ঘড়িতে রাত বারোটা বাজে। সবাই যার যার রুমে গিয়ে সুয়ে পড়েছে।সারাদিন হই হুল্লোড় করে ক্লান্ত সবাই।আমি মাত্রই রুমে এসে বিছানায় বসলাম।কিন্তু দুঃচিন্তা জেকে বসেছে মাথায়।কি চাইবেন উনি!উনি যখন এমন ঘটা করে বলেছেন চাইবেন তার মানে ভেবে চিন্তে এমন কিছু বলবেন যা আমার কল্পনার বাইরে।কি করা যায়।উনাকে যেকোনো ভাবে আটকে দিতেই হবে।কি করা যায়।কোনো না কোনো ভাবে তো আটকাতেই হবে।একমাত্র কারণ হলো উনাকে রাগিয়ে দেওয়া।আজ যেভাবেই হোক উনাকে ভীষণভাবে রাগিয়ে দিতে হবে।এমন ভাবে রাগিয়ে দিতে হবে উনি রেগে আমার সাথে কথা বলাই অফ করে দিবেন।কিতনি ট্যালেন্ট মে।দ্যা গ্রেট বিহানের বউ এর ব্রেইন ও কম গ্রেইট না।বাট কি করা যায়।ছোট বেলায় উনাকে কপি করলে ভীষণ রেগে যেতেন।উনি যেটা করেন ভ্যাঙানোর জন্য সেটা হুবহু কপি করলে রেগে ভাঙাচুরা শুরু করতেন।কথা বলাও অফ করে দিতেন।আজ ও তাই করবো।এমন ভাবে ভ্যাঙাবো না রেগে দেখা গেলো বাড়িই চলে গেলেন।
–কিছুক্ষণের মাঝেই ঘরের মাঝে প্রবেশ করলেন বিহান।রুমে প্রবেশ করেই দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন আমার দিকে।তারপর নিজের হাতের ঘড়ি খুলতে শুরু করলেন।আমিও সেইম ভাবে নিজের হাতের চুড়ি খুলতে শুরু করলাম।উনি ঘড়ি খুলে ড্রসিন টেবিলের উপর রাখলেন আমিও সেইম ভাবে ড্রেসিন টেবিলের উপর চুড়ি রাখলাম।প্রথমত উনি বিষয় টা খেয়াল করেন নি।
এরপর বিছানায় বসে বললেন, উফফ কি গরম আজ।আমিও বিছানায় বসে বললাম,উফফ কি গরম আজ।উনি এবার ও খেয়াল করেন নি বিষয় টা।এইবার যখন বললেন,দিয়া আজ গরমের তাপমাত্রা খুব বেশী তাইনা?আমিও বললাম,দিয়া আজ গরমের তাপমাত্রা খুব বেশী তাইনা?আমার মুখে উনার মুখের কথা শুনে উনি ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকালেন।আমিও ভ্রু কুচকে উনার দিকেই তাকালাম।উনি এবার কপালের চামড়া কুচকে কিছু একটা ভাবছেন।আমিও কপালের চামড়া কুচকালাম।উনি এবার বুঝতে পারলেন আমি উনাকে নকল করছি।এবার উনি বললেন,কি সমস্যা?আমিও বললাম,কি সমস্যা?উনি আবার বললেন,আমাকে কপি করা হচ্ছে মতলব কী?আমিও বললাম,আমাকে কপি করা হচ্ছে মতলব কী?উনি এবার উঠে দাঁড়ালেন।আমিও উঠে দাঁড়ালাম।এবার উনি বললেন,হাউ ডেয়ার ইউ।আমিও বললাম,হাউ ডেয়ার ইউ।উনি এবার চোয়াল শক্ত করে বললেন,আই সি এই ব্যাপার।আমাকে কপি করে চালিয়ে যেতে পারবে তো!আমিও চোয়াল শক্ত করে বললাম,আই সি এই ব্যাপার।আমাকে কপি করে চালিয়ে যেতে পারবে তো!উনি এবার মাথার চুল হাত চালাতে চালাতে বললেন,গেম খেলতে ভালোই মজা পাও তাইনা?ইন্টারেস্টিং গেমটা আমার পছন্দ হয়েছে।থ্যাংক ইউ সো মাস ইনভাইটিং মি দ্যা ইন্টারেস্টিং গেইম।আমি বেশ অবাক হলাম উনি কি বলতে চাইছেন কি।রাগ টাগ কিচ্ছুই তো নেই।
–উনি এবার শার্টের বোতাম খুলতে শুরু করলেন।শার্টের সব গুলো বোতাম খুলে গায়ের সম্পূর্ণ শার্ট খুলে বিছানার উপর ফেলে দিলেন।অতঃপর গায়ের গেঞ্জি টাও খুলে বিছানায় ফেললেন।আমি বোকা বনে গেলাম নিমিষেই।উনি প্যান্টের পকেটে হাত গুজে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,নাউ ইওর টার্ন মিসেস বিহান খুলো।ফার্স্ট খুলো।আমার চোখে বোকা বোকা ভাব,কি করবো বুঝতে পারছিনা।উনি দুই এক পা করে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন।ভ্রু নাচিয়ে নাচিয়ে বললেন,কি হলো খুলো? সমস্যা হচ্ছে কি খুলতে।তুমি না পারলে বলো আমি তোমাকে হেল্প করছি, আমার কোনো সমস্যা নেই খুলতে।এমন ইন্টারেস্টিং গেম খেলতে বিহান খুব পছন্দ করে পিচ্চি।
“আমি তো তো করে বললাম,আ,,আমার কি শার্ট পরা আছে নাকি যে খুলবো।”
“ওহ রিয়েলি!শার্ট নেই।যা আছে তাই খুললেই হবে।”
“ইম্পসিবল,আমি এসব পারবো না।”
“না পারলে হবে কিভাবে?গেম এর মাঝ পথে চলে যাবে তাতো হবেনা। কম্পিলিট করো গেম।”
“দেখুন আমি পারবো না। আপনি তো ভারী অসভ্য।”
“অসভ্যতা তো এখনো শুরুই করিনি।বউ এর সাথে আবার কিসের অসভ্যতা।যেটাই করবো জায়েজ।তুমি আমার লিগ্যাল ওয়াইফ ভুলে গিয়েছো।”
–আমি কি করবো ভেবে না পেয়ে দ্রুত রুমের লাইট অফ করে দিলাম।
–উনি একটু কঠিন গলাতেই বললেন,লাইট অফ করলে কেনো?
–ঘুমোবেন না।লাইট অন রাখলে কি ঘুমোতে পারবেন।
–ঘুমোবো কে বললো?..
–এটাও কি বলা লাগে।রাতে তো মানুষ ঘুমোয়, ঘটা করে বলার কি আছে।
–রাতে ঘুম বাদেও মানুষ অনেক কিছুই করে।
–কি করে।
–উনি বেশ বিরক্ত কন্ঠে বললেন,আগে লাইট অন করো যাও।
–কেনো কি করবেন?
–ব্যাগ থেকে আমার ট্রাউজার,আর গেঞ্জি বের করো শাওয়ার নিবো।
–এখন।
–তুমি জানোনা,আমি রেগুলার রাতে আর ঘুম থেকে উঠে গোসল করি।
তোমার এই কাজিন এর দল এর অত্যাচারে
মাথা ঝাঁঝা করছে।অত্যাচারে গরম আরো বেশী লাগছে।ঘেমে কি অবস্থা। এই ঘামে ভেজা শরীরে আমার জীবনেও ঘুম হবেনা।আমি ফ্রেশ না হয়ে ঘুমোতে পারি নাহ।ট্রাউজার দাও কুইক।
–লাইট টা অন করে ব্যাগ থেকে ট্রাউজার আর গেঞ্জি বের করে দিলাম উনার হাতে।উনি বিছানা থেকে শার্ট আর গেঞ্জি নিয়ে ওয়াশ রুমে প্রবেশ করলেন।ভেতরে পানি পড়ার শব্দ হচ্ছে টুপ টাপ করে।
কিছুক্ষণ পরে ডাকলেন,
“দিয়া”
আমি দরজার কাছে গিয়ে বললাম,
“কিছু চাইছেন।”
“টাওয়াল টা দাও।”
ব্যাগ থেকে টাওয়াল টা নিয়ে উনার দিকে এগিয়ে দিতেই উনি, এক টানে ভেতরে নিয়ে গেলেন।সাথে সাথে কল ছেড়ে দিলেন।ঝরনার পানি ঝিরঝির করে আমার গায়ে পড়তে শুরু করলো।হঠাত গায়ে পানি পড়াতে শিউরে উঠলাম আমি।উনার সমস্ত শরীরে সাবানের সাদা ফেনা।পরণে টাওয়াল।চুল ভিজে কপালে বেয়ে পড়েছে।উনি আমার দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ নয়নে হাসছেন।আমি বেশ খানিক টা ভিজে গেলাম।উনার দিকে একবার তাকিয়ে দেখলাম হাসলে কতটা সুন্দর লাগে উনাকে।এই সাওয়ার নেওয়া সাদা ফেনার শরীরে বেশ অন্যরকম লাগছে উনাকে দেখতে।
–উনাকে বললাম,কি করছেন ছাড়ুন আমি ভিজে গেলাম।
–ভিজতেই তো নিয়ে এসছি।
–আমি গোসল করবো না, ছাড়ুন আমায়।
–উনি হাসছেন,আমার হাত আলতো স্পর্শ করে ধরে বললেন,মনে আছে কিছু চাইবো বলেছিলাম।
এই বন্ধ ওয়াশরুমে, মধ্যরাতে কি চাওয়ার কথা বলছেন উনি।
–আমি বললাম,কি চাইবেন বলুন।
–আমাকে আস্তে করে ওয়ালের সাথে চেপে ধরলেন।গায়ের সাদা ফেনা নিয়ে আমার গালে লাগিয়ে দিলেন।আমি চোখ বন্ধ করে আছি। উনি আমার দিকে ঝুঁকে বললেন,এক হাজার চুমু চাই বউ।
–আমি সাথে সাথে চোখ খুলে তাকালাম,আমায় বউ ডাকলেন উনি।উনার মুখে বউ ডাক শুনে কী ভীষণ লজ্জা পেলাম।এই ঝরণার পানিতে ডুবে যেতে ইচ্ছা করছে।এক্ষণি ফ্লোর ফেটে ফাঁকা হয়ে যাক আর আমি ঢুকে পড়ি।লজ্জায় একটুও তাকাতে পারছি না।বার বার কানে বাজছে বউ কথাটা।শেষ মেষ বউ বলেও ডাকলেন আমায়।
–উনি আবার ও কানের সাথে ঠোঁট মিশিয়ে বললেন,এত লজ্জা পাচ্ছো কেনো?কথা দিয়েছিলে, এখন কথা রাখার পালা।
আমি কোনদিন উনাকে চুমু দেই নি।এইভাবে হুট করে কিভাবে দিবো।তাও আবার একহাজার চুমু।এইভাবে বলে কয়ে তো আরো লজ্জা লাগবে।কাউকে কি বলে কয়ে জীবনের প্রথম চুমু দেওয়া যায়।
–উনি বললেন,কি হলো দাও বলেই আমার গালে চুমু দিলেন।শিউরে উঠলাম আমি।
–দেখুন,অন্য কিছু বলুন।আমি এটা পারবো না।
–তোমাকে যে এটাই পারতে হবে।
–আমি এখন কিছুতেই পারবো না।
–কি সমস্যা বলো।
–আমার লজ্জা লাগছে।
–লজ্জামিশ্রিত চুমুর লোভ সামলাতে পারছি না।কুইক শ্যামাপাখি।
–লজ্জায় নুইয়ে যাচ্ছি আমি,ঝরণার পানি পড়ে ভিজে একাকার হয়ে গেছি,উনার সামনে ভেজা শরীরে আরো লজ্জা পাচ্ছি।এটাই হওয়ার ছিলো বুঝি আজ।উনি নাছড়বান্দা কিছুতেই ছাড়বেন না।
এভাবে কেটে গেলো আধাঘন্টা।উনি রিকুয়েষ্ট করেই যাচ্ছেন কিন্তু আমি লজ্জায় এটা কোনভাবেই পারছিনা।
–আমাকে চুপ থাকতে দেখে বললেন,আমার শর্ত মেনে না নিলে কিন্তু আমি কাল সবার সামনে তোমাকে চুমু দিবো।বুঝেছি দিবে না তাইতো?ওকে ফাইন।আগামিকাল,আবির,মেহু,বিভোর,রিয়া,তিয়াস,তোহা সবার সামনে লিপ কিস করবো আমি মাইন্ড ইট।
–উনার কি মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে।কি বলছেন এসব।উনার দ্বারা অসম্ভব তো কিছুই নয়।কি হবে আমার কাল।উনি গোসল শেষ করে আমাকে ওয়াশরুমে বন্দি রেখে রুমে গিয়ে চেঞ্জ করে নিলেন।আমাকে বললেন,চেঞ্জ করে নাও।আজ আর চিন্তা করার প্রয়োজন নেই যা হবার তা আগামিকাল ই হবে।
চেঞ্জ করে ওয়াশ রুম থেকে বের হলাম।উনি আমার দিকে তোয়ালে ছুড়ে মেরে বললেন এটা মাথাও পেচিয়ে নাও।
উনাকে বললাম,
“রিয়ার কাছ থেকে হেয়ারড্রায়ার নিয়ে আসি।আমার টা তো ও বাড়িতে।”
দরজার দিকে পা বাড়াতেই,
“উনি আমার হাত টেনে ধরে বললেন,মাথা ঠিক আছে তো তোমার দিয়া?”
“কেনো?”
“এখন যাবে হেয়ার ড্রায়ার আনতে।রিয়ার পাশে মেহু সুয়ে আছে।ওরা দুজনে কি ভাববে এই মধ্যরাতে তুমি গোসল করেছো।”
“সত্যি তো করেছি ভাববার কি আছে?”
“বাট ওরা কি ভাববে, ওরা ভাববে অন্য কিছু।এখন আর হেয়ার ড্রায়ার এর দরকার নেই তোয়ালে পেচিয়ে নাও।”
“সত্যি তো এটা তো ভেবে দেখনি।ওরা তো হাবিজাবি ভাবতে পারে।তোয়ালে মাথায় পেচিয়ে নিলাম।”
“ড্রেসিন টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে ভেবেই যাচ্ছি কি করবো এখন।
এমন সময় উনি আমার জামার ফিতা বেঁধে দিলেন।পেছনে জামার ফিতা বাঁধতে ভুলেই গেছি।উনি তোয়ালে দিয়ে ভাল ভাবে মাথা মুছে দিতে দিতে বললেন,পিচ্চি কি আর এমনি বলি চুলগুলো ও সামলাতে পারো না।আমায় সামলাবে কিভাবে শুনি।”
“আপনি কি ছোট মানুষ যে আপনাকে সামলাবো।আপনি বরং আমায় সামলাবেন।”
“তাইতো সামলাচ্ছি।”
“ড্রেসিন টেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছি,উনি আমার পেছনে দাঁড়িয়ে আছেন।সুন্দর ভাবে চুল মুছে আঁচড়ে দিচ্ছেন।ভালবাসার এই দৃশ্য ছবির থেকেও সুন্দর। আমার কাধে থুতনি রেখে কোমর জড়িয়ে ধরে বললেন,এখনো সময় আছে ভেবে দেখো কিন্তু।নাহলে কাল আমার দোষ দিতে পারবে না কিন্তু।”
লজ্জারাঙা চোখে আয়নার মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ টাকে দেখছি।ঠোঁটের মাঝে কিঞ্চিত ফাঁকা।উনিও আমায় দেখছেন।মানুষ টার চোখে মুখে অন্য রকম চাহনি।অন্য রকম অনুভূতি দেখা যাচ্ছে যা আগে দেখিনি।নেশাক্ত কোনো চাহনি ঘ্রাস করেছে উনার মাঝে।ঘাড়ের ভেজা চুল সরিয়ে আলতো ভাবে ওষ্ট ছুইয়ে দিলেন।আস্তে করে বললেন,দেরি করছো কেনো?
–কিভাবে এমন লজ্জার কাজ করবো আমি।হাত পা সমস্ত শরীর যেনো ক্রমশ হয়ে আসছে উনার স্পর্শে। উনার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে উনার দুই চোখ অফ করে দিয়ে উনার কপালে ওষ্ট ছুইয়ে যেনো পৃথিবীর সব কিছু লন্ডভন্ড শুরু হলো আমার।জীবনে প্রথম করা চুমুর অনুভূতি অনুভব করলাম আমি।উনি আস্তে করে চোখ খুললেন।উনার চোখে ভালবাসার ক্ষুদা,না বললেও বুঝতে পারলাম আমি।একটা চুমু দিয়েই কোথায় হারিয়ে গেলাম জানিনা,এক হাজার দিতে গেলে শরীরের রক্ত চলাচল হয়তো এইবার বন্ধ হয়েই যাবে।উনি আমাকে টেনে নিয়ে খানিক টা উনার কাছে নিলেন।ক্রমশ এগিয়ে আসছেন ওষ্টদ্বয় নিয়ে আমার দিকে,নিথর হয়ে রইলাম আমি। সম্পূর্ণ কাছে আসতেই ভালবাসার পরম অনুভূতিতে নিমিষেই চোখ অফ হয়ে গেলো আমার।গালে মুখে ছড়িয়ে দিলেন ওষ্টের ছোয়া।অজানা এক ভাললাগার শিহরণ শরীরের রন্ধে রন্ধে ছড়িয়ে গেলো।ভালবাসআ খেলা করছে তুফানের মতো।শরীরের সমস্ত ভার ছেড়ে দিলাম উনার উপর।উনার প্রতিটা ভালবাসাময় স্পর্শতে কেঁপে উঠছি আমি।ভালবাসার পরশ শরীর, মন উভয়ে ছড়িয়ে পড়লো নতুন অনুভূতিতে।মধুচন্দ্রিমাময় রাতে শুরু হলো ছন্দে,অনন্দে ভালবাসার নতুন সুর।