ফ্লোরেনসিয়া – ২২

রৌদ্রোজ্জ্বল দুপুর। আজ বেশ কিছুদিন পর মহাতেজস্বী সূর্যের প্রখর উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে কাস্ত্রোরুজের নীলচে আকাশে।

তিনটে মৃতদেহের সমাধিস্থ শেষে ক্রিসক্রিংগল ব্যতীত বাকিরা সবাই বাড়িতে ফিরে আসে। বাড়িটা যেন নির্জন খাঁখাঁ করছে। প্রিয় মুখগুলোর শূন্যতা অনুভব করে প্রতিটা নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে বুকের ভেতরটা হাহাকার করে উঠে। সিয়া যন্ত্রমানবীর মতো হাঁটে। হাঁটতে হাঁটতে সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় চলে যায়। ক্রিস্তিয়ান আর্ত চোখে দেখে। ইনায়া রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ায়। নিজের জন্য না হোক বাকিদের জন্য কিছু রান্না করতে হবে। ও ছাড়া এ নিয়ে আর কে ভাববে?

ইতোমধ্যে আর্নি অত্যাধিক দুর্বল হয়ে গেছে। শারীরিক আর মানসিক দু’দিক থেকেই ভেঙ্গে পড়েছে। ওর অবশ হয়ে আসা শরীরের পা দু’টো চলতে চায়না। হাড়ের গিটে গিটে আর ক্ষতস্থানগুলোতে তীব্র ব্যথা অনুভব করে। ধীরপায়ে হেঁটে বারান্দায় থাকা সোফায় নিজের বাবার পাশে গিয়ে বসে। স্ট্রিকল্যান্ড একহাতে আর্নিকে আগলে নেন নিজের কাছে। বাবার আদুরে স্পর্শে আর্নি নেত্রচ্ছদ বুজে ফেলে। ওর দু’চোখ থেকে পুনরায় অঝোর ধারায় অশ্রুকনা গড়িয়ে পড়ে।

সিয়া নিজের কামরায় প্রবেশ করে। সম্পূর্ণ কামরা বিপর্যস্ত ছিলো। সবকিছু অগোছালো। দেয়ালের দু’পাশে থাকা বড়বড় আলমারি দু’টোর বইপত্রগুলো সব মেঝেতে ছড়ানো ছিটানো। বিছানার তোষক, চাদর এমনকি পোশাকগুলোও এলোমেলো হয়ে এদিকে ওদিকে পড়ে আছে। সিয়া নিষ্প্রভ চোখে সম্পূর্ণ কামরায় একবার নজর বুলিয়ে নেয়। কিচের লোহার খাঁচাটা শূন্য পড়ে আছে টেবিলের নিচে। মেঝের লাল রঙ্গা কার্পেটটা পর্যন্ত তুলে ফেলেছে ওরা। কিজানি কি খুঁজেছে সম্পূর্ন বাড়ি তন্নতন্ন করে।

সিয়ার চোখের সামনে পুরনো সব আনন্দঘন মুহূর্তের অসংখ্য স্মৃতি ভাসতে শুরু করে। দাদু, দাদিন আর মায়ের কথা মনে পড়তেই দুইহাতে শক্ত করে দু’পাশের গাউন চেপে ধরে। টগবগিয়ে উঠে রক্ত। ওর চোখ দু’টো নিষ্প্রাণ পাথর মতো। অথচ বুকের অভ্যন্তরে থাকা হৃদপিণ্ডটা অসামান্য যন্ত্রণায় ছটফট করতে শুরু করে। যেন সমগ্র বক্ষস্থলে ভয়াবহ আগুন জ্বলছে।

– কিচ! যেখানেই লুকিয়ে থাকো। বাইরে এসো।____সিয়া দৃঢ় কন্ঠে বলে।

ক্ষণকাল সময় গড়ায়। সিয়া অপেক্ষা করে। ওর দৃঢ় বিশ্বাস কিচ জীবিত আছে। কারন প্রতিযোগিতায় যাওয়ার পূর্বে সিয়া ওর খাঁচার দরজা খুলে রেখে গিয়েছিলো। ও বেশ চালাক। বিপদ বুঝে নিজের আত্মরক্ষা করতে জানে।

– কিচ! আমার সামনে এসো।

দ্বিতীয়বার ডাকতেই আলমারির নিচ থেকে কিচ বেরিয়ে আসে। নিজের চঞ্চল চোখজোড়া এদিক সেদিকে ঘুরিয়ে সিয়ার পায়ের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। লেজ নাড়িয়ে সিয়াকে সুরিসুরি দিয়ে নিজের আতংক প্রকাশ করে। সিয়া ওকে কোলে তুলে নেয়। বুকের কাছে চেপে ধরে। সহসা দরজায় করাঘাতের শব্দ শুনতে পায়। সিয়া নির্জীব কন্ঠে বলে,

– এসো।

হন্তদন্ত হয়ে কামরায় প্রবেশ করেন ক্রিসক্রিংগল। সিয়ার কোলে কিচকে দেখে বেশ বিস্মিত হন। উদ্বিগ্ন কন্ঠে জিজ্ঞেস করেন,

– কিচ কোথায় ছিলো? ওকে কিভাবে পেলে?

– জানিনা কোথায় ছিলো। নাম ধরে ডাকতেই আলমারির নিচ থেকে বাইরে বেরিয়ে এলো।

ক্রিসক্রিংগল সিয়াকে তাগাদা দিলেন। ব্যতিব্যস্ত স্বরে বললেন,

– আচ্ছা। দ্রুত নিজের প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র গুছিয়ে নাও। বাড়ির সামনে ফিটন দাঁড়িয়ে আছে।

– কেনো?_____সিয়ার অকপট প্রশ্ন।

– সন্ধ্যার আগে কাস্ত্রোরুজ ছাড়তে হবে। আজ অথবা কাল ওরা আবারও আসতে পারে। আমি কোনো ঝুঁকি নিতে চাইনা।

– আসলে আসুক। আমার ওদেরকে ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। আমি পালাবো না।___সিয়া দৃঢ়কণ্ঠে বলে।

– বোঝার চেষ্টা করো। তোমার জীবন ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা কেউ পালিয়ে যাচ্ছি না। শুধু একটা নিরাপদ জায়গায় নিজেদের আশ্রয় খুঁজে নিচ্ছি।

– এটাকে পালিয়ে যাওয়াই বলে। কেনো পালিয়ে বাঁচবো? আমি মৃ’ত্যুকে ভয় পাই না। সম্মুখ লড়াই করবো। হয় মা’রবো, না হয় ম’রবো।

ক্রিসক্রিংগল আশাহত হলেন। কেমন জ্ঞানশূন্যবোধ করলেন। বেশি দেরি করা ঠিক হবে না। রাতের অন্ধকার নেমে আসার আগেই সবাইকে নিয়ে গ্রামের সীমানা পেরিয়ে যেতে হবে। মনে মনে ভাবলেন। অতঃপর মলিন মুখে করুন স্বরে বললেন,

– নিজের কথা না ভাবো, অন্তত ইনায়ার কথা ভাবো।

একমুহূর্তের জন্য সিয়া দুর্বল হয়ে পড়ে। কিন্তু পরমুহূর্তেই কঠিন কন্ঠে বলে,

– দাদু বলেছিলেন, যারা ভয় পায় তাদের ভয় থেকে মুক্তি নেই। ওদের হাতেই যদি ভাগ্যে মৃ’ত্যু লেখা থাকে, তাহলে তা অনিবার্য। মৃ’ত্যু ঠেকাতে ভয় পেয়ে কতদূর পালিয়ে যাবো? বাঁচতে পারবো কি?

– তোমাকে বাঁচতে হবে। ভয়কে জয় করতে হলে বেঁচে থাকা প্রয়োজন। তাছাড়া তুমি ঈশ্বরের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছো। সবগুলো ন’রপি’শাচকে ধ্বং’স করবে।

– যতক্ষণ আমার নিঃশ্বাস পড়বে, আমি আমার প্রতিজ্ঞা রক্ষা করবো।

– কিন্তু কিভাবে?___বিস্মিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করেন ক্রিসক্রিংগল।

– এখানেই অপেক্ষায় থাকবো। ওরা আসবে।

সিয়া নিজের সিদ্ধান্তে অনড় রইল। ক্রিসক্রিংগল ওকে বোঝাতে ব্যর্থ হলেন। তিনি বুঝতে পারেননি সিয়া এতোটা বেপরোয়া হয়ে উঠবে। অগ্যতা নিজের হার স্বীকার করে ক্রিসক্রিংগল দু’পা এগিয়ে যান দরজার দিকে। আচম্বিতে দাড়িয়ে পড়েন। কিঞ্চিৎ ঘাড় বাকিয়ে সিয়াকে দেখেন। তার বক্ষ চিরে যন্ত্রণাদায়ক দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। তিনি রাশভারি কন্ঠস্বরে বলেন,

– অহেতুক জেদ করছো। এটা তোমার হঠকারী সিদ্ধান্ত। ওরা সংখ্যায় অনেক। আমরা মাত্র কয়েকজন। তুমি যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী নও। পারবে না ওদের মোকাবিলা করতে। বেঘোরে প্রাণ হারাবে। তুমি কি নিজের প্রতিজ্ঞা অসম্পূর্ণ রেখেই ম’রে যেতে চাও?

সিয়া প্রত্যুত্তর দেয় না। ও কিছুতেই নিজের গ্রাম ছাড়তে চায় না। মা-দাদিনের সমাধি ছেড়ে দূরে যাওয়ার কথা ভাবতেও পারে না। ক্রিসক্রিংগল ওকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। ব্যথাতুর কাতর কন্ঠে বলেন,

– স্ট্রিকল্যান্ড মৃ’ত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছে। এই মূহূর্তে আর্নি আর ক্রিস্তিয়ান শারীরিক এবং মানসিকভাবে কতটা অসহায় তুমি তা ভালো করেই জানো। ইনায়ারও একই অবস্থা। আমি জানি তুমি দৃঢ়চিত্তে প্রস্তুত আছো শত্রুদের মোকাবেলা করার জন্য। আমিও তাই। কিন্তু আমরা এ অবস্থায় কতক্ষণ ওদের সাথে লড়াই চালিয়ে যেতে পারবো? কতক্ষণ নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারবো?

কথাগুলো বলে ক্রিসক্রিংগল আরও একপা সামনে বাড়ালেন। আচম্বিতে পেছন থেকে সিয়ার কন্ঠস্বর শুনতে পেলেন,

– কোথায় যেতে চাইছেন?

– খারকিভের একটি গ্রাম, ইম্যুভিল।___অপ্রসন্ন মুখে উত্তর দিলেন ক্রিসক্রিংগল।

– ওখানে কাদের কাছে যাবেন?

– নিজেদের জন্য কোনো একটা নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে নিবো। তারপর আমার একজন বন্ধুর সাথে তোমার দেখা করিয়ে দিবো। ও আমাদের সাহায্য করতে পারে।

– কে?

– মার্টিন লরেন্স। মার্শাল আর্টের বিখ্যাত মাস্টার ছিলো ও। প্রায় আঠারো বছর হলো, ওর সাথে আমার যোগাযোগ বিছিন্ন। নিজেকে লুকিয়ে ফেলেছে একেবারে। মার্টিনের একটা সুন্দর পরিবার ছিলো। একটা ফুটফুটে সুন্দর মেয়ে ক্লারেসিয়া আর স্ত্রী আরিনা ফোসিয়া। একুশ বছর বয়স্কা এক অপরুপ সুন্দরী নারী। অসাধারণ গুনী এবং তুখোর বুদ্ধিমতী ছিলো সে। একদিন শত্রুদের হাতে মারা যায় আরিনা। নিজের দুগ্ধপোষ্য শিশুটাকে তুলে দেয় অন্যকারো হাতে। মেয়েটার বয়স তখনো এক বছর পূর্ন হয়নি। দুর্ভাগ্যবশত আরিনার লাশটাও খুঁজে পাওয়া যায়নি।

– তারপর?___ সিয়া জিজ্ঞেস করে।

– তারপরের ঘটনা আমি জানিনা। স্ত্রী-কন্যা হারানোর শোকে সন্ন্যাস জীবন বেছে নেয় মার্টিন লরেন্স। সেদিনের পর থেকে ওকে আর দেখা যায়নি। মার্টিনের খোঁজ পেতে যারাই ওর সাথে দেখা করতে গেছে। তারা কেউ আর জীবিত ফিরে আসেনি। মার্টিনের মাঝে ঐশ্বরিক ক্ষমতাও ছিলো। ও ছিলো মহান জিউসের পরম ভক্ত। শুনেছিলাম, দৈববানীর মাধ্যমে মার্টিন জিউসের সাথে কথা বলতো।

– আপনি বলছেন, তার খোঁজ জানে না কেউ। তাহলে আমরা তাকে কোথায় খুঁজে পাবো?

– খারকিভ শহর থেকে বেশ কিছুটা দূরে অতিপ্রাকৃত রহস্যে পরিপূর্ণ একটি গহীন জঙ্গল। যার নাম প্রাসকোভিয়া। পাহাড়-পর্বতে ঘেরা এই জঙ্গলের কোন একটি গুহায় থাকতে পারে মার্টিন লরেন্স।

– আপনি কিভাবে জানেন?

– জানি না। শুধু ধারনা করছি। মার্টিন যেখানেই থাকুক। আমাদের ওকে খুঁজে বের করতে হবে।

– ঠিক আছে। আমি যাবো আপনার সাথে।___সিয়া ক্ষীণস্বরে বলে।

– দ্রুত নিজের সব জিনিসপত্র গুছিয়ে নাও।

সিয়া সম্মতি জানিয়ে কিচকে মেঝেতে নামিয়ে দেয়। ক্রিসক্রিংগল কামরার বাইরে বেরিয়ে যান।

_________★★__________

খারকিভ, ওয়াভেল কোট।

ধীরে ধীরে সময় গড়ায়। খারকিভের আকাশে সূর্যের তেজ কমে আসে। বেসমেন্টের প্রতিটা অন্ধকার কামরার দরজা খুলে যায়। জেগে উঠে কফিনে শুয়ে থাকা রক্তপিপাসুগুলো। এদুয়ার্দো নিজের কামরায় গা এলিয়ে দিয়ে সোফায় বসে ছিলো। পরনে সাদা ট্রাউজার আর মেরুন রঙের শার্ট। দু’চোখের পাতা বুজে নিতেই চোখের সামনে আবছা আবছা কিছু দৃশ্য দেখতে পায়।

একটা ছোট শিশুর অস্পষ্ট মুখাবয়ব। কর্ণকুহরে বেজে উঠে শিশুটার কান্নার আওয়াজ। রাজকীয় পোশাক পরিধেয় একটা বছর দশেক বাচ্চা ছুটে আসে। শ্বেতশুভ্র রঙের ফ্রক পরে থাকা বাচ্চা মেয়েটাকে কোলে তুলে নিয়ে শরীর দুলিয়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করে। কিন্তু কিছুতেই বাচ্চাটার কান্না থামেনা।

সহসা এদুয়ার্দোর হৃদয় কম্পিত হয়। ছোট শিশুর সেই কান্নার সুর সহ্য হয়না তার। সে ত্বরিত চোখ মেলে তাকায়। প্রায়ই এমন ভিন্ন ভিন্ন বেশ কিছু অগোছালো অস্পষ্ট দৃশ্য দেখতে পায়।

– ঐ ছোট শিশুটা কে ছিলো? ছেলেটাই বা কে? কেনো এই দৃশ্যগুলো প্রতিনিয়ত আমার চোখের সামনে ভাসে?

এদুয়ার্দো ভাবে। অথচ প্রশ্নগুলোর কোনো উত্তর খুঁজে পায়না। বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে ফেলে। সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে শার্টের বোতাম খুলতে থাকে। হঠাৎই তার দৃষ্টি পড়ে দেয়ালে টানানো নিজের তৈলচিত্রের দিকে। ঐ ছেলেটার সাথে নিজের চেহার বেশ মিল খুঁজে পায় সে। ছেলেটা যদি এদুয়ার্দো হয়, তাহলে মেয়েটা কে?

– ইজাবেল নয়তো?

দরজায় করাঘাতের শব্দে এদুয়ার্দো নিজের সম্বিত ফিরে পায়। আবারও শার্টের বোতামগুলো লাগিয়ে নেয়। অনুমতি পেয়ে ইজাবেল কামরায় প্রবেশ করে। এদুয়ার্দো পেছন ঘুরে দাঁড়ায়। ইজাবেল মিষ্টি করে হাসে। উচ্ছ্বসিত স্বরে ডাকে,

– ভাই!

এদুয়ার্দো কিঞ্চিত ঠোঁট ছড়িয়ে হাসে। ছোট বোনের মুখখানা দেখতেই সমস্ত দুশ্চিন্তা মিলিয়ে যায়। পুনরায় সোফায় গিয়ে বসে।

– আমি সৌভাগ্যবতী। কারন আমি ব্যতীত পৃথিবীর অন্যকেউ কখনো দেখতে পায়নি অনারেবল ওভারলর্ডের এই নজরকাড়া হাসি।

– হাসি দেখতেই এখানে এসেছো তুমি?___এদুয়ার্দোর বিস্মিত কন্ঠ।

– উমহু। আপনার কাছে একটা আবদার নিয়ে এসেছি।

ইজাবেল এদুয়ার্দোর পাশে গিয়ে বসে। এদুয়ার্দো আগ্রহ নিয়ে তাকায়। ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করে,

– তোমার আবদার কি শুনি!

– আমি ওডেসায় যেতে চাই। অনেকদিন হলো ছোট ভাইকে দেখিনা। ভীষণ মিস করছি। খুব দেখতে ইচ্ছে করছে তাকে।

– নিজের কামরায় ফিরে যাও।

এদুয়ার্দোর মুখখানা গম্ভীর হয়ে উঠে। ইজাবেল হতাশ হয়। দ্বিতীয়বার বললে যদি রেগে যায়, তাই নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকে সে। হঠাৎই ফুপিয়ে কেঁদে উঠে। এদুয়ার্দো চমকায়। কেমন অস্থিরতা অনুভব করে। কঠিন গলায় ইজাবেলকে উদ্দেশ্য করে বলে,

– তোমার দেখতে ইচ্ছে করছে। ও চলে আসবে ওয়াভেল কোটে।

ইজাবেলের কান্না থেমে যায়। গোলগোল চোখে এদুয়ার্দোর দিকে তাকায়। ফের দরজায় করাঘাতের শব্দ শোনা যায়। এদুয়ার্দো অনুমতি দেয়,

– এসো।

কামরায় প্রবেশ করে অ্যাভোগ্রেডো। চোখ তুলে তাকায় না। বুকের কাছে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নত মস্তকে সম্মান জানায়। অকপটে বলে,

– অনারেবল ওভারলর্ড। গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে শ্যারনকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাকে বেসমেন্টেও দেখা যায়নি।

– খুঁজে বের করো। ওকে আমি আমার চোখের সামনে দেখতে চাই।

এদুয়ার্দোর হিংস্রাত্মক শীতল কন্ঠে কেঁপে উঠে ইজাবেল। হঠাৎ করেই তার ভাইয়ের এরকম রেগে যাওয়ার কারন কি?

অ্যাভোগ্রেডো অনুমতি নিয়ে কামরার বাইরে বেরিয়ে যায়। এদুয়ার্দো ত্বরিত উঠে দাঁড়ায়। থমথমে পায়ে পাশের কামরায় চলে যায়। ইজাবেল নির্বাক হয়ে ঠাঁই বসে থাকে।

________★★_______

কাস্ত্রোরুজ থর্প।

ইনায়ার সাথে হাতে হাতে কাজ করে দেয় সিয়া। কবুতরের স্যূপ, রুটি আর হাঁসের মাংস দিয়ে খাবার খাওয়া শেষে গোছগাছ শুরু করে। ওদের তিনজনের সাথে কুরী পরিবারের বাকি তিনজনও কাস্ত্রোরুজ ছেড়ে ইম্যুভিলে যাবে। প্রথমে রাজি হননি স্ট্রিকল্যান্ড কুরী। কিন্তু আর্নি আর ক্রিস্তিয়ানের সুরক্ষার কথা ভেবে, তিনি রাজি হতে বাধ্য হন সিয়াদের সাথে যেতে। বেশ কিছুক্ষণ হলো ক্রিস্তিয়ান নিজের বাড়িতে চলে গেছে। প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র আর অর্থ নিয়ে ফিরে আসবে সে। স্ট্রিকল্যান্ড কুরীর বেশ মোটা অংকের রুবল জমানো ছিলো। বাজারে তার দোকানে কাঠের বাক্সে আরও কিছু রুবল রাখা আছে। ওগুলোও নিয়ে আসবে ক্রিস্তিয়ান। নতুন শহরে পাড়ি জমাচ্ছে। কোনো কাজ না জুটে যাওয়া পর্যন্ত পর্যাপ্ত মুদ্রা লাগবে। আপাতত হাতে যা আছে সবটাই সাথে নিয়ে যেতে হবে। ওখানে যাওয়ার পর অবশ্যই কোনো না কোনো ব্যবস্থা হয়ে যাবে।

বাড়িতে ফিরে আসার সময় কিছু লোকজন সাথে নিয়ে এসেছিলেন ক্রিসক্রিংগল। সিয়া আর ইনায়া যখন রান্না করছিলো। তখন ক্রিস্তিয়ান, ক্রিসক্রিংগল আর লোকগুলো মিলে কোনো রকমে মৃতপ্রানীগুলোকে মাটি চাপা দিয়েছেন। পোষা জন্তুগুলোকে মাটি চাপা দিতে গিয়েও ক্রিসক্রিংগলের দু’চোখ ভিজে উঠেছিলো। ওরা এই নিরীহ প্রাণীগুলোকেও ছাড় দেয়নি। কুকুরগুলোকেও মে’রে রেখে গেছে। কতটা নিকৃষ্ট ওরা। কতটা নৃশংস!

ক্রিস্তিয়ান রুবল, পোশাক আর প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র নিয়ে সিয়াদের বাড়িতে ফিরে আসে। এদিকে সবার গোছগাছ শেষ। সিয়ার খুব কষ্ট হয় বইগুলো সাথে নিয়ে যেতে পারে না বলে। কিন্তু পরমুহূর্তেই মনে হয়, জীবনের সবচেয়ে প্রিয় মানুষটাকেই মাটির নিচে সমাধিস্থ রেখে যাচ্ছে। রেখে যাচ্ছে প্রিয় দাদিনকে। সবকিছু ছেড়ে ছুঁড়ে নিজের গ্রাম থেকেই পালিয়ে যেতে হচ্ছে মৃ’ত্যু ভয়ে। সেখানে বইগুলো রেখে যাওয়া কি এমন কষ্টের হতে পারে? ওর বুকের ভেতর থেকে অসহনীয় যন্ত্রণার দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে।

ওয়াটার পট, শুকনো কিছু খাবার, পোশাক, কয়েকটা অতি পছন্দের বই, রসুন, পপির বীজ, কাঠ আর লোহার গজাল, ক্রুশ-লকেট আরও বেশ কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস সাথে নেয় সিয়া। সবশেষে প্রতিযোগিতায় উপহার পাওয়া তলোয়ারটা হাতে নেয় ও। সবগুলো দরজায় তালা ঝুলিয়ে সবাই উঠানে এসে দাঁড়ায়।

কিচকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ইনায়া। কান্নাভেজা চোখে বাড়ির চারপাশটা একবার দেখে নেয় ও। রান্নাঘরের দিকে তাকায়। এই বুঝি ওর মা বেরিয়ে আসে। বারান্দার দিকে তাকায়। সোফা দু’টো শূন্য পড়ে আছে। উরসুলা দিনের বেশির ভাগ সময় ওখানে বসে থাকতেন। বুকের ভেতরটা হাহাকার করে উঠে। বাড়ির পেছন থেকে ক্রিসক্রিংগল বেরিয়ে আসেন। তার হাতে মাঝারি আকারের একটি কাঠের বাক্স। বাক্সটাতে লোহার তালা ঝুলছে। সিয়া পাথুরে দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। ক্রিসক্রিংগল দ্রুতপায়ে হেঁটে ওর সামনে এসে দাঁড়ান। সিয়া কিছু একটা আচ করে নেয়। শীর্ণ কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,

– এই কাঠের বাক্সে থাকা জিনিসগুলোর জন্যই ওরা আমাদের পেছনে পড়ে আছে, তাইনা বাবা?

– হ্যাঁ।____কঠিন গলায় উত্তর দেন ক্রিসক্রিংগল।

– এটা কোথায় ছিলো বাবা?____ইনায়ার শঙ্কিত কন্ঠ।

– বাড়ির পেছনে মাটি চাপা দিয়ে রেখেছিলেন বাবা। তার উপর নোংরা আবর্জনা ছিলো। তাই ওরা খুঁজে পাইনি এটা।

– ওদেরকে এটা দিয়ে দিলেই পারতেন। তাহলে অন্তত দাদু আমাদের সাথে থাকতেন। মা আর দাদিন বেঁচে থাকতেন। আমাদের পরিবারটা এভাবে ধ্বংস হয়ে যেতো না। সবাইকে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যেতে হতো না।____আর্ত কন্ঠে কথাগুলো বলে উঠে ইনায়া।

– এখানে যে জিনিসগুলো আছে। সেগুলো রক্ষা করতে আমিও নিজের প্রাণ দিয়ে দিবো। এমনকি তোমাদেরকে আদেশ দিবো, জীবিত থাকা অবস্থায় এই জিনিষগুলো তোমরা কখনো নিজেদের হাত ছাড়া করবে না।

– এই বাক্সের মধ্যে কি এমন জিনিস আছে বাবা? যা আমাদের জীবনের চেয়েও বেশি মূল্যবান।___প্রশ্ন করে সিয়া।

– সময় হলে সব জানতে পারবে। এখন জলদি চলো। অনেক দেরি হয়ে গেছে।

কুরী পরিবারের সদস্য তিনজন চুপচাপ শুনছিলো। ওদের বলার মতো কিছু নেই। অথচ জানার আছে অনেক কিছুই। কিন্তু প্রশ্ন করে অহেতুক সময় নষ্ট করে না। আর্নি ওর বাবাকে ধরে হাঁটতে শুরু করে। ক্রিস্তিয়ানের হাতে ব্যাগ। সে নিশ্চুপ, নির্বাক।

সিয়া, ইনায়া ওদের বাবার সাথে পা চালিয়ে হেঁটে পশ্চাদ্ভাগের উঠোন পেরিয়ে যায়। বাড়ির সামনে রাস্তায় তিনটে ফিটন দাঁড়িয়ে আছে। একটাতে সব প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রেখেছো। বাকি দু’টো নিজেদের জন্য। ফিটনে চড়ে বসার আগে সিয়া ওদের বাড়ির দিকে নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। ক্রিসক্রিংগল তাড়া দেন। সিয়া সম্বিত ফিরে পায়। নিশ্চল পায়ে ফিটনে উঠে বসে। ইনায়া ওর একহাত মুঠোবন্দি করে ধরে। সিয়া দৃঢ়কন্ঠে বলে,

– আমি ঠিক আছি। তুমি নিজেকে সামলে নাও।

দু’চোখের পলক ফেলে ইনায়া। ওর বুকের কাছে থাকা কিচ নড়েচড়ে উঠে। ইনায়া শক্ত হাতে আগলে ধরে ওকে। ঘোড়ার পিঠে চাবুক পড়তেই চলতে শুরু করে ফিটন। কোচওয়ান বিপরীত দিকের রাস্তা ধরে ফিটন নিয়ে যাত্রা শুরু করে।

অনিশ্চিত জীবন আর ভয়ংকর সব বিপদের সম্মুখীন হতে ওরা অজানা শহরের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায়। কে জানে কি আছে ওদের ভাগ্যে। আদৌও কি কখনো ফিরে আসতে পারবে নিজেদের গ্রামে?

________★★_________

কিয়েভ, স্যাভেরিন ক্যাসল।

সময়টা গোধূলি সন্ধ্যা। দুর্গের কালকুঠুরিতে প্রবেশ করলেন পিদর্কা স্যাভেরিন। নিঃশব্দে ডিয়েটসের সেলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। সেলের দেয়াল ঘেঁষে চোখ বুজে বসে ছিলেন ডিয়েটস। হাত-পায়ে বিন্দুমাত্র শক্তি নেই। যেন প্যারালাইজড হয়ে গেছে তার সম্পূর্ন শরীর। কারো উপস্থিতি টের পেয়ে চোখ মেলে তাকালেন। পিদর্কা স্যাভেরিন কিঞ্চিৎ ঠোঁট বাঁকিয়ে মৃদু হাসলেন। অনুচ্চস্বরে ডাকলেন,

– উইজার্ড ডিয়েটস।

– দূর হ র’ক্তচোষা পি’শাচীনি।

ক্রুদ্ধ হোন পিদর্কা স্যাভেরিন। রাগান্বিত কন্ঠস্বরে বলেন,

– এখনো তেজ কমেনি? মুখের জবানটাও হারাতে চাইছো নাকি? এইমূহূর্তে তোমার জিব টেনে ছিঁড়ে ফেলবো আমি।

উইজার্ড ডিয়েটসের মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি। ব্যঙ্গ করে বলেন,

– একেবারে মে’রে ফেলছো না কেনো? তুমি যা জানতে চাও। আমি তা কোনোদিনও বলবো না।

পিদর্কা স্যাভেরিন ভ্রু কুঞ্চিত করে তাকান। শান্ত গলায় বলেন,

– তুমি জানো আমার বয়স কত?

– ১৭৫ বছরের ডাইনী।

– হুম। তোমার মতো কতো ডিয়েটসকে সরিয়ে দিয়েছি নিজের রাস্তা থেকে। তার কোনো হিসাব নেই। যাইহোক, তোমার জন্য একটা দারুণ উপহার নিয়ে এসেছি। দেখতে চাও?

পিদর্কা স্যাভেরিন নিজের হাতে থাকা লকেট দু’টো সামনে উচিয়ে ধরেন। অনিচ্ছা থাকা স্বত্তেও ডিয়েটস পিদর্কার হাতের দিকে তাকান। নিমেষেই তার দু’চোখের দৃষ্টি বিস্ফোরিত হয়। পিদর্কা স্যাভেরিন শব্দ করে হাসেন। উচ্ছ্বসিত স্বরে বলেন,

– মূলত এই ধরনের লকেট উইজার্ড পরিবারের নারী সদস্যরা গলায় পরে। আমার হাতেরগুলো তোমার সহধর্মিণী উরসুলা আর পুত্রবধূ ইলহামা অ্যালিয়েভের।

– এগুলো কোথায় পেলে?___ভীতসন্ত্রস্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করেন উইজার্ড ডিয়েটস।

– গতকাল সন্ধ্যার আগে তোমার বাড়িতে গিয়েছিলাম। সৌভাগ্যক্রমে তোমার ছেলে আর নাতনি দু’টো বাড়িতে ছিলো না। ইলহামা আর উরসুলার সাথে আরও দু’জন ছিলো। হঠাৎ করে চোখের সামনে কয়েকটা অপরিচিত মুখ দেখে চারজনেই বেশ ঘাবড়ে গিয়েছিলো। আমি ওদের চোখে ভয়াবহ আতংক দেখেছিলাম। খুব মজা পেয়েছিলাম জানো?

এতুটকু শুনেই ডিয়েটসের অবশ শরীর হালকা কেঁপে উঠল যেন। বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন। পিদর্কা স্যাভোরিন রয়ে সয়ে পুনরায় বলতে শুরু করেন,

– সবগুলোকে আঁটকে রেখে পুরো বাড়িতে তল্লাশি করেছিলাম। কিন্তু কিছুই খুঁজে পাইনি। অতঃপর তোমার বৃদ্ধা সহধর্মিণী আর পুত্রবধূকে কতবার করে জিজ্ঞেস করেছিলাম। পাথর, বই আর ম্যাজিক্যাল সোর্ড’টা কোথায়? কিন্তু ওরা কিছুতেই বললো না। অবশেষে আমি কি করলাম জানো?

পিদর্কা স্যাভেরিন উচ্চস্বরে হাসতে শুরু করেন। ডিয়েটসের ভয়াবহ গলা শুকিয়ে আসে। পিদর্কা আহ্লাদী কন্ঠে টেনে টেনে বলেন,

– মে’রে ফেলেছি। শরীরের সমস্ত রক্ত শুষে খেয়ে চারজনকেই মে’রে ফেলেছি। কিছুক্ষণ অপেক্ষাও করেছি তোমার ছেলে আর নাতনিদের জন্য। কিন্তু কে জানে, কোথায় গিয়েছিলো। আমাদের ভীষণ তাড়া ছিলো। তাই ফিরে এসেছি। তবে ওখানেই বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, আজ আবারও যাবো। তুমি কি বলো?

নিজের অজান্তেই ডিয়েটসের দু’গাল বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। শক্ত হয়ে উঠে চোয়াল। ক্রোধিত কন্ঠে উচ্চস্বরে বলেন,

– তুমি মিথ্যে বলছো। আমাকে বোকা বানাতে চাইছো। সবটাই মায়া। সবকিছু মিথ্যে।

– বাজে বকো না। প্রমাণ তোমার চোখের সামনে। কোনটা সত্যি কোনটা মিথ্যে, তা বুঝে নেওয়ার বোধশক্তি তোমার আছে।

ডিয়েটস কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। কাতর কন্ঠে অনুযোগের স্বরে বলেন,

– হায় ঈশ্বর! আমি কতটা অকৃতজ্ঞ। নিজের পরিবারকে রক্ষা করতে পারিনি।

– বাকিদের জীবন-মৃত্যু তোমার সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে। তোমার ঈশ্বরও ওদের বাঁচাতে পারবে না। এখনো বলে দাও ওগুলো কোথায় আছে।

– বলবো না। ওগুলো রক্ষা করা আমার কর্তব্য।

– ঠিক আছে। সবই তোমার ইচ্ছে। তোমার ছেলে নিশ্চয়ই জানে ওগুলো কোথায় আছে। আমি না হয় ওর থেকেই জেনে নিবো।

এতটুকু বলে পিদর্কা স্যাভেরিন দরজার দিকে হাঁটতে শুরু
করেন। অকস্মাৎ পেছন থেকে ডিয়েটসের কন্ঠস্বর শুনতে পান।ডিয়েটস অসহায় কন্ঠে বলেন,

– ওদেরকে মে’রো না। আমি বলছি, ওগুলো কোথায় আছে।

দাঁড়িয়ে পড়েন পিদর্কা স্যাভেরিন। ডিয়েটস ক্ষীণস্বরে বলেন,

– বাড়ির পেছনে। মাটির নিচে পুঁতে রাখা আছে। একটা তালা বদ্ধ কাঠের বাক্সে তোমার কাঙ্ক্ষিত সবগুলো জিনিস খুঁজে পাবে।

পিদর্কা স্যাভেরিনের মুখে ক্রুর হাসি ফুটে উঠে। তিনি পেছন ফিরে তাকালেন না। ঝড়ের বেগে ছুটে যান সম্মুখ দরজার দিকে।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।