এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা – সিজন ২ | পর্ব – ৭

সময় টা শীতকাল,মাত্রই পাখি কিচির কিচির করে জানান দিচ্ছে ভোর হয়েছে দোর খোলো,কিন্তু বাইরে টা এখনো স্পষ্ট হয় নি।চারদিক আবছা অন্ধকার, উপরে আকাশ টা শুধু স্পষ্ট ক্লিয়ার বোঝা যাচ্ছে আর আকাশের নিচে গাছ পালা গুলোর মাঝে অন্ধকার বিরাজ করেছে,ক্ষয়ে যাওয়া চাঁদ টাও দিনের আলোর আগমনে বিলীন হয়েছে।চারদিকে হালকা কুয়াশা ও পড়েছে।আমি চটজলদী ব্রাশ করে নিয়ে, নামাজ পড়ে রেডি হতে শুরু করলাম।পায়ে কেমন শীত শীত লাগছে প্লাজু চেঞ্জ করে কালো কালারের জেগ্যান্স পরে নিলাম।কালো কালারের জন্য মনে হচ্ছে গ্যাবাডিং প্যান্ট।গায়ে লাল কালারের কামিজ।লং শীতের কোর্ট ও পরলাম,মাথায় যে টুইন টুপি গুলা আছে পরলাম।বারান্দায় জুতার র‍্যাক থেকে লাল কালারের জুতা টা পরে হাতে ফোন নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।আমার এত গুলা কাজ করতে করতে বাইরে টা ফর্সা হয়ে গিয়েছে।রাস্তার মোড়ে যেতে প্রায় পাঁচ মিনিট সময় লাগলো আমার।

সকাল সকাল উনাকে দেখে একটা হোচট খেলাম আমি।দূর থেকে কি সাংঘাতিক হ্যান্ডসাম টা’য় না লাগছে উনাকে।উনার পরণে কালো ট্রাউজার,গায়ে কালো কালারের হুডি পরা মানে টুপি ওয়ালা একটু মোটা গেঞ্জি টাইপ।মাথার পেছনে টুপি টা ঝুলছে,উনিও টুইন টুপি মাথায় দিয়েছেন শুধু চোখ দুটো দেখা যাচ্ছে উনার।কালো টুপির মাঝে উনার ফর্সা আবরণের চোখ,আর ফর্সা কপালে কালো ভ্রু যুগল অসম্ভব সুন্দর লাগছে।যে কোনো মেয়ে দেখলে নির্ঘাত হার্ট ফেইল করবে।হুডির সাম নে যে পকেটে তাতে উনার হাত গুজে রাখা,পায়ে কালো বুট জুতা।এসব ড্রস পরেই উনি রেগুলার হাঁটতে বেরোণ।হুডির সামনের পকেটে দুই হাত গুজে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বেশ অবাক হলাম আমি মনে মনে ভাবছি আজ স্টাইল চেঞ্জ করেছেন ক্যানো উনি,অন্য দিন তো প্যান্টের পকেটে হাত গোজা থাকে।উনি কি স্টাইলের পরিবর্তন ঘটাতে চান নাকি।ভাবনা থেকে বেরিয়ে উনার কাছে গেলাম।

‘আমি উনার সামনে গিয়ে তড়ি ঘড়ি করে বললাম,দেখুন যা বলার ক্লিয়ার রি বলে দিচ্ছি।সোজা সাপ্টা বলে দিচ্ছি।’

‘উনি ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে মুখ থেকে টুপি নামিয়ে হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললেন,তার আগে বল পাঁচ মিনিট দেরি করেছিস কেনো?’

‘উনার কথা শুনে আবার ও হোচট খেলাম।উনি কি কাল সারারাত ভেবে রেখেছেন আমার টাইমের একটু এলোমেলো হলেই উনি জেরা করবেন।আমি চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।মানুষের মাথায় এসব বুদ্ধি কিভাবে থাকে।এত কিছু একটা মানুষের মাথায় আসে কোথ থেকে।’

‘উনি ভ্রু কুচকে আবার ও বললেন,উত্তর দিস না কেনো?পাঁচ মিনিট লেট করলি কেনো?’

‘দেখুন পাঁচ মিনিট আবার কোনো সময় হলো নাকি।সময়ের এটুকু হের ফের তো হয় ই।এটা আবার কেউ ধরে নাকি।’

‘এখানে কেউ দাঁড়িয়ে নেই আমি আছি দিয়া।আমার সাথে অন্যদের গুলিয়ে ফেলার মতো ভুল যেনো সেকেন্ড টাইম আর না দেখি ড্যামেড।আমার কাছে এক সেকেন্ড সময়ের ও অনেক মূল্য।সময় কে আমি অবহেলা করি না।সময়ের সঠিক মূল্যায়ন না করলে পস্তাতে হয়।এইজন্য আমি যেটা সময় উপযোগী মনে করি যে কোনো উপায়ে সেটা সময় থাকতেই করি আন্ডারস্ট্যান্ড।’

‘আচ্ছা সরি! শুনুন যা বলতে এসেছি।’

‘উনি আমার দিকে বিরক্তি নিয়ে একবার তাকিয়ে হাঁটা শুরু করলেন।’

‘আমি অবাক হয়ে গেলাম আমার কথা না শুনেই হাঁটতে শুরু করলেন।উনি তো জানেন ই আমি কিছু বলতে এসছি তাহলে হাঁটা দিলেন কেনো?আমি উনার সাথে হেঁটে পারবো না সেটা আগেই জানতাম খানিক টা দৌড় মেরে গিয়ে উনাকে ধরলাম।উনার পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে বললাম,আপনাকে আমি বলেছিলাম আপনার সাথে কথা আছে আপনি না শুনেই হেঁটে যাচ্ছেন।’

‘উনি আবার ও দাঁড়িয়ে পড়লেন আমার দিকে চক্ষু নিক্ষেপ করে বললেন,তোর কথা শোনার জন্য কাল রাতে আমি পাঁচ মিনিট সময় রেখেছিলাম কিন্তু তুই সেটা নষ্ট করেছিস,আজ আর হবে না কাল আবার আসিস।তোর সময় আজ শেষ দিয়া।’

‘দেখুন আপনাকে কে বললো যে আমি পাঁচ মিনিটে কথা শেষ করবো। আমার অনেক সময় লাগবে।কিন্তু আপনি একটু আস্তে হাঁটুন তাহলে হাঁটতে বলতে পারি।’

‘উনি মুখে কিছু না বলে,আস্তে আস্তে হাঁটতে হাঁটতে বললেন,আচ্ছা এবার বল তোর কি গুরুত্বপূর্ণ কথা। ‘

‘তাহলে শুনুন আমি কাট কাট বলে দিচ্ছি, আমি আপনাকে এটুকু বলতেই উনি আবার বলে উঠলেন,’

‘তুই তো সাংঘাতিক রকমের বেয়াদব মহিলা দিয়া।চরম লেভেলের বেয়াদব। শুনেছি তোর দাদী তোর দাদা কে একটুও সম্মান করতো না।সাংসারের মহিলা মাতব্বর ছিলেন।মহিলারা কেনো স্বামির উপর মাতব্বরি করবে।তোর দাদাকে কেনো সম্মান করবে না বল তো।দাদীর এই গুন টা কি তোকে দিয়ে গিয়েছে।?’

আমার মাথার উপর দিয়ে গেলো উনার সব কথা।এখন উনি ঘুরিয়ে পেচিয়ে আমাকেই বিরক্তিকর কথা বলবেন।

আমি একটু রুড ভাবেই বললাম,’তা সব পুরুষ কি আপনার মতো অত্যাচারী হবে।’

‘আমি কি আসলেই অত্যাচারী। ছোট বেলা থেকে তো তুই আমাকে অত্যাচার করছিস।তোর জন্য বার বার নিজের বিরুদ্ধে যেতে হয়েছে আমাকে।মন আমার অথচ আমার কথা শোনে না ভাবা যায় কি সাংঘাতিক ধুরন্ধর মহিলা তুই।’

‘এখন কি আপনার মনের সমস্যার জন্য আমাকেও দায়ী করবেন।আমার দাদী কে আর দাদা কে নিয়ে পড়লেন কেনো সাজ সকাল?তারা আপনার কি করেছে।আর আমি বা বেয়াদব এর কি করলাম।’

‘বেয়াদব না হলে সকালে ভোরে যে একজন সিনিয়র এর সাথে তোর দেখা হলো কোন আদবের কাজ টা করেছিস।একটা সালাম তো দিবি কিছু না হলেও।কোন ভদ্রতা পালন করেছিস তুই।’

উনার এইসব উদ্ভট কথার চোটে আসল কথা টা ই তো বলা হলো না।যা বলার জন্য এসেছি চান্স ই পাচ্ছি না।

‘উনি আমার মাথায় একটা চাটি মেরে বললেন,সালাম দে আগে,না হলে তোর কোনো কথা শুনবো না।’

‘মুখ কাজুবাজু করে বললাম,আসসালামু আলাইকুম বিহান ভাই। ‘

‘উনি বিনয়ের সাথে উত্তর দিলেন ওয়ালাইকুম আসসালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহ ওবারাকাতুহু।’

‘আবার ও বললাম এর সাথে দাদীর দাদা কে অস্মমান করার কি সম্পর্ক ছিলো?’

‘উনি থেমে গিয়ে বললেন,জানতে চাস তুই?সিরিয়াসলি।’

“হ্যাঁ বলুন।”

” তোর দাদা তোর দাদীর স্বামী ছিলেন,অথচ নিজের স্বামি কে কখনো সালাম ই দিতো না।এটা কি অসম্মান নয়।তুই ও তোর দাদীর মতো হয়েছিস।”

‘মনে হচ্ছে আমি আমার স্বামি কে সালাম দিবো না।’

‘কই দিচ্ছিস না তো।দিলে তো আর আমি বলতাম না।’

‘আপনি কিভাবে বুঝলেন।সময় হলে সালাম দিবো তখন আপনাকে ডেকে দেখাবো।’

‘উনি একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন,
বোঝেনা সে বোঝেনা।’

‘কি বুঝিনা?সন্দিহান ভাবে জিজ্ঞেস করলাম।’

‘তোকে কোথায় আবার বোঝার কথা বললাম,আমি গান গাইলাম। ‘

‘এবার তাহলে শুনুন, আমি ক্লিয়ার লি একটা কথা বলে দিচ্ছি আমি আপনাকে..’

‘সকালে নামাজ পড়েছিস দিয়া।নামাজ আর পড়বি কি সারারাত ছেলেদের সাথে চ্যাটিং করে ঘুমোবি হলো সকালে তাহলে ফজরে উঠবি কিভাবে।’

‘আমি নামাজ পড়েছি, না জেনে আন্দাজে কথা বলেন কেনো?’

‘রেগে যাচ্ছিস কেনো?সিওর পড়েছিস।’

‘বললাম তো পড়েছি!’

‘একটা সূরা বল তো যেটা তুই ভাল পারিস।জানি সূরা ইখলাস ছড়া কোন টায় পারবি না।’

‘শুনুন আপনার এসব অসহ্য কথা শুনতে চাই না আমি।আমি আমার কথা টা বলেই চলে যাচ্ছি।আমি আপনাকে,,’

‘রাতে কি মেকাপ করে ঘুমোস তুই।না মানে স্বপ্নে কি কারো সাথে দেখা করতে যাস।’

‘কোথায় মেকাপ একটু বলবেন।?’

‘উনি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন মনে হচ্ছে কাজল পরেছিস।মুখে সাদা সাদা কি মেখেছিস।ফুপ্পির ময়দা কি সব মুখে মেখে সকালে নড়াইল শহর কে আতঙ্কে ফেলতে বেরিয়েছিস।’

‘এটা সকালেই পরেছি।এখানে মেকাপ কোথায় অসহ্য।আমি জাস্ট ক্রিম দিয়েছি মুখে।আটা মাখবো কেনো?নড়াইল শহরের মানুষ ভয় পাবে কেনো?’

‘আমি তাই ভয় পেয়েছি,অন্য মানুষ পাবে না।আমি ভেবেছি একজন পেত্নি এসেছে রাস্তায়।পরে পর্যবেক্ষণ করে দেখলাম তুই।একটা সূরা পড়ে ফু দিয়ে দে ভয় যা পেয়েছি তা দূর হয়ে যক।’

‘শুনুন আমার কিন্তু প্রচন্ড রাগ হচ্ছে।’

‘রাগ তো আমার হবার কথা।কারণ তুই ডিরেক্ট আমাকে কপি করেছিস।’

‘কোথায় আপনাকে কপি করেছি আমি।’

‘এইযে জিন্স পরেছিস,আমার মতো টুপি পরেছিস,খেয়াল করে দেখ দুজনের ই সেইম টুপি। ‘

‘আমি তাকিয়ে দেখি আসলেই সেইম টুপি,সেইম কালার টুপির।’

‘আমার টা দেখে তুই কিনেছিস তাইনা?কেনো অন্য কালার পাস নি।’

‘এটা মামি দিয়েছে আমাকে।’

‘ওহ আচ্ছা!তাহলে আমার আম্মু দিয়েছে তোকে।দিবে না কেনো এই টুপির জন্য না খেয়ে ছিলি সাত দিন।’

‘আপনার কি তাতে কোনো সমস্যা।’

‘হ্যাঁ সমস্যা জিন্স এর দাম বাড়িয়ে দিচ্ছিস তোরা মেয়েরাই, এইজন্য বলি মেয়ে মানুষ মানেই সমস্যা।’

‘এবার আমি চেচিয়ে বললাম,আমার কথা কি শুনবেন,কিছু বলতে চাই আপনাকে।আপনি আমাকে বলতেই দিচ্ছেন না।বার বার কথার মাঝে ডিস্টার্ব করছেন।’

‘উনি কানে হাত দিয়ে বললেন,উফফ ঝগরুটে মহিলা একটা।বল কি বলবি।?’

‘শুনুন বিহান ভাই আমি সাফ সাফ বলে দিচ্ছি আমি আপনাকে,,’

ওয়েট দিয়া তোকে বলতে হবে না।আমি তোকে হেল্প করছি।উনি পকেট থেকে ফোন বের করে ফোনের পাসওয়ার্ড খুললেন,ডি লাভ ডি।ওএমজি উনার সেই শ্বশুরের মেয়ের নাম ও ডি দিয়ে বাহ।এত প্রেম উনার।ঢং দেখে আর বাঁচি না।

‘উনি একটা ফোল্ডারে গিয়ে একটা অডিও আমার কাছের কাছে প্লে করে বললেন,এটাই বলতে চাস তো তাইনা?’

আমি অবাক হয়ে গেলাম,আমি এটার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।উনি কি আসলেই অদ্ভুত কোনো মানুষ।

সেই যে কিশোরী বয়সে কান ধরে বলেছিলাম আই লাভ ইউ বিহান ভাই সেটাই রেকর্ড করে রেখেছিলেন।আর এখন সেটাই প্লে করে দিয়েছেন।

নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে উনি নিঃশব্দে হেসে যাচ্ছেন।উনার এই হাসিতে মারাত্মক গা জ্বলছে আমার।কিছু বলতে যাবো তখন ই উনি পেছনে ইশারা দিয়ে দেখালেন।আমি তাকিয়ে দেখি রিয়া-বিভোর ভাই,মেহু আপু,তোহা আপু,তিয়াস ভাই আসছেন।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।