একটা মানুষ কোন লেভেল এর ফাজিল হলে আর খারাপ হলে তার মেয়েকে ভয় দেখানোর জন্য তার বাবার পাঞ্জাবী মধ্য রাতে নিয়ে বকুল গাছে গিয়ে আটকাতে পারে।আমার বাবার পাঞ্জাবীর দিকেই নজর গেলো উনার।মনে চাইছে মারাত্মক আকারের একটা প্রতিশোধ নিয়ে নেই কিন্তু কিভাবে নিবো সেটাই তো বুঝতে পারছি না।জমিদার দের পুকুর পাড়ে বসে নিজে নিজে প্লান করেই যাচ্ছি আর ভেবেই যাচ্ছি আরেক দিক দিয়ে একভাবে থু থু ফেলে যাচ্ছি।সবাই আমার এই ননস্টপ থুথু ফেলার কারণ জানতে চাইছে কিন্তু আমি চুপ হয়ে আছি। থু থু ফেলতে থেলতে গলা শুকিয়ে গিয়েছে আমার।কারো কথার কোনো উত্তর না দেওয়াতে বিহান ভাই বলে উঠলেন,দিয়া কত টাকা কন্ট্রাক নিয়েছিস।
উনার কথা শুনেই আমার মন সন্দিহান হয়ে উঠলো,নিশ্চয় উনার উদ্ভট চিন্তাভাবনা থেকে জঘন্য জোনো আইডিয়া বের করেছেন কিন্তু কি সেটা?
আমি সন্দিহান৷ দৃষ্টি নিয়ে তাকাতেই উনি বলেন,
“এই যে জমিদারদের ঐতহ্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এটা নিয়ে দিয়া বড়ই চিন্তিত।ও নিশ্চয়ই জমিদার দের পূর্ব পুরুষ দের সাথে কথা বলে কন্ট্রাক করেছে।ও এই পুকুর টা পানিতে ভরিয়ে তুলবে।বিনিময়ে দিয়া একটা এমাউন্ট এর টাকা পাবে।দিয়া নিশ্চয়ই বলেছে ওর মুখে আজ অমৃত পড়েছে সেই অমৃত এর থু থু পুকুরে ফেললে পুকুরে অমৃতের পানি ভরে যাবে।তা দিয়া কত টাকার কন্ট্রাক।আমার দিন কাল খুব অভাবে যাচ্ছে কিছু টাকা ধার দিস প্লিজ।কথা দিচ্ছি টাকা মেরে দিবো না আই প্রমিজ আবার ফেরত দিবো।”
মানুষ এত অসহ্য কথা কিভাবে বলতে পারে।উনার দিকে রাগান্বিত চোখ নিয়ে তাকিয়ে রইলাম আমি।
“এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো?খবর দার এবার যেনো আমার মুখে ফেলিস না।তাহলে অমৃত আবার খাইয়ে দিবো সকালের কথা মনে আছে তো?”
‘কেনো থু থু ফেলছি জানেন না তাইনা?”
“আমি তো জানি বাট এরা তো জানেনা।তুই বলিস নি এদের এখনো।ওকে আই হেল্প ইউ নিব্বি।”
“বিভোর ভাই,তিয়াস ভাই,তোহা আপু,মেহু আপু,রিয়া সবার আগ্রহ বেড়ে গেলো কি এমন হয়েছিলো এটা জানার জন্য।”
“আমি বিহান ভাই এর দিকে ভীষণ রাগান্বিত মুড নিয়ে তাকালাম।কারণ এটা আমার মান সম্মান এর ব্যাপার।বিহান ভাই যদি এটা বলে দেন এরা আমাকে ক্ষেপাইতেই থাকবে।”
বিহান ভাই সবাই কে থামিয়ে দিয়ে একটা চিঠি পড়তে থাকেন,
প্রিয়,
কখনো চিঠি লেখা হয় নি।তোমাকে দেখে দু লাইন লিখতে ইচ্ছা হলো।কি লিখবো সেটা জানিনা।তবে তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি আমি।আই লাভ ইউ দিয়া।তোমার বিহান ভাইয়ার আছে চিঠি টা দিয়ে গেলাম। উনাকে উত্তর টা দিয়ে দিও।আমার টিকটক একাউন্ট টা চেক দিও।
সবার এটেনশন এখন চিঠির দিকে।বিহান ভাই চিঠিটা পড়ে আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন এই নে একজন টিকটক সেলিব্রিটি তোকে চিঠি দিয়েছে।দিয়া একটা অটোগ্রাফ প্লিজ।একজন স্টার এর হবু বউ বলে কথা।বিয়ের বাড়ি থেকে এক চুল কটা খাবিস এই চিঠি দিয়ে গিয়েছে।
মেহু আপু বলে উঠলো বিহান ভাই আপনার বোনের চিঠি আপনার কাছে দিয়েছে আপনি এ নিয়ে কিছু বলবেন না।আমরা হলে তো এত সময় মার মাটিতে পড়তো না।
তোমরা আমার বোন তাই অবশ্যই তোমাদের ব্যাপারে কথা বললাম।কিন্তু দিয়া এদিক ওদিক কোনদিকেই আমার বোন হওয়ার যোগ্য না।এখনো সে যোগ্যতা সে অর্জন করতে পারে নি।
“রাগে শরীর আরো রিরি করে উঠলো।মনে মনে বললাম বোন হবো কিভাবে মনে মনে আমাকে নিয়ে অন্য কিছু ভাবে।রাগ কন্ট্রোল করে একটা স্বভাব সুলভ হাসি দিয়ে বললাম,বিহান ভাই ক্যানো আপনার বোন হওয়ার যোগ্য না সেটা ক্লিয়ার করে বলুন।না পারলাম আপনার বোন হতে না পারলামা অন্য কিছু হতে।”
“পারবি না তো কারণ তোর শরীরে রাজাকারদের রক্ত বইছে দেখা গেলো কবে আমার গলা কেটে দিলি।আম্মুর একমাত্র সুন্দর স্মার্ট ছেলেটা অকালে প্রাণ হারালো।”
“এরই মাঝে তোহা আপু বলে উঠলো,বিহান ভাই আমার মনে একটা শখ জেগেছে।”
“বিহান ভাই এক ভ্রু খানিক টা উঁচু করে বলেন,কি শখ।”
“আপনার সাথে ডুয়েট টিকটক করা।”
“বইনা তোর শখ শুনে আমার আয়ু কমে গিয়েছে।টিকটকার দের সব ব্লক লিস্টে পাঠিয়েছি।বাকি আছিস তুই।কবে দেখবি টিকটক স্টার দের সাথে ব্লক লিস্টে সংসার করছিস।”
“বিহান ভাই টিকটক কি খারাপ কিছু।”
“আমার কাছে একদম ই ফালতু লাগে বইন।টিকটক হোক আর যেটাই হোক ভালো কিছু করতে পারিস তো।তোরা এগুলা কি করিস নাউজুবিল্লাহ। তোদের জামাই দেখলে কি ভাববে এগুলা।”
আমি এবার ইচ্ছা করেই বলে উঠলাম তোহা আপু আর বিহান ভাই এর ডুয়েট টিকটক এর গান হবে” তুমি দিও নাগো বাসর ঘরের বাত্তি নিভাইয়া ”
বিহান ভাই নিমিষেই নিজের মুড চেঞ্জ করে আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালেন।রাগি রাগি দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে বললেন “খুব পেকেছিস তাইনা।”
বিহান ভাই রেগে যাওয়া মানেই মহা বিপদ আমি আর কিছুই বললাম না।
আগামিকাল বিকালে বিহান ভাই ঢাকা ফিরে যাবেন।আম্মু আমাকে বললো আমি যেনো বিহান ভাই কে বলি কাল ঢাকা যাওয়ার সময় আমাদের বাসা হয়ে যেতে।
ফোন করার ইচ্ছা আমার ছিলোই না।কিন্তু মা জননীর কথা ফেলা যাবে না।ভয়ে ভয়ে ফোন টা দিলাম,,
‘ফোন দিয়ে বললাম,হ্যালো বিহান ভাই’
‘বেয়াদব মহিলা একটা থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিবো।’
‘আমি কি করেছি বিহান ভাই।মা তোমায় ফোন দিতে বলেছে তাই দিলাম।রাগে রাগে আপনি ছেড়ে তুমি বললাম।তুই বললে ব্যাপার টা আরো বিশ্রি লাগতো।’
‘ফোন দিয়ে যে সালাম দিতে হয় সেটাও জানিস না।এটা তোর বেয়াদবির প্রথম লক্ষণ।’
দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,”আসসালামু আলাইকুম বিহান ভাই”
‘ওয়ালাইকুম আসসালাম।’
‘মা তোমাকে আসতে বলেছে।(মনে মনে বললাম তোকে আসতে বলেছে)’
‘এক মিনিট তুই আমায় তুমি তুমি করছিস হুয়াই।আমি তোর বড় না ছোট।তুই তো আমায় তুমি বলিস না।নিশ্চয়ই মনে মনে তুই তুকারি ও করছিস।’
‘দেখুন বিহান ভাই আন্দাজে কিছুই বলবেন না।’
‘কানের কাছে সব সময় ভ্যা ভ্যা করে ভাই ভাই করবি না তো।অহেতুক ফোন দিয়েছিস কেনো সেটা বল সময় নষ্ট হচ্ছে আমার।’
‘ভাই কে ভাই ছাড়া কাকা ডাকবো।’
‘দেখ দিয়া তোকে আমি বোনের নজরে দেখি না কখনো।”
“ক্যানো বিহান ভাই।”
“এত ভাই ভাই না করে আহত না করে তার থেকে বেটার কাকা ডেকে নিহত কর।ফোন রাখ।”
ঢাকা যাওয়ার আগে আম্মু একবার আসতে বলেছে তাই ফোন দিয়েছিলাম।
আমি আর রিয়া পরের দিন সকালে কোচিং এ যাচ্ছি।হঠাত বিভোর ভাই এর সাথে দেখা।বিভোর ভাই আমাদের দেখেই মারাত্মক বেসুরা কন্ঠে গান শুরু করলেন,
“ও রিয়া ও রিয়া দিল চুরায়ে লিয়ে এ কিয়া কিয়া না ন্ননান্নানা না না আরে রে এএ এ”
“রিয়া বলে উঠলো,বিভোর ভাই গান টার মান সম্মান নষ্ট করবেন না প্লিজ।”
“আমার মতো একজন সিঙ্গার কে অফমান করা হচ্ছে”
“আপনি কিন্তু অপমান বানান কে অপমান করছেন।”
“ওটা আমি অখম হাসান এর নাটক দেখে শিখেছি।রিয়া বলছি তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে।”
“হ্যাঁ আছে বিভোর ভাই অনেক গুলা আছে কিন্তু কেনো?”
“লাস্ট সিরিয়ালে আমার নাম টা লিখতে পারো।আমার খুব শখ একটা প্রেম করবো।”
“প্রেম আর কত করবেন বিভোর ভাই।এই নিয়ে ৬২ টা প্রপোজ করেছেন।”
“আরে ওগুলো প্রপোজ না জাস্ট মজা। আসলে কিন্তু আমি সিঙ্গেল।তবে তোমার সাথে হলে ভাল হয়ে যাবো।দেখো না রোজ গান গায় ও রিয়া ও রিয়া।”
“আমি বিহান ভাই কে বলে দিবো কিন্তু।”
“বিহান বলবে ঠিক আছে বিভোর এর মতো ছেলে নেই জিতবা রিয়া।”
“বিহান ভাই এ কথা বললে আমি তখন ই রাজি হবো।”
“বিহান যতদিন না বলে ততদিন তোমার বান্ধবী সিজুকার সাথে রিলেশন করিয়ে দাও।”
“আবার সিজুকা আমি সিজুকা কে বলে দিবো আপনার আশে পাশে না ঘেষতে বুঝলেন।”
ওদের ঝগড়া শুনে হাসতে হাসতে আমি শেষ।
পরের দিন দুপুরে হঠাত সাজুগুজু করতে মন চাইলো।বার বার উকি দিচ্ছি কখন সে আসবে।জানি এসেই বাজে কথা শুনাবে।তবুও ঢাকা চলে যাবে মনের মাঝে খুব খারাপ লাগছে।
গায়ে এ্যাশ কালারের শার্ট, পরনে কালো জিন্স,পায়ে শু।শার্টের হাতা গোটানো।হাতে ঘড়ি চুল গুলো উড়ছে সামনে থেকে।দেখে হাই ভোল্টেজ এর ক্রাশ খেয়েছি।
আমার রুমে প্রবেশ করেই বলেন,
“কিরে এমন লাল টুকটুকে শাড়ি পায়ে আলতা হাত ভর্তি লাল চুড়ি পরে ভয়ানক মহিলাদের মতো সেজেছিস ক্যানো?”
“আমি যে মাঝে মধ্য শাড়ি টাড়ি পরি আপনি সেটা জানেন না।”
“শাড়ির কথা জানতাম টারির কথা জানতাম না তো।”
“এখন জেনেছেন খুশি হয়েছেন। ”
“কিছু না বলে বিছানায় সুয়ে পড়লেন উনি।
নারে খুশি হয় নি ভয় পেয়েছি তোকে দেখে।এমন পেত্নি সেজেছিস বকুল গাছের পেত্নি ভেবেছি।”
“তাহলে কি আপনার মতো শুধু গ্রে আর এশ কালার পরবো”
“মেয়ে মানুষ মানেই অাধ্যতিক সব স্টাইল আর ডিজাইন।
আচ্ছা তোর পায়ের এই কালো সুতোর বিশ্লেষণ টা কি রে?না মানে বিয়ে হচ্ছে না বলে পরেছিস তাইনা।কোন হুজুরের থেকে ফু দিয়ে এনেছিস”
দেখুন এটা স্টাইলের জন্য পরেছি।
বিহান ভাই পায়ের দিকে তাকিয়ে থেকে বলেন,
“ঝংকার বাজে, বেজে চলুক নাহয় তোমার ওই অস্থির মন মন্দিরে।তুমি প্রার্থনাগারের প্রথম রক্তজবার মতো লাল আলতা রাঙা পায়ে আবার প্রবেশ করো আমার হৃদমাজারে।”