ফ্লোরেনসিয়া – ৩৫

গাছ থেকে পড়ে গিয়ে মার্কস বীভৎস চিৎকার দিয়ে উঠে।ওর চিৎকার যেন চারপাশে প্রতিধ্বনিত হয়। গাছের ডালে বসে থাকা পাখিগুলো ডানা ঝাপ্টে অদুরে উড়ে যায়। চোখ মুখ কুঁচকে ফেলেন ক্রিসক্রিংগল। তার অবচেতন মন বলেছিলো, ছেলেটা কিছু একটা অঘটন ঘটাবেই। ওর কোমরটা ভেঙ্গে গেলো কিনা কে জানে।

তিনজন হৃষ্টপুষ্ট দেহের বলশালী লোক। আদি-অন্ত কালো পোশাক পরনে ছিলো। মুখগুলো ছিলো কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা। ওদের শুধু চোখগুলো দেখা যাচ্ছিলো। দু’জনের হাতে ভারী তলোয়ার। একজনের হাতে ক্রসবো আর পিঠের পেছনে ঝুলানো ধারকে কতগুলো অ্যারো। এদিকে মশালের আলো জ্বলতে দেখেই ওরা এগিয়ে এসেছিলো। ক্রিসক্রিংগল নিজেদের মশাল দু’টো দুরে ছুঁড়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু তখনো ওগুলোর মধ্যে আগুন জ্বলছিলো। মাটিতে পড়ে থাকা মশাল দেখে লোকগুলো চারপাশে খুঁজতে শুরু করে। অতঃপর গাছের নিচে এসে দাড়ায়। ঠিক তখনই গাছ থেকে দুম করে পড়ে যায় মার্কস।

মার্কস চিৎকার দিয়ে পড়ে যেতেই সবাই সতর্ক হয়ে সরে দাড়ায়। ছেলেটাকে তিনদিক থেকে ঘিরে ধরে। লোকগুলো হয়তো প্রথমে একটু বিস্মিত হয়। কিন্তু যখন সম্বিত ফিরে পায়, ক্রসবো হাতে থাকা লোকটা কোনো শব্দ না করে পিঠের পেছন থেকে একটা তীর হাতে নেয়। ভীত-সন্ত্রস্ত দৃষ্টিতে তাকায় মার্কস। পড়ে গিয়ে পাওয়া সমস্ত ব্যথা যন্ত্রণার কথা ভুলে যায়। গগন কাঁপানো চিৎকার দিয়ে বলে,,,,

-জনাব, আমাকে বাঁচান।

ওর চিৎকার শুনে লোক তিনটে আরও সতর্ক হয়ে যায়। দু’জন উপরের দিকে তাকায়। অকস্মাৎ গাছ থেকে লাফিয়ে পড়েন ক্রিসক্রিংগল। ক্রসবো ধরে রাখা লোকটাকে একটা মারাত্মক আক্রমন করে বসেন। লোকটার কাঁধের উপর নিজের কনুই দ্বারা শক্তপোক্ত আঘাত করে নিচে নেমে দাড়ান। লোকটা মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ে। মারাত্মকভাবে আহত হয়। তার হাত থেকে ক্রসবো পড়ে যায়। বাকি দু’জন অদ্ভুত এক ধরনের শব্দ করে উঠে। ওদের করা শব্দ শুনে সামনের দিক থেকে একের পর এক তীর ছুটে আসে। ক্রিসক্রিংগল দিশেহারা হয়ে পড়েন। একা হলে তিনি নির্ভয়ে যুদ্ধ করতেন। কিন্তু সাথে মার্কস ছিলো।

-ওর জীবন এই মুহূর্তে ঝুঁকিপূর্ন।__ক্রিসক্রিংগল মনে মনে ভাবেন।

ওদিকে আরও কতগুলো মশাল দেখা যায়। অর্থাৎ আরও কতগুলো লোক ছুটে আসছে। সাথে অনবরত তীর ছুঁড়ছে। উপায়ন্তর না থাকায় ক্রিসক্রিংগল মাটিতে পড়ে থাকা ক্রসবোটা হাতে তুলে নেন। দ্রুত গতিতে লোড করে তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোক দু’টোর দিকে ট্রিগার টেনে তীর ছুঁড়ে দেন। পরপর দু’বার। তীরের আঘাতে লোক দু’টো আহত হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। মার্কস বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে নিষ্পলক তাকিয়ে থেকে, দ্রুত উঠে দাড়ায়।

ক্রিসক্রিংগল সময় নষ্ট করেন না। উল্টো দিকে দৌড়াতে শুরু করেন। উচ্চস্বরে চিৎকার দিয়ে বলেন,,,,,

– বাঁচতে চাইলে দৌঁড়াও।

কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে ছুটে আসা মশালগুলোর দিকে তাকিয়ে ছিলো মার্কস। ক্রিসক্রিংগলের কথা শুনে সে দৌড়ায়। হাতে মশাল নেই। দু’জনেই দিকবিদিক জ্ঞানশুন্য। গহীন জঙ্গলে গাঢ় অন্ধকারে দু’জন মানুষ জীবন বাঁচাতে প্রাণপণে ছুটতে আরম্ভ করে।

_____

ইম্যুভিল।

কামরার একপাশে পাথরের তৈরী ফায়ারপ্লেসে গনগনে আগুন জ্বলছে। দু’পা নামিয়ে বিছানার একপাশে বসে আছে ইনায়া। পরনে উলের তৈরী সুয়েটার আর ঢিলেঢালা ট্রাউজার্স। বাইরে তুষারের বৃষ্টি। কামরায় টিকে থাকাও যেন মুশকিল হয়ে গেছে। দরজা জানালা সব বন্ধ করে পর্দা টানিয়ে দিয়েছে সিয়া।

কামরাটা বেশ বড়।একদিকে খাট,টেবিল,সোফা আর আলমারি।অন্যদিকটা সম্পূর্ণ খালি।জায়গাটুকু ইচ্ছে করে খালি রেখেছে সিয়া।মাঝে মাঝে ইনায়ার সাথে কামরাতেই অনুশীলন করার জন্য।

হঠাৎ দরজা ঠেলে কামরায় প্রবেশ করে সিয়া। মোজাবিহীন ইনায়ার ধবধবে ফর্সা পা দু’টোর দিকে তাকায়। এই তীব্র ঠান্ডায় ওগুলো এতক্ষণে অসাড় হয়ে গেছে হয়তো। সিয়া দরজা লাগিয়ে দেয়। ঘুমে বুদ হয়ে আছে আর্নি। জ্বর সেরে গেছে ওর। কিন্তু ভয় পেয়ে কেমন নিশ্চুপ হয়ে গেছে মেয়েটা। প্রয়োজন ব্যতীত কথা বলে না। ওকে নিয়ে সিয়া,ইনায়ার দুশ্চিন্তা হয়। দুশ্চিন্তা হয় নিজেদের বাবার জন্যও।

গোটা তিনদিন-তিনরাত পেরিয়ে গেছে ক্রিসক্রিংগল বাড়িতে নেই। আরো একটা নতুন দিনের সূচনা হয়। সিয়া,ইনায়া ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। গত তিনদিন তুলনামূলক কম দুশ্চিন্তা হলেও আজ একটু বেশিই মনে পড়ছে নিজেদের বাবাকে। বাবা ছাড়া এই নির্দয় পৃথিবীতে ওদের আর কে-ই বা আছে। যত সময় গড়ায় ইনায়া অস্থির হয়ে উঠে। সিয়া শান্ত থাকার চেষ্টা করে। ইতোমধ্যে ফ্রাঙ্কলিনকে অনেকবার জিজ্ঞেস করেছিলো ওদের বাবা কোথায়। কিন্তু ফ্রাঙ্কলিন? বরাবরের মতো নিরুত্তর। এখন আর কোনো কিছুতেই মন বসে না ইনায়ার। ডুকরে কান্না পায়। ভীষণ অসহায় বোধ করে। এতোটা অসহায় মা-দাদিনের মৃ’ত্যুতেও অনুভব করেনি ও। তখন বটবৃক্ষের মতো ছায়া হয়ে বাবা ছিলো। আগলে রেখেছিলো। ভরসা যুগিয়েছিলো। ওদের বাবা ওদের সাহস, সংগ্রাম করে বেঁচে থাকার প্রেরণা। তিনি বলতেন, যত কঠিন পরিস্থিতিই আসুক হাল ছেড়ো না। দেহের শেষ রক্তবিন্দু অবশিষ্ট থাকা পর্যন্ত জীবন যুদ্ধ চালিয়ে যাও।

ইনায়ার ভাবে। নিজের অজ্ঞাতেই ওর চোখ থেকে দু’ফোঁটা অশ্রুকণা গড়িয়ে পড়ে। সিয়া নিঃশব্দে ওর পাশে গিয়ে বসে। বিছানার উপর দু’পাশে দু’হাত রেখে শান্ত গলায় বলে,,,,

– আমি জানি তুমি কি ভাবছো।

ইনায়া, সিয়ার মুখের দিকে অতিশয় দুর্বল দৃষ্টিতে তাকায়। ওর গাঢ় ধূসর চোখজোড়া কেমন নিষ্প্রাণ পাথরের মতো দেখায়। সিয়া ভারি গলায় অনুচ্চস্বরে বলে,,,

– ভাবছো, বাবা থাকলে বিনা অপরাধে আমাকে এভাবে অপমানিত হতে হতো না। কিন্তু এ ব্যাপারে তিনি কি বলতেন জানো?

ইনায়ার চোখে বিস্ময়। ও কৌতুহলী দৃষ্টিতে নিষ্পলক তাকিয়ে রয়। সিয়া ওর একহাত আঁকড়ে ধরে কাঁধের উপর মাথা রেখে বলে,,,,

-বাবা বলতেন,সিয়া ইনায়া তোমরা নিজেরাই নিজেদের ঢাল হয়ে দাড়াও। এই সামান্য বিষয়গুলোতে কখনো আমার সাহায্য পাবে না। বাবার উপর নির্ভরশীল না হয়ে, শুধুমাত্র নিজেদের উপর নির্ভরশীল হও, আস্থা রাখো। টিকে থাকার লড়াইয়ে নিজেদের জন্য শক্তপোক্ত মজবুত এবং সুদৃঢ় ভিত গড়ে তুলো।

ইনায়া পরপর দু’বার নেত্রপল্লব নাড়ায়। সিয়া পুনরায় বলতে শুরু করে,,,

-আমরা এখন কাস্ত্রোরুজ থর্পে নেই। একটা নতুন জায়গায় নতুন পরিবারে আশ্রিত। আমাদের সাথে বাবা নেই, কিন্তু তার দেওয়া প্রশিক্ষণ আছে, আছে মনোবল। যেখানে আমাদের চারদিকে মৃ’ত্যুর ফাঁদ, সেখানে গতকাল ঘটে যাওয়া সামান্য একটা বিষয় নিয়ে তুমি এখনো মন খারাপ করে আছো?

ইনায়া, ওটা কোনো শাস্তি ছিলো না। বরং ঐ অ’সভ্য জা’নো’য়ার টা নিজের অজ্ঞাতেই আমাকে সাহায্য করেছিলো। মাস্টার জোডিথের শাস্তি মেনে ক্লাসের বাইরে চলে গেলে, রণকৌশল গুলো আয়ত্ত করা হতো না।

– তাই বলে এতক্ষণ সময় ধরে? তোমার কষ্ট হচ্ছিলো। ___ইনায়া কাতর কন্ঠে বলে।

-আচ্ছা বাদ দাও। চলো দু’জনে অনুশীলন করি। একাডেমির ক্লাসে গতকালকের শেখানো রণকৌশলগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা যাক। শুধুমাত্র চোখের দেখায় কতটুকু শিখতে পেরেছি বুঝতে পারবো।

ইনায়া ম্লান হাসে। সিয়া ওর হাত টেনে ধরে দাড় করায়। মেজেতে পা রাখতেই ঠান্ডায় গা শিউরে উঠে। সিয়া বুঝতে পারে।

-তুমি জুতো-মোজা পরে নাও। আমি কিচকে বাদাম খেতে দিই।

ইয়ানা সম্মতিসূচক মাথা নাড়ায়।সিয়া পাশের কামরায় চলে যায়।

_______

খারকিভ,ওয়াভেল কোট।

সকাল থেকে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে। টাওয়ারের রুফটবে দাড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজছিলো আব্রাহাম। পরনে পাতলা কাপড়ের ছাইরঙা শার্ট আর কালো রঙের ট্রাউজার। ইন বিহীন শার্টের উপরের বোতাম দু’টো খোলা থাকায় তার শ্বেতশুভ্র প্রশস্ত বুকের খানিকটা দেখা যাচ্ছিলো । পায়ে পরেছিলো সাদা রঙের জুতো।

চারদিকটা কেমন শূন্য খাঁখাঁ করছিলো।কোথাও কোনো পশু পাখির ডাক পর্যন্ত শোনা যাচ্ছিলো না। আশেপাশে যতদুর চোখ যায়,মনে হয় জায়গাটা কোনো সমাধি। ছেলেটার তীব্র মন বিষন্ন। তার কাছে সবকিছুই কেমন অসহ্য লাগতে শুরু করে। নিঃশ্বাসের সাথে গ্রহন করা অক্সিজেনও ভয়াবহ বিষাক্ত। সে ছাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে অদুরে থাকা একটি গ্রামের দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে থাকে।

দুর্গের চারদিক পাহাড়-পর্বত আর বন-জঙ্গলে ঘেরা। এই অঞ্চলের নির্দিষ্ট কোনো নাম নেই। কেবল মাত্র খারকিভের অধীনস্থ এবং ইম্যুভিল থেকে উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। অসংখ্য পাহাড়-পর্বত আর ভয়ংকর-বিপদজনক সব পাহাড়ি জঙ্গল পেরিয়ে হঠাৎই দেখা মিলে সুউচ্চ,সুদীর্ঘ পাঁচ টাওয়ার বিশিষ্ট ওয়াভেল কোট। যার যেকোনো একটা টাওয়ারের ছাদে দাঁড়ালে অদুরে একসাথে ছোট ছোট কয়েকটা গ্রাম দেখা যায়। ওখানের একটা গ্রামের নাম,ভেনাস। অপ্রত্যাশিতভাবে ভেনাস এবং আশে পাশের গ্রামগুলোতে থাকা গির্জায় কোনো যাজক টিকে থাকতে পারে না।

উত্তর-পশ্চিমের এই অঞ্চল বিপদজনক মনে করায় অন্যান্য অঞ্চলের মানুষগুলো এদিকে যাতায়াত করে না। কিন্তু হঠাৎ করেই একদিন ভেনাসের আকাশে সূর্যের মতো উদয় হয়েছিলেন হ্যালেনজিল। ভেনাসের গির্জায় ধর্মযাজকের দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তার বাড়ি ছিলো ইম্যূভিল। সপ্তাহে একদিন তিনি বাড়িতে ফিরে যেতেন তার একমাত্র মেয়ে লারার সাথে দেখা করতে।

হেলেনজিল দায়িত্ব নেওয়ায় পুনরায় ভেনাসের গির্জায় ঘন্টাধ্বনি শোনা যায়। ক্রোধিত হয় এদুয়ার্দো স্যাভেরিন। নিজের বিশ্বস্ত সহচর ভাম্পায়ার অ্যাভোগ্রেডোকে দিয়ে যাজককে ভয় দেখায়। কিন্তু হেলেনজিল ছিলেন নির্ভীক। মৃ’ত্যু ভয় ছিলো না তার। অথচ এদুয়ার্দো তাকে মা’রতে চায়নি। ভয় দেখাতে চেয়েছিলো। অবশেষে আব্রাহামকে দিয়ে নিজের কার্য সম্পন্ন করেছিলো।

এদুয়ার্দোর নির্দেশে আব্রাহাম কাস্ত্রোরুজ থর্পে গিয়েছিলো।মুখোমুখি হয়েছিলো ইনায়ার। এদুয়ার্দোর আদেশ পালন করতেই সে ইম্যুভিলে গিয়েছিলো, পুনরায় দেখা পেয়েছিলো ইনায়ার। একাডেমিতেও ইনায়া ছিলো। প্রতিবার মেয়েটার সাথে দেখা হওয়ার পেছনে সম্পূর্ণ এদুয়ার্দো দায়ী ছিলো। সবশেষে অপরাধ না করেও ইনায়ার চোখে অপরাধী হওয়ার কারনটাও এদুয়ার্দো।

প্যান্টের দু’পকেটে দু’হাত গুজে দিয়ে বুক ফুলিয়ে দাড়িয়ে থাকে আব্রাহাম।বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া লাল টুকটুকে ঠোঁটজোড়া নাড়িয়ে অনুচ্চস্বরে বলে,,,,

-অনিচ্ছাকৃতভাবে দেখা হওয়া মেয়েটাকে এখন প্রতিনিয়ত দেখতে ইচ্ছে করে। এ যেন কোনো অসামান্য যন্ত্রণাদায়ক দুরারোগ্য ব্যধি। যা ক্রমে ক্রমে বাড়ছে, নিরাময় হওয়ার কোনো লক্ষ্মণ নেই।

-না,এটা হৃদয়ের অসুখ। তোমার হৃদপিণ্ড অসুস্থ হয়ে গেছে। ধীরে ধীরে পঁচে যাচ্ছে। বাঁচতে চাইলে আমার কথা শোনো। স্লোভাকিয়ায় ফিরে যাও।____ভেতর থেকে আব্রাহামের দুষ্ট আত্মা বলে।

– আমি কোথাও যাবো না। এমনকি দুভিল কোটেও না। যতদিন পর্যন্ত ইনায়ার কাছে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ না করতে পারি, ততদিন পর্যন্ত এখানেই থাকবো। আমি ওর দু’চোখে নিজের জন্য এতো বেশি ঘৃণা সহ্য করতে পারছি না।

-তোমার মস্তিষ্কও নিষ্ক্রিয় হয়ে যাচ্ছে। এবার তুমি ম’রবে। নিশ্চিত ম’রবে। আমার কথা মিলিয়ে নিও,ঐ মেয়েটাই একদিন তোমাকে ধ্বং’স করবে।

আব্রাহামের দুষ্ট আত্মা রেগে গিয়ে বলে। প্রত্যুত্তরে আব্রাহামও কিছু বলতে চায়। কিন্তু হঠাৎই নিজের পেছনে কারো উপস্থিতি টের পায়। ত্বরিত পেছন দিকে ঘুরে দাড়ায়। হৃদপিণ্ডের কাছে একহাত মুষ্টিবদ্ধ রেখে মাথা ঝুঁকিয়ে সম্মান জানায়। ম্লান কন্ঠে ডাকে,,,

-অনারেবল ওভারলর্ড।

-হুম।

-কোনো আদেশ?___আব্রাহাম অকপটে জানতে চায়।

-মা চিঠি পাঠিয়েছেন। কিয়েভে যেতে হবে। তুমি কি আমার সাথে যাবে?____গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করে এদুয়ার্দো।

-মা কি আমাকেও যেতে বলেছেন?___আব্রাহামের বিস্মিত কন্ঠস্বর। সে সবচেয়ে বেশি হতবাক হয় এদুয়ার্দোকে নিজ থেকে এসে কথা বলতে দেখে। ছোটবেলার স্মৃতি মনে পড়ে যায়। বুক চিরে যন্ত্রণাদায়ক দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে।

-তিনি জানেন না তুমি এখানে আছো। চাইলে সাথে যেতে পারো।____এদুয়ার্দো শান্ত গলায় বলে।

-মায়ের জন্মদিন ব্যতীত মা কখনো আমাকে ডেকে পাঠাননি। সবসময় আমি স্বইচ্ছায় তার সাথে দেখা করেছি।___আব্রাহাম মনে মনে ভাবে। কিন্তু মুখে জিজ্ঞেস করে,,,,,

-ইজাবেল?

-আমিও যাবো ভাই। আর আপনিও।____পেছন থেকে সহাস্যে ইজাবেল কথাটা বলে।

-কিন্তু তোমার একাডেমির ক্লাস?___ভ্রু-কুঁচকে জিজ্ঞেস করে আব্রাহাম।

-আজ সাপ্তাহিক ছুটির দিন। একাডেমিতে ক্লাস নেই।

– প্রিন্সিপাল কি আমাদের সত্যিটা জানেন?___আব্রাহাম কৌতুহলী কন্ঠে জিজ্ঞেস করে ওকে।

– তিনি জানেন আমরা রয়্যাল পরিবারের ছেলে-মেয়ে। এর বেশি কিছু না।

আব্রাহাম নির্বাক,নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। দু’ভাইয়ের মধ্যকার রাগ-অভিমান মিটে গেছে ভেবে, ইজাবেল অসম্ভব আনন্দবোধ করে। কিন্তু আব্রাহাম বা এদুয়ার্দো দু’জনেই নিজেদের মনের মধ্যে একে অপরের প্রতি সন্দেহ আর ক্ষোভ পুষে রাখে। একদিকে এদুয়ার্দো আব্রাহামকে একা ছেড়ে যেতে চায় না, কারন যদি সে পুনরায় ইম্যুভিলে চলে যায়। অন্যদিকে আব্রাহাম, ভাম্পায়ারদের ওভারলর্ড হিসাবে এদুয়ার্দোর যেকোন আদেশ মেনে নিতে বাধ্য হয়। এদুয়ার্দোর মাথায় কতগুলো প্রশ্ন ঘুরপাক খায়। যত দ্রুত সম্ভব, তাকে সবগুলো প্রশ্নের উত্তর জানতে হবে।

________

ইম্যুভিল।

ধীরে ধীরে সময় গড়ায়। ছুটির দিন থাকায় বাড়িতেই দু’বোন নিজেদের অনুশীলন চালিয়ে যায়। অতঃপর বাড়ির চারপাশে অগনিত পপির বীজ ছড়িয়ে দেয়। সবগুলো দরজায় ক্রুশ চিহ্ন আঁকে। র’ক্তচোষা শ’য়তানগুলোর থেকে নিরাপদে থাকার জন্য যা যা পদক্ষেপ নেওয়া যায়,যতটুকু সম্ভব সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহন করে সিয়া আর ইনায়া মিলে। আব্রাহাম কামরায় প্রবেশ করার পর পরিবারের বাকিরা আরও সাবধান হয়ে উঠে। বাড়ির বাইরে বের হলে লোহার গজাল সাথে রাখে। প্রত্যেকের গলায় ঝুলে ক্রুশ লকেট। স্ট্রিকল্যান্ড সিদ্ধান্ত নেন,ক্রিসক্রিংগল ফিরে আসা মাত্রই ইম্যুভিল ছেড়ে অনেক দুরে কোথাও চলে যাবেন। ছেলে-মেয়েদের নিরাপত্তার প্রশ্ন যেখানে,সেখানে তিনি বিন্দুমাত্র ঝুঁকি নিতে চান না।শুধুমাত্র ক্রিসক্রিংগল ফিরে আসার অপেক্ষা।

আর্নি কামরা থেকে বাইরে বেরোয় না। ঠিক করে একাডেমিতেও যাবে না। ইনায়া আর সিয়াকেও যেতে দিবে না। অথচ ইনায়া আর সিয়ার মাঝে কোনো হেলদোল নেই। ওরা নিজদের সব কাজ শেষে গোসল করে নেয়। ঘড়িতে তখন দুপুর দু’টো বেজে যায়।

দুপুরের খাবার খাওয়া শেষ করে সিয়া আর্নির পাশে বিছানার উপর বসে। একটা কাঠের টুলের উপর ক্রিস্তিয়ান বসে ছিলো। ইনায়া আলমারি গুছায়। থেকে থেকে কথা বলে ক্রিস্তিয়ানের সাথে। এমন সময় সবগুলো কাপড়ের নিচে লুকিয়ে রাখা তালা ঝুলানো কাঠের বাক্সটা ওর নজরে আসে। ইনায়ার ভ্রু-কুঞ্চিত হয়। হৃদয় কোণে অদম্য,অফুরন্ত কৌতুহল জেঁকে বসে। হাতে থাকা কাপড়গুলো রেখে,সাবধানী হাতে কাঠের বাক্সটা বাইরে বের করে আনে। সিয়া সরু দৃষ্টিতে তাকায়। কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকায় আর্নি আর ক্রিস্তিয়ান। ইনায়া পায়ে পায়ে এগিয়ে যায়। বিছানার উপর বাক্স টা রাখে। সিয়া আলতো স্পর্শে হাত বুলিয়ে দেখে। তালার দিকে নজর পড়তেই ইনায়াকে উদ্দেশ্য করে বলে,,,

-যদি তোমার সম্মতি থাকে,আমি তালা খুলে দেখতে চাই এর ভিতরে কি আছে।

-আমিও দেখতে চাই। এর মধ্যে এমন কি আছে, যার জন্য আমাদের সবকিছু নিঃশেষ হয়ে গেছে। কিন্তু ভয় হচ্ছে, বাড়ি ফিরে এসে বাবা জানতে পারলে আমাদের করা এই অপরাধের জন্য অসন্তুষ্ট হবেন।

– বাবাকে আমি সামলে নিবো। ___ সিয়া আশ্বস্ত করে বলে।

-কিন্তু তালা খুলবে কি করে?___অকপটে জিজ্ঞেস করে ক্রিস্তিয়ান।

-আমি জানিনা কাজ হবে কিনা। তবে একবার চেষ্টা করে দেখা যাক।___সিয়া নির্জীব কন্ঠে বলে।কয়েক পল সময় গড়ায়।ও মনে মনে স্পেল আওড়ায়। দু’হাতের ইশারায় অপ্রত্যাশিত ভাবে বাক্সের তালা খুলে ফেলে। বাকিরা স্তম্ভিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। ইনায়া অবিশ্বাস্য কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,,,

-এটা কিভাবে সম্ভব?

-দাদুর পুস্তকশালায় থাকা একটা জাদুবিদ্যার বই থেকে কয়েকটা স্পেল আয়ত্ত করেছিলাম।

সিয়ার বলা কথাটা শুনে ওরা তিনজন হতবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়। সিয়া শান্ত গলায় বলে,,,,

– এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই। আমাদের পূর্বপুরুষরা জাদুকর ছিলেন। আমাদের দাদুও একজন জাদুকর। উইজার্ড ডিয়েটস। আমরা উইজার্ড পরিবারের মেয়ে। জাদুবিদ্যা আমাদের রক্তে বইছে। শুধু প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। তুমি যদি স্পেল পড়তে পারো এবং এর সঠিক ব্যবহার জানো, তাহলে এই ছোটখাটো কাজগুলো তুমি নিজেও করতে পারবে।

কথাটা বলে কাঠের বাক্সটার উপরের পাটা তুলে সিয়া। পাটা সরাতেই সাদা রঙের তীব্র আলো এসে লাগে ওদের চোখে। চারজনেই নিজেদের চোখ বুঝে ফেলে। সিয়া চোখ পিট পিট করে তাকায়। একটা চকচকে সাদা পাথর থেকে তীব্র সাদা আলো ছড়িয়ে পড়ে। বাকিরাও চোখ মেলে তাকায়।

মাঝারি আকারের কাঠের বাক্সটাতে একটা মাঝারি আকারের ভারী তলোয়ার দেখা যায়। কয়েকটা বই,একটা দিনলিপি আর কিসব অদ্ভুত জিনিসপত্র। বইগুলোর মধ্যে সোনালী রঙা প্রচ্ছদে মোড়ানো একটা বই সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। চট করে ওটা হাতে তুলে নেয় ইনায়া। সাদা রঙের পাথরটা যেন সম্পূর্ণ হিরে। বরং হিরের থেকেও জ্বলজ্বলে দেখতে। আর্নি সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়। ক্রিস্তিয়ান তলোয়ারটা ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখে। তার মনে হয়। ওটা সাধারণ কোনো তলোয়ার নয়। সম্পূর্ণ সোনায় মোড়ানো। হাতলের অংশটুকু অসম্ভব সুন্দর কারুকার্য খচিত। আর ধারালো অংশটুকু চকচক করছে। যেন সোনালী রঙের দ্যুতি ছড়াচ্ছে। কিন্তু সিয়ার নজর পড়ে ডিয়েটসের লাল প্রচ্ছদে মোড়ানো সেই জাদুবিদ্যা শিখার পুরাতন বইটার দিকে। নিজের অজ্ঞাতেই মনে মনে খুশি হয় ও। কেবলই বইটা স্পর্শ করবে এমন সময় উদ্বিগ্ন কন্ঠে ডেকে উঠে ইনায়া,,,

-সিয়া। এই বইটা খোলা যাচ্ছে না।

– বই খোলা যাচ্ছে না মানে কি?___ক্রিস্টিয়ান জিজ্ঞেস করে।

-হ্যাঁ। তুমি নিজেই দেখো।

ক্রিস্তিয়ান চেষ্টা করে বইটা খোলার জন্য। কিন্তু ব্যর্থ হয়। আর্নি,ইনায়া সবাই চেষ্টা করে। অতঃপর সিয়া বইটা হাতে নেয়। অনেক চেষ্টা করেও বইটা খুলতে পারে না। সোনালী রঙের প্রচ্ছদের উপর ডানহাতের পাঁচ আঙ্গুলের ছাপ। একে একে চারজনই নিজেদের ডান হাত রাখে ছাপের জায়গায়। কিন্তু এবারেও তাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। সিয়া হতাশ কন্ঠে বলে,,,

-রেখে দাও। লাভ নেই। এটা কোনো তালা বা দরজা নয় যে আমি স্পেল আওড়ে খুলে ফেলবো।

বাক্সে আরও একটা জিনিস দেখার বাকি ছিলো। এবার ওদের চারজনের দৃষ্টি পড়ে কালো রঙের মোটা মলাটের দিনলিপি টার দিকে। ইনায়া সেটা তুলে নিয়ে জোরে জোরে পড়তে শুরু করে,,,,,

সাল ১৭২১

সেসময় ইউক্রেনের লোকেরা রুপকথার গল্প শুনতে ভীষণ ভালবাসতো।বিশেষ করে খারকিভ,ওডেসা,মারিওপল এবং খেরসন শহরের অধীনস্ত গ্রামগুলোতে বসবাস করা অধিবাসীরা রুপকথার গল্প শোনায় প্রবল আগ্রহী ছিলো।সেসময় ভাম্পায়ার আর মায়া-নেকড়ের কাহিনী বহুল আলোচিত ছিলো।বাচ্চারা যখন কান্না করতো,মায়েরা তখন তাদের ভয় দেখিয়ে চুপ করাতো।মুখে আঙ্গুল রেখে অনুচ্চ স্বরে ফিসফিসিয়ে বলতো,,,

-হুশশশ।কেঁদো না।তোমার কান্নার শব্দ শুনতে পেলে র’ক্তচোষা প্রাণীরা চলে আসবে।হিং’স্র নেকড়েরা চলে আসবে।

বাচ্চাগুলো কি বুঝতো কে জানে।কিন্তু র’ক্তচোষা প্রাণী অথবা নেকড়েদের কথা শুনে ওদের কান্না থেমে যেত।ওরা ভীষন ভয় পেত।গুটিশুটি মে’রে মায়ের বুকে মুখ লুকাত।সেসময় বিভিন্ন জায়গায় ভোর হতে না হতেই রক্তশূণ্য মৃ’তদেহ দেখা যেত।কখনো বা মাংসহীন ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হাড়গোড় পাওয়া যেত।কখনো বা দেখা যেত আধ খাওয়া বীভৎস লা’শ।বন-জঙ্গলের পাশে অবস্থিত লোকালয়গুলোতে এরকম ঘটনা বেশি ঘটতো।তাই জঙ্গলের কাছাকাছি বসবাস করা মানুষগুলো সন্ধ্যার পর ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে বসে থাকতো।রাত যত গভীর হতো দুর থেকে অপার্থিব আত্মচিৎকার ভেসে আসতো।শোনা যেত ক্রুদ্ধ কন্ঠের জান্তব গর্জন।

প্রথম কয়েট লাইন দেদারসে পড়ে গেলেও হঠাৎই পড়া থামিয়ে দেয় ইনায়া। সিয়া কান পেতে শোনে। ইনায়ার মুখখানা শুকিয়ে যায়। লেখাগুলো পড়ে তার অহেতুক ভয় করছে। ক্রিস্তিয়ান উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলে,,,

-তারপর?

ইনায়া পুনরায় পড়তে শুরু করে,,,,,

অধিকাংশ শহরের বনাঞ্চলের পাশে থাকা লোকালয়গুলোতে এরকম অনাকাঙ্ক্ষিত অপ্রত্যাশিত মৃ’ত্যু দেখা গেলেও কিয়েভ ছিলো অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ একটি শহর।সেসময় ইউক্রেনের শাসক ছিলেন ডেভিড যোসেফ স্যাভেরিন।রাজধানীতেই ছিলো তার সুবিশাল দুর্গ।যা স্যাভেরিন ক্যাসল নামে পরিচিত ছিলো।যোসেফ ছিলেন বীর যোদ্ধা।ন্যায়পরায়ন শাসক এবং প্রজাদরদী।মনের দিক থেকে বেশ কঠিন এবং দৃঢ়।অথচ এই কঠিন মনের শাসকটাও নিজের একমাত্র সহধর্মিণীর প্রতি ভীষণ দূর্বল ছিলেন।বলতে গেলে স্ত্রী অন্ত প্রাণ।যোসেফ স্যাভেরিনের সহধর্মিণী ছিলেন ভীষণ সুন্দরী।যতবার তিনি নিজের সহধর্মিণীকে দেখতেন ততবার সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রার্থনা করে বলতেন,,,,

-হে ঈশ্বর,আমাকে আমার সহধর্মিণীর সাথে বহু বছর বেঁচে থাকার আয়ু দান করুন।

চল্লিশোর্ধ্ব যোসেফ ছিলেন নিঃসন্তান।সহধর্মিণীর সাথে বহু বছর বাঁচার আয়ু কামনার পাশাপাশি তিনি প্রতিনিয়ত ঈশ্বরের কাছে একটা সন্তান লাভের প্রার্থনা করতেন।কিন্তু তার স্ত্রী’র এ ব্যাপারে কোনো হেলদোল ছিলো না।সে বেশ আনন্দ উল্লাসে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছিলো।ডেভিড যোসেফ অবশ্য এতে করে বেশ প্রশান্তি অনুভব করতেন।বুক ভরে স্বস্তির শ্বাস টেনে নিয়ে ভাবতেন,,,,

-অন্তত মা না হওয়ার যন্ত্রণা আমার সহধর্মিণীকে কাবু করতে পারে নি।

সমস্যা’টা মূলত যোসেফের মাঝেই ছিলো।তিনি কখনো বাবা হতে পারবেন না।এই চরম সত্যিটা জেনেও তার সহধর্মিণী তাকে ভীষণ ভালোবাসতো।যা বুঝতে পেরে যোসেফ তৃপ্তিদায়ক হাসতেন।নিজেকে পৃথিবীর সবথেকে সুখী মানুষ মনে করতেন।

রাজ্য,শাসনভার,প্রিয় সহধর্মিণী সবকিছুকে ঘিরে ডেভিড যোসেফের বেশ ভালোই দিন কেটে যাচ্ছিলো।কিন্তু হঠাৎ করেই একদিন তার জীবনে কালো মেঘের আঁধার ঘনিয়ে আসে।যখন তার সহধর্মিণী অকস্মাৎ অন্তঃসত্ত্বা হয়ে যায়।যোসেফ স্যাভেরিনের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে।বাবা হওয়ার মতো এক অনাবিল খুশির খবর পেয়েও তিনি ভীষণ ক্রোধান্বিত হন।কিন্তু কেনো তার এই ক্রোধ?

ডেভিড যোসেফের সমস্ত ক্রোধ জমা হয় চিকিৎসকের উপর।নিশ্চয়ই সে মিথ্যা বলেছিলো!নতুবা তার পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং চিকিৎসা পদ্ধতিতে কোনো ত্রুটি অবশ্যই ছিলো।কোনটা সত্যি?কোনটা মিথ্যা?কে অপরাধী?কে নির্দোষ?অবশেষে প্রাণ যাবে কার?ভাবতে ভাবতে গাম্ভীর্য মুখে করিডোরে ইতস্তত পায়চারি করেন যোসেফ।তারপর হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে যান সত্যির মুখোমুখি হতে।

এই ঘটনার ঠিক দু’দিন পর এক ভর সন্ধ্যা বেলায় দুর্গের ছাদ থেকে তার লাশ ঝুলে পড়ে।ডেভিড যোসেফের এমন ভয়াবহ পরিণতি দেখে তার স্ত্রী সেখানেই চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।ঝুলন্ত লাশ’টা নামিয়ে নিতে রক্ষীদের শিরদাঁড়া বেয়ে আতংকের শীতল স্রোত গড়িয়ে যায়।তাদের মহামান্য শাসকের রক্তশূন্য ফ্যাকাশে মুখখানার ঠোঁটদ্বয় ছিলো কুচকুচে কালো।খুলে রাখা চোখ দু’টো যেন কোটরের বাইরে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিলো।দুর্গের মানুষগুলো একজন প্রভাবশালী ক্ষমতাবান শাসকের এমন বীভৎস পরিণতি দেখে ভয়ে কাঁপতে শুরু করে।তাদের ভয় আরও খানিকটা বাড়িয়ে দিতে দূর্গের ছাদের উপরে অনেকটা উঁচুতে কতগুলো ভয়ংকর দেখতে বিশাল আকৃতির বাদুর উড়ো উড়ি করে।একটা কালো ধোঁয়ার কুন্ডলী ধলা পাকিয়ে গোল গোল ঘুরে।বাদুড়গুলো নিজেদের দাঁত খিচিয়ে সমবেত মানুষগুলোকে হঠাৎই আক্রমন করে বসে।

এই দিনটা ছিলো কিয়েভে নিজেদের উপস্থিতি জানান দেওয়ার সূচনা।ওগুলো কি ছিলো?একদল অতৃপ্ত আত্মা নাকি কতগুলো পিশাচ সত্তা?

জ্বলজ্বল করে উঠে সিয়ার বাদামী চোখজোড়া। হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়। কিছুটা কৌতুহল আর কিছুটা ভয়। ওর চিত্ত চঞ্চল হয়ে উঠে। বিস্মিত কন্ঠে অনুচ্চ স্বরে বলে,,,,

– যোসেফ স্যাভেরিন! স্যাভেরিন ক্যাসল!

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।