লজ্জায় পড়ার মতো বিশ্রি জিনিস কি আর কোনো কিছুতে আছে।ছিঃকি লজ্জা টায় না পেলাম।বিভোর ভাই,রিয়া,তোহা আপু,তিয়াস ভাই,মেহু আপু সবাই জানে যে আমি এই বিয়েতে রাজি না।এটা নিয়ে তুমুল ঘূর্ণিঝড় চলছে বাড়িতে।বিয়েতে রাজিনা অথচ তার সাথে সকালে ভোরে হাঁটতে বেরিয়েছি,এর মানে কি হতে পারে স্বাভাবিক সবাই যেটা ভাববে ওরাও সেটাই ভাবছে।আর না ভাবার ই বা কি আছে,এখন আমি বোঝাতে চাইলেও কি ওরা বুঝবে।
তিয়াস ভাই বললো,নতুন দম্পত্তিদের ঘাসফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে আমরা চলে এলাম।বলেই এক গুচ্ছ ঘাস ফুল এগিয়ে দিলাম।কিন্তু এটা কি ঠিক হলো বিহান ভাই আপনারা লুকিয়ে চুরিয়ে সময় কাটাচ্ছেন আমাদের বাদ রেখে।আমরা কি আপনাদের ডিস্টার্ব করতাম।
“বিহান ভাই কপাল কুচকে বললেন,আমি তো জানতাম তিয়াস তোমরা হলে জাতীয় প্রাণি ছুঁচার থেকে কম না।নাকে শুকে ঠিক ই চলে আসবে সেই গুন টা তোমাদের আছেই।এইজন্য আর আমি বলি নি কিছুই।”
“রিয়া বললো,কিরে দিয়া এই ছিলো তোর মনে।আমাকে টয়লেটে গিয়ে কিভাবে সময় কাটাস সেটাও শেয়ার করিস অথচ এইভাবে আমাদের হবু দুলাভাই এর সাথে দেখা করতে আসবি একবার বললি ও না।আহা কি প্রেম দেখেই প্রাণ জুড়িয়ে যায়।”
“রিয়ার কথা শুনে বিহান ভাই শুকনো কাশি দিলেন আর আড়চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচালেন।আমি উনার দিকে চোখ পড়তেই মুখ ভেংচি দিয়ে অন্যদিকে তাকালাম।”
“বিভোর ভাই রিয়ার কথা ধরার সুযোগ পেলেই আর দেরি করেন না।চটজলদী বলে উঠলেন,রিয়া আমার সাদা মনে একটা কথা জানতে চাইছে তুমি টয়লেটে গিয়ে কিভাবে সময় কাটাও।”
“আপনাকে বলাটা কি খুব জরুরি হে!আপনাকে কেনো বলতে যাবো আমি।
এত ভাব নাও কেনো বালিকা,ছেলে কি আমি খারাপ।”
“খারাপ না আপনার চরিত্র ফুলের মতো পবিত্র।বিহান ভাই না থাকলে আমি ঠিক ই বলতাম।”
“কি বলতে আমি যায় করি না কেনো আমি কিন্তু পাক্কা ভার্জিন।তিয়াসের মতো না আমি।”
“বিহান ভাই বললেন,গ্যারান্টি কি বিভোর?”
“তিয়াস ভাই বললেন,দেখলেন বিহান ভাই বিভোর ভাই আমাকে ফাঁসিয়ে দিচ্ছে।”
“তুমিও বিভোর কে ফাঁসিয়ে দাও।”
“বিভোর ভাই ফাঁস করলাম তাহলে?”
“বিহানের ফাঁদে পা দিস না ভাই।বিহান তোকেও ফাঁসাবে কায়দা করে টের ও পাবি নাহ।”
মেহু আপু বললো আপনারা কি ভাল হবেন না।সারাজীবন যে যাকে ইচ্ছা তাকে পচাতে থাকেন।আমার দিয়ার সাথে কথা আছে বলেই,
“মেহু আপু বললো,কি ব্যাপার দিয়া অন্য দিন হাঁটতে আসতে চাস না।আজ আমাদের না বলেই চলে এসছিস, কাহিনী কি দিয়া।”
“তোহা আপু বললো,কি ব্যাপার কি দিয়া হোয়াট ইজ কাহিনী।এইভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে হ্যাগো ওগো করছিস।”
“বিভোর ভাই বললেন,বিহান আমার বোন নিয়ে ঘুরতে এসছিস ট্যাক্স দে এইবার।সেকেন্ডে দশ টাকা।”
“বিহান ভাই বললেন,ট্যাক্স তুই আমাকে দে উলটা।তোর এই অলস বোন সারাদিন খেয়ে খেয়ে পেটে মেদ জমাচ্ছে আমি যে মর্নিং ওয়ার্কিং করাচ্ছি এইজন্য ট্যাক্স আমি পায়।গাইস আজ বিভোর তোমাদের ট্রিট দিবে।ওর হাতির মতো বোনের ওজন কমানো উপলক্ষে।”
“আপনি কি আমাকে হাতি বললেন।”
“না হাতি কে হাতি বলেছি।তুই কি হাতি।”
“বাজে কথা আর কত বলবেন শুনি।
নিজে হচ্ছে হাড় কিপ্টা অন্য একজন কে ট্রিট দিতে বলছে?”
“আমি কিপ্টা না অপেক্ষায় ছিলাম বিয়ের পর শ্বশুরের সম্পত্তি বেঁচে একটা মহিশ কিনে জবাই দিবো।”
“আপনার শ্বশুরের টাকায় খাওয়াবেন,ওকে ফাইন চলুন।এতদিন শুধু শুনেছি আপনার শ্বশুরের মেয়ের গুনগান।এবার তার গোয়ালের মহিশ ই খাওয়া যাক।আপনি যে কিপটা আপনার শ্বশুর ও নিশ্চয়ই আপনার ই মতোই কিপ্টা হবে।”
“ঠিক বলেছিস একদম ই তোর বাবার মতো কিপ্টা।কিপ্টা পাশাপাশি রাজাকার।খাঁটি শাসক খাঁন দের নাম রেখেছে।দেখতে হবে বাপটা কার।”
“বিভোর ভাই উনাকে নিষেধ করুণ আমার বাপ দাদা বংশ কিছু না তুলতে।তাহলে খারাপ হবে কিন্তু।উনার শ্বশুরের কথা হচ্ছে সেখানে আমার বাবাকে টানা হচ্ছে কেনো?”
“কারণ আমার শ্বশুর আর তোর বাবা মানুষ তো একই।”
“আমার বাবা আপনার শ্বশুর ছিলো কবে?”
“এই যে হবু শ্বশুর। সবাই আমাকে জোর করছে বিয়ে করার জন্য।ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক বিয়ে তো হবে।তাই আপাতত সেকেন্ড পক্ষের শ্বশুরের টাকায় মহিশ জবাই দিবো।”
“রিয়া বললো,ওরা ইচ্ছা করেই ঝগড়া করে টপিক্স চেঞ্জ করছে।এখন বল দিয়া এইভাবে প্রেম ট্রেম করতে আসবি আমাদের বলবি না।”
“আমি কোনো প্রেম ট্রেম করতে আসি নি।একটা কথা বলতে এসেছিলাম কিন্তু উনি বলতেই দিলেন না।”
-উনি দুই ভ্রু কুচকে বললেন,”আহারে বেচারী একটা কথা বলতে এসছিলো কিন্তু পারলোই না সো স্যাড।”
–কিভাবে পারবো আপনি তো বলার সুযোগ দেন নি।যতবার ই বলতে গিয়েছি কিছু না কিছু বলে আটকে দিয়েছেন।আমি বাড়ি চলে যাচ্ছি।
–মেহু আপু বললো,বাড়ি যাবি কেনো চল সকাল সকাল হেঁটে আসি।সকাল সকাল হাঁটলে শরীর মন ভাল থাকে।
–আমি যাবো না,তোমাদের সামনে আমাকে হাতি বলেছো কেউ কোনো প্রতিবাদ করো নি।উনাকে সরি বলতে বলো তা না হলে আমি যাবো না।
–উনি কপাল টান টান করে বললেন,হাতি বলেই তো হাঁটতে পারিস না।হেঁটে দেখা যদি আমরা যতদূর যাবো তুই ও যেতে পারিস তাহলে সরি বলে দিবো।
–প্রমিজ করেন?
–আচ্ছা বিভোর এর মাথা ছুয়ে বলছি।
–কেনো বিভোর ভাই কেনো পারলে আপনার সেই শ্বশুরের মেয়ের মাথা ছুয়ে বলুন।
–সে তো নেই, আর থাকলেও আমার সব থেকে দূর্বলতা সে।তার নামে কখনো কোনদিন কোনো কসম কাটবো না, নেভার এভার।
–কেনো?
–ধর,যাচ্ছি কয়েক পা যাওয়ার পর আমি মারা গেলাম।আমি তো আর প্রমিজ রক্ষা করতে পারলাম না।তাহলে তার কোনো ক্ষতি হলে কি হবে তখন।বেঁচে থাকি আর মরে যায় তার সেফটির গুরুত্ব সবার আগে আমার কাছে আন্ডারস্ট্যান্ড।
–উনার কথা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম,মনে মনে মারাত্মক জেলাস ও হলাম।একটা মানুষের ভালবাসা এতটাও গভীর হতে পারে।এত ভালবাসেন উনি সেই মেয়েকে।নিশ্চয় অনেক সুন্দরী হবে। হলে হোক তাতে আমার কি।
–বিভোর ভাই বললেন,বিহান তোর না দুইদিন পর বিয়ে এখনো এক্স গফের নাম জপে যাচ্ছিস ভুলে যা ভাই।এখন সব ই অতীত মনে কর।
–সাজ সকালে কুয়াশা ঘেরা আমার স্বপ্নের শহর নড়াইলে আড্ডা দিতে দিতে ছুটে চলেছি আমারা কাজিনসমূহ।কিন্তু সমস্যা আমি ওদের সাথে হেঁটে পারছি না।বিহান ভাই মাঝে মধ্য বলছেন দিয়া এমন কচ্ছোপ এর মতো হেঁটে আসলে কোনো সরি টরি কিচ্ছুই পাবি নাহ।আমি দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ অলস, এই হাঁটাহাটি একটুও ভাল লাগে না আমার।মাঝে মাঝে ছোট ছোট দৌড় দিয়ে ওদের ধরছি আমি।
–আমার মনে হচ্ছে এসব সরি ফরি আমার লাগবে না,এখন একটা অটো বা ভ্যান পেলে বাড়িতে চলে যেতাম।তোহা আপুকে ডেকে বললাম আপু একটা ভ্যান ডেকে দাও আমি বাড়ি যাবো।আমার কথা শুনে সবাই মাথায় হাত দিয়ে বললো দিয়া এই হলো তোর মর্ণিং ওয়ার্ক এর নমুনা।এই প্রথম বার দেখলাম কেউ হাঁটতে এসে ভ্যান বা অটো খোজে।
–আমার অত স্লিম হওয়ার দরকার নেই,আমার প্রাণ যায় যায় অবস্থা এক্ষুণি আমাকে বাড়ি যেতে হবে, হবে মানে হবেই।
–সামনে একটা চায়ের দোকান থেকে বিহান ভাই একটা চিপস এর প্যাকেট আমার হাতে এনে দিয়ে বললেন খা এটা অতঃপর আবার হাঁটবি তুই।
–মেহু আপু বললো,বিহান ভাই দিয়ার মাথায় এই না সেই টুপি আপনি ঢাকা থেকে এনেছিলেন।
–আমি বিহান ভাই এর দিকে আশ্চর্যজনক ভাবে তাকালাম মানে কি এই টুপি উনার এনে দেওয়া।মানে মামি আমাকে দিয়েছিলো তার মানে এটা উনার ই আনা।
–আমি টুপি খুলে উনার দিকে ছুড়ে মেরে বললাম যেটা বলতে চেয়েছিলাম সেটা বাড়ি গিয়ে ফোনে জানিয়ে দিবো আপনাকে।
–উনি বললেন সামনে আগাতে পারি এখন।মেহু চলো তো ও থাকুক এখানে।বলেই টুপিটা মাথায় পরিয়ে দিতে দিতে কানের কাছে ফিস ফিস করে বললেন,একদম খুলবি না দিয়া।এটা তোর বাপের টাকায় কেনা না বুঝলি।শ্বশুরের থেকে যৌতুক নিয়ে ও কেনা নয়।আমার উপার্জনের হালাল টাকায় কেনা।পাপ হবে না তোর বুঝলি।আর টুপিতে মানিয়েছে তোকে খুব দেখ পিক উঠিয়েছি।
অতঃপর আবার হাঁটতে শুরু করলাম আমরা।হঠাত একটা অটো দেখে খুশিতে অটো দাঁড় করিয়ে অটোতে করে আসলাম।মনে মনে ভাবছি কি হবে আমাকে দিয়ে।সামান্য একটু হাঁটতেও পারিনা।হাইরে আমার মর্ণিং ওয়ার্ক।