এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা | পর্ব – ৫১

“আপনি আমাকে খাসি বললেন কেনো বিহান ভাই?আমি কি পুরুষ মানুষ যে খাসি হতে যাবো।”
“তোর যে কানেও সমস্যা আছে এটা তো জানতাম না দিয়া।আচ্ছা তুই মানে কি সমস্যার গোডাউন।এত সমস্যা তোর কি হবে তোর জামাইয়ের।বেচারার জীবন টাই ত্যানা ত্যানা হয়ে যাবে।”
“আমার কানে সমস্যা মানে।আমার কানে কবে সমস্যা ছিলো বিহান ভাই।আমি কানে খুব ভালো শুনতে পাই।”
“আমরা কথায় বিশ্বাসী না প্রমানে বিশ্বাসী।কিছুক্ষণ আগেই কিন্তু আমি তোকে মহিলা খাসি বলেছি শুধু খাসি বলিনি।তোকে ওই খোয়াড়ে আজ রাতে বেঁধে রাখবো।আহা!যে আমৃত পারফিউম তোর শরীরে লেগে যবে আজন্ম কাল আর পারফিউম মাখা লাগবে না।এমনিতেও তো শীতকালে খুব একটা গোসল করিস না তুই।গায়ে যে বাজে গন্ধ হয় তোর। শুনেছি তোদের বাড়ির পাশের যে দোকান টা আছে কি জানি নাম ভাই ভাই স্টোরস শীতকালে তোর জন্য পারফিউমে গত উইন্টার সিজনে ৩০০০ টাকা লাভ করেছে।তুই নাকি গোসল না করে রোজ একটা করে পারফিউম মাখিস।তাইতো বলি দিয়া তো গরমে এত পারফিউম মাখে না শীতকালে এত পারফিউম ক্যানো ইউজ করে ক্যানো?তাতে তোরা যা কিপ্টার কিপটা যেখানে একটা পারফিউমে কয়েক বছর কাটিয়ে দিস বংস ধরে সেখানে শীতকালে এত পারফিউম।তাও তো শুনলাম সবাই চাঁদা তুলে একটা পারফিউম কিনিস।”
“বিহান ভাই উনার সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষ করলে বললাম,আপনার কি বলা শেষ হয়েছে। খুব ই কম বললেন না বিহান ভাই।দুলাভাই,বিভা আপু,রিয়া,বিভোর ভাই সবাই মুখে হাত দিয়ে বিহান ভাই এর লম্বা আমাকে করা অপমানের লাইন গুলা শুনছে।তারা আসলেই অবাক বিহান ভাই এত এত কথা কোথায় পান।উনার মাথায় এত আধ্যাতিক কথা কোথা থেকে আসে।”
“বিহান ভাই আমাদের সবার দিকে তাকিয়ে ভ্রুক্ষেপ করে বললেন,খুব কম বলেছি কি আমি?আসলে বলার অনেক কিছুই ছিলো কিন্তু আফসোস বলতে পারলাম না একজন পেত্নীদের রুপ ধারণ করছে। বুঝলেন দুলাভাই এক্ষুণি বোম ব্লাস্ট হতে পারে।”
“আমি উনার দিকে দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে মনে মনে বলছি,একটা মানুষ কতটা বিরক্তিকর আর বাজে হলে এত জঘন্য কথা বলতে পারে।অনিচ্ছাকৃত হাসি দিয়ে বললাম আপনাকে গরুর-ছাগলের ডাক্তার বলেছি বলে আমাকে এখন এইসব বলছেন তাইনা?”
“উহু!গবাদী পশুর সেবাযত্ন করতে আমার ভালোই লাগে?তার উপর যদি সেখানে কিছু মহিলা খাসি থাকে আহা চিকিৎসার জন্য বার বার গবাদী পশুর ডাক্তার হতে চাই আমি দুলাভাই। দিয়া রেডি হয়ে নে তোকে আজ ওখানেই রেখে আসবো।আহা কি সুগন্ধি তোর মন প্রাণ মাতোয়ারা হয়ে যাবে।”
“দুলাভাই উনার সাথে মোটেও কথা বলতে চাইছি না আমি।দয়াকরে উনি যেনো আমাকে বিরক্তিকর কথা না বলে।”
“দুলাভাই আমার তো খাসি খুব ই ফেভারিট আর দিয়া ও খাসি হয়ে গিয়েছে। ভাবছি দিয়াকে কুচি কুচি করে কেটে আমি একাই খাবো।রান্না ছাড়াই খাবো ভাবতেছি।দিয়া নিশ্চয়ই অনেক টেস্টি হবে তাইনা।”
“বিভোর ভাই বললেন,এই ছিলো তোর মনে বিহান।মানুষের মাংস খেতে চাস তাও আমাদের দিয়া।”
“এমনি এমনি কি রাক্ষস বলি আজ প্রুভ পেলেন তো।
দুলাভাই আমি যে গোসল করি না এই অপবাদের বিচাই চাই আমি।”
“অপবাদ আমি কি অপবাদ দিচ্ছি।তুই তো সত্যি গোসল করিস না।প্রুভ দিবো গোসল করিস না তার।”
“কিসের প্রুভ?”
“দেই তাহলে?”
“দেখুন আজে বাজে জিনিস দেখাবেন না।কোনো প্রুভ লাগবে না।উনাকে তো হাড়ে হাড়ে চিনি।প্রচন্ড কুয়াশা পড়লে মাঝে মাঝে গোসল করি না দুই এক দিন।সেই জিনিসের না জানি কি কি প্রুভ রেখেছে তার ঠিক নেই।উনার সাথে বেশী টক্কর নিয়ে বাঁশ খেতে চাই না আমি।”
বিভা আপু বললো বিহান আল্লাহ আমারে বাঁচাইছে তোর মতো আমার কোনো মামাতো ভাই নেই।তাহলে জীবন টা তেজপাতা হয়ে যেতো।তুই যেভাবে দিয়ার পিছে লাগিস আমি হলে পাগল হয়ে যেতাম।চিন্তার বিষয় তোর বউ এর কি হবে বিহান।দিয়া কে এই পরিমান বিরক্ত করিস দিয়া বলে সহ্য করে কিন্তু তোর বউ সহ্য করবে না।পৃথিবীর কোনো মেয়েই সহ্য করবে না।তোর কপালে বউ নেই রে ভাই।একদিন পরেই পালাবে।
দুলাভাই বললেন,ছেলেরা আবার বউ পাগল হয়।আমাকে দেখো না আমি এখন কেমন হয়ে গেছি।আগে আমি কি এমন ছিলাম নাকি।তাই আমার শালাবাবু বউ এর কাছে জব্দ হয়ে যাবে।
বিভোর ভাই বললেন,আসলেই এই যে বিয়ে না করেই রিয়ার জন্য কেমন হয়ে গেছি আমি।চারদিকে শুধু যা দেখি তাই রিয়া লাগে।যে মেয়ে দেখি ভালবেসে ফেলি মনে হয় এটাই বুঝি রিয়া।রিয়া অগ্নিচোখে তাকিয়ে বললো,কি বললেন যে মেয়ে দেখেন ভালবেসে ফেলেন।
‘আরে না না বেশী ভালবাসা দেখাতে গিয়ে ভুল হয়ে গেছে থুক্কু।দুলাভাই আমি কি বুঝাতে চাইছি বলেন না ক্যানো?’
বিহান ভাই এর কপালে দুইটা ভাজ পড়ে আছে সে কপাল কুচকে বললো,কি বুঝাতে চাইছিস আমি বলি বিহান।
বিভোর ভাই দুই হাত জোড় করে বললো তোর হাতে পায়ে সব ধরি ভাই তোর দোহাই লাগে আল্লাহর ওয়াস্তে তোর বোঝানো লাগবে না।তুই যা বুঝাবি তাতে আজন্ম কালের জন্য ব্রেক আপ হয়ে যাবে।বিহান ভাই এর ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি।রিয়া বললো বিহান ভাই যা বুঝার বুঝেছি আমি এর ব্যাবস্হা নিবো।
বিহান ভাই ভ্রু কুচকে বললেন বিভা আপু তাহলে কি আমার বিয়ে হবে না।
বিভা আপু বললো,বিয়ে হবে বউ টিকবে না।তোর যে রাগ তা দেখলে স্টোক করে হসপিটালে যাবে তোর বউ।সবাই তো আর দিয়া না বিহান।
বিভোর ভাই হেসে বললেন,এমনিতেও ওর বউ টিকবে না কারণ ওর শারিরীক কিছু সমস্যা আছে।
আমি চিন্তিত হয়ে বললাম,বিহান ভাই এর কি কোনো রোগ হয়েছে বিভোর ভাই।বিভোর ভাই বললেন,সে রোগ বড়ই জটিল ফিলিংস চিন্তিত বিহানের ফিউচার নিয়ে।রিয়া বললো বিহান ভাই আপনার কি হয়েছে?বিহান ভাই মুহুর্তে রেগে গিয়েছেন বিভোর ভাই এর উদ্দেশ্য বললেন,বিভোর ভালো হবি নাকি তোর সব রিয়াকে দেখাবো।
‘কি দেখাবি তুই।’
‘তোর নুড যা মেয়েদের দিয়েছিস আমার ফেইক আইডি দিয়ে তোর সাথে প্রেম করেছিলাম।’
‘বিভোর ভাই আশ্চর্যজনক হয়ে বলে উঠলেন নাউজুবিল্লাহ বিহান তুই তাহলে গে হয়েছিস।হ্যান্ডসাম ছেলেদের দেখলে আকৃষ্ট হস তাইতো।ছিঃছি আমাদের কাজিন দের মান সম্মান সব শেষ হয়ে গিয়েছে।শেষ মেষ ফেইক আইডি দিয়ে নুড আদান প্রদান।এইজন্য মেয়েদের প্রতি তোর ফিলিংস আসে না।জন্মের পর থেকে সিঙ্গেল।’
‘আমি গে নাকি আমার বউ ভালো ভাবেই জানে।তোর বিরুদ্ধে প্রমান রাখার জন্য এত কষ্ট করা।টাইম মতো পাব্লিক করে দিবো ডোন্ট ওরি ব্রো।’
দুলাভাই বিভা আপু আমি রিয়া হেসে গড়াগড়ি গেলাম।
দুলাভাই এর প্রশ্ন দিয়া যখন সহ্য করে বিহানের বিয়ে দিয়ার সাথে দিয়ে দেই।হুট করে হাসাহাসির মাঝে এমন কথায় আমার কাশি শুরু হলো।বিহান ভাই ঝুকে এসে বললেন করবি আমায় বিয়ে? আমি অবাক হয়ে গেলাম সবার মাঝে এ কি প্রশ্ন।বিভা আপু বললো দিয়ার উত্তর না। না মানে না।বিহান কে বিয়ে করে মরবে নাকি।মনে মনে বললাম ওই রাগি মানুষ টা আস্ত ভালবাসার একটা ডিব্বা।
___________________________________
কয়েক দিন পর পায়ের ব্যাথা ঠিক হয়ে গেছে।দুলাভাই আমাদের লোহাগড়া নিরিবিলি পার্কে নিয়ে যাবেন।কয়েকদিন যাবত খুব শখ হয়েছে আমি টিকটক ভিডিও করবো।ভাবনা কে সত্যি করতে আজ প্রস্তুতি নিয়ে নিলাম।ভীষণ সাজুগুজু করে টেবিলের উপর ফোন রেখে ডান্স করছি আর গান গাইছি “কতই আদর করছো তোমায় ভুলতে পারিনা” বেশ কয়েক বার প্রাক্টিস করেই যাচ্ছি।ডান্স করতে করতে ক্লান্ত আমি।ঘেমে কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের ফোঁটার ছড়াছড়ি।পানির পটের মুখ খুলে খাটে বসে পানি খাচ্ছি এমন সময় তাকিয়ে দেখি ব্লু জিন্স, গায়ে ব্রাউন কালারের শার্ট গায়ে হাজির বিহান ভাই।প্যান্টের পকেটে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছেন আমার দিকে তাকিয়ে।উনাকে দেখে চমকে গেলাম।উনিও আমাদের সাথে পার্কে যাবেন নাকি।এমন সময় ফোনের ভাইব্রেশনের শব্দে উনার পকেট সহ কাঁপছে।চোখ আমার দিকে রেখেই উনি ফোন টা বের করে রিসিভ করে কথা বলছেন।এক হাত প্যান্টের পকেটে আরেক হাত ফোন সহ কানে।উনার দৃষ্টি সোজাসুজি আমার বরাবর।কথা বলছেন আর আমাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখছেন।ফোন টা কেটে দিয়ে আমার দিকে এগিয়ে এসে বললেন আদর আর কোথায় করতে পারলাম দিয়ারাণী।আদরের আগেই তো তোমার সুড়সুড়ি বিরক্ত করলো।আদর করতে পারিনি তাই ভুলতে পারছো না।আদর করতে পারলে কি হতো তাই ভাবছি।
আশ্চর্য ব্যাপার নাহ।আমি তো গানের কথা বলেছি আর উনি কি বুঝলেন?

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।