আজ বিহান ভাই আর আমার মাঝে কোনো দূরত্ব নেই।মনে হচ্ছে মনের খুব কাছাকাছি চলে এসছি আমরা।ছাদে সবার আড্ডার মাঝে বার বার চোখাচোখি হচ্ছে আমাদের।কাজিন রা সবাই মিলে অনেক আনন্দ করছিলাম আমরা।কিছুক্ষণ পরেই কেক কাটবো আমরা।নিচ থেকে বিভোর ভাই এর আম্মু ডাকলেন কারা যেনো এসছে বাড়িতে। বিহান ভাই আর আমি দো’তলার বেলকনিতে এসে দাঁড়ালাম।
হঠাত বাড়ির ভেতরে অচেনা কিছু মানুষের প্রবেশ হলো।দুইটা মেয়ে আর দুইটা ছেলে।তাদের মাঝে একটা মেয়েকে দেখে ভড়কে গেলাম আমি।খুব অবাক লাগলো আমার কাছে।রমিম ভাইয়া বললেন বিহান প্রেয়সী এসছে তোকে সারপ্রাইজ দিতে।বিহান ভাই অবাক হয়ে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে পড়লেন আমার দিকে,আমার হাসি খুশি মুখ টা সাথে সাথে মলিন হয়ে গেলো?আমার মুখশ্রী দেখেই বোঝা যাচ্ছে এক রাশ মলিনতা ভর করেছে।এই তাহলে সেই প্রেয়সী যার চিন্তা এতদিন কুড়ে কুড়ে আমাকে খেয়েছে।এই তাহলে সেই মেয়ে যে আমাকে ফুলের দোকানে এত গুলা বাজে কথা শুনিয়েছিলো।বিহান ভাই এর দৃষ্টি স্হির আমার দিকেই ছিলো।আমার চোখে পানি ছলছল করছে।বিহান ভাই আমার মুখ দেখেই বুঝতে পারলেন আমার মন খারাপ হয়ে গিয়েছে।
প্রেয়সী নামের মেয়েটি এসেই বিহান ভাই কে জড়িয়ে ধরতে গেলো শুভ জন্মদিন বলে।বিহান ভাই বিরক্ত হয়ে বললেন,স্টপ ইট প্রেয়সী এটা কি হচ্ছে।এটা কি বেড রূমে তোর হজবেন্ড কে পেয়েছিস আনমনে জড়িয়ে ধরছিস।এটা আমার বাড়ি এখানে আমার আব্বু আম্মু ভাই বোন সবাই আছে, এখানে কালচার এমন না।এখানের মেয়েরা ছেলেদের কাছাকাছি গেলেই নিজে থেকেই দূরত্ব বজায় রাখে কারণ তারা মনে করে একটা ছেলের সংস্পর্শে গেলে তাদের সম্মান নষ্ট হবে।
প্রেয়সী ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,বিহান গ্রামে এসে কেমন একটা হয়ে যাচ্ছিস।একটা মেডিকেল এর স্টুডেন্ট দের মুখে এমন ষ্টুপিড কথা মানায় না।
হঠাত বিহান ভাই ওর মুড এর যে কি হলো এক রাশ বিরক্তি দেখা যাচ্ছে উনার মধ্য।তবুও অনিচ্ছাকৃত হাসি।
আমি হেসে দিয়ে বললাম,না না আপু আপনি জড়িয়ে ধরূন। জডিয়ে না ধরলে উইশ করা টা সসম্পূর্ণ হবে না।
প্রেয়সী আমাকে বললো,তুমি না দিয়া।সেই ফুলের দোকানের মেয়ে।
আমি বললাম,যাক ভোলেন নি তাহলে।
প্রেয়সী আপুর সাথে আরেক টা আপু এসছে সেই আপুটার নাম অবনী।অবনী আপু বললেন,এই কি সেইইইই বিহান।
বিহান ভাই কথা ঘুরিয়ে বললেন,,আচ্ছা তোরা আসবি আমাকে জাস্ট বলবি তো।আর বুঝলাম না হঠাত কি মনে করে।আমি তো জাস্ট এলাম ঢাকা থেকে।তোরা আসবি আমাকে জানাবি না।
বিহান ভাই এর দুজন বন্ধু বললো,ভেবেছিলাম ঢাকায় সেলিব্রেশন করবো।কিন্তু তুই তো চলে এলি।তোর জন্মদিন বলে কথা আমরা কি সেলিব্রেশন করতে পারি না ভাই।আর প্রথমবার তোদের বাড়িতে এলাম একটু খাতির যত্ন কর।
এমন সময় আমার দুই মামি এগিয়ে এলেন।বিহান ভাই পরিচয় করিয়ে দিলেন,
আম্মু আমার ফ্রেন্ডরা।
আমার দুই মামি স্বভাবসুলভ হাসি দিয়ে বলেন তোমরা এসছো আমরা খুব খুশি হয়েছি। তোমাদের যখন মন চাইবে তোমরা আসবে।
প্রেয়সী আপু বিহান ভাই এর আম্মুকে সালাম করে বললেন আপনি চাইলে আজীবন থাকবো আন্টি।মামি মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,আচ্ছা মা থেকো। আর সালাম করছো কেনো?পায়স হাত দিয়ে আজ কাল সালাম করে না কেউ দেখি না তেমন।প্রেয়সী আপু এমন ভাবে সালাম করলেন যেনো উনি এ বাড়ির বউ তাই শ্বাশুড়ি কে সালাম করলেন।উপর থেকে বিভোর ভাই রা সবাই নেমে এলো।
মামি সবাই কে নাস্তা খেতে দিলেন আমি হাতে৷ এগিয়ে দিচ্ছি।প্রেয়সী আপু বলে উঠলেন,দিয়া তুমি না এ বাসার আত্মীয় তাহলে তুমি কাজ করছো কেনো?তুমিও বসো নাস্তা করো।বিহান ভাই বলে উঠলেন ও এ বাডির আত্মীয় না বউ এইজন্য আত্মীয়দের আপ্যায়ন করছে।আমি প্রেয়সী আপুকে বললাম,এটা আমার নিজের ই বাড়ি আপু।আগে কখনো আসেন নি তো তাই জানেন না।
বিভোর ভাই দের সাথে বিহান ভাই দের বন্ধুদের পরিচয় হলো।যাক জমিয়ে সবাই আড্ডা দিচ্ছে আবার।আমার মনের মাঝে অদ্ভুত ভাবে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে।প্রেয়সীর বিহান ভাই কে নিয়ে অতিরিক্ত মাতামাতি দেখে আমার খুব ই রাগ হচ্ছে।
বিভোর ভাই বলে উঠলেন,প্রেয়সি আপু আপনি যা করছেন বিহান এর গফ দেখলে কিন্তু বিহানের ব্রেকিং নিউজ আছে কপালে সিওর।এদিকে বিহান এর চোখে মুখে কি মারাত্মক বিরক্তি সেটা বলে প্রকাশের মতো নয়।
ঢাকা থেকে আসা বিহান ভাই এর আরেকজন বন্ধু বলে উঠলো,কিসের ব্রেকিং নিউজ বিহানের কোনো গফ ই নেই।ও সারাজীবন বলে ওর এক পিচ্চি আছে।ওর এক পিচ্চি আছে।সারাদিন তার নাম্ব গুনগান ই করে কিন্তু কই এখনো তো রিলেশন এ যায় নি।এইজন্য বিহানের গফ হিসাবে আমরা প্রেয়সীকেই সিলেক্ট করেছি।আর বিহন যে মেয়েটির কথা বলে সেটা মেবি রূপকথার কেউ।
বিহান ভাই বিরক্ত হয়ে বলেন চেঞ্জ দ্যা টপিক্স প্লিজ।বিষয় টা নিতে পারছি না।আর প্রেয়সী তোকে কতবার বলবো এগুলা বাদ দে। আমার খুব বিরক্ত লাগে এগুলা।আর তুই যা করছিস আমাকে নিয়ে আমার আম্মু কাকি মনি মামা ব্যাপার টা কোন চোখে দেখবেন।এখানে আমার একটা সম্মান আছে দয়া করে এগুলা থেকে বিরত থাক প্লিজ।
আর হ্যাঁ আমার গফ আছে এটা সত্য।সে সত্যি আছে।আর আমি তাকে ভীষণ ভালবাসি। তাই আমি তাকে কারো সামনে প্রেজেন্ট করি না।নিজেকেও তার সামনে প্রেজেন্ট করি না।
ঢাকা থেকে আসা বিহান ভাই এর এক বন্ধু বললো, বিহান তোর হাইট আর প্রেয়সীর হাইট এক ই রকম।দুজন ই মেডিকেল এর স্টুডেন্ট। প্রেয়সী দেখতে অনেক সুন্দর। তোদের যা মানায় না।আর তুই যে মেয়ের কথা বলিস সিরিয়াসলি বলছি তোর সাথে যায় না তাকে।এই দিয়া তুমি বলো প্রেয়সীর সাথে মানায় না ভালো বিহানের।
আমি অনিচ্ছাকৃত একটা হাসি দিয়ে বললাম,হুম।
মেহু,তোহা,তিয়াস,বিভোর ভাইয়া সবাই বললো বিহান ভাই ইনিই তাহলে আপনার তিনি।বলেই সবাই প্রেয়সী আপুকে ভাবি ভাবি ডাকা শুরু করলেন।
বিহান ভাই বললেন,হাইট,গায়ের রং,যোগ্যতা,প্রফেশন,টাকা, স্কিন কালার এগুলা দিয়ে কখনো made for each other হওয়া যায় না।তখন ই হওয়া যায় যখন এগুলার উর্দ্ধে গিয়ে দুজন দুজন কে বুঝতে পারে, দুজনের না বলা কথা অনুভব করতে পারে।দুজন দুজন কে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা থাকে।
বিহান ভাই এর কথা শুনে উনার বন্ধুদের মুখ কালো হয়ে গেলো।
আমি ওখান থেকে উঠে নিচে চলে গেলাম মামির কাছে।মামির সাথে খাবার গোছাতে সাহায্য করছি।এমন সময়ে অবনি নামের মেয়েটি মামির কাছে এসে বললেন,আন্টি বিহান কে কেমন মেয়ে দেখে বিয়ে দিবেন।মামি হেসে দিয়ে বললো বিহানের যেমন পছন্দ তেমন মেয়ে দেখেই বিয়ে দিবো।অবনি আপু বললো আন্টি বিহানের কিন্তু প্রেয়সীর সাথে একটা রিলেশন আছে।হয়তো লজ্জায় বলতে পারে না।আপনি না হয় বিহানের সাথে কথা বলে বিয়ের ব্যবস্থা করুন।মামি কাজের দিকেই মন দিয়ে বললেন,আমার ছেলের লেখাপড়া আগে শেষ হোক তারপর বিয়ে।তার আগে বিয়ে করলে আমি সেটা মেনে নিবো না।তাছাড়া আমার ছেলের বেষ্ট ফ্রেন্ড আমি কখনো আমাকে এমন কিছু বলে নি।যদি আমার ছেলে এমন কিছু বলে তখন না হয় ভাবা যাবে।।।
মামির থেকে খুব একটা পাত্তা না পেয়ে অবনি আপু আবার চলে গেলো।এখন কেক কাটার মুহুর্ত। ভেবেছিলাম আজ আমার বানানো কেক দিয়ে বিহান ভাই এর জন্মদিন পালন করবো আর উনাকে মনের কথা জানাবো।ছাদ টা যে এত সুন্দর করে সাজালাম উপভোগ করছে এসে অন্য কেউ।বিহান ভাই তার বন্ধুদের আনা কেক টায় কাটতে বাধ্য হলেন।নিজের বেষ্ট ফ্রেন্ড রা বাড়ি বয়ে এসছে তাদের সাথে তো আর খারাপ ব্যাবহার করা যায় না।বিহান ভাই এর জায়গা থেকে উনি ঠিক ই আছেন।
আমি ছাদের এক কোনায় দাঁড়িয়ে আছি।মনের মাঝে ভীষণ অশান্তি হচ্ছে। চাইলেই কাঁন্না করতে পারছি না।এমন সময়ে অবনি আর আরেক টা ছেলে আমার কাছে এসে বললো,শুনেছি তুমি নাকি বেশীর ভাগ এখানেই থাকো।নিজেদের বাড়ি ছেড়ে মামাবাড়ি এসে থাকো কেনো এত।তোমার চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে প্রায়সীর জন্য তোমার মুড অফ।কিছু মনে করো না প্রেয়সীর হাইট,গায়ের রং শিক্ষাগত যোগ্যতা কোনটায় তুমি ওর পায়ের ধুলার সমান ও না।বিহান তোমাকে নিয়ে মজা করবে ফান করবে কারণ তুমি ছোট।ছোট দের সাথে মজা করতে সবার ই ভাল লাগে।কিন্তু কেউ তাকে বিয়ে করতে চাই না।বিয়ের জন্য ম্যাচুরিটি সম্পূর্ণ মেয়ে লাগে।বিহানের একটু আধটু টান আছে তোমার প্রতি।তবে তুমি এটা সিরয়াসলি নিও না তাকিয়ে দেখো ওদের দিকে।আশা করি বুঝবে কি বলতে চাইছি।বিহানের পাশে প্রেয়সী কে যেমন মানায় কোনদিকেই তোমাকে মানাবে না।তোমাদের বয়স টাও কিন্তু এক নয়।
জীবনে এত বড় অপমান কেউ কখনো করে নি।আমার হাইট,যোগ্যতা,গায়ের রং নিয়ে এত বাজে ভাবে কেউ বলবে আমি সেটা ভাবতেও পারিনি।রেগে গিয়ে বললাম, আপনাদের বিহান কে নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা নেই।যা বলার গিয়ে বিহান কে বলুন। আমাকে বলছেন কেনো শুনি?আপনাদের সুন্দরী বান্ধবী আর সুন্দর বন্ধুকে আসলেই ভাল মানায় কিন্তু বিলিভ মি আই ডোন্ট কেয়ার।বিহান ভাই এর সাথে এত ভাল মানায় যখন আপনাদের চিন্তা কিসের।তাকিয়ে দেখি প্রেয়সী বিহান ভাই এর গালে কেক মাখিয়ে দিচ্ছে।দেখে নিজের ভেতর আরো ঘেন্না লাগছে,রাগ লাগছে,কাঁন্না পাচ্ছে।
এরই মাঝে বিহান ভাই বার বার আমাকে মেসেজ করছেন একটু নিচে চল প্লিজ।আমার সাথে কথা বলছিস না কেনো দিয়া?এত ইগনোর করছিস কেনো?
বিহান ভাই এত ভীড়ের মাঝে বার বার আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছে কিন্তু আমি এড়িয়ে গিয়েছি।
হঠাত বিহান ভাই ভীষণ রেগে গিয়ে বললেন,প্রেয়সী তোকে আমি এলাউ করেছি তার মানে এটা না তুই যা তা করবি।এগুলা কি?ভাল ভাবেই জানিস এগুলা জাস্ট অসহ্য লাগে আমার।আশা করি এতদিনে জেনে গেছিস আমি কেমন।বিহান ভাই মুখের কেক টা মুছে আমার কাছে এগিয়ে এলেন।আমার গালে এক টুকরো কেক দিলেন।আমি কেক মুখ থেকে বের করে ছাদের নিচে ফেলে দিয়ে জোরে বলে উঠলাম এগুলা আমার এ পছন্দ নয়।একদম ই পছন্দ নয় বিহান ভাই।আপনার কাছে কি আমি কেক খেতে চেয়েছি।উনার বন্ধুদের সামনে যেনো উনি অবাক হয়ে গেলেন।
বলেই ওখান থেকে চলে আসলাম বাড়িতে।