাশঃ মাথা ঠিক আছে তোর?

মেঘলাঃ আমি বলেছি না যাওয়া যাবে না মানে যাওয়া যাবে না।

আকাশঃ পাগলের সাথে কথা বলে নেই

মেঘলাঃ তারমানে আপনি যাবেন?

আকাশঃ হ্যা অবশ্যই… আমি ঘুরতে যাচ্ছি না যে তুই মানা করলে যাব না আমি কাজে যাচ্ছি।

মেঘলাঃ আপনার কাজ মানেই তো মেয়েদের সাথে মাখামাখি এতদিন দিনের বেলা করছিলেন তাতে মন ভরে নি? এখন রাত কাটাতে যাচ্ছেন

মেঘলার কথাটা শুনে আকাশ রাগ কন্ট্রোল করতে পারল না মেঘলাকে একটা থাপ্পড় মারল।থাপ্পড় টা একটু বেশিই লাগল মেঘলার ঠোঁট কেটে গিয়েছে।

আকাশ তাড়াতাড়ি করে মেঘলাকে টেনে জড়িয়ে নিল তারপর আদর করতে করতে বলল আমি বুঝতে পারি না সরি জান। প্লিজ রাগ করিস না আমি সত্যিই একটা দরকারে যাচ্ছি তোর জন্য অনেক গিফট আনব মনা মন খারাপ করিস না প্লিজ আমি নিয়ে আসব।

মেঘলা আকাশের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আকাশ কে বাইরে পাঠিয়ে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল।

আকাশ এর আগেও মেঘলাকে মেরেছে কিন্তু কখনো এত রিয়েক্ট করে নি।আকাশ ভাবতেও পাড়েনি মেঘলা এত টা রাগ করবে।

আকাশ বাইরে থেকে দরজায় নক করছে কিন্তু মেঘলা দরজা খুলছে না আকাশের এবার ভয় লাগছে সে বাসার ল্যান লাইন থেকে নাবিল কে ফোন দিল।

আকাশঃ হ্যালো নাবিল

নাবিলঃ এত রাতে ফোন করলি…???

আকাশ কিছু বলার আগেই ফোন টা কেটে গেল লাইনে সমস্যার কারনে।

নাবিল আকাশের ফোনে কয়েকবার ফোন দিল কিন্তু ফোনটা তো মেঘলা ভেংগে ফেলেছে।
কিন্তু এত রাতে ফোন দেওয়ায় নাবিলের ও একটা শংকা কাজ করছে তাই নাবিল মেঘলাকে ফোন দিল।

নাবিলঃ মেঘলা আকাশ কোথায়?

মেঘলা কাঁদতে কাঁদতে উত্তর দিল বাসায়…

নাবিলঃ কি হয়েছে কাঁদছিস কেন আকাশ কি কিছু করেছে…

মেঘলাঃ থাপ্পড় মেরেছে।

নাবিলঃ কি…??? কেন মারল ওকে ফোন টা দে

মেঘলা ফোন রেখে দিল

নাবিল নিশ্চিত হল বড়সর গন্ডোগোল হয়েছে।তাই তারাতাড়ি করে বেরিয়ে পরল।

আকাশঃ মেঘলা আমার ভুল হয়ে গিয়েছে প্লিজ ক্ষমা করে দে দরজাটা খোল প্লিজ। আকাশের বাবা মারও ঘুম ভেংগে গেল। সবাই মিলে মেঘলাকে ডাকছে কিন্তু মেঘলার কোন রেস্পন্স নেই।

আকাশ দরজা ভাংগার সিধান্ত নিয়েছে এর মধ্যেই নাবিল আসল নাবিল ডাকার পরেও যখন মেঘলা দরজা খুলল তখন আকাশ আর নাবিল মিলে দরজা ভাংগল।

আর ভিতরে গিয়ে সবার পায়ের নিচের মাটি সরে গেল।

কারন মেঘলা সুসাইডের চেস্টা করছিল। ফ্যানের মধ্যে ওরনা ঝুলছে আর একটু দেড়ি হলেও মেঘলা গলায় দড়ি দিত ঠিক তার আগের মুহুর্তে আকাশ দরজা ভেংগেছে।

মেঘলাকে এই অবস্থায় দেখে আকাশের হাত পা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে রীতিমতো কাঁপছে আকাশ।

নাবিল চিৎকার করে বলল মেঘলা কি করছিস তুই?

মেঘলা নেমে এসে নাবিলকে জড়িয়ে ধরল।

নাবিল মেঘলার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল এত রাগ কেন করেছো?

মেঘলার কান্না বন্ধ হচ্ছে না।

নাবিলঃ আকাশ আন্টি আংকেল কে নিয়ে একটু বাইরে যা প্লিজ আমি মেঘলার সাথে একটু কথা বলতে চাই।

আকাশের কানে কথা ঢুকছে না সে মেঘলার দিকে তাকিয়ে আছে।আকাশের মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না আকাশের মা আকাশ কে নিয়ে বাইরে গেলেন।

বেশ কিছুক্ষন পর নাবিল মেঘলাকে নিয়ে বাইরে এলো।
তারপর যা ঘটল তার জন্য আকাশ একদমি প্রস্তুত ছিল না।আকাশের ধারনা নাবিল সব সামলে নিবে কিন্তু নাবিল আকাশ কে অবাক করে দিয়ে তার মা বাবার কাছে গিয়ে বলতে শুরু করল।

নাবিলঃ আংকেল আন্টি আপনাদের কাছে আমি ও আমার পরিবার কৃতজ্ঞ আপনারা এতদিন মেঘলাকে আশ্রয় দিয়েছেন তারজন্য আমরা সারাজীবন আপনাদের কাছে ঋনি থাকব।
তবে আজ আপনাদের এই ঝামেলা থেকে মুক্তি দিলাম আমি মেঘলাকে নিয়ে যাচ্ছি আংকেল। আর এটাও কথা দিচ্ছি ও আর কোনদিন এই বাসায় আসবে না।
বিয়েটা হচ্ছে না আন্টি আমি আজ বিয়েটা ভেংগে দিলাম।

নাবিলের কথায় আকাশের মাথায় আকাশ ভেংগে পড়ল।

আকাশঃ নাবিল কি বলছিস এসব?

নাবিলঃ ভাই হিসেবে যা বলা উচিত তাই বলছি,শুধু যে বিয়েটা ভেংগে দিচ্ছি তাই না আজকের তুই আকাশ ভুলে যাস নাবিল নামের কেউ তোর বন্ধু ছিল।আজকের পর আমিও আর তোকে চিনব না।

আকাশঃ নাবিল দোস্ত আমার কথাটা একটু শোন…

নাবিলঃ আর কি শুনব? তুই কোন সাহসে মেঘলার গায়ে হাত তুললি?

আকাশঃ আমি মানছি আমি ভুল করেছি আমি তোকে কথা দিচ্ছি আর কখনো এমন ভুল করব না। আমাকে একটা সুযোগ দে।

নাবিলঃ থাপ্পড় টা মারার আগে সেটা ভাবা উচিত ছিল ।নাবিল নিজের পকেট থেকে টাকা বের করে আকাশের সামনে ছুড়ে ফেলে বলল যদি কম হয়ে থাকে বলিস তোর ফোনের ক্ষতিপূরণ দিয়ে দিব।তারপর আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল চল মেঘলা….

মেঘলা গিয়ে আংকেল আন্টিকে সালাম করে আকাশের বাবাকে কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল।তারপর বলল আমি চলে যাচ্ছি আংকেল,তোমাকে খুব মিস করব।নিজের যত্ন নিও ওষধ গুলি সময় মত খেও।।আমার জন্য দোয়া করো আংকেল
এটাই হয়ত তোমার সাথে আমার শেষ দেখা। আমাদের হয়ত আর কখনো দেখা হবে না।

মেঘলার আচারন দেখে আকাশ নিশ্চিত হল যে মেঘলা সত্যিই চলে যাচ্ছে আকাশ মেঘলার হাত টেনে ধরে বলল মেঘলা কি বলছিস এসব? এর আগেও তো কতবার মেরেছি তুই তো এমন করিস নি কখনো…

মেঘলা হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বলল চল ভাইয়া…

আকাশ অসহায় দৃষ্টিতে নাবিলের দিকে তাকিয়ে বলল নাবিল দোস্ত…

নাবিলঃ মেঘলা না হয় কম বুঝে কিন্তু আমি তো তোকে বুঝি তাই বলছি আর কোনদিন মেঘলার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না বলে নাবিল মেঘলাকে নিয়ে চলে গেল।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।