এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা | পর্ব – ৬০

বাড়িতে ক্রমশ আত্মীয়ের সংখ্যা বেড়েই চলেছে সবাই আমার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে।আমাকে কি সবাই নতুন দেখছে কিছুই তো বুঝতে পারছি না।গতকাল কাউকে কিছু জিজ্ঞেস না করে ঘুমিয়ে গেছিলাম।ঘড়িতে দুপুর বারোটা দুইদিন হয়ে গিয়েছে বিহান ভাই এর ফোন আসে নি। ফোন হাতে নিলেই ওনার একটা না একটা মেসেজ আমার ফোনে দেখতে পাই।সারাক্ষণ উনার একটা মেসেজ বেশী দেখি আমি “এত অন লাইনে কি তোর দিয়া” আমি রাগানোর বলি সারাদিন সুন্দর সুন্দর ছেলেদের ফটো দেখি বিহান ভাই।উনি রেগে রেগে বলেন আমি ছাড়া কোনো সুন্দর ছেলের দিকে তাকানো নিষেধ তোর।ফোন টা হাতে নিয়ে অপেক্ষা করছি কখন উনার ফোন আসবে।
বাইরে বেরিয়ে দেখি বাবার কিছু আত্মীয়েরা আম্মু আর কাকিমনি শপিং থেকে এসছে।শপিং গুলো এনে আমার বেডের উপর রাখলো। আমার রুমের বেডের উপর রাখা অনেক গুলো হলুদের শাড়ি আর গহনা।বড় করে একটা কার্ডে লেখা আজ দিয়ার হলুদ সন্ধ্যা। দিয়া মানে তো আমি ছাড়া আর কেউ নেই।আমার হলুদ সন্ধ্যা মানে আমার বিয়ে।দ্রুত বিছানায় রাখা জিনিস পত্র গুলো ধরে ধরে দেখছি।চোখে পানি ছল ছল করছে আমার। বিছানায় রাখা জিনিসপত্রের উপর চোখের পানি টুপ টাপ করে পড়েই যাচ্ছে।জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখি বাবা খুব হাসছেন বাবার চোখে মুখে আনন্দ আর প্রাপ্তির হাসি।বাবা তার বন্ধুদের বলছে আমার দিয়ার জন্য এত ভালো পাত্র পাবো বুঝতেই পারি নি ছেলে একজন এমবিবিএস ডাক্তার।আমার দিয়াকে নিজে পছন্দ করেছে।আমার ছেলে টাও আমার বিরুদ্ধে যেতো না আমার জিদের জন্য ভুল করে ফেলেছে কিন্তু আমার মেয়ে এমন ভুল আর করবে না।বাবার বন্ধু বলছেন দুঃখ করো না শুভর মতো ছেলে এখনের যুগে হয় নাকি একটা ভুল করেছে ক্ষমা করে দাও একটাই ছেলে তোমার। বাবা একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন,ছেলেকে ছাড়া অনেক কষ্ট পেয়েছি এতদিন।আমার মেয়ে কোনো ভুল করুক এটা আর আমি চাই না।তাই দিয়ার হুট করেই বিয়ের সিদ্ধান্ত।কাল দিয়ার গায়ে হলুদ পরশু বিয়ে।মানে কাল আমার গায়ে হলুদ আর পরশু বিয়ে।আম্মুকে ডেকে নিয়ে ঘরের দরজা লাগিয়ে বললাম,আম্মু আমি এসব কি শুনছি বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে।
“আম্মু বললো এভাবে আকাশ থেকে পড়ছিস কেনো দিয়া?তোর বাবা তোকে পৃথিবীতে সব থেকে বেশী ভালবাসে।সে তোর বিয়ে ঠিক করবে নাতো কি অন্য কেউ ঠিক করবে।”
“আম্মু তাই বলে এক্ষুণি বিয়ে।আমি চিনি না জানিনা এমন একটা ছেলেকে কিভাবে বিয়ে করি।আমি বিয়ের জন্য এখন প্রস্তুত না আম্মু।”
“বিয়ের আগে কেউ কাউকে চিনে না দিয়া।বিয়ের পর সবাই চিনে যায়।তোমার বাবা কি তোমার খারাপ চাইবে?”
“না আম্মু বাট আমার মেডিকেল টা শেষ করতে দাও।”
“ছেলে তোমার কলেজের প্রফেসর নির্বাণ।তোমাকে খুব পছন্দ করে।মেডিকেল পড়তে কোনো অসুবিধা হবে না তোমার।”
“হোয়াট আম্মু নির্বাণ স্যার?আমি আমার স্যার কে বিয়ে করবো এটা ভাবলে কিভাবে।আমি কিছুতেই উনাকে বিয়ে করতে পারবো না আম্মু।প্লিজ বিয়েটা ভেঙে দাও আম্মু।আমার পক্ষে কিছুতেই বিয়ে করা সম্ভব নয়।”
তুমি ভুলেও একথা তোমার বাবার সামনে বলো না দিয়া।সব আত্মীয়দের দাওয়াত দেওয়া হয়ে গিয়েছে।তোমার বিয়ের জন্য তোমার বাবা শুভ আর মেহু কে মেনে নিয়েছে।তুমি জানোনা তোমার বাবার হার্ট এট্যাক করেছিলো।তুমি কি চাও এখন তুমি বাড়াবাড়ি করো আর তোমার বাবার অবস্থা আরো খারাপ হোক।শুভর জন্য তোমার বাবা কোথাও মুখ দেখাতে পারেনি এমন আছে রাস্তাঘাটে ও যায় নি তোমার বাবা।মানুষ টা কত কষ্ট পেয়েছে আমি দেখেছি।এখন সব কিছু ঠিকঠাক হয়েছে তুমি দয়াকরে উলটাপালটা আর কিছুই বলো না।সব থেকে আনন্দের বিষয় এটা তোমার সাথেই শুভ আর মেহুর বিয়ে দিবে তোমার বাবা।এখন যদি তুমি উলটা পালটা করো তোমার ভাইয়া আর মেহু কোনদিন এ বাড়িতে আসতে পারবে না।ভাইয়া আর বাবার মাঝের দূরত্ব দূর হোক এটা আমি সব সময় চেয়েছি।এমন সময় গাড়িতে করে ভাইয়া আর মেহু আপু প্রবেশ করলো বাড়িতে।বাড়ির সব আত্মীয় ভাইয়া আর মেহু আপুকে জড়িয়ে ধরে আবেগঘন একটা মুহুর্তের সৃষ্টি হলো।ভাইয়া বাবাকে জড়িয়ে ধরে বললো সরি বাবা আমাকে ক্ষমা করে দাও।বাবা ভাইয়ার কপালে চুমু দিয়ে বললো বাবা অনেক খারাপ তাইনা শুভ।মেহু আপু আম্মুকে জড়িয়ে ধরলো।ফুপ্পি ভাইয়াকে জড়িয়ে নিলো নিজের ভালবাসায়।আজ সব হাসি আনন্দ আমার পরিবারে আচড়ে পড়েছে।নিমিষেই সব আনন্দ মিলিয়ে গেলো কোথায় জনিনা।বুকের মাঝে আচমকা বাড়ি মেরে উঠলো।
আম্মু তো আমাকে আমার কথা বলার সুযোগ ই দিলো না।এখন কি করি আমি। ফোন নিয়ে হোয়াটস এপ এ বিহান ভাই কে নক দিলাম।মেসেজ ডেলিভারি হচ্ছে কিন্তু সিন করছেন না।বার বার কল দিয়েই যাচ্ছি উনাকে।কম করে হলেও হাজার বার কল দিয়েছি। একটা রিপ্লে দিলেন তুই কি মেন্টাল দেখছিস ফোন রিসিভ করছি না এতবার কল দিয়ে যাচ্ছিস।আমি ইমারজেন্সি কাজে বিজি সো ডোন্ট কল মি নাউ।ফ্রি হয়ে ব্যাক দিচ্ছি।উনি তো বিদেশ থেকে বুঝতেই পারছেন না এখানে ঠিক কি হতে চলেছে।আমার হাতে তো একটুও সময় নেই।আমি তবুও কল আর মেসেজ করেই যাচ্ছি কিন্তু কোনো রেসপন্স নেই।কি করবো আমি কাকে কি বলবো।এইদিকে বাবার জীবন অন্যদিকে বিহান ভাই।
কিছুক্ষণের মাঝেই বিভোর ভাই আমাদের বাড়িতে প্রবেশ করলেন।বিভোর ভাই এর চোখে মুখে ভীষণ চিন্তা।এই চিন্তার একটাই কারণ সেটা আমার বিয়ে নিয়ে।বিভোর ভাই আর রিয়া চিন্তায় পাগল হয়ে যাচ্ছে।কেননা আমার আর বিহান ভাই এর ব্যাপারে বিভোর ভাই, রিয়া সবটা জানেন।
ভাইয়া মেহু আপুকে নিয়ে পালিয়ে যাবার পর বাবার অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে যায়।ডাক্তার বাবাকে ২৪ ঘন্টার গ্যারান্টি দিয়েছিলেন।বিহান ভাই এর ট্রিটমেন্ট এ সুস্থ হয়েছিলেন বাবা।বাবাকে নিয়ে সবাই অনেক দুঃচিন্তায় আছে অনেকদিন থেকে।বাবা যে হুট করে আমার বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করবে সেটা কেউ ভাবতেও পারে নি।বাবা বিভোর ভাই এর হাত ধরে বলেছেন,বিহান তো দেশে নেই তোমার হাতে সব দায়িত্ব রইলো।সব কিছু যেনো ঠিকঠাক থাকে বাবা।আমার মান সম্মান যেনো ক্ষুন্ন না হয়।বিভোর ভাই সাহস পাচ্ছেন না বাবার মুখের উপর কিছু বলতে।বিয়ে ঠিক হওয়ার পর আমার বিয়ের কথা জানালে বাবার যদি কিছু হয়ে যায়।
বিভোর ভাই আমাকে বললেন,দিয়া আমি যখন আছি কোনো চিন্তা করিস না।বিহান এর ভালবাসা আমি হারাতে দিবো না।কিন্তু দিয়া বিহান তো ফোন ই রিসিভ করছে না।
জীবনে কখনো এমন সংকটময় পরিস্হিতিতে আমি পড়ি নি।মাথার ভিতর দুঃচিন্তা আর অশান্তি শিরা উপশিরা দিয়ে বইছে।মাথায় প্রচন্ড পেইন শুরু হয়েছে।চারদিকে সবাই এত খুশি সবার আনন্দ আমার ভিতরে আরো তীব্র যন্ত্রণার সৃষ্টি করছে।কি এমন পাপ করেছিলাম জীবন টা এভাবে শেষ হতে চলেছে।মনে মনে ভেবে নিয়েছি নির্বাণ স্যার কে আমি জানিয়ে দিবো তাকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।একমাত্র সেই পারবে সব কিছু সামলে নিতে।
ফোন হাতে নিয়ে আবার ও বিহান ভাইকে মেসেজ দিলাম।আবার ও কল করলাম কল টা রিসিভ হতেই মনের মাঝে যেনো এক অদ্ভুত তৃপ্তি পেলাম।ফোন রিসিভ হলো ঠিক ই কিন্তু কথা বললো প্রেয়সি আপু।প্রেয়সী আপু ফোন রিসিভ করেই বললেন,এভভান্স হ্যাপি ম্যারেজ লাইফ দিয়া।আমি আর বিহান সো সরি বিয়েতে থাকতে পারলাম না।কেননা আমরা প্রি হানিমুনে এসছি।বিহান আর আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে দিয়া।তুমি এত মেসেজ করছো বিহান দেখেও রিপ্লে করছে না তুমি কি বুঝছো না ও এই ব্যাপার টা কেয়ারফুলি নিচ্ছে না।মানে বিহান চাইছে তোমার বিয়ে টা হয়ে যাক।তুমি তো কয়েক হাজার মেসেজ করেছো বিহান সিন করেছে অথচ রিপ্লে করছে না।তুমি অতিরিক্ত ডিস্টার্ব করছো বলে বিহান আমার কাছে ফোন দিয়েছে।
-বুক চেপে ধরলাম মনে হচ্ছে এক্ষুণি দম বন্ধ হয়ে যাবে আমার।ঘণ ঘণ কয়েক টা শ্বাস টেনে বললাম,আপনার একটা কথা ও বিশ্বাস করিনা আমি প্রেয়সী আপু।
-বিশ্বাস না হলে বিহানের বাবার কাছে শুনে দেখো বিহানের বিয়ে কার সাথে ঠিক।
-কল টা কেটে দিয়ে মামার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম মামা বিহান ভাই এর যার সাথে বিয়ে তার নাম কি।
-প্রেয়সী।তোর বিয়েটা হলেই বিয়ে মা।ছেলে যখন পছন্দ করে আমি আর আপত্তি করে কি করবো।
-সব কিছুই যেনো কেমন দুঃস্বপ্ন মনে হচ্ছে।মাত্র একদিনে এতকিছু কিভাবে বদলে গেলো।প্রেয়সী আপু না হয় মিথ্যা বলেছে কিন্তু মামা তো আর মিথ্যা বলছে না।মামার সামনে নিজেকে সামলে নিয়ে রুমে যেতেই দেখি বিহান ভাই এর কল। উনার কল দেখেই ফোন টা ফ্লোরে কয়েকটা আছাড় মেরে ফেলে দিলাম।মানুষ এতটা বেঈমান হতে পারে কিভাবে? এই প্রেয়সী প্রেয়সী প্রেয়সী এতকিছুর পরেও এই প্রেয়সী নাম টা কেনো বিহান ভাই এর জীবনে কাটার মতো আটকে আছে।আমি আপনাকে কোনদিন ক্ষমা করবো না বিহান ভাই কোনদিন না।আই হেট ইউ ঘৃণা করি আপনাকে আমি।সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব কি আমার একার।আপনার কোনো দায়িত্ব নেই।অনেক হয়েছে এই প্রেয়সী কে নিয়ে বাড়াবাড়ি আপনি আপনার মতো আমি আমার মতো।রুমের দরজা আটকে ফ্লোরে বসে ভীষণ কাঁদছি।বুকের ভেতরএ সব দুমরে মুচড়ে ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে।
মনের ভেতরে জ্বলছে পুড়ছে আশান্তির আগুনে ছাই হয়ে যাচ্ছে সব কিছু।ভালবাসা কেনো তুমি এত পুড়াচ্ছো আমাকে।ভালবাসার এত যন্ত্রণা কেনো?বার বার উনার স্মৃতি মনে পড়ছে দম আটকে আসছে।মন চাচ্ছে নিজেকে শেষ করে দেই।আমার বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই।কেনো আমাকে এভাবে ভেঙে চুরে গুড়িয়ে দিলেন। আমার মুখ আর কোনদিন দেখাবো না আপনাকে।
বিকালে মামি আমাদের বাড়িতে এসছে।রুমের মাঝে নিশ্চুপ হয়ে বসে আছি আমি।মামি এসে আমার গায়ে হাত দিতেই মামির দিকে তাকিয়ে নিশ্চুপ হয়ে বসে রইলাম আমি।মামি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললো দিয়া মা চেহারার এ কি হাল হয়েছে তোর।আমি বাবার বাড়িতে গেছিলাম এসেই দেখি এত কিছু ঘটে গিয়েছে।এই দিয়া কিছু বল এভাবে ভেঙে পড়েছিস কেনো?বিভোর না বললে তো কিছুই জানতে পারতাম না আমি।
চোখের কোয়া ফুলে গিয়েছে আমার।মামির দিকে তাকিয়ে বললাম তোমার ছেলের বিয়ে মামি প্রেয়সীর সাথে।
আমার ছেলেকে কি তুই চিনিস না।তোর মামা যদি জানে যে বিহান তোকে পছন্দ করে তাহলে কি আর প্রেয়সীর সাথে বিয়ে ঠিক করতো।বিয়ে ঠিক আর বিয়ে হওয়া কি এক পাগলি।তুই একদম ভাবিস না দিয়া।
-তোমার ছেলে একটা বেঈমান মামি অনেক বড় বেঈমান।কেনো এমন করলো মামি।আমি তোমার ছেলেকে খুব ভালবাসি। কিন্তু তোমার ছেলে আমাকে চাই না মামি।
-আমার ছেলে যদি তোকে না চাইবে তাহলে এতবার ফোন দিচ্ছে কেনো শুনি।নে কথা বল বিহান লাইনে আছে।
-উনি কি বলেছেন যে আমার সাথে কথা বলবে?
-আরে হ্যাঁ আমি বাইরে যাচ্ছি তুই কথা বল।
-ভিডিও কলে আছেন বিহান ভাই।আমাকে কাঁদতে দেখে বললেন এভাবে কাঁদছিস কেনো তুই।
-আপনি জানেন নির্বাণ স্যারের সাথে বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছেন।
-যাক তোর বাবা এবার ঠিক কাজ করেছেন।আমাকে লুকিয়ে নির্বাণ এর সাথে প্রেম করে বেড়াস তুই। বিয়ে নির্বাণ ছাড়া কি আমার সাথে ঠিক করবে?
-আপনি কি এখনো মজা করবেন বিহান ভাই?
-উহু কোনো মজা না।কিছুক্ষণ আগেই নির্বাণ আমাদের ডিপার্টমেন্ট এর সবাইকে দাওয়াত দিয়েছে।আমি আর প্রেয়সী আসবো তোর বিয়ে খেতে চিন্তা করিস না।
বেঈমান কোথাকার,চিটার আমার সাথে বিয়ের নাটক করে প্রেমের নাটক করে এখন আমার বিয়ে খেতে আসবেন?
-চিন্তা করিস না খালি হাতে আসবো না দিয়া।বিয়ে খেতে ছাড়া কি বিয়ে করতে আসবো।তোর শ্রদ্ধেয় বাবা আমার হাত ধরে বলুক বাবা বিহান আমার মেয়ের দায়িত্ব নাও তাহলেই তোকে বিয়ে করার কথা ভাবতে পারি।এনি ওয়ে দিয়া সামনে আমার বিয়ে আজ প্রচুর শপিং করবো কাল তোর হলুদের আগেই পৌছে যাবো।ইয়ে দেখিস যেনো সুইসাইড করিস না আবার।
-মামিকে ডেকে ফোনটা মামির হাতে দিয়ে দিলাম।মামিকে কিছুই বললাম না।রাগে আর অপমানে মনে চাচ্ছে এক্ষুণি নির্বাণ কে বিয়ে করি।বিয়ে করে এই অপমানের চরম শিক্ষা দিয়ে ছাড়বো আমি।রাগে সমস্ত শরীর পুড়ে যাচ্ছে আমার।ওদিকে বিভোর ভাই রিয়া তোহা আপু তিয়াস ভাইয়া সবাই বাড়ি সাজানো নিয়ে বিজি।আমার দিকে কারো কোনো খেয়াল নেই।বাহ সবাই কি সুন্দর আনন্দে আছে।পৃথিবীর সবাই খুব নিষ্টুর।আজ বুঝলাম আসলে কেউ কারো না।
পরের দিন দুপুরে আমাকে গায়ে হলুদের জন্য রেডি করানো হয়েছে।বিহান ভাই ও উপস্হিত আমার গায়ে হলুদের অনুষ্টানে। উনি সকালেই চলে এসছেন।বিহান ভাই হলুদ পাঞ্জাবী পরে হলুদের খাট সাজাচ্ছেন।উনার মাঝে একবিন্দু দুঃখ কষ্ট কিচ্ছু নেই।আমার দিকে একটা বার তাকাচ্ছেন ও না।বাহ কি অদ্ভুত উনি।আমার চোখ উনার দিক থেকে সরছেই না অথচ উনি একবার ও তাকাচ্ছেন না।কাঁন্না চেপে ধরে উনার এই নিষ্টুরতআ দেখছি আমি।ঠিক সেই মুহুর্তে নির্বাণ স্যার ফোন দিয়েছেন তার পক্ষে এই মুহুর্তে বিয়ে করা সম্ভব নয়।কথাটা শুনেই বাবার মুখ টা শুকিয়ে গেলো।বাড়ি ভর্তি আত্মীয় এখন মেয়ের বিয়ে ভেঙে গেলে সবাই কি বলবে।বাবার বুকে ব্যাথা প্রচন্ড বেগে বেড়ে গেলো।বাবা আম্মু আর মামা মামি দের ডেকে বললেন আমার বিয়েটা ভেঙে যাওয়ার কথা।সেই মুহুর্তে মামি বললেন ভাই আপনি সম্মতি দিলে একটা কথা বলতে চাই আমাদের বিহান তো ছেলে হিসাবে খারাপ না।যদি আপনার আপত্তি না থাকে দিয়ার সাথে বিহানের বিয়ে দিতে পারেন।বাবার মুখে যেনো আনন্দের হাসি ফুটে উঠলো।বাবা আনন্দে বলে উঠলেন বিহান আমাদের বিহান কি রাজি হবে।মামি বললেন আমি বিহান কে ডাকছি।বিহান ভাই এলে বাবা বিহান ভাই এর হাত ধরে বললেন,বাবা বিহান তুমি কি আমার দিয়াকে বিয়ে করবে।না হলে ওর জীবন টা নষ্ট হয়ে যাবে।বিহান ভাই কিছুটা লজ্জা নিয়ে বললেন আপনাদের যেটা ভাল মনে হয় করূণ।আরেকবার ও সবার মুখে আনন্দের হাসি ফুটলো।
বিহান ভাই আম্মুকে ডেকে বললো ফুপ্পি আমি ডাক্তারি পাশ করলে বলেছিলে আমার কি চাই।আমি বলেছিলাম সময় মতো চেয়ে নিবো।আজ আমার চাওয়ার দিন ফুপ্পি।তোমার দিয়াকে উপহার হিসাবে দিবে ফুপ্পি আমাকে।আমি তোমায় কথা দিচ্ছি তোমার মতোই আগলে রাখবো দিয়াকে।
আম্মু তৃপ্তির হাসি দিয়ে আমাকে বিহান ভাই এর হাতে তুলে দিলেন।
এতকিছু যে আমার অগোচরে ঘটে গিয়েছে তার কিছুই জানিনা আমি।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।