এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা | পর্ব – ৩৮

সকাল দশ টা বাজে সূর্যমামা তার পূর্ণ উত্তাপ ছড়িয়ে দিয়েছে পৃথিবীতে।ক্রমশ প্রকৃতি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।আরো এক ঘন্টা আগে গোসল করে চুল ফ্যানের নিচে দিয়ে সুয়ে আছি।চুলের পানি ঝরলে চুল বেঁধে রেডি হয়ে নিলাম।এই গরমে কি পোশাক পরবো সেটা ভেবে দিশেহারা।আবার খারাপ পোশাক পরেও যাওয়া যাবে না।কাল সারারাত উত্তেজনাতে ঘুম হয় নি।আমার রাগ হয় ভয়ানক রাগ হয় যখন দেখি কোনো সুন্দর মেয়ে বা ভালো হাইট এর মেয়ে বিহান ভাই এর সাথে ভাব করার চেষ্টা করছে।এমনিতেই মাত্র ৫ ফিট ২ হাইট আমার সাদা ফকফকে চেহারা না যার ফলে অতিরিক্ত মেকাপ করলে আরো বাজে দেখায় আমাকে।মেকাপ করলে বাজে দেখায় এটা আমি বা মেকাপ কারোর দোষ না আসলে আমি মেকাপ করতেই পারি না।ঠিক ঠাক মেকাপ পারলে আমাকেও গরজিয়াস লাগতো সিওর।ন্যাচারাল লুকে না থাকলে আসলেই পেত্নি লাগে আমাকে। এই পেত্নিকে যে অত সুন্দর হ্যান্ডসাম ছেলে গ্রহন করেছে সেটাই ভাগ্যর ব্যাপার।কাজিন দের মাঝে সব থেকে পিচ্চি আর নাদুস নুদুস আমি।বুঝি না এই পেত্নি মেয়েকে কিউট ওভারলোড উপাধি কিভাবে দেয় ছেলেরা।আসলেই কি তারা আমাকে পাম দেয় বুঝি না।ইদানিং বেশীরভাগ সময় আমার ডিপ্রেশন এ কাটছে।তার একটাই কারণ সুন্দর কোনো মেয়ে বিহান ভাই এর আশে পাশে দেখলেই জেলাস হয় আমার।বাই এনি চান্স যদি উনার মন অন্য দিকে ঘুরে যায়। মনে মনে আফসোস করি হে আল্লাহ সবাই কে তুমি এত পারফেক্ট হাইট এত সুন্দরী বানিয়েছো ওদের অত সুন্দর না দিয়ে আমাকেও একটু দিতে।আমাকে যদি অনেক সুন্দরী বানাতে তাহলে আজ এত ডিপ্রেশন এ ভোগা লাগতো না আমার।সারাক্ষণ নিজেই নিজের সাথে কথা বলে চলেছি।যাক বাবা বিহান ভাই মেয়েটাকে বকে দিলে বুঝে যাবে আর চান্স পাওয়া যাবে না।আহা শান্তি শুধু শান্তি।
রিয়া ও রেডি হয়ে গিয়েছে।আমরা চারজন সুলতান এর বাড়ি যাবো সানজি নামের মেয়েটা ওখানেই আসবে।আমরা দুজন রেডি হয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়েছি অথচ বিহান ভাই আর বিভোর ভাই এর খোজ নেই।শুনেছি উনার নাকি ভীষণ রাগ হয়েছে কিন্তু কি নিয়ে সেটা জানিনা।
কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর দেখি রাগিমশাই হাজির।মুখে কোনো কথা নেই প্যাচার মতো করে আছে।
আমি ইচ্ছা করেই বললাম,কি ব্যাপার বিহান ভাই হবু প্রেমিকার সাথে ব্রেকাপ করতে যাচ্ছেন বলে মুড অফ।
কথাটা শুনে উনি রাগি দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন বাজে কথা বললে একটা থাপ্পড় মারবো।মেজাজ অনেক খারাপ আজ।আমার বয়সে এত রাগ হয় নি আমার।
রিয়া বললো কেনো বিহান ভাই আপনি এত রাগ করেছেন।
আর বলো না রিয়া আমার এই টুকু বয়সে এত লজ্জা আমি পাই নি।সিরিয়াসলি এত লজ্জা পেয়েছি আমার মান সম্মান যা ছিলো সব শেষ।আমার ইজ্জত মানের কিছু অবশিষ্ট নেই।আমার সাথেই এটা হওয়ার ছিলো।এত সচেতন থাকার পরেও যে লজ্জা টা পেয়েছি বলার মতো নয়।
রিয়া আবার বললো কেনো বিহান ভাই কিছু হয়েছে?
কিছু হয়েছে বললে ভুল।যা হয়েছে সেটা ভুলতে পারছিনা।আজ আমার মেডিকেল কলেজের স্যার ভিডিও কল দিছিলেন।একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথা বলার জন্য।মেডিকেল এর টিচার দের সাথে কথা বলতে গেলেও ভেবে চিন্তে বলতে হয়।অত্যান্ত ভদ্রতার সাথে তাদের সাথে কথা বলতে হয়।স্যার আমাকে আগেই বলে নিয়েছিলেন কোলাহলহীন একটা পরিবেশ এ গিয়ে যেনো উনাকে কল করি।স্যার কল দিছেন আমি রুমের মাঝে গিয়ে কল রিসিভ করে কথা বলছি।পাশের বাসায় বিয়ে বক্সের মাইক আমাদের বাসার দিকে দিয়েছে এত জোরে পানি পানি সং প্লে করেছে মানে কি বলবো মেজাজ টা এত খারাপ হচ্ছিলো।এমনিতেই স্যার আগেই বলে রেখেছিলেন যেনো কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ এ গিয়ে কল দেয়।বক্স বাজাতে মিউট করে বাড়ির পেছনে নদীর পাড়ে গিয়ে কল করেছি।স্যার আমাকে বলছেন কি প্রব্লেম বিহান এইভাবে ছোটাছুটি করছো কেনো তাছাড়া তুমি গাছের নিচে কেনো?আর এসব গানের সাউন্ড আসছে কেনো?স্যার কে বললাম স্যার আমি তো বাড়িতে এসছি। পাশে একটা কাজিনের বিয়ে তাই সাউন্ড আসছে তাছাড়া নেটওয়ার্ক পাচ্ছে না স্যার রুমে তাই গাছের নিচে এসছি।স্যার খানিক টা বিরক্ত হয়ে বললেন ওকে আলোচনায় আসি।এমন সময় পাশ দিয়ে পাশের বাসার দুজন যাচ্ছিলেন হঠাত তাদের মাঝে ঝগড়া লেগেছে।আমার কাছাকাছি এসেই এমন গালি গালাজ শুরু করেছে বলার বাইরে।এর বাচ্চা তার বাচ্চা আরো যত বাজে লেভেল এর গালি আছে সব শুরু করেছে।স্যার দেখি একদম চুপ হয়ে গিয়েছেন।স্যার এর জীবনে হয়তো এমন গালি শোনেন নি।আমি কি করবো মাথায় ঢুকছিলো না ফোন নিয়ে শরীরে যত বল ছিলো তাই নিয়ে দৌড় মেরেছি।এক দৌড়ে অনেক দূরে চলে গিয়েছি যাতে গালি গুলা আর স্যার শুনতে না পান।অনেক খানি দূরে গিয়ে হাঁপাচ্ছি।তাকিয়ে দেখি স্যার কপালের চামড়া ভাজ করে বসে আছেন।আমাকে বলছেন কিহ পাশে কারা তোমার নড়াইল এর ফ্রেন্ড নাকি।মানে লজ্জায় আমি মরে যাচ্ছিলাম।স্যার কে বললাম সরি স্যার প্লিজ সরি।সাডেন তারা ঝগড়া লাগিয়ে এগুলা শুরু করেছে আমাকে মাফ করে দিন।স্যার বললেন নো প্রব্লেম চিল,দৌড় দিয়ে ক্লান্ত তুমি এখন বাসায় যাও পরে কথা হবে।
বুঝতে পারছো রিয়া কি বিশ্রি কাহিনী হয়েছে।
বিহান ভাই এর দৌড় দেওয়ার কথা শুনে আমার হাসি থামছেই না।আমি হেসে গড়াগড়ি যাচ্ছি।আমার জীবনে এর থেকে মজার ঘটনা আর একটাও শুনি নি।
রিয়া বললো হাইরে কপাল তারা আর গালি দেওয়ার সময় পেলো না।
বিভোর ভাই বললেন বিহান তোর সাথে এটাও হতে পারে ভাবা যায়।স্যার না জানি কত কি ভেবেছে দেখ।
শুধু কি ভেবেছে অন্য টিচার দের ও বলবে।মানে ইজ্জত এর কিছুই বাকি নেই আমার।
অটো করে সুলতান এর বাড়ি পৌছে গেলাম।বিভোর ভাই বাদাম কিনেছেন বসে বসে খাচ্ছি।বিহান ভাই বলছেন বিভোর কল দে তো কত লেট হবে সে মেয়ের আসতে।তার জন্য ঝামেলা একটা রেখে একটা যাচ্ছেই না।বিভোর ভাই বললেন,, এইতো চলেই এসছে ৫ মিনিট লাগবে।
৫ মিনিট অপেক্ষার পর দেখি সেই মেয়ের প্রবেশ হলো।আরে এইটা তো পিকনিকের সেই মেয়েটা।সাইমন এর সাথে এসছিলো।মেয়েটা মৃদু হাসি দিতে দিতে প্রবেশ করলো।মেয়েটা এসেই হাই হ্যালো করলো।
মেয়েটার দিকে তাকিয়ে কোমরে দুই হাত বেঁধে বললাম আপনার হাই হ্যালো দেখার সময় নেই আমার।আগে বলুন কোন সাহসে অন্যর জামাই কে চিঠি পাঠান।আপনার নামে মামলা দিবো।
মেয়েটি হেসে উত্তর দিলো উনি অন্যর জামাই না এটা জানি আমি।উনাকে জামাই বানাবো বলেই চিঠি দিয়েছি।।।
লজ্জা করে না পরকিয়া করতে।আমি আপনার নামে ডিপ্রেশন এর মামলা দিব।দেখতে তো খারাপ না তাহলে জামাই কেনো?আমি কিন্তু ছাড়বো না আপনাকে।
বুঝলাম না দিয়া আপনার সমস্যা কোথায়?
সমস্যা মাই ফুট উনি আমার এটা বুঝতে পারছেন না।
আপনার জামাই তো বিহান ভাইয়া।বাট আমার হবু জামাই তো উনি বিভোর।আমি উনাকে ভালবাসি।
বিহান ভাই কয়েক টা দীর্ঘঃনিশ্বাস ছেড়ে বললেন,এই আপু নেক্সট চিঠিতে কোথাও এসব বি টি লিখবেন না।পুরা নাম লিখবেন।আপনি জানেন কি পরিমান হেনস্হা হতে হয়েছে।বউ কথা বলা অফ করেছে।
বিভোর ভাই এর দিকে আমি আর রিয়া অবাক করা নয়নে তাকিয়ে রইলাম।রিয়ার মুখের যা অবস্থা দেখার মতো না।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।