“দিয়া নানু কি বললো?আর ইউ প্রেগন্যান্ট সিওর!”
পুরুষালী কন্ঠে কথাটা শুনে চমকে উঠে পেছনে ঘুরে তাকালাম।বিহান ভাই দুই ভ্রু উঁচিয়ে ভাবুক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।
বেলকনিতে টি -টেবিলে ল্যাপটপ রেখে টুলে বসে বিহান ভাই ল্যাপটপে কিছু করছেন।বেলকনিতে আমার কাপড় নেড়ে দেওয়া ছিলো তুলতে গিয়ে দেখি উনি বসে আছেন।আমার আগমন হতেই উনি এমন একটা কথা বলে উঠলেন।এই মানুষ টার কি আমাকে দেখে কিছু বলতেই হবে।জানে৷ আমি লজ্জা পাবো তবুও ইচ্ছা করেই বলতে হলো উনাকে।
‘উনার কথার জাল থেকে বাঁচতে বললাম,প্রেগন্যান্ট আবার কি বিহান ভাই আমি তো জানিনা।চোখে মুখে কিছুই না জানা না বোঝার ভান আমার।’
‘উনি ল্যাপটপ এ মনোযোগ দিয়ে কিছু করছিলেন।দুই হাত দিয়েই ল্যাপটপ এর কিবোর্ড চাপছিলেন।ভীষণ ব্যাস্তভাবে এন্টার বাটনে খুব জোরে চেপে বলে উঠলেন,ওহ শীট!বলেই কপালে হাত দিলেন।’
আমি মনে করেছি আমার কথার উত্তর দিয়েছেন বিরক্ত আমার উপর হয়েছেন।আমি দ্রুত জায়গা পরিবর্তন এর চেষ্টা করতেই উনি আমার হাত টেনে ধরে ধরলেন পেছন থেকে।চমকে উঠলাম আমি,উনার স্পর্শ শরীর শিউরে উঠলো।শরীরের পশম দাঁড়িয়ে গেলো,বুকে ধুকপুক শুরু হলো।
‘আমি পেছনে না তাকিয়েই বললাম,ছাড়ুন প্লিজ।চোখে মুখে ভীষণ লজ্জা আমার।’
উনিও বুঝতে পারলেন আমি লজ্জা পাচ্ছি।
‘উনি ল্যাপটপের সাটার অফ করে বললেন,কেনো ছাড়বো?’
‘ধরেছেন ই বা কেনো শুনি?’
‘তুমি প্রেগন্যান্ট মানে বুঝো না।ইজ ইট রাইট মিসেস বিহান।’
‘ডোন্ট কেয়ার ভাবে বললাম না এটা আবার কি?’
‘কন্ঠে বেশ মাধুর্য এনেই বললেন,ইন্টারেস্টিং! ভেরি ইন্টারেস্টিং।’
একটা মানুষের মুখের প্রতিটা স্পিলিং এতটা ইমপ্রেসিং কিভাবে হতে পারে বুঝিনা।কথা বলার এটিটিউড ধরণ সব কিছুই আলাদা।নাকি আমার কাছেই উনার সব কিছু এমন স্পেশাল লাগে।
‘লাজুকতা সম্পূর্ণ রুপ চোখে মুখে আমার।মিহি কন্ঠে বললাম,কিসের ইন্টারেস্টিং।’
‘উনি হাত জোরে টান দিলেন আমি নিমিষেই উনার কাছে আটকে গেলাম।উনার এক টানে মাথা গিয়ে উনার বুকে বিধলো।উনি কোমর জড়িয়ে ধরে সম্পূর্ণ উনার কাছে টেনে নিয়ে বললেন,বউ প্রেগন্যান্ট মানে বোঝে না।বিহানের বউ এতটা অবুঝ থাকবে আর বিহান সেটা কিভাবে মেনে নিবে।এখন বুঝাবো প্রেগন্যান্ট মানে কি?জায়গা জায়গা এমন অবুঝ হলে লাভ টা আমার ই পিচ্চি।আমি সারপ্রাইজড হয়ে যায়, ভীষণ সারপ্রাইজড।এমন অবুঝতার ভান দেখলে বোঝাতে বড্ড ভাল লাগে।’
‘কি করতে চাইছেন কি আপনি?’
ঠোঁট ভরা দুষ্টু হাসি উনার।চোখে মুখে দুষ্টুমির ছড়াছড়ি।মতলব যে খুব একটা ভাল লাগছে না সেটা বোঝাই যাচ্ছে।এখন যে কেউ এদিকে চলে আসতে পারে আর উনি ধরেই রেখেছেন আমাকে।এত বড় ফাজিল কেউ দেখবে বলে বেলকনিতে মেলে দেওয়া কাপড় দিয়ে আড়াল করলেন আমাদের দুজনকে।অপলক দৃষ্টিহীন মায়াবী চোখে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।
হাত পা ক্রমশ ভারী হয়ে আসছে আমার।
‘নার্ভাস কন্ঠে বললাম,কি করতে চাইছেন? ‘
‘উনি আমার রাবার লাগানো চুল খুলে দিলেন।সাথে সাথে চুল ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়লো চোখে মুখে।উনি ফু দিয়ে আমার মুখ থেকে চুল সরিয়ে দিতে দিতে বললেন,যতবার আমার সামনে আসবে খোলা চুলে আসবে।খোলা চুলে তোমাকে কেমন লাগে জানো শ্যামাপাখি।’
শ্যামাপাখি উনার মুখে শুনে ভেতর কেঁপে উঠলো আনন্দে।শরীরের রন্ধে রন্ধে ছড়িয়ে পড়লো আনন্দের ঢেউ।কেননা উনি হাজার বার প্রেমের কবিতা লিখেছেন উনার শ্যামাপাখির নামে।আর আমাকে দিয়ে সে কবিতা পড়িয়ে বলতেন দেখতো দিয়া বানান ভুল আছে কিনা।আমি রেগে রেগে বলতাম পারবো না আপনার প্রেমকাব্যর রিভাইজ দিতে।উনি বাকা হেসে বলতেন জেলাস ফিল হয় নাকি দিয়া।আমি আরো রেগে বলতাম খেয়ে কাজ নেই আমার তাইনা?হাজার হাজার চিরকুট পড়াতেন আমাকে দিয়ে।আর আমি জানতে চাইতাম কে আপনার শ্যামাপাখি বিহান ভাই।উনি ভ্রু কুচকে বলতেন, শ্বশুরের মেয়েই শ্যামাপাখি।আমি তখন আরো রেগে যেতাম আমাকে কি চোখে যায় না।নাকি আমি অনেক সুন্দরী না বলে শ্যামাপাখি হতে পারবোনা।খুব হিংসা হতো আমার।এত সুন্দর চিরকুট উনি কিনা শ্যামাপাখির জন্য লিখেন।
‘একদিন মজা করে বলেছিলাম আপনার শ্যামাপাখি কি আমার চেয়ে কালো বিহান ভাই যে শ্যামাপাখি বলে ডাকেন।নিশ্চয়ই পেত্নী দেখতে। এই আপনার চয়েজ।
‘উনি হেসে বললেন,শ্যাম বর্ণের মেয়েরা হলো মায়াবতী দিয়া।’
‘কালো মেয়ের সাথে প্রেম করে এখন নিজের মন কে শন্তনা দিচ্ছেন মায়াবতী বলে।’
‘বাহ বুদ্ধিমতী মহিলা।তোর ব্রেইন তো ট্যালেন্ট এর ম্যাগনেট।’
‘আমাকে সারাজীবন আজেবাজে অনেক কথা বলেছেন আর এখন কিনা আমার থেকে কালো মেয়ে দেখে প্রেম করছেন।আবার তাকে ইমপ্রেস করতে কত কি করেন?আমাকে বাজে কথা বলেন এইজন্য কপালে কালো জুটেছে বুঝেছেন।’
‘আমার বউ কালো আমার সমস্যা নেই তোর এত সমস্যা কেনো ক্ষেপী।চিঠি পড় মন দিয়ে,পরে ঝগড়া করিস।’
‘ঝগড়া তো করবোই।আর মামিকে বলবো তোমার ছেলে ইয়া কালো মোটা মহিলার সাথে প্রেম করছে জানেন মামি।’
‘অনেক উপকার হবে দিয়া।প্লিজ হেল্প মি।’
‘সত্যি কি আমার থেকে কালো বিহান ভাই।’
‘উনি এক গোছা চুল টেনে ধরে বলেছিলেন,তুই তো পেত্নী আর শ্যামাপাখি তো শ্যামাপাখি ই আমার মনের রাজ্য।ও কালো নাকি ফরসা আজ ও ওসব ভাবিনি।আমি ওকে নিয়ে কিছুই ভাবি না জাস্ট ভাবতেও পারিনা।নেক্সট কখনো শ্যামাপাখিকে কালো বলবিনা।তোর খবর খুব খারাপ হবে সেদিন।’
আনমনে হেসে দিলাম সেই দিন গুলোর কথা ভেবে।কত ভাবে বিহান ভাই আমার গুনগান করেছেন।আর আমি বুঝেই উঠতে পারিনি।
‘আমাকে এতদিন বলেন কি কেনো?কাউকে বুঝতে দেন নি কেনো?’
‘বললে তো আমার কথা বিশ্বাস করতে না।তাছাড়া দামী জিনিস বেশী মানুষ দেখাতে নেই।তাহলে নজর লেগে যায় মানুষের বুঝলে। ‘
‘এখন ছাড়ুন আপনি আমায়।’
‘ছাড়বো বাট..’
‘কি বাট।?’
ক্রমশ ওষ্ঠদ্বয়ে দুষ্টু হাসি নিয়ে আমার গালের দিকে এগিয়ে আসছেন উনি।ওদিকে নানী ও ক্রমশ এগিয়ে আসছে।
‘ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে বললাম নানী এসছে।’
‘বয়স্ক মানুষ চোখে সমস্যা অত কিছু বুঝবেন না।’
‘আপনার নানী কানে কম শোনেন কিন্ত চোখে ঠিক ই দেখেন বুঝেছেন আপনি।’
এমন সময়ে নানী চলে এসেছেন।বিহান ভাই টুল এগিয়ে বললেন,নানু বসো।
নানী আমাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে বললেন,এ সময়ে এসব বেশী করো না।
দুজনের ই হেচকি উঠে গেলো নানীর কথা শুনে।কি বলতে চাইছে কি নানি।
–বিহান ভাই শুকনো কাশি দিয়ে বললেন,কি করবো না নানু।ফিস ফিস করে বললেন স্টারটিং এই তো তুমি ডিস্টার্ব করলে।কথাটা বলেই আমার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে দিলেন।আমি লজ্জায় অন্যদিকে তাকালাম।
–নানী বললো,কি দাদা আইটে বলো আমি কানে শুনি না।
–আমি অবাক হয়ে বললাম,আইটে কি বিহান ভাই।
–বিহান ভাই হেসে বললেন,জোরে বলতে বলে।
আমি এক গাল হেসে দিলাম।
নানী একটা তাবিজ আমার হাতে দিয়ে বললো,
“এই তাবিজ টা গলায় পর দিয়া,কোন কিছুর নজর লাগবে না।বাচ্চা পেটে আসলে অনেক খারাপ জিনিসের নজর লাগে।”
বিহান ভাই হালকা হেসে বেলকনি ত্যাগ করলেন।এমন সময় দুই মামি আম্মু আমার কাছে এলো।সবাই কিছু বলতে চাইছে মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।বাট কি বলবে।বিভোর ভাই এর আম্মু বললেন,দিয়া মা সত্যি কি প্রেগন্যান্ট তুই।
–আমার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো।আমি চত জলদী বললাম,না না মামি এসব কিছুই না।
–কতদিন আগে পিরিয়ড হয়েছে।
–এই কথা ও শুনতে হচ্ছে আজ আমাকে।লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে আমার।
–উপায় না পেয়ে উত্তর দিলাম ২৯ দিন।
–মামি বললো কাল সকালে ইউরিণ টেস্ট করে দেখাবি আমাকে।
–আমি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম।এক বমির জন্য কত কি শুনতে হচ্ছে আমাকে।
–ছাদের উপর বড় আমগাছের ছায়ায় বসে লুডু খেলা চলছে।বিহান ভাই আর আবির ভাইয়া দাবা খেলছে মনোযোগ দিয়ে।
তিয়াশ ভাইয়া ফোনে গেইম খেলছে।
রিয়া,মেহু আপু,তোহা আপু আর বিভোর ভাই বসে লুডু খেলছেন।আমি সাইডে বসে খেলা দেখছি।বিভোর ভাই গুটি চুরি করছেন শুধু আর চারজনে মারামারি শুরু করছে।
তাদের ঝগড়ার সমাধান করতে আবির ভাইয়া আর বিহান ভাই উঠে এলেন।ভাইয়া ফোন বের করে দিলো, ফোনে লুডু খেলা হবে।বিভোর ভাই বললেন,একটা বেড হয়ে যাক আমি জিতলে যা চাইবো দিতে হবে।
–বিহান ভাই বললেন,মহিলাদের গেইমে এটেন্ট করতে লজ্জা লাগছে না বিভোর।
–বিভোর ভাই বললেন,মহিলাদের সাথে গেইম খেলেও তো একটা মহিলা পটাতে পারছি না।
–তোর কপালে মহিলা ই আছে,রিয়ার মতো কিউট মেয়ে নেই বুঝলি।
–বিহান তোর এই সুন্দরী শালী আমার ই বউ হবে। না হলে বিয়েই করবো না।বেড হলো রিয়া হেরে গেলে আমি প্রপোজ করবো আর রিয়া এক্সেপ্ট করবে।
–আর তুই হারলে।
–হারলেও রিয়া আমার জিতলেও রিয়া আমার এই হলো আমার বেড।
–বিভোর ভাই এর কথা শুনে সবাই উচ্চস্বরে হেসে উঠলো।
–বিভোর ভাই যখন হেরে যাচ্ছিলেন,রিয়ার গুটি নিজে চালিয়ে দিলেন।বিভোর ভাই এর এমন কান্ড দেখে রিয়া ফোন নিয়ে খানিক দূরে দৌড়ে গিয়ে ইচ্ছামতো গুটি চালিয়ে এসে ফোন দেখালো বিভোর ভাই হেরে গিয়েছে।
–কাজিন দের এই খুনসুটি চলতেই থাকলো।
–আমি বিহান ভাই কে বললাম,সন্ধ্যা হতে কত দেরী বিহান ভাই?
–বিহান ভাই ঘড়ি দেখে আমার দিকে তাকিয়ে হেসে দিলেন।আর সবাইকে আড়াল করএ ফ্লায়িং কিস ছুড়ে দিলেন।এই কিস যেনো আমার হার্টে এসে তীরের মতো বিঁধলো।এটা ছিলো স্পর্শহীন প্রথম চুম্বন।