হৃদ রোগ | পর্ব – ১৭

সোনালী রোদ্দুর জানলার ফাঁক দিয়ে এসে সুদেষ্ণার চোখে, মুখে পড়ছে,,,,, বিরক্তিতে মুখ কুঁচকে গেলো সুদেষ্ণার। চোখ পিট পিট করে তাকালো জানলার দিকে, জানলা খোলা আছে। অথচ স্পষ্ট মনে আছে রাতে জানলা বন্ধ করে ঘুমিয়েছিলো সুদেষ্ণা। এটা নিশ্চয়ই তার মা জননীর কাজ। সুদেষ্ণা বড্ড ঘুম কাতুরে , সে একবার ঘুমালে বাড়িতে ডাকাত এলেও তাকে উঠানো যাবে না। আগে তার মা জননী গ্ৰীষ্মকালে পাখা বন্ধ করে দিতেন ঘুম থেকে তোলার জন্য আর শীতকালে কম্বল কেড়ে নিতেন , এখন অবশ্য ওগুলো করেন না । সুদেষ্ণা ঘড়ির দিকে তাকালো,,,,,, ৯ টা’ বেজে ৩০ মিনিট। উঠে বিছানা গুছিয়ে বাথরুমের দিকে হাঁটা দিলো।
এখন ডিসেম্বর মাস সবে শুরু হলো আর ডিসেম্বর মাস মানেই পিকনিক।সুদেষ্ণাদের দলবল সবাই মিলে আজকে পিকনিকের আয়োজন করেছে । তবে সবার বাড়ির লোকেরাও উপস্থিত থাকবে , এটাকে তাহলে ফ্যামিলি পিকনিক বলাই চলে । দিল্লি রোডের ওই দিকের একটা পার্ক বুকিং করা হয়েছে, পার্কটা বেশি দূরে নয় গাড়ি করে গেলে এক-দেড় ঘন্টা মতো লাগবে যেতে ।
সুদেষ্ণাদের কলেজ এখন বন্ধ , কয়েক দিন পরেই আবার শুরু হবে । এখন আর সুদেষ্ণা কাঁদে না, এখন আর তার কথা ভাবতে চায় না। ভাবতে চায় না বললেই কী সে ভাবনায় আসা বন্ধ করেছে???,,,,,,,, না করিনি । সুদেষ্ণা এখন ভালো থাকতে চায় , হাঁসি-খুশি থাকতে চায় । থাক না মানুষটা নিজের মতো করে । সুদেষ্ণার বাবা সব সময় বলেন “যে জিনিসটা তুমি মন থেকে চাইছো আর সেটা তুমি পাওনি তাহলে ওই জিনিসটা তোমার ভাগ্যে নেই”। সুদেষ্ণাও মেনে নিয়েছে মানুষটা তার চাওয়ার বাইরে। সুদেষ্ণার হিমাদ্রর প্রতি রাগ , অভিযোগ, অভিমান কিছুই নেই । সুদেষ্ণা শুধু চায় মানুষটার সাথে তার যেনো আর দেখা না হোক, নাহলে নিজেকে সামলানো যে বড়ো মুশকিল হয়ে যাবে ।
—————————————
বাস চলছে নিজের গতিতে, সেই কখন বাস ছেড়েছে। এখন ঘড়িতে ১১ টা’ বাজে, গন্তব্যে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সারে বারোটা বা একটা বেজেই যাবে । মোট তিনটে বাস ভাড়া করা হয়েছে যেহেতু মানুষজন অনেক বেশি। আকাশ আর মোহিত বাদে সবারই বাড়ির মানুষেরা উপস্থিত। একটা বাসে শুধু ছোটোরা আছে আর বাকি দুটো বাসে বড়োরা । সুদেষ্ণাদের বাসে তো জমিয়ে নাচ-গান চলছে । হিন্দি,বাংলা, ভোজপুরি সব ধরনের গান চলছে । আর বড়োদের বাসে সবাই জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে , পরিচয় পর্ব অনেক আগেই শেষ হয়েছে । সবাই তো শুধু সবার কথা শুনেছিলো এই প্রথম তাদের দেখা হয়েছে আবার অনেকেই আছে যারা আগে থেকেই একে অপরকে চেনে । এই যেমন সুদেষ্ণা, অনু আর স্নেহার বাড়ির লোকজন সবাই একে অপরকে জানে আর তাদের মধ্যে ভালো সম্পর্কও আছে । মায়েদের আড্ডার বিষয় কিন্তু বেশিরভাগ তাদের ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ,,,,,,,,,,কে বলছে ‘আমার ছেলে এই করে’ তো কে বলছে ‘আমার মেয়ে ওই করে’,,,,,, । আর বাবাদের আড্ডার বিষয় ,কারোর ব্যাবসা তো কারোর চাকরি আবার পাটি-পলিটিক্স তো আছেই। কিন্তু যে যাই করুক সবাই বেশ আনন্দেই আছে । আসলে বছরে এরকম একটা পিকনিক হলে মন্দ হয় না ।
অবশেষে সবাই নিজের গন্তব্যে পৌঁছাতে পেরেছে । সুদেষ্ণারাতো বাস থামা মাএই দৌড় দিয়েছে পার্কের দিকে । আর মায়েরা সবাই চেয়ারে বসে তাদের বাচ্চাদের আনন্দ দেখছে , বাবারা গেছে রান্নাবান্না দেখতে। বাচ্চাদের দৌড়-ঝাঁপ করে খিদে পেয়ে যাবে , তাদের তো ঠিক সময়ে খেতে দিতে হবে । অবশ্য এই নিয়ে চিন্তা নেই কারোর কেনোনা রান্নার লোক আগে থেকেই ঠিক করে রাখা হয়েছিলো এখনতো রান্না অর্ধেক হয়ে গেছে। তবে কারোর খিদে পাওয়ার কথা নয় , সবাই বাড়ি থেকে খেয়েই এসেছে। তাও বলাতো যায় না কখন কার খিদে পেয়ে যাবে তাই শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মেয়েরা তো সবাই একটা করে দোলনা দখল করে নিয়েছে আর ছোটো বাচ্চারা ব্যাটমিন্টন খেলতে ব্যস্ত, অনেকে আবার ধরাধরি খেলছে । ছেলেরা সবাই ক্রিকেট খেলছে । পুরো পার্কটা মানুষে ভর্তি হয়ে গেছে, সবাই বেশ আনন্দ করছে। তবে সুদেষ্ণার আনন্দটা বেশিক্ষণ স্থায়ী রইলো না,,,,,,,,,
চলবে,,,,

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।