হৃদ রোগ | পর্ব – ২০

নিস্তব্ধ পরিবেশ, চারিদিক থেকে পাখির “কিচিরমিচির” এর শব্দ শোনা যাচ্ছে। হিম শীতল ঠান্ডা বাতাস বইছে,,,,,,,, সুদেষ্ণা গায়ের চাদরটাকে আর একটু জরিয়ে নিয়ে তাকালো বেলকোনি থেকে রাস্তার দিকে , গাড়ি গুলো শো’ শো’ শব্দ করে তীব্র বেগে ছুটছে। সুদেষ্ণা এক ভাবে রাস্তার দিকে তাকিয়ে রইলো, ভুলেও পাশে দাঁড়ানো মানবটার দিকে তাকালো না । সুদেষ্ণা এমন একটা ভান করলো যেনো সেখানে সে একাই উপস্থিত আছে । মানবটিও চুপচাপ দেখলো সুদেষ্ণাকে তারপর মনোযোগ পাওয়ার জন্য একটু কাশলো,,,,,,,, তাও সুদেষ্ণা ফিরেও তাকালো না । এবার মনে হয়ে মানবটির ধৈর্য্যৈর বাঁধ ভাঙ্গলো, সে সুদেষ্ণাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে দুই বাহুদ্বয়ের মধ্যে আবদ্ধ করলো। এবার সুদেষ্ণার নজর ভিত হলো , সে একবার তাকালো তার দু পাশে রাখা হাতের দিকে আর একবার তাকালো সামনে দাঁড়ানো মানুষটির দিকে ।
মানবটি আর একটু ঝুকলো সুদেষ্ণার দিকে, চোখে চোখ রেখে বেশ ভারি গলায় বললো,,,,,,,,,,, তোমার সমস্যাটা কী ?? সেই কখন থেকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছো ? আমাকে ইগনোর করছো??,,,,,,,, হিমাদ্র রায় চৌধুরী কে ??
সুদেষ্ণার চোখ ছলছল করে উঠলো , ঠোঁট চেপে কান্না আটকানোর বৃথা চেষ্টা করলো সুদেষ্ণা,,,,,,, অশ্রু গুলো মুক্তর মতো গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়লো । সুদেষ্ণা হিমাদ্রর বাহুদ্বয় থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য ধাক্কা দিলো হিমাদ্রকে , তবু একচুল নড়েনি হিমাদ্র তাই সুদেষ্ণা হাল ছেড়ে দিলো । সুদেষ্ণা ফোঁপাতে লাগলো , হিমাদ্রর কলার ধরে টান দিলো ফলে দুজনের ঠোঁট ছুঁই ছুঁই অবস্থা । সুদেষ্ণা কাঁদতে কাঁদতে বললো,,,,,,,,,, আপনি আমাকে কী ভাবেন বলুন তো ??? আমাকে আপনার যন্ত্র মনে হয় ?? আমার কোনো অনুভূতি নেই?? আমার কষ্ট হয় না ??,,,,,,,,, সুদেষ্ণা একটু থেমে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে , হিমাদ্র এর মধ্যে কিছু বলে নি সে একভাবে অভিমানী অষ্টাদশীর দিকে তাকিয়ে আছে। সুদেষ্ণা আবার বলা শুরু করলো,,,,,,,,, আপনার আমাকে কষ্ট দিতে খুব ভালো লাগে তাই না ?? যখনই আপনার থেকে দূরে যাওয়ার চেষ্টা করি তখনই আপনি কিছু না কিছু করেন,,,,,,,, আপনি চাইছেন টা কী ? না দূরে যেতে দিচ্ছেন না কাছে রাখছেন , আমার আর……. সুদেষ্ণা আর বলতে পারলো না , ততক্ষণে হিমাদ্র তার অধর জোড়া দখল করে নিয়েছে। সুদেষ্ণা অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো হিমাদ্রর দিকে , একইভাবে হিমাদ্র ও তাকিয়ে রইলো সুদেষ্ণার দিকে। সুদেষ্ণা বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলো না , চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলো।
সুতৃষ্ণার ডাকে সুদেষ্ণা ছিটকে দূরে সরে গেলো, সুতৃষ্ণা বললো বাইরে সবাই তাদের জন্য অপেক্ষা করছে…. বলেই চলে গেলো। সুদেষ্ণা আর তাকালো না হিমাদ্রর দিকে । হিমাদ্র সুদেষ্ণার অবস্থা দেখে ঠোঁট বেঁকিয়ে হাঁসলো , যা সুদেষ্ণা হয়তো দেখলো না । হিমাদ্র সুদেষ্ণার কাছে এগিয়ে কানের কাছে আসতে করে বললো ,,,,,, মুখ মিষ্টি করানোর জন্য ধন্যবাদ , বলেই নিজের ঠোঁট মুছলো । সুদেষ্ণা হিমাদ্রর কথা শুনে চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিলো।
কালকে তবে দেখা হচ্ছে ,,,,,,,, এই বলে হিমাদ্র দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো । আর সুদেষ্ণা তাকিয়ে রইলো তার যাওয়ার দিকে।
সুদেষ্ণাকে যে ছেলেপহ্ম দেখতে আসার কথা ছিলো তারা আর কেউ না হিমাদ্র আর তার বাড়ির লোক । পিকনিকের দিন যে আন্টিকে সুদেষ্ণা অনিকের আত্মীয় ভেবে ছিলো তিনি আসলে হিমাদ্রর মা । পিকনিকের দিন ওই আন্টির নাকি সুদেষ্ণাকে খুব পছন্দ হয়েছিলো তো তিনি সেই দিনই সুদেষ্ণার মা কে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সুদেষ্ণার মা এর ও হিমাদ্রকে পছন্দ হয়েছিলো বলে তাদের বাড়িতে আসার কথা জানিয়েছিলেন। প্রথমে সুদেষ্ণা নিজের বিয়ের কথা শুনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো যে সে এখন বিয়ে করবে না । তারপর সুদেষ্ণার মা-বাবা, দিয়াই , রাহুল দা অনেক বোঝানোর পর সুদেষ্ণা বুকে পাথর রেখে রাজি হয়েছিলো । শুধু সুদেষ্ণাই জানে তার ওপর দিয়ে কোন ঝড় গেছে, সে তো নিজেকে হিমাদ্র ছাড়া ভাবতেই পারে না । সুদেষ্ণা একটুর জন্য ভেবে ছিলো, সে হারিয়ে ফেলেছে হিমাদ্রকে । কিন্তু ছেলের জায়গায় যখন হিমাদ্রকে দেখলো ,,,,,,, প্রথমে খুশি হলেও পরে ঠিকি অভিমান হয়েছিলো ।
ফোনের ভাইব্রেশন এর আওয়াজে সুদেষ্ণা ভাবনা থেকে বেরোলো । কেউ হয়তো ফোন করেছে ,,,,,, সুদেষ্ণা বেলকোনি থেকে ঘরে গিয়ে ফোন হাতে নিলো , ততক্ষণে ফোন কেটে গেছে । আবার রিং হলো ,আননোন কোনো নাম্বার থেকে ফোন এসেছে । সুদেষ্ণা ফোন রিসিভ করে কানে দিলো , ওই দিক থেকে ভেসে আসছে হিমাদ্রর গম্ভীর কন্ঠ,,,,,,,,,,,,।
চলবে,,,,,

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।