এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা | পর্ব – ৮

“ফাইট্টা যায় বুকটা ফাইট্টা যায় আমার বন্ধু যখন বউ লইয়া আমার বাড়ির সামনে দিয়া রঙ্গ কইরা হাইট্টা যায়।” বিহান ভাই মনে হয় কিছুক্ষণের জন্য মনে হয় হ্যাং হয়ে গেলেন।চারদিকে যত মানুষ ছিলো সবার এটেনশন গানের দিকে চলে গেলো।বিভা আপুর ফ্রেন্ড বলে উঠলো কোন ক্ষ্যাতের ফোনের রিংটোন রে এইটা।এর থেকে আমাদের রিক্সাওয়ালা মামা বক্কার এর ফোনের টোন ভালো আছে ও আমার রসিয়া বন্ধুরে।উনার কথা শুনে বিহান ভাই যে দৃষ্টি নিয়ে তাকালেন আমার দিকে আমি দ্রুত চোখ নামিয়ে নিলাম।।আমাদের কাজিন গুষ্টির সবাই চাপা হাসি ধরে রাখতে পারছিলাম না অবশেষে সবার দম ফাটা হাসি বেরিয়ে এলো।বিহান জাস্ট বিরক্তি নিয়ে নিজের ফোনের দিকে তাকিয়ে রইলেন।সেই সাথে তাকিয়ে রইলেন আমাদের সব কাজিন দের দিকে।উনি এত ভয়ানক রাগি চোখে তাকালেন যে আমাদের সবার হাসি অটো অফ হয়ে গেলো।দেখা গেলো রাগে বিয়ে বাড়ি ছেড়েই বের হয়ে গেলো।বিভা আপুর ফ্রেন্ড দের উদ্দেশ্য বললাম আহা আপু কাকে ক্ষ্যাত বলছেন এটা আপনাদের ক্রাশ বিহান এর ফোনের রিংটোন।এখনো কি ক্রাশ খাবেন নাকি ক্ষ্যাত বলে ক্রাশ থেকে নাম কেটে ক্রস দিয়ে দিবেন।ইয়ে আপু আপনাদের একজন মাত্র ক্রাশ কার বা হবে উনার ফোনের রিংটোন এটা হওয়া উচিত ছিলো বিধি তুমি বলে দাও আমি কার গফ থাকতেও এত গুলা মেয়ে আমার দাবিদার।আমার কথা শুনে সবাই আমার হেসে গড়িয়ে গেলো।
বিহান ভাই আমার দিকে তাকিয়ে ধমক দিয়ে বললেন জাস্ট সাট আপ দিয়া জাস্ট সাট আপ।আই কান্ট টলরেট দিস ননসেন্স।চেঞ্জ দ্যা টপিক্স।বিহান ভাই এর গালে মুখে রাগের অগ্নি কুন্ড বেরোচ্ছে।এক্ষুণি মনে হয় উনার সামনে বসে থাকা সব গুলো মানুষ কে কেটে কুচি কুচি করে নদীতে ভাষিয়ে দিতে পারলে উনার শান্তি হতো।
“বিহান ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বলেন আমার ফোনে হাত দিয়েছিলি কোন সাহসে দিয়া।”
“আমি অবাক হওয়া ভান করে বললাম,বিহান ভাই আমি দিবো আপনার ফোনে হাত এত সাহস আমার আছে বলে আপনার মনে হয়।আর আমি আপনার ফোনে ক্যানো হাত দিবো বলুন তো।”
“তাহলে আমার ফোনের রিংটোন চেঞ্জ করেছে কে?আমি ফোন ইউজ করছি ধরে আজ ও কোনো গান বা রিংটোন সেট করি নি।সেখানে আমার ফোনে এই গানের রিংটোন।দাঁতে দাঁত চেপে বলছেন বিহান ভাই।”
“বিভোর ভাই বলেন তোর ফোনে এই গান না থাকলে কেউ কিভাবে সেট করবে এই গান।তাছাটা তোর ফোনের লক কে জানবে?”
“প্রথমত বাড়িতে এসে লক কেটে দিয়েছি, ফোনে তেমন কিছু নেই যার কারণে লক করার প্রয়োজন হয় না।দ্বীতীয়ত এই গান ডাউনলোড দিয়েছে কেউ আর তারপর ই সেট করেছে।হুজ দ্যা সাহসী মহিলা।আই নো এটা কার কাজ।দিয়া ঠিক এই মুহুর্তে তুই আমার ফোন দিয়েছিস ক্যানো?এখন কি তোর আমার সাথে ফোনে কথা বলতে মন চাইছে।”
“সে কি বিহান ভাই আমি ক্যানো ফোন দিতে যাবো।যেখানে যা হয় আপনি আমার দোষ দেন কেনো?
আমি বিহান ভাই কে বললাম এখন কি মানুষের মাঝে আমাকে বকাবকি করবেন আমি আপুর হাতে মেহেদী লাগাচ্ছি ফোনে হাত দিলাম কখন।”
“বিহান ভাই আমার নাম্বার টা বের করে আমার সামনে ধরলেন আর আমার কল টা দেখালেন যেটা মিসকল হয়ে আছে।সবার দৃষ্টি তখন আমার দিকে।বিহান ভাই আবার বললেন তুই ইচ্ছা করেই এখন কল দিয়েছিস তাইনা।”
“আপনাকে ছুঁয়ে বলবো আমি ইচ্ছা করে দেই নি মনে হয় চাপ লেগে চকে গিয়েছে।আমি রিয়াকে ছুয়ে বলছি।”
“খবর দার অন্য কাউকে ছুয়ে কিছু বলবি না।তাহলে তোর কপালে দুঃখ আছে।”
“আমি বিহান কে বললাম নিজেই নিজের প্রিয় গান সেট করেছেন এখন মানুষের দোষ দিচ্ছেন?”
“আমার প্রিয় গান।সিরিয়াসলি দিয়া?”
“অবশ্যই আপনি না দুপুরে আমাকে বললেন মমতাজ আমার প্রিয় শিল্পি।বক্সে বধূ বেশে কন্যা যখন এলো রে গান বাজছিলো আপনি হাত ক্লাপ দিচ্ছিলেন আর বলছিলেন আমার প্রিয় শিল্পির গান।তারপর আমি জানতে চাইলাম আর কোনটা প্রিয় আপনি বললেন একটা প্রিয় গান সিলেক্ট করেই রেখেছি যখন আমার প্রিয়তমা আমাকে স্যাকা দিবে তখন বুকটা ফাইট্টা যায় গান শুনবো।”
“বিহান ভাই রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন, দিয়া রে তোর আজ খবর ছিলো।আজ বাড়ি ভর্তি মানুষ তাই।খুব সাহস বেড়েছে তাইনা।দেখে নিচ্ছি আমি পরে।বলেই উঠে চলে গেলেন।”
বিভোর ভাই,রিয়া,তিয়াশ ভাইয়া,তোহা আপু,বিভা আপু, মেহু,শুভ ভাইয়া সবাই আমার দিকে আছে। বিভোর ভাই বলেন এত সাহস পেলি কিভাবে দিয়া।মেহু আপু বললো বিহান ভাই মারাত্মক রেগে গিয়েছেন দিয়া রে তোর কপালে কষ্ট আছে।আমি তো জানি আজ কপালে দুঃখ আছে।আজ আমি যা করেছি রাগে করেছি।প্রথমত উনার রিলেশন এর কথাটা মেনে নিতে পারিনি আমি।তারপর এত সব মেয়ে গুলা উনাকে দেখে ক্রাশ খাচ্ছে।তারপর আবার আমাকে বিরক্ত করেন।আরো আধাঘন্টা আগে উনার ফোন উনার রুমে পেয়েছিলাম সেখানেই এই অকাম টা ঘটিয়েছিলাম আমি।আর ইচ্ছা করেই কল দিয়েছি যাতে রিংটোন টা বেজে ওঠে।আমি জানি উনি বুঝতে পেরেছেন আমি এই কাজ করেছি।একটু বেশী সাহস দেখিয়ে ফেললাম নাকি।এসব করার আগে তো ভাবিনি কি হবে পরে।এখন কি করবো এক কাজ করি ফুপ্পি বাড়ি পালিয়ে যায় আমার আর বিয়ে দিয়ে কাজ নেই।জান বাঁচানো ফরজ হবে আমার।
কিছুক্ষণ পরেই আম্মু আমাকে ডেকে পাঠালো।আম্মুর ডাকে উঠে গেলাম।আম্মু আমাকে বিহান ভাই এর রুমে নিয়ে গেলো। আম্মু আমাকে বললো তোর ফোন টা দে তো দিয়া।আম্মুর হাতে ফোন টা দিতেই আম্মু বিহান ভাই কে ডাকলো অতঃপর আজরাইল এর সামনে এনে ফেলে দিলো আম্মু আমাকে।আম্মু ফোন টা বিহান ভাই এর হাতে তুলে দিয়ে চলে গেলেন।গম্ভীর মুডে দাঁড়িয়ে আছেন বিহান ভাই।উনার মুখে কোনো কথা নেই তবে চোখে ভয়ানক রাগ।
মাথা নিচু করে ফোনের পাওয়ার বাটন চাপলেন।নিচ দিক থেকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললেন ফোনের লক চেঞ্জ করেছিস গুড।পিন নাম্বার কি দাঁতে দাঁত চেপে বললেন।ভয়ে হাত পা কাঁপছে আমার।এখন ফোনের পিন বললেও সমস্যা।বিহান ভাই ফোনের দিকে তাকিয়ে বললেন এক কথা সেকেন্ড বার বলি না আমি।এক সেকেন্ডের মাঝে পিন আমার কানে না আসলে ফোন কত হাজার টুকরো হবে তার ঠিক নেই।পৃথিবীর কোনো মিস্ত্রী আর ঠিক করতে পারবে না।ইউ নো ভেরি ওয়েল আমি কিছু ভাঙলে তার ঠিক কি অবস্থা হয়।
উনার কথা শুনেই বুক কেঁপে উঠলো আমার।এইদিকে অনেক কষ্টের পরে ফোন টা হাতে পেয়েছি আমি।এইবার ফোন ভাঙলে বিহান ভাই পিন লাগালে এই জীবনে আর ফোন কিনে দিবে না আম্মু।তাই নিজের ফোন রক্ষা করতে ভয়ে ভয়ে বলা শুরু করলাম। R, A, এটুকু বলেই থেমে গেলাম।
বিহান ভাই বললেন সে ফার্স্ট।
কাঁপতে কাঁপতে আবার বলা শুরু করলাম আমার অবস্থা ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি।ফোনের লক জানলে আমায় মেরে ফেলবেন।তারপর ফোনে অনেক কিছু আছে।অবশেষে ফোনের লক বললাম Rakkosh Bihan Vai.ফোনের লক বলে চোখ অফ করে আছি।এক্ষুনি মনে হয় উনার থাপ্পড় এ গালের দাঁত সব গুলো পড়ে যাবে।বিহান ভাই আমার ফোন টা উনার পকেটে ঢুকিয়ে বুকে হাত বেধে দাঁড়িয়ে আছেন ভয়ানক অগ্নি রুপে।আমার দিকে দু’পা এগিয়ে এসে বলেন খুব সাহস বেড়েছে তাইনা তোর।এমন অবস্থা করবো না তোর তুই ভাবতেও পারবি না থাপ্পড় ততক্ষণ মারবো যতক্ষণ না আমার রাগ পানি হবে।আমি ভয়ে ভয়ে বললাম বিহান ভাই আমি আর জীবনে এসব পাসওয়ার্ড দিবো না।
এসব ঠুনকো জিনিস নিয়ে এই মুহুর্তে আমি ভাবছি না।
আপনার ফোন ও আর আমি জীবনে স্পর্শ করবো না আমাকে আজকের মতো ক্ষমা করুণ প্লিজ।
এটা নিয়েও রাগ করি নি আমি।
তাহলে।
তুই Dihan diya আইডি থেকে আমায় ব্লক করেছিস ক্যানো?..
সরি ওইটা আমি রাগ করে করেছিলাম।
রাগ কিসের রাগ।রাগের সাথে ব্লকের কি রিলেশন।
আপনি সেটা বুঝবেন না।মনে মনে বললাম তোহা আপুর পোষ্ট এ লাভ রিয়্যাক্ট দেওয়ার জন্য।
বিহান ভাই আরো এগিয়ে এসে আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরলেন কাঁচের চুড়ি যা ছিলো সব ভেঙে চুরে দুজনের হাত কেটে একাকার অবস্থা। বিহান ভাই রেগে থাকলে নিজের ব্যাথা তো বাড়ির কাছে অন্যর ব্যাথা ও হুঁশ থাকে না।দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,তুই আলিপ এর গা ঘেষে হলুদের গহনা পরে পিক তুলেছিস।বিভা আপুর ফ্রেন্ড দের সাথে পিক তুলেছিস হেসে হেসে।আলিপ সহ সবাই ফেসবুকে পোস্ট করেছে।আলিপের গায়ের সাথে তোর শরীরের স্পর্শ কিভাবে লাগলো আনসার মি ড্যামেড।সেই পিকচার অনেক মানুষ শেয়ার ও দিয়েছে।আলিপের ক্যাপশনে মি উইথ সামওয়ান সাথে কত গুলি লাভ ইমুজি।তোর সমস্যা কি দিয়া।ছেলে মানুষের আশে পাশে কি তোর।আলিপের সাথে কি তোর।
অথচ আজ সারাদিনে অন লাইনে যায় নি আমি।আমার পিক পোস্ট করে আমাকে ট্যাগ করেছে আমি জানিনা।বিহান ভাই এই বিষয় টা নিয়ে এত রেগে গিয়েছেন আমার হৃদপিন্ড ভয়ে লাফাচ্ছে।
এই দিকে হাতের ব্যাথায় আর ভয়ে খুব জোরে কেঁদে দিলাম আমি।বিহান ভাই আমার কাঁন্না দেখেই হাত টা ছেড়ে দিয়ে দেখেন আমার হাত বিশ্রি ভাবে কেটে গিয়েছে।বিহান ভাই কপালে হাত চালাতে চালাতে বলেন ওহ মাই গড।উনার দুই হাত দিয়ে আমার দুই গাল স্পর্শ করে বলেন এই দিয়া সরি আমাকে মার প্লিজ।আমি তোকে এতটা আঘাত দিতে চাই নি। বলেই উনার ওষুধের বক্স থেকে একটা ওষুধ লাগিয়ে হাত টা বেঁধে দিলেন।আমি কেঁদেই যাচ্ছি..
বিহান ভাই এর হাত থেকে রক্ত পড়েই যাচ্ছে। আমি বিহান ভাই কে বললাম আপনার হাত।বিহান ভাই উত্তেজিত হয়ে বললেন আমার কিছুই হবে না কিন্তু তুই ছোট মানুষ এত কষ্ট সহ্য করতে পারবি না।
বিহান ভাই দিকে তাকিয়ে উনার হাত বেঁধে দিতে দিতে বললাম শরীরের কষ্ট সহ্য করা যায় কিন্তু আপনি আমার মনে আঘাত করেছেন সেটা কিভাবে সহ্য করবো বিহান ভাই।আপনি না হার্ট নিয়ে পড়াশুনা করেন।আজ ও আমার মন বুঝলেন না।
মনে মনে বললাম তুমি আমায় ক্যানো ভালবাসলে না বিহান ভাই।
আমার হাত কাটাতে বিহান ভাই এর মাঝে ভীষণ ব্যাকুলতা দেখতে পেলাম।উনি আর কোনো কথা বলছেন না ভীষণ রাগ হঠাত কমে গেলো।
হাতের ব্যাথায় মেহেদী ও হাতে দিতে পারলাম না।ফ্লোরে বিছানা করা হয়েছে সবার সাথে গলিতে সুয়ে পড়লাম।বাড়িতে অনেক আত্মীয় কারো জন্য ই আলাদা বিছানা করা হয় নি।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।